প্যারিসের কুব্জ-রাজা

প্যারিসের কুব্জরাজা

প্যারিসের পুলিশ-দপ্তরে একটি আশ্চর্য ছোকরার জীবনচরিত লিপিবদ্ধ আছে, সেইটিই তোমাদের শোনাব। মনে রেখো, এই অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনির একটি বর্ণও আমার বানানো নয়।

নাম তার–আবাদি। সে নিশ্চয় কোনও হাড়গরিব হাঘরে বাপ-মায়ের ছেলে! যখন তার বয়স মোটে একদিন, সেই সময়েই তার বাপ-মা তাকে প্যারিসের রাজপথে ফেলে পালিয়ে যায়।

আবাদি রাস্তায় পড়ে বেড়াল-কুকুরের বাচ্চার মতো কাঁদতে লাগল। এক বুড়ি ন্যাকড়া কুড়ুনি সেখান দিয়ে যেতে-যেতে তার কান্না শুনতে পেলে। সে খালি ন্যাকড়া কুড়ত না, পথে-পথে ভিক্ষাও করত। বুড়ি বুঝলে, এই খোকাটিকে দেখিয়ে সে খুব সহজেই লোকের মন ভেজাতে পারবে। সে তখনই আবাদিকে কোলে করে নিয়ে গেল।

বুড়ি যা ভেবেছিল তাই! তার কোলে ছেঁড়া ন্যাকড়া-জড়ানো, অতটুকু একটি কচি খোকাকে দেখে সকলেরই দয়ামায়ার সঞ্চার হয়। প্রত্যেকেই বুড়ির হাতে কিছু না কিছু খুঁজে দেয়। এইভাবে তার রোজগার খুব বেড়ে গেল।

ইতিমধ্যে একদিন উঁচু জায়গা থেকে পাথরের মেঝের উপরে পড়ে গিয়ে আবাদির শিরদাঁড়া গেল দুমড়ে বেঁকে। বয়সে কচি বলে সে প্রাণে বেঁচে গেল বটে, কিন্তু তাকে দেখতে হল বিকলাঙ্গ কুঁজোর মতো।

.

এদিকে বুড়ির রোজগার দেখে প্যারিসের অন্যান্য ভিখারির চোখ টাটিয়ে উঠল। তারা বুঝলে, বুড়ির শ্রীবৃদ্ধির কারণ হচ্ছে ওই আবাদি।

অন্য-এক ভিখারি একদিন বুড়িকে খুন করে আবাদিকে চুরি করে নিয়ে গেল। সেখান থেকে সে কিছুদিন পরে আবার হাতফেরতা হল। বছর-ছয়েক বয়সের মধ্যে আবাদি এইভাবে নানা ভিখারির ঘরে আশ্রয় লাভ করলে।

নানা চরিত্রের ভিখারির সঙ্গে থেকে, ছয় বছর বয়সেই আবাদি হয়ে উঠল খুব চালাক চতুর। সে জাল-অন্ধ ও নকল-খোঁড়া সেজে কেবল ভিক্ষা করতেই শিখলে না, চুরি-বিদ্যাতেও তার হাতেখড়ি হল। খুদে দেহ নিয়ে যে-কোনও গর্ত দিয়ে গলে সে লোকের বাড়ির ভিতরে ঢুকত, তারপর যা পেত তাই নিয়েই বাইরে পালিয়ে আসত। পথে কোনও অন্ধ বা পঙ্গু ভিখারি বসে আছে, হঠাৎ আবাদি এসে তার ভিক্ষা করা টাকাপয়সা তুলে নিয়ে দিলে দে ছুট।

আবাদির মতন ছেলে যে চুরি-জুয়াচুরি শিখবে, এটা খুব আশ্চর্য কথা নয়! সে মানুষ হয়েছে চোর-জুয়াচোরের ঘরেই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই যে, লেখাপড়ার দিকে ছিল তার অত্যন্ত প্রাণের টান! কোনও মাস্টার সে পায়নি, কেউ তাকে পড়াশুনো করতে বলেনি, কিন্তু তবু কি বিচিত্র উপায়ে সে লিখতে-পড়তে শিখেছিল তা জানো?

তার ভিখারি-মনিবরা প্রতিদিন যখন এক দুই তিন করে পয়সা গুনত ও হিসাব করত, আবাদি তখন মন দিয়ে শুনত। এই উপায়ে সে ছোটখাটো অঙ্ক শিখে নিলে। প্যারিসের রাজপথে বিজ্ঞাপনের পোস্টার ও বিভিন্ন রাস্তার নাম দেখে তার বর্ণপরিচয় হয়ে গেল। পড়তে শিখলে বটে, তাকে বই কিনে দেওয়ার লোক নেই! কিন্তু আস্তাকুঁড় খুঁজে সে গৃহস্থদের ফেলে-দেওয়া ছেঁড়া বই ও পুরোনো খবরের কাগজ কুড়িয়ে আনত এবং তার দ্বারাই পুস্তকের অভাব। দূর করত।

আরও একটু বড় হয়ে আবাদি পথের ধারের বুকস্টল থেকে দোকানির অগোচরে বই চুরি করতে লাগল। পথে-ঘাটে বা পার্কে ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েরা ছবির ও গল্পের বই নিয়ে বেড়াচ্ছে, হঠাৎ কোথা হতে আবাদি এসে চিলের মতো ছোঁ মেরে বই কেড়ে নিয়ে আবার কোথায় চম্পট দিলে! প্যারিসের বড় বড় বাড়ির নীচে মাটির তলায় কুঠুরি থাকে। এমন একটি কুঠুরি ছিল আবাদির আড্ডা। সেখানে সে রীতিমতো একটা লাইব্রেরি বানিয়ে ফেললে।

তার মতন বুদ্ধিমান ছেলে যদি সৎপথে থাকত, তাহলে আজ হয়তো পৃথিবীতে চিরস্মরণীয় ও শ্রদ্ধা-সম্মানের অধিকারী হতে পারত। কিন্তু অসত্য-পথে গিয়ে সে প্রকৃত মানুষ হওয়ার সব সুযোগেই বঞ্চিত হয়েছে। পুলিশ-দপ্তরের বাইরে কোথাও তার ঠাঁই নেই।

.

আবাদির বয়স যখন এগারো বছর, তখন সে স্বাধীন, কোনও ভিখারির তাঁবে আর কাজ করে না। জোর করে বা ধমক দিয়ে তাকে তবে রাখবার ক্ষমতাও কোনও ভিখারির ছিল না। প্রথম-প্রথম সে অন্ধ বা পঙ্গু ভিখারিদের পুঁজিপাটা লুট করেই অন্নের সংস্থান করত। তারপর অত অল্প লাভে তার মন আর খুশি হত না। তেরো বছর বয়সে এক ধনীর বাড়িতে হানা দিয়ে সে অনেক টাকাকড়ি নিয়ে সরে পড়ল। পুলিশ এই ছোট্ট কুঁজো চোরের বর্ণনা পেলে, কিন্তু তার খোঁজ পেলে না। পনেরো বছর বয়সে আবাদি তার মতন আরও তিনজন ছোকরা সহকারী পেলে, তারা তাকে সর্দার বলে ডাকতে শুরু করলে। দু-বছরের মধ্যে তার দলে আরও তিনটি ছোকরা যোগ দিলে। দল নিয়ে আবাদি-সর্দার নিয়ম করে চুরি-ব্যবসা চালাতে লাগল। একদিন তারা এক গুদামে চুরি করতে ঢুকেছে, এমন সময়ে পাহারাওয়ালার আবির্ভাব। কিন্তু আবাদি সর্দার ও তার দলবলের হাত থেকে বিষম উত্তম-মধ্যম লাভ করে, পাহারাওয়ালা হল কুপোকাত! সতেরো বছর বয়সে আবাদি প্রথম রক্তের স্বাদ পেলে। এক ডিটেকটিভ তাকে গ্রেপ্তার করতে এল, কিন্তু আবাদি ছোরা মেরে তাকে বেহুশ করে ফেললে।

আবাদির দলবৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে প্যারিস শহরে চুরি, রাহাজানি অসম্ভব বেড়ে উঠল। কারুর লোহার সিন্দুক ভাঙে, কারুর পকেট যায় কাটা, কারুর মাথায় পড়ে লাঠি। শহরে হইচই উঠল।

আবাদির এই সময়কার একখানা ডায়ারি পাওয়া গিয়েছে। তাতে সে লিখেছে : জীবন হচ্ছে, যুদ্ধ। যে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, তাকেই আমি মারব। মানুষের সমাজে দুটি দল দেখি। একদলের সব আছে, আর-একদলের কিছুই নেই। যাদের সব আছে, তাদের মাথা কেটে নিয়ে আমি আমার অভাব পূরণ করতে চাই। দুর্বলকে ভক্ষণ করুক বলিষ্ঠরা এবং পুলিশ গণনা। করুক কজন মারা পড়ল।

সত্যসত্যই পুলিশকে গণনা আরম্ভ করতে হল। একের নম্বর হচ্ছে–কেচ। কেচ ছিল আবাদি-সর্দারের ডানহাত। সর্দার কানাঘুষোয় খবর পেলে, তাকে পথ থেকে সরিয়ে কেচ দলপতি হতে চায়! দুদিন পরেই পুলিশ, কেচের মৃতদেহ আবিষ্কার করলে। তার বুকে ছোরার আঘাত!

দুইয়ের নম্বর হচ্ছে, এক জহুরি। আবাদি-সর্দার তার দোকান আক্রমণ করেছিল এবং সে বোকার মতো বাধা দিতে গিয়েছিল। তখনি তার মুণ্ড গেল উড়ে।

তিনের ও চারের নম্বর হচ্ছে, এক গৃহস্থ ও তার মেয়ে। আবাদি দলের একজন চুরি করতে গিয়ে গৃহস্থের বন্দুকের গুলিতে মারা পড়ে। দিনকয় পরে আবাদি প্রতিহিংসা নেওয়ার জন্যে গৃহস্থ ও তার মেয়েকে হত্যা করে এল।

এইভাবে পুলিশের গণনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলল।

সারা শহরে হল মহা বিভীষিকার সঞ্চার, কারুরই ধন-প্রাণ আর নিরাপদ নয়! অন্ধকার পাতালরাজ্যের কুজ-রাজা আবাদি, বয়স তার আঠারো বৎসর মাত্র, কিন্তু এই বিকলাঙ্গ বালকের ভয়ে সকলেই থরথরি কম্পমান!

প্যারিসের বিশ্ববিখ্যাত পুলিশের লজ্জা ও অপমানের সীমা নেই। তারা আবাদির নাম শুনেছে, চেহারার বর্ণনা পেয়েছে, কিন্তু তার ঠিকানা জানে না। উপরওয়ালাদের কাছে ধমক খেয়ে-খেয়ে, বড় বড় নামজাদা ডিটেকটিভদের প্রাণ হল ওষ্ঠাগত।

মার্টিন নামে এক ছোকরা তখন গোয়েন্দা বিভাগে সবে ঢুকেছে। সে ভাবলে, আবাদি সর্দারকে যদি ধরতে পারি তাহলে আমার উন্নতিতে বাধা দেয় কে? সেও তলে তলে খোঁজ নিতে লাগল, কিন্তু কোথাও তার পাত্তা পেলে না!

.

ইতিমধ্যে আর এক খবর শোনা গেল। পেরুগিন নামে এক দুরাত্মা তার খুড়িকে খুন করে প্রাণদণ্ডের হুকুম পেয়েছিল, কিন্তু তার আগেই সে কারারক্ষীকে হত্যা করে জেল ভেঙে পালিয়েছে। পুলিশ সন্দেহ করে, সে নাকি প্যারিসে এসেই লুকিয়ে আছে! নানান খবরের কাগজে পেরুগিনের চেহারারও বর্ণনা বেরুল। তার গায়ের জোরও যেমন ভয়ানক, শরীরও তেমনি লম্বা-চওড়া! একে আবাদি-সর্দারকেই নিয়ে লোকের প্রাণান্ত-পরিচ্ছেদ, তার উপরে আবার এই খুনে পেরুগিনের কথা শুনে সকলের পিলে গেল চমকে! এখন কাকে রেখে কাকে সামলানো যায়?

প্যারিসের কোনও-কোনও কফিখানায় ভদ্রলোকেরা প্রাণ গেলেও ঢোকে না। সেখানে কেবল চোর, ডাকাত ও হত্যাকারীর আড্ডা বসে। তোমরা বোধহয় জানো না, কলকাতাতেও এই ধরনের কফিখানা আছে, তাদের মালিকরাও গুন্ডাদের সর্দার।

প্যারিসের ওই শ্রেণির কফিখানায় হঠাৎ একজন নতুন লোকের আবির্ভাব হল। লম্বায় চওড়ায় চেহারা মস্তবড়, সে কারুর সঙ্গেই কথা কয় না, নিজের মনেই খেয়ে-দেয়ে চলে যায়।

চোর ও বদমাইশের দলে কৌতূহল জাগল, এই লোকটা কে?

কফিখানায় মালিক বললে, চেহারা আর হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, ও সেই পেরুগিন ছাড়া আর কেউ নয়। খবরের কাগজে আমি পড়েছি, মার্সিলিসের জেল ভেঙে পেরুগিন পালিয়ে এসেছে।–আচ্ছা, ওর সঙ্গে একটু আলাপ করেই দেখা যাক না কেন? মালিক, লোকটির কাছে গিয়ে শুধোলে, কি হে ভায়া, মার্সিলিস থেকে আসছ নাকি?

লোকটি লাফ মেরে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠল, তোর নিকুচি করেছে! যদি এসেই থাকি, হয়েছে কি? বলেই সে কোমরবন্ধে হাত দিলে। তার কোমরবন্ধে রয়েছে মস্ত এক ছোরা!

মালিক বললে, হু, তুমি দেখছি একটি জাহাবাজ বাজপক্ষী! বহুতআচ্ছা, এসো তবে, আমার সাঙাতদের সঙ্গে বসে খেয়ে-দেয়ে একটু ফুর্তি করবে চলো!

লোকটি নারাজ হল না। দলে গিয়ে মিশল বটে, কিন্তু কথাবার্তা বড় একটা কইলে না। নাম জিজ্ঞাসা করাতে বললে, ফ্রাঙ্কোইস। কিন্তু সবাই বুঝলে, তার আসল নাম–পেরুগিন।

আবাদির কানে এই খবর গেল। সে স্থির করলে, এমন কাজের লোককে হাতছাড়া করা হবে না। তার আড্ডায় ফ্রাঙ্কোইসের নিমন্ত্রণ হল। কিন্তু আবাদি-সর্দার বয়সে ছোকরা হলে কি হয়, সে মহা হুঁশিয়ার ব্যক্তি। প্রথমেই সে দেখা দিলে না, আগে আড়াল থেকে লুকিয়ে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে অনেকক্ষণ ধরে ফ্রাঙ্কোইসকে পরীক্ষা করলে। পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক হলে পরে সে বেরিয়ে এল!

কিন্তু ফ্রাঙ্কোইস প্রথমটা কিছুতেই তার দলে ভর্তি হতে রাজি হল না। কয়েকদিন সাধাসাধির ও অনেক লোভ দেখাবার পর শেষটা সে স্বীকার পেলে।

ঠিক সেইসময়ে ফ্রান্সের এক মন্ত্রীর বাড়ি লুট করবার জন্যে দলের মধ্যে ষড়যন্ত্র চলছিল। মন্ত্রীবাড়ির এক দাসী ছিল আবাদি সর্দারের চর। সে এসে খবর দিয়েছে, বাড়ির সমস্ত লোকজন নিয়ে মন্ত্রী বিদেশে হাওয়া খেতে গেছেন, বাড়িতে আছে খালি সে আর একজন দ্বারবান।

আবাদি ঠিক করলে, প্রথমেই এই ব্যাপারে ফ্রাঙ্কোইসকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে সে তার সাহস, বুদ্ধি ও শক্তি পরীক্ষা করবে।

যথাসময়ে সন্ধ্যার পর আবাদি-সর্দারের এক চ্যালা একখানি দামি মোটরগাড়ি চুরি করে নিয়ে এল। আবাদি ও ফ্রাঙ্কোইস দস্তুরমতো হোমরা-চোমরার মতো সাজপোশাক পরে মন্ত্রীর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হল।

তখন পথঘাট নির্জন। তাদের সন্দেহ করতে পারে এমন কেউ নেই।

বাড়ির ভিতরে ঢুকে আবাদি ও ফ্রাঙ্কোইস দেখলে, একখানা আরাম-চেয়ারে আধশোয়া অবস্থায় দ্বারবান নাক ডাকিয়ে নিদ্রা দিচ্ছে।

আবাদি তার মোটা লাঠিগাছটা বাগিয়ে ধরে পা টিপেটিপে এগিয়ে গেল।

আচম্বিতে বিনামেঘে বজ্রাঘাতের মতো দ্বারবান এক লাফে দাঁড়িয়ে উঠে আবাদিকে ধরে তুলে আছড়ে মারলে!

আবাদি মাটির উপরে পড়েই চোখের নিমিষে অটোমেটিক রিভলভার বার করে বারংবার ঘোড়া টিপতে লাগল, কিন্তু কী ভয়ানক, ঘোড়া পড়ে, তবু টোটা ফাটে না!!

আবাদি চিৎকার করে উঠল, ফ্রাঙ্কোইস! গুলি করে ওকে মেরে ফেল!

কিন্তু দ্বারবানের পাশে দাঁড়িয়ে তার বন্ধু হাসতে হাসতে বললে, আমি ফ্রাঙ্কোইস নই, আমি পেরুগিনও নই,আমি হচ্ছি, ডিটেকটিভ মার্টিন! তেমার রিভলভার থেকে আমিই টোটা সরিয়ে ফেলেছি!

হিংস্র গোখরোর মতো ফেঁশ করে উঠে আবাদি বললে, ও, তাই নাকি? বেশ, তাহলে ধর আমাকে! বলেই সে জামার পকেট থেকে সুদীর্ঘ এক ছোরা বার করে ফেললে!

মার্টিনের সঙ্কেত শুনে তখনি গুপ্তস্থান থেকে পাঁচজন সশস্ত্র পাহারাওয়ালা আত্মপ্রকাশ করলে!

বিফল আক্রোশে পাগলের মতো হয়ে আবাদি দীর্ঘ ছোরাখানা শূন্যে তুলে তীব্র বেগে মার্টিনকে ছুঁড়ে মারলে! এমন তার হাতের টিপ যে, মার্টিন সাঁৎ করে সরে না দাঁড়ালে ছোরাখানা নিশ্চয়ই তার বুকে গিয়ে বিঁধত!

মার্টিন বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে দুই হাতে আবাদির গলা টিপে ধরে বললে, হতভাগা শয়তান! তোকে বধ করলেও কোন পাপ হয়না, কিন্তু তা আমি করব না! নে, এখন হাতকড়ি পর!

.

মার্টিনের নখদর্পণে ছিল আবাদির সব ঘরের খবর। একে-একে তার দলের প্রত্যেকেই ধরা পড়ল।

আবাদিকে অভয় দিয়ে বলা হল, তুমি যদি সরকারি-সাক্ষী হয়ে সব কথা স্বীকার করো, তাহলে তোমার দলের সবাইকে শাস্তি দিয়ে, তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

সে সদর্পে বললে, আমি হচ্ছি, আবাদি-সর্দার! দলের প্রত্যেককে রক্ষা করব বলেই আমি সর্দার হয়েছি। আমি তাদের কারুর বিপক্ষেই সাক্ষী হব না, আমার যা হয়, তোক!

তোমাকে যদি ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তুমি কী করবে?

যা করছিলুম তাই করব! আড্ডায় ফিরে গিয়ে আবার নতুন দল গড়ব।

 বিচারের ফলে, আবাদিকে সুদূর কালিফোর্নিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হল, কারাবাসের জন্যে।

আবাদি বললে, তোমরা হুকুম দিয়েছ বলেই যে আমাকে যাবজ্জীবন কারাবাস করতে হবে এমন কোনও কথা নেই। আমি ঠিক আবার পালিয়ে আসব।

কিন্তু আবাদি তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে পারেনি। কারাগারেই জ্বর-রোগে অকালে তার মৃত্যু হয়।

মানুষ যা চায়, আবাদি নিজের চেষ্টায় সে-সমস্তই অর্জন করেছিল–বিদ্যা, বুদ্ধি, শক্তি। কেবল কুপথে গিয়েই সেসব ব্যর্থ করলে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *