নারী

স্বাতন্ত্র স্পর্ধায় মত্ত পুরুষেরে করিবারে বশ
               যে-আনন্দরস
          রূপ ধরেছিল রমণীতে,
               ধরণীর ধমনীতে
          তুলেছিল চাঞ্চল্যের দোল
               রক্তিম হিল্লোল,
          সেই আদি ধ্যানমূর্তিটিরে
               সন্ধান করিছে ফিরে ফিরে
                   রূপকার মনে-মনে
          বিধাতার তপস্যার সংগোপনে।
          পলাতকা লাবণ্য তাহার
          বাঁধিবারে চেয়েছে সে আপন সৃষ্টিতে
               প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে।
          দুর্বাধ্য প্রস্তরপিন্ডে দুঃসাধ্য সাধনা
               সিংহাসন করেছে রচনা
                   অধরাকে করিতে আপন
                        চিরন্তন।
          সংসারের ব্যবহারে যত লজ্জা ভয়
               সংকোচ সংশয়,
                   শাস্ত্রবচনের ঘের,
               ব্যবধান বিধিবিধানের
             সকলি ফেলিয়া দূরে
          ভোগের অতীত মূল সুরে
               নগ্নতা করেছে শুচি,
          দিয়ে তারে ভুবনমোহিনী শুভ্ররুচি।
               পুরুষের অনন্ত বেদন
     মর্তের মদিরা-মাঝে স্বর্গের সুধারে অন্বেষণ।
               তারি চিহ্ন যেখানে-সেখানে
                        কাব্যে গানে,
                  ছবিতে মূর্তিতে,
             দেবালয়ে দেবীর স্তুতিতে।
     কালে কালে দেশে দেশে শিল্পস্বপ্নে দেখে রূপখানি,
             নাহি তাহে প্রত্যহের গ্লানি।
        দুর্বলতা নাহি তাহে, নাহি ক্লান্তি–
              টানি লয়ে বিশ্বের সকল কান্তি
     আদিস্বর্গলোক হতে নির্বাসিত পুরুষের মন
              রূপ  আর অরূপের ঘটায় মিলন।
     উদ্ভাসিত ছিলে তুমি, অয়ি নারী, অপূর্ব আলোকে
                 সেই পূর্ণ লোকে–
              সেই ছবি আনিতেছ ধ্যান ভরি
        বিচ্ছেদের মহিমায় বিরহীর নিত্যসহচরী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *