চাই চাই আজো চাই তোমারে কেবলি।
আজো বলি,
জনশূণ্যতার কানে রুদ্ধ কণ্ঠে বলি আজো বলি—
অভাবে তোমার
অসহ্য অধুনা মোর, ভবিষ্যত বন্ধ অন্ধকার,
কাম্য শুধু স্থবির মরণ।
নিরাশ অসীমে আজো নিরেপক্ষ তব আকর্ষণ
লক্ষ্যহীন কক্ষে মোরে বন্দী ক’রে রেখেছে, প্রেয়সী,
গতি-অবসন্ন চোখে উঠিছে বিকশি’
অতীতের প্রতিভাস জ্যোতিষ্কের নিঃসার নির্মোকে।
আমার জাগর স্বপ্নলোকে
একমাত্র সত্তা তুমি, সত্য শুধু তোমারি স্মরণ।।
তবু মোর মন
চাহে নাই মোহের আশ্রয়।
জানি তুমি মরীচিকা ; তোমা সনে প্রাণ বিনিময়
কোনোদিন হবে না আমার।
আমার পাতালমুখী বসুধার ভার,
জানি, কেহ পারিবে না ভাগ ক’রে নিতে ;
আমারে নিঃশেষে পিষে, মিশে যাবে নিশ্চিহ্ন নাস্তিতে
এক দিন স্বরচিত এ পৃথিবী মম।।
জানি ব্যর্থ., ব্যর্থ সেই সন্ধ্যা নিরুপম
যবে মোর আননে নেহারি
অগাধ নয়নে তব ফলদা স্বাতীর পূণ্য বারি
উঠেছিল সহসা উচ্ছলি।
জানি সেই বনপথে, চিরাভ্যস্ত প্রেম নিবেদনে
আপনারে ছলি,
পশিনি তোমার মর্মে, নিজের গহনে
জমিয়েছিলাম শুধু মিথ্যার জঞ্জাল।
জানি, কত তরুণীর গাল
অমনি অধৈর্যভরে শতবার দিয়েছি রাঙায়ে ;
অনুপূর্ব পথিকার পারে
বজ্রাহত অশোকেরে অলজ্জায় করেছি বিনত
ক্ষণিক পুষ্পের লোভে। ক্রমাগত
তাদের পদাঙ্ক মুছে গেছে রৌদ্রে, ধারাপাতে, ঝড়ে ;
যুগান্তরে
তোমার স্মৃতিও জানি, সেই মতো হারাবে ধুলায়।।
তবু চায়, প্রাণ মোর তোমারেই চায়।
তবু আজ প্রেতপূর্ণ ঘরে
অদম্য উদ্বেগ মোর অব্যক্তেরে অমর্যাদা করে ;
অনন্ত ক্ষতির সংজ্ঞা জপে তব পরাক্রান্ত নাম—
নাম—শুধু নাম—শুধু নাম।।
১৫ মে ১৯৩২