নামডাকের বহর

নামডাকের বহর

কলেজে উঠেই প্রিসিলা এসে ধরল আমায় একদিন, মেজমামা, একটা টাকা রোজগারের উপায় করে দাও।

টাকা রোজগার? ওর কথায় আমি অবাক হয়ে যাই; তোর আবার টাকা রোজগারের দরকার কী! রোজকার খরচ রোজ রোজ মিটে গেলেই তো হলো। তা কি তোর মিটছে না আর?

তাহলে কি আর আমি বলি তোমায়। তার দীর্ঘশ্বাস পড়ে।

খাওয়া পরার ধান্দাতেই মানুষ রোজগার করতে বেরোয়। আমি বলিঃ তোর তো সে-ধান্দা নেইকো। বাড়িতে খাস, খাস বাড়িতে বাস, আমার মতন বাসায় না। পেটে ভাত, মাথায় ছাতের ভাবনা নেইকো তোর। আমার মতো মেসখচা যোগাতে হয় না তোকে। আর মা মাসির দৌলতে শাড়ি ব্লাউজ তো এনতারই পাচ্ছিস-পরারও তোর কোনো ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। তাহলে?

বাড়ি খাওয়া খেলেই হয়ে গেল। বাইরে খেতে হয় না বুঝি?

সেই জন্যেই তো তোকে কেএডুকেশনের কলেজে অনেক কাটখড় পুড়িয়ে ভর্তি করে দিলাম। আবার কী চাই? বাইরেব খাবাব ভাবনা তো মিটেই গেল তক্ষুনি।

কী করে শুনি?

সহপাঠী বন্ধুরাই তো খাওয়াবে তারপর। তোর মতন স্মার্ট মেয়ে কি পড়তে পায় নাকি? মানে, কলেজে পড়তেই পারে কেবল? তাকে উড়তেও হবে না সেই সঙ্গে? উড়তির সঙ্গে ফুর্তি-ফুর্তির সঙ্গে উড়তি। সহপাঠীরাই তো এটা ওটা সেটা খাওয়াবে তুই খেতে চাস। কফি হাউসে, রেস্তরাঁয় কি যেখানে তোর প্রাণ চায়।

বারে! খেলেই হলো বুঝি? খাওয়াতে হবে না ছেলেদের? তাহলে তাদের কাছে মান থাকবে কেন?

মান রাখার দায় নয় তোদের। আমি জানাই: মুখরক্ষা হলেই হলো।

মুখরক্ষা?

তারা কি তোর কাছে তুচ্ছ জিনিস খেতে চাইবে রে? যেসব খাবার পয়সা ফেললেই কিনে খাওয়া যায় তোর কাছ থেকে তারা তা খাবে কেন? বরং এমন জিনিসই খেতে চাইবে যা নাকি পয়সা দিয়ে মেলে না, পেলে ওমনি পাওয়া যায়…আর খাওয়ার সঙ্গে সতেই খাওয়ানো হয়ে যায় ওমনি। যা, সে-খাবার তো পরের থেকে খেতে ঋরে, পরীর থেকেই খাবার। উপযুক্ত ভাগনির কাছে এর চেয়ে বেশি পরিষ্কার করে বলার আমি প্রয়োজন যোব করি না।

যাও! তোমার যতো সব আজে বাজে কথা। আমি চাইছি পার্ট টাইমের কোন কাজ-টাজ করে কিছু টাকা উপায় করতে…আমার পার্সোনাল খরচ মেটানোর জন্যে। আর তুমি কিনা…বড় হয়েছি না? চিরকাল কেন মা বাবার গলগ্রহ হয়ে থাকবো বললা? বড় হইনি কি? কলেজে পড়ছিনে? তুমি একটা সেলফুমেড ম্যান, তাই তোমার কাছে পরামর্শ চাইতে এলাম আর তুমি কিনা যতো…বলে প্রিসিলা ফেস করে উঠল।

আমি লেফমেড ম্যান! আমার অবাক হবার পালা এবার।।

না? বলেনি যে, তুমি বারো বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে কলকাতায় খবর কাগজ বেচে বড় হয়েছ? বললানি তুমি?

বড়ো হয়েছি? বয়সে বড় কিন্তু কার্যত নয়। তখন খবর কাগজ বেচে দিনগুজরান করতাম এখনও সেই খবর কাগজের দৌলতে বেঁচে রয়েছি—এই মাত্র। তা, তুইও কি সেই খবর কাগজ বেচতেই চাস নাকি?

কথাটা আমার কেমনতরো লাগে যেন। শাস্তরে নরানাং মাতুলক্রম বলে বটে, ভাগনেরা মামার মতই হয়ে থাকে নাকি, কিন্তু ভাগনেরা মামার চরিত্রের ভাগ পেলেও ভাগনিদের ভাগ্যে তেমনতরো দুর্ঘটনা ঘটে বলে আমি শুনিনি কখনো। বরাতের ফেরে এককালে কাগজ ফেরি করতে হয়েছে বটে, সেজন্যে আমি দুঃখিত নই আদপেই, কিন্তু আমার জীবনে সেসব ফের ফিরে আসবে—ভাগ্যের এতখানি ফেরোজি আমি ভাবতেই পারিনে।

তা কেন? খবরের কাগজ বেচতে যাব কেন? সে বলেঃ আমি ভাবছি গোয়েন্দাগিরি করলে কেমন হয়?

গোয়েন্দাগিরি করবি! তুই? বিস্ময়ে থই পাই না।

মানে, অ্যামেচার গোয়েন্দা আর কি! এই তোমার বিমল কুমাব কি ব্যোমকেশের মতই। দুম করে সে যেন আমার সামনে একটা বোমা ফাটায়। সখের গোয়েন্দাগিরিতেও তো পয়সা পাওয়া যায়। যায় না?

অ্যাঁ? তুই করবি গোয়েন্দাগিরি? আমার শক-টাও ব্যক্ত হয়ে পারে না? গোয়েন্দাগিরির জানিস কী তুই?

সবকিছু। বিস্তর পড়াশুনা করেছি এই বিষয়ে।

বলিস কিরে? কোথায় পড়লি? কোথায় শেখানো হয় এই গোয়েন্দাগিরি? আমি বিস্মিত হই : কই, আমি তো এর কিছু শুনিনি—জানিনে।।

কোথাও শেখায় না। বই পড়ে নিজে নিজে শিখতে হয়। আমি লাইব্রেরি থেকে বইটই আনিয়ে ঘরে বসে রপ্ত করলাম তো! পাঁচকড়ি দে-র থেকে শুরু করেছি, তারপর রবার্ট ব্লেক সিরিজ সারা করলাম, তারপরে দীনেন্দ্রকুমার রায় থেকে হেমেন্দ্রকুমার রায়ে চলে এলাম, বিমল কুমারদের সব কীতিকাহিনী পড়ার পর ব্যোমকেশে পড়লাম এসে। শেষটায়। এমন কি, তোমার ওই নীহার গুপ্ত, গৌরাঙ্গপ্রসাদ বসুকেও বাদ দিইনি।

তাহলে তো তুই পাকা গোয়েন্দা হয়ে গেছিস, মানতে হয় আমায়।

তাহলে এইবার আমায় লাগিয়ে দাও একজায়গায়। প্রিসিলা বলেঃ তোমার তো বিস্তর জায়গায় জানাশোনা…

কোথায় যে গোয়েন্দা লাগায় তাই আমি জানিনে, আমি কী লাগাব! আমি বলিঃ বিলেতে বড় বড় স্টোর হাউসে মেয়ে গোয়েন্দা রাখে বলে শুনেছি। সেখানে অনেক মেয়ে খদ্দের সেজে এসে দোকানের মালপত্র সরায়, তাদের ধরার জন্যে তারা গোয়েন্দা রাখে। কিন্তু এখানে তেমনটা রাখে কিনা তা তো আমার জানা নেই ভাই!

এখানকার বড় বড় স্টোরে কি চুরি যায় না জিনিস? গোয়েন্দা লাগায় না তারা?

কী করে বলব। তুই এক কাজ কর বরং, তুই নিজের থেকেই লেগে যা না কেন? কলকাতারনামকরা কোনোবড় স্টোর বেহেনিয়েছদ্মবেশে গিয়ে নিজের থেকেইখদ্দেরদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে থাক। তারপর হাতে নাতে কাউকে ধরতে পারলে বামাল সমেত ম্যানেজারের কাছে নিয়ে ছেড়ে দিবি। তখন নিশ্চয়ই তিনি খুশি হয়ে তোকে মোটা রকম পুরস্কার দেবেন। চাই কি, পুরস্কার স্বরূপ, মাস মাইনেয় গোয়েন্দাগিরির কাজটাও পাকাপাকি পেয়ে যেতে পারিস ওখানেই।

এ কথাটা মন্দ বলোনি তুমি। বলল প্রিসিলা। তোমার মাথায় বেশ আইডিয়া খ্যালে মেজমামা। সত্যি।

বলেই সে বেরিয়ে পড়ল—আইডিয়াটাকে আরো ভালো রকম খেলাবার জন্যেই বোধ করি।

কিন্তু আইডিয়াকে যেমন খেলানো যায় তেমনি আইডিয়ারও নিজের একটা খেলা থাকে—সেও আবার নিজের আইডিয়ামাফিক তার খেলোয়াডকে খেলায় কিনা।

সন্ধ্যেবেলায় প্রায় অদ্ভুত লোচনেই ফিরে এল প্রিসিলা।

প্রিসিলার আইডিয়া ছিল, কলকাতার নামজাদা বড় স্টোরগুলোর কোন একটায় সে খদ্দেরের ছদ্মবেশে প্রবেশ করবে। আমি অবশ্যি বলেছিলাম যে, খদ্দেরকে কোনো ছদ্মবেশ নিতে হয় না, খদ্দেরের বেশে গেলেই হয়।

তা জানি। তাহলেও আমি যে সত্যিকারের খদ্দের, কোনো গোয়েন্দা টোয়েন্দা নই সেটা জানাবার জন্যই কেনা-কাটার প্রয়োজন বোঝাতে বড় একটা ব্যাগ সঙ্গে নিয়েছিলাম। আসলে আমি গিয়েছি তো যত সন্দেহজনক চরিত্রের প্রতি তীক্ষ্ণ লক্ষ্য রাখতেই, তাহলেও তাদের সন্দেহ যেন ঘুণাক্ষরেও আমার ওপরে না পড়ে সেই জন্যেই, বুঝলে কিনা মেজমামা? সব লোকের ওপরেই লক্ষ্য রাখব, তাদের গতিবিধিতে নজর থাকবে আমার, আর যেমনি না তাদের কাউকে কোনো জিনিস অলক্ষ্যে সরাতে দেখেছি অমনি গিয়ে হাতে নাতে পাকড়েছি তাকে—আর তার পরেই তাকে সোজা নিয়ে স্টোরের ম্যানেজারের কাছে গিয়ে হাজির করে দেওয়া—এই তো আমার কাজ? তাই না?…

কলেজে দুটো ক্লাসের পরে বাকী দুই পিরিয়ডের প্রক্‌সির ব্যবস্থা করে প্রায় দুটো নাগাদ তো ঢুকলাম গিয়ে সেই স্টোরে। প্রথমেই স্টোরের সব কটি বিভাগ পুঙ্খানুপুঙ্খ খুঁটিয়ে দেখলাম। কোথাও ছোটদের পোষাক-আশাক, কোথাও শিশুদের খেলনা-সামগ্রী, কোনোখানে বড়দের শার্ট প্যান্ট ইত্যাদি, কোনখানে স্টেশনারি, কোথাও আবার মেয়েদের প্রসাধনদ্রব্য। বিভাগগুলো সব ঘুরে ঘুরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেই দুঘণ্টা কেটে গেল, কিন্তু সন্দেহজনক চরিত্রের একজনকেও চোখে পড়ল না আমার। সবাই আসছে, জিনিস দেখছে কিনহে, দাম ফেলে দিচ্ছে, ফ্যাশমেমো আর প্যাকেট নিয়ে চলে যাচ্ছে অলক্ষ্যে রাবার মতলব দেখা গেল না কারোই। দুঘণ্টা ধরে এইসব দেখেশুনে আমার উৎসাহ প্রায় নিবে যাবার মতন, এমন সময় একটা আঁদরেল গোহের মহিলাকে দেখতে পেলাম—আমার চেয়েও বড়ো এক ব্যাগ হাতে–সর্বত্র হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।

ব্যাগ হাতে মেয়েটিকে দেখবার পরই ই বেশ ব্যগ্র হয়ে উঠলি বোথ হয়? আমি শুধাই।

নিশ্চয়। এত বড়ো ব্যাগ নিয়ে কেউ কি টুকিটাকি জিনিস কিনতে বেয়োয় নাকি কখনো? মোটা রকম মাল সরাবারতালেইরয়েছে মেয়েটা বুঝতে পারলাম একনজরেই। এতক্ষণে বলতে কি, একটুখানি আশার সঞ্চার হলো আমার।

মেয়েটা করছিল কি, প্রত্যেক কাউন্টারে গিয়ে সাজানো জিনিসগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল, দেখেশুনে আবার রেখে দিতে লাগল যথাস্থানে একটা জিনিসও নিজের ব্যাগের মধ্যে পাচার করতে দেখালাম না তাকে। তাহলেও আমি তাকে তাকে রইলাম। ফাঁকতালে সরাবার মতলবে রয়েছে বেশ দামী গোহের কিছু একটা ওর হাতের নাগালে এলেই সরিয়ে ফেলবে—টের পেলাম বেশ। সেই কারণেই নানান জিনিস এইভাবে পরীক্ষা করে দেখবার ওর হন।

সেও যেখান থেকে যেখানে যাচ্ছে, আমিও একটু দূর থেকে ওর অগোচরে পিছু পিছু রয়েছি ওর। দেখি না কোথায় যায় কী সরায় কোন জিনিস হাত সাফাই করে।

দেখা যাক ওর বাছবিচার শেষ পর্যন্ত। আমার কড়া নজর এড়াবার সাধ্য নেই ওর। এতক্ষণে একটা খাঁটি মেয়ে বদমাইস আমার হাতের মুঠোয় এসেছে বাবা! কিছুতেই ওর রেহাই নেই আজ আর।

মেয়েদের শাড়ি ব্লাউজের ডিপার্টমেন্ট থেকে বাচ্চাদের পোশাকের ডিপার্টমেন্টে গেল মেয়েটি। আমিও চলেছি ওর পিছু পিছু। ও যেমন একটা জিনিস তুলে নিয়ে দ্যাখে আমিও আরেকটা তুলে দেখিও যে-ধারে যায় আমিও সেইধারে।

যেতে যেতে যে-ধারটায় সারি সারি সব ওয়াটারপ্রুফ ঝুলছিল তার ভেতরে গিয়ে মেয়েটা যেন হারিয়ে গেল হঠাৎ। এতক্ষণে আমি ওর বিরূদ্ধে একটা প্রফ পেলাম।….

ওয়াটারপ্রুফ?

অপরাধীরাই তো গাঢাকা দিয়ে থাকে সাধারণতঃ। তাই না, মেজমামা? ও যদি তুক না হবে তো চোখের উপর থেকে উপে যাবে কেন এমন করে?

তা বটে। সায় দিতে হয় আমায়।

ওয়াটারপ্রফগুলো যেন ওকে গিলে ফেলল মনে হলো আমার। ওর ভেতরে কী রহস্য আছে পরীক্ষা করার জন্য ঝোলানো বর্ষাতিগুলো নেড়ে চেড়ে দেখতে গেছি আমি, এমন সময়ে আমার পেছন থেকে কে যেন চেঁচিয়ে উঠল—হ্যান্ডস্ আপ।

পেছন ফিরে দেখি ওমা! সেই মেয়েটাই!

আর তার পিস্তলের নল আমার দিকে বাগাননা।

এর মানে? আমি তাকে জিজ্ঞেস করি। হাত ফাত না তুলেই।

মানে এক্ষুনি তুমি বুতে পারবে কি! তোমাকে ম্যানেজারের কামরায় নিয়ে যাই আগে। বলল সে। টের পাবে তখন। বলে বেশ শক্ত করে আমায় পাকড়ে ধরে ম্যানেজারের সামনে নিয়ে গিয়ে সে খাড়া করল। এমন খারাপ লাগতে লাগলো আমার বেকী বলবো তোমায়!

এটা আপনাদের কীরকম তা মশাই? বললাম আমি ম্যানেজারকে এই মেয়েটা কোখেকে হঠাৎ মাটি খুঁড়ে উঠে এমন করে আমায় পাকড়ে আনল যে এখানে? এর মানে আমি জানতে চাই। আমায় থামিয়ে দিয়ে ম্যানেজার সেই মেয়েটির দিকে চোখ তুলে তাকালেন। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।

আমায় দেখিয়ে সে বললে—এই মেয়েটাকে আমি প্রায় আড়াইটার সময় আমাদের স্টোরে ঢুকতে দেখেছি। কোনো কিছু কেনাকাটার নাম নেইকো, এঘরে ওঘরে ঘুরঘুর করছে খালি! তখন থেকেই আমার সন্দেহ হয়েছে, লুকিয়ে লুকিয়ে লক্ষ্য রেখেছি ওর ওপর। তারপর ও করেছে কী শুনুন!…।

কিছু করিনি আমি। প্রতিবাদ করতে হলো আমায়-আমিই বরং ওই মেয়েটার ওপর নজর রেখেছিলাম। কী করে ও, দেখছিলাম তাই। আপনার স্টোর থেকে মালপত্তর সরাবার মতলব ছিল ওর। আসলে ও হচ্ছে একটা আস্ত বদমায়েস। মেয়ে বদমায়েস।

বদমাস নয়, ডিটেকটিভ। বাধা দিয়ে জানালো ম্যনেজারঃ আমাদের স্টোরের তরফ থেকে নিযুক্ত। খদ্দেরদের কেউ কোনো জিনিসপত্র না সরায় সেদিকে লক্ষ্য রাখাই ওর কাজ।

ম্যানেজারের কথায় তখন তার আসল পরিচয় পেয়ে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আমায় থানায় নিয়ে জমা দেওয়া উচিত কি না সেই বিষয়ে ওদের মধ্যে আলোচনা চলল তখন।

থানায়! শোনা মাত্রই আমি চমকে উঠেছি। গোয়েন্দা যে থানায় সোপর হতে পারে তা আমার ধারণা ছিল না।

ম্যানেজার আমার পরিচয় জানতে হলে আমি তোমার নাম বললাম তখন।

শিব্রামের তুমি ভাগনি! সেকথা বলতে হয়!

তোমার নাম শুনে আমার পরিচয় জানবার পর থানায় না দিয়ে ছেড়ে দিল সে আমায়।

বলিস কী? নিজের নামডাকের গৌরবে আমি একটু গর্ব বোধ করি, বলতে কি!

শিব্রামের ভাগনি তুমি? ভারী আশ্চর্য তো! বলে সে হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে মইল খানিকক্ষণ।

মুগ্ধ দৃষ্টিতে?

মোটেই মুগ্ধ দৃষ্টি নয় মামা! বরং বেশ বিরূপ নেত্রেই তাকালো বলতে পারো। সবিস্ময়ে সে বলতে লাগল বার বার আশ্চর্য, ভারী আশ্চর্ম তো!

কেন, আশ্চর্যটা কিসের? আমার ভাগনি কি কেউ হতে পারে না নাকি? কতো কালো কালো ভূতদের আহামরি আহামরি ভাগনি হয়ে থাকে। তাতে অবাক হবার কী আছে! শুনে আমি নিজেই আশ্চর্য হই।

সেই শিব্রাম? আমার কথা শুনে যেন তাজ্জব হয়ে গেল সে—সেই চারশো বিশ? তুমি তার ভাগনি? সেই ফোরটোয়েটি শিবরামের ভাগনি তুমি? ভারি আশ্চর্য তো?

কিন্তু, এটা আবার কেমনতরো কথা যেন? এর মানে? প্রিসিলার খবরে আমিও যে একটু হতবাক হইনে তা নয়।

আমিও তো সেই কথাই শুধিয়েছিলাম, ম্যানেজারকে। তাতে তিনি বললেন-হেলেরাই তো মামার মতন হয়ে থাকে এই জানি। নরাণাং মাতুলক্রম, বলে থাকে কথায়। কিন্তু ভাগনিরাও যে মামার চরিত্রের ভাগ পায়, তাই নিয়ে জন্মায়, তা আমি এই প্রথম দেখলাম।

আমার মামাকে আপনি চারশো বিশ বলছেন যে, এ আপনার কেমনধারা কথা? আমি খাস্তা হয়ে উঠেছি তখন।

আমার কোন কথা নয়, এটা পেনালকোডের ধারা। বলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমায়—তোমার নাম কী শুনি?

আমি বললাম–প্রিসিলা বোস।

তোমার কোনো ভাই-টাই আছে আর?

আছে এক ভাই। টিক্‌লু তার নাম। টিক্‌লু মিত্তির।

মিত্তির? তুমি বোস আর সে মিত্তির কেন গো? তোমার তো বিয়ে হয়নি যদুর দেখছি। আমার কপালের ওপর কটাক্ষপাত করে তার বলা।

মাস্তুতো ভাই যে।

ওহো! তাইতো হবে। তোমাদের যে মাস্তুতো ভাই-ই হয়ে থাকে। তাই বটে—তাই হবে তো….তাহলে শোনো, তোমাদের নামটা আমি একটু পালটে দিচ্ছি, বুঝলে? তুমি হলে মিস্ টুটেন বোস, আর সে হলো গে মাস্টার টুটেন মিত্তির। টুটেন বোস আর টুটেন মিত্তির–এখন থেকে, কেমন?

টুটেন বোস আর টুটেন মিত্তির! তার মানে? কথাটার আমি মর্মভেদ করতে পারি নাযদিও কথাটা কেমন যেন মর্মভেদী বলেই আমার বোধ হতে থাকে।

তুমি ধরতে পারছনা মেজমামা? প্রিসিলা বলে—আমি তো বলবমাত্রই বুঝেছিলাম। তুমি অঙ্কে বেজায় কাঁচা মামা।

অঙ্কের সঙ্গে এর সম্পর্ক?

আহা, আমরা তোমার ভাগনে ভাগনি না? তোমার চরিত্রের ভাগ আমরা পেয়েছি তো? আর তোমাকে, মানে, ফোরটোয়েনটিকে দু-ভাগ করলে কী হয়? টু টেন টু টেন হয় না?

কথাটায় তাক লাগলেও অবাক হবার কিছু নেই, সত্যি! আমার গুণপনার ভাগাভাগি করলে তাই দাঁড়ায় বটে, আমি ভেবে দেখি। ফের ওদের দুজনের যোগবলে আমাকেই পাওয়া যায় বার বার।

টুটা ফুটা এই আমাকেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *