ধিক্কার (ধিক্কারে বিষায়ে ওঠে মন)

ধিক্কার

ধিক্কারে বিষায়ে ওঠে মন
যখনই স্মরণ
নিরুদ্দিষ্ট চংক্রমণে ফিরে সে-তিথিতে
যবে তব করপুটে মোর হিয়া পেরেছিল দিতে,
শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা মানি,
সর্বশেষ অন্তরীয়খানি,
নিজেরে উজাড় করি, নিষ্কবচ করি।।

হায়, আত্মম্ভরি,
তার অর্থ পশিল না তোমার মানসে :
যৌবনের নির্বোধ সাহসে
প্রাপ্য ভেবে, সে-নৈবেদ্য তুমি নিলে তুলি;
দেখিলে না কাঁধে শূন্য ঝুলি,
চ’লে যায় লোকান্তরে মৈত্রীর দেবতা,—
প্রত্যাখ্যাত আশীর্বাদ, প্রতিহত অমৃতবারতা।।

বুঝিলে না, তুমি বুঝিলে না
তুমি শুধু উপলক্ষ; মুক্তহস্ত বিধাতার দেনা
আমি চাই শুধিবারে, তোমারে মধ্যস্থমাত্র ক’রে।
ঋতুপতি বৎসরে বৎসরে
আনিল আমার তরে যে-বিচিত্র বরণের ডালি,
যে-দিব্য দীপালী
জ্বেলে দিল অমাবস্যা মাসে মাসে মোর সংবর্ধনে,
দিন দিন চিত্তের গহনে
উদয়াস্ত রেখে গেল যে-অক্ষয় রূপের সঞ্চয়,
সে তো নয়
ব্যয়কুণ্ঠ কৃপণের লাগি।।

সম্ভোগের স্বপ্ন থেকে উঠেছিল জাগি
আমার হৃদয় তাই, তোমার ভিক্ষার গান শুনে।
তাই সেই অমিত ফাল্গুনে,
সার্বভৌম সুন্দরের অমূর্ত উদ্দেশে,
দেহের দেউলে তব সঁপিলাম সর্বস্ব অক্লেশে।।

কিন্তু ঋণ চুকিল না; কৃতজ্ঞতা হল না লাঘব;
শুধু জনরব
পিটায়ে বিদ্রূপডঙ্কা হাটে হাটে করিল ঘোষণা
অবান্তর অলজ্জার ব্যর্থ বিড়ম্বনা।
সন্ধিক্ষণ
প্রমাণিল আমি অকিঞ্চন।
বৈদ্যুতিক ব্যথা
দেখাল নিঃসঙ্গ শয্যা, উদ্‌ভাসিল নিরর্থ নগ্নতা
মতিভ্রান্ত উর্বশীকান্তের।।

সর্বস্বান্ত যে-ক্ষতির জের
রেখেছে অজ্ঞাত ক’রে আজও মোরে দুঃস্থ নির্বাসনে
পথশূন্য বনের নির্জনে,
সে-সর্বনাশের দায়, জানি, নয় তোমার, আমার।
তথাপি ধিক্কার
মর্মে মর্মে তীব্র কষা হানে;
নিরস্ত্র, বিবস্ত্র হিয়া ছুটে চলে মুমূর্ষার পানে॥

২৩ জানুআরি ১৯৩২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *