1 of 3

ধনুর্ভঙ্গ পণ

ধনুর্ভঙ্গ পণ

অতি কঠোর ও সাংঘাতিক পণ বা প্রতিজ্ঞাকে বাংলা প্রবাদে ধনুর্ভঙ্গ পণ বা ধনুকভাঙ্গা পণ বলা হয়। কোনো ব্যক্তি মনে মনে যা স্থির করে তা থেকে তাকে কোনো অবস্থাতেই টলানো না গেলে এই প্রবাদ প্রযুক্ত হয়ে থাকে।

মিথিলার (বিদেহ বা বর্তমান ত্রিহুত) রাজা জনক সীতার পিতা হিসেবে পরিচিত। তার প্রকৃত নাম সীরধ্বজ। পিতা হ্রস্বরোমা এবং পিতামহ স্বর্ণরোমা। যজ্ঞের উদ্দেশ্যে ভূমি কর্ষণকালে লাঙ্গলের রেখা থেকে রাজা জনক যে অসাধারণ রূপবতী কন্যা লাভ করেন তিনিই সীতারূপে তার কাছে প্রতিপলিত হন। রাজা জনক পণ করেছিলেন যে, যিনি হরধনু ভঙ্গ করতে পারবেন তার হাতে তিনি সীতাকে অর্পণ করবেন। যেন তেন ব্যক্তির সাথে সীতার বিয়ে দিবেন না তিনি।

হরধনু হচ্ছে শিবের ব্যবহৃত বিশাল ধনুক। দক্ষযজ্ঞের যজ্ঞভাগ বিভিন্ন দেবতা নিচ্ছেন কিন্তু মহাদেবকে পাত্তা দিচ্ছেন না কেউ। ক্ষিপ্ত মহাদেব তার ধনুকের জ্যা (ছিলা বা গুণ) আকর্ষণ করে বলেছিলেন যে, তিনি তার ধনুক দিয়ে দেবতাদের শির েদন করবেন। মহাদেবের হুঙ্কারে দেবতারা ভয় পেয়ে তার স্তুতি করতে লাগলেন। তাদের অনুগত ও নতজানু ভাব দেখে মহাদেব প্রসন্ন হয়ে তাদের এই ধনু বা ধনুক উপহার দিলেন। দেবতারা তা জনকের পূর্বপুরুষ দেবরাতের কাছে গচ্ছিত রাখেন। মহাদেবের এই ধনুই হরধনু। পূর্বপুরুষের কাল থেকে হরধনু রাজা জনকের বংশের হেফাজতে ছিল। বিশাল এই হরধনুতে জ্যা রোপণ করা সাধারণ মানুষের শক্তি দ্বারা সম্ভব নয়।

রাজা জনক জানতেন যে, বিশাল হরধনু ভাঙ্গা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তা সত্ত্বেও সীতার বিয়ের বিষয়ে তিনি এই সাংঘাতিক পণ করেন। অবশ্য একমাত্র রামচন্দ্র সেই হরধনুতে জ্যা রোপণ করে বিশাল শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়ে ধনুকটি ভেঙ্গে ফেলেন।

অসম্ভব কাজ বলে বিবেচিত বিষয়ে স্থির মনকে টলানো না গেলে তা হরধনুক বা ধনুক ভাঙ্গা পণ কিংবা ধনুর্ভঙ্গ পণ বলে বিবেচিত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *