1 of 3

দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ

দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ

মন্দ বংশে ভালো লোক জন্মালে তাকে প্রবাদে দৈত্যকুলে প্ৰহ্লাদ বলা হয়। তুলনীয় প্রবাদ-গোবরে পদ্মফুল বা গোবর গাদায় পদ্মফুল।

ব্রহ্মার মানসপুত্র কশ্যপের স্ত্রী ছিলেন দক্ষের তেরোটি কন্যা। এদের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় দেবতা, দানব, পশুপাখি, গন্ধর্ব, রাক্ষস, বৃক্ষলতা, ভূতপ্রেত সবই। এদের মধ্যে অদিতি হলেন দেবমাতা এবং দিতি হলেন দৈত্যমাতা।

অসুর-সম্রাট হিরণ্যকশিপু ও তার ভাই বিষ্ণুবিদ্বেষী হিরণ্যাক্ষ কশ্যপের ঔরসে দিতির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। হিরণ্যকশিপু ও তার স্ত্রী জম্ভাসুরের কন্যা কয়াধুর (অন্য নাম কমলা) সন্তান হলেন—হাদ, সংহ্লাদ, অনুহ্লাদ ও প্রহ্লাদ। প্রহ্লাদ ছিলেন ভাইদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ।

এখানে দৈত্য, দানব ও অসুর সমার্থক শব্দ। ভাগবতমতে এরা সুর বা দেবতাদের দলভুক্ত নয়। সুর অর্থ দেবতা। অসুর হলো যারা তা নয়। এরা সুরা অর্থাৎ মদিরাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে অসুর নাম লাভ করে। মূলত অভিজাত প্রাসাদবাসী বিলাসপ্রিয় না হয়ে এরা সাধারণ জনতা। বরাবর এদের রাখা হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রপরিচালনার বাইরে। তাই দৈত্য বা অসুরদের সাথে দেবতা তথা অভিজাতশ্রেণীর দ্বন্দ্ব চিরকালীন। অসুরদের ভয়ঙ্কর মানুষখেকো হিসেবে কোথাও কোথাও বুঝানো হলেও তারা বীর্যবান জাতিসত্তা। বিলাসপ্রিয় রাজাগজা নয়, বরং খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।

পিতা হিরণ্যকশিপু বিষ্ণুবিদ্বেষী হলেও প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণু বা হরির ভক্ত। প্রহ্লাদকে হরিভক্তি থেকে বিরত করার জন্য হিরণ্যকশিপু যত রকম ব্যবস্থা নেয়া দরকার তা নিয়েও সফলকাম হননি। বিষ্ণুর প্রতি প্রহ্লাদের অনুরাগ থাকায় তিনি জগতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হরিভক্ত হিসেবে আখ্যাত হন। দৈত্যের বংশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রহ্লাদ ভক্তসমাজের আদর্শ। তাই খারাপ বংশে ভালো মানুষ দেখা গেলে মানুষ আলোচ্য প্রবাদ ব্যবহার করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *