দেওঘরে অদ্ভুত ঘটনা – যোগীন্দ্রনাথ বসু
বাড়ীর চারিদিকে যে কম্পাউণ্ড আছে তাহা পনের বিঘা জমী। কম্পাউণ্ডের চারিদিকে কেয়া গাছের বেড়া দিয়া ঘেরা। এই বাড়ী এক্ষণে বাবু প্রেমচাঁদ বড়ালের। এই বাড়ীর বারাণ্ডা ব্যতীত আর সবই পাকা ছাতওয়ালা।
১২৮৯ সালের ১০ই বৈশাখ। সন্ধ্যাকাল। সমস্ত দিন গরম বাতাস বহিয়া এখন থামিয়াছে। উত্তর বারাণ্ডার ট চিহ্ণিত স্থানে আমরা সকলে বসিয়া আছি, এমন সময়ে আমার এক ছোট ভগিনী আসিয়া বলিল যে পশ্চিমের ঘরে (খ চিহ্ণিত ঘর) একটা বিকট শব্দ হইল এবং ঝুর ঝুর করিয়া কি পড়িল – যেন কে খিল খিল করিয়া হাসিয়া কতকগুলা ঢিল ছড়াইয়া ফেলিল। কি একটা শব্দ শুনিয়া সে ভূত মনে করিয়াছে ইহা ভাবিয়া আমরা বলিলাম কিছুই নহে এবং সে কথায় মনোযোগ দিলাম না। কিয়ত্ক্ষণ পরে মেঘ উঠিয়া ঝড় আরম্ভ হইল। আমরা সকলে ঘরে চলিলাম। ধূলা উড়িতে লাগিল, সমস্ত দরজা জানালা বন্ধ করা হইল। কিছুকাল ঝড় হইবার পর একজন আসিয়া বলিল যে পশ্চিমের ঘরে (খ চিহ্ণিত ঘর) কে ঢিল ফেলিতেছে। আমরা সকলে সেই ঘরে গিয়া জুটিলাম। দেখিলাম ঢিল নহে, ঘ চিহ্ণিত ঘরের খ চিহ্ণিত স্থানে একটি মাটির পাত্রে অনেকদিন হইতে যে কাঁচা আমলকী রাখা হইয়াছিল তাহাই টুপ টুপ করিয়া এক একটি উপর হইতে পড়িতেছে। আমার সর্ব্ব কনিষ্ঠ ভাই তখন বড় mischievous ছিল। আমরা ভাবিলাম ভয় দেখাইয়া আমোদ করিবার জন্য সে ঐরূপ করিতেছে সুতরাং তাহার হাত ও কাপড় তল্লাস করিয়া দেখা গেল, কিন্তু কিছুই পাওয়া গেল না। তথাপি আমরা তাহার উপর নজর রাখিলাম। আবার একটি আমলকী টুপ করিয়া পড়িল – আমার ছোট ভাইয়ের উপর নজর ছিল – তাহাকে নড়িতে চড়িতে দেখিলাম না অথচ ফল পড়িল কোথা হইতে? ঘরের পশ্চিমের জানালার দুটি খড়খড়ি খোলা ছিল। সন্দেহ হইল বাহির হইতে হয়ত কেউ ফলগুলি ফেলিতেছে। সব খড়খড়ি ও সার্সি বন্ধ করা হইল। কিয়ত্ক্ষণ পরে আবার একটি আমলকী পড়িল, ফলের গতি ঠিক উপর হইতে। উপরে চাহিয়া রহিলাম। আবার একটি পড়িল – সেটি যখন ঠিক মাথার উপরে তখন দেখিতে পাইলাম। ফল যে ঠিক উপর হইতেই আসিতেছিল, এবং পার্শ্বস্থ কোন ব্যক্তি ছুড়িয়া ফেলিতেছিল না তাহা তাহার গতি দেখিয়া বেশ বুঝা যাইতেছিল। ঘরের চারিদিক বন্ধ, ঘরে যে কয়জন আছেন সকলেই নিস্পন্দ হইয়া দণ্ডায়মান, তথাপি ফল পড়ে কোথা হইতে ইহার কিছুই ঠিকানা করিতে না পারিয়া ক্রমে আমাদের মনে ভূতের ভয় আস্তে আস্তে জাগিয়া উঠিতেছিল। আবার সন্দেহ হইল হযত ছদের উপর চোর উঠিয়াছে, ছাদের কোন স্থানে হয়ত ছিদ্র আছে, সেই ছিদ্রের মধ্য দিয়া ঐ ফলগুলি ফেলিয়া আমাদিগকে ভয় দেখাইতেছে, ভয় পাইলে কেহ আজ রাত্রে এ ঘরে থাকিবে না, তাহা হইলে ঐ ঘরে যাহা কিছু আছে চোরেরা তাহা নির্বিঘ্নে লইয়া যাইবে। এই সন্দেহ সকলেরই সঙ্গত বলিয়া বোধ হইল, কেননা এ দেশে চোরদিগের নিয়ম যে তাহারা প্রথমে গৃহস্থকে নানাপ্রকারে ভয় দেখাইতে চেষ্টা করে, পরে সুবিধা বুঝিয়া যথাসর্ব্বস্ব চুরি করে। ইহার কিছুকাল পূর্ব্বে আমাদের বাটীতে চুরি হয়। যে দিন চুরি হয় সেদিন চোরেরা ইট ফেলিয়া ও বিকট শব্দ করিয়া ভয় দেখাইয়াছিল। ছাদে নিশ্চয়ই চোর উঠিয়াছে ভাবিয়া আমরা দুইজন চাকরকে ছাতে পাঠাইলাম। তাহারা লাণ্ঠান লইয়া গিয়া দেখিল কেহ কোথায়ও নাই এবং ছাতের উপর কোথায়ও ফল প্রবেশ করান যায় এরূপ ছিদ্র নাই। এইবার আমাদিগের মনে ভূত বলিয়া অনেকটা বিশ্বাস হইল। আমরা “গ” চিহ্ণিত ঘরে আসিয়া বলিলাম, “আচ্ছা, যদি ভূত হয়, তবে এই ঘরে একটা ফল পড়ুক, তাহা হইলে আমরা ভূত বলিয়া বিশ্বাস করিতে পারিব।” এই কথা বলিবার ৮।১০ সেকেণ্ড পরেই ঠিক আমাদের সম্মুখে সজোরে একটা ফল পড়িল। এই ফলটী আমলকি নহে, বাদামের ন্যায় একপ্রকার অপরিচিত ফল। এ দেশীয় লোককে পরে ঐ ফল দেখান হইলে তাহারা বলিয়াছিল যে উহা কি ফল তাহারাও জানে না, তবে পাহাড়ে কখন কখন তাহারা ঐরূপ ফল দেখিয়াছে। পুনরায় আমাদের সকলে খ চিহ্ণিত ঘরে গেলাম। সকলে দাঁড়াইয়া এই ব্যাপারের আলোচনা করিতেছি, এমন সময়ে চ চিহ্ণিত ঘরের ঝ চিহ্ণিত জানালার একটা খড়খড়ি সজোরে উঠিল, ৩।৪ সেকেণ্ড খোলা থাকিয়া আবার সজোরে বন্ধ হইল – যতটুকু সময় খোলা ছিল তাহার মধ্যে বাহিরে একবার বিদ্যুত্ হইয়াছিল, তাহার আলোক স্পষ্ট দেখা গিয়াছিল। খড়খড়ে বন্ধ হইবার পরেই আমরা লাণ্ঠান লইয়া দক্ষিণের বারাণ্ডায় আসিলাম এবং চাকরদ্বয়কে লাণ্ঠান লইয়া কম্পাউণ্ডের সকল স্থান অনুসন্ধান করিতে বলিলাম। হয়ত ত কোন লোক (চোর) জানালা খুলিয়া আবার বন্ধ করিয়া তখনই পলাইয়াছে, আমাদের এই সন্দেহ হইয়াছিল। কিন্তু বাড়ীর বারাণ্ডা হইতে কম্পাউণ্ডের বেড়া যতদূর ততদূর খুব দৌড়িয়া যাইতে যত সময় লাগিতে পারে তাহার মধ্যেই আমরা বাহির হইয়াছিলাম। চাকরেরা তন্ন তন্ন করিয়া ঝোপ ঝাপ সকল খুঁজিয়া আসিল, কোথাও কাহাকে দেখিতে পাইল না। পুনরায় আমারা খ চিহ্ণিত ঘরে ফিরিয়া আসিলাম। তখনও ফল পড়িতেছে – তখন আর আমলকি নহে – দুই তিন প্রকার অপরিচিত আকৃতির ফল। ইতিপূর্ব্বে যতক্ষণ অন্তর ফল পড়িতেছিল এখন হইতে তাহা অপেক্ষা কিছু অধিককাল অন্তর পড়িতে লাগিল। এই সময়ে আমরা মাতাঠাকুরাণী ‘ক’ চিহ্ণিত ছোট ঘরে কোন কার্য্যানুরোধে গমন করেন, সঙ্গে আমার ছোট ভগিনী যায়। ঐ ঘরে তাহারা কিয়ত্ক্ষণ থাকিলে পর ঐ ঘরের ড চিহ্ণিত স্থানে থপ করিয়া একটা কি পদার্থ পড়িল। তখন ঐ ঘরের স চিহ্নিত দ্বার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল, তাহার একটিও খড়খড়ি খোলা ছিল না এবং ঐ ঘরের সম্মুখের চ চিহ্ণিত ঘরে দুইটি আলোক উজ্জ্বলরূপে জলিতেছিল। চ চিহ্ণিত ঘরের ঝ চিহ্ণিত জানালাটিও সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। সুতরাং স চিহ্ণিত দ্বার হইতে কিম্বা চ চিহ্ণিত ঘরের ঝ চিহ্ণিত জানালা হইতে কেহ যে ঐ পদার্থটি ফেলিয়া দিয়াছিল, তাহা হইতে পারে না। যে পদার্থটা পড়িয়াছিল মা তাহা দেখিয়াছিলেন, কিন্তু আমার ছোট ভগিনী ঐ দিকে পশ্চাত্ করিয়া বসিয়া থাকাতে তাহা দেখিতে পায় নাই। চতুর্দ্দিক বন্ধ অথচ ঐ পদার্থটা পড়িল এবং যেরূপ শব্দ করিয়া ও যেভাবে পড়িল উপর হইতে পড়িলে যেরূপ শব্দ হওয়া উচিত ও যেরূপ ভাবে পড়া উচিত সেইরূপ হইল দেখিয়া মা অত্যন্ত ভয় পাইয়া আমার ছোট ভগিনীকে লইয়া সে ঘর হইতে চলিয়া আসিলেন। আমরা খ চিহ্ণিত ঘরে ছিলাম। তিনি আমাদিগকে ঐ ঘটনার কথা বলিলেন। আমরা ক চিহ্ণিত ঘরে গেলাম। ড চিহ্ণিত স্থানের প্রতি চাহিয়া সেখানে কিছুই নাই দেখিয়া স্তম্ভিতা হইয়া মা বলিলেন, “এ কি হল। আমি এইমাত্র এখানে একটা কালবর্ণের জিনিস পড়তে দেখে গিযেছি। পড়বার প্রায় এক মিনিট পরে ঘর হইতে যাই, যাবার সময়ও দেখে গিয়েছি।” আমরা আশ্চর্য্যান্বিত হইলাম। বাহির হইতে কোন লোক স চিহ্ণিত দরজা দিয়া কোন রকমে ঐ কথিত পদার্থটা ফেলিযা, পরে মা চলিয়া যাইবার পর তাহা তুলিয়া লইয়া গিয়াছে, এই সন্দেহ উপস্থিত হওয়াতে আমি ঐ দরজা কিরূপ বন্ধ আছে পরীক্ষা করিতে গেলাম; দেখিলা উহা ভিতর হইতে দৃঢ়রূপে বন্ধ রহিয়াছে। মা পুনঃ পুনঃ বলিতে লাগিলেন যে তাহার কিছুমাত্র ভ্রম হয় নাই – তিনি সুস্পষ্টরূপে একটা কালবর্ণের পদার্থ পড়ার শব্দ শুনিয়াছেন, এবং প্রায় এক মিনিট ধরিয়া সুস্পষ্টরূপে তাহা দেখিয়াছেন। খ চিহ্ণিত ঘরের ন চিহ্ণিত স্থানে আমরা প্রায গোলাকারে (in a circle) দাঁড়াইয়া এই শেষোক্ত ব্যাপারের আলোচনা করিতেছি, পার্শ্বে একটা প্রদীপ উজ্জ্বলরূপে জ্বলিতেছে, এমন সময় আমাদিগের সকলের সম্মুখে circle এর মধ্যভাগে থপ করিয়া একটি আন্দাজ ৪ ইঞ্চি পরিমিত জিনিস পড়িল। মা অমনি চমকিয়া উঠিয়া বলিলেন, “এই জিনিসটাই ঐ ঘরে পড়েছিল – আমি প্রায় এক মিনিট এটা দেখেছিলাম, এর আকার আমার বেশ মনে রয়েছে- ও ঘরে যা পড়েছিল এটা যে সেই – সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই।” এই ব্যাপারের পর এই সকল যে ভৌতিক ব্যাপার আমাদের সে বিশ্বাস অনেকটা গাঢ় হইল। যা হউক, ঐ পদার্থটা কি দেখিবার জন্য উঠাইয়া লইলাম, দেখিলা উহা একখানা ব্যবহৃত পুরাতন শুষ্ক সাবান। উহা যেরূপ শব্দ করিয়া আমাদের সম্মুখে পড়িয়াছিল কতদূর উপর হইতে পড়িলে সেরূপ শব্দ হয় তাহা পরীক্ষা করিয়া দেখিবার জন্য উহা প্রথমে খুব উঁচু হইতে তাহার পর আর একটু উঁচু হইতে এইরূপ দুই তিনবার ফেলিয়া দেখিলাম, আন্দাজ চারিহাত উপর হইতে ফেলিলে যেরূপ শব্দ হইল, প্রথম পড়িবার সময় সেইরূপ শব্দ হইয়াছিল। এই ঘটনার পর সে দিন রাত্রে আর কিছু হয় নাই। ঐ খ চিহ্ণিত ঘরে যাঁহারা শয়ন করিতেন তাঁহারা সে রাত্রে আর তথায় শয়ন করিলেন না।
১৪ই বৈশাখ আবার এই ব্যাপারের পুনরাভিনয় হয়। সে দিন সমস্ত দিন প্রচণ্ড গরম বাতাস বহিয়াছিল। এখানে গ্রীষ্মকালে যে দিন গরম বাতাস বহে দেখা যায় সে দিন ফল ফুল বা পাতা গাছ হইতে উঠাইয়া রাখিলে ৩।৪ ঘণ্টার মধ্যে শুষ্ক হইয়া যায – ফুল ও পাতা এত শুষ্ক হয় যে অতি সহজে তাহা গুঁড়াইয়া ফেলা যায় আর ফল অত্যন্ত বিকৃত অবস্থা প্রাপ্ত হয়। কিন্তু এই দিন অত্যন্ত গ্রীষ্ম হইলেও এবং খুব গরম বাতাস বহিলেও যে ফলগুলি পড়িয়াছিল তাহার কোনটী একটু শুষ্ক বা বিকৃত দেখা যায় নাই – দেখিলে বোধ হয় যে নিঃসন্দেহ তাহা তত্ক্ষণাত্ তুলিয়া আনিয়াছে। কোন কোনটীর বোটায় আটার ন্যায় আদ্র পদার্থও দেখা গিয়াছিল। নিকটে কোন স্থানে ঐ জাতীয় ফলের গাছ ছিল না অথচ সদ্য উত্পাটিত ফলের ন্যায় আকৃতি, এই ফল নিক্ষেপ কার্য্য মানুষের কাজ হইলে এরূপ হওয়া কখন সম্ভব নহে।
তত্পর দিন সন্ধ্যার পর গ চিহ্ণিত ঘরের ট চিহ্ণিত স্থানে রক্ষিত একটি দেরাজের উপর সম্মুখে বারাণ্ডায় খাটের উপর পিতা মহাশয় শয়ান ছিলেন, এবং দ ও ধ চিহ্ণিত দ্বারদ্বয়ের সম্মুখে বারাণ্ডায় বাড়ীর কেহ কেহ বসিয়াছিলেন।
এই তিন দিন এইরূপ ঘটনা হয়। ইহার পর প্রায় দেড় বত্সর কাল আমরা ঐ বাড়ীতে বাস করি, কিন্তু আর কখনও ঐরূপ কাণ্ড হয় নাই।
সাধারণের মধ্যে একটা সংস্কার আছে যে ভূতে ঢিল বা অন্য কোন বস্তু ফেলিলে তাহা কহারও গায় পড়ে না। আমাদের বাড়ীতে কযেক দিন যে সকল ফল পড়ে, তাহার একটিও কাহারও গায়ে পড়ে নাই।
যাঁহারা ভৌতিক ব্যাপার অনেক দেখিয়াছেন তাঁহারা বলেন উহা প্রথম রাত্রেই হয়। আমাদিগের বাটীতে তিন দিন যে কাণ্ড হইয়াছিল তাহা ১০টা রাত্রির পূর্ব্বেই বন্ধ হইয়া যাইত।
কোন কোন spiritualists বলেন এমন অনেক ভূত আছে যাহারা পবিত্র স্থানে অর্থাত্ যেখানে ঈশ্বরের নাম উচ্চারিত হয় সেখানে উপদ্রব করিতে পারে না। আমাদিগের বাটীর খ চিহ্ণিত ঘরে প্রত্যহ পারিবারিক উপাসনা হইত। ঐ ঘরে বা ঐ ঘরের পার্শ্বস্থ ছ ও জ চিহ্ণিত ঘর দুইটীতে উপরোক্ত ব্যাপারের কিছুই হয় নাই।
যে ব্যাপার বর্ণনা করিলাম তাহা যে ভৌতিক ব্যাপার, তাহা আমরা আজও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি না, তবে যেরূপ পরীক্ষা ও অনুসন্ধান করা হইয়াছিল তাহাতে উহা ভৌতিক ব্যাপার ভিন্ন আর কিছু হওয়ার বড়ই কম সম্ভাবনা ইহাই আমাদের সংস্কার।
(বিঃ দ্রঃ – নিবন্ধটির পাদটীকায় রাজনারায়ণ বসু মন্তব্য করেছেন “এমনি শব্দ হইয়াছিল যে আমি তাড়াতাড়ি গ চিহ্ণিত ঘরে কি হইল দেখিবার জন্য আসিয়াছিলাম। আমি নিজে ভূতে তত বিশ্বাস করি না। আমি এই বলি যে এই প্রকার ঘটনার নিগূঢ় কারণ কি তাহা মনুষ্য নির্ণয় করিতে অক্ষম।”
‘ভারতী’র সম্পাদক জানিয়েছেন “এইরূপ বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা যদি বহুপরিমাণে ঘটিতে দেখা যায় তাহা হইলে বুদ্ধিমান বৈজ্ঞানিক দিগের নিকট ইহা হাসিবার বিষয় না হইয়া অনুসন্ধানের বিষয় হইতে পারে, এই আশায় আমরা এই বিবরণ প্রকাশ করিলাম। এ সম্বন্ধে এরূপ বিশ্বাসযোগ্য অন্য ঘটনা পাইলে আমরা তাহাও প্রকাশ করিতে পারি।”)
(এখানে একটা জিজ্ঞাস্য থাকতে পারে যে রচনাটির লেখক যোগীন্দ্রনাথ বসু, তাহলে ঘটনার সময় রাজনারায়ণ বসুর উপস্থিতি কি করে হল। হতে পারে যোগীন্দ্রনাথ এবং রাজনারায়ণ একই বাড়ীতে থাকতেন অথবা ঘটনার সময় রাজনারায়ণ বসু সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে রাজনারায়ণ ১৮৭৯ সাল থেকে ১৮৯৯ অবধি দেওঘরে ছিলেন এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।) দীপক সেনগুপ্ত। (বর্তমান রচনাটির মূল বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে)
—
যোগীন্দ্রনাথ বসু (১৮৫৭ খ্রীঃ – ১৯২৭ খ্রীঃ)- কর্মজীবনে প্রথমে তিনি রিপন কলেজের অধ্যাপক ও ইউনিভার্সিটি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। পরে অসুস্থ হয়ে দেওঘরে চলে যান এবংসেখানে উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। বহু গ্রন্থের রচয়িতা এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রথম জীবনীকার।