দুখুরুল ও গজেন
দুখুরুলের বাড়িতে সন্ধ্যায় জমজমাট জলসা। এসেছেন গিরি-বিনুদিনী। গজেনের নজেন পালার গানে দুখুরুলের গান থাকছে। দুখুরুল নিজে সকলকে ডেকে পাঠিয়েছেন ফেসবুকে। ম্যাডিউ আসতে পারেন নি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন….টোস্ট টু গজেনের নজেন। দুখুরুল আত্মমগ হয়ে তিন পাত্র গলায় ঢেলেছেন, গিরি ছয় বাটি। গদা ঠাকুরের ছবি, কালীর ছবি আর যীশুর পবিত্র ক্রশ। সামাজিক উন্নতি বিধান আর মানুষের চিত্তের জাগরণ নিয়ে গজেনের নজেন পালা। দুখুরুল গাইছেন, বিনুদিনী দুখুরুলের কোল ঘেঁষে চুল এলিয়ে হাসি হাসি মুখে মেঝে-কার্পেটে। এক কোণে গজেন-নিবু হুক্কায় গ্রেপ-চকোলেক-ফ্লেভার নলে গুড় গুড় টানছেন। দুখুরুল সবাইকে দেখে নিয়ে পরের গান শুরু করলেন আধো-বোজা আয়ত কবি-চোখে, পান চিবিয়ে। সাদা ধুতি-শার্টের দুখু মিঞা ঘর আলো করে মিহি-ভরাট গলায় গাইছেন:
মানুষের হাল দেখে আর প্রাণ বাঁচেনা –
তোদের দেশে বল না শালা জল আছে না?
সে কি তোর খোদার চেয়ার ডিগবাজি খায়?
আসমানের ওই উড়ন্ত কাক যাক উড়ে যাক –
আমার এই খেঁচার সুরে অনেক দূরে যাক সে
তোর শূন্য বুকে আসবে উড়ে ছেঁড়া লোমের
ঘোর কৃষ্ণ মেঘে নূপূর পায়ে কে বালিকা –
ঝম ঝম পায়েলিয়া মন উদাস হবে আউলিয়া –
ছিন্ন ভুবন ছেঁড়া বাতাস আলোর সকাল…
চুদে তুই করে দে খাল এই আকালে –
ভীষণ ভয়ে না ঘাবড়ে দাবড়ে দেরে
তোর বালের রঙে লাগছে নেশা দুলছে
এ ঘোর সংবিধানের কারসাজি আর
ভোজবাজিতে ডিগবাজি খায় খোদার আসন –
জানি না বামে ডানে কার গাঁড়ের পানে –
তামাক পোড়া গন্ধে আবার জাগবে গাঁজা
পাচ্ছে সাজা রাজার ঝাঁটের অনেক ব্যাথা –
তারার চোখে শাওন-বেলা আমার খেলা…
নেশার চোখে প্রাণের চোদন গাঁজার চেলা।।
গাঁজার অংশে উতলা হয়ে গিরি নিবুর কোলে এসে শুয়ে পড়েন। ফিসফিসিয়ে বলেন রদা-ঠাকুর রশিদা-মায়ের দেওয়া গঞ্জিকা আছে না তব কাছে নিবু সিস্টার মোর। ইয়া সাম থিং আই মে শেয়ার উইথ ইউ বলে নিবু ব্যাগ হাতড়ান। গজেনকে এসে জড়িয়ে ধরেন গিরি…গজেন তুমি শালা আমার বাপ… তোমার জন্য আজ শালা কি চাপ। দুখুরুল গান থামিয়ে মিত হাস্যে গজেন এক্টো করবি ধ্রুব পালায় আয় ভাই আয় রে দু পাত্র মার রে! মাল গিলে হ্যাণ্ডেল মেরে দে ভাসিয়ে, বলে নতুন সদ্যনির্মিত গান শুরু করেন:
ওরে গুষ্টি-চোদা দে শুয়োরের ল্যাজ ধুইয়ে
মাল গিলে মার হ্যাণ্ডেল সবাই মিলে –
পাজামা খুলে দে উড়িয়ে ছেঁড়া বাল তোর।
যাক ঢেকে ওই খোদার মেঘের দেশের পরী
চোখ কেন তার কালো-কাজল ডানার তরী।
খেজুর পাতায় সোনার মেয়ে যাচ্ছে নেচে
কি বা আর করবি শালা এখন বেঁচে –
দেখ না সকল শালা গোপনে খেঁচে –
উত্তাল দামাল হাওয়ায় উড়ছে ঝাঁটের…
লোমগুলো সব ব্যাপক বালের বেহেস্ত জড়ে…
হুরী পরী হাজার ন্যাকা নগ্ন হয়ে রাস্তা-মোড়ে।
ল্যাম্পের লাজুক আলো তোমার চোখে…
ঢোঁক গিলে চাটছি বোতল ঝাঁঝের কোকে
সাঁঝের আলোয় দেখছি তোমার মায়াবী রাত
আমিও এইপাশে কাত ওইপাশে কাত
ভরে গেছে জুঁই মালাতে আঙিনা ছাত –
এসেছে আজ বিকেলে ছেঁড়ার সে রাত।
এ রাতে কোকিল ডাকে কাকের সাজে
পড়ে থাকে অনেক খেঁচা অনেক কাজে।
দে শালা সব শুয়োরের লেজ ধুইয়ে…
দে শালা সংসদের ঐ দরজা খুলে
এ বালের বাংলা-চোদা তরজা ভুলে…।
বিনুদিনী উদাস চোখে উঠে দরজার কাছে নাচতে শুরু করেন। গিরি গজেনের দিকে তাকিয়ে বলেন……গজ বিনুকে নিয়ে আয় ভাই মদ খেয়ে টাল রাখতে পারবে না মাগিটা। নিবু গজেনকে থামিয়ে উঠে যান। বিনুর সাথে আইরিশ ফোক নৃত্য শুরু করেন। গিরি এক পাত্র হাতে নিয়ে দুখুরুলকে টেনে তোলেন। দুখুরুল খবরের কাগজ ছিঁড়ে কুচি কুচি করে ঘরময় উড়িয়ে নটবর সাজে নৃত্য শুরু করেন। অবাক হয়ে নাচ থামিয়ে চেয়ে থাকেন নিবু। হাত জোড় করে… দুখুরুল ইজ মাই শিভা…..আই সেন্স ইউ আর দ্য গ্রেট… বলে চোখ বুজে বসে পড়েন। গজেন আর দুখুরুল একত্রে তা তা ধেই থা ধেই ছন্দে নাচতে থাকেন। বিনুদিনী-গিরি আরো দু পাত্র না গিলে একটা জয়েন্ট বানান রদা-ঠাকুরের দেওয়া মোক্সা মারিজয়ানা দিয়ে। সকলে পাস করে ফুঁকতে থাকে সেই ঠাকুরের প্রসাদ তাগড়া জয়েন্ট। নাচ গান গঞ্জিকা পান তুঙ্গে ওঠে। এক হাতে তানপুরা আর এক হাতে পানপাত্র নিয়ে দুখুরুল নাচছেন আর গাইছেন।
এক হাতে মম রাতের তারা আর এক হাতে মম সূর্য।
আমি উন্মাদ ফেলি বীর্য।
আমি খিঁচতে খিঁচতে ভিজিয়ে ভেজাতে হব নাকো রণক্লান্ত।
আমি ছিলাম না কভু হব না তো নিবু কোনদিন সেই শান্ত।
আমি ভাসমান আমি জ্যান্ত।
আমি পান্ত ভুতেরে শান্ত করেছু করি শ্মশানের মড়া জ্যান্ত।
আমি চিত্ত ভাসায়ে বীর্য ঢেলেছি ছিঁড়িয়াছি রণক্লান্ত।
আমি মিসাইল আমি চীন।
আমি জাপান কোরিয়া জাপটে ধরিয়া সাপরে করেছি কেঁচো।
আমি বলেছি গজেন তোমার স্টাইলে আজীবন তুমি খেঁচো….।
গিরি হঠাৎ ঠাকুর ঠাকুর তুমি তো অন্তর্যামী বলে আছড়ে পড়লেন বিনোদিনীর উপর। নিবু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। নজরুল নেচে চলেছেন।
আমি তোমার উপরে হুমড়ি খেলেও ঠাকুরের নামে কাঁদি
আমি উত্তাল বেগে ঝাঁপতাল সুরে সকালে পায়েস রাঁধি
আমি উন্মাদ আমি উল্লাস আমি শুয়ে আছি হেথা
বিছানার নীচে ঢেকে রেখে আজ কত লাশ….।
এর পরে গজেন ফুঁকে হাই হয়ে দুখুরুলের সাথে জুড়তে থাকে তার নিজস্ব কবিতা।
বিদ্রোহী কবির ছন্দে মিলে যায় তার অন্তরের উদ্দাম ছন্দ:
আমার রঙিন গেলাস রঙিন ধোঁয়ায় প্রাণ করিয়াছে হাঁসফাঁস –
তুমি একলা নগরে হেঁটে যাও হাতে রাইফেল পায়ে কচি ঘাস।
আমি যুদ্ধ-ফেরত ফ্যান্টাসি বুনি ভিটামিন সির বড়ি খাই –
এই পান-ভোজনের আসরে আমার আত্মা একাকী আইঢাই
আমি শরীরে থেকেও উড়ে গেছি দূরে যোগাসনে বসে মড়া চাই
তুমি এখনো মরেছ তখনো মরেছ শালা রাষ্ট্রের চোদা-ভাই।
আমি সকল ছাত্র-তরুণের বুকে ঝনঝন অসি ঘষা
আমি বানচোদ-বেগে ছুটে যাই রেগে ঝিন-চ্যাক।
আমি ডিজে গানে রোজ হেড-ব্যাং করি ল্যাং-ল্যাং খেলি রাস্তায় –
আমি উন্মাদ তবু কিনিতে পারোনি তুমিও আমায় সস্তায়।
ঠাকুর ঠাকুর তুমি তো সব বোঝ বলে কি কারণে গিরি কাঁদতে থাকেন বোঝা যায় না। কিছুক্ষণ পরে বিনুদিনী আবিষ্কার করে গিরি লুকিয়ে এ সমস্ত ফেসবুকে লাইভ করছিলেন তার নতুন নাটকের প্রোমো পাবলিসিটি হিসেবে। আর রদা-ঠাকুরের ছবি হঠাৎ গ্লাসে পানীয়ের উপর সুপার ইম্পোজড দেখে কাঁদতে শুরু করেন। নিবু তাকে উৎসাহ দেন… জিসি ডোন্ট ক্রাই প্লিজ… রদা ঠাকুর লাভস ইউ আ লট। আপনি ধন্য মানুষ, আপনি আর্ট-ক্রিয়েটর। ইউ হ্যাভ লাভ ইন ইউ। ডোন্ট ক্রাই…। নিবুর কোলে মাথা রেখে বিনুর কোলে ঠ্যাৎ তুলে দেন গিরিশ। তোরা দেখা যা আমি যে মায়ের কোলে বলে নেচে ওঠেন দুখুরুল। সকলে সেই নাচে যোগ দেয়….।
ফেসবুক লাইভে চোখ রেখে ম্যাডিউ অঁরিয়েৎ কে বলেন…দে আর হ্যাভিং ফাকিং ফান দেয়ার। হাউ অ্যাবাউইট প্রোমোটিং গজেন ইন গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম…..অঁরিয়েৎ ম্যাডিউর কাঁধে হাত রাখেন… সুন উই উড গো ফর ইট হানি। উই মাস্ট সেভ দিস কালচার……।
কি বিচিত্র ধরণী মাঝে মদিরা-মদির সন্ধ্যা সাঁঝে এ তরণী…।
দিকনির্দেশে চলে অকিঞ্চিৎ-সম ভুবন আলোকজয়ী।।
পোঁদে-প্রবেশিলা রাষ্ট্র মম তব পতাকার বর্ণ বর্ণিল বণিকের।
বাল-বাণিজ্য বিকাশে নিদাঘ-দীর্ঘ দিবসের অবসান-হেতু।।
যদ্যপী মদ্যপ-মধু বলিতে চায় সে কথা হায়, কন্ঠ-রুদ্ধপ্রায়…
ঔপনিবেশিকতায় যে-স্থলে-বাতাসে কবি-গাঁড় মারা যায়।
হে নিদাঘ এ অমা-নিশা এ পরাণ মাগিছে মরিছে মধু-প্রায়..।।
ফেসবুকে চোখ রেখেছেন বিড়েমাথা আফিমের রোজকার ডোজ সহ। ভারি চশমা খুলে পাশে সরিয়ে রাখলেন আই ফোন এইট। পাশের ঘরের দিকে তাকিয়ে হুঙ্কারপ্রায় হুতাশে জড়ানো আফিম-স্বরে সন্ধ্যালোক-নিমজ্জনে কিয়ৎ ভাবাবেগ-মথিত ঘড়ঘড় শব্দ করতঃ উচ্চারিলেন। হে হে হে পাঠক….ফেসবুকমাঝে এ ক্যাওড়া-সম বিপুল-কিঞ্চিৎ বিনোদন অবলোকন করুন….হে পাঠক। ভবানীর নাসিকা গর্জনের সুরময় সন্নিবিষ্ট বিকট রাগাশ্রয়ী আফিমাসক্ত গর্জন সন্ধ্যারাত্রিবাতাসের মৃদু হিমপ্লাবিত পবন-বনবনে কক্ষপথের ক্যালায়িত ধারা-নিবিষ্ট নিবিড়তা বিড়েমাথার মস্তক-প্রকোষ্ঠে কবন্ধ-ঝাঁঝ কোষ্ঠবদ্ধ-ক্রোধোদ্রেককারী ধৈর্যহীনতার আভাসিত উদ্ভাসে গৃহমধ্য গভীর নিনাদে ধ্বনিত হল… বক্রচিত্র খানকীপুত্র নিদ্রাচিত্র চোদনচিত্ত ভবানী…..অবলোকন কর হারামজাদা-নামালংকারী পামর……। ফেসবক্ষ অবলোকন কর শালা…।
ততক্ষণে গজেন-নিবু-গিরি-বিনুদিনী সন্ধ্যা শেষ হয়ে সকলে বাড়ির পথে…। দুখুরুল শান্ত, নেশা-হীন…..। কাগজ ছিঁড়ছেন একা জানালার পাশে বসে। বাল-বাংলার নগর-ত্রিফলা স্ক্যাম-আলোর রাম-হনু ঘ্যাম-পথে নামছে আর একটি কাব্যিক বালের রাত….।