দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার
প্রলয় কাণ্ড, চরম হট্টগোল, তুমুল গোলমাল অর্থে আমরা প্রবাদটি ব্যবহার করি। এই প্রবাদ এসেছে প্রজাপতি (সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার মানসপুত্র, যাদের মাধ্যমে জীবসমূহের সৃষ্টি। এসব প্রজাপতি হলেন মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু, বশিষ্ঠ, দক্ষ, ভৃগু ও নারদমুনি। মূল প্রজাপতি হলেন ব্রহ্মা।) দক্ষের যজ্ঞ থেকে।
দক্ষের জন্ম হয়েছিল ব্রহ্মার বুড়ো আঙ্গুল থেকে। মনুর কন্যা প্রসূতির গর্ভে তার ষোলজন কন্যার জন্ম হয়। তাদের মধ্যে সতীর বিয়ে হয় মহাদেবের সাথে। একবার এক বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করেন বিশ্বস্রষ্টাগণ। সব দেবতা সেখানে উপস্থিত হন। ঐ যজ্ঞে প্রজাপতি দক্ষ হাজির হলে দেবতারা দাঁড়িয়ে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলেও মহাদেব ও ব্রহ্মা আসন ছেড়ে দাঁড়ালেন না। এতে দক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে মহাদেবকে যজ্ঞের ফলভাগ থেকে বঞ্চিত করার অভিশাপ দেন। অবশ্য ব্রহ্মার দাঁড়ানোর প্রশ্ন আসে না, কারণ তিনি সবার ওপরে।
কিছুদিন পর সকল প্রজাপতির প্রধান হিসেবে দক্ষকে মনোনীত করেন ব্রহ্মা। গর্বিত দক্ষ বৃহস্পতি নামক এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করে ত্রিলোকের সকল দেবতাকে আমন্ত্রণ করেন মহাদেব ও সতীকে বাদ দিয়ে। আমন্ত্রণ না পেলেও সতী পিতার যজ্ঞে উপস্থিত হন মহাদেবের সাথে ঝগড়া করে। তার সামনেই দক্ষ জামাইয়ের বদনাম করতে শুরু করেন। পতিনিন্দা সহ্য করতে না পেরে পিতার যজ্ঞস্থলেই সতী প্রাণত্যাগ করেন।
খবর পেয়েই ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব মাথার চুলের একটি জটা ছিঁড়ে মাটিতে ফেললেন! সেই ছিজটা থেকে মহাদেবের ক্রোধানলে তার ভয়ঙ্কর অনুচর বীরভদ্রের উদ্ভব হয়। বায়ু পুরাণের বর্ণনামতে বীরভদ্র সহস্ৰ মস্তক, সহস্র চক্ষু ও সহস্র পদসম্পন্ন, সহস্র গদাধারী, বাঘছাল পরিহিত। ভীষণাকার অতি উজ্জ্বল এর রূপ। এর প্রকাণ্ড পেট, বিকট মুখ ও লম্বা দাঁত। হাতে শূল, দেহের চারপাশে আগুনের শিখার মতো তেজ।
বীরভদ্র তার অনুচরসহ দক্ষযজ্ঞে উপস্থিত হলেন। অসংখ্য গণদেবতা সৃষ্টি করে তাদের নিয়ে যজ্ঞের সমস্ত উপকরণ চূর্ণবিচূর্ণ উৎপাটিত ও দগ্ধ করে উপস্থিত সকলকে পেটাতে শুরু করে বীরভদ্রের বাহিনী। দেবতারা পালিয়ে গেলেন। লণ্ডভণ্ড প্রলয়কাণ্ডে ঋষি ও দেবতাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। দক্ষের মাথা ছিঁড়ে ফেলে আগুনে ভস্ম করা হলো। অবশেষে ব্রহ্মা শিবকে স্তুতি ও অনুনয় বিনয় করে কিছুটা শান্ত করেন। দক্ষের প্রাণ গেল। যজ্ঞ ধ্বংস হলো। রুদ্ররোষে লণ্ডভণ্ডকারী প্রলয়কাণ্ডকে তাই দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার বলে থাকি আমরা। দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার মানেই লণ্ডভণ্ড কর্মকাণ্ডে বিপর্যস্ত অবস্থা।