তুমি এ কী করলে ঠাকুর?

তুমি এ কী করলে ঠাকুর?

নট-নটী-মদ্যপান-ড্রামা-থিয়োরির প্যাঁচে বোহেমিয়ান ক্যাওড়ায় লালিত রক-রোল জীবনের গিরি-শিখরে পৌঁছে প্যাশনেট ঈশ্বর-দর্শনের বাসনায় ব্যাপক আকুল গিরি গদাঠাকুরের প্রচণ্ড-প্রেমে হাঁসফাঁস করে বোতলে কালী-শিব বন্দি করে টলোমলো পায়ে এগিয়ে গেলেন দর্শনেশ্বর মন্দির চত্বরে। সাথে নটী বিনুদিনী দাসী। নোরেনের আসবার কথায় সকলে উৎফুল্ল প্রচণ্ড।

সধবার একাদশীর দুটো শো ক্যানসেল করে দু ঘন্টার ডিকটেশনে বাংলার ঠেকে আর সোনাগাছির ভিজিট-ব্রেকে বসে লেখা গজেনের হ্যাণ্ডেল মঞ্চস্থ করায় সকলে প্রচণ্ড কঠোর নিষ্ঠুর সমালোচনা করেন তাকে। কিন্তু গিরি অচল-অনড়। নোরেনকে শুধোতে চান ঠিক করেছেন কিনা। গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের ব্যানারে স্টারে গজেনের হ্যাণ্ডেলের প্রথম শো দেখতে গদা-ঠাকুরের আসবার কথা ছিলো। ঠাকুর না আসাতে একটা গোটা বাংলা-লায়ন-ব্যাণ্ড-বোতল ঢকঢক মেরে অভিমানে কাঁদতে থাকেন জিসি অর্থাৎ গিরি চন্দ্র।

বিনুদিনী পা জড়িয়ে ধরে আকুল নয়নে বলে গজেনের হ্যাণ্ডেলে আমি কোনদিন অ্যাক্টো করব না… ঠাকুর না আসলে। মন্দির চত্বর ছাড়িয়ে ঠাকুরের ঘরের দিকে যেতে যেতে গিরি উচ্চ-নাটকীয় কম্পাঙ্কে কাঁদেন গজেনকে ভালোবাসো না তুমি ঠাকুর কারণ সে হ্যাণ্ডেল মারে। সে পাপ করলে আমি কত্ত বড় পাপ্পী ঠাক্কুর। এক ব্রাহ্ম ভক্ত এগিয়ে এসে টুলি খুলে বলে, অ্যায়াম সরি জিসি… ইয়োর পাপ্পী ডায়েড….ডোন্ট ক্রাই দ্যাট মাচ….ক্যাচ আ স্ট্রে-ডগ… মাই ডিয়ার। গিরি সপাটে তাকে এক থাপ্পড় মারেন।

এর মধ্যে ঠাকুর হুঁকো খেতে খেতে হাফ ধুতি না পরেই বেরিয়ে আসেন। ওরে শালা হারামজাদা গিরি…তোর গজেন-পালা দেখতে যাইনি বলে এত্তো অভিমান….বানচোদ ছেলে… মাকে বলে তোর মদ-বেশ্যার ডোজ কমাচ্ছিলাম রে শালা! কত্ত কাজ পড়ে থাকে। সবসময় থেটার দেখলে চলে রে পাগলা? ওরে পাগল গজেন কি তোর একার? গজেন এখন সবার। সারা পৃথিবী একদিন দেখবে এই গজেনের হ্যাণ্ডেল। দেখ না কত্ত লোক গালি দিচ্ছে আবার কত পণ্ডিত লোক তোকে ধন্যি ধন্যি করেছে। আজ অব্দি হ্যাণ্ডেল নিয়ে কোনো শালা নাটক করেছে? তাও বাঁড়া এই গজেনের হ্যাণ্ডেল। একি যে সে হ্যাণ্ডেল নাকি রে বোকাচোদা? এ তো ভক্ত ধ্রুব রে। কত্ত বড় ভক্ত বল তো শালা। সারাদিন ধরে হ্যাণ্ডেল মারে কত্ত বড় শিব-শক্তির ভক্তি-আধার হলে এমনটা করতে পারে বানচোদটা। তুইও মার রে শালা সোনাগাছি রূপোগাছি না করে তুইও মার।

বিনুদিনী তার ব্যাগ থেকে ডিজাইনড ডিল্ডো বের করে ঠাকুরের পায়ে ছুঁইয়ে বলে, আশীর্বাদ করুন ঠাকুর আমিও যেন গজেনের মতো হ্যাণ্ডেল না হলেও ডিল্ডেল মারতে পারি। ঠাকুর হঠাৎ কল্পতরু হয়ে দাঁড়িয়ে যান এক পায়ে, সাথে হস্তমুদ্রা…এক হাত আকাশপানে বজ্রবহ-আর্থিং ভঙ্গি। আরেক হাতে বাটি-ধরা আধার-হোল্ডিং। সকলে রে রে রুরু করে কল্পতরু উৎসবে মেতে ওঠে। গিরি তড়িঘড়ি ব্যস্ত হয়ে একটা ট্র্যাভেলার এসি লাক্সারি বাসে সকলকে নিয়ে কাশীপুর উদ্যান বাটি যাবার পথে এক বাটি কাশির সিরাপ গিলে নেন। উদ্যান বাটিতে এসে ঠাকুর আবার কল্পতরুর পশ্চারে দাঁড়ান। গোটা কলকাতার পশ-ক্লাস এসে দাঁড়ায় কিছু জাগতিক-পারমার্থিক ব্যাঙলাফ ও চ্যাঙ-লাভের আশায়।

ঠাকুর বিড়বিড় করে কিছু বলে মূর্চ্ছা ও সমাধি-পতিত হন। ধড়াম শব্দে পড়ে যান পারফেক্ট বামকাতে। ফতুয়ার বাম পকেট থেকে একটা ছোট্ট- কাগজের মোড়ক গড়িয়ে পড়ে উদ্যান-বাটির নিকোনো-ঘাসফুল-সবুজ উদ্যানে। ব্রাহ্মসমাজের এক সম্মানীয় রিচ-ম্যান দৌড়ে আসে। ঠাক্কুর ক্কি প্রসাদ-কল্পতরু লীলা করলেন। পেকেটের প্রসাদ নিয়ে সক্কলে কাড়াকাড়ি করেন। ঠাকুর অলক্ষ্যে গিরির পানে তাকান। গিরি তাঁকে প্রথমে কোলে পরে মাথায় তুলে নেন। ডিল্ডো ফেলে বিনুদিনী ঠাকুরের পায়ে মাথা ঘষতে থাকে।

ঠাকুর গিরি-বিনুদিনীর পানে আবার চোখ মারেন। ফিসফিসে বলেন প্যাকেটটা নিয়ে যাস শালা। বিনুদিনী চট করে জিনসের নিতম্ব-পকেটে পুরে ফ্যালে কাগজের মোড়ক। সকলে ঘাবড়ে ঠাকুরকে ঘনঘন বাতাস করে। কল্পতরু-পতন উৎসব শুরু হয় এবার। গিরি-বিনুদিনী গাছের আড়ালে গিয়ে প্যাকেট খুলে ধরেন পড়ন্ত বিকেল আলোয়। ঠিক মঞ্চের ভঙ্গিমায় চৈতন্যলীলার পালাজ্বর-কান্নার মতো কেঁদে ওঠেন গিরি…।

…কি দিলে ঠাকুর? আমাকে কি দিলে ঠাকুর? আমাকে এক্কি দিলে ঠাক্কুর…? বিনুদিনী ব্যাগের হ্যাণ্ডেল দিয়ে গিরিশের মুখ চেপে ধরেন। কাগজের ঠোঙা সকলের আড়ালে গাছের ছায়ায় খুলে ধরেন। আবার মঞ্চের আলোর মতো মনে হয় বিকেল-আলো। কাশীপুরের উদ্যান-বাটির সদ্য সন্ধ্যায় প্রায় আঁধারে অশ্রু-সজল চোখে পড়ে ফেলেন গিরি ঝাপসা কান্না-চোখে….মোক্সা মারিজুয়ানা……। ঠাকুউউউউউর বলে তিনি মূর্চ্ছা যান তৎক্ষণাৎ। উঠে বসেন ঠাকুর গদা….গিরির বাচ্চা…..শালা…দেখ তোকে দেয় কে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *