জটা পাগল ও জিনের বাদশা – রাকিব হাসান

জটা পাগল ও জিনের বাদশা

বর্ষাকাল। সুতরাং বৃষ্টি তো হবেই। তবে এবারের বৃষ্টির পরিমাণটা একটু বেশি। গত চারদিন ধরে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশের যেন কোনও ক্লান্তি নেই। নেই কোনও অবসর কিংবা বিরক্তি। এক সেকেণ্ডের জন্যও বৃষ্টি থামেনি। কখনও টিপটিপু, কখনও মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। শহুরে জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হলেও গ্রাম্য জীবনযাপনে এরকম বৃষ্টির প্রভাব বেশি। চুলোয় রান্না-বান্না; হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন সবক্ষেত্রেই বাধার সৃষ্টি হয়।

এরকম বৃষ্টির এক রাতে সেলিম রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। রেল স্টেশন থেকে তার বাড়ি চার কিলোমিটার দূরে। কাঁচা রাস্তা বলেই ঝামেলা বেশি। বর্ষাকালে এই রাস্তায় ভ্যানগাড়ির বদলে গরুর গাড়ি চলে। সুতরাং রাস্তা এবড়োখেবড়ো-কাদামাখা। এই বৃষ্টিতে গরুর গাড়ি তো দূরে থাক একটা শিয়াল-কুকুরও রাস্তায় আছে কিনা সন্দেহ।

সেলিমের মনটা আনচান করে। তার বাড়ি ফেরা খুবই প্রয়োজন। বিকালের মধ্যেই ট্রেন এখানে পৌঁছে যাবার কথা থাকলেও আসতে পারেনি। এই স্টেশনে এসেছে রাত দশটায়। তখন বর্ষার আকাশ-বাতাস কাঁপানো বর্ষণ ছিল। সেলিম বৃষ্টি কমার অপেক্ষা করতে করতে দুঘণ্টা পার হয়ে গেলেও বৃষ্টি তো কমেইনি তার উপর ঝড় আরম্ভ হয়েছে। এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে চার কিলোমিটার কাদামাখা পথ পাড়ি দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়।

তবে মনের কাছে কোনও সমস্যাই সমস্যা নয়। ইচ্ছা কখনও যুক্তি তর্ক মানে না। মানে না কোনও সমস্যা। সেলিমের মন পড়ে আছে বাড়িতে। কারণ বাড়িতে তার সুন্দরী নববধূ তার পথ চেয়ে আছে। সেলিম নরসিংদী শহরে কাপড়ের ব্যবসা করে। মাঝে মাঝে রাতে বাড়ি ফেরে না। তার বউ মরিয়ম তার পথ চেয়ে নিঘুম রাত পার করে দেয়।

আজ চারদিন পর সেলিম বাড়ি ফিরছে। বিয়ের পর সে কখনও চাররাত বাড়ির বাইরে থাকেনি। তার বিয়ে হয়েছে মাত্র তিন মাস। সদ্য বিয়ে করা নববধূকে ফেলে চাররাত বাইরে থাকতে বেশ কষ্ট হয়েছে সেলিমের। কিন্তু কোনও উপায় ছিল না। তাই আজ এই ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেকখানি পথ পাড়ি দিয়ে সেলিম ভালবাসার টানে তার বউয়ের কাছে এসেছে।

ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তায় নেমে পড়ে সেলিম। প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটুর উপরে এনেছে। পায়ের স্যাণ্ডেল এখন তার হাতে। প্রায় কচ্ছপগতিতে তাকে এগোতে হচ্ছে। রাস্তায় পা ফেলার সাথে সাথেই হাঁটু অবধি কাদার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। শক্তি প্রয়োগ করে পা উঠিয়ে অন্যখানে ফেললেও সেই একই অবস্থা। মনে মনে মরিয়মের কথা ভাবতে ভাবতে এগোতে থাকে সে।

মরিয়ম দেখতে খুবই সুন্দরী। একেবারে পরীর মতন। দুধে আলতায় গায়ের রঙ, মায়াবী মুখের চেহারা, টানা টানা চোখ, বাঁশির মত নাক-সবমিলিয়ে অপূর্ব সুন্দরী। গ্রামে এমন মেয়ে বিশেষ পাওয়া যায় না। সেলিমদের বাড়ির কয়েক গ্রাম পরেই মরিয়মের বাপের বাড়ি। মরিয়ম সুন্দরী হলেও কোনও ছেলে তার ধারে কাছে ঘেঁষত না। সবাই বলে জিনের বাদশা নাকি মরিয়মের রূপে পাগল। মরিয়মের দিকে কোনও ছেলে হাত বাড়ালে তার ক্ষতি হবে। কোনও ছেলেই তাই মরিয়মকে কাছে পাবার চেষ্টা করে না। বিয়ের জন্য সম্বন্ধ এলে তা ভেঙে যায়। কোনও বাবা-মা চায় না সুন্দরী বউ পাওয়ার জন্য নিজের ছেলের ক্ষতি করতে।

মরিয়মের কৃষক বাবার দুঃখ কম ছিল না। সুন্দরী মেয়ে ঘরে অবিবাহিতা থাকলে বাবারা রাতে ঘুমাতে পারে না। সুন্দরী আবার ভয়ঙ্করও। মাঝে মাঝে মধ্যরাতে মরিয়মের ঘর আলোয় ভরে ওঠে। কড়া মিষ্টি আতরের গন্ধ পাওয়া যায়। তাই সে তার মেয়েকে কখনও বকাঝকা করে না। বরং মেয়েকে ভয় পায়।

সেলিমের কথা একটু আলাদা। মা-বাবা-ভাই-বোন কেউ নেই তার। আপন বলতে এক চাচা আছে। সেই চাচাই সেলিমকে মরিয়মের কথা বলেছে। একদিন চাচার সাথেই মরিয়মকে দেখতে যায়। মরিয়মের রূপে সেলিম আত্মহারা। রূপবতী এই মেয়েকে তার বউ হিসাবে চায়। মরিয়মের বাবা সব কথা খুলে বলে।

সেলিম নিজের জীবনের উপর ঝুঁকি নিতে রাজি মরিয়মকে পাবার জন্য। সেলিমের চাচা ভাতিজার এ ইচ্ছা মেনে নিতে চায় না। কিন্তু সেলিমের পীড়াপীড়িতেই রাজি হয়। তবে তার আগে জটা পাগল নামে তান্ত্রিকের কাছ থেকে সেলিমের কাছে থাকবে ততক্ষণ কোনও জিন তার ক্ষতি করতে পারবে না। তাবিজটি সবসময় সেলিমের ডান বাহুতে বাঁধা থাকে।

বাড়ির কাছাকাছি আসতেই সেলিমের গা ছমছম করে। এখন তাকে কবরস্থানের পাশ দিয়ে যেতে হবে। এই কবরস্থান সম্বন্ধে নানান গালগল্প আছে। আগেও রাতে অনেকবার এই কবরস্থানের পাশ দিয়ে সেলিম বাড়ি ফিরেছে, কিন্তু আজকের অবস্থা অন্যরকম।

.

ঘুটঘুঁটে অন্ধকার রাত, তার উপর আবার ঝড়-বৃষ্টি। অন্ধকারে একবার ভুল পথে পা বাড়িয়েছিল। কিছুদূর যাবার পর বিজলীর আলোয় সে বুঝতে পারে পথ ভুল হয়েছে।

মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে পা বাড়ায় সেলিম। এই অল্প পথ যেন শেষ হতে চায় না। সামান্য শব্দেই গা কেঁপে ওঠে। মনে হয় কে যেন তার পিছু পিছু হটছে। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখার মত সাহস তার হয় না।

অবশেষে সে কবরস্থান পার হয়ে আসে। এই বৃষ্টির মধ্যে তার গা ঘেমে গেছে। মনে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগেছে। কবরস্থান পার হয়ে আসতে।

একসময় সে বাড়ির কাছে চলে আসে। সে বুঝতে পারে মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে। তবুও সে তার মরিয়মের কাছে আসতে পেরেছে এটাই বড় কথা। ভালবাসার টান কিংবা কাছে পাবার টান কখনও কোণও বাধা মানে না। সেলিম তার ঘরের বারান্দায় উঠে গা ঝাড়তে থাকে। মরিয়ম নিশ্চয়ই তাকে দেখে অবাক হবে। খুশি তো হবেই! এসময় সেলিমের নাকে তীব্র ফুলের গন্ধ প্রবেশ করে। কিন্তু তার বাড়িতে তো কোন ফুলের গাছ নেই! তা হলে ফুলের মিষ্টি গন্ধ কোথা হতে আসছে! চমকায় সেলিম। দরজায় টোকা দিতেই সে খেয়াল করে নিচ দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে। তার মানে মরিয়ম জেগে আছে। কিন্তু এত রাতে তো জেগে থাকার কথা নয়!

মনের মধ্যে সন্দেহ ঢুকে পড়ে সেলিমের। মরিয়ম কি পরপুরুষের সাথে…ছিঃ। মরিয়ম এমনটা করতে পারে না! কিছুতেই পারে না। চঞ্চল চোখজোড়া ঘরের ভিতরের দৃশ্য দেখতে চায়। একটা ছোট্ট ফুটো যেন তার খুব প্রয়োজন। মা মনসাও হয়তো লখিন্দরের লোহার বাসরে ফুটো খোঁজার জন্য এত অস্থির হয়নি।

সেলিম বিশ্ব জয় করার আনন্দ পায় জানালার নিচে একটা ছোট ফুটো খুঁজে পাওয়ায়। দেরি না করে চোখ লাগায় তাতে। চমকে ওঠে সে। বিশ্বাস হতে চায় না! অবিশ্বাস্য! মরিয়ম গভীর ঘুমে মগ্ন। তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে সুদর্শন এক যুবক। যুবকের শরীর হতে আলো ছড়াচ্ছে। সেই আলোয় ঘরের অন্ধকার দূর হয়ে গেছে।

অসঙ্গতিটা ধরতে পারে না সেলিম। তীব্র রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা এসে ভর করে। চিঞ্জার করে দরজায় থাবা দেয়। খানকি মাগী, দরজা খোল…দরজা খোল্ কইলাম…ওরে, মাগী…বেশ্যা… সেলিম দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে দরজায় আঘাত করতে থাকে। তার মুখ থেকে ছোটে অশ্লীল সব শব্দ। ঘুম জড়ানো চোখে দরজা খোলে মরিয়ম। দমকা হাওয়ার মত ঘরে ঢোকে সেলিম। অনবরত মরিয়মকে মারতে থাকে। মরিয়ম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। বিস্ময়ের জন্য হয়তো __ লাগে না। মরিয়ম মাটিতে পড়ে যেতেই রাগটা যুবকের উপর গিয়ে পড়ে। কিন্তু কোথায় সেই যুবক! নেই! যেন শূন্যে মিলিয়ে গেছে। তা হলে কি চোখের ভুল!

এবার সেলিমের বিস্মিত হবার পালা। অসঙ্গতিটা বুঝতে পারে। যুবকের গা হতে আলো বেরুচ্ছিল কেন? তা হলে কি যুবকটি মানুষ নয়! জিনের বাদশা! মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকে। সে। শ্বাস নিতেও যেন ভুলে গেছে।

মরিয়ম উঠে বসে। সে-ও অবাক হয়েছে। তার স্বামী এই মাত্র বাড়ি ফিরল, তা হলে স্বামীর ছদ্মবেশে তিনরাত তার সাথে থাকল কে? তা হলে কি সে অন্য কেউ? গভীর রাতে তার স্বামীর রূপ ধরে আসে আবার ভোর হবার আগেই চলে যায়! প্রথমরাতে স্বামীর ছদ্মবেশীর আদর-সোহাগ দেখে অবাক হয়েছিল।

স্বামীর পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বলে মরিয়ম। কোনও কিছুই গোপন করে না। সব শুনে সেলিম ভয় পায়। নির্দোষ স্ত্রীকে বেদম মারধর করায় অপরাধবোধ জন্ম নেয়।  

সে রাতে আর তাদের ঘুম হয় না। একটু পরেই মসজিদ থেকে সুরেলা আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। দুজনেই ভয় নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে দিনের আলোর জন্য। সূর্য ওঠার সাথে সাথেই জটা পাগলের কাছে রওনা হয় সেলিম। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে নিয়ে হাজির হয়। সব শুনে ও বুঝে বিজ্ঞের মত মাথা দোলায় জটা পাগল।

বিপদ…বিপদ আইতাছে…ঘোর বিপদ সামনে…জিনের বাদশা…খুবই শক্তিশালী। থেমে থেমে শীতল কণ্ঠে চিৎকার করে জটা পাগল। তার কণ্ঠে এমন কিছু ছিল যা সেলিমের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়। সেলিম জটা পাগলের পা ধরে কেঁদে ফেলে।

পাগল বাবা, আমাগোরে বাঁচান…যেমনেই হোক আমাগোরে এই বিপদ হইতে উদ্ধার করেন। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে সেলিম।

সন্ধ্যার পর আমি আইতাছি। তোর বউয়ের কাছ থেইক্যা জিনের বাদশারে খেদাইতে হইব। গম্ভীর কণ্ঠে বলে জটা পাগল।

দুজনের সন্ধ্যা হবার অপেক্ষা। শত ঝামেলার মধ্যেই ক্ষুধার্ত স্বামীর জন্য রান্না করে মরিয়ম। সেলিম কিচ্ছু খেতে পারে না। মরিয়মের সাথে কথাও বলে না। হয়তো নিজের। স্ত্রীর পাশে অন্য কাউকে দেখতে চায় না। সে জিন হোক বা মানুষ।

সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে জটা পাগল সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন। করে সেলিমের বাড়িতে চলে আসে। বাড়ির চারদিকে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে। বিড়বিড় করে কী যেন বলে। সন্ধ্যার পর উঠানে একটা হাড় দিয়ে বৃত্ত আঁকে মাটির বুকে। বৃত্তের ভিতরে প্রবেশ করে সেলিম, মরিয়ম এবং জটা পাগল। বৃত্তের চারদিকে জ্বলে মোমবাতি।

গ্রামের সমস্ত মানুষ বৃত্তের বাইরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কেউ কেউ দূর থেকে দেখতে থাকে। সেলিমের বাড়িতে মানুষের অভাব হয় না। তারা সবাই জটা পাগলের ক্ষমতা দেখতে উৎসুক।

আস্তে আস্তে রাত বাড়তে থাকে। মানুষের উৎসাহে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়ে না। বরং আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। সেই সাথে বাড়তে থাকে জটা পাগলের মন্ত্র পড়ার শব্দ। একসময় দমকা বাতাস বয়ে যায়। লোকে ভাবে এ বুঝি জিনের বাদশার আগমনী বার্তা।

এত লোকের ভিড়েও কোনও শব্দ হয় না। শুধু মন্ত্র পড়ার শব্দ। হঠাৎ কোথা থেকে যেন হাসির শব্দ ভেসে আসে। লোকজন একে অপরের গায়ের সাথে সেঁটে যায়। তারা যেন শ্বাস নিতে ভুলে গেছে।

হঠাৎ কোথা থেকে যেন ভারী বজ্রপাতের মত শব্দ ভেসে আসে।

আমাকে বিরক্ত করার সাহস পেলি কোথা থেকে? অদৃশ্য কেউ একজন বলে ওঠে।

মরিয়মরে ছাইড়া দে। না দিলে তোর ক্ষতি হইব। মন্ত্র পড়া বাদ দিয়ে চিৎকার করে জটা পাগল।

তোর এত্ত বড় সাহস আমার ক্ষতি করবি। আমি জিনের বাদশা, আমি সব পারি। আজকেই মরিয়মকে নিয়ে যাব আমি। তোর ক্ষমতা থাকলে আটকা। হেসে ওঠে অদৃশ্য কণ্ঠধারী।

তাইলে তই আমার কথা শুনবি না? দেখ আমি কী করি। চিৎকার করে জটা পাগল। হাতের মুঠো থেকে কী যেন বের করে আগুনে ফেলে দেয়। চিৎকার করে ওঠে অদৃশ্য কণ্ঠধারী। ধোয়ায় ভরে যায় চারপাশ। কেউ কাউকে দেখতে পায় না। ধোয়া সরে যেতেই হঠাৎ সব আলো নিভে যায়। চাঁদখানাও ডুব দেয় মেঘের আড়ালে। কৌতূহলী দর্শকদের মনে ভয় ঢুকে যায়। অন্ধকারে ডুবে যায় সমস্ত গ্রাম। কেউ কিছু দেখতে পায় না। শুধু ধস্তাধস্তির শব্দ ভেসে আসে।

একসময় মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ বের হয়ে আসে। চাঁদের আলোয় লোকজন স্পষ্ট দেখতে পায় বৃত্তের ভিতর সেলিম এবং জটা পাগলের নিথর দেহ পড়ে আছে। মরিয়মকে কোথাও দেখা যায় না। যেন এত লোকের মধ্য হতে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

রাকিব হাসান

1 Comment
Collapse Comments

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *