চপলা (জনমে জনমে, মরণে মরণে)

চপলা

জনমে জনমে, মরণে মরণে,
মনে হয় যেন তোমারে চিনি।
ও-শরমার্ত অরূপ আনন
দেখেছি কোথায়, হে বিদেশিনী?
নীল নবঘন, চঞ্চল আঁখি
যে-তড়িৎময়ী কালবৈশাখী
থেকে থেকে আজ হানিছে আমার
তাপনিরিক্ত চিত্তাকাশে,
ফুরায়েছিল কি বিগত জীবন,
ও-মদমত্ত সর্বনাশে?

শত ফাল্গুন তোমার অভাবে
বিফল হয়েছে, অপরিচিতা;
সার্থক যোগে মূর্ত হতাশ
কানে কানে মোরে ডেকেছে—মিতা;
শিথিল নীবিতে প্রগল্ভ পাণি
বারে বারে কেন থেমেছে না জানি;
শূন্যগর্ভ বহ্নির মতো
উল্লাসে মোর অশেষ ক্ষুধা;
বিরহ বিরাজে দলিত বাসরে;
মরণাসক্ত ফেনিল সুধা।।

চকিতে চমকি তৃপ্ত হৃদয়
উতল, অকায় আবির্ভাবে,
ভরিলে চরম ক্ষতির দীনতা
বারে বারে মোর পরম লাভে;
অকারণে আঁখি ভারাতুর করি,
অক্ষম লোর সাঁঝে দিলে ভরি;
শীর্ণ স্মৃতির চ্যুত পল্লব
মুখরি অলখ চরণপাতে,
মুহু মুহু মোর বিজন মানসে
এসেছিলে তুমি বিনিদ রাতে।।

ঘাটে, বাটে, মাঠে ঘটেছে মোদের
আধোপরিচয় নিত্যনব :
দেখেছি বিকচ দাড়িম্ববনে
প্রচুরপরাগ প্রসাদ তব;
তোমারই কেশের প্রতিচ্ছায়ায়
গোধূলির মেঘ সোনা হয়ে যায়
পাকা দ্রাক্ষার অরাল লতায়
তোমারই তনুর মদিরা ভরা;
পথপার্শ্বের অপরাজিতা, সে
তোমারই দৃষ্টি লক্ষ্যহরা।।

 ঈর্ষা তোমার হেনেছে ঝঞ্ঝা
রভসবিবশ কুটীরে মম;
ফাটলে ফাটলে কষায় নয়ন
ভ্রূকুটি করেছে ত্রুটিরে মম।
ডেকেছ আমারে উদ্ধত প্ৰেমে,
দেখেছি লগ্ন গত, পথে নেমে;
বাদলশেষের ঝিল্লির স্বনে
বাজায়ে নূপুর অধীর সুরে,
করি অবিরত উপেক্ষাহত,
চ’লে গেছ তুমি অগম দূরে।।

চির জনমের প্রবঞ্চনার
ক্ষালনে আজি কি, ছলনাময়ী,
চিতসঞ্চিত অমৃত বিতরি
করিবে আমারে মরণজয়ী?
অথবা আবার খামখা খেয়ালে
অন্ধেরে ঘিরে মমতার জালে,
সন্ধিপূজার ষোড়শোপচার
রচাবে কেবলই শূন্য পীঠে?
অমর হাসির বজ্রদাহনে
জ্বালাবে লোলুপ মর্ত্যকীটে?

৮ অগস্ট ১৯২৯

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *