ঘরভেদী বিভীষণ
রাক্ষসরাজ সুমালীর কন্যা কৈকসী বা নিষার গর্ভে বিশ্রবা মুনির ঔরসে জন্ম হয় রাবণ, কুম্ভকর্ণ ও বিভীষণের। ভাইদের মধ্যে বিভীষণ পরম ধার্মিক ছিলেন। তিন ভাই তপস্যা করে বর পেয়েছিলেন তিন রকম। রাবণ অমরত্বের বর না পেয়ে পেয়েছিলেন দেব-দানবের অবধ্য হবার বর। কুম্ভকর্ণ লাভ করেছিলেন নিদ্রাসুখের বর। আর বিভীষণ চিরধার্মিক হবার বর পান।
সীতা উদ্ধারের জন্য রাম যখন সসৈন্যে লঙ্কায় উপনীত হন তখন বিভীষণ রাবণকে পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন যে, রামের সমান বীর ত্রিভুবনে নেই, সুতরাং সীতাকে প্রত্যর্পণ করলে ভালো হবে। যুদ্ধে যাওয়া সমীচীন হবে না। এতে রাবণ ক্ষিপ্ত হয়ে বিভীষণকে অপদস্থ ও অপমান করেন।
বিভীষণ চারজন রাক্ষসসহ রামের পক্ষে যোগদান করেন। লঙ্কার দুর্ভেদ্য দুর্গ এবং সেনাবাহিনীর যাবতীয় খবর বিভীষণের নখদর্পণে ছিল। এসব গুপ্ত সংবাদ দিয়ে রাবণকে নিধনের যুদ্ধে রামকে সার্বিক সহায়তা দিয়েছেন তিনি। রাবণপুত্র মেঘনাদ (ইন্দ্রজিৎ)কে কৌশলে যজ্ঞশালায় হত্যা করতে লক্ষ্মণকে সাহায্য করেছেন বিভীষণ। রাবণকে সবংশে নিধন করে রাম সীতা উদ্ধার করেন এবং রাবণের স্ত্রী মন্দোদরীর সাথে বিভীষণের বিয়ে দেন।
বিভীষণ ভাইয়ের শত্রুপক্ষকে ঘরের কথা জানিয়ে ঘর ভেঙ্গেছেন। সেজন্য তাকে ঘরভেদী বিভীষণ আখ্যা দেয়া হয়। আমাদের সমাজে ঘরের খবর পরকে দিয়ে সংসারে অমঙ্গল ও অশান্তি যারা আনে তাদের কথা বলতে গিয়ে ঘরভেদী বিভীষণ, ঘরসন্ধানী বিভীষণ, ঘরভাঙ্গা বিভীষণ ইত্যাদি প্ৰবাদ ব্যবহৃত হয়। একই কাহিনী থেকে অন্যান্য প্রবাদ যেমন- ঘর সন্ধানে রাবণ নষ্ট, ঘরভেদে রাবণ নষ্ট অথবা ঘরভাঙ্গানে বিভীষণ প্রবাদকথা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।