গজেন ও রদা-ঠাকুর
প্রেসিডেন্সীতে আধিভৌতিক ভাবে সুবার্স্ট বা নোরেনের নির্দেশের পরে নিবু গজেনকে গদা-ঠাকুরের সাথে একবার দেখা করবার জন্য উৎসাহ দেন। গজেন প্রথমে গাঁই গুঁই করার পরে কয়েকবার গদা-ঠাকুরকে স্বপ্ন দেখে। পকেটের পার্স আর ক্যালেণ্ডার থেকে বেরিয়ে গজেনের প্যান্ট ধরে টানাটানি করছেন গদা-ঠাকুর। ওরে শালা প্যান্ট কি তোর একার। তোর এই প্যান্ট আর খেঁচার কথা মাকে বলেছি। মা বলেছে, পাগল ছেলে যা করছে করতে দে ওটাকে। ওর মত করে ও দেশের কাজ করছে। দেশের কাজ না করলে কি করে জাতির কাজ হবে? এই যে নোরেন কত শিক্ষা দিয়েছে গোটা পৃথিবীর লোককে। এরকম শিক্ষা বিলিয়ে না দিলে কি হবে বল শালা! শিক্ষা নিয়ে ইস্কুল-কলেজের ব্যবসায় কাজে লাগালে সে কি আর শিক্ষা রে শালা?
এই পর্যন্ত এসে স্বপ্ন অন্য দিকে টার্ন করে গজেনের। তার স্কুলের পাওয়া সব শাস্তি, কলেজের রেজাল্টে নোটিস বোর্ডে তার নাম আর রোল নাম্বার খুঁজে যাওয়া আর তারপর তার সুডসাইডের চেষ্টায় বাড়ি থেকে পালানো…এ সব মনে পড়ে যায়। ট্রেনে দেখা এক ভিখিরির রাতের চাঁদ-আলোর প্ল্যাটফর্মে প্যান্ট খুলে হ্যাণ্ডেল মারার দৃশ্য। তার ঘেমে ওঠা আর বীর্যপাত হয়ে যাওয়া। পুলিশের লাঠির বাড়িতে রাস্তা থেকে তুলে টাকা চাওয়া আর বিনা বিচারে জেলে সাতদিন সাতরাত্রি আটকে থাকার দৃশ্য…। তার পাগলা-গারদে দু-মাস দশ-দিন আটকে থাকার অসহ্য যন্ত্রণার সব পুরোনো স্মৃতি তাকে তাড়া করতে থাকে। একদিন দৌড়ে যায় গজেন গদা-ঠাকুরের দর্শনেশ্বরের বাড়িতে। সাথে নিবু….। নোরেন কোনো বিদেশ ট্যুরে আছেন জানতে পারে গজেন।
ঠাকুর খালি গায়ে ধুতি না পরে হুঁকো খেতে খেতে গায়ের কাপড় পেঁচাতে পেঁচাতে বেরিয়ে আসেন। আরে গজেন…শালা হ্যাণ্ডেল-মারি পালোয়ান…আয় শালা আয়…আমি তো তোর পথ চেয়েই বসে আছি। সে ছিল নোরেন আর তুই গজেন…খুব ভালো করেছিস নিবু মা এ পাগলটা টাকে তুই ছাড়া আর কে বুঝবে বল। মাতৃশক্তি না থাকলে শক্ত কাজ করবি কি করে রে বাল? খা একটু মায়ের প্রসাদ খা। মাথাটা তো ঘেঁটে পুরো ঘ হয়ে আছে রে বানচোদ। আয় আমায় কাছে আয় বলে দুহাত বাড়িয়ে দেন গদা-ঠাকুর। রশি দেখ তোমার খেঁচা-ছেলে এয়েছে গো। খিঁচে খিঁচে খিন্ন হয়ে গেলি যে বাপ, আর কত খিঁচবি। লোকের জ্বালা গাঁড়ে নিয়ে বুকে নিয়ে সব নিজের বাঁড়ায় ধরতে গেলে তোর শিবশক্তির তো গাঁড়মারা যাবে রে শালা। তোকে তো হঠযোগী বানিয়ে দিতে হবে আমাকে। ক্রিয়া-যোগেও তোর সিদ্ধি হবে।
…ও রশি, একটু পায়েস খাইয়ে দাও এ বাল-ছেঁড়া পালোয়ানকে…। রশিদা বেরিয়ে আসেন। নিবুকে দেখে খুব উৎসাহ পান। আরে নিবু-মা এনেছিস ওটাকে? ওই তো তোকে লাল-প্যাকেট দিয়েছিল তাই না? রদা ঠাকুর অভিমান ভরে বলেন আচ্ছা, তোমরা লাল-প্যাকেট নিয়ে এমন করো যে আমি তোমাদের কক্ষনো লাল-প্যাকেট দেই না! গজেন লাল-প্যাকেট কোথায় পায় তাও মা আমাকে বলে দিয়েছেন রে চুপি চুপি। আমি কাউকে বলছি নে রে…। তোর ভয় নেই গজেন। কিন্তু রশি… দেখো এ পাগলাটা কেমন খিন্ন হয়ে গেছে। আর ঝাঁটের বাল ও তো শেষ হয়ে যাচ্ছে তোমার বাবা বলে রশিদা গজেনের মাথা বুকে টেনে নেন। কি হালকা হয়ে যাচ্ছিস রে দিনে দিনে…। রদা-ঠাকুর বলে চলেন…অমৃতের পুত্র উচ্চ-কোটির আত্মা। লাখে একটা এরকম আত্মা মেলে এ দুনিয়ায়…। নিজের সমস্ত মাল সমস্ত বাল পরহিতায় সমাজের জন্য বিলিয়ে দিচ্ছে গো ছেলেটা। একে পায়েস দাও রশি। সাথে লাল-প্যাকেট একটা আমার ফতুয়ার পকেট থেকে দিয়ে দিও…।
লুকিয়ে খাবি রে শালা। কাউকে দেখাবি না। আর কারো সাথে বিলিয়ে খাবি না। তোর জন্য অমাবস্যা-পুজো দিয়ে সরিয়ে রেখেছি লাল-প্যাকেটের একটা। রাগ করিস নে নিবু… তোকে পরের অমাবস্যায় দোবো খনে। মা বলেছে এই অমাবস্যায় গজেনের একার জন্য পুজো দিতে। সামনে গজেনের বড়ো পরীক্ষা আসছে গো। তাকে তো পাশ করতেই হবে রে। এত মানী-গুনী লোক গজেনের খেঁচা-ছেঁড়া নিয়ে এত ভাবছে এত করছে। গজেনের ছেঁড়াতে একদিন দুনিয়ার আকাশে কত্ত বাল উড়বে তাকি তোমরা জানো নাকি শালা! গজেন এ দুনিয়ায় অনেক মস্ত কাজ করতে এয়েছে রশি। আমি তোমাকে সেই পুজোর রাতে বলিচি না। গজেন আমাদের দেশের মুখ উজ্জল করবে। এ দেশে গজেনের মতো ছেলে এয়েছে এ আমাদের জাতির ভাগ্যি। আয় বাবা গজেন, আয়… মায়ের মন্দিরের থেকে একবার ঘুরে আসি, আয় বাবা…।
রদা-ঠাকুর গজেনকে একলা নিয়ে মন্দির পানে চলে যান। আকালী-মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে রদা-ঠাকুর গজেনের পেছনে আলতো-জোরে একটা লাথি মারেন। গজেন ছিটকে পড়ে গোঙাতে থাকে। ঠাকুর এগিয়ে এসে তার গলার উপরে বাঁ পা হালকা-স্টাইলে তুলে দেন। গজেনের চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে নিমেষে। রদা-ঠাকুর-আকালী-দর্শনেশ্বর কিছুই দেখতে পায় না। এক বিশাল হাঁসের গলা তার গলার ভেতরে ঢুকে গেছে। সে এক অনন্ত জলাশয়ের তলায় শ্বাস-রুদ্ধ হয়ে হাঁসফাঁস করছে। চারিধারে ফিসফাস ধ্বনিতে জেলিফিস-অক্টোপাসেরা ভেসে বেড়াচ্ছে….এক শিশু-অক্টোপাস পাশ দিয়ে যাবার বেলা পিছু ডেকে বলে গেল কিছু। গজেনের মনে হলো সে বলে গেল…… পরমহংস….।।