গজেনের খোঁজে নিবু

গজেনের খোঁজে নিবু

দর্শনেশ্বরে গজেনের উপর প্রবল গদা-ট্রিকের প্রভাবে গজেনের নজেন শিথিল হয়ে পড়ে। দিন-কয়েক সে বাক্য হারা হয়ে পড়ে থাকে সমাধি-প্রায় উত্তঙ্গ-ধ্বজভঙ্গ অবস্থায়। গোটা রাজ্যে রটে যায় গজেনের ট্রিক খেয়েছে কিক রদার ফ্লিক। ডিজোরিও নিজেকে গজেনের বিপ্লব-গুরু বলে প্রচার শুরু করেন ফেসবুকে। নিবু রোজ যায় রশিদা-মায়ের সাথে লাল-প্যাকেট ফঁকে আকালী-মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন যেন গজেনের নজেনে আবার ফেরত আসে খেঁচা-ছেঁড়া যাদু। রশিদা রদা-ঠাকুরকে বলেন… তোমার জন্য এত্ত বড় বিদ্রোহ শেষ হয়ে গেল…।

তুমি এসব কি করলে? তোমার মাথা ওই পলিটিক্যাল মাগিটা খেয়ে রেখেছে। ও তোমাকে বলেছে গজেনকে শেষ করে দাও। এ সব আমি জানি। যাদবপুরের এক অংশ দর্শনেশ্বরের দরজায় এসে বিদ্রোহ প্রকাশ করে। ঠাকুর তাদের লাল-প্যাকেট দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন আর বলেন শালা সব মা করাচ্ছেন সময়কালে সব ঠিক হয়ে যাবে তোরা ধৈর্য্য ধর শালা… ভালো কাজে সময় লাগে রে পাগলা। ওরে গজেন কি তোদের একার…?

সকলে টেনশনে থাকে গজেন কি আবার তার পুরোনো খেঁচা ছেঁড়া ফর্ম ফিরে পাবে? অলি পাবে ম্যাডিউ-অঁরিয়েৎ দেখা করেন ডিজোরিও-নিবুর সাথে। অঁরিয়েৎ গজেনের ট্রিটমেন্টের জন্য অ্যাসিডিশের কাছ থেকে অ্যাসিড-ট্রিপের টিপস নিয়ে আসেন। অ্যাসিডিশ ভারচুয়াল ওয়ার্লডে কানেক্ট করে চুপ মেরে যান। নোরেনকে ভারচুয়াল জগতে কন্টাক্ট করেন অ্যাসিডিশ। উৎকন্ঠায় দিন কাটে সকল বাল-পন্থীর দুই বাংলা জুড়ে। বিড়েমাথা আপন মনে ভবানীকে নিয়ে অন্য কেসে মন দেন। তাঁর সকল চরিত্র তা-ধেই তা-ধেই নাচতে থাকে গজেনের ফর্ম পড়ে যাওয়াতে। খেঁদি গজেন নিয়ে কোন কথা প্রেসের সামনে না বলাতেও উত্তেজনা আর হতাশা কমে না। অ্যাসিডিশের সাথে ঘন ঘন বৈঠক করতে চান দুই বাংলার সকল গজেন-ফ্যান নেতারা।

অ্যাসিডিশ… বাঁড়া, হ্যাভ ফেইথ ইন ইণ্ডিয়ান মিস্টিসিজম বলে ট্যুইট করেন একবার মাত্র। সকলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় গজেনের নজেন ট্রিকের প্রচণ্ড ফিভার অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে।

নোরেন তার বিদেশ সফর সেরে যোগাযোগ করেন নিবু-অ্যাসিডিশের সাথে। এর মধ্যে গজেনকে আবারও পাওয়া যায় না তার কলকাতার গোপন ডেরায়। নিবু গিয়ে দেখেন তালা ঝুলছে। সাথে সাথে বীরভূমের ট্রেন ধরেন নিবু। বোলপুর স্টেশনে নেমে এদিক ওদিক দেখতে থাকেন নিবু। একবার একজনকে গজেনের মতো দেখে তার দিকে দৌড়ে যান নিবু। কিন্তু না কোথায় গজেন…। বীরভূমের রাঙামাটির ওপরে কোপাইয়ের পথে চলেছেন নিবু। সাথে তাঁর পুরোনো ফোন-ক্যামেরা। হাতে একতারা। গজেনের জন্য আনা। সকল গাছতলার মাটি শুঁকে দেখতে থাকেন নিবু। ভিজে মাটি হলে গজেনের আশপাশে থাকার কথা। হঠাৎ মনে পড়ে… না, গজেন তো আজকাল বীর্যপাত বন্ধ করে দিয়েছে…তালে আর ভিজে মাটিতে কি করে তার চিহ্ন পাওয়া যাবে!

তালে কি গজেনকে আর পাওয়া যাবে না কোনদিন? তার নজেন-ট্রিক চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল? এত্ত বড় বিপ্লব রাষ্ট্র-শক্তির অন্যায়ের বিরূদ্ধে একজন সাধারণ নাগরিকের খেঁচাছেঁড়ার ঐতিহাসিক উদ্যোগের দলিল পুরোনো কিছু ফুটেজ ক্যামেরা বন্দি করেছেন নিবু এই মাটিতে এই বীরভূমে কোপাই পাড়ে দাঁড়িয়ে। মানুষের মুক্তির প্রয়াসে তাঁর জীবন উৎসর্গ করবেন কথা দিয়েছিলেন নোরেনকে সেই কবে সূদূর আয়ারল্যাণ্ড থেকে ভারতে ল্যাণ্ড করেছিলেন সেবার এই মহা-ব্রত নিয়ে। আজ কেন এভাবে বিপ্লব বন্ধ করে দিলেন গদা-ঠাকুর? মাস্টার নোরেন কি কিছুই করতে পারেন না…? ঠাকুর এ তোমার কি লীলা? এ তোমার কি পরীক্ষা বলে এক ছাতিম গাছ-তলায় বসে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন নিবু।

সন্ধ্যা হয়-হয়। বাতাসে ছাতিম ফুলের হালকা মিষ্টি তীব্র গন্ধ ভেসে বেড়ায়। নিবু ক্যামেরা বের করে দু-চারটে সেলফি তুলতে থাকেন। হঠাৎ দূরে দেখা যায় ধোঁয়া উড়ছে। তিনটে ছায়ামূর্তি। তার মধ্যে দুজন নাচছে বলে মনে হয় নিবুর। ফোন-ক্যামেরা তাক করে দেখেন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে ছবি। ওরা দূরে চলে যাচ্ছে অন্ধকারে। পায়ে পায়ে এগোতে থাকেন নিবু। এই তো সে ছাতিম-তলা। তিনজনকে দেখা গেলো। কারা ওরা? অন্ধকার হয়ে আসছে… কোপাই এর পাড় ধরে এগিয়ে যান নিবু। দূরে, আরো দূরে সরে যায় ছায়ামূর্তিরা।

অন্ধকারে দেখা যায় না কাউকেই। হতাশ হয়ে বসে পড়েন নিবু আবার পুরোনো গাছতলায়। এখানেই এর আগের বার গজেন বীর্যপাত করেছিল। গজেন আই লাভ ইউ। আই লাভ ইয়োর গাটস টু সেভ দ্য ওয়ার্লড। গজেন ইয়োর আর্ট মিনস আ লট ফর দ্য টাইম। ফিরে এসো গজেন। পৃথিবীর প্রয়োজনে ফিরে এসো মাই ডিয়ার। মাই ইটারন্যাল সেন্স অফ লাভ ফর হিম্যানিটি… আউ কুড সি ইন দ্য মাস্টার অ্যাণ্ড ইন ইউ অ্যাণ্ড ইন ইয়োর খেঁচা-ছেঁড়া আর্ট। গজেন অ্যান আর্টিস্ট কান্ট ডাই গজেন। ইয়েস অ্যান আর্টিস্ট কান্ট রিয়্যালি ডাই……। হ্যাভ দ্য ফেইথ নিবু… পাশ থেকে কেউ বলে ওঠে…।

নিবু ঘাড় ঘুরিয়ে কাউকেই দেখতে পান না। ব্যাগ থেকে আনমনে মোক্সা-মারিজুয়ানার লাল-প্যাকেট বের করতে যান। দেখেন ব্যাগের উপরে একটা সদ্য-বানানো জয়েন্ট পড়ে আছে। অবাক হয়ে সদ্য-সন্ধ্যার ঝিঁ-ঝিঁর আওয়াজে জোনাকির লাফালাফি আলোয় খট্টাস লাইটার-শব্দে হঠাৎ পাওয়া জয়েন্টে আগুন ধরান নিবু। …দ্য ফায়ার মাস্ট কিপ বার্নিং। দ্য ফায়ার মাস্ট কিপ বার্নিং কেউ বলে ওঠে ফিসফিসে। ধোঁয়ার গন্ধ তীব্র হয়। অন্ধকারে কাউকে দেখা যায় না অনেক চেষ্টা করেও। দ্য ফায়ার মাস্ট…..বলে হাঁটুতে মাথা রেখে ঝিঁ-ঝিঁর ডাকে হারিয়ে যান নিবু। মোক্সা-মারিজয়ানার প্রভাবে হালকা হ্যালু হয় তাঁর। দেখেন নোরেন দাঁড়িয়ে ছাতিম গাছ তলায়। গাছের উপরে বসে দোল-খাচ্ছে গজেন।

ঢিম ঢিম শব্দে ইলেক্টনিক বিটস বাজছে…..দূরে রবীন-শ্যামা হেঁটে যাচ্ছেন কোপাই-তীর ধরে। র‌্যাপ সুরে গান শোনা যাচ্ছে….গজেনের গলা…..পথের শেষ কোথায়….কি আছে বাঁড়া শেষে……এত কামনা এত সাধনা কোথায় শালা মেশে…..হাল ভাঙা পাল ছেঁড়া বাল ছেঁড়া ব্যথা… চলেছে নিরুদ্দেশে…..।

কি আছে শেষে…..আবার উত্তর আয়ারল্যাণ্ডের পাহাড় দেখতে পান নিবু….ঝর্ণার জলের শব্দ। কাছেই কোনো জায়গা থেকে পড়ছে। হালকা বাতাসে গায়ে ঝাপটা লাগে। চোখ মেলে বোঝার চেষ্টা করেন কেউ কি আছে আশপাশে। গজেন কি হিসি করছে পাশের গাছতলায়….ভালো করে বুঝতে বেশ অসুবিধা হয় নিবুর। আবার ব্যাগ থেকে বের করে ধরান আধখাওয়া জয়েন্ট। লাইটারের আলোয় নিবুর মুখে হাসির ঝলক দেখা যায়…..।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *