কোরআনে বিজ্ঞান – কাকতালীয় না বাস্তবতা
দেবাশীষ বললো, -‘ধর্ম গ্রন্থগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান খোজা আর আমাজন জঙ্গলের রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে সভ্যতার খোঁজা একই ব্যাপার। দুটোই হাস্যকর। হা হা হা হা।’
ওর কথায় অন্যরা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। শাকিব বলল, -‘দেখ দেবাশীষ, অন্য ধর্ম গ্রন্থগুলোর ব্যাপারে জানিনা, তবে আল কোরআনে এমন অনেক বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট নিয়ে বলা আছে, যা বিজ্ঞান অতি সম্প্রতি জানতে পেরেছে।’
দেবাশীষ বিদ্রূপ করে বলল, -‘এই জন্যই তো মুসলমানদের কেউই নোবেল পায় না বিজ্ঞানের। সব অই ইহুদি-খ্রিস্টানরাই মেরে দেয়। তখন আবার বলিস না যে, ইহুদি-খ্রিস্টান কোরআন পড়ে এসব বের করেছে। হা হা হা। পারিসও ভাই তোরা। হা হা হা।’
রাকিব বলল, -‘নোবেল লাভ করার উদ্দেশ্যে তো কোরআন নাজিল হয়নি, কোরআন এসেছে একটি গাইডবুক হিসেবে। মানুষকে মুত্তাকী বানাতে।’
-‘হুম, তো।’দেবাশীষের প্রশ্ন।
রাকিব কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। ঠিক সে সময় সাজিদ বলে উঠলো, -‘আমি দেবাশীষের সাথে একমত। আমাদের উচিত না ধর্ম গ্রন্থগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান খোঁজা।’
সাজিদের কথা শুনে আমরা সবাই ‘থ’ হয়ে গেলাম। কোথায় সে দেবাশীষকে যুক্তি আর প্রমাণ দিয়ে এক হাত নেবে তা না, উল্টো সে দেবাশীষের পক্ষে সাফাই করছে।
সাজিদ আবার বলতে লাগল, -‘আরো ক্লিয়ারলি, বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মগ্রন্থগুলোকে যাচাই করা ঠিক না। কারণ, ধর্মগ্রন্থগুলো ইউনিক। পাল্টানোর সুযোগ নেই। কিন্তু বিজ্ঞান প্রতিনিয়তই পাল্টায়। বিজ্ঞান এতই ছলনাময়ী যে, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকেও তার দেওয়া মত তুলে নিয়ে ভুল স্বীকার করতে হয়েছে।
দেবাশীষ বললো, -‘মানে? তুই কি বলতে চাস?’
সাজিদ মুচকি হাসল। বলল। -‘দোস্ত, আমি তো তোকেই ডিফেন্ড করছি। বলছি যে, ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞান খোঁজা আর তা দিয়ে ধর্মগ্রন্থ জাজ করাটা বোকামি। আচ্ছা বাদ দে। দেবাশীষ, শেক্সপিয়ারের রচনা তোর কাছে কেমন লাগে রে?’
একটু অবাক হলাম। এ আলোচনায় আবার শেক্সপিয়ার আসে কোথা থেকে এসে পড়ল? যাহোক, কাহিনী কোন দিকে মোড় নেয় দেখার অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
-‘ভালো লাগে। কেন?’
-‘হেলমেট পড়েছিস?’
-‘হ্যাঁ।’
-‘পড়ে নিশ্চয়ই কান্না পেয়েছে?’
দেবাশীষ বাঁকা চোখে সাজিদের দিকে তাকালো। সাজিদ বলল, -‘আরে বাবা, এটা তো কোন রোমান্টিক রচনা না যে এটা পড়ে মজা পেয়েছিস কিনা জিজ্ঞেস করবো। এটা একটা করুন রসভিত্তিক রচনা। এটা পড়ে মন খারাপ হবে, কান্না পাবে এটাই স্বাভাবিক, তাই নয়।’
দেবাশীষ কিছু বললো না।
সাজিদ আবার বলল, -‘শেক্সপিয়ারের ‘A Mid Summer Night’s Dream’ পড়েছিস?কিংবা Comedy of Errors?’
-‘হ্যাঁ’
-‘Comedy of Errors পড়ে নিশ্চয়ই হেসে কুটিকুটি হয়েছিস। তাই না? হা হা হা হা।’
দেবাশীষ বললো, -‘হ্যাঁ, মজার রচনা।’
সাজিদ বললো, -‘তোকে শেক্সপিয়ারের আরকেটি নাটকের নাম বলি। হয়তো পড়ে থাকবি। নাটকের নাম হচ্ছে ‘Henry The Fourth’। ধারণা করা হয়, শেক্সপিয়ার এই নাটকটি লিখেছেন ১৫৯৭ সালের দিকে এবং সেটি প্রিন্ট হয় ১৬০৫ সালের দিকে।’
-‘তো?’
-‘আরে বাবা, বলতে দে। সেই নাটকের এক পর্যায়ে মৌমাছিদের নিয়ে দারুণ কিছু কথা আছে। শেক্সপিয়ার দেখিয়েছেন, পুরুষ মৌমাছিদের একজন রাজা থাকে। রাজাটা নির্ধারিত হয় পুরুষ মৌমাছিদের ভেতর থেকেই। রাজা ব্যতীত, অন্যান্য মৌমাছিদের হলো সৈনিক মোমাছি। এই সৈনিক মোমাছিদের কাজ হল, মৌচাক নির্মাণ, মধু সংগ্রহ থেকে শুরু করে সব। রাজার নির্দেশমতো সৈনিক মৌমাছিরা তাদের প্রত্যাহিক কাজ শেষ করে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে রাজা রাজা মউমাছির কাছে জবাবদিহি করে। অনেকটা প্রাচীন যুগের রাজা বাদশাহের শাসনের মতো আর কি।’
আমরা সবাই শেক্সপিয়ারের গল্প শুনছি। কারো মুখে কোন কথা নেই।
সাজিদ আবার শুরু করলো, –
‘চিন্তা কর, শেক্সপিয়ারের আমলেও মানুষজনের বিশ্বাস ছিল যে, মৌমাছি দুই প্রকার। পুরুষ মৌমাছি আর স্ত্রী মৌমাছি। স্ত্রী মৌমাছি খালি সন্তান উৎপাদন করে, আর বাদ বাকি কাজকর্ম করে পুরুষ মৌমাছি।
সাকিব বলল, -‘তেমনটা তো আমরাও বিশ্বাস করি। এবং, এটাই তো স্বাভাবিক, তাই না?’
-‘হা হা হা। এরকমটাই হওয়া স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু মৌমাছির জীবন চক্র অন্যান্য কীট-প্রত্যঙ্গের তুলনায় একদম আলাদা।’
-‘কি রকম?’ -রাকিবের প্রশ্ন।
সাজিদ বলল, -‘১৯৭৩ সালে অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী Karl Von Frisch ‘Physiology of Medicine’ বিষয়ে সকল গবেষণার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘মৌমাছির জীবন চক্র’। অর্থাৎ, মৌমাছিরা কিভাবে তাদের জীবন নির্বাহ করে।
এই গবেষণা চালাতে গিয়ে তিনি এমন সব আশ্চর্যজনক জিনিস সামনে নিয়ে এলেন, যা শেক্সপিয়ারের সময়কার পুরো বিশ্বাসকে পাল্টে দিলো। তিনি ফটোগ্রাফি এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে দেখিয়েছিলেন যে, মৌমাছি দুই প্রকার নয়, মৌমাছি আসলে তিন প্রকার।
প্রথমটা হল, পুরুষ মৌমাছি।
দ্বিতীয়টা হল, স্ত্রী মৌমাছি। এই মৌমাছিদের বলা হয়, Queen Bee. এরা শুধু সন্তান উৎপাদন করা ছাড়া আর কোন কাজ করে না। এই দুই প্রকার ছাড়াও আরো এক প্রকার মৌমাছি আছে। লিঙ্গভেদে এরাও স্ত্রী মৌমাছি তবে একটু ভিন্ন।’
-‘কি রকম?’ দেবাশীষ প্রশ্ন করল।
-‘আমরা জানি পুরুষ মৌমাছিরাই মৌচাক নির্মাণ থেকে শুরু করে মধু সংগ্রহ সব করে থাকে কিন্তু এই ধারণা ভুল। পুরুষ মৌমাছি শুধু একটি কাজই করে, আর তা হলো কেবল রানী মৌমাছিদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা। মানে, সন্তান উৎপাদনে সহায়তা করা। এই কাজ ছাড়া আর কোন কাজ নেই।’
-‘তাহলে মৌচাক নির্মাণ করে শুরু করে বাকি কাজ কারা করে?’ –রাকিব জিজ্ঞাসা করল।
-‘হ্যাঁ। তৃতীয় প্রকারের মৌমাছিরাই বাদ বাকি সব কাজ করে থাকে। লিঙ্গভেদে এরাও স্ত্রী মৌমাছি। কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে এর সন্তান জন্মদানে অক্ষম। সোজা কথায়, এদের বন্ধ্যা বলা যায়।’
আমি বললাম, -‘ও আচ্ছা।’
সাজিদ আবার বলতে লাগল, -‘বিজ্ঞানী Karl Von Frisch এই বিশেষ শ্রেণীর স্ত্রী মৌমাছিদের নাম দিয়েছেন Worker Bee বা কর্মী মৌমাছি। এরা Queen Bee তথা রানি মৌমাছি থেকে আলাদা একটি দিকেই। সেটা হলো রানী মৌমাছির কাজ হলো সন্তান উৎপাদন, আর কর্মীদের কাজ সন্তান জন্ম দেওয়া ছাড়া অন্যসব।’
সাকিব বলল, -‘বাহ, দারুন তো। এরা কি প্রকৃতিগতভাবেই সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে থাকে?’
-‘হ্যাঁ’
-‘আরও, মজার ব্যাপার আছে। বিজ্ঞানী Karl Von Frisch প্রমাণ করেছেন যে, ওইসব কর্মীরা যখন ফুল থেকে রস সংগ্রহ করতে বের হয়, তখন তারা খুব অদ্ভুত একটি কাজ করে। সেটা হল, ধর, কোন কর্মী মৌমাছি কোন এক জায়গায় ফুলের উদ্যানের সন্ধান পেল যেখান থেকে রস সংগ্রহ করা যাবে। তখন ওই মৌমাছিটি তার অন্যান্য সঙ্গীদের এই ফুলের উদ্যান সম্পর্কে খবর দেয়।’
মৌমাছিটি ঠিক সেভাবেই বলে, যেভাবে যে পথ দিয়ে সে ওই উদ্যানে গিয়েছিল। মানে, এক্স্যাক্ট, যে পথে সে সন্ধান পায়, সে পথের কথাই অন্যদের বলে। আর, অন্য মৌমাছিরাও ঠিক তার বাতলে দেওয়া পথ অনুসরণ করেই সে উদ্যানে পৌঁছে। একটুও হেরফের করে না। Karl Von Frisch এই ভারী অদ্ভুত জিনিসটার নাম রেখেছেন ‘Waggle dance’..
আমি বললাম, -‘ভেরি ইন্টারেস্টিং…..’
সাজিদ বলল, -‘মোদ্দাকথা, Karl Von Frisch প্রমাণ করেছেন যে, স্ত্রী মৌমাছি দু প্রকারের। রানি মৌমাছি আর কর্মী মৌমাছি। দুই প্রকারের কাজ সম্পূর্ণ আলাদা। আর, পুরুষ মৌমাছি মৌচাক নির্মাণ, মধু সংগ্রহ এসব করে না। এসব করে কর্মী স্ত্রী মৌমাছিরাই।’
এই পুরো জিনিসটার ওপর Karl Von Frisch একটি বইও লিখেছেন। বইটির নাম ‘the Dancing Bees’। এই জিনিসগুলো প্রমাণ করে তিনি ১৯৭৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।
এতটুকু বলে সাজিদ থামল। দেবাশীষ বলল, -‘এত কিছু বলার উদ্দেশ্য কি?’
সাজিদ তার দিকে তাকাল। আর বলল, -‘যে জিনিসটা ১৯৭৩ সালে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, সেই জিনিসটা ১৫০০ বছর আগে কোরআন বলে রেখেছে।’
দেবাশীষ সাজিদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।
সাজিদ বললো, -‘কোরআন যেহেতু আরবী ভাষায় নাজিল হয়েছে, আমাদের আরবী ব্যাকরণ অনুসারে তার অর্থ বুঝতে হবে। বাংলা থেকে ইংরেজি কোনটাতেই পুংলিঙ্গ এবং স্ত্রীলিঙ্গের জন্য আলাদা আলাদা ক্রিয়া ব্যবহৃত হয় না।
যেমন ইংলিশে পুংলিঙ্গের জন্য আমরা বলি, He does the work, আবার স্ত্রী লিঙ্গের জন্যও বলি, She does the work
খেয়াল করো, দুটো বাক্যে জেন্ডার পাল্টে গেলেও ক্রিয়া পাল্টেনি। পুংলিঙ্গের জন্য যেমন does, স্ত্রীলিঙ্গের জন্যও does। কিন্তু আরবিতে সেরকম নয়। আরবিতে জেন্ডারভেদে ক্রিয়ার রূপ পাল্টে যায়।’
আমরা মনোযোগী শ্রোতার মত শুনেছি।
সে বলে যাচ্ছে-
‘কুরআনে মৌমাছির নামেই একটি সূরা আছে। নাম সূরা আল নাহল। এই সুরার ৬৮ নাম্বার আয়াতে আছে, – ‘(হে মোহাম্মদ) আপনার রব মৌমাছিকে আদেশ দিয়েছেন যে, মৌচক বানিয়ে নাও পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে, তাতে।’
খেয়াল করো, এখানে সন্তান জন্মদানের কথা বলা হচ্ছে না কিন্তু। মৌচক নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে।
Karl Von Frisch আমাদের জানিয়েছেন, মৌচাক নির্মাণের কাজ করে থাকে স্ত্রী মৌমাছি। এখন আমাদের দেখতে হবে কুরআন কোন মৌমাছিকে এই নির্দেশ দিচ্ছে। স্ত্রীর মৌমাছিকে? নাকি পুরুষ মৌমাছিকে?
যদি পুরুষ মৌমাছিকে এই নির্দেশ দেয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে কুরআন ভুল। আরবি ব্যাকারনে পুরুষ মৌমাছি কে মৌচাক নির্মাণ কাজের নির্দেশ দিতে যে ক্রিয়া ব্যবহৃত হয় তাহলো ‘ইত্তাখিজ’ আর কি স্ত্রী মৌমাছিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ‘ইত্তাখিজি’।
অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, কোরআন এই আয়াতে মৌমাছিকে নির্দেশ দিতে ‘ইত্তাখিজ’ ব্যবহার না করে, ‘ইত্তাখিজি’ ব্যবহার করেছে। মানে, এই নির্দেশটা নিঃসন্দেহে স্ত্রী মৌমাছিকেই দিচ্ছে, পুরুষ মৌমাছিকে নয়।
বলতো দেবাশীষ, এই সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক ব্যাপারটি, মুহাম্মদ সা. কোন সম্পর্ক রাখে কোন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন? এমনকি, শেক্সপিয়ারের সময়কালেও যেখানে এটা নিয়ে ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল?’
দেবাশীষ চুপ করে আছে। আর বলতে লাগল, -‘শুধু এই আয়াতে নয়, এরপরের আয়তে আছে ‘অতঃপর, শোষণ করে নাও প্রত্যেক ফুল থেকে, এবং চল স্বীয় রবের সহজ সরল পথে।’
চোষণ বা পান করার ক্ষেত্রে আরবিতে পুংলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় ‘কুল’ শব্দ, এবং স্ত্রী লিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ক্কুলি’। কুরআন এখানে ‘ক্কুল’ ব্যবহার না করে ‘ক্কুলি’ ব্যবহার করেছে। ‘সহজ সরল পথে’ চলার নির্দেশ এসেছে পুলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত শব্দ ‘ঊসলুক’, এবং স্ত্রীলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ঊসলুকি’। মজার ‘ঊসলুক’ ব্যবহার না করে ‘ঊসলুকি’ ক্রিয়া ব্যবহার করেছে। মানে, নির্দিষ্টটা পুরুষ মৌমাছিদের জন্য নয়, স্ত্রী মৌমাছির জন্য।
আরও মজার ব্যাপার, এই আয়াতে কুরআন মৌমাছিকে একটি সহজ সরল পথে চলার নির্দেশ দিচ্ছে। আচ্ছা, মৌমাছির কি পরকালের জবাবদিহিতার কোন দায় আছে? পাপ পুণ্যের? নেই। তাহলে তাদের কেন সহজ সরল পথে চলার নির্দেশ দেয়া হল?
খেয়াল কর, বিজ্ঞানী Karl Von Frisch মৌমাছিদের ব্যাপারে যে আশ্চর্যজনক ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছেন, তা হল তারা ঠিক যে পথে কোন ফুলের উদ্যানের সন্ধান পায়, ঠিক একই পথে, একই রাস্তায় অন্যদের বাতলে দেয়। কোন হেরফের করে না। অন্যরাও ঠিক সে পথ অনুসরণ করে উদ্যানে পৌঁছে। এটাই তাদের জন্য সহজ সরল পথ। বিজ্ঞানী Karl Von Frisch এটার নাম দিয়েছেন Waggle Dance, কোরআনও ঠিক এ কথাই বলছে না?
দেবাশীষ, এখন তোকে যদি প্রশ্ন করি, কুরআন কি এই জিনিসগুলো বিজ্ঞানী Karl Von Frisch থেকে নকল করেছে?
তোর উত্তর হবে ‘না’। কারন, তিনি এসব প্রমাণ করেছেন মাত্র সেদিন। ১৯৭৩ সালে। কোরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন নিরক্ষর মুহাম্মদ সা. এই বৈজ্ঞানিক ব্যাপারগুলো ঠিক কোথায় পেলেন? কোরআন কেন এই নির্দেশগুলো পুরুষ মৌমাছিকে দিল না? কেন স্ত্রী মৌমাছিকে দিল?
যদি এই কোরআন সুপার ন্যাচারাল কোন শক্তি, যিনি এই মৌমাছির সৃষ্টিকর্তা, যিনিই মৌমাছিদের জীবনচক্রের জন্য উপযুক্ত করে সৃষ্টি করেছেন, তার নিকট থেকে না আসে, তাহলে ১৫০০ বছর আগে আরবের মরুভূমিতে বসে কে এটা বলতে পারে?
যে জিনিসটার ১৯৭৩ সালে আবিষ্কার করে বিজ্ঞানী Karl Von Frisch নোবেল পেলেন, তা কুরআনে বহু শতাব্দী আগেই বলা আছে। কই মুসলিমরা কি দাবী করছে Karl Von Frisch কোরআন থেকে নকল করেছে? করে নি। মুসলিমরা কি তার নোবেল পুরষ্কারে ভাগ বসাতে গেছে? না, যায় নি। কারন, এর কোনটাই কোরআনের উদ্দেশ্য নয়।
আমরা কোরআনকে বিজ্ঞান দিয়ে বিচার করি না, বরং দিন শেষে বিজ্ঞানী কোরআনের সাথে এসে কাঁধে কাঁধ মিলায়।
এতোটুকু বলে সাজিদ থেমে গেল। দেবাশীষ কিছুই বলছে না। শাকিব আর রাকিবের চেহারাটা তখন দেখার মতো। তারা খুবই উৎফুল্ল এবং খোশমেজাজি একটা চেহারায় দেবাশীষের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন তারা বলতে চাইছে- ‘দে দে ব্যাটা। পারলে একবার কোন উত্তর দে………..
“চোষণ বা পান করার ক্ষেত্রে আরবিতে পুংলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় ‘কুল’ শব্দ, এবং স্ত্রী লিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ক্কুলি’। কুরআন এখানে ‘ক্কুল’ ব্যবহার না করে ‘ক্কুলি’ ব্যবহার করেছে। ‘সহজ সরল পথে’ চলার নির্দেশ এসেছে পুলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত শব্দ ‘ঊসলুক’, এবং স্ত্রীলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ঊসলুকি’। মজার ‘ঊসলুক’ ব্যবহার না করে ‘ঊসলুকি’ ক্রিয়া ব্যবহার করেছে। মানে, নির্দিষ্টটা পুরুষ মৌমাছিদের জন্য নয়, স্ত্রী মৌমাছির জন্য।”
কোরানে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ ও স্ত্রী এবং একবচন ও বহুবচন বোঝাতে একই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
আরবী ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাকরণ এসেছে কোরান রচনার অনেক পরে।