কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙে ফে কর রে লোপাট…

কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙে ফে কর রে লোপাট…

পল্টনে যোগ দেওয়া হাফ-পেন্টুলুন, যাত্রাদলে বাঁশি-বাদন ও মানবাধিকার বিদ্রোহে রণক্লান্ত প্রেমিক আপন মনে কাগজ ছিঁড়ছিলেন জানালার পাশে বসে। পুত্রদ্বয় ধুতরো ফুলের মালা-গলে সংসার-সাম্যবাদে প্রচণ্ড ব্যস্ত। কালীসাধন-তন্ত্র-যন্ত্র-শ্যামা মায়ের গানে ও কাব্য-বিদ্রোহে খোদার আসন আরশ ছেদিয়া চির-বিষ্ময় বিশ্ব-বিধাত্রীর বুকে প্রচুর লৌহকপাট ভাঙাচোরার পরে এখনো দূর দ্বীপবাসিনীর প্রেমে পাহাড় চূড়ায় ওঠেন, ঝর্ণাতলে নামেন। চৈতালী-চাঁদনি রাত্রে শূন্য-বুকে মমির দেশের মেয়ে ও পাখিকে ডেকে যান দিশি-বিদেশি ভাষা-সুরে। নিশীথ-স্বপনসম তাঁর স্মৃতি ভোলা প্রচণ্ড কঠিন। ভরিয়া পরাণ তার গান অনেক শুনে ক্লান্ত ও অক্লান্ত বাঙালি আজো বাতায়নে শ্রাবণ-রাতে চোখ রাখে, তিনি জানেন। কুহু-কুহু কোয়েলিয়া ডেকে যায় তাকে বিদ্রোহের ডাক দুই বাংলার ভাগ না-হওয়া কবি…ভবিষ্যতের নবী। কবি-অকবি সকল আখ্যা সয়ে এসেছেন মুখ বুজে। থেকে থেকে সেই মুখ তার পড়ে মনে যার বুকে ছিল তৃষ্ণা আর চোখে বারি।

কমলা-শাড়ি বাঙালী রমণী তাকে বিপ্লবী করে তোলে অগিবর্ণে অগ্নিবীণায় তার জুড়েছেন। মানেননি সর্বদা রবি-গান্ধীরে। অল্টারনেটিভ প্রেমিক-সাধক-বিদ্রোহী পুকুরের পাশে লিচু-গাছের ছায়ায় বাঁশি বাজান দুপুরে সাঁঝে শ্রাবণ রাতে। মেঘ উড়ে যায়। শুকনো পাতায় নূপুর বাজিয়ে যায় কোন বালিকা, ভ্রমর-কালো চুলে শাপলা ফুল তোলে ভোরের পদ্ম ভেবে আরেক কিশোরী। বিজেপির পদ্ম নিয়ে শাপলা ভাবায় অবাক হয়ে যান দুখুরুল। এ কি সাম্প্রদায়িক জঘন্যতা এই বিজেপি আর এস এসের মনে। ধরণীর হাতে যারা ফসলের ফরমান এনে দেয় তাদের গানে উদ্দাম উত্তাল যুবক-কিশোরী-যুবতীদের ডাক দিয়ে যান বারে বারে। সুরা-পাত্রে ভাসে সময়ের ছবি। ছবির পাশে একাই বাঁশি বাজান কবি।

ভোটের আগে নেতাগণের পকেটে লঙ্কার গুঁড়ো রাখার, তার ফুটো ঘর ছেয়ে নেওয়ার পরামর্শে তারা ফ্যান হয়ে যায় দুখুরুলের। তবু কবির বিষবুকে জালা জড়োয় না। সব দেখে শুনে প্রচণ্ড ক্ষেপে যান তিনি বারে বার। তাই যা মুখে আসে বলতে কক্ষণো দ্বিধা করেন নি কোনোকালে। লাশ-রাজনীতি ও নীতিহীনতা, নাগরিকের অধিকার-বোধ এ সকল নিয়ে একাই লড়ে যান বছর-দশক-শতক ব্যাপী। সকল ধর্মের গাঁড় মেরে মৌলবীকে মৌ-লোভী বলে খিস্তি দিয়ে হুঁশ ফেরান বারে বারে যুদ্ধ-ফেরারী কবি। নিজেকে উন্মাদ ঘোষণা করবার পরে তাকে ইন্টারভিউর জন্য ডাকে নানা টিভি চ্যানেল। সহসা নিজেকে চিনে কি করে সকল বাঁধ খুলে ফেলতে হয় তা নিয়ে কিছু ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করা হয়।

তিনি ফেসবুক লাইভে এসে উন্মাদনা প্রকাশ করেন। সাধারণত আড়ালেই থাকেন। ইলেকট্রনিক পেন থেকে রাত্রে আগুন ঝরতে দেখা যায় অনেক দূর থেকে। গাছতলায় সারাদিন-রাত বসে চেয়ে থাকেন আকাশের পানে। পাখি উড়ে যায়। তিনি গানে গানে ডাকতে থাকেন তাদের… শূন্য বুকে ফিরে আসবার ইনভিটেশন পাঠান। আঁটসাট খোঁপা দেখলে পল্টন-রাষ্ট্র-ভাষায় কিকরে সেখানে তাঁর হৃদয়-হুম-হুম-দিল আবদ্ধ হয়ে গেছে সেকথা গোটা দেশকে জানিয়ে দেন অনেকবার। তবু খোঁপা-চুলের নারীরা বোঝে না সে কথা। লোহার সরকারী জেল-কারা-কপাট যিনি ভেঙে দেবার ডাক দিতে পারেন রক্ত-ক্লটিং চেইনের রক-বেসকে রেখে তাঁকে গ্রেফতার না করে পস্তায় সরকার। কিন্তু দুই বাংলায় প্রচণ্ড আগুন-বীণা-ড্রাম-কিবোর্ড-ইলেক্ট্রনিক ডিজে উঠবে বেজে এই ভয়ে থমকে থাকে সক্কলে। হায়ার স্পেসটাইমে বাজে মাদল লোয়ার স্পেসে আর্থ-স্টেশন কেঁপে ওঠে সেই ঈথার-ভাইব্রেশনে ।

পল্টন-হীন একাকীত্বের কারণে ব্লাড-শেডের পথে হাঁটতে পারেন না কবি। তাই রক্ত-লেখায় মেলে ধরেন নিজের লেখা ও দর্শন। সিস্টেমকে কুচি কুচি করে সিম্বলিকভাবে ছিঁড়ে ফেলতে কাগজ ছিঁড়ে যান কবি জানালার পাশে বসে গান শুনতে শুনতে। একদিন কোনো বন্ধু আসবে এই ভরসায়। হাঁস উড়ে যায়। চোখ জ্বালা করে নেশায়। তবু ছিঁড়ে চলেন আনমনে। কপাট ভাঙার ডাকে রণক্লান্ত সহজে শান্ত হবেন না ঘোষণা করেছেন বহুকাল। বাংলাদেশে যথারীতি তিনি ঘোষণা করেন নি। ঘোষণা দিসেন।

গজেনের বাহাত্তর ঘন্টা বাল ছেঁড়ার ঘোষণা শুনে দুখুরুল তাকে প্রচণ্ড উৎসাহভরে একটি গান রচনা করে পাঠান। ফেসবুকে স্ট্যাটাসে পোস্ট করা হয় সেই গান-লিরিক…।

শূন্য-বুকে আয় রে পাগলা তরুণ বালক –
ছিঁড়তে হলে ছিঁড়ে নে আজ মেঘের পালক
আপন রঙে উড়বি রে তুই উড়বি কোথা –
উড়ন্ত এই দেশের কারার নকল কপাট

দে খুলে দে দরজা আজ করে দে হাট।


আর পারি না নরম করে বলতে কথা –
বাজছে বুকে রক্ত-ঝরা পাগলা নেশা
শেষ করে দে নকলি সময় খোদার আসন –
মার রে লাথি তোকে যখন ভাঙছে শাসন।

দে খুলে দে দরজা আজ করে দে হাট।

স্যাটেলাইট পাক খাচ্ছে মেঘের দেশে –
পরির পাখায় নতুন সময় উঠছে হেসে
মেঘের দেশে মাদল বাজে দ্রিদিম রবে –
বলনা শালা মানুষ কবে স্বাধীন হবে।

দে খুলে দে দরজা আজ করে দে হাট।

তরুণ দলের করুণ হালে পাচ্ছে হাসি –
বলবি কবে বিদ্রোহকেই ভালবাসি
যা না তোরা সবাই মিলে যা না ফাঁসি –
রক্ত এখন ঝনঝনাঝন, নয় তো বাসি।

দে খুলে দে দরজা আজ করে দে হাট।

এদেশ কি তোর গাঁড় মেরেছে, বিদেশ ভালো?
কোথাও কোনো মানুষ নেই রে এখন বেঁচে
আপিস-আদালতে সবাই আপন খেঁচে
খিঁচবি যদি রাস্তাতে তুই, সেলাম তোকে।

দে খুলে দে দরজা আজ করে দে হাট।

বাঁচতে হলে খিঁচতে হবে নতুন করে –
খেঁচো যুবক এ সময়ে নতুন করে
হস্ত যেন ক্লান্ত না হয় খিঁচতে থাকো –
তোমায় দেখে খিঁচবে জেনো ভোরের কাকও।

দে খুলে দে দরজা আজ করে দে হাট।

ভোরের কাকে ডাক দিয়েছে আজকে তোমায় –
খিঁচতে খিঁচতে ছিঁড়তে থাকা তোমায় মানায়
ছিঁড়ে ফেল এই পতাকা বালের দেশের –
আজকে বাজুক, বাজুক সে গান শাসন-শেষের…।

দে খুলে দে দরজা আজ করে দে হাট।।

এ হেন সমর্থনে দুই বাংলা আবার প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে ওঠে। সকলের জনসমক্ষে খেঁচার দাবিতে খেঁচাখেঁচি, চেঁচামেচি ও হরতাল শুরু হয়ে যায়। অনেকেই রবীনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। কে বা কারা রটিয়ে দেয় রবীন বলেছেন গজেনের হস্ত আমারি হস্ত। এই উক্তি নিয়ে আবার মস্ত ক্যাওড়া শুরু হয়। দুই বাংলা পেরিয়ে বিতর্ক সুইডেন নোবেল অথরিটির কাছে পৌঁছে যায়। তারা খেঁচায় নোবেল দেবে কিনা তা ভাবতে বৈঠক শুরু করে অলিম্পিক অথরিটি ও ইউনাইটেড নেশনের প্রচণ্ড উচ্চ-খেঁচা ও হাইটের ছেঁড়া বিশেষজ্ঞের সাথে। নোয়াম চমস্কি গজেনকে উইশ করে একটি আপন ছেঁড়া যাওয়া সাদা ঝাঁটের লোমের ছবি পাঠান। এ নিয়ে কিছু কৃষ্ণাঙ্গ কবি ও সাহিত্যিক প্রতিবাদে রাস্তায় নামে কিন্তু খেঁচে বা ছেঁড়ে না। তারা বর্ণবৈষম্যের বদ-গন্ধ পান। সাদা-নোয়াম কালো নোয়াম নামে একটি কবিতার বই লেখেন খেঁদির প্রচণ্ড কাছের কবি নির্বোধ সরকার।

এই বিতর্কে বারে বারে গজেনের প্রকাশ্যে আসায় প্রাণ সংশয় হবে ভেবে প্রকাশ্যে-ছেঁড়ার দিন পিছিয়ে দিতে হয়। প্রতিবার ডিজোরিও ঘোষণা করেন। দিন পিছিয়ে যাচ্ছে আরো বাহাত্তর ঘন্টা। মিডিয়া ও দুই বাংলার মানুষ সমস্বরে বলেন… বাহাত্তর ঘন্টার আগে তো কিছুই বলা যাচ্ছে না……, গজেন কি পারবে সেভাবে ছিঁড়তে? গোটা পৃথিবী অপেক্ষা করে থাকে গজেনের নজেন-জেলি-ট্রিক ও ছেঁড়া-ছেঁড়ির নতুন সংবাদের অপেক্ষায়।।

1 Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *