৯৯
রঘু প্রথমে অবাক হয়ে গিয়েছিল। সদর দরজা খোলা কেন? দিদিমণি কি দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছে?
— দিদিমণি!
রঘু দরজাটায় খিল বন্ধ করে ভেতরে গিয়ে আবার ডাকলে—দিদিমণি—
কারো কোনও সাড়াশব্দ নেই। বাইরের বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল রঘুর জামা-কাপড় তবু সেই ভিজে জামা-কাপড়েই সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে লাগলো। সমস্ত ঘর অন্ধকার। আলো জ্বালেনি কেন দিদিমণি? অন্ধকার করে ঘরের মধ্যে বসে আছে কেন? কী হলো?
—দিদিমণি!
বড়-দিদিমণির ঘরও অন্ধকার। রঘু গিয়ে ঘরের ভেতরের আলোটা জ্বালতেই লক্ষ্মীদি যেন চমকে উঠেছে।
— কে?
—আমি বড়-দিদিমণি! আমি!
—আলো নেবা, আলো নিবিয়ে দে। আলো ভাল লাগে না আমার, জানিস্ না?
লক্ষ্মীদির আজকাল আলো ভালো লাগে না। সারা দিনরাত ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ করে রাখে। পৃথিবীর সব আলোকে যেন ভয় লাগে। ভয় লাগে সভ্যতাকে, ভয় লাগে মানুষকে। সভ্য মানুষ-সমাজের ওপরেই তার যেন ঘেন্না ধরে গেছে।
বললে—শীগগির আলো নিবিয়ে দে, শীগগির—
রঘু আলো নিবিয়ে দিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে। তারপর দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ছোট- দিদিমণির ঘরে ঢুকলো। এ ঘরের মধ্যেও অন্ধকার। আলোটা জ্বালতেই সনাতনবাবু জেগে উঠলেন। একটু তন্দ্রা এসেছিল বোধ হয়। কয়েক রাত ঘুমোননি।
রঘু জিজ্ঞেস করলে—আলো জ্বালা থাকবে দাদাবাবু?
সনাতনবাবু বললেন—তা থাক্।
রঘু আবার বললে—আপনার বাড়িতে গিয়ে খবর দিয়ে এসেছি যে, আপনি আজ রাত্তিরে এখানেই থাকবেন—তারপর একটু থেমে জিজ্ঞেস করলে—দিদিমণি কোথায়?
সনাতনবাবু বললেন—দিদিমণি! তা তো জানি না।
রঘু বললে—যাবার সময় তো বাড়িতে দেখে গেছি, এখন হঠাৎ কোথায় গেলেন-
সনাতনবাবু বললেন—কোথায় আর যাবেন! আমি একটুখানি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তাই হয়ত এখানেই কোথাও গেছেন, তুমি ভেবো না—
তা হবে! রঘুও আর বাবলো না। ভিজে জামা-কাপড়টা ছেড়ে রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকলো। আজ দাদাবাবুও খাবে এখানে। উনুনে আগুন দিলে। তরকারি কুটলো—এখন অনেক কাজ। দিদিমণি যতক্ষণ না আসে ততক্ষণ রঘুকেই সব করতে হবে!