উঠিয়াছে ঝড়

উঠিয়াছে ঝড়

উঠিয়াছে ঝড়, কড় কড় কড় ঈশানে নাকাড়া বাজিছে তার,
ওরে ভীরু, ওঠ, এখনই টুটিবে ধমকে তাহার রুদ্ধ দ্বার!
কৃষ্ণ মেঘের নিশান তাহার দোলে পশ্চিম-তোরণে ওই,
ভ্রুকুটি- ভঙ্গে কোটি তরঙ্গে নাচে নদনদী তাথই থই।
তরবারি তার হানিছে ঝিলিক সর্পিল বিদ্যুল্লেখায়,
হানিবে আঘাত তোর স্বপ্নের শিশমহলের দরোয়াজায় ;
কাঁদিবে পূর্ব পুবালি হাওয়ায়, ফোটাবে কদম জুঁই কুসুম ;
বৃষ্টিধারায় ঝরিবে অশ্রু, ঘনালে প্রলয় রবে নিঝুম?

যে দেশে সূর্য ডোবে – সেই দেশে হইল নবীন সূর্যোদয়,
উদয়-অচলে টলমল করে অস্ত-রবির আঁধার ভয়!
যুগ যুগ ধরি, তপস্যা দিয়ে করেছি মহিরে মহামহান,
ফুটায়েছি ফুল কর্ষিয়া মরু, ধূলির ঊর্ধ্বে গেয়েছি গান।
আজি সেই ফুলে-ফসল-মেলায় অধিকার নাই আমাদেরই,
আমাদের ধ্যান-সুন্দর ধরা আমাদের নয় আজি হেরি!
গীত-শেষে নীড়ে ফিরিবার বেলা হেরি নীড়ে বাসা বাঁধে শকুন,
মাংস-লোলুপ ফিরিতেছে ব্যাধ স্কন্ধে রক্ত-ধনুর্গুণ!
নীড়ে ফিরিবার পথ নাই তোর, নিম্নে নিষাদ, ঊর্ধ্বে বাজ,
তোর সে অতীত মহিমা আজিকে তোরে সব চেয়ে হানিছে লাজ!

উঠিয়াছে ঝড় – ঝড় উঠিয়াছে প্রলয়-রণের আমন্ত্রণ,
‘আদাওতি’র এ দাওতে কে যাবি মৃত্যুতে প্রাণ করিয়া পণ?
ঝড়ে যা উড়িবে, পুড়িবে আগুনে, উড়ুক পুড়ুক সে সম্বল,
মৃত্যু যেখানে ধ্রুব তোর সেথা মৃত্যুরে হেসে বরিবি চল!
অপরিমাণ এ জীবনে করিবি জীবিতের মতো ব্যয় যদি,
ঊর্ধ্বে থাকুক ঝড়ের আশিস, চরণে মরণ-অম্বুধি!

বিধাতার দান এই পবিত্র দেহের করিবি অসম্মান?
শকুন-শিবার খাদ্য হইবি, ফিরায়ে দিবি না খোদার দান?
এ-জীবন ফুল-অঞ্জলি সম নজরানা দিবি মৃত্যুরে, –
জীবিতের মতো ভুঞ্জি জীবন ব্যয় করে যা তা প্রাণ পুরে!
চরণে দলেছি বিপুলা পৃথ্বী কোটি গ্রহ তারা ধরি শিরে,
মোদের তীর্থ লাগি রবি শশী নিশিদিন আসে ফিরে ফিরে।
নিঃসীম নভ ছত্র ধরিয়া, বন্দনা-গান গাহে বিহগ,
বর্ষায় ঝরে রহমত-পানি-প্রতীক্ষমাণ সাত স্বরগ।
অপরিমাণ এ দানেরে কেমনে করিবি, রে ভীরু অস্বীকার?
মৃত্যুর মারফতে শোধ দিব বিধির এ মহাদানের ধার।
রোগ-পাণ্ডুর দেহ নয় – দিব সুন্দর তনু কোরবানি,
রোগ ও জরারে দিব না এ দেহ, জীবন-ফুলের ফুলদানি।
তাজা এ স্বাস্থ্য সুন্দর দেহ মৃত্যুরে দিবি অর্ঘ্যদান,
অতিথিরে দিবি কীটে-খাওয়া ফুল? লতা ছিঁড়ে তাজা কুসুম আন!

আসিয়াছে ঝড়, ঘরের ভিতর তাজিম করিয়া অতিথে ডাক,
বন্ধুর পথে এসেছে বন্ধু, হাসিয়া দস্তে দস্ত রাখ।
যৌবন-মদ পূর্ণ করিয়া জীবনের মৃৎপাত্র ভর,
তাই নিয়ে সব বেহুঁশ হইয়া ঝঞ্ঝার সাথে পাঞ্জা ধর।

ঝঞ্ঝার বেগ রুধিতে নারিবে পড়-পড় ওই গৃহ রে তোর,
খুঁটি ধরে তার কেন বৃথা আর থাকিস বসিয়া, ভাঙ এ দোর!
রবির চুল্লি নিভিয়া গিয়াছে, ধূম্রায়মান নীল গগন,
ঝঞ্ঝা এসেছে ঝাপটিয়া পাখা, ধেয়ে আয় তুই ক্ষীণ পবন!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *