ইতিহাসের রীতি

ইতিহাসের রীতি

ঘটনা ঘটে অবিচ্ছেদে, সমস্ত পৃথিবী জুড়ে। কালে নিরবচ্ছিন্ন, দেশে পৃথিবীব্যাপী, মানবসমাজে বিধৃত এই ঘটনাপ্রবাহের বিবরণ ইতিহাস নয়। তাকে ইতিহাসের উপাদান বললে মিথ্যা বলা হয় না, কিন্তু সত্যও প্রকাশ হয় না। কারণ ঐতিহাসিক যে ইতিহাস রচনা করেন তার সঙ্গে এই ঘটনাপ্রবাহের সম্বন্ধ বস্তু ও তার উপাদান-কারণের সম্বন্ধের চেয়ে অনেক বেশি জটিল। ইতিহাসরচনায় বিষয়কে কালে খণ্ডিত ও দেশে সীমাবদ্ধ করতে হয়। অল্পস্থায়ী ঘটনা কি বহুশতাব্দীব্যাপী ব্যাপারের ইতিহাস–ওয়াটারলুর যুদ্ধ কি রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস, নন্দকুমারের ফাঁসি কি বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধে দুই মহাযুদ্ধের ইতিহাস–সব ইতিহাস খণ্ডিত কালের, সীমিত দেশের ইতিহাস। কালের খণ্ড ক্ষুদ্র বা বৃহৎ, দেশের গণ্ডি স্বল্পবিস্তার বা দূরপ্রসারী, এইমাত্র প্রভেদ। নিরবধি কালে বিপুল পৃথিবীর সকল মানুষের ইতিহাস নেই। অনেক ঐতিহাসিক যাকে ঘটা করে বলেন বিশ্ব-ইতিহাস, সে ইতিহাস ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন কালের ইতিহাসের সমষ্টি মাত্র। তাদের মধ্যে সে অন্তরঙ্গ যোগ নেই যাতে ওইসব বিভিন্ন ইতিহাস এক ইতিহাস হয়ে গড়ে উঠতে পারে। ইতিহাসের বিশ্বকোষ বিশ্ব-ইতিহাস নয়। এবং বিশ্ব-ঐতিহাসিকদের বিশ্ব সব সময় বিশ্বের একটা টুকরো, যেখানকার মানুষের কর্মকলাপ ও সভ্যতার গতিপরিণতির সঙ্গে ঐতিহাসিকদের সবচেয়ে পরিচয়। কারণ ঐতিহাসিক যে সমসাময়িক সমাজ ও সভ্যতার মানুষ তার সঙ্গে ওই টুকরোটির সবচেয়ে নিকট ঐতিহাসিক আত্মীয়তা। ইবন খালদুনের বিশ্ব-ইতিহাস আরবদের অভিযান ও আরবদের সভ্যতা ও অসভ্যতা যে ভূভাগকে প্রভাবিত করেছিল তার ইতিহাস। এশিয়ার পশ্চিম-প্রাস্ত, ভূমধ্যসাগরের উত্তর-তীরের ইউরোপ ও দক্ষিণ-তীরের আফ্রিকা–এই ছিল ইবন খালদুনের বিশ্ব-ইতিহাসের বিশ্ব। হেগেলের বিশ্ব-ইতিহাস তার অ্যাবসালিউট বা পরব্রহ্মের মানসের ত্রিকের ছকে ছকে বাস্তবে পরিণতির ইতিহাস। সৃষ্টির অন্তর্গূঢ় আস্বীক্ষিকীর প্রেরণায় ত্রিকের খেলার এ পরিণতি হেগেল দেখেছেন কেবল ভূমধ্যসাগরের চার পাশে ও পশ্চিম-ইউরোপে। মানসের কল্পনায় যাই থাক, বাস্তবে ওই ভুখণ্ডই হেগেলের বিশ্ব-ইতিহাসের বিশ্ব। ইতালিয়ান দার্শনিক ক্রোচে এক জায়গায় বলেছেন যে, সব ইতিহাস সমসাময়িক ইতিহাস, এ কথাটা প্ৰহেলিকা নয়, সত্য।’ সে সত্যকে প্ৰহেলিকা-মুক্ত করতে ক্রোচের দার্শনিক বাগবিভূতি তাকে বেশ ঘোরালো করে তুলেছে। কিন্তু ও কথার মধ্যে একটা সহজ আদার্শনিক সত্য আছে। ঐতিহাসিক যে ইতিহাসই রচনা করেন, নিকট কি দূর-অতীতের, তিনি তার ঘটনাবলিকে দেখেন নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে। সে দৃষ্টিকোণ মোটের উপর তার সমসাময়িক কালের বিশ্বাস ও বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিকোণ। তার ফলে বিশ্ব-ইতিহাসকার যখন নিজের প্রিয় ও পরিচিত দেশ-কাল ছেড়ে অনান্তীয় দেশ-কালের ইতিহাসের দিকে তাকান তখন সে দৃষ্টিকোণ থেকে সে ইতিহাসের প্রকৃত রূপ প্রায় দেখা যায় না, দেখা যায় ভুল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা কমবেশি বিকৃত রূপ। অথচ নিজের দৃষ্টিকোণ ছাড়া কোনও নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ নেই। এমন মানুষ অবশ্য আছে যার অন্তদৃষ্টি অতি অপরিচিত সত্যতারও মর্মস্থান দেখতে পায়। কিন্তু এরকম বিশ্বমানবের সংখ্যা কম। এবং তাদের বিশ্ব-ইতিহাস-রচনায় হাত লাগাবার কোনও সম্ভাবনা নেই।

ইতিহাস সীমাবদ্ধ দেশে খণ্ডকালের ইতিহাস। কিন্তু সে সীমার মধ্যে ওই নির্দিষ্ট কালে যত মানবীয় ঘটনা ঘটে, যে ঘটনা মানুষ নিজে ঘটায় বা যা মানুষের জীবনকে স্পর্শ করে, তার কণামাত্রই ইতিহাসের উপাদান। সে ইতিহাস যে বিষয়ের হোক, যত বিস্তৃত যত ঘটনাবহুল হোক।

অশোক মগধের সিংহাসনে বসলেন পিতার উত্তরাধিকারে। পিতামহ ও পিতার যুদ্ধার্জিত বিশাল সাম্রাজ্যের চক্রবর্তী-সম্রাট হলেন। সে সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি দক্ষিণে কিছু বাদে প্ৰায় সমস্ত ভারতবর্ষ, এবং ভারতবর্ষের সীমা ছাডিয়ে উত্তর-পশ্চিমে গান্ধার দেশ, হিন্দুকুশ পর্বত পর্যন্ত— যুদ্ধ ও দেশরক্ষার বিজ্ঞানসম্মত, সায়েন্টিফিক ফ্রন্টিয়ার–ব্রিটিশ ভারত-সাম্রাজ্যে যার অভাবে সাম্রাজ্য-গবী লাট কার্জন দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলেন। এই বিস্তীর্ণ রাষ্ট্রকে বহিঃশত্রু ও অন্তর্বিদ্রোহ থেকে রক্ষার জন্য অশোককে কোনও নুতন যন্ত্র তৈরি করতে হয়নি–পিতামহ ও পিতার গড়া হস্তাশ্বরথাপদাতির যুদ্ধনিপুণ বিরাট স্থায়ী বাহিনী প্রস্তুত ছিল। রাষ্ট্রের শাসন ও শাস্তির জন্য কোনও নূতন ব্যবস্থা অশোক প্রবর্তন করেননি। পিতৃপিতামহ-প্রবর্তিত নানা শ্রেণির রাজামাত্য, তাদের সংঘ ও সংহতি, সাম্রাজ্যের সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল—এ কালের ভাষায় extensive bureaucratic organization. সৈন্য অমাত্য লোক ও বাণিজ্য-চলাচলের রাজপথ সাম্রাজ্যের এক প্রাপ্ত থেকে অন্য প্রান্তে বিস্তৃত ছিল। এই রাজ্যের শাসনে ও ভোগে অশোকের রাজত্বের সাত বৎসর অতীত হল, অশনে বসনে, রাজকীয় আড়ম্বরে মগধের পূর্ব পূর্ব সম্রাটদের মতো। বঙ্গোপসাগরের তীরে কলিঙ্গরাজ্য উত্তরাপথে অশোকের সাম্রাজ্যের বাইরে ছিল। পিতামহ কি পিতা সে রাজ্য জয় করেননি। সম্ভব তাঁদের অনুসরণে অশোক কলিঙ্গরাজ্য আক্রমণ করলেন, রাজ্যের সীমা বাড়াতে শক্তিমান রাজারা যা সচরাচর করে থাকেন—‘পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দীঘে সমান হইবে টানা’। কলিঙ্গ জয় হল। যুদ্ধে বহু লোক হত্য হল, বহু লোক বন্দি হল, বিজিত দেশের লোকেরা বহু দুঃখদুর্দশা ভোগ করল, এরকম যুদ্ধে যা স্বাভাবিক, সব সময় ঘটে থাকে। কিন্তু অশোকের মনের উপর তার ফল হল, যা যুদ্ধজয়ী রাজার মনে সচরাচর হয় না। পররাজ্যজয়ের নৃশংসতায় অশোকের মনে অনুশোচনা এল। সাময়িক অনুতাপের বিলাস নয়; সম্রাটের জীবনের গতি-পরিবর্তন হল। রাজ্যশাসনের লক্ষ্য বদলে গেল। অশোকের প্ৰতীতি হল, রাজার রাজ্যজয় বড় জয় নয়, বড় জয় আত্মজয়। সে আত্মজয়ের উপায় যে শীলাচরণ গৌতমবুদ্ধের উপদেশে দেশে সুজ্ঞাত ছিল অশোক নিজের জীবনে তার অনুশীলন আরম্ভ করলেন। তাঁর দৃঢ়নিশ্চয় হল, রাজার রাজ্যশাসন প্রজার কেবল বৈষয়িক সুখসমৃদ্ধির চেষ্টায় সফল নয়, রাজার বড় কর্তব্য প্রজাদের জীবন তাঁর নিজের জীবনের মতো এই শীলের নীতিতে গড়ে তোলা। অশোক সাম্রাজ্যময় এই শীলের প্রচারের এবং প্রজাদের জীবনে শীল রক্ষা করে চলার ব্যবস্থা করলেন। সম্ভব যে বুরোক্রেসি সমস্ত সাম্রাজ্যে রাজ্যশাসনের জন্য প্রতিষ্ঠিত ছিল সেই বুরোক্রেসি হল এই প্রচার ও রক্ষা-ব্যবস্থার প্রধান যন্ত্র। সুতরাং নীতিপ্রচারের পিছনে রাষ্ট্রশক্তির চাপ নিশ্চয় ছিল। রাজার উচিত কি না। প্ৰজার ব্যক্তিগত চরিত্র ও জীবন নিয়মিত করার চেষ্টা নিজের আদর্শ অনুসারে, তার ফল শেষ পর্যন্ত ভাল কি মন্দ, খুব তর্কের বিষয়। যেমন তর্কের বিষয়, অশোকের রাজশক্তির চেয়ে বহুগুণ ক্ষমতাশালী বর্তমানের রাষ্ট্রের উচিত কি না প্ৰজার জীবনকে নানা দিক থেকে নিয়মিত, কন্ডিশনড়, করার চেষ্টা, তার ফল শেষ পর্যন্ত ভাল না মন্দ। অশোক জীবনযাত্রার আদর্শের উপদেশ সাম্রাজ্যময় স্থায়ী রূপ দিয়ে লিখে দিলেন পাহাড়ের গায়ে, আশ্চৰ্যগড়ন পাথরের স্তম্ভে। গৌতমবুদ্ধের সদ্ধর্মের উপদেশ তিনি জানলেন নিখিল মানবের হিতের জন্য। সুতরাং কেবল নিজের প্রজাদের মধ্যে তার প্রচারে অশোক তৃপ্ত থাকতে পারলেন না। ভারতবর্ষে তার নিজের রাজত্ব-সীমার বাইরে এবং ভারতবর্ষের সীমা ছাড়িয়ে অন্য সভ্যতার মানুষের নানা রাজ্যে তিনি প্রচারক পাঠালেন। ভারতবর্ষের সভ্যতা ও চিন্তাধারার সঙ্গে বাইরের পৃথিবীর যোগস্থাপন আরম্ভ হল। দু’হাজার বছরের বেশি হয়ে গেছে, তার ফল ও প্রভাব পৃথিবী থেকে মুছে যায়নি।

এক রাজার রাজত্বের চল্লিশ বছরের ইতিহাস। পৃথিবীর ইতিহাসে তার জুড়ি পাওয়া কঠিন।

এই চল্লিশ বছরে অশোকের রাজ্যে লক্ষ লক্ষ শিশু জন্মেছে, লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের জীবনে এবং জীবনের প্রতিদিন ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ লক্ষ চাষি দিনের পর দিন মাটি চাষ করে শস্য ফলিয়েছে, লক্ষ লক্ষ কুমোর কামার ও শিল্পী নানা শিল্পদ্রব্য গড়েছে। লক্ষ লক্ষ বিদ্যাশিক্ষার্থী ছাত্র বিদ্যালয়ে পাঠ নিয়েছে। শিক্ষকেরা তাদের পড়িয়েছে। পণ্ডিতেরা জ্ঞানচর্চা করেছে। কবিরা কাব্য রচনা করেছে। দুঃখসুখে অগণিত লোকের প্রতিদিন জীবন কেটেছে। অশোকের রাজত্বের ইতিহাসে এসব লক্ষকোটি ঘটনার স্থান নেই। এ চল্লিশ বছরের মানবীয় ঘটনার তুচ্ছতিতম ক্ষুদ্র অংশ বেছে নিয়েই। তবে অশোকের রাজত্বের ইতিহাস রচনা সম্ভব। যদি অশোকের কালে তাঁর রাজ্যের প্রজাদের জীবনযাত্রার বিস্তারিত বিবরণ জানা সম্ভব হত, যেমন জানা যায় বর্তমান কালের কোনও রাষ্ট্রের প্রজাদের; যদি প্রজাদের আর্থিক অবস্থা, সামাজিক রীতিনীতি, উৎসব-আনন্দ, শিক্ষার প্রসার, শিল্প ও সাহিত্য-সৃষ্টি, সভ্যতার নানা ক্ষেত্রে তাদের গতি ও উন্নতির পূর্ণ ও যথার্থ খবর পাওয়া যেত, দু’পুরুষ পূর্বেকার বিদেশি আগস্তুকের খণ্ড বিবরণের ছিন্ন অংশ থেকে সংগ্রহ করতে না হত; এবং অশোকলিপির কথাবস্তু, ও সাম্রাজ্যের সব অংশে সে অনুশাসন পাথরে খুদে প্রজাসাধারণের পড়ার জন্য ছড়িয়ে রাখার তথ্য, লিপির অক্ষরের সুডৌল, লিপিবাহী স্তম্ভের বিস্ময়কর সুঠাম ও মসৃণতা, পশুলাঞ্ছন স্তম্ভশীর্ষের আশ্চৰ্য কারিগরিএসব থেকে একটা মোটামুটি অনুমানের উপর নির্ভর করতে না হত, তবে অশোকের রাজত্বকালের ইতিহাস-লেখককে রাষ্ট্রীয় ও রাজার কর্মানুষ্ঠানের বিবরণ মাত্র দিয়েই ইতিহাস লিখতে হত না; সে কালের আর্থিক সামাজিক ও সভ্যতার ইতিহাস, প্রচলিত ইংরেজি সংজ্ঞায় যাকে বলে economical, social ও cultural history, সব মিলিয়ে অশোকের রাজত্বের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস লিখতে পারতেন। কিন্তু যেসব লক্ষ লক্ষ ঘটনা। এ সামাজিক ইতিহাসের ভিত্তি, সে ইতিহাস লেখা সম্ভব হত এসব ঘটনার প্রতিটির বিশেষত্ব অর্থাৎ ঘটনাত্ব বর্জন করে, তা থেকে সাধারণ তথ্য ও তত্ত্ব নিষ্কাশন করে। সে কালের নিখিল ঘটনার সঙ্গে ঐতিহাসিক ঘটনার পরিমাণের কোনও পরিমাণগত তুলনা থাকত না।

বিজ্ঞানীরা বলেন, বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডে শূন্যতাই সব, বস্তু নেই বললেই চলে। নীহারিকা নক্ষত্র সূর্য গ্রহ উপগ্রহ, বস্তুর দু-চারটে বিন্দু অসীম দূরে দূরে এখানে ওখানে ছড়ানো আছে। ইতিহাসের যা বস্তু তা অবস্তু ঘটনার মহাকাশে গুটি-কয়েক বিন্দু। সেই বিন্দুগুলি বেছে নিয়েই ইতিহাস রচনা হয় এবং ইতিহাস রচনা সম্ভব হয়। ইতিহাসের দেশ ও কালের সীমায় যে সংখ্যাতীত ঘটনা ঘটে তার অতি ক্ষুদ্র অংশ ইতিহাসের উপাদান। তুলনায় প্রায় সব বাদ দিতে হয়, রাখতে হয় অতি সামান্য। বাছাই করে কতটুকু রাখতে হবে নির্ভর করে ঐতিহাসিকের প্রতিভার উপর ও তার ইতিহাস রচনার লক্ষ্যের উপর।

আচাৰ্য মেট্‌ল্যান্ড তাঁর ইংল্যান্ডের ব্যবহারশাস্ত্রের ইতিহাসে ঘটনার অবিচ্ছিন্নতাকে বলেছেন সেলাই-শূন্য ঠাসবুননি পট,–‘a seamless web’। ঐতিহাসিক এই পটে নানারঙা সুতোর সেলাই দিয়ে ইতিহাসের প্যাটার্ন তোলেন। কোনও প্যাটার্নের ঘের খুব বড়, যেমন মমসেনের জুলিয়াস সিজারের ক্ষমতালাভ পর্যন্ত রোমের রিপাবলিকের পাঁচ শতাব্দীর ইতিহাস। আরও বড় ঘের, যেমন গিবনের রোম-সাম্রাজ্যের পতন ও ধ্বংসের ইতিহাস, মারাকাস অরেলিয়াসের মৃত্যুর পর থেকে তুর্কিদের কনস্টান্টিনোপল দখল পর্যন্ত প্ৰায় তেরো শতাব্দীর ইতিহাস। কোনও ঘের তুলনায় অনেক ছোট। যেমন আচাৰ্য যদুনাথের ঔরঙ্গজেবের রাজত্বের পঞ্চাশ বছরের ইতিহাস, ভারতবর্ষে মুঘল-সাম্রাজ্য ধ্বংসের সূচনার ইতিহাস। বলা বাহুল্য, এ পটের দুই ডাইমেনশন, দেশ ও কাল। কোনও ইতিহাসের ঘের কালের ডাইমেনশনে দূরপ্রবাসী ডাইমেনশনে তুলনায় ছোট—যেমন ইতিহাসের প্রকৃত আরম্ভ থেকে আলেকজেন্ডারের মৃত্যু পর্যন্ত তিনশো বছরের গ্রিসের ইতিহাস। দেশের ডাইমেনশনে প্ৰকাণ্ড, কালের ডাইমেনশনে অত্যন্ত খাটো— যেমন পৃথিবীর বহু অংশে ব্যাপ্ত বিগত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পাঁচ বছরের ইতিহাস। ইতিহাসের ঘের কালে ও দেশে। কত বড়, কি কত ছোট হবে, তার কোনও স্বাভাবিক মাপ নেই। সে মাপ নির্ভর করে ঐতিহাসিক কতটা কালের ও কতখানি দেশের কথা বলতে চান। গত মহাযুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহাসিক যুদ্ধারম্ভ থেকে যুদ্ধ বিরতি পর্যন্ত লিখতে পারেন। কিন্তু সে মহাযুদ্ধের প্রকট ফলাফলও যুদ্ধবিরতিতেই শেষ হয়নি। তার সংঘাতে পৃথিবীর নানা খণ্ডে মানুষের মধ্যে ভাঙাগড়া আজও চলছে। ঐতিহাসিক এ মহাযুদ্ধের ইতিহাসে তার সময় পর্যন্ত পৃথিবীর নানা খণ্ডে এই ভাঙা-গড়ার বিবরণ তার ইতিহাসের অন্তর্গত করতে পারেন। অথবা একটিমাত্র দেশে, যেমন ইংল্যান্ডে কি মার্কিন দেশে, তার ফলাফলের বিবরণে ইতিহাস শেষ করতে পারেন। দেশ ও কাল মানুষের মনের সৃষ্টি কি না দার্শনিকেরা তার বিচার করেন। কিন্তু ইতিহাসের দেশ ও কাল যে ঐতিহাসিকের মনের সৃষ্টি তাতে সন্দেহ নেই।

8

দেশ ও কালের ঘেরের মধ্যে ঐতিহাসিক ইতিহাসের যে প্যাটার্ন বোনেন সে প্যাটার্ন কত চওড়া? তার মাপ নির্ভর করে প্রথমত ও প্রধানত, ঐতিহাসিক যে ধরনের ইতিহাস রচনা করেন, ওই নির্দিষ্ট দেশ ও কালে সে ইতিহাসের উপযোগী ও প্রাসঙ্গিক ঘটনার বহুলতা বা বিরলতার উপর এবং সেসব ঘটনার জ্ঞানের প্রাচুর্য বা দৈন্যের উপর। মগধ-সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা থেকে হর্ষবর্ধনের মৃত্যু পর্যন্ত উত্তর-ভারতবর্ষের রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসের যে চওড়া প্যাটার্ন তার তুলনায় বৈদিক যুগ থেকে মগধসাম্রাজ্য স্থাপনের পূর্বকাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের প্যাটার্ন অত্যন্ত সরু, এবং তা হবেই হবে। ওই প্ৰাচীনতর কালের রাষ্ট্রীয় ঘটনার জ্ঞান যে তুলনায় খুব বিরল কেবল তাই নয়, রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের উপযোগী ও প্রাসঙ্গিক ঘটনাই ঘটেছিল অত্যন্ত অল্প। লোকের জীবনে রাষ্ট্রীয় ঘটনার প্রভাব ও প্রাধান্য ছিল কম, কারণ রাষ্ট্রগুলি ছিল শিথিলবন্ধন। সম্ভব অনুসন্ধানের ফলে এ যুগের রাষ্ট্ৰীয় ঘটনার জ্ঞান ক্ৰমে অনেক বাড়বে, কিন্তু সে জ্ঞান প্রধানত হবে বিচ্ছিন্ন সব রাষ্ট্রের রাষ্ট্ৰীয় ঘটনার জ্ঞান। এইসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে অল্পবিস্তর ধারাবাহিক ঘটনার সুতোয় বেঁধে ইতিহাসের প্যাটার্ন বোনা সম্ভব হবে, সে ভরসা করতে সাহস হয় না। কিন্তু প্ৰাচীনতর কালের জ্ঞান, কি ভারতবর্ষে কি অন্য দেশে, বেশির ভাগ এইরকম বিচ্ছিন্ন জ্ঞান। মানবীয় ঘটনার বিচ্ছিন্ন জ্ঞানের আবিষ্কারকে প্রত্নতত্ত্ব নাম দিয়ে তাদের কেবল ইতিহাসের মালমশলা মনে করা সত্যদৃষ্টি নয়। যে নূতন আবিষ্কৃত জ্ঞানের পূর্ব থেকে জ্ঞাত ঘটনার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যায়, সে জ্ঞান ইতিহাসের মালমশলা। কারণ সে জ্ঞান ইতিহাসের প্যাটার্নকে আর-একটু বেশি চওড়া করে, অথবা ফাক পূর্ণ করে সে প্যাটার্নের কুননিকে আরও একটু ঠাসবুননি করে। কিন্তু যে জ্ঞানের এরকম সংযোগ স্থাপন করা যায় না, যা বিচ্ছিন্নই থেকে যায়, সে জ্ঞান মূল্যহীন নয়। মানুষের পরিচয় দেয় বলেই মানুষের কাছে তার মূল্য। মহেঞ্জোদাড়ো কি ক্রীটের মাটি খুঁড়ে মানুষের যেসব চিহ্ন আবিষ্কার হয়েছে সেসব মানুষের সঙ্গে ভারতবর্ষের কি ভূমধ্যসাগরের সভ্যতার ইতিহাসের স্পষ্ট যোগ স্থাপন করা যায়নি। এবং কোনওদিন যদি নাও যায়, মানুষের এই পরিচয় মানুষের বিস্ময় জাগাবেই। সে বিস্ময় ইতিহাস যে বিস্ময় জাগায় তার সমগোত্র। শেলির Ozymandias-এর এর মতো–

… Two vast and trunkless legs of stone
Stand in the desert Near them,
on the sand,
Half sunk, a shattered visage lies.
***
Nothing beside remains Round the decay
Of that colossal wreck, boundless and
barc
The lone and level Sands Stretch far
away

কিন্তু ইতিহাসের প্যাটার্নের চওড়ার মাপ কেবল ঘটনার ও তার জ্ঞানের প্রাচুর্য কি বিরলতার উপর নির্ভর করে না; ঐতিহাসিকের প্রতিভার উপরে নির্ভর করে। ঘটনার সঙ্গে ঘটনার যোগে ইতিহাসের সৃষ্টি। যে ঐতিহাসিক তাঁর কল্পিত ইতিহাসের ধারার সঙ্গে কোনও ঘটনার যোগ দেখতে পান না তার ইতিহাসে স্বভাবতই সে ঘটনার স্থান নেই। প্রতিভাবান ঐতিহাসিক অনেক ঘটনার সঙ্গে অন্য ঘটনার ঐতিহাসিক যোগ দেখতে পান, সাধারণ ঐতিহাসিকের যা চোখ এড়িয়ে যায়। সেইজন্য যাঁরা ইতিহাসের প্রতিভাবান স্রষ্টা তাদেব ইতিহাসের প্যাটার্ন অনেক সময় বেশি চওড়া। তাদের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনার স্থান আছে, সাধারণ ঐতিহাসিকের ইতিহাসে যাদের স্থান নেই।

দেশ ও কালের অচ্ছিদ্র ঘটনার পটে কিহচু ঘটনা বেছে নিয়ে ঐতিহাসিক তাঁর ইতিহাসের ছবি আঁকেন। ইতিহাসের যাঁরা বড় পটুয়া তাদের ছবিতে ছোট পটুয়াদের ছবির তুলনায় অনেক সময় ঘটনার রেখা অনেক বেশি। কিন্তু কোন ইতিহাসে কত ঘটনা বেছে নিয়ে স্থান দেওয়া যায়। তার একটা স্বাভাবিক সীমা আছে। ঐতিহাসিক বহুরকম ঘটনার নানা রঙের সুতোয় তার ইতিহাসের প্যাটার্ন তোলেন। কিন্তু এমন রঙের সুতো আছে যা সে প্যাটার্নের সঙ্গে ‘ম্যাচ’ করে না। সে সুতেকে প্যাটার্নের পাশে পাশে চালিয়ে নেওয়া চলে, কিন্তু তা দিয়ে প্যাটার্নের অঙ্গ বৃদ্ধি করা চলে না।

আধুনিক কালে রাষ্ট্রীয় ইতিহাস, ইতিহাস বলতে লোকে সাধারণত যা বোঝে তা, যে দেশ ও কালের পূর্ণ পরিচয় দেয় না, তা স্মরণ করে অনেকে এই অঙ্গহীন ইতিহাসের উপর কিছু বীতশ্রদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা বলেন, পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস হবে এমন ইতিহাস যা উদ্দিষ্ট দেশ ও কালের মানুষের জীবনের সমস্ত দিকের পরিচয় দেবে। কেবল রাষ্ট্র গড়া-ভাঙার পরিচয় নয়; সামাজিক পরিবর্তন, ধনতান্ত্রিক বিবর্তন, জীবনযাত্রার প্রণালী ও তার ক্রমপরিবর্তন, ধর্ম শিল্প সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান— সবকিছুর উত্থান-পতন পরিবর্তনের পরিচয় দেবে। কোনও দেশ ও কালের মানুষের জীবনের সমস্ত দিক না জানলে যে সে মানুষকে সম্পূর্ণ জানা হয় না। এ তো স্বতঃসিদ্ধ, প্রকৃতপক্ষে tautology। কিন্তু এক ইতিহাসে, অর্থাৎ এক রকমের ইতিহাসে, এ সমস্ত কথা বলা সম্ভব নয়, তাও স্বতঃসিদ্ধ। তা জানাতে ও জানতে একই দেশ ও কালের বিভিন্ন রকমের ইতিহাস লিখতে ও পড়তে হয়। কোনও শট কাট নেই। এক জায়গায় সব কিছু পেয়ে যাব এটা অলস মনের কল্পনা। তাঁরা মানুষের ইতিহাস নিবিড় করে জানতে চায় না। এক এনসাইক্লোপিডিয়া পড়ে অনেকে যেমন সকল জ্ঞানের জ্ঞানী হতে চায়।

এলিজাবেথের যুগের ইংল্যান্ডের রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসে সে যুগের ইংরেজি সাহিত্যের উল্লেখ অবশ্য থাকবে। তার উদ্দেশ্য, রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসের পাঠককে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, সে যুগে রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসের সীমার বাইরে এমন-সব ঘটনা ঘটেছিল যার মূল্য রাষ্ট্ৰীয় ঘটনার চেয়ে কম নয়, বরং বেশি। তেমনি এলিজাবেথের যুগের ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে সমকালীন রাষ্ট্রীয় ঘটনার উল্লেখ থাকবে। কতক সাহিত্যের ইতিহাসকে কালক্ৰমিক কাঠামো দেবার জন্য; কতক সাহিত্যের ও সাহিত্যিকের উপর রাষ্ট্রীয় ঘটনার প্রভাব পড়েছিল, সেইজন্য। কিন্তু এলিজাবেথের যুগের রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসে সে যুগের সাহিত্যের ইতিহাস জানা যাবে এ আশা তেমনি দুরাশা, যেমন দুরাশা সে যুগের সাহিত্যের ইতিহাস পড়ে রাষ্ট্রীয় ইতিহাস জানা যাবে।

পরিচয় দিতে গেলে তা কী করে সম্ভব করা যায় তার নমুনা মমসেনের রোমের ইতিহাসে আছে। রোমান রিপাবলিকের উত্থান ও ধবংসের ইতিহাসকে তার উপযোগী নানা পর্বে মমসেন ভাগ করেছেন। প্রতি পর্বের রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসের বিবরণ সমাপ্ত করে তার শেষে সে পর্বকালের ধর্ম ও শিক্ষা, সাহিত্য ও শিল্প সম্বন্ধে দু-একটি অধ্যায় জুড়ে দিয়েছেন। গ্রেকাই-ভ্ৰাতাদের রোমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংস্কার ও বিপ্লবের চেষ্টা ও তার ব্যর্থতা, মেরিয়াসের বিপ্লব ও ডুসাসের সংস্কারের প্রয়াস, প্রাচ্যে মিথ্রডেটিসের সঙ্গে সংঘর্ষ (মমসেনের মতে ম্যারাথনে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের যে প্ৰকাণ্ড সংঘর্ষ আরম্ভ হয়েছিল, বহুদিন স্তিমিত থাকার পর তারই একটা ছোট অধ্যায়; এবং মমসেনের কল্পনায় তার কাল পর্যন্ত এ সংঘর্ষ যেমন হাজার হাজার বছর চলেছে, তেমনি পরবর্তীকালেও হাজার হাজার বছর চলবে), সিনা ও সালার কার্য ও অকার্য–এই নব্বই বছরের রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাস, মমসেন যাকে বলেছেন রোমান ইতিহাসে সবচেয়ে আগৌরবের যুগ, এগারো অধ্যায়ে তার বর্ণনা দিয়ে, মমসেন একটি অধ্যায়ে সে যুগের রোমান রিপাবলিকে নানা জাতি, তাদের অবস্থা ধর্ম ও শিক্ষার বিবরণ দিয়েছেন, এবং আর-একটি অধ্যায়ে সাহিত্য ও শিল্পের অবস্থা বর্ণনা করেছেন; সালার মৃত্যু থেকে রোমান রিপাবলিকের ধ্বংসের উপর জুলিয়াস সিজারের সাম্রাজ্য স্থাপন পর্যন্ত চৌত্ৰিশ বছরের চিত্তাকষী ও নিশ্বাসরোধী অতিদ্রুত রাষ্ট্ৰীয় ঘটনা-প্রবাহের ইতিহাস আবার এগারো অধ্যায়ে বর্ণনা করে, তার শেষে সে যুগের ধর্ম সংস্কৃতি সাহিত্য ও শিল্পের বিবরণ দিয়ে একটি অধ্যায় জুড়ে দিয়েছেন।

এসব অধ্যায়গুলি মমসেনের ইতিহাসের পরিশিষ্ট মাত্র। মূল ইতিহাসের অংশ নয়। তাঁর ইতিহাসের প্যাটার্নের পাশে বিভিন্ন রঙের সুতো দিয়ে একটু কুননি-করা। স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে, সে যুগে রাষ্ট্রীয় ঘটনাই একমাত্র ঘটনা নয়, অন্য ব্যাপারও মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। মমসেন কখনও কল্পনা করেননি যে তাঁর এইসব বিবরণ সেসব যুগের ধর্ম ও সংস্কৃতি, সাহিত্য ও শিল্পের এমন বিবরণ দিয়েছে যে এসব ব্যাপারের প্রতিটির স্বতন্ত্র ইতিহাস লেখার ও পড়ার আর প্রয়োজন নেই। প্রকৃতপক্ষে এসব বিষয়ের স্বতন্ত্র জ্ঞান যাদের নেই তাঁরা মমসেনের বিবরণ পড়ে কিছুই বুঝতে কি জানতে পারবে না।

মানুষকে অখণ্ড করে দেখাই তাকে সত্য করে দেখা। কিন্তু খণ্ড খণ্ড করে প্রথমে তার পরিচয় না নিলে তাকে অখণ্ড করে দেখা অসম্ভব। ‘একং বিজ্ঞাতে সর্বমিদং বিজ্ঞাতং’ নয়, সর্বকে জানলেই তবে এককে জানা যাবে। রাষ্ট্রীয় ইতিহাস অবশ্যই দেশ ও কালের সম্পূর্ণ পরিচয় দেয় না। সে সম্পূর্ণ পরিচয়ের উপায় নয় রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসকে ফাপিয়ে মালটি-পারপাস ইতিহাসে পরিণত করা। তার উপায় দেশ ও কালের নানা ব্যাপারের স্বতন্ত্র পরিচয় দেওয়া। তার জন্য স্বতন্ত্র সব ইতিহাসের প্রয়োজন। এসব স্বতন্ত্র ইতিহাস পাঠকের মননের জারক রসে এক হয়ে তবেই দেশ ও কালের অখণ্ড পূর্ণ জ্ঞান দেয়। যে পাঠক সে শ্রম-স্বীকারে প্রস্তুত নন তার জন্য রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসের সঙ্গে অন্য ইতিহাসের হ্যান্ডবুক অবশ্য জুড়ে দেওয়া যায়। কিন্তু সে হ্যান্ডবুকগুলি হ্যান্ডবুকই, ইতিহাস নয়।

রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসের আকর্ষণ যে অন্য সবরকম ইতিহাসের আকর্ষণের চেয়ে বেশি তার কারণ, সে ইতিহাস মানুষের কর্ম-অকর্মের, সুখ-দুঃখের, মহত্ত্ব-হীনতার, দ্বন্দ্ব-মৈত্রীর, জয়-পরাজয়ের বিশিষ্ট কাহিনি। সামাজিক বিবর্তনের ইতিহাস, কি ধনতন্ত্রের ক্রমিক পরিবর্তনের ইতিহাসের মতো নৈর্ব্যক্তিক ব্যাপারের বিবরণ নয়। মানুষের কাছে রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসের আকর্ষণ মানুষের প্রত্যক্ষ স্পর্শের আকর্ষণ। সামান্য ও বিশেষের মধ্যে বিশেষ যে বলবান, সকল বিধিনিষেধের ব্যাখ্যায় এটি একটি প্রযোজ্য নিয়ম। ইতিহাসেও অ্যাবস্ট্র্যাক্ট  ‘সামান্যর চেয়ে কনক্রিট ‘বিশেষ’ বলবান। তত্ত্বের মহিমা তখনই হৃদয়ঙ্গম হয় বিশিষ্ট তথ্যের মধ্যে যখন তাকে দেখা যায়।

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি একদল ইউরোপীয় ইতিহাস-লেখক বলতে আরম্ভ করলেন যে, ইতিহাস সাহিত্য নয়, ইতিহাস একটা বিজ্ঞান। এবং নিজেদের লেখা ইতিহাসের, পূর্বতনদের সাহিত্য-গন্ধী ইতিহাস থেকে তফাত করার জন্য, নাম দিলেন ‘বৈজ্ঞানিক ইতিহাস’–সায়েন্টিফিক হিস্টরি। সে সময় অনেক বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির কাল। কিন্তু এক বিজ্ঞানের সত্য আবিষ্কারের যা পথ ও নিয়মকানুন, অন্য বিজ্ঞানের সত্য আবিষ্কার সে পথে ও সে নিয়মকানুনে চলে না। পদার্থবিজ্ঞানের চলার রীতি ও জীবনবিজ্ঞানের চলার রীতি এক নয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনুশীলনের রীতি রসায়নবিজ্ঞানের অনুশীলনের রীতি নয়। সকল বিজ্ঞানের সাধারণ কোনও বৈজ্ঞানিক রীতি নেই। যা সকল বিজ্ঞানে সাধারণ সে হচ্ছে সত্যনিষ্ঠা, এবং বিনা প্রমাণে কি অপ্রচুর প্রমাণে কোনও কিছুকে সত্য বলে গ্ৰহণ না করা। এবং প্রমাণবিরুদ্ধ হলে চিরপোষিত মত ও চিন্তাধারাকে পরিত্যাগে দ্বিধাহীনতা। যে ইতিহাস সত্যনিষ্ঠ প্রকৃত ইতিহাস, কল্পনাবিভ্রান্ত নয়, সে ইতিহাসে এসব গুণ অবশ্য থাকবে। অর্থাৎ সে ইতিহাস হবে প্রামাণিক ইতিহাস, বিনা প্রমাণে কিছুকে সত্য বলে গ্রহণ করবে না, কোনও মোহতেই প্রমাণিত সত্যকে গোপন করবে না। কিন্তু মাত্র প্রামাণিক বললে ইতিহাসকে ‘বৈজ্ঞানিক’ নাম দেওয়ার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়। বিজ্ঞানের যে অসীম প্রেস্টিজ, নামের মহিমায় তার কিছুটা ইতিহাস-বিদ্যায় টানা যায় না। এমন মনোভাব ও চেষ্টা নূতন নয়। পূর্বে যখন দর্শনের প্রেস্টিজ ছিল বড়, এবং বহু বিজ্ঞানের শৈশবকাল, তখন পদার্থবিজ্ঞানের নাম ছিল ন্যাচারাল ফিলজফি। আজ সুনীতিবিদ্যাকে মর্যাল ফিলজফি না বলে বলি মর্যাল সায়েন্স।

কিন্তু ইতিহাস-রচনাকে যাঁরা বিজ্ঞান-রচনা মনে করেছিলেন, তাদের রচিত ইতিহাসে তার ফল ফলেছিল। ইতিহাস যখন বিজ্ঞান তখন সাহিত্যের মতো তার সুখপাঠ্য হওয়া দোষের, কারণ তা ভঙ্গি দিয়ে সাধারণ পাঠকের মন ভুলাবার চেষ্টা। ইতিহাস হবে বিজ্ঞানের মতো নিরেট, অর্থাৎ সলিড, এবং তাতে রসের স্পর্শ থাকবে না। সাধারণ পাঠক সে ইতিহাস নাই-বা পড়ল, কারণ সাধারণ পাঠক সচরাচর বিজ্ঞানের পুথি পড়ে না। ফলে সেসব বৈজ্ঞানিক ইতিহাস এখন অসাধারণ পাঠকও পড়ে না।

ইতিহাসের বৈজ্ঞানিকত্বের একটা সুবিধা যে, রচনাশক্তির তারতম্যে এক ঐতিহাসিক অন্য ঐতিহাসিকের চেয়ে খাটো হয় না। কেননা রচনাশক্তিটাই অবাস্তর। কোনওরকমে সত্য তথ্যটা প্রকাশ করতে পারলেই হল। এবং আরও বড় সুবিধা আছে।

ইতিহাস যখন বিজ্ঞান তখন গবেষণায় ঐতিহাসিক সত্য আবিষ্কারের নিয়মগুলি আয়ত্ত করে পরিশ্রম করলেই সকল ঐতিহাসিক সমান মূল্যের ইতিহাস রচনা করতে পারে। ঐতিহাসিক প্রতিভা বলে কিছু নেই। আছে নিয়ম মেনে চলা ও পরিশ্রম করা।

হাতে-হাতিয়ারে যাঁরা কোনও বিজ্ঞানের চর্চা করে না, বা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীর মননধারার খবর জানে না, তাদের অনেকের ধারণা যে, বিজ্ঞানের সব আবিষ্কার সৰ্বজনস্বীকৃত বৈজ্ঞানিক গবেষণার নিয়মগুলির কঠোরভাবে পালন করে পরিশ্রমনিষ্ঠার ফল। ষোড়শ শতব্দে যখন ইউরোপে নববিজ্ঞানের উন্মেষকাল, ও তার সাফল্যে সকলে চমৎকৃত, সে সময় ইংল্যান্ডের ফ্রান্সিস বেকন এ নববিদ্যার একজন উদগাতা ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Advancement of Learning-এ তিনি প্রাচীনকালের কুসংস্কার-মুক্ত সত্য আবিষ্কারের এই চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন যে, প্ৰাচীন মত যদি প্ৰাচীনদের মত বলে গ্রাহ্য করতে হয়, তবে আধুনিকেরাই প্রকৃত প্রাচীন, কারণ প্রাচীনদের চেয়ে আধুনিকদের বয়স অনেক বেশি। ফ্রান্সিস বেকন আর-একখানি পুথি লিখেছিলেন, যার নাম Novum Organum, অর্থাৎ সত্য আবিষ্কারের নূতন বিধিবিধান। এ গ্রন্থে বেকন বৈজ্ঞানিক সত্য আবিষ্কারের নিময়গুলির এক তালিকা দিয়েছেন। তাঁর ধারণা ছিল যে, প্রাকৃতিক ব্যাপারের অনুশীলনে এই নিয়মগুলির প্রয়োগ করলেই সে ব্যাপারের বৈজ্ঞানিক সত্য আবিষ্কার হবে। এই আশায় ওই গ্রন্থে তিনি অনেকগুলি প্রাকৃতিক ব্যাপারেরও তালিকা দিয়েছেন, যাতে বিজ্ঞানীরা গবেষণার নিয়মগুলি প্রয়োগ করে সেসব ব্যাপারের বৈজ্ঞানিক সত্য আবিষ্কার করতে পারে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার যে বাধাধরা নিয়ম প্রয়োগেই হয় তাতে বেকনের সন্দেহ ছিল না। অর্থাৎ নিয়ম মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে চৰ্চা করলে যে-কেউ নিউটন কি ডারউইন, আইনস্টাইন কি প্ল্যাকের তুল্যমূল্য সত্য আবিষ্কার করতে পারে। বিজ্ঞানের আবিষ্কারে নবনব-উন্মেষশালী বুদ্ধির আবির্ভাব অনাবশ্যক। বিজ্ঞানোৎসাহী বেকনের বিজ্ঞানে যে অস্তদৃষ্টি ছিল না তার বড় প্রমাণ যে, ষোড়শ শতাব্দীতেও বিজ্ঞানে গণিতের স্থান সম্বন্ধে তার কোনও জ্ঞান ছিল না। বৈজ্ঞানিক ঐতিহাসিকদেরও ধারণা বেকনের বিজ্ঞানের ধারণার অনুরূপ–যে-কোনও ইতিহাস-লেখক চেষ্টা করলেই গিবন কি মমসেন হতে পারে!

বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের দিন বিগত হয়েছে। এখন যাঁরা সত্যনিষ্ঠ প্ৰামাণিক ইতিহাসকে বৈজ্ঞানিক বলেন তাঁরা একটা চলতি নাম অভ্যাসবিশেই ব্যবহার করেন।

কিন্তু ইতিহাসের বৈজ্ঞানিকত্ব-বিশ্বাসের একটা ফল দূর হয়নি, বেশ টিকে আছে। সে হচ্ছে ইতিহাসকে ভবিষ্যদ্ৰবক্তা মনে করা।

বিজ্ঞান ভবিষ্যতের অনেক কথা বলে। জোয়ার-ভাটার সময়, চন্দ্র-সূর্যের গ্রহণ, ভবিষ্যতের যে-কোনও দিনে গ্ৰহ-উপগ্রহের অবস্থান–গুনে বলতে পারে। যেসব প্রাকৃতিক নিয়ম বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে সেসব নিয়ম দিয়ে গণনা করে বিজ্ঞান ভবিষ্যৎ বলে। ইতিহাস যখন বিজ্ঞান তখন ইতিহাস কোন ভবিষ্যতের ঘটনা গুনে বলতে পারবে না?

অবশ্য ধরে নেওয়া হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা যেমন অনেক প্রাকৃতিক ব্যাপারের নিয়ম আবিষ্কার করেছেন, ঐতিহাসিকেরা ঐতিহাসিক ঘটনা পরীক্ষা করে মানুষের সমাজে ঘটনা ঘটার তেমনি সব নিয়ম আবিষ্কার করেছেন। এবং সেইসব নিয়ম অনুসরণ করে বর্তমান কোনও মানবীয় ঘটনার ভবিষ্যৎ পরিণতি। ঐতিহাসিকেরা বলতে পারেন।

বৈজ্ঞানিক লাপ্লাস নাকি বলেছিলেন যে, সৃষ্টির প্রাক্কালে পরমাণুপুঞ্জের সংস্থান কেমন ছিল, তাদের গতির দিক ও শক্তির পরিমাণ কী ছিল, তা জানা থাকলে ভবিষ্যৎ সৃষ্টির সব তথ্য তিনি গুনে বলতে পারতেন। হালের বিজ্ঞানীরা অতটা সাহসিক নন। তাঁরা জেনেছেন যে, সৃষ্টির ব্যাপার ও তার মালমশলার প্রকৃতি এরকম গণনায় ধরা দেবার মতো নয়, অনেক বেশি জটিল। মানুষের সমাজের গতি-পরিণতি তার চেয়ে কম জটিল নয়। এ জটিলতার মধ্যে ঐতিহাসিকের ভবিষ্যদবাণীর চেষ্টা যে কত নিরর্থক, গিবনের ইতিহাসে তার একটা ক্লাসিক’ উদাহরণ আছে। গিবন রোম সাম্রাজ্যের ইতিহাস থেকে মাঝে মাঝে চোখ তুলে তার সমসাময়িক ইউরোপীয় রাজ্যগুলির দিকে তাকিয়েছেন। পশ্চিম-রোমান-সাম্রাজ্যের ধ্বংস ইতিহাস শেষ করে গিবন লিখছেন, ‘and we may inquire, with anxious curiosity, whether Europe is still threatened with a repetition of those calamities which formerly oppressed the aims and institutions of Rome. Perhaps the same reflections will illustrate the fall of that mighty empire and explain the probable causes of our actual security, এবং এই পরীক্ষার ফলে গিবনের মনে হয়েছে যে, তার সমসাময়িক ইউরোপের রাষ্ট্র ও সমাজ-ব্যবস্থা মোটামুটি দৃঢ় ভিত্তির উপরই দাঁড়িয়ে আছে। ‘The abuses of tyranny are restrained by the mutual influence of fear and shame; republics have acquired order and stability monarchies have imbibed the principle of freedom, or at least of moderation’ গিবন তার ইতিহাস লিখে শেষ করেন ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে, অর্থাৎ ফরাসি বিপ্লবের দু’বছর পূর্বে। তাঁর সমসাময়িক ইউরোপীয় সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলে যে বিপ্লবের আগ্নেয়গিরির পাথর-গলা আরম্ভ হয়েছে তার কোনও সন্দেহ গিবনের মনে হয়নি।(১)

যে ঐতিহাসিকের ভবিষ্যদবক্তা হবার আকাঙক্ষণ তাঁর একবার ভেবে দেখা ভাল যে, তাঁর ঐতিহাসিক দৃষ্টি গিবনের চেয়ে ব্যাপক ও সূক্ষ্মতর কি না। কিন্তু ভবিষ্যদবাণী উচ্চারণের উৎসাহ সে ভাবনা অনেক ঐতিহাসিককে ভাবতে দেয় না। তার এক নমুনা ইংরেজ লেখক টয়েনবি। বহু খণ্ডে তাঁর বিস্তৃত ঐতিহাসিক তত্ত্বালোচনা শেষ করে শেষ দুখণ্ডে সোজাসুজি অনেক ভবিষ্যদবাণী বলেছেন। এ কালের বিজ্ঞানীরা বলেন যে, অতি ক্ষুদ্র পরমাণুর গতিবিধি গোনা যায় না, কিন্তু পরমাণুপুঞ্জের, অর্থাৎ মাস-এর গতি-প্রকৃতি স্ট্যাটিসটিক্যাল উপায়ে গোনা যায়। টয়েনবি কোনও বিশেষ ব্যাপারের ভবিষ্যদবাণী করেননি, গোটা মানবসমাজ ও সভ্যতার ভবিষ্যৎ নির্ণয় করেছেন। সে ঐতিহাসিক ভবিষ্যদবাণী ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কহীন। ইউরোপীয় সমাজ ও সভ্যতার ভবিষ্যতের আশা ও আকাঙ্ক্ষার ছবি– যা একজন ইউরোপীয় লেখকের মনে হয়েছে–এসব ভবিষ্যদবাণীর জন্ম এই আশা ও আকাঙ্ক্ষা থেকে, ইতিহাসের কোনও শিক্ষা থেকে নয়।

এ কাল পর্যন্ত মানুষের সমাজ ও সভ্যতার যতটুকু ইতিহাস জানা গেছে তাতে সে সমাজ ও সভ্যতার গতির এমন কিছু অলঙঘ্য নিয়ম কি জেনেছি। যাতে তার ভবিষ্যৎ গতির কথা কিছু বলা যায়? ইংরেজ ইতিহাস-লেখক এইচ. এ. এল. ফিশার তার ‘ইউরোপের ইতিহাস’-এর ভূমিকায় লিখেছেন, ‘One intellectual excitement has, however, been denied me. Men wiser and more learned than I have discerned in history a plot, a rhythm, predetermined pattern. These harmonies are concealed from me. I can see only one emergency following upon another as wave follows wave, only one great fact with respect tu which, since it is unique, there can be no generalizations, only one safe rule fof the historian: that he should recognize in the development of human destinies the play of the contingent and the unforeseen, This is not a doctrine of cynicism and despair. The fact of progress is written plain and large on the page of history; but progress is not a law of nature. The ground gained by one generation may be lost by the next. The thoughts of men may flow into channels which lead to disaster and barbarism.’

কুড়ি বছর পূর্বের লেখা; দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ তখনও আরম্ভ হয়নি।

সভ্যতার ভবিষ্যৎ বলা যায়, এ বিশ্বাসের অন্তরে এই স্বীকৃতি লুকিয়ে আছে যে, মানুষের ভবিষ্যৎ ঠিক হয়েই আছে। মানুষের কর্ম অকর্ম নিমিত্ত মাত্র। এ বিশ্বাস কারও মনে হতাশা আনে, কারও মনে উৎসাহ আনে। সমাজের ক্রমপরিণতিতে যে প্রোলিটারিয়েটের ডিক্টেটরশিপ অলঙঘ্য ও অবশ্যম্ভাবী, এ বিশ্বাস কার্ল মার্কসের মনে উৎসাহ এনেছিল, এবং তিনি অনুচরদের মনে উৎসাহ এনেছিলেন এ বিশ্বাস যে বৈজ্ঞানিক সত্য তার প্রমাণ প্রচার করে। এ বিশ্বাসের মূল কোনও পরীক্ষিত সত্য নয়, মনের আকাঙ্ক্ষা। মানুষের ও তার সভ্যতার ভবিষ্যৎ যদি প্রথম থেকেই নির্ণীত হয়ে থাকে, এবং তা যদি পূর্বেই জানা যায়, জানা যাবে ভবিষ্যদ্ৰষ্টার অপরোক্ষ দৃষ্টিতে, ইতিহাস-জ্ঞানের সরু পথে নয়। সুতরাং ইতিহাসে ভবিষ্যদবাণীর দায়িত্ব অপরোক্ষদৃষ্টি দ্রষ্টাদের ছেড়ে দিয়ে, ঐতিহাসিকদের নিশ্চিন্ত হওয়াই ভাল। মানুষের ইতিহাসের ঋজু কুটিল পথে বিচিত্র গতির যে বিস্ময়, মানুষের মনে সে বিস্ময় জাগাতে পারলেই ঐতিহাসিক ধন্য হবেন।

————-
১। উদাহরণটি ১৩৩৪ সালেব আমার একটি লেখা থেকে গৃহীত। দ্রষ্টব্য, শেষ প্রবন্ধ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *