দুই
এই ঘটনার তিনরাত পর বুড়ো মেজর ঘুমের ভেতর মারা গেল। তার মৃতদেহ পুঁতে ফেলা হলো বাগানের ধারে। সময়টা ছিল মার্চের শুরু। এরপর তিনমাস ধরে গোপনে বিদ্রোহের প্রস্তুতি চলল খামারে। মেজুরের বক্তৃতা বুদ্ধিমান জন্তুদের চোখ খুলে দিয়েছে। তারা জানে না মেজরের কথিত সেই ‘বিদ্রোহ’ কবে হবে। কিন্তু বুঝতে পেরেছে, এখন থেকেই তার প্রস্তুতি নিতে হবে। সবাইকে শেখানোর ও সংগঠিত করার দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই বর্তাল শুয়োরদের ওপর—জন্তুসমাজে তারাই সবচেয়ে চালাক বলে পরিচিত। নেপোলিয়ন ও স্নোবল—দুই শুয়োরের ওপর দেয়া হলো নেতৃত্ব। মি. জোনস এদের পুষেছিলেন বিক্রি করার জন্য।
নেপোলিয়ন বিশালদেহী বার্কশায়ার জাতের শুয়োর। বেশি কথা বলে না, কিন্তু যা বলে তা করে ছাড়ে। স্নোবল নেপোলিয়নের চেয়ে জান্তব চেহারার, কথাবার্তায় চটপটে আর উদ্যোগী, কিন্তু চারিত্রিক দৃঢ়তা তার নেই। ফার্মের বাকি শুয়োরগুলো পালা হচ্ছিল মাংসের জন্য। এদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ছিল স্কুয়েলার। ছোট্ট, পেটমোটা এক শুয়োর। গোলগাল খুঁতনি, কুতকুতে চোখ, চঞ্চল ভঙ্গি আর তীক্ষ্ণ গলার স্বর। চমৎকার কথা বলে সে, জটিল বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে গেলে লেজে দোল দিয়ে লাফিয়ে ওঠে। সবাই বলে, সে নাকি সাদাকে কালো করার মত অসম্ভব কাজ করতে পারে।
এরা তিনজন মেজরের ভাবনাকে একটা পরিকল্পনায় রূপ দিল। নাম দিল ‘জন্তু মতবাদ।’ কয়েক সপ্তাহ পর রাতের বেলা বার্নে এক গোপন সভায় মিলিত হয়ে অন্যান্যদের কাছে ‘জন্তু মতবাদ’ প্রচার করতে শুরু করল। প্রথম দিকে তাদের মুখোমুখি হতে হলো জন্তুদের বোকামি আর ঔদাসীন্যের। কিছু জন্তু বলল, মি. জোনসের প্রতি কর্তব্যে ও বিশ্বস্ততায় তারা অটল থাকবে। তারা তাঁকে সম্বোধন করল ‘প্রভু’ বলে; এবং মন্তব্য করল, ‘মি. জোনস আমাদের পালনকর্তা তিনি যদি না থাকেন তবে সবাই অনাহারে মারা যাব।’ অন্যেরা প্রশ্ন তুলল, যে ঘটনা আমাদের মৃত্যুর পর ঘটবে তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কি লাভ? কিংবা, বিদ্রোহ যদি এমনিই আসে তবে তার জন্য কেন মিছেমিছি কষ্ট করা?’
শুয়োরদের বোঝাতে ভীষণ বেগ পেতে হলো যে, এসব কথাবার্তা ‘জন্তু মতবাদ’ বিরোধী। সবচেয়ে বোকার মত প্রশ্ন করল সুন্দরী মলি। সে স্নোবলকে জিজ্ঞেস করল, বিদ্রোহের পর চিনি পাওয়া যাবে কিনা।
‘না,’ ভদ্রভাবে জবাব দিল স্নোবল। এই খামারে চিনি উৎপাদনের কোন ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া চিনির কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন মাফিক খড় তোমাকে সরবরাহ করা হবে।’
‘আমি কি গলায় ফিতে পরতে পারব?’
‘বন্ধুরা, যে ফিতে তোমাদের এত প্রিয়, তা হচ্ছে দাসত্বের চিহ্ন। তোমরা কি বুঝতে পারছ না, ফিতের চেয়ে স্বাধীনতা কত দামী?’
মলি মাথা ঝাঁকাল, কিন্তু স্নোবলের সাথে একমত হতে পেরেছে বলে মনে হলো না।
সবচেয়ে কষ্ট হলো মোজেসকে বোঝাতে। মোজেস মি. জোনসের আদরের পোষা কাক, গুপ্তচর, মোসাহেব এবং চটুলভাষী। সে বলে, ‘চকলেট পাহাড়ের’ রহস্য নাকি তার জানা। মৃত্যুর পর জন্তুরা সেখানে চলে যায়। সেই পাহাড়ের অবস্থান আকাশে মেঘের কাছাকাছি কোথাও। চকলেট পাহাড়ে সপ্তাহে সাতদিনই রোববার, সারা বছরই সুখের। সেখানে ঝোপ-ঝাড়ে জন্মে চিনি আর পিঠা। মোজেস কেবল গল্প করে, কোন কাজ করে না। তাই জন্তুরা তাকে পছন্দ করে না। তবে কেউ কেউ তার চকলেট পাহাড়ের গল্পে বিশ্বাস করে। এরকম জায়গার আসলে কোন অস্তিত্ব নেই, পুরো ব্যাপারটাই বানানো—একথা বোঝাতে শুয়োরদের বেশ বেগ পেতে হলো।
‘জন্তু মতবাদ’-এর প্রতি সবচেয়ে বিশ্বস্ত হলো দুই ঘোড়া, বক্সার আর ক্লোভার। এদের নিজস্ব কোন চিন্তাশক্তি নেই। শুয়োরদের গুরু মেনে মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনে এবং অন্যদের মাঝে প্রচার করে। সভায় তাদের উপস্থিতি নিয়মিত এবং সভা শেষে ‘বিস্টস অভ ইংল্যাণ্ড’-এর নেতৃত্ব দেয় তারাই।
জন্তুরা যা ভেবেছিল, তার চেয়ে অনেক সহজেই বিদ্রোহ এসে গেল। মি. জোনস খুব কড়া ‘প্রভু’ হলেও কৃষক হিসেবে মোটেই সফল ছিলেন না। সম্প্রতি তার দিন ভাল যাচ্ছিল না। মামলায় প্রচুর অর্থ খুইয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। অতিরিক্ত মদ পানে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে গিয়েছিল। সারাদিন রান্নাঘরে চেয়ার পেতে খবরের কাগজ পড়তেন। মদ খেতেন আর মাঝে মাঝে মোজেসকে বিয়ারে ভেজানো রুটি খাওয়াতেন। খামারের শ্রমিকরা ছিল অলস আর অসৎ। জমি ভরে গিয়েছিল আগাছায়, ঘরের ছাউনিতে পচন ধরেছিল, ঝোপগুলো বেড়ে উঠেছিল অযত্নে আর খামারের পশুগুলো প্রায়ই থাকত অনাহারে।
জুন মাস, খড় কাটার সময়। শনিবার বিকেলবেলা মি. জোনস গিয়েছিলেন উইলিংডনে। এত বেশি মদ খেয়েছিলেন যে, রোববার দুপুরের আগে ফিরতে পারলেন না। খামারের শ্রমিকরা সকালবেলা গরুর দুধ দুইয়ে চলে গেল খরগোশ শিকারে, জন্তুগুলোকে খেতে না দিয়েই। মি. জোনস ফিরে এসে ড্রইং রূমের সোফায় বসে খবরের কাগজে মুখ ঢেকে ঘুমিয়ে গেলেন। জন্তুগুলো সারাদিন অভুক্ত রইল। খিদেয় অস্থির হয়ে একটা গরু শিংয়ের গুঁতোয় স্টোর রূমের দরজা ভেঙে ফেলল। তার সঙ্গে যোগ দিল বাকিরাও। দরজা ভাঙার শব্দে ঘুম ছুটে গেল মি. জোনসের, পর মুহূর্তে চারজন লোক নিয়ে চাবুক হাতে ছুটে গেলেন সেদিকে।
একে পেটে খিদে, তার ওপর পিঠে চাবুকের আঘাত—জন্তুদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়াই তারা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ল উৎপীড়কদের ওপর। মি. জোনস ও তার চার শ্রমিকের ওপর লাথি-গুঁতোর বৃষ্টি হতে লাগল। পরিস্থিতি তাদের আয়ত্তে রইল না। জন্তুদের এমন খেপে উঠতে কেউ কখনও দেখেনি। যাদের তারা দাসের মত খাটিয়ে নিয়েছে এতদিন, তাদের বুনো উগ্রতা দেখে ভয় পেয়ে গেল লোকগুলো। খানিকক্ষণের মধ্যেই দু’জন রণে ভঙ্গ দিল, অল্পক্ষণ পর বাকিরাও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করল। খামার ছেড়ে তারা দৌড় দিল সদর রাস্তার দিকে, বিজয় উল্লাসে জন্তুরাও তাদের পেছনে পেছনে ছুটল।
মিসেস জোনস শোবার ঘরের জানালা দিয়ে সবই দেখলেন। দ্রুত কার্পেট ব্যাগে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভরে নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে নিঃশব্দে খামার ত্যাগ করলেন তিনি। মোজেস তার পিছু পিছু উড়ে কা কা রবে চিৎকার করতে লাগল। জন্তুরা মি. জোনস ও শ্রমিকদের তাড়িয়ে বের করে দিয়ে সদর দরজা বন্ধ করে দিল। এবং কেউ কিছু বোঝার আগেই সফল হলো ‘জন্তু বিদ্রোহ।’ মি. জোনস বিতাড়িত হলেন এবং ‘ম্যানর ফার্ম’ হলো জন্তুদের।
হঠাৎ পাওয়া এই সৌভাগ্য বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল জন্তুদের। বুঝে ওঠার পর তাদের প্রথম কাজ হলো, লাফাতে লাফাতে খামারের সব জায়গা খুঁজে দেখা যে, আনাচে-কানাচে আরও মানুষ লুকিয়ে আছে কিনা। এরপর ফার্ম হাউসে ফিরে মি. জোনসের সব চিহ্ন সরিয়ে ফেলা। আস্তাবলের শেষ মাথায় সাজঘর গুঁড়িয়ে দেয়া হলো; কুকুর বাঁধা শেকল, নাকের আংটা, ছুরি—যা ব্যবহার করা হত ভেড়া, ছাগল খোঁজা করার কাজে—সব কুয়োয় ছুঁড়ে ফেলা হলো। চাবুকগুলোকে আগুনে পুড়তে দেখে জন্তুরা আনন্দে নাচ জুড়ে দিল। স্নোবল কেশরে পরার রঙিন ফিতেগুলো আগুনে ছুঁড়ে দিল।
‘ফিতে হলো এক ধরনের কাপড়,’ সে ঘোষণা করল। ‘কাপড় হলো মানুষের চিহ্ন। জন্তুদের নগ্ন থাকা উচিত।’
একথা শুনে বক্সার তার খড়ের টুপিটা আগুনে পুড়িয়ে ফেলল। এই টুপি সে ব্যবহার করত গ্রীষ্মের মাছির উপদ্রব থেকে কান রক্ষার জন্য। অল্পক্ষণের মধ্যেই জন্তুরা মি. জোনসের স্মৃতিবাহী সব জিনিস ধ্বংস করে ফেলল, নেপোলিয়নের নেতৃত্বে তারা হানা দিল স্টোর রূমে। সবাইকে দ্বিগুণ পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা হলো আর কুকুরদের জন্য অতিরিক্ত দুটো করে বিস্কুট। সে রাতে ঘুমাবার আগে তারা ‘বিস্টস অভ ইংল্যাণ্ড’ গাইল সাতবার। তারপর ঘুমিয়ে পড়ল সবাই, এরকম শান্তির ঘুম তারা আগে কখনও ঘুমায়নি।
আর সব দিনের মতই পরদিন খুব ভোরে তাদের ঘুম ভাঙল। জেগেই মনে হলো, তাদের হঠাৎ পাওয়া বিজয়ের কথা। চারণভূমিতে যাবার পথে পড়ে ছোট্ট একটা টিলা। সেই টিলার ওপর দাঁড়ালে পুরো খামার এলাকা নজরে আসে। ভোরের প্রথম আলোয় সবাই মিলিত হলো টিলার ওপর। এসবই তাদের—দু’চোখ যদ্দূর যায়, সবই তাদের। এই ভাবনায় উদ্বেলিত হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচ জুড়ে দিল জন্তুরা। হাওয়ায় ডিগবাজি খেতে লাগল মহা উল্লাসে।
শিশির ভেজা ঘাসে গড়াগড়ি দিল, শেকড়সুদ্ধ ঘাস চিবাতে লাগল। মাটির গন্ধ নিল নাকে। এরপর পুরো খামার ঘুরে ঘুরে দেখল চাষের জমি, বাগান, পুকুর। মনে হলো এর সবই যেন নতুন, তারা আগে কখনও এসব দেখেনি বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো সবই এখন তাদের! শুধুই তাদের।
ঘুরে ঘুরে জন্তুরা এল ফার্ম হাউসের কাছে, নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে গেল দরজায়। এটাও এখন তাদের, কিন্তু কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে ভেতরে ঢুকতে। নেপোলিয়ন ও স্নোবল কাঁধের ধাক্কায় দরজা খুলে ফেলল। জন্তুরা সারি বেঁধে ঢুকল ভেতরে। খুব সাবধানে, ভয়ে ভয়ে, পা টিপে টিপে, কেউ কোন কথা বলছে না। কেবল গদিওয়ালা খাট, চমশা, সোফা, দামী কার্পেট, ম্যান্টেল পীসের উপর রাখা রানী ভিক্টোরিয়ার ছবি দেখে ফিসফিস করে বিস্ময় প্রকাশ করতে লাগল। সব দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখল মলি তাদের সঙ্গে নেই। তাকে খুঁজতে আবার ভেতরে ঢুকল সবাই।
তাকে পাওয়া গেল বেডরূমে। মিসেস জোনসের ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গলায় রঙিন ফিতে পরছে সে, নানাভাবে নিজেকে আয়নায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখছে। তাকে বকা দিয়ে সবাই বেরিয়ে এল। কিচেনে কিছু হ্যাম ঝুলছিল, সেগুলোকে মাটি চাপা দেয়া হলো। বীয়ারের পিপে বক্সারের লাথিতে গুঁড়িয়ে গেল। আর সব যেমন ছিল, তেমনি রইল। সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, ফার্ম হাউসে কোন জন্তু বাস করবে না, এটাকে মিউজিয়াম হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে।
এখন পর্যন্ত কারও সকালের খাবার খাওয়া হয়নি। নেপোলিয়ন ও স্নোবল তাদের ডেকে জড়ো হতে বলল। ‘বন্ধুরা,’ বলল স্নোবল। ‘এখন সকাল সাড়ে ছ’টা। আমাদের সামনে বিরাট একটা দিন পড়ে আছে। আজ আমরা শস্য কেটে গোলায় তুলব। কিন্তু তার আগে একটা বিষয় পরিষ্কার করে নেয়া দরকার।’
শুয়োরেরা প্রকাশ করল, গত তিন মাস ধরে তারা গোপনে লিখতে পড়তে শিখেছে। মি. জোনসের বাচ্চাদের ফেলে দেয়া পুরানো বর্ণমালার বই দেখে তারা পড়তে শিখেছে। এরপর তারা সবাই মিলে চলল সদর গেটের দিকে, নেপোলিয়নের হাতে রঙের টিন। স্নোবল (তার হাতের লেখা সবচেয়ে সুন্দর) তার দুই খুরের সাহায্যে শক্ত করে ব্রাশ ধরল। ব্রাশ রঙে ভিজিয়ে গেটের উপর লেখা ‘ম্যানর ফার্ম’ মুছে লিখল ‘জন্তু খামার।’ এটাই হলো এই খামারের নতুন নাম এরপর তারা এল বার্নে। মই ঠেকানো হলো বার্নের দেয়াল ঘেঁষে। শুয়োরেরা ব্যাখ্যা করল, গত ক’মাস গবেষণার পর তারা জন্তু মতবাদ-এর সাতটি নীতি প্রণয়ন করেছে। এই নীতিগুলো এখন দেয়ালে লিখে রাখা হবে। ‘জন্তু খামারের’ সবাইকে এই নীতিগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। স্নোবল বেশ কসরত করে মই বেয়ে উঠল (শুয়োরদের পক্ষে মই বেয়ে ওঠা অত সহজ নয়)। স্কুয়েলার একটু নিচে দাঁড়িয়ে রঙের টিন ধরে থাকল। দেয়ালের গায়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা হলো সাতটি নীতিবাক্য যা প্রায় তিরিশগজ দূর থেকেও পড়া যাবে। নীতিগুলো হলো:
১. দু’ পেয়ে সকলেই শত্রু
২. চার পেয়ে ও পাখা বিশিষ্ট সকলেই বন্ধু
৩. কোন জন্তু কাপড় পরবে না
৪. কোন জন্তু বিছানায় ঘুমাবে না
৫. কোন জন্তু মদ খাবে না
৬. জন্তুরা একে অপরকে হত্যা করবে না
৭. সব জন্তু সমান।
লেখাটা হলো ঝকঝকে। কেবল ‘বন্ধু’ বানানটা একটু ভুল হলো, তাছাড়া আর সবই ঠিক। স্নোবল অন্যান্যদের সুবিধার্থে নীতিগুলো জোরে জোরে পড়ে শোনাল। সবাই নীতিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মতি জ্ঞাপন করল। চালাক জন্তুরা সাথে সাথে নীতিগুলো মুখস্থ করে ফেলল।
‘এবার বন্ধুরা,’ হাত থেকে রঙ ব্রাশ ফেলে আহ্বান জানাল স্নোবল। ‘চলো জমিতে, জোনসের চেয়ে দ্রুত ফসল কেটে আমরা একটা রেকর্ড করে ফেলি।’
গরু তিনটে অনেকক্ষণ থেকেই অস্বস্তি বোধ করছিল, তারা এবার উঁচু স্বরে হাম্বা ডাক ছাড়ল। চব্বিশ ঘণ্টা হলো তাদের দুধ দোয়ানো হয়নি, দুধের বাঁট প্রায় ফেটে যাবার উপক্রম হয়েছে। কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনার পর শুয়োরেরা বালতি হাতে চলল দুধ দোয়াতে। খুরের সাহায্যে অনেক কসরতের পর বেশ সাফল্যের সঙ্গেই কাজটা তারা সম্পন্ন করল। অল্পক্ষণের মধ্যেই পাঁচ বালতি ক্রিম ও ফেনায় উপচানো দুধ জমা হলো। অন্য জন্তুরা কৌতূহলী হয়ে দুধের দিকে তাকিয়ে রইল।
‘এই দুধ দিয়ে কি হবে?’ কেউ একজন প্রশ্ন করল।
‘জোনস আমাদের খাবারের সাথে রোজ কিছু দুধ মিশিয়ে দিত,’ বলল মুরগিরা।
‘দুধের কথা ভুলে যাও, বন্ধুরা, দুধের বালতির সামনে দাঁড়িয়ে বলল নেপোলিয়ন। ‘এর একটা ব্যবস্থা হবেই। এখন ফসল তোলাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কমরেড স্নোবল এ কাজের নেতৃত্ব দেবে। আমিও একটুপর তোমাদের সাথে যোগ দেব। এখন তোমরা ফসল তুলতে লেগে যাও।’
জন্তুরা দল বেঁধে চলল জমির দিকে, ফসল কাটতে শুরু করল। বিকেলবেলা ফিরে এসে তারা দেখল, বালতির দুধ অদৃশ্য হয়ে গেছে।