অভিমানিনী – ৩০

৩০

অর্পি স্কুল থেকে ফেরার পরেও অদ্রি অর্পি কোনো চান্স পেল না ডায়েরিটা নিয়ে বসার। মোনা ফুপ্পি আর ফুপা এসেছে। এর মধ্যে দরজা বন্ধ করে রাখা সম্ভব না। আর দরজা খুলে ডায়েরিটাও পড়া যাবে না। অনেক কষ্টে ওরা রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করল। তারপর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর দরজা লাগিয়ে ডায়েরিটা নিয়ে বসল। যতটুকু পড়েছিল তার পর থেকে পড়া শুরু করল…

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ছুটিতে আছি। ছুটিটা প্রথমত নিয়েছি অসুস্থতার কারণে। দ্বিতীয়ত, এই লেখাটা শেষ করা দরকার। যা অবসরে লিখতে গেলে বছর বছর পার হয়ে যাবে। একটা কাজ অনেকদিন ধরে অসম্পূর্ণ থাকলে ভালো লাগে না। তাছাড়া ছুটিটা আরো একটা কারণে জরুরি ছিল, লেখাটা শেষ করে আমি কদিন আর কোনো স্বাভাবিক কাজ করতে পারব না।

আমি বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে ডায়েরি লিখছি। আর দিতিয়া আমার গা ঘেঁষে ঘুমাচ্ছে। মেয়েটা খুব অদ্ভুত! গত কয়েকদিন ধরে দেখছে আমি ডায়েরিতে কিছু লিখছি। তবু জিজ্ঞেস করেনি কী লিখছি। এটা তো তেমন কিছুই না। আরো হাজারটা ঘটনা আছে এরকম। সেসব লিখে শেষ করা যাবে না। তার চেয়ে বরং বলি সেদিন মানসী আমার ঘর থেকে বের হওয়ার পর কী হয়েছিল। দরজা খুলে বেরিয়ে মানসী বলল,

“মা চলো।”

খালামণি মানসীকে একটা চড় মেরে বলল,

“নির্লজ্জ, অসভ্য, বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!”

মানসী হেসে দিল। খালামণি ওর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল। আর মানসী যেতে যেতে পেছনে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল। বুকটা ছিঁড়ে যাচ্ছিল ওর ওই হাসি দেখে!

আজ ওর বিয়ে, ও অন্য কারো হয়ে যাবে! ভাবতেই পারছিলাম না। বাসায় যাকেই দেখছিলাম তাকেই অসহ্য লাগছিল। শেষে থাকতে না পেরে সেদিনই আমি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। তারপর মনে হলো ঢাকায়ই থাকব না। রাতের ট্রেনেই চট্টগ্রাম চলে গেলাম। ওখানেও ভালো লাগল না, চলে গেলাম কক্সবাজার। সারা দিনরাত সমুদ্রের পাড়ে বসে থাকতাম। সমুদ্রের ঢেউগুলো দেখলে ভালো লাগত। মনে হতো একেকটা ঢেউ এসে আমার বুকটার ওপর ভেঙে পড়ছে। তারপর আমার সব কষ্ট ধুয়ে আবার গভীরে চলে যাচ্ছে। একা থাকতেই ভালো লাগছিল। একাই তো আমি, কেউ তো নেই আমার। দুইতিন সপ্তাহ বাইরে বাইরে ঘুরে মনে হলো মা তো চিন্তা করবে! হয়তো ভাববে আমি তার নিজের ছেলে না, এটা জানার পর আগের মতো ভাবি না তাকে নিয়ে। কিন্তু ব্যাপারটা তো তা না। বাসায় ফিরে সোজা আমার ঘরে ঢুকে শুয়ে রইলাম। সবাই আমাকে দেখল কিন্তু কেউ আমার কাছে এল না। কিছু জিজ্ঞেস করল না। দুপুরে খেতে বসে মাকে জিজ্ঞেস করলাম,

“মানসী শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে না? কোথায় ওর শ্বশুরবাড়ি? নাকি কানাডা যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওদের বাড়িতেই থাকবে?”

সবাই চুপ। শুধু অনন্যা আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদছে। আমার বুকের মধ্যে কেমন যেন করে উঠল। সবাই চুপ কেন? এটা কি কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস? এবার সত্যি একটা ভয় আমাকে পেয়ে বসল। অনন্যাকে জিজ্ঞেস করলাম,

“কী হয়েছে তুই কাঁদছিস কেন? তুই তো কথায় কথায় এত কাঁদিস না! মানসী কোথায়? মানসীর কিছু হয়েছে?”

এবার মাও কাঁদতে শুরু করল। আমার অবচেতন মন বোধহয় বুঝে গিয়েছিল কী হয়েছে। তাই আমি এবার চেঁচিয়ে বললাম,

“কেউ আমাকে বলবে কী হয়েছে?”

সৌরভ এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল,

“মানসী…”

এটুকু বলে থেমে গেল। আমি বললাম,

“কী? মানসী কী?”

“মানসী বিয়ের আগেই সুইসাইড করেছে।”

এই লাইনটা পড়ে অদ্রি মুখ চেপে ধরে কান্না করে দিল। ওদিকে অৰ্পি ও কাঁদছে। দুই বোন এত বড় একটা ধাক্কা ঠিক মেনে নিতে পারল না। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করার পর অর্পি বলল,

“আপি চল বাকিটা পড়ি।”

“আর পড়ে কী হবে?”

“দেখি না কী হয়। ডায়েরিতে আরো অনেকটা লেখা আছে।”

অদ্রি অর্পি আবার ডায়েরিটা পড়া শুরু করল…

সৌরভের কথাটা শোনামাত্র আমার হাত-পা পুরো শরীর কাঁপতে শুরু করে দিল। দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লাম। আমি কী শুনলাম! সৌরভ আমার পাশে বসে বলল,

“তুই তো সন্ধ্যার পর চলে গিয়েছিলি। আমরা খবর পাই রাতে। তারপর যে তোকে কত যায়গায় খুঁজেছি! তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি।”

অনন্যা আমার পাশে এসে বসল। কাঁদতে কাঁদতেই বলল,

“কেন চলে গিয়েছিলে দাদা! কেন? একবার শেষ দেখাটাও তো দেখতে পারলে না।”

আমি ওদের কথার কোনো জবাব না দিয়ে উঠে পড়লাম। পুরো বাসার দেয়ালে মানসীর অনেক ছবি ছিল। মায়ের ঘরে মায়ের সাথে, আমার ঘরে আমার সাথে। অনন্যার ঘরে সৌরভ, অদ্রি, অনন্যার সাথে। মোনার ঘরে মোনার সাথে। সবগুলো ছবি খুলে নিয়ে আসলাম ড্রইং রুমে

তারপর এলবাম বের করে ওর ছবিগুলো বেছে বেছে বের করলাম। অনন্যা বলল,

“দাদা, কী করছ?”

আমি ওর কথার উত্তর দিলাম না। ওর সব ছবি আলাদা করে সব নিয়ে বাগানে চলে গেলাম। সবাই দৌড়ে এল আমার পিছু পিছু। তারপর লাইটার দিয়ে যখন ছবিগুলো পোড়াতে শুরু করে দিয়েছি তখন মা বলল,

“নীরব, ছবিগুলো পোড়াচ্ছিস কেন? প্লিজ এসব করিস না।”

আমি পাত্তা দিলাম না সেসব কথায়। সবগুলো ছবি পোড়ানো শেষ হলে উঠে গিয়ে বললাম,

“আজ থেকে মানসী নামটা কেউ উচ্চারণও করবে না এই বাড়িতে। কী বলেছে আর কী করেছে। বেঈমান বিশ্বাসঘাতক কোথাকার!”

রাগে আমার গা কাঁপছিল। ঘরে ঢুকে বিছানার ওপর বসলাম। মানসীর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো একটার পর একটা চলমান ছবির মতো চোখের সামনে ভেসে উঠল। আমি ভেবেই পাচ্ছি না ও কীভাবে পারল এই কাজটা করতে! আমি যেভাবে রিয়্যাক্ট করলাম, যেভাবে ওর ছবিগুলো পুড়িয়ে দিলাম তাতে কেউ আমার কাছে আসার বা কিছু বলার সাহস পেল না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দিতিয়া এল। আমার পাশে এসে বসে আমার মুখটা ধরে ওর দিকে ঘোরাল। দেখি ও কাঁদছে। ওর চোখ কিছু বলতে চাচ্ছিল আমি বুঝলাম কিনা জানি না কিন্তু আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম। জ্ঞান হবার পর আমার জীবনের প্রথম ও শেষ কান্না। তারপর আর কখনো কাঁদতে পারিনি। অনেক কষ্ট হলেও না। সেদিন কতক্ষণ কেঁদেছিলাম জানি না। দিতিয়া শুধু আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। কোনো কথা বলেনি। কেউ কাঁদলে আমরা সান্ত্বনা দিই। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সান্ত্বনা কোনো কাজে দেয় না। উল্টো বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর দিতিয়া সেটা খুব ভালো করে বুঝেছিল।

পরে জানতে পেরেছিলাম খালু আমার নামে কেস করেছিল। তার অভিযোগ ছিল আমার জন্যই মানসী সুইসাইড করেছে। কিন্তু পুলিশ মানসীর ঘর সার্চ করে একটা চিরকুট পেয়েছিল। তাতে লেখা ছিল,

“বাবা,

তুমি জোর করে আমার বিয়ে দিতে না চাইলে আমি মরতাম না। মরা খুব কঠিন, আর এই কঠিন কাজটা তুমি আমাকে দিয়ে করালে।”

খালুর জেদের কথা বলতে গিয়ে আরেকটা কথা না বললেই নয়। সে নিজের মেয়ের মৃতদেহ ফেলে নিজের সম্মান বাঁচানোর জন্য তার ছোট মেয়ে মাধবীকে ওইদিন ওই ছেলেটার সাথে বিয়ে দিয়েছিল। ১৫ বছর বয়সী ফুটফুটে ফুলের মতো মেয়েটাকে ৩২ বছর বয়সী লোকটার সাথে বিয়ে দিতে একটুও দ্বিধাবোধ করেনি।

আমার সব অনুভূতি অকেজো হয়ে গিয়েছিল। ঠিক-বেঠিক জ্ঞান ছিল না। ঠিক তখনই আমাদের মেডিক্যাল কলেজের একজন প্রফেসর আমাকে একটা স্কলারশিপের পরীক্ষায় বসতে বলল। কী মনে করে তার কথা শুনেছিলাম জানি না। পরীক্ষাটা দিয়েছিলাম আর স্কলারশিপটাও পেয়েছিলাম। তারপর হায়ার স্টাডিজের জন্য ইউএসএতে চলে গিয়েছিলাম, বলা ভালো পালিয়ে গিয়েছিলাম। কাউকে কিছু বলে যাইনি। বলতে ইচ্ছে করেনি। এমনকি মাকেও না।

জানতাম মা খুব চিন্তা করবে, তবুও বলে যাইনি। আসলে আমি কিছু কিছু ব্যাপারে এমন অমানুষ। যখন কারো কাছ থেকে খুব বেশি কষ্ট পাই তখন খুব রাগ হয় তার ওপর। তাকে আরো বেশি কষ্ট দিতে ইচ্ছে করে। এবং দিয়েও ফেলি, পরে অনুশোচনা হয়!

৩১

সেই সময় আমি সবার থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম যারা আমার কথা ভাবেনি, আমিও তাদের কথা আর কোনোদিনও ভাবব না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিনি। নিজের মা-বাবা না হলেও তো জন্মের পর থেকে তাদের আদরে, যত্নে বড় হয়েছি। অনেক ঋণ! অনেক মায়া!

মায়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়নি, আমার সব ইচ্ছে মরে গিয়েছিল, কিন্তু মনে হয়েছে যদি আমি মায়ের সাথে কথা বলি তাহলে মায়ের হয়তো ভালো লাগবে। তাই ইউএসএ যাওয়ার সাড়ে আট মাস পরে বাড়িতে ফোন করেছিলাম। ফোনটা মা ধরেছিল। আমি হ্যালো বলতেই মা তার স্বভাববশত কেঁদে ফেলেছিল। আমি বললাম,

“শুধু কাঁদবে নাকি একটু কথা বলবে?”

বুঝতে পারছিলাম মা কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না। কোনোরকমে বলেছিল,

“তুই কোথায় বাবা?”

“আমি আমেরিকায়।”

“ওখানে কেন? আর যাবিই যদি একবার কি বলে যেতে পারতি না? তুই কি বুঝিস না সারাক্ষণ তোর জন্য চিন্তা করার মতো কেউ কেউ এখনো আছে?”

এক নিঃশ্বাসে আরো কত কথাই না বলেছিল মা! তারপর যখন আমার সুযোগ এসেছিল তখন অনেক কষ্টে বুঝিয়ে-সুজিয়ে মাফ চেয়ে নিয়েছিলাম। একসময় মা বলল,

“আমি দোষ করেছিলাম, দিতিয়া তো কোনো দোষ করেনি। একটাবার ওর সাথে কথা বল প্লিজ।”

“ইচ্ছে করছে না মা, অন্য কোনো একদিন বলব।”

“নাহ তোকে এখনই বলতে হবে।”

জোর করে দিতিয়াকে ডেকে ধরিয়ে দিল। বোধহয় বলেওনি যে আমি ফোন করেছি, সেটা দিতিয়ার বিস্মিত কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পেরেছিলাম। ও হ্যালো বলতেই আমি বললাম,

“হ্যালো। কেমন আছ?”

ও বেশ অনেকক্ষণ চুপ করেছিল। আমি বললাম, “হ্যালো, আছ?”

ও বিস্ময় কাটিয়ে শুধু একটা কথা বলতে পেরেছিল,

“তুমি!”

তারপর আবার চুপ। আমি বললাম,

“জানতে চাইবে না আমি কোথায় আছি?”

“মায়ের কাছ থেকে জেনে নেবো।”

“কেন? আগে প্রশ্ন করলে শুধু বকা দিতাম তাই?”

“না, মায়ের কাছ থেকে তো জানতে পারব। এখন অন্য কথা বলো…তোমার শরীর ভালো আছে?”

“হুম, খুব ভালো। তোমার?”

“ভালো।”

কেমন যেন কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ওরও বোধহয় একই অবস্থা। শেষমেষ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা খুঁজে পেয়ে বলেছিলাম,

“কষ্ট ছাড়া কিছুই তো পেলে না আমাকে বিয়ে করে। তুমি এখনো পড়ে আছ কেন ওবাড়িতে? ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারো। নতুন সংসার পাততে পারো।”

ও হেসেছিল। বলেছিল,

“তুমি না থাকলেও এখানে বাবা-মা আর অন্য সবাই আছে। যা পাইনি তা পাওয়ার আশা করিও না। যা পেয়েছি তাই নিয়েই ভালো আছি। এ সম্পর্ক আমি কখনো ছিঁড়ব না। তুমি যদি কাউকে বিয়ে করতে চাও তাহলে অবশ্য অন্য কথা। তুমি যা চাইবে তাই হবে।”

.

তারপর থেকে আমি সপ্তাহে একবার ফোন করতাম মাকে। অন্যদের সাথে কথা বলতাম অল্পস্বল্প। দিতিয়ার সাথে কেমন আছ ভালো আছি এই পর্যন্তই কথা হতো। তবু মেয়েটা কোন আশায় পড়ে আছে কে জানে! আজও অবাক লাগে। সাত বছর পর বাংলাদেশে ফিরে আসি। এই সাতটা বছর আমি ওখানে কীভাবে থেকেছি তা শুধু আমি জানি। যন্ত্রমানব হয়ে গিয়েছিলাম। কোনো অনুভূতি ছিল না। অন্য দেশ থেকে আসা বন্ধু, বাংলাদেশ থেকে আসা বন্ধু সবাইকে দেখতাম দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে থাকতে। কেউ দেশে ফেলে আসা নতুন বউয়ের জন্য কষ্ট পেত। কেউ সদ্য জন্মানো নিজের সন্তানকে দেখতে না পেয়ে কষ্ট পেত। কেউ মায়ের জন্য কষ্ট পেত। কেউ সারা সপ্তাহের আয় উইকেন্ডে বার ক্যাসিনোতে গিয়ে উড়িয়ে আসত। আমার কেন জানি কোনো কিছুই গায়ে লাগত না। পড়াশোনা ঠিকমতোই করেছিলাম আমি। যখন শেষ হলো তখন আর ওখানে থাকতে ইচ্ছে হয়নি। সবার ওপর থেকে রাগ নেমে গিয়েছিল। সত্যি বলতে সব ঘাই শুকায়, সময় আর সুযোগ দিতে হয় শুধু।

যেভাবে কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে চলে গিয়েছিলাম সেভাবেই কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমাকে দেখে মোনা সবার আগে ছুটে এসেছিল। খুশি যেন ওর উপচে পড়ছিল। হৈচৈ শুনে মা নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এল। এসে আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিল। এতবছর পর মাকে কাঁদতে দেখে অনুভব করলাম এতদিন মায়ের জন্য কষ্ট হয়েছে আমার। কিন্তু বুঝতে পারিনি। আমি বলেছিলাম,

“এর চেয়ে বোধহয় না এলেই ভালো হতো।”

অতঃপর মায়ের কান্নাকাটি পর্ব শেষ হলো। তখন সৌরভ এসে বলল,

“ভাই আমি কি একটু চান্স পাব?”

সৌরভকে জড়িয়ে ধরতেই ও আমাকে অবাক করে দিয়ে কেঁদে ফেলল। বলল,

“কী করে থাকলি এতগুলো বছর আমাদের ছাড়া? তোর সাথে বড় হয়েছি অথচ বুঝিনি তুই এতটা নিষ্ঠুর!”

কী বলব? চুপ করেই ছিলাম। অনন্যা পাশেই দাঁড়িয়ে হাসছিল। আর বাচ্চাপার্টি অবাক হয়ে দেখছিল ‘এ আবার কে’ টাইপ দৃষ্টি দিয়ে। দূরে দাঁড়িয়ে দিতিয়া সবটাই দেখছিল। ওর চোখেমুখে সে যে কী অভিব্যক্তি ছিল তা লেখার ভাষা আমার নেই। পরীক্ষায় সবসময় ফেল করা বাচ্চাটা যদি কোনোভাবে একশ তে একশ পেয়ে যায় তাহলে তার অভিব্যক্তি যেমন হয় অনেকটা ওরকম ছিল। দূর থেকে দেখেই বুঝেছিলাম ওর হার্টবিট তখন কোন পর্যায়ে! সন্ধ্যায় বাবার সাথেও দেখা হলো। বাবা শুধু একটা কথাই বলল,

“তুই দিতিয়ার সাথে খুব অন্যায় করেছিস, খুব।”

.

রাতে শুয়ে ছিলাম, ঘুম আসছিল না। জায়গা বদলের কারনেও হতে পারে। আর এতগুলো মানুষকে কষ্ট দিয়ে দূরে চলে যাওয়ার অনুশোচনায়ও হতে পারে। দিতিয়া ঘরে এসে বলল,

“আমি কি আলাদা বিছানা করব?”

“কেন?”

“তোমার যদি কোনো সমস্যা হয় আমি পাশে শুলে, তাই জিজ্ঞেস করছি।”

“তুমি যদি ভাবো আমি তোমার জন্য চলে গিয়েছিলাম তাহলে ভুল ভাবছ। আমি নিজেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলাম সবকিছু থেকে।”

“আমি কিছুই ভাবছি না। তুমি যা ভালো বুঝেছ করেছ। আমার কিছু বলার নেই।”

“আচ্ছা, অন্য কোথাও শুতে হবে না। এখানেই শোও যদি তোমার কোনো সমস্যা না হয়।”

ও আমার পাশে শুয়ে পড়েছিল কিন্তু উল্টো দিকে ফিরে। আমার ঘুম আসছিল না। হঠাৎ মনে হলো দিতিয়া কাঁদছে। শব্দ হচ্ছে না, কিন্তু গা কাঁপছে। আমি আগের মতো আর ওর সাথে সহজ হয়ে ওর কান্না থামাতে পারিনি। ঘুমের ভান করে পড়েছিলাম। এভাবেই চলতে থাকল।

নীরব ইশতিয়াক
২৭ এপ্রিল, ২০১৬

৩২

কিছুদিন পর সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবে ঠিক হলো। কিন্তু আমি সদ্য নতুন চাকরিতে জয়েন করেছি। অনেক দায়িত্ব, এমন অবস্থায় যাওয়া সম্ভব না। দিতিয়া সবাইকে যেতে বলল। আমি যেহেতু যেতে পারছি না তাই ও থাকবে। আমি বললাম,

“তুমি যাও। আমার একা থাকতে সমস্যা হবে না।

“জানি। কিন্তু তবুও আমি যাব না।”

মা বলল,

“ঠিকই আছে। তুই যাবি না, তোকে একা ফেলে আমরা যাব কীভাবে? দিতিয়া থাকলে নিশ্চিন্তে থাকব।”

আমি বললাম,

“আমার কোনো সমস্যা নাই। থাকলে থাকবে, গেলে যাবে।”

সবাই দলবেঁধে বেড়াতে গেল। দিতিয়া গেল না। প্রথমদিন সব কিছু স্বাভাবিকই ছিল। দ্বিতীয় দিন হসপিটাল থেকে ফিরে দেখি দিতিয়াকে কেমন যেন দেখাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম,

“তুমি কি অসুস্থ!”

ও বলল,

“না”

“তো এমন ফ্যাকাশে লাগছে কেন?”

“কী জানি! বাদ দাও, এখন খাবে নাকি পরে?”

“এখনই খাব। তুমি রেডি করো, আমি গোসলটা করে আসি।”

গোসল করে ফিরে এসে দেখি দিতিয়া ড্রইং রুমে নেই। ঘরেও তো ছিল না। গেল কোথায়? রান্নাঘরে যেতেই দেখি রান্নাঘরের ফ্লোরে দিতিয়া পড়ে আছে। ওর কাছে গিয়ে ডাকলাম,

“দিতিয়া এই দিতিয়া?”

কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। অদ্ভুত মেয়ে একটা! যখন জিজ্ঞেস করলাম অসুস্থ কিনা তখন বলল না। আর এখন ফিট হয়ে পড়ে আছে! গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর আছে কিনা। জ্বর নেই। চুলায় তরকারি দিয়েছিল বোধহয় গরম করার জন্য। পুড়ে গেছে। চুলা নিভিয়ে দিয়ে ওকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে এলাম। তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গ্লাস থেকে পানি নিয়ে চোখেমুখে ছিটালাম। ও চোখ খুলল। পরক্ষণেই আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল। আমি বললাম,

“এখন কি একটু ভালো লাগছে?”

ও মুখে কিছু বলল না। মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। ওর শরীর কাঁপছে। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,

“দিতিয়া, এই দিতিয়া…তাকাও।”

ও তাকালো। আমি বললাম,

“এত দুর্বল হলে কী করে? খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করোনি না?”

ও কিছু বলল না। প্রেসার মেপে দেখলাম প্রেসার অনেক লো। বললাম,

“চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো। আমি আসছি।”

রান্নাঘরে গিয়ে প্লেটে করে ভাত নিয়ে এলাম। ওকে বললাম,

“একটু খেয়ে নাও।”

ও তাকিয়ে বলল,

“খাব না।

ওর কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম না। ঠোঁট নাড়ানো দেখে বুঝলাম। আমি বললাম,

“খেতে হবে। না খেয়ে খেয়ে এই অবস্থা হয়েছে।”

আমি ভাত মেখে ওর মুখের সামনে ধরতেই ও অবাক হয়ে চেয়ে রইল। আমি বললাম,

“তাড়াতাড়ি নাও। তোমাকে খাইয়ে আমি খাব।”

জীবনেও খেত না বোধহয়। আমার হাতে খাওয়ার লোভে খেলো। তারপর ওষুধ খাইয়ে, কম্বল গায়ে দিয়ে বললাম,

“ঘুমিয়ে পড়ো।”

দিতিয়াকে খুব খেয়াল করে দেখে আমার যা মনে হলো, সবাই গ্রামে যাওয়ার পর ও খাওয়াদাওয়া একদম করেনি। একা থাকায় জোর করারও কেউ নেই। এমনকি রাতে খাওয়ার সময় ও যদি বলত ও খেয়েছে আমি সেটাই বিশ্বাস করে নিতাম। এজন্যই ও এত দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমি কেমন মানুষ! একটু তো খেয়াল রাখা আমারও উচিত ছিল।

আমি খেয়েদেয়ে শুতে গেলাম। ঘরে ঢুকেই দেখি দিতিয়া কাঁদছে। ও বিছানার বাম পাশে শুয়েছিল, আমি ডান পাশ দিয়ে উঠে ওর মাথার কাছে গিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলাম,

“কী হলো কাঁদছ কেন? কষ্ট হচ্ছে?”

ও হঠাৎ ফুঁসে উঠল,

“আমি তোমাকে বুঝতে পারি না কেন?”

আমি প্রচণ্ড অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

“মানে?”

“কখনো বুঝতে পারি না। এই তুমি রেগে যাও, এই তুমি কাছে আসো, আবার দূরে চলে যাও, এই তুমি আবার বকো, এই তুমিই আবার খাইয়ে দাও।”

কাঁদতে কাঁদতে প্রচণ্ড আক্রোশে কথাগুলো বলছিল। অনেকদিনের জমানো রাগ যেন ঝরে পড়ছে। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,

“শান্ত হও। এত বুঝতে হবে না, এখন ঘুমাও। ঘুম খুব দরকার তোমার।” হঠাৎ দিতিয়া উঠে বসল। আমার শার্টের কলার খাঁমচে ধরে বলল,

“কীভাবে ঘুমাব আমি? তুমি কোনোদিন আমাকে আদর করেছ? সেই কবে এসেছ! একসাথে ঘুমাচ্ছি প্রতিদিন…একবারো ছুঁয়েছ আমাকে? কেন ছোঁওনি? আমার কি ছোঁয়াচে রোগ আছে? আমি কি ছোঁয়াচে?”

আমার চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেল। মেয়ে বলছে কী! ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি? দিতিয়া আরো রেগে গিয়ে বলল,

“এই খবরদার চোখ বড় করবে না। তোমার বড় বড় চোখ আমি ভয় পাই। সত্যি কথাই তো বলছি। জানো কত ছেলে পাগল ছিল আমার জন্য? আর আমার স্বামী কিনা আমার দিকে ফিরেও তাকায় না।”

এবার আমি হেসে দিলাম। তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

“কে বলেছে তুমি ছোঁয়াচে? এই তো ছুঁয়েছি।”

দিতিয়া আমার বুকে মাথা রেখে শান্তি পেল কিন্তু রাগ কমেনি। একই সুরে সে বলে গেল,

“কচু ছুঁয়েছ! এখন আমি অসুস্থ বলে একটু ঢঙ করছ। তুমি কোনোদিনও আমাকে আদর করবে না, আমি জানি।

“তাই? কীভাবে জানলে?”

“জানি আমি। অনেকদিন তোমার সাথে শুয়েছি। তুমি একটুও আদর করোনি। আমার প্রতি তোমার কোনো আকর্ষণ নেই।”

একথা বলেই ও আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। আমি ওর মুখটা তুলে কপালে চুমু দিলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুমি আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিলে। ৭ বছর আমি কীভাবে থেকেছি তুমি জানো? প্রতিদিন মনে হতো তুমি যেভাবে না বলে গিয়েছিলে সেভাবে না বলেই চলে আসবে। কিন্তু তুমি আসতে না। সবার মধ্যেও আমি একা ছিলাম। প্রতিটা রাত আমি কাঁদতাম। অনন্যার দুটো বাবু ছিল, আর আমার একটাও ছিল না। থাকবে কীভাবে? বাবু কি আকাশ থেকে লাফ দিয়ে আমার কোলে এসে পড়বে? আমার স্বামী তো আমার শরীরটাকে ঘৃণা করে। তাই কোনোদিন এই শরীরটাতে একটু নজরও বোলায়নি।

ঠিক সেই মুহূর্তেই প্রথম আমি ওর জন্য ভালোবাসা অনুভব করেছিলাম। আসলেই ভালোবাসা হুট করে হয়ে যায়। ১ মিনিটও লাগে না। ওর জন্য আমার যা হলো তা সত্যিকারের ভালোবাসা, কোনো মায়া না। ওর ধৈর্যের কাছে হার মেনেছিলাম। সত্যি কোনোদিন এভাবে ভেবে দেখিনি। কীভাবে সম্ভব কোনো আশা ছাড়া কারো জন্য এতগুলো বছর অপেক্ষা করা! আমি ওকে শুইয়ে দেয়ার জন্য মাথাটা আমার বুক থেকে সরিয়ে দিচ্ছিলাম। ও এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“নাহ, আমি তোমাকে এবার যেতে দেব না।”

“আমি যাচ্ছি না। আমি শোব, আর তোমারও ঘুম দরকার তাই…”

ও আমাকে থামিয়ে বলল,

“আমি ভেবেছিলাম তোমার বুকে আরেকটু থাকব। তুমি এমন করো কেন? আমি কি অনেক ভারী?”

ওর অসংলগ্ন কথাবার্তায় একদিকে যেমন মজা লাগছিল, অন্যদিকে তেমন খারাপও লাগছিল। কতটা কষ্ট নিয়েছিল মেয়েটা। আজ ও অসুস্থ না হলে ওর মতো মেয়ে হয়তো এভাবে জ্বলে উঠত না। সারাজীবনেও হয়তো ওর প্রতি ভালোবাসাটা আসত না আমার। আমি ওকে সরাতে পারলাম না তাই ওকে নিয়েই শুয়ে পড়লাম। তারপর ওকে আমার বুকের ওপর তুলে নিলাম। ওর পা আমার পায়ের ওপর ওর পুরো শরীর আমার শরীরের ওপর। ওর মাথাটা আমার বুকের ওপর রেখে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম,

“এবার খুশি?”

ও চোখ তুলে আমার চোখের দিকে চাইল। আমিও চেয়ে থাকলাম ওর চোখে। তারপর ও উঁচু হয়ে শাড়ির আঁচলটা বুকের ওপর থেকে সরিয়ে আমার একটা হাত টেনে নিয়ে কোমর ধরিয়ে দিয়ে বলল,

“একটু আদর করোনা প্লিজ!”

আমার বুকটা এবার কেঁপে উঠল। কতটা কষ্টের পর ওর মতো একটা লাজুক মেয়ে এই কাজটা করতে পারে তা বুঝতে অসুবিধা হলো না আমার। আমি ওর আঁচলটা উঠিয়ে দিয়ে ওকে আবার শুইয়ে দিলাম আমার বুকে। তারপর ওকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,

“তুমি এখন খুব অসুস্থ। আগে সুস্থ হও, তারপর আদর করব। অনেক অনেক আদর করব। এত আদর করব যে তুমি সারাজীবন মনে রাখবে।”

“ঠিক আছে, আমি তো তোমার সব কথাই শুনি। একদিন কাঁদতে নিষেধ করেছিলে, তোমার কষ্ট হয় বলে… আমি শত কষ্ট হলেও আর কাঁদিনি।”

“আমি জানি তো তুমি একটা লক্ষ্মী মেয়ে! এখন ঘুমাও।”

তারপর ওর কান্না থেমে গিয়েছিল। চুপচাপ শুয়ে ছিল। হঠাৎ চোখ তুলে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

“তোমার বুকে অনেক আরাম!”

“হুম! সেজন্যই তো ঘুম আসবে এখন তোমার।”

আমি ওর মাথায় অনবরত হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর আবার তাকালো, এবার সরাসরি আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রইল। এর বেশি তো ওর পক্ষে সম্ভব না। আমি বুঝতে পেরে হেসে দুহাতে ওর গাল ধরে একদম কাছে টেনে আনলাম। ও এবার আমার চোখের দিকে তাকালো, তারপর আবার ঠোঁটের দিকে। তারপর চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল। ওর নিঃশ্বাস আমার নিঃশ্বাসে মিশে গিয়েছিল। ও অপেক্ষা করছিল, ওর ঠোঁট কাঁপছিল, অধৈর্য হয়ে পড়েছিল। আমি তবুও ইচ্ছে করেই ওকে অপেক্ষা করাচ্ছিলাম। ওর ধৈর্য দেখছিলাম। শেষে ও চোখ মেলে তাকালো আর ওর ধৈর্যটা চোখ ফেটে জল হয়ে বেরিয়ে এল। ঠিক তখন আমি ওর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলাম! তারপর ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমি ঝুঁকে পড়ে অনেকক্ষণ ধরে চুমু খেলাম। অপেক্ষা করানোর কষ্টটা পুরোপুরি পুষিয়ে দিলাম। তারপর ওর পাশে শুয়ে ওকে কোলের ভেতর নিয়ে বললাম,

“এবার ঘুমাও।”

ও আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল। আমি অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারিনি। আমার শরীর ও মন দুটোই ওকে চাইছিল। দিতিয়া তো চাইছিলই কিন্তু আমি কিছু সুন্দর মুহূর্ত দিতিয়াকে দেয়ার জন্যই আর কিছু করলাম না। দিতিয়ার এখন মাথা ঠিক নেই। অসুস্থতা, রাগ সবকিছু মিলিয়ে ও একটা ঘোরের মধ্যে আছে। আগে ঘোর কাটুক। সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ওকে ওর প্রাপ্য দেব যার জন্য ওর এত প্ৰতীক্ষা!

কখন ঘুমিয়েছি জানি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে পেলাম। সবসময় ও আমার আগে উঠেছে, কখন উঠে যেত টের পেতাম না, তাই ওর ঘুমন্ত মুখটা কখনো দেখিনি। আজ বুঝলাম এই মুখটাতেও অনেক মায়া। যে মায়াজালে আমি দ্বিতীয়বার পড়তে চাইনি সে মায়াজালে আমি নিজের অজান্তেই কখন যেন পড়ে গিয়েছি!

৩৩

দিতিয়া যেহেতু অসুস্থ সকালের নাশতাটা আমার বানানো উচিত কিন্তু সেই যোগ্যতা যে আমার নেই! এতকাল বিদেশে একা থাকলেও রান্নাবান্নার ধারেকাছে যাইনি। রেডি ফুড আর ড্রাই ফুড দিয়ে কাজ চালিয়েছি। বড়জোর চা কফি আর ডিম ওমলেট বানাতে পারি। আর না খেয়ে থাকাও সম্ভব না। তাই নাশতা কিনে আনলাম। চা বানালাম। খেতে খেতে ভাবতে লাগলাম গতকালও দিতিয়াকে নিয়ে কোনো অনুভূতি ছিল না আমার অথচ গতকাল রাত থেকে… ভালোবাসা কি সত্যিই এত হুট করে হতে পারে?

আমি হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। শার্টের হাতা ভাঁজ করতে করতে তাকিয়ে দেখি দিতিয়ার ঘুম ভেঙেছে। আমাকে রেডি হতে দেখে সে লাফিয়ে উঠল। কিছুটা বিধ্বস্ত লাগছে ওকে। বিছানা থেকে উঠতে উঠতে ব্ৰিত হয়ে বলল,

“সরি উঠতে দেরি হয়ে গেল। আমাকে ডাকলে না কেন?”

আমি হেসে বললাম,

“অসুবিধা নেই।”

“তোমার কি সময় আছে? একটু বসবে আমি তাড়াতাড়ি নাশতাটা বানিয়ে দেই? ধুর কী ঘুম যে ঘুমিয়েছি!”

“ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলাম তাই এভাবে ঘুমিয়েছ। এত বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। আমি নাশতা কিনে এনে খেয়েছি, চা বানিয়েছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও। আমাকে এখনই যেতে হবে।

আমি ড্রয়িং রুমে দরজার পাশের সোফায় বসলাম জুতা পরব বলে। দিতিয়া পেছন পেছন এসে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। আমি জুতা পরছি তখন ও বলল,

“সরি কাল রাতে আমার মাথা ঠিক ছিল না। অনেক উল্টোপাল্টা বলে ফেলেছি। তুমি কিছু মনে করো না।”

আমি হেসে বললাম,

“ভাগ্যিস বলেছিলে না হলে জানতাম কী করে?”

“কী?”

“এই যে তোমার ভেতরে এত রাগ এত আগুন!”

দিতিয়া লজ্জায় দেয়ালের সাথে মিশে যাচ্ছিল। ও কিছু বলার আগেই আমি আবার বললাম,

“আর জানতাম কী করে এক মিনিটের মধ্যেও যে ভালোবাসা হতে পারে!”

শেষ কথাটা শুনে দিতিয়া একবার চমকে তাকালো তারপর আবার চোখ ফিরিয়ে নিল। লজ্জায় মুহূর্তেই লাল হয়ে গেল। ও বোধহয় কল্পনাও করেনি আমি এমন কিছু বলব! আমি দূর থেকেও টের পাচ্ছি ওর হৃৎস্পন্দন চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে! জুতা পরা শেষ হতেই আমি ওর কাছে গেলাম। ওর কোমরটা জড়িয়ে কাছে এনে বললাম,

“আজ ছুটির দিন হলে ভালো হতো তাই না?”

“ধেৎ!”

দিতিয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে আমাদের ঘরে চলে গেল। আমি চিৎকার করে বললাম,

“আজ ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করো, না হয় কিন্তু আজও…”

আমার কথা শেষ হওয়ার আগে দিতিয়া ভেতর থেকে অস্থির গলায় বলল, “উফ তুমি যাও তো।”

আমি হেসে বললাম,

“হ্যাঁ যাচ্ছি, দরজাটা লাগিয়ে দিও।”

.

আমি চাইলে সেদিন হয়তো ছুটি নিতে পারতাম। ইচ্ছে করেই নিলাম না। দিতিয়াকে যা বোঝানোর বুঝিয়ে দিয়েছি এবার সারাদিন থাকুক অস্থিরতায়। আমারো যে সময় দরকার!

সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফিরে দেখি বাসার সবাই গ্রাম থেকে চলে এসেছে। সাথে আরো আত্মীয়স্বজন এসেছে। দিতিয়া ও অনন্যা তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত। একবার শুধু চোখাচোখি হলো, তাতেই লজ্জায় যায় যায় অবস্থা দিতিয়ার। বাড়িতে এত লোকজন যে এরপর আর তার দেখা পাওয়া গেল না। হায় কপাল এত তাড়াতাড়ি ফিরে লাভটা কী হলো?

একসময় রাত ১২টা পেরিয়ে গেল। কিন্তু দিতিয়ার আসার নাম নেই। আমি ওর মোবাইলে মেসেজ দিলাম,

“কোথায় তুমি?”

ও প্রায় সাথে সাথেই রিপ্লাই দিল,

“ড্রয়িং রুমে, সবাই আড্ডা দিচ্ছে।”

মেসেজ চালাচালি হতে লাগল,

“দিক, তুমি চলে আসো।”

“সবার সামনে থেকে এভাবে উঠে আসি কী করে? সবাই কী ভাববে?”

“কিছুই ভাববে না। চলে আসো। সকালে আমার অফিস আছে।

“এখন থেকে কি শুক্রবারেও তোমার অফিস থাকে?”

“কালকে শুক্রবার নাকি?”

“ক্যালেন্ডার দেখো।”

“ওকে। কিন্তু আমি টায়ার্ড, ঘুম পাচ্ছে। যেকোনো সময় ঘুমিয়ে যেতে পারি।”

“ঘুমিও না আমি ওঠার পাঁয়তারা করছি।

“আচ্ছা? জেগে থাকলে কী পাব?”

“জানিনা প্লিজ আমাকে এত লজ্জা দিও না।”

“দেব, লাজুক দিতিয়াকে দেখতে আমার ভালো লাগে।”

“আর রাগি দিতিয়াকে?”

“আরো ভালো লাগে। যে কিনা আমার শার্টের কলার ধরে আমার কাছে আদর চায়।”

“ধেৎ…”

“দিতিয়া আসো।”

“চেষ্টা করছি।”

.

দিতিয়া যখন ঘরে এল তখন প্রায় রাত একটা বাজে। আমি বিছানায় আধশোয়া হয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম। দিতিয়া ঘরে ঢুকে দরজা লাগাতেই আমি সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললাম,

“শাস্তি দিলে?”

দিতিয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

“কিসের শাস্তি?”

আমি দিতিয়ার হাত ধরে আমার কোলের কাছে বসালাম। তারপর বললাম,

“সাত বছর অপেক্ষা করানোর শাস্তি দিলে সাত ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে। তবে সাত বছরের তুলনায় সাত ঘণ্টা কিন্তু কম হয়ে গেল!”

“বিশ্বাস করো এরকম কিছু না। রান্নাবান্না খাওয়াদাওয়াতেই তো সময় চলে গেল। তারপর শুরু হলো আড্ডা। অনন্যা উঠে গেলে আবার আমিও উঠতে পারতাম। ও উঠছিল না তাই আমিও উঠতে পারছিলাম না। তার ওপর মা, চাচি সবাই ছিল সেখানে। সবার মাঝখান থেকে উঠে এলে কে কী মনে করত আবার তাই…”

আমি দিতিয়ার কোমর জড়িয়ে কাছে এনে কানে কানে বললাম,

“আমি তো দুষ্টুমি করছি পাগল!”

দিতিয়ার কানে আমার ঠোঁটের ছোঁয়া লাগতেই ও কেঁপে উঠল। আমার মানসীর

কথা মনে পড়ে গেল। একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস খুব সন্তর্পণে লুকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

“সেই সাতটা বছর তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না দিতিয়া?”

ও আমার বুকের সাথে মিশে যাচ্ছিল। কাঁপা গলায় বলল,

“হুঁ।”

“তোমার কি মনে হতো আমি একদিন ফিরে আসব?”

দিতিয়া আমার দিকে না তাকিয়েই কথা বলছিল,

“নাহ। উল্টো আমার মনে হতো তুমি কখনো ফিরবে না।”

“এমন কেন মনে হতো?”

“জানি না।”

“কিসের আশায় ছিলে তাহলে?”

“কোনো আশা ছিল না আমার। তবে অপেক্ষা করতাম তোমার ফোনের। কবে তুমি ফোন করবে আর কবে তোমার কন্ঠ শুনতে পাব!”

“আমাকে ফিরতে বলোনি কেন কখনো?”

দিতিয়া আমার দিকে চেয়ে অভিমানী সুরে জিজ্ঞেস করল,

“আমি বললেই যেন ফিরতে?”

“না, তবে তোমার অধিকার ছিল বলার।”

“অধিকার দিয়ে কি আর ভালোবাসা পাওয়া যায়?”

“ভালোবাসা চাও?”

দিতিয়া আমার বুকে মুখ লুকাল। আমি দুষ্টুমি করে বললাম,

“গতকালকের মতো করে একটু বলো তো।”

“সুস্থ স্বাভাবিক থাকলে কখনো ওসব কথা বলতাম না।”

“আঁচল ফেলে দিয়ে কী বলেছিলে মনে আছে?”

দিতিয়া মৃদুস্বরে বলল,

“প্লিজ লজ্জা দিও না।”

আমি দিতিয়ার মুখটা তুলে ওর ঠোঁটে ঠোঁট বসালাম। আমি চুমু খেতে শুরু করতেই ও আমাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। এরপর যখন ছাড়লাম ও আবার আমার বুকে মুখ লুকাল। দিতিয়ার নরম শরীর যেন আরো নরম হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল গরম তুলোর বালিশ জড়িয়ে রেখেছি! আমি ওর খোঁপাটা খুলে ফেললাম, চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে পড়ল। এবার ওর আঁচলটা টেনে ফেলে দিলাম। গতকাল যে নিজেই নিজের আঁচল ফেলে দিয়ে আবদার করেছিল সে আজ লজ্জায় দুহাতে নিজেকে ঢেকে ফেলল। চোখ দুটো বন্ধ। ওকে ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে বিছানায় উঠিয়ে শুইয়ে দিলাম। মেয়েটা ব্লাউজ পরাই আছে তবু দুহাত দিয়ে ওর বুক ঢেকে রেখেছে। এদিকে ওর সেই গুপ্ত সম্পত্তি যা দেখে সাত বছর আগে একদিন মাথা খারাপ হয়েছিল আমার সেই ঢেউ খেলানো মসৃণ গোলাপি পেট ও নাভিকূপ যে আমার চোখের সামনে রয়েছে এবং হাঁ করে আমি তা গিলছি সেই খবর কি আছে ওর কাছে? নেই আমি নিশ্চিত। সেই খবরটা ওকে দেয়ার জন্যই ওর নাভিতে চুমু খেলাম। ও সর্বাঙ্গে কেঁপে উঠল। নিজের চুল নিজেই খামচে ধরল। ওর গায়ের রঙ ফর্সা না বরং গোলাপি, তার মধ্যে এই মুহূর্তে ওর গাল, কপাল, গলা সবকিছুতে রক্ত জমে আরো গাঢ় হয়েছে। ওর সেই চুল খামচে ধরা, বন্ধ চোখের পাপড়ির কাঁপাকাঁপি, ওর ঠোঁটের ভাঁজ, গলার কাঁপন, নিশ্বাসের ওঠানামা এবং ওর অস্থিরতা সবকিছু মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখছিলাম আমি। হঠাৎ করেই বেডসুইচে হাত বাড়িয়ে লাইট নিভিয়ে দিলাম।

ওর ওই বাড়াবাড়ি রকমের সৌন্দর্য সেদিন আমি দেখতে চাইনি। কারণ সেদিন শুধু দিতিয়াকেই ভালোবাসতে চেয়েছিলাম, দিতিয়ার সৌন্দর্যকে না। সে রাতে অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়েই আমি আমার দিতিয়াকে আবিষ্কার করেছিলাম!

ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মানুষ কী না করে! তার সব কথা মানতে চায়। বিনীত থাকে, কিন্তু তারপর যখন ভালোবাসা পেয়ে যায়, তখন থেকে শুরু হয়ে যায় কর্তৃত্ব, অধিকারবোধ আর আবদার। আমি এগুলোকে নেগেটিভ বলছি না। এগুলো খুবই ন্যাচারাল। ভালোবাসলে এগুলো আসবেই। কিন্তু দিতিয়ার এমন হয়নি। আজ আমার ভালোবাসা পেয়েও ঠিক তেমনটি আছে যেমনটি ছিল ১৭ বছর আগে। একটুও অশান্তি করে না। কোনো অভিযোগ নেই। ওর মধ্যে কেমন যেন একটা জড়তা কাজ করে এখনো। আমি কাছে না টানলে নিজ থেকে কাছে আসে না। কিন্তু আমি যখন কাছে টেনে নিই তখন সব উজাড় করে দেয়। পৃথিবীর অন্য কোনো মেয়ে হলে বোধহয় এভাবে অপেক্ষা করত না। আর আমিও আবার ভালোবাসার সুখ পেতাম না। অন্যসব স্বামী-স্ত্রীদের মতো আমাদের ঝগড়া হয় না, তাই দাম্পত্যটা আমাদের পানসে। কিন্তু ভালোবাসাটা খুব গভীর।

কথায় বলে একসাথে দুটো মানুষকে ভালোবাসা যায় না। আমি নিজের জীবন দিয়েই বুঝলাম কথাটা ভুল। আমি আজও মানসীকে ভালোবাসি। আমি ওর মৃতদেহ দেখিনি, তাই আজও ইচ্ছে করলে বিশ্বাস করতে পারি ও আছে। আবার দিতিয়াকেও ভালোবাসি। এরা দুজনেই এমন যে এদের ভালো না বেসে পারা যায় না।

দুজনের জন্য ভালোবাসা দুরকমের। মানসীকে না দেখলেই যেরকম অস্থির লাগত। দিতিয়ার জন্য সেরকম হয় না। হয়তো মানসী আমার অল্প বয়সের প্রেম, তখন আবেগ বেশি ছিল তাই ওরকম অস্থিরতা কাজ করত। আর দিতিয়া তো আমার বুড়ো বয়সের প্রেম। এখন এত আবেগের জায়গা তো নেই।

মানসীর সাথে যেমন পাগলামি করা হতো দিতিয়ার সাথে ওরকম পাগলামি করা হয় না। মানসীর সাথে যেমন অনেক স্বপ্ন দেখা হতো, দিতিয়ার সাথে তেমন কোনো স্বপ্ন দেখা হয় না। স্বপ্ন দেখারও অবশ্য আলাদা একটা সুখ আছে, তা সেই স্বপ্ন পূরণ হোক আর না হোক। তবু কেন যেন হয়ে ওঠে না, তাছাড়া স্বপ্ন দেখব কী করে, সব ইচ্ছা পূরণ করার মতো ক্ষমতা তো এখন হয়েছেই।

মানসীকে হাজারবার বলেছি ভালোবাসি, কিন্তু দিতিয়াকে কোনো দিন বলা হয়নি ভালোবাসি। দিতিয়া অবশ্য বুঝে নিয়েছে। মানসী চলে যাওয়ার পর থেকেই আমি কথা কম বলি। আমার সব কথা বলার মানুষ ছিল ও। কিন্তু দিতিয়ার সাথে আমার কথা হয় হৃদয়ে হৃদয়ে।

মানসীকে আজও খুব মিস করি। যখনই ওর কথা মনে হয় এলমেলো হয়ে যাই আমি। বুকের ভেতর একটা কিছু পুড়ে ছাই হয়ে উড়ে যায়, যা আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পায় না। পোড়া গন্ধটা বোধহয় একমাত্র দিতিয়া পায়। আর তাই কীভাবে কীভাবে করে যেন ও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

কাকে বেশি ভালোবাসি, কাকে কম ভালোবাসি তা বলতে পারব না তবে দুজনকেই আমি মনেপ্রাণে ভালোবাসি। আর তাতে আমার কোনো অপরাধবোধ নেই!

নীরব ইশতিয়াক
২৮ এপ্রিল, ২০১৬

.

ডায়েরিটা বন্ধ করে দুই বোন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। পরক্ষণেই অদ্রি গম্ভীর গলায় বলল,

“আচ্ছা আমার তো খেয়ালই নেই। আন্ডার এজড হয়ে তুই এই শেষ অংশটা পড়লি কেন?

“এহ আন্ডার এজড! আমি মোটেও ছোট নই। সব বুঝি আমি। আর হ্যাঁ মনে রাখিস শুধু আমার জন্যই এত কাহিনী জানতে পারলি!”

“হুহ!”

অর্পি হঠাৎ উদাস হয়ে বলল,

“আপ্পি রে, আমি হ্যাপি যে চাচ্চু চাচির মধ্যে ভালোবাসা হয়েছে। কিন্তু আমার না মানসী আন্টির জন্য খুব খারাপ লাগছে। সবাই সব পেল। কিন্তু বেচারি নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দিল এভাবে! আর চাচ্চুও শেষ পর্যন্ত ভালোবাসাটা দুভাগ করেই ফেলল।”

“এটাই স্বাভাবিক। আমারো মানসী আন্টির জন্য পরাণ পুড়ছে। কিন্তু তবুও বলব যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। একজন তো গেছেই বাকিরাও যাবে কেন? সাতটা বছর চাচ্চু একা থেকেছে। সেটাও অনেক কঠিন ছিল।”

“তা ঠিক।”

“দিতিয়া চাচি ডিজার্ভস ইট। তাছাড়া সে যা পেয়েছে তা সে অর্জন করে নিয়েছে!”

.

আমরা এই পার্থিব জীবনে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হই, মিশি। অনেকেই থাকে আমাদের আশেপাশে, আমাদের পরিবারে। যাদের জীবনযাত্রা আপতদৃষ্টিতে মনে হয় খুবই সাধারণ। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের জীবনেই হয়তো থাকে অজানা কোনো অসাধারণ গল্প যা বন্দি থেকে যায় কোনো ডায়েরির পাতায় অথবা মনের গহীনে।

সমাপ্ত

1 Comment

ami onek shoked, Manoshi beche nei. tobe boltei hobe ei golpota jiboner shob dhoroner oddhai tule dhoreche. i love this story so much.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *