৮
রাত তিনটা পয়ঁতাল্লিশ মিনিটা। তেলআবির থেকে মাহমুদের পাঠান মেসেজের প্রতি চোখ বুলিয়ে থেকে বিদ্যুৎ স্প্রিংএর মত উঠে দাঁড়াল আহমদ মুসা।
মনে হল কি এক তীব্র বেদনায় তার সারা মুখমন্ডল নীল হয়ে গেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সে ভাব তার কেটে গেল আর চোখ দু’টি জ্বলে উঠল। মুখমন্ডল হয়ে উঠল শক্ত। কয়েকবার অস্থিরভাবে পায়চারি করল সে। তারপর দেয়ালে টাঙ্গানো জর্দানের মানচিত্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপর তার দৃষ্টি স্থির হয়ে দাঁড়াল। জেবেল আল শামছ -সংযুক্ত জনফ্রন্টের হেড কোয়ার্টার। ওরা আজ এক মিটিং এ এসেছে। ভালো হল পাওয়া যাবে এক সঙ্গে। কিন্তু জর্জ বাহাশ নেই। গেছে উত্তর ভিয়েতনাম সফরে। ওর জন্য দন্ড তোলা রইল।
আহমদ মুসা চেয়ারে গিয়ে বসল। বাম পাশের এক সুইচে মৃদু চাপ দিল। কিছুক্ষণ পরে পাশের কক্ষ থেকে আহমদ মুসার সেক্রেটারী আলি বিন সাকের এসে হাজির হল। আহমদ মুসা বলল, জাফর যুবায়ের ও ইউসুফকে তৈরী হতে বলো। জীপ রেডি আছে কিনা দেখো। এহসান সাবরিকে এখনি আমার কাছে আসতে সংবাদ দাও।
সাইমুমের এ্যাকসন স্কোয়াডের আম্মানস্থ অধিনায়ক এহসান সাবরি আহম্মদ মুসার কক্ষে প্রবেশ করল। আহম্মদ মুসা দাঁড়িয়ে ছিল। এহসান সাবরিকে বসতে বলে সেও চেয়ারে গিয়ে বসল। আহমদ মুসা এহসানকে জনফ্রন্টের ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে বলল, আমি জেবেল আল শামছ এ যাচ্ছি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ১০০ জন মুজাহিদ নিয়ে তুমি এস। তুমি ৫০ জন মুজাহিদ নিয়ে বাব উল মাশরেক নিয়ে জেবেল যাবে এবং তালাবের নেতৃত্বে অন্য ৫০ জনকে বাব-উল-শেমাল দিয়ে প্রবেশ করতে বলবে। বলে আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। এহসানও উঠল। এহসান সাবরি বের হয়ে যেতেই আলি বিন শাকের ঘরে ঢুকলো। বলল, সব রেডি জনাব।
আহমদ মুসা কোন কথা না বলে আলির হাতে একটি চিঠি দিয়ে বলল, ‘মেসেজটি জেবেলে আমাদের হেড কোয়ার্টারে ইবনে সাদের কাছে এখনি পৌছে দিবে। বাদশাহ আবুল হিশামের (জর্দানের বাদশাহ) কাছে এ মেসেজ পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য সকল আরব রাষ্ট্র প্রধানের কছে এ মেসেজ অবিলম্বে পৌঁছাতে হবে। ইবনে সাদ হেড কোয়ার্টারে প্রধান রেডিও বার্তা প্রেরক।
জাফর, যুবায়ের ও ইউসুফ অপেক্ষা করছিল। আহমদ মসা গাড়ীতে উঠতেই গাড়ী ছেড়ে দিল। সাইমুমের নাইট অপারেশনের কালো রংয়ের বিশেষ ইউনিফর্ম তাদের পরিধানে। দু’টি করে রিভলভার ছাড়া অন্যকোন অস্ত্র নেই তাদের কাছে।
আম্মান থেকে যে মহা সড়ক উত্তর দিকে গেছে,সেই সড়ক দিয়ে তীর বেগে ছুটে চলেছে আহমদ মুসার গাড়ী। রাতের নিস্তব্ধ প্রহর। জমাট অন্ধকার চারিদিকে। চাঁদ নেই তারার মেলা বসেছে আকাশে।
আহমদ মুসা ভাবছে, সাবধান হবার সুযোগ না দিয়েই ওদের কছে পৌছতে হবে। তাই যথা সম্ভব রক্তপাত ও সংঘর্ষ এড়াতে হবে। প্রহরীদেরকে নিঃশঙ্ক করার জন্যই মুসা নিরস্ত্র অবস্থায় এসেছে।
আম্মান থেকে ৭০ মাইল দূরে জেবেল আল শামছের পূর্ব দিকের প্রবেশ মুখ বাব -উল -মাশরেকের সন্নিকটবর্তী হল মুসার গাড়ী। গাড়ীর হেড লাইটের আলো বাব -উল -মাশরেকে গিয়ে পড়েছে। ষ্টেনগান উচিয়ে প্রহরীরা দাঁড়িয়ে আছে দেখা যাচ্ছে। দ্বিধাহীন গতিতে আহমদ মুসার গাড়ী গিয়ে ওদের সামনে থামল। গাড়ী থামাতেই ওরা দাঁড়াল চারিদিক থেকে। গাড়ী থেকে ওরা চারজনই নামল। আহমদ মুসাকে দেখে জনফ্রন্টের প্রহরীরা পিছিয়ে দাঁড়াল কয়েক পা। উচিয়ে ধরা ষ্টেনগান নেমে পড়ল তাদের। ঘটনার আকস্মিকতায় ওরা যেন বিহবল। আহমদ মুসা বলল, বাজাজ ডেকেছে, জরুরী কাজ আছে ।
আবদুর রহমান বাজাজ সংযুক্ত জনফ্রন্টের সেক্রেটারী জেনারেল। প্রহরীরা পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করল, তারপর পথ ছেড়ে দুই পাশে সরে দাঁড়াল তারা। আহমদ মুসার গাড়ী এগিয়ে চলল। পথে আরও দু’জায়গায় দাঁড়াতে হল, কিন্তু কোন অসুবিধা হল না তাদের। প্রহরীরা কোনই সন্দেহ করতে পারেনি। আহমদ মুসা ভাবল জনফ্রন্টের ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিদের ষড়যন্ত্রের বিষয় বোধ হয় এ বেচারাদের পুরোপুরি অবহিত করা হয়নি। হয়তো বা আদৌ জানান হয়নি। তাছাড়া কর্তা ব্যক্তিদের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিষয়টি সম্পূর্ণ বুঝে উঠা এ সরল মুসলিম যুবকদের পক্ষে খুব সহজনয়। সুতরাং বিষয়টির প্রয়োজনীয় গুরুত্ব সম্পর্কে তারা কিছুটা অবচেতন থাকবে – সেটাই স্বাভাবিক। সর্বোপরি মুক্তিফ্রন্টের সকল অঙ্গ দল, এমন কি আরব রাষ্ট্রগুলোর উপর সাইমুমের আহমদ মুসার প্রভাবের বিষয় তারা অবহিত আছে।
গাড়ী ছেড়ে দিয়ে অসমান গিরি পথ দিয়ে আহমদ মুসারা হেঁটে চলছিল।
জেবেল আল শামছের গুহার মুখে একটি চৌকোণ পাথুরে বাড়ী। সুদৃঢ় দেয়ালের মাঝখানে ভিতরে প্রবেশের একটি মাত্র পথ। গেটে দু’জন ষ্টেনগানধারী প্রহরী। আহমদ মুসা ও তার অনুচররা শান্ত ও প্রসন্নমুখে সেখানে এসে দাঁড়াল। দূরে থাকতেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রহরীদ্বয় তাদের পরীক্ষা করছিল। কি ভাবল তারা, নিজেদের স্থারে একটু নড়ে চড়ে দাঁড়াল। আহমদ মুসা স্বাভাবিক দ্রুত কন্ঠে বল মিটিং শেষ হয়নিত?
-জি না, একজন প্রহরী জবাব দিল।
-বাজাজ আমাদের ডেকেছেন।
একটু অপেক্ষা করতে হবে আপনাদের জনাব। বলে প্রহরীটি দরজার বাম পাশের দেয়ালে রক্ষিত সুইচ বোর্ডটি উপরে ঠেলে ধরল। সুইচ বোর্ডটি উপরে উঠে গেলে নিচে দেয়ালের সমান্তরাল করে বসিয়ে রাখা একটি কাল বেজের উপর ক্ষুদ্র একটি সাদা বোতাম দেখা গেল। বোতমে চাপ দিতেই ইস্পাতের ভারি দরজাটি নিঃশব্দে খুলে গেল।
একজন প্রহরী খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আহমদ মুসা ইউসুফকে একটি সংকেত দিয়ে, জাফর ও যুবায়েরকে নিয়ে খোলা দরজা পথে ভিতরে ঢুকে পড়ল। প্রহরীটি কয়েকপদ এগিয়ে ছিল মাত্র। পেছনে পদশব্দ শুনে ফিরে তাকাল। কিন্তু ততক্ষণে যুবায়েরের রিভলভার তার কপাল লক্ষ্যে উঠে এসেছে। ভয়ে মুখ তার বিবর্ণ হয়ে গেল। জাফর দ্রুত গিয়ে তার নাকে ক্লোরফর্মের রুমাল চেপে ধরল।
এদিকে ইউসুফ অপর প্রহরীটির কাছ থেকে ষ্টেনগানটি কেড়ে নিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়েছে জাফরের মত একই উপায়ে।
একটি ষ্টেনগান নিয়ে ইউসুফকে গেটে থাকতে এবং অপরটি নিয়ে যুবায়ের ও জাফরকে আসতে বলে আহমদ মুসা দ্রুত মিটিং রুমের দিকে চলল।
সংযুক্ত জনফ্রন্টের সেক্রেটারিয়েটে বসেছে মিটিং। প্রবেশের দরজাটি বন্ধ ছিল না, ভেজানো ছিল মাত্র। দরজাটি ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করল আহমদ মুসা।
একটি প্রকান্ড সেক্রেটারিয়েট টেবিল ঘিরে বসে আছে ১১ জন মানুষ। একটি রিভলভিং চেয়ারে বসে আছে আবদুর রহমান বাজাজ। তার সামনে বিরাট একটি ফাইল। তার পাশের বড় রিভলভিং চেয়ারে বসে আছে জনফ্রন্টের সহ সভাপতি আবদুল করিম হাসুনা। জর্জ বাহাশের অনুপস্থিতে সেই আজকের মিটিং এর সভাপতি। সেক্রেটারিয়েট টেবিলটির অন্য পাশে গোল হয়ে বসে আছে সংযুক্ত জনফ্রন্টের কার্যকরী কমিটির নয় জন সদস্য। দরজা খোলার শব্দে চোখ ফিরাল তারা দরজার দিকে। আহমদ মুসাকে দরজায় দাঁড়ানো দেখে বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে পড়ল সবাই। তাদের বুদ্ধির উপর দিয়ে যেন হিম শীতল এক স্রোত বয়ে গেল। কিন্তু আবদুর রহমান বাজাজ ও আবদুল করিম দ্রুত সামলে নিল নিজেকে। তারা দু’জনেই পকেটে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়াল।
আহমদ মুসা হেসে বলল, আব্দুর রহমান, আবদুল করিম পকেট থেকে আর হাত বের করো না। লাভ হবে না কোনও। বাইরে মোতায়েন তোমাদের সব লোক ধরা পড়েছে, সবদিক ঘিরে ফেলা হয়েছে তোমাদের এ ঘাঁটি।
আহমদ মুসার কথাগুলো শান্ত কিন্তু দৃঢ়। হৃদয়ের প্রতিটি তন্ত্রীতে তা যেন আঘাত করে। নিরস্ত্র আহমদ মুসার এ কথাগুলো যেন সম্মোহিত করল ওদের। আবদুর রহমান কিংবা আবদুল করিম কারুরই হাত পকেট থেকে বের হলো না। মনে হল, আহমদ মুসার কথা তারা অবিশ্বাস করেনি।
জাফর ও যুবায়ের এসে ঘরে ঢুকল। আহমদ মুসা বলল, জাফর ওদের সব অস্ত্র নিয়ে নাও। পাঁচমিনিটের মধ্যে ওদের সকলকে বাঁধা হয়ে গেল। আহমদ মুসা এগিয়ে গিয়ে বাজাজের ফাইলটি তুলে নিল। ফাইলের দিকে মুহূর্তকাল তাকিয়ে বলল, সাইমুমের অবস্থান সমূহের তথ্য যোগাড় করছ কার জন্য বাজাজ, তোমার প্রভু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর জন্য? বলে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকায় বাজাজের দিকে। তারপর বলল, ইসরাইলকে যে সব তথ্য সরবরাহ করেছ, তার ফাইল কোথায়? বাজাজ কোন উত্তর দিল না। আহমদ মুসা বলল, সময় নষ্ট করো না বাজাজ। তুমি তো জান কথা কেমন করে বলাতে হয়, সে পদ্ধতি আমার জানা আছে।
এই সময় পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে ভারী মেশিনগানের শব্দ শোনা গেল। মাত্র মিনিট দেড়েক। তারপর সব নীরব।
বাজাজ বলল, টেবিলের ড্রয়ারের তলায় বোতাম আছে। বোতামে চাপ দিলে টেবিলের নিচে মেঝের কিছু অংশ সরে যাবে, সেখানে পাবে একটি আয়রণ সেল্ফ, তাতে সব পাবে।
আহমদ মুসা জনফ্রন্টের সদস্য সাবির জামালের দিকে চেয়ে বলল, তুমি বোতামে চাপ দাও। সত্যই টেবিলের নিচে আয়রণ সেল্ফ পাওয়া গেল এবং তাতে পাওয়া গেল এক স্তুপ ফাইল। ফাইলগুলোর হেডিং একবার পরীক্ষা করল আহমদ মুসা। এহসান সাবরি এসময় ঘরে প্রবেশ করল।
-সংবাদ কি এহসান? আহমদ জিজ্ঞাসা করল।
-ওরা সকলে আত্ম-সমর্পন করেছে জনাব। বলল এহসান সাবরি।
-বেশ, তুমি রক্তক্ষয় এড়াতে পেরেছ। শয়তানরা তো আমাদের মধ্যে আত্মঘাতি সংঘর্ষ লাগিয়ে আমাদের দুর্বল করতে চায়।
কিছুক্ষন হাসল আহমদ মুসা। তারপর বলল, আমরা এদের নিয়ে চলে যাচ্ছি। তুমি গোটা ঘাঁটি সার্চ্চ করে ওদের নিয়ে এস।
১১ জন বন্দীকে নিয়ে, জাফর, যুবায়ের ও ইউসুফ আহমদ মুসার সাথে আম্মানের ঘাঁটিতে ফিরে এল। আহমদ মুসা তাঁর চেয়ারে এসে বসতেই আলি সাবের এসে জানাল বাদশাহ তাঁর খোঁজ করেছিলেন।
আহমদ মুসা তার পাশে সাদা রং এর টেলিফোনটি তুলে নিল।
-হ্যালো , আহমদ মুসা বলছি।
-আচ্ছালামু আলায়কুম, আবুল হিশাম বলছি।
-ওয়াআলায়কুম ছালাম। জনাব কি আমার খোঁজ করেছিলেন?
-জি, হাঁ। আপনার পাঠানো মেসেজ পেয়েছি। মারাত্মক সংবাদ। শাহ সউদ মিসরের আনোয়ার রশিদ
-জ্বি হাঁ। সব আরব রাষ্ট্র প্রধানের কাছে মেসেজটি পাঠানোর নির্দেশ আমি সংগে সংগে দিয়েছি।
-যাক, আমার ভার লাঘব করেছেন। আচ্ছা জনফ্রন্ট সম্বন্ধে কি চিন্তা করছেন?
-সংযুক্ত জনফ্রন্টের হেড কোয়াটার থেকে এইমাত্র এলাম। জর্জ বাহাশ ছাড়া জনফ্রন্টের কার্যকরী পরিষদের সবাইকে বন্দী করেছি। তাদের হেড কোয়ার্টারের অন্যান্য লোকজনও ধরা পড়েছে। যথসম্ভব দ্রুত জনফ্রন্টের লোকদের গ্রেপ্তার করার জন্য সাইমুমের সব ঘাঁটিতে নির্দেশ পাঠিয়েছে।
-আবদুর রহমান বাজাজ ও আবদুল করিম হাসুনার খবর কি? হাঁ, ওরা ধরা পড়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ আপনানের হাত কে আরো শক্তি শালী করুন।
-দোয়া করুন জনাব, ফিলিস্তিনের মুক্তি যেন আল্লাহ ত্বরান্বিত করেন এবং বিশ্বের মজলুম মানুষের মুক্তির যেন এটা হয় শুভ পদক্ষেপ।
-আল্লাহ সহায়। তিনি সর্বশক্তিমান।
-জনাব, সংযুক্ত আরব কমান্ড এবং নিখিল আরব নিরাপত্তা কাউন্সিলের শীর্ষ বৈঠকের কতদূর?
-সব ঠিকঠাক, তারিখ নির্দিষ্ট করার বাকী আছে।
-আসছে পবিত্র রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখের মধ্যে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।
-দোয়া করুন। রাখি এখন।
-আচ্ছা, খোদা হাফেজ।
-খোদা হাফেজ। টেলিফোন রেখে রিভলভিং চেয়ারেটিতে গা এলিয়ে দিল আহমদ মুসা। ক্লান্তিতে গোটা শরীর ভেঙ্গে আসছে। পূর্বের জানালা দিয়ে আসা স্নিন্ধ বাতাস খু্ব ভালো লাগছে তার। ঘুমে জড়িয়ে আসতে চাইছে চোখ। হঠাৎ চারদিকের নীরবতা ভেঙ্গে মোয়াজ্জিনের কণ্ঠ শোনা গেল। আম্মানের শাহী মসজিদের উঁচু মিনার থেকে ভেসে আসছে আজান। আজানের মধুর ধ্বনি কেঁপে কেঁপে মিলিয়ে যাচ্ছে নিঃসীম নভোমন্ডলের ইথার কণায়। মোয়াজ্জিন ডাকল, হায়া আলাচ্ছালাহ। আহমদ মুসার মন মুহূর্ত ছুটে গেল জেরুজালেমের মুসলিম জনপদে। ওরা কি এই ধ্বনি এমনি করে শুনতে পাচ্ছে? মসজিদুল আকসার মিানার থেকে মোয়াজ্জিন কি এ আহবান জানাতে পারছে নিরুদ্বেগ চিত্তে? চোখের কোণ ভিজে উঠল আহমদ মুসার। ফিলিস্তিনী মজলুম ভাইদের মুক্তির সোনালী দিগন্ত আর কত দূরে? তেলআবিব, হাইফা, জেরুজালেম, ইলাত হেব্রন, গাজা প্রভৃতি শহরের মসজিদের মিনার শীর্ষ থেকে কবে মোয়াজ্জিনের এমনি স্বাধীন কণ্ঠ শোনা যাবে? সুবেহ সাদেরকের স্বর্গীয় স্পর্শে পূর্ব দিগন্ত শুভ্র হয়ে উঠেছে। আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল অজু করার জন্য।