অনুষঙ্গ (তোমারে যে কেন বাসি ভালো)

অনুষঙ্গ

তোমারে যে কেন বাসি ভালো,
সে-সত্য জানার আগে মিলনের মুহূর্ত ফুরাল,
শুরু হল দীর্ঘায়িত বিচ্ছেদের রাতি।
হায়, স্বপ্নসাথী,
শুধায়ো না সে-প্রথম প্রণয়কাহিনী।
সে-দিন বিশেষ ক’রে একমাত্র তোমারে চাহিনি
সর্বনষ্ট মর্ত্যে বা ত্রিদিবে।
সে-দিন নিরুদ্ধ হিয়া জানিত না কারে সমর্পিবে
বিশ্বম্ভর যৌবনের দুর্বহ সঞ্চয়।
সে-দান তো স্মরণীয় নয়,
সে যে উপেক্ষার দান দৈবাগত দিনে।।

শুধু জানি
তব পরিগ্রহণের বাণী
অবেদ্য মর্মরধ্বনি ভরেছিল বিজন বিপিনে;
অকৃপণ করে
বিধাতা ছড়ায়েছিল স্পর্শমণি অম্বরে অম্বরে;
ক্ষণে ক্ষণে
নিশীথ পবনে
অজানা পুষ্পের গন্ধ লেগেছিল অনির্বচনীয়;
দৃষ্টি অতীন্দ্রিয়
দেখেছিল আঁধারের প্রভাস্বর পটে
অধরার চিত্রল লিখন;
উৎকর্ণ চৈতন্য মম শুনেছিল সপ্তাশ্ব শকটে
সৃষ্টিধর করে সঞ্চরণ
নব জীবনের বীজ ব্যোমের পরিধি-’পরে বুনি।।
আরও জানি, হে মোর ফাল্গুনী,
তুমি হেথা নাই ব’লে,
কিরাতের রুদ্র ক্ষুধা বাধা আর পায় না ভূতলে;
নন্দনের প্রতিশ্রুতি মম
ফণিমনসায় ঘেরা উপহাস্য মরুমায়া-সম।
তুমি সঙ্গে নাই,
বিপন্ন যাত্রীরে আজ ভগবান পাসরিল তাই॥

ভুলি নাই তুমি তুচ্ছ কত।
তবু তুমি এসেছিলে আদিম অণুর মতো
সৃষ্টির সানন্দ নৃত্যে আমার অসীম শূন্যতায়।
তাই মোর যৌবনের রাখিপূর্ণিমায়
ক্ষুদ্রতম অভাব তোমার
ফিরায়ে এনেছে আজি জন্ম-জন্মকার
নির্বিকল্প প্রলয়ের ক্ষতি;
আচম্বিতে
ঘুচে গেছে ব্রহ্মাণ্ডের প্রকাণ্ড ছবিতে
স্বৈরবৃত্ত রেখার সংগতি।।

জানি না একদা কেন ভালোবেসেছিলাম তোমারে।
শুধু জানি শিখালে মদির অন্ধকারে
অমৃত মর্তেরই দান, স্বল্পপ্রাণ প্রমোদের কণা
আহরি, জন্মান্ধ করে ভূমাবিরচনা।
জানি, আরও জানি
তোমার ক্ষণিক প্রেমই অন্তিমের অব্যয় পারানি;
উপরন্তু ধরা,
তোমার উপমা ব’লে, মোর চক্ষে এখনও সুন্দরা।।

১৪ এপ্রিল ১৯৩০

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *