অতি দানে বলির পাতালে হলো ঠাঁই
দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপর পুত্র বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদ। প্রহ্লাদের পুত্র বিরোচন এবং বিরোচনের পুত্রের নাম দৈত্যরাজ বলি। তপোবলে সিদ্ধিলাভ করে বলি একজন মহাপরাক্রমশালী রাজা হয়ে ওঠেন। দিগ্বিজয়ী হবার কামনায় তিনি একে একে ইন্দ্রসহ দেবতাগণকে পরাজিত করতে সক্ষম হন এবং ত্রিভুবনের অধীশ্বর হন।
স্বর্গচ্যুত দেবতাগণ স্বর্গরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য বিষ্ণুর শরণাপন্ন হলেন। দেবতাদের কাতর মিনতি উপেক্ষা করতে না পেরে বিষ্ণু কশ্যাপের ঔরসে অদিতির গর্ভে বামনরূপে জন্মগ্রহণ করেন। ইনিই বিষ্ণুর পঞ্চম অবতার বামন (বেঁটে বা খর্বকায়)।
বলি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ মহারাজা। রাজ্যশাসনে তার শৃঙ্খলাবোধ ও দানশীলতা ছিল প্রবাদপ্রতিম। যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠানে তিনি প্রচুর সময় দিতেন। একবার বলিরাজ এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন এবং প্রচার করেন যে, এই যজ্ঞে তার কাছে যে যা প্রার্থনা করবে তাই তিনি পূরণ করবেন। খর্বাকৃতি বামনরূপী বিষ্ণু ব্রাহ্মণের রূপ ধরে এলেন যজ্ঞস্থলে। তিনি বলিরাজার কাছে প্রার্থনা করলেন মাত্র তিন পা (ত্রিপাদ) পরিমাণ ভূমি।
এদিকে দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য যোগবলে দেবতাদের কূটচাল বুঝতে পেরে বলির মঙ্গলার্থে বামনের প্রার্থনা পূরণ করতে নিষেধ করলেন বলিকে। কিন্তু দৈত্যরা তো আর অভিজাত দেবতাদের মতো যখন তখন কথার নড়চড় করে না। আর তাই সত্যপরায়ণ দাতা বলি বামনের ইচ্ছে পূরণে সম্মত হয়ে বললেন, তথাস্তু। তিনি নিজের ক্ষতি হলেও অঙ্গীকার পালনে অসৎ হতে পারেন নি।
অতঃপর বামন তার এক পা দিয়ে স্বর্গ এবং দ্বিতীয় পা দিয়ে জগৎ অবরোধ করে ফেললেন। তারপর নাভি থেকে তৃতীয় পা বের করে সেটি রাখার স্থান দিতে বলিকে অনুরোধ জানালেন। দান করার মতো আর কোনো স্থান অবশিষ্ট নেই। বলি তখন তার মাথা পেতে দিয়ে সেখানে বামনকে তৃতীয় পা স্থাপনের অনুরোধ জানালেন। এভাবে স্বর্গ ও মর্ত্য বামনরূপী বিষ্ণুর আয়ত্তে আসার পর তৃতীয় পা দিয়ে বলিকে পাঠিয়ে দিলেন পাতালে। সেখানেই তিনি স্বজনদের নিয়ে রাজত্ব করেন।
সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সততা অবলম্বন করে দান ও সৎকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি অন্যের কৌশলে যে ভোগান্তির শিকার হয় তা বুঝাতে বলিরাজার পরিণামসূচক এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়।