অতি দর্পে হত লঙ্কা
এখানে লঙ্কা অর্থে লঙ্কেশ্বর রাবণের কথা বলা হয়েছে। মা নিকষার (কৈকসী) উপদেশে রাবণ, বিভীষণ ও কুম্ভকর্ণ—এই তিন ভাই ব্রহ্মার কাছে অমরত্বের বর চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্রহ্মা তাতে রাজি না হওয়ায় রাবণ বিকল্প হিসেবে চেয়েছিলেন দেব, দানব, দৈত্য, যক্ষ, রক্ষ ইত্যাদির কাছে অজেয় ও অবধ্য হবার বর। ব্রহ্মা সেই কাঙ্ক্ষিত বর দিয়েছিলেন রাবণকে। মানুষকে তিনি তৃণবৎ জ্ঞান করতেন বলে সে বিষয়ে রাবণ কোনো বর চাননি 1
বর পেয়ে রাবণ পৃথিবী জয়ের জন্য উন্মাদ হয়ে উঠলেন। প্রথমেই আঘাত হানলেন তার বৈমাত্রেয় ভাই (ভরদ্বাজকন্যা দেববর্ণিনীর গর্ভে বিশ্রবা মুনির ঔরসজাত) কুবের বা বৈশ্রবণের অধিকারভুক্ত লঙ্কাপুরীতে। লঙ্কা থেকে কুবেরকে বিতাড়িত করে তার কাছ থেকে ব্রহ্মাপ্রদত্ত পুষ্পক রথ ছিনিয়ে নিলেন রাবণ। নিজে লঙ্কেশ্বর হয়ে বসলেন সিংহাসনে। যক্ষরাজ কুবের বিতাড়িত হয়ে চলে গেলেন কৈলাসে।
গর্বভরে রাবণ একে একে অবজ্ঞা করতে থাকেন সবাইকে। নর্মদাতীরের হৈহয়রাজ কার্তবীর্যার্জুন, কিষ্কিন্ধ্যার বানররাজ বালী, সূর্যবংশীয় রাজা মান্ধাতা, পাতালের বলিরাজ, যমরাজ, শিবের অনুচর নন্দী সবার সাথেই তার দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ হয়। দেবরাজ ইন্দ্রসহ অন্যান্য দেবতার বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেন। অত্যাচারী রাবণ দেব-দানব ও ঋষিদের কন্যা হরণ করতে থাকেন। বৃহস্পতি পুত্র মহর্ষি কুশধ্বজের তপস্যারত কন্যা বেদবতীকে তিনি হরণ করার চেষ্টা করলে বেদবতী আগুনে আত্মহুতি দেন।
উন্মত্ত রাবণ রাজা মরুত্তের (সূর্যবংশের রাজা) যজ্ঞ পণ্ড করে ঋষিদের হত্যা করেন, সুরথ, গাধি, গয়, পুরূরব ইত্যাদি রাজাকে পরাজিত করেন, অযোধ্যাপতি অনরণ্যকে নিহত করেন, স্বর্গের অপ্সরা রম্ভাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন, নাগগণকে পরাভূত করেন এবং নিবাতকবচ নামক দৈত্যদের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হন। রাবণের অনাচার-অত্যাচার ও অহঙ্কারের আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে।
অতি গর্বে আত্মহারা রাবণ কখনো ভাবেননি যে, দেবতা-দানব-যক্ষ ও রাক্ষসদের হাতে অজেয় ও অবধ্য হলেও তিনি মানুষরূপী রামচন্দ্রের হাতে নিহত হতে পারেন। তার দর্পের কারণে যথাযথ প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা না রাখায় তিনি হত হয়েছেন বলে বাংলায় অতি দর্পে হত লঙ্কা প্রবাদের উদ্ভব।