শৈব দর্শন / শৈবদর্শন / শৈব-দর্শন
এই দর্শনেও ভক্তবৎসল শিবদেবতাই পরমেশ্বর ও জীবগণ পশু বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে। পূর্ব্ব মতে পরমেশ্বরের কর্ম্মাদিনিরপেক্ষ কর্ত্তৃত্ব নির্দ্দিষ্ট হইয়াছে, কিন্তু এতন্মতাবলম্বীরা তাহা স্বীকার না করিয়া, যে ব্যক্তি যেরূপ কর্ম্ম করিয়াছে, পরমেশ্বর তাহাকে তদনুরূপ ফল প্রদান করিয়াছেন বলিয়া পরমেশ্বরকে কর্ম্মাদিসাপেক্ষ কর্ত্তা কহে। ইহা যুক্তি-সিদ্ধও হইতেছে; দেখ যদি কেবল পরমেশ্বরের ইচ্ছাক্রমেই সকল কর্ম্ম সম্পন্ন হইত, তবে জগদীশ্বর অস্মদাদির আহার বিহারাদির উপায়স্বরূপ হস্ত পদাদির সৃষ্টি করবেন কেন? নানাবিধ ভোজনীয় দ্রব্যাদিরই বা সর্জ্জন করিবার প্রয়োজন কি? তাঁহার ইচ্ছা হইলেই ত ভোজনাদি যাবতীয় কর্ম্ম অনায়াসে সুসম্পন্ন হইতে পারিত। এবং যখন দেখা যাইতেছে, কেহ অট্টালিকায় দুগ্ধফেননিভ কোমল শয্যায় শয়ন করিতেছেন, কেহ বা তরুতলে তৃণশয্যাবন্বেষণে ব্যগ্র হইতেছেন, কেহ অমৃততুল্য সুস্বাদু দ্রব্য ভোজন করিয়া তাদৃশ দ্রব্যকেও সামান্য দ্রব্যের ন্যায় প্রত্যাখান করিতেছেন, কেহ বা অন্নাভাবে জঠরানলে দগ্ধ হইয়া দ্বারে দ্বারে মুষ্টিভিক্ষাপ্রার্থনায় ব্যগ্র হইতেছেন, কেহ নৃত্যগীতাদি প্রমোদ পরমানন্দে কাল যাপন করিতেছেন, কেহবা পুত্রদারাদিশোকে ব্যাকুল বা অসহ্য পীড়ায় পীড়িত হইয়া অতিকষ্টে সময়য়াতিপাত করিতেছেন, তখন ইহা অবশ্যই স্বীকার করিতে হইবে যে, তত্তৎ ব্যক্তির বিসদৃশ ফলভোগের কারণ কেবল উহাদিগের পূর্ব্বকৃত সুকৃত ও দুষ্কৃত, নতুবা কখনই এমত ঘটনা ঘটিতে পারে না। দেখ জগদীশ্বর সকলেরই পিতাস্বরূপ এবং হিতৈষী। তাঁহার স্নেহের ন্যূনাধিকভাব কুত্রাপি নাই এবং কাহার সুখ বা কাহার দুঃখ হউক এমন তাঁহার অভিপ্রায়ও নহে। যদি কেবল তাঁহার ইচ্ছাক্রমেই সকলের সুখ হইত, তবে সকলেই সুখী হইত এবং বন্ধ্যার পুত্রের ন্যায় দুঃখ পদার্থ অলীক হইয়া উঠিত। অতএব যাহার যেরূপ কর্ম্ম পরমেশ্বর তাহাকে তদনুরূপ ফলভোগে নিযুক্ত করেন বলিয়া পরমেশ্বর যে কর্ম্মাদিসাপেক্ষ কর্ত্তা তাহার সন্দেহ কি।
কিন্তু ইহাতে এমন সম্ভাবনা করিও না যে, তবে পরমেশ্বরের স্বতন্ত্র কর্ত্তৃত্ব রহিল না। যেমন পৃথিবীশ্বরদিগের পৃথ্বী রক্ষণাবেক্ষণে নিজ অমাত্যবর্গের সহায়তা অবলম্বনেও স্বাধীনতার ব্যাঘাত হয় না, সেইরূপ জগদীশ্বরের স্বাধীনতার ব্যাঘাত হয় না, সেইরূপ জগদীশ্বরের কর্ম্মাদিসাপেক্ষতায় স্বতন্ত্রতার কোন হানি হয় না। অন্যকর্ত্তৃক আদিষ্ট না হইয়া যিনি যে বিষয় সম্পাদন করেন, তাঁহার সে বিষয়ে স্বতন্ত্রকর্ত্তৃতা থাকে। যখন পরমেশ্বর কোন ব্যক্তিকর্ত্তৃক আদিষ্টা না হইয়াই জগম্নির্ম্মাণ করিতেছেন, তখন অবশ্যই পরমেশ্বরের জগম্নির্ম্মাণে স্বতন্ত্রকর্ত্তৃতা আছে, সন্দেহ নাই। অস্মাদাদিভিন্ন যে এক জন পরমেশ্বর আছে তাহা অনুমান-সিদ্ধ। অনুমানের প্রণালী এইরূপ, যে বস্তুর আকার আছে, তাহা অনিত্য ও কার্য্য, আর যে বস্তু কার্য্য হয়, সে সকলই সকর্ত্তৃক হয়, অর্থাৎ তাহার এক জন কর্ত্তা থাকে, যেমন বস্ত্র ও ভূষণাদি। এমত কোন বস্ত্র বা ভূষণাদি দৃষ্টিগোচর হয় না, যাহা কোন ব্যক্তিকর্ত্তৃক নির্ম্মিত নহে। কর্ত্তৃতা সচেতন ব্যতিরেকে কখনই অচেতনের সম্ভবে না। দেখ তুরী তন্তু প্রভৃতি সকলেই বস্ত্রের কারণ বটে, কিন্তু বস্ত্রের কর্ত্তৃতা তন্ত্রবায়ভিন্ন আর কাহারও নাই; ইহাতেই বিবেচনা হয় যে, যখন জগতের আকার দৃষ্ট হইতেছে, তখন জগৎ অবশ্যই অনিত্য ও কার্য্য সন্দেহ নাই। এবং জগৎ যদি কার্য্য হইল, তবে উহার একজন কর্ত্তা আছেন ইহাও অঙ্গীকার করিতে হইবে; কিন্তু তদ্বিষয়ে অস্মদাদির কর্ত্তৃত্ব সম্ভবে না, যেহেতু জগদন্তর্গত অগম্য নিবিড় অরণ্যস্থ বৃক্ষাদি নির্ম্মানে অস্মাদাদির কর্ত্তৃতা নাই, সুতরাং অস্মাদাদিভিন্ন যে এক জন জগন্নির্ম্মাণনিপুণ সচেতন পরাৎপর পরমেশ্বর আছেন তাহার সন্দেহ কি। এবং পরমেশ্বর যে সর্ব্বজ্ঞ ইহাও অসম্ভাবিত নহে। দেখ যে ব্যক্তি যে বস্তু না জানে, কখনই তাহা হইতে সে বিষয় সম্পন্ন হয় না। যখন পরমেশ্বর সফল বিষয় সম্পাদন করিতেছেন, তখন তিনি যে সকল বিষয় জানেন না ইহা কাহার বিশ্বাসাস্পদ হইবে?
যেমত ঘটাদিকার্য্যের কর্ত্তৃত্ব শরীরীব্যতিরেকে অশরীরীর সম্ভবে না তদ্রূপ জগৎকার্য্যের কর্ত্তৃত্বও অশরীরী পরমেশ্বর হইতে পারে না; এ জন্য তাঁহার শরীর স্বীকার করিলে পরমেশ্বর সর্ব্বজ্ঞতা অপরিমিতি শক্তি ও ক্লেশবৈধুর্য্যাদি-গুণাস্পদতার ভঙ্গ হইয়া উঠে, যে হেতু ঐ সমস্ত গুণ শরীরীক সংস্পর্শও করে না, সুতরাং অশরীরী ঈশ্বরকে জগৎকর্ত্তা বলা যাইতে পারে না, এরূপ আপত্তি কেবল জিগীষার কার্য্য বলিতে হইবে; কারণ এমত কিছুই নিয়ম নাই যে, শরীরীব্যতিরেকে অশরীরী কর্ত্তা হয় না; যে হেতু নিজ শরীর সঞ্চালনাদিতে অশরীরী জীবাত্মারও কর্ত্তৃত্ব দৃষ্ট হইতেছে। এবং যাহার প্রাকৃত শরীর, তাহার সর্ব্বজ্ঞতা থাকে না এই মাত্র নিয়ম আছে, নতুন এমত কিছু নিয়ম নাই যে, শরীরী মাত্রেই অসর্ব্বজ্ঞ, পরিমিতশক্তিশালী ও ক্লেশভাগী। অস্মাদাদির ন্যায় পরমেশ্বরের প্রাকৃত শরীর নহে, পঞ্চমন্ত্রাত্মক শক্তিই তাঁহার শরীর। ঈশান, তৎপুরুষ, অঘোর, বামদেব ও সদ্যোজাত, এই পাঁচটি মন্ত্র যথাক্রমে ঈশ্বরের মস্তক, বদন, হৃদয়, গুহ্য ও পাদস্বরূপ, এবং যথাক্রমে অনুগ্রহ, তিরোভাব, প্রলয়, স্থিতি ও সৃষ্টিরূপ পঞ্চ কৃত্যেরও কারণ। এই পাঁচটি মন্ত্র বেদে নির্দ্দিষ্ট আছে। যদিও “পঞ্চবক্ত্র স্ত্রিপঞ্চদৃক্” (অর্থাৎ ঈশ্বরের পঞ্চ বদন ও পঞ্চদশ নয়ন) ইত্যাদি আগম দ্বারা আপাততঃ বোধ হয় যে, অস্মাদাদির ন্যায় ঈশ্বরকেও নয়াদিবিশিষ্ট প্রাকৃত শরীর, কিন্তু উহা বাস্তবিক নহে। ঐ সকল আগমের তাৎপর্য্য এই যে, নিরাকার বস্তুর চিন্তাস্বরূপ ধ্যান হইতে পারে না বলিয়া ভক্তবৎসল পরমেশ্বর ভক্তদিগের ঐ সকল কার্য্য সম্পাদনার্থ করুণা করিয়া কখন কখন তাদৃশ আকার ধারণ করেন।
পতি, পশু ও পাশ ভেবে পদার্থ তিন প্রকার; পতি পদার্থ ভগবান্ শিব, এবং যাঁহারা শিবত্ব পদ প্রাপ্ত হইয়াছেন তাঁহারা, আর শিবত্বপদপ্রাপ্তিসাধন দীক্ষাদি উপায় সকল। পশু পদার্থ জীবাত্মা। ঐ জীবাত্মা মহৎ, ক্ষেত্রজ্ঞাদিপদবাচ্য, দেহাদিভিন্ন, সর্ব্বব্যাপক, নিত্য, অপরিচ্ছিন্ন, দুর্জ্ঞেয় ও কর্ত্তা স্বরূপ। চার্বাক মতাবলম্বীরা কহেন, দেহই জীবাত্মা, দেহাতিরিক্ত জীবাত্মাতে কোন প্রমাণ নাই; কিন্তু এই কথা স্থূলদর্শী বালক দিগের বাক্যের ন্যায় অগ্রাহ্য ও হাস্যাস্পদ। কারণ তাহা হইলে বাল্য কালে দৃষ্ট বস্তুর যৌবনাবস্থায় স্মৃতি হইতে পারে না। দেখ বাল্য, যৌবন ও বার্দ্ধক্য অবস্থাভেদে দেহও ভিন্ন ভিন্ন হইতেছে, সুতরাং দেহকে আত্মা বলিলে ঐ ঐ অবস্থাভেদেও আত্মারও ভেদ স্বীকার করিতে হইবে, আর যে বিষয় পূর্ব্বে জ্ঞাত না থাকে, তাহা কখনই স্মৃতিপথারূঢ় হয় না, পূর্ব্ব জ্ঞাত বস্তুরই স্মৃতি হইয়া থাকে; অতএব যেমন এক ব্যক্তির দৃষ্ট বস্তু অন্য ব্যক্তির স্মৃতিরূঢ় হয় না, সেই রূপ বাল্যাবস্থায় দৃষ্ট বস্তুর যৌবনাবস্থায় স্মৃতি হওয়া অসম্ভাবিত। কিন্তু জীব নিত্য হইলে এ তিন অবস্থাতেই এক জীবের এক কালে দর্শন ও কালান্তরে স্মরণ হইবার বাধা নাই। অতএব আত্মা যে দেহাতিরিক্ত ও চিরস্থায়ী তাহাতে সন্দেহ কি। ইহাতেই প্রতিপন্ন হইতেছে, আত্মাকে ক্ষণিক অর্থাৎ প্রতিক্ষণে ভিন্ন বলা বৌদ্ধ দিগের অপলাপ ও বৃথা বাগাড়ম্বর মাত্র। আরও দেখ, যেমত (এই স্থান বা কাল পর্য্যন্ত আকাশ আছে, এই রূপ নির্দ্দেশ করিয়া) দেশ কালের দ্বারা আকাশের পরিচ্ছেদ করা যায় না বলিয়া উহার নিত্যতা ও পরমমহত্ত্ব প্রতিপাদিত হইয়াছে, সেই রূপ দেশ কাল দ্বারা অপরিচ্ছিন্ন আত্মারও নিত্যতা ও পরমমহত্ব স্বীকার করিতে হইবে। এই রূপে যখন জীবাত্মার পরমমহত্ব সিদ্ধি হইতেছে এবং আকাশের ন্যায় পরমহৎ হইলেই সর্ব্বব্যাপক হয় এই রূপ নিয়ম আছে, তখন জীবাত্মার অব্যাপকতা স্বীকার করা যে জৈনদিগের ভ্রান্তিমূলক তাহা আর বলিবার অপেক্ষা কি? এ স্থলে নৈয়ায়িকেরা কহেন যে “আমি সুখী আমি দুঃখী এই রূপ আত্মবিষয়ক জ্ঞান হয় বলিয়া আত্মাকে মেয়রূপে নির্দ্দেশ করা যাইতে পারে।” কিন্তু ইহাও যুক্তি বিরুদ্ধ হইতেছে; দেখ যে বস্তু মেয় হয়, তাহার মাতা অর্থাৎ তদ্বিষয়ের গাতা তদতিরিক্ত এক জন থাকে; যেমন মেয়স্বরূপ জড় বস্তুর মাতা জীবাত্মা, সেই রূপ জীবাত্মা মেয় হইলে সুতরাং তদতিরিক্তকে তাহার মাতা বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে। এবং জীবাত্মার মাতা মেয় হইলে তাহারও এক জন মাতা স্বীকার করিতে হইবে। এইরূপে নৈয়ানিক মতে অনবস্থা ঘটিয়া উঠে। আর সাংখ্য দর্শনে নির্দ্দিষ্ট আছে যে, জীবের কোন কার্য্য করিবার ক্ষমতা নাই বলিয়া জীব অর্কত্তা; কিন্তু উহাও অগ্রাহ্য ও অপ্রামাণিক। শাস্ত্রে কথিত আছে যে, বক্ষ্যমাণ পাশজাল হইতে মুক্ত হইতে পারিলে জীব ও দৃক্চৈতন্য এবং ক্রিয়াচৈতন্য স্বরূপ শিবত্ব লাভ করিয়া সকল বিষয় দর্শন ও নির্ম্মাণ করিতে পারেন; বোধ হয় সাংখ্যমতানুসারীরা সেই সমস্ত শাস্ত্রে দৃষ্টি পাত করেন নাই, নতুব কেন এমন কথা কহিবেন।
অদ্বৈতমতাবলম্বীদিগেরও কি অসন্দিগ্ধচিত্ততা ও স্বমতস্থাপনে ব্যগ্রতা! দেখ কেহ সুখ স্বচ্ছন্দতাক্রমে সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করিতেছে, কেহ বা অতি কষ্টে কাল যাপন করিতেছে, কেহ অতী তীক্ষ্ণধীশক্তিসম্পন্ন, কেহ বা দক্ষিণহস্ত বামহস্ত জ্ঞান বিহীন, এবং কাহার অত্যন্ত কুটিল স্বভাব, কাহার বা সরল অন্তঃকরণ; এই রূপ জীব সকলের পরস্পর স্বরূপ ও স্বভাবের বৈলক্ষণ্য প্রত্যক্ষ করিয়া কোন্ ব্যক্তি জীবের নানাত্ব বৈলক্ষণ্য প্রত্যক্ষ করিয়া কোন্ ব্যক্তি জীবের নানাত্ব স্বীকার না করিবেন? কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয়ে এই যে, এই সকল দর্শন করিয়াও অদ্বৈতমতাবলম্বীদিগের চিত্তে একবার সন্দেহও হয় না যে জীব নানা; অথবা স্বমতসংস্থাপনব্যগ্রতাই উহাদিগের চিত্ত হইতে সংশয়কে দূরীকৃত করিতেছে, নতুবা উহারা অবশ্যই জীবের নানাত্ব স্বীকার করিত সন্দেহ নাই। পাশপদার্থ মল, কর্ম্ম, মায়া ও বোধশক্তি ভেদে চারি প্রকার। স্বাভাবিক অশুচিকে মল কহে, যেমন তণ্ডুল তুষদ্বারা আচ্ছাদিত হইয়া থাকে, সেই রূপ ঐ মল দৃক্শক্তি ও ক্রিয়াশক্তিকে আচ্ছাদন করিয়া থাকে। ধর্ম্মাধর্ম্মকে কর্ম্ম, প্রলয়াবস্থায় যাহাতে কার্য্যসকল লীন হয় এবং পুনর্ব্বার সৃষ্টি কালে যাহা হইতে উৎপন্ন হয় তাহাকে মায়া এবং পুরুষতিরোধায়ক যে পাশ তাহাকে রোধশক্তি কহে। জীবকে পশুপদার্থ কহে। ঐ পশুপদার্থ তিন প্রকার; বিজ্ঞানাকল, প্রলয়াকল আর সকল। একমাত্র মলস্বরূপ পাশযুক্ত জীবকে বিজ্ঞানাকল কহে, এবং মল ও কর্ম্ম রূপ পাশদ্বয়যুক্তকে প্রলয়াকল, আর মল, কর্ম্ম এবং মায়া এই পাশত্রয়বদ্ধকে সকল কহে। সমাপ্তকলুষ ও সমাপ্তকলুষভেদে বিজ্ঞানাকল জীবও দ্বিবিধ; তন্মধ্যে সমাপ্তকলুষ বিজ্ঞানাকল জীবকে পরমেশ্বর অনুগ্রহ করিয়া অনন্ত, সূক্ষ্ণ, শিবোত্তম, একনেত্র, একরুদ্র, ত্রিমূর্ত্তিক, শ্রীকণ্ঠ এবং শিখণ্ডী, এই কয়েকটি বিদ্যেশ্বর পদে নিযুক্ত করেন। আর অসমাপ্তকলুষদিগকে মন্ত্রস্বরূপ করেন। ঐ মন্ত্র সাত কোটি। প্রলয়াকল জীবও দ্বিবিধ; পক্ক পাশদ্বয় ও অপক্ক পাশদ্বয়। পক্কপাশদ্বয়ের মুক্তি পদ প্রাপ্তি হয়, অপক্কপাশদ্বয়কে পূর্য্যষ্টক দেহ ধারণ করিয়া স্বকর্ম্মানুসাএ তির্য্যঙ্মনুষ্যাদি বিভিন্ন যোনিতে জন্মগ্রহণ করিতে হয়। মনঃ, বুদ্ধি, অহঙ্কার ও চিত্তস্বরূপ অন্তঃকরণ; ভোগসাধন, কলা, কাল, নিয়তি, বিদ্যা, রাগ, প্রকৃতি ও গুণ এই সপ্ত তত্ত্ব; পৃথিবী, জল, তেজঃ, বায়ু ও আকাশ এই পঞ্চভূত; এবং ওই পঞ্চভূতের কারণ স্বরূপ পঞ্চতন্মাত্র চক্ষুঃ, ত্বক্, শ্রোত্র, ঘ্রাণ ও রসনা এই পাঁচটী জ্ঞানেন্দ্রিয়; বাক্, পাণি, পাদ, পায়ু ও উপস্থ এই পাঁচটী কর্ম্মেন্দ্রিয়; সমুদায়ে একত্রিংশত্তত্ত্বাত্মক সূক্ষ্ম দেহকে পূর্য্যষ্টক দেহ কহে। ঐ অপক্কপাশদ্বয় জীবের মধ্যে যাহাদুগের পুণ্যাতিশয় সঞ্চিত আছে, মহেশ্বর অনন্ত তাহাদিগকে অনুগ্রহ করিয়া পৃথিবীপতিত্ব পদবী প্রদান করেন। সকলস্বরূপ জীবও দ্বিবিধ; পক্ককলুষ আর অপক্ককলুষ। ইহার পক্ষে পক্ককলুষ দিগকে মহেশ্বর করুণা করিয়া মন্ত্রেশ্বর পদবী প্রদান করেন। মন্ত্রেশ্বরও মণ্ডল্যাদি ভেবে এক শ আঠার। আর অপক্ককলুষদিগকে মহেশ্বর সংসারকূপে নিঃক্ষেপ করেন।