2 of 3

০৬২. গায়ে নাড়া দিয়ে

গায়ে নাড়া দিয়ে কে যেন উত্তেজিত স্বরে ডাকছে, কুট্টিদা? কুট্টিদা?

ধ্রুব একটা অতল ঘুমের খাদ থেকে উঠে আসছিল। অতি কষ্টে চোখ খুলে তাকাল সে। মাথার ওপর তারাভরা আকাশ, নীচে কঠিন কংক্রিট। এরকম পরিস্থিতি তার কাছে অস্বাভাবিক কিছু নয়। এরকম হতেই পারে। সে আবার চোখ বোজে। শরীরের মধ্যে বিকেলের কেটে যাওয়া নেশা এখন শোধ নিচ্ছে। মাথাটা লোহার মতো নিরেট আর ভারী। তীব্র একটা যন্ত্রণায় খুলে পড়ছে চোখের ডিম। সে আবার চোখ বোজে।

কুট্টিদা’ কুট্টিদা!

কে রে?

আমি রতন। ওঠো, ওঠো শিগগির।

ধ্রুব ভারী বিরক্ত হয়ে বলে, কোন রতন?

আমি রতন। কী হয়েছে তোমার? এখানে কেউ শুয়ে থাকে? ওঠো!

উঃ, কী চাস?

ওঠো! বাড়ি চলো।

ধ্রুব চোখ খোলে। একটা গহন গুহার অন্ধকার থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে সে অস্ফুট স্বরে বলে, কী হয়েছে?

এখানে শুয়ে আছ কেন? কত বড় বাড়ির ছেলে তুমি সে কথা ভুলে যেতে আছে? ওঠো শিগগির!

শরীরটা এমন সেঁটে গেছে ফুটপাথে যে ভোলা অসম্ভব। তবু ধ্রুব প্রাণপণ চেষ্টায় একটু নড়ে। কিছু না ভেবেই সে জিজ্ঞেস করে, রেমিকে শ্মশানে নিয়ে গেছে নাকি?

শ্মশানে! কী যে বলো না! শ্মশানে নেবে কেন?

তবে ডাকছিস কেন? কী হয়েছে?

তোমাকে নিয়ে পারা যায় না। দাঁড়াও, আমি তোমাকে ধরে তুলছি।

রতন লোকটা কে তা ধ্রুব চিনতে পারছে না। তবে লোকটার গায়ে বেশ জোর আছে। বগলের তলায় দুটো হাত ভরে দিয়ে পিছন থেকে এক ঝটকায় তুলে ফেলল তাকে। মাথাটা চড়াৎ করে ঘুরে গেল বর। দপ দপ করতে লাগল চোখের ডিম। মাথাটা ঝুলে পড়ল আলগা অনাত্মীয় একটা জিনিসের মতো। সবচেয়ে বিপদের কথা হল, ধ্রুব নিজের পা দুটোর জায়গায় একটা শূন্যতা অনুভব করল হঠাৎ। তার ধারণা হল, ফুটপাথে শুয়ে থাকার সময় কোনও গাড়ি তার পা দু’খানা কেটে দিয়ে গেছে।

পা! ওঃ, আমার পা!–বলে ধ্রুব চেঁচিয়ে ওঠে।

রতন নামক লোকটা মোলায়েম গলায় বলে, সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করো। পা দুটো অমন ভাঁজ করে রেখেছ কেন?

ধ্রুব চেষ্টা করে। কিন্তু পা দুটো কোথায় তা সে বুঝতে পারে না কিছুতেই। দুটো সঁড়ার মতো জিনিস সে দেখতে পাচ্ছে তলার দিকে। ও দুটোই পা নাকি?

রেমি! রেমি এখনও মরেনি?

কী যে সব বলল তুমি! মরবে কেন?

তা হলে?

রক্ত দেওয়া হচ্ছে। পাঁচজন সার্জেন এসে গেছে। একজন বড় হোমিয়োপ্যাথ আছে। এক তান্ত্রিককে আনা হয়েছে।

অপারেশন?

তা জানি না। তবে কিছু একটা হচ্ছে।

এখন কি রাত?

ভোর চারটে।

ধ্রুব সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ঘুমটা ঝরে পড়ছে শরীর থেকে। আস্তে আস্তে ঝি ঝি ছাড়ার মতো নেশাটা কেটে যাচ্ছে তার। কিন্তু নেশা কাটা কোনও আরামদায়ক অনুভূতি নয়। ব্যথা যন্ত্রণা তেষ্টা হতাশা চাগাড় দিয়ে ওঠে।

হাঁটতে পারবে?

পারব।–বলে রতনের দিকে তাকায় ধ্রুব। চিনতে পারে। চুনীপিসির ছেলে। আপন পিসি নয়, একদা তাদের দেশের বাড়িতে রতনের মা ছিল দাসী। ছোটপিসির খাস দাসী।

ধ্রুব বলল, এবার ছেড়ে দে।

রতন সাবধানে হাত সরিয়ে নেয়। বলে, এই ঠান্ডায় এভাবে শুয়ে ছিলে, সর্দি বসে যায় যদি?

আমার কিছু হয় না। ওদিককার খবর কী?

খারাপ কিছু নয় বোধহয়। বড়কর্তা বসে আছেন। চিন্তা নেই। বহু লোক এসেছে। তুমি বাড়ি যাবে?

ধ্রুব মাথা নেড়ে বলে, না।

রতন হাত দিয়ে ধ্রুবর জামাকাপড় ঝেড়ে দিতে দিতে বলে, তা হলে একটা গাড়ি খুলে দিই! শুয়ে থাকো।

একটা সিগারেট দে তো!

আমি তো খাই না। দাঁড়াও কারও কাছ থেকে চেয়ে আনি।

থাক। বলে ধ্রুব একটা মস্ত হাই তোলে।

বাইরে নিজ্‌ঝুম কয়েকটা গাড়ি দাড়িয়ে আছে শুধু। লোকজন কেউ নেই। এই ঠান্ডায় সবাই লবিতে ভিড় করেছে। শুধু একটা ল্যাম্পপোস্টের তলায় ঠেস দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে জয়। খুবই রহস্যময় এবং আততায়ীর মতো দেখাচ্ছে তাকে।

চোখে চোখ পড়তেই জয়ন্ত বলল, সিগারেট? আমার কাছে আছে। নেবেন?

ধ্রুব উদার গলায় বলে, দাও।

জয়ন্ত এগিয়ে আসে। পকেট থেকে সিগারেট বের করে দেয়। তারপর বলে, আমি এতক্ষণ আপনাকে পাহারা দিচ্ছিলাম।

তাই নাকি?–বলে ফের হাই তোলে ধ্রুব। তারপর বলে, পাহারা দেওয়ার কিছু নেই। আমার অভ্যাস আছে! মাতালদের মুখে কত কুকুর মুতে দিয়ে যায়। এতে কিছু হয় না। ইটস অল ইন দি গেম। রেমির কোনও খবর পেলে?

জয়ন্ত মাথা নেড়ে বলে, না। আমাকে খবর দেবে কে? ভিতরে ঢুকতেই পারছি না। আপনার রিলেটিভরা গোটা নার্সিং হোম দখল করে আছে। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই এমনভাবে তাকাচ্ছে যে, আমি যেন শত্রুপক্ষের লোক।

ধ্রুব সিগারেটটার কোনও স্বাদ পাচ্ছে না। ফস ফস করে বিস্বাদ ঝাঝহীন ধোঁয়া অভ্যাসবশে কয়েকবার টেনে সিগারেটটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে, রেমির একটা খবর নে তো, রতন।

নিয়েছি তো। এতক্ষণ ভিতরেই ছিলাম।

তবু আর একবার যা।

যাচ্ছি। তুমি চলো, গাড়ির মধ্যে শুয়ে থাকবে।

আমার জন্য ভাবছিস কেন? আমি সিদ্ধ মাতাল। এসবে কিছু হয় না।

বাড়ির একটা সম্মান আছে তো!

আচ্ছা যা, আর ফুটপাথে শোব না।

ভিতরে গিয়ে বসতেও পারো।

সেটা অনেকে পছন্দ করবে না। তুই যা। তাড়াতাড়ি খবরটা নিয়ে আয়।

 

রেমি তার সারা জীবনেও এত ফুল কখনও দেখেনি। চারদিক থেকে ফুলেরা কেঁপে ধরেছে তাকে। সাদা, হলুদ, লাল, গোলাপি কত বকমের যে ফুল, সব ফুল রেমি তো চেনে না। যেদিকে চোখ ফেরায় রেমি সেদিকেই শুধু রাশি রাশি থোকা থোকা, গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল। আর কিছু নেই। এত সুন্দর সব গন্ধ যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।

ক্ষীণ কণ্ঠে রেমি বলল, এত ফুল কেন?

একটা কর্কশ পুরুষ-গলায় কে যেন নেপথ্য থেকে জবাব দিল, ফুল তোমার ভাল লাগে না?

লাগে। কিন্তু এত ফুল কেন?

সবাই তোমাকে ফুল দিচ্ছে যে, কী করা যাবে!

আমার শ্বাস আটকে আসছে। ফুল দিচ্ছে কেন আমাকে?

পুরুষ-গলা বলল, আসলে আমরা একটা ফুলের বাগানের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি।

এটা কি বাগান?

এখানে ফুলের চাষ হয়। চলো।

কোথায় যাব?

চলো। হাতটা বাড়াও, আমি ধরছি।

রেমি ভুলেও জিজ্ঞেস করল না ‘তুমি কে?’–জিজ্ঞেস করতে নেই। সে কি জানে লোকটা কে?

না, সে জানে না। তবে মনে হয় এ লোকটা খুব স্বাভাবিকভাবেই তার সঙ্গে আছে। থাকারই কথা যে।

রেমি হাতটা বাড়ায়। ভারী দুর্বল, নির্জীব তার হাত। কাপছে, অবশ হয়ে আসছে। সে হাত বাড়াতেই একটা শক্ত কঠিন কর্কশ ঠান্ডা হাত সেটা ধরল। তারপর আস্তে আস্তে টেনে নিতে লাগল তাকে।

অজস্র বিচিত্র ফুলের রং অন্ধ করে দিচ্ছিল রেমিকে। গন্ধে পাগল হয়ে যাচ্ছে সে। পথ দেখতে পাচ্ছে না, লোকটাকে দেখতে পাচ্ছে না। তবু যাচ্ছে। শুধু যাচ্ছে। ফুলগুলো সরে সরে যাচ্ছে একটু করে। গালে, মুখে, কপালে স্পর্শ করছে বার বার। ভেজা, ঠান্ডা অদ্ভুত স্পর্শ।

পায়ের তলায় কি জল? ঠান্ডা, ভেজা মাটি, গা শিরশির করে, শীত-শীত করে। শিউরে শিউরে ওঠে রেমি। হাঁটে। তার দু’চোখ বেয়ে জল পড়ছে। সে কি কাঁদছে? কেন কাঁদছে?

হঠাৎ সে তার সঙ্গীকেই জিজ্ঞেস করে, আমি কি কাঁদছি গো?

হ্যাঁ।

কেন বলো তো! আমার তো কিছু মনে পড়ছে না!

মনে করে দেখার দরকার কী?

তবে কাঁদছি কেন?

মনের মধ্যে কান্না জমে ছিল বোধহয়। কাঁদো। কাঁদলে চোখের জলে মাটি উর্বর হবে। আরও ফুল ফুটবে।

কথাটা খুবই যুক্তিযুক্ত মনে হয় রেমির কাছে। ঠিকই তো। একথা সে তো ভূগোলের বইতেও পড়েছিল। চোখের জল মাটির উর্বরতা বাড়ায়। ভূগোলের বই? না কি বিজ্ঞানের বই! ঠিক মনে নেই।

আমার পা অবশ হয়ে আসছে কেন গো?

পা?

হ্যাঁ। আমি পা দুটোয় সাড়া পাচ্ছি না। অবশ।

একটু হাসির শব্দ শুনল রেমি। তবে বিদ্রুপের হাসি নয়। মজার হাসি। পুরুষটি বলল, শুধু পা নিয়ে ভাববার কিছু নেই।

তাই বুঝি?

হ্যাঁ, রেমি। শরীরটা কিছু নয়।

তা অবশ্য ঠিক।

যখন শরীর থাকবে না তখন তুমি সব কিছুর মধ্যে ছড়িয়ে থাকবে।

কী রকম গো?

এই ফুল মাটি জল বাতাস সব কিছুই তখন রেমি হয়ে যাবে।

খুব মজা হবে, না?

হাসে ভারী মজা। ভারী আনন্দ।

তখন কেউ ভাল না বাসলেও দুঃখ হবে না, না?

না, একটুও না। কিন্তু তখন তোমাকে সকলেই ভালবাসবে।

বাসবে? ঠিক জানো?

না বেসে উপায় আছে?

রেমি মৃদু একটু হাসল। আবেগের হাসি৷ ঠিকই তো। তখন ভাল না বেসে উপায় আছে? তখন ততা রেমিকেই শ্বাসের সঙ্গে বুকের মধ্যে নিতে হবে। রেমি যে বাতাস হয়ে যাবে তখন। রেমি হয়ে যাবে ফুল। তখন রেমির দিকে তাকিয়েই মুগ্ধ হয়ে যেতে হবে। রেমি হয়ে যাবে মাটি। আর মাটিকে কি অস্বীকার করা যায়? তখন চাবদিকটাই হয়ে যাবে রেমিময়। সবকিছুই রেমি হয়ে যাবে।

রেমি বলল, আমার খুব ভাল লাগছে।

লোকটা জবাব দিল না। শুধু অনুকম্পার একটু হাসি হাসল। রেমি বলল, শুনতে পাচ্ছো?

পাচ্ছি।

আমি কিন্তু আর হাঁটতে পারছি না। এবার চলো ফিরে যাই।

কোথায় ফিরে যাবে?

তাই তো! রেমি ভেবে পেল না, কোথায় ফিরবে। তার যে কিছু মনে পড়ছে না। অনেক ভেবে সে বলল, ফিরে যাওয়ার কথা কি ছিল না!

ওঃ, হ্যাঁ। সেইখানেই তো তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

কোথায় বলো তো!

যেখানে তুমি ছিলে। আকাশ বাতাস মাটি গাছপালার মধ্যে।

তাদের মধ্যে মিশে যাব?

যাবে রেমি। বললাম তো।

কিন্তু আর-একটা জায়গা ছিল যে আমার! রেমি বলে কোনও কোনও লোক ভাবত আমাকে। তারা খুব মজার লোক।

তাদের কাছে আর নয়, রেমি।

নয়?- রেমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

না, রেমির কিছু মনে নেই। মনে নেই সেই কালীঘাটের বাড়ি, যেখানে একটা অদৃশ্য খোঁটায় বাঁধা ছিল তার অস্তিত্ব। কিছুতেই ভেঁড়া যেত না বন্ধন। অথচ কেউ বাঁধেনি তাকে।

রাজার ফ্ল্যাট থেকে এক অবশ্যম্ভাবী পতনের মুখ থেকে জয়িতাকে নিয়ে ফিরে এসেছিল রেমি। তার সর্বাঙ্গ বলে উঠতে চেয়েছিল, ওগো, এই দেখো, এখনও আমি শুদ্ধ, এখনও একগতি, এখনও আমি তোমারই।

কিন্তু কে শুনবে সেই আর্ত নীরব চিৎকার? ধ্রুব? হায়।

সেই দিন জয়িতা অনেকক্ষণ বসে ছিল তাদের বাড়িতে ধ্রুবর সঙ্গে দেখা করবে বলে। দেখা হয়নি। ধ্রুব ছিল না।

অনেক রাত অবধি জয়িতাকে আটকে রেখে গাড়ি করে বাড়ি পাঠিয়ে দিল রেমি। তার খুব ইচ্ছে ছিল, ধ্রুবর সঙ্গে জয়িতার আলাপ করিয়ে দেয়। সে যে রাজার সঙ্গে কোনও অবৈধ সংসর্গ করেনি তার সাক্ষী ছিল তো জয়িতা, তাই।

ধ্রুব ফিরল অনেক রাতে। বেশ মাতাল। তবে বেহেড নয়।

সেই রাতেও রেমি নীচের ঘরে ছিল।

ধ্রুব তাকে দেখে মৃদু হেসে বলল, সব হল? বরফ ভাঙল তা হলে?

রেমি শিউরে উঠে বলে, না, না, ছিঃ।

ছিছিক্কার কেন? গো অ্যাহেড। আবার কাল চলে যেয়ো। রোজ যেয়ো। কিছু হয় না ওতে।

রেমি এর জবাবে কী বলবে ভেবেই পেল না। শুধু অসহায় কাহিল হয়ে বসে ছিল বিছানায়।

ধ্রুব গোটা চারেক অ্যান্টাসিড গিলে বলল, আমি চেয়েছিলাম তোমার মুক্তি। এতকাল পরে সেটা হল।

রেমি আবার আতঙ্কিত হয়ে বলে, না।

মুক্তি হয়নি বলছ?

তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না?

আমার বিশ্বাস-অবিশ্বাস দিয়ে তোমার কী হবে?

আমার সঙ্গে রাজার কিছু হয়নি। কিছু না। পায়ে পড়ি, এ প্রসঙ্গ আজ আর তুলো না।

ধ্রুব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বিছানায় এসে তার পাশে বসে বলল, আজ তোমাকে বেশ ব্রাইট দেখাচ্ছে।

কেন?–রেমি সভয়ে প্রশ্ন করে।

কেন সে তো তোমার জানবার কথা।

মোটেই ব্রাইট দেখানোর কথা নয়। সেই দুপুর থেকে তোমার জন্য বসে আছি। এতক্ষণ জয়িতা ছিল।

জয়িতা কে?

রাজার ভাগ্নী।

ও।

চেনো!

দেখেছি। ও এসেছিল কেন?

তোমার সঙ্গে দেখা করতে।

কেন? আমার সঙ্গে ওর কী দরকার?

ও তোমার অ্যাডমায়াবার।

তাই নাকি?

তোমার তো অনেক অ্যাডমায়ারার। আজ সব শুনলাম।

ধ্রুব মৃদু একটু হাসল। তারপর অস্ফুট গলায় বলল, গার্লস…!

কথাটা শেষ করল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, আমার কথা থাক। তোমার কথা বলো।

আমার কী কথা?

ডিটেলস।

কীসের ডিটেলস?

সব। যা ঘটল তার সব। যদি অবশ্য আপত্তি না থাকে।

ঠিক এই সময়ে রেমির রাগ হল। সত্যিকারের রাগ। এই মাতাল, চরিত্রহীন, অস্থিরমতি পুরুষটির জন্য ভিতরে এক গভীর ও যুক্তিহীন ভালবাসার কারণ খুঁজে না পেয়ে নিজের ওপরেও তার এক তীব্র রাগ হল। দুই রাগ মিলে মিশে আচমকাই ফুঁসে উঠল সে।

তোমার ঘেন্না হয় না! ঘেন্না হয় না জিজ্ঞেস করতে? আমাকে কী মনে করো তুমি?

বলতে বলতে রেমি ধ্রুবর ওপর ঝাপিয়ে পড়ে আঁচড়ে কামড়ে জামা কাপড় ছিঁড়ে একটা ছেলেমানুষির ঝড় তুলে দিল।

প্রথমটায় ধ্রুব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। বিছানায় পড়ে গিয়ে রেমির আক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা করল কিছুক্ষণ। তারপর দু’হাতে রেমির দু’হাত চেপে ধরে বলল, নেশাটা কাটিয়ে দেবে নাকি?

দেব। সব নেশা কাটিয়ে দেব।

কেন?

তুমি কেন ভালবাসবে না আমাকে?

এ কি গায়ের জোরের জিনিস, রেমি?

আমার কোনও জোর নেই?

না। আজ আর নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *