স্বভূমি – নবনীতা দেবসেন
‘স্বভূমি’ উপন্যাসেরও কেন্দ্রে রয়েছে এক অসামান্য নারী, আলো। পরিবারের মধ্যে সে—ই প্রথম স্বপ্ন দেখতে শিখেছিল এবং শিখিয়েছিল। ভাই—বোনে দু’জনেই ছিল দুর্দান্ত মেধাবী আর থিতু হয়েছিল বিদেশে। কালো আমেরিকায়, আর আলো কানাডায়। যদিও আলোর বয় ফ্রেন্ড ছিল মার্কিন আর একমাত্র মেয়ে লালী জন্মসূত্রে পেয়েছিল কানাডার নাগরিকত্ব। আলোর মধ্যে কিন্তু ছিল স্বভূমির প্রতি তীব্র আকর্ষণ ও ভালোবাসা। এই ভালোবাসা সে শুধুমাত্র নিজের পরিবারের নয়, ভাইয়ের পরিবারেও ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। নিজের প্রিয়জনদের প্রতি আলোর তীব্র ভালোবাসাই তার স্বামী, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, তাদের সন্তানেরা, দেশে বৃদ্ধ বাবা—মা, সবার মধ্যে এক গূঢ় বন্ধন জিইয়ে রেখেছিল। স্বভূমির প্রতি আলোর এই আত্মীয়তাবোধই ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও তাদের কাউকে স্বভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেয় নি। কিন্তু মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছর বয়েসে বিমান দুর্ঘটনায় আলোর মর্মান্তিক মৃত্যু এই বিচ্ছেদের আশঙ্কা জাগিয়ে তোলে। কিন্তু আলোর মৃত্যু অন্যরকম পরিণতি পায়, তার স্মৃতিই হয়ে ওঠে পরস্পরের যোগসূত্র, যে স্মৃতি থেকে স্বভূমিকে বিচ্ছিন্ন করা অসম্ভব। উপন্যাসের শেষে আলোর সন্তান দাদু—দিদার কাছে চিঠি লেখে। এই সন্তান কখনও স্বভূমির সঙ্গে আত্মীয়তা বোধ করেনি, শেকড়চ্যুত হয়েই বাঁচতে চেয়েছিল। আলোর মৃত্যু তাকে শেকড়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়, মায়ের স্মৃতির কাছে ফিরতে গিয়ে আসলে সে স্বভূমির কাছেই ফিরে আসে।
Leave a Reply