• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

সংবিধিবদ্ধ ভালোবাসা – কোয়েল তালুকদার 

লাইব্রেরি » কোয়েল তালুকদার » সংবিধিবদ্ধ ভালোবাসা – কোয়েল তালুকদার 
সংবিধিবদ্ধ ভালোবাসা  (কাব্যগ্রন্থ) - কোয়েল তালুকদার 

সূচিপত্র

  1. ১. তুমি ছুঁয়ে দাও
  2. ২. চিরবদ্ধ অভিমান
  3. ৩. অপ্রেয়সী এক রজনীগন্ধা
  4. ৪. মায়া
  5. ৫. সংবিধিবদ্ধ ভালোবাসা
  6. ৬. একালের চর্যাপদ
  7. ৭. মোগল হেরেম কেঁপে ওঠে
  8. ৮. প্রেম বুভুক্ষুর আগুনে জ্বলে
  9. ৯. জোনাকিরা জ্বলে উঠুক
  10. ১০. স্টপ ইট
  11. ১১. এসো হাত পাতো
  12. ১২. আকাশের সব নীল
  13. ১৩. ভালোবাসি
  14. ১৪. অসম্পূর্ণা নও
  15. ১৫. হাজার বছর পরে
  16. ১৬. ছন্দে গীতিতে স্মৃতিতে
  17. ১৭. শোনায়নি কোনো গান
  18. ১৮. দ্রোহী 
  19. ১৯. ওসিয়তনামা 
  20. ২০. তোমাকে খুঁজি আমি
  21.  ২১. বারান্দায় 
  22. ২২. হৃৎকম্পন নেই
  23. ২৩. ভালোবাসার পাগলামিগুলি
  24. ২৪. হারাবার ঠিকানা
  25. ২৫. অসমাপ্ত
  26. ২৬. বলো, ভালোবাসি
  27. ২৭. শুধু একবার 
  28. ২৮. তবুও স্বপ্নের তরে
  29. ২৯. এখানে নোঙর 
  30. ৩০. শিরোনামহীন
  31. ৩১. আগুন পলাশ
  32. ৩২. অস্তিত্ব
  33. ৩৩. তোমাদের কাছে একদিন
  34. ৩৪. প্রতিশ্রুতি
  35. ৩৫. দুপুরের পংক্তিমালা 
  36.  ৩৬. প্রিয় অমৃতা প্রীতম 
  37. ৩৭. রাত্রি নিশীথের সঙ্গীত
  38. ৩৮. ঘুম নেই
  39. ৩৯. জলবাস
  40. ৪০. হাজার দিন রাত্রি
  41. ৪১. নাগকেশরের গন্ধ
  42. ৪২. উত্তরপুরুষ
  43. ৪৩. চেয়ে দেখি
  44. ৪৪. অস্তাতলে যাত্রা
  45. ৪৫. অভিশাপ দেব না
  46. ৪৬. খোলা জানালা
  47. ৪৭. করোনাকালীন লিমেরিক
  48. ৪৮. কবুলনামা
  49. ৪৯. গন্ধর্ব-নগরীর হেম
  50. ৫০. তুমি মরিও
  51. ৫১. অমর্তলোকের তুমি
  52. ৫২. প্রবঞ্চিতের গল্প
  53. ৫৩. এখনে বসন্ত
  54. ৫৪. সেও এক মৃত্যু
  55. ৫৫. সকালের আলিঙ্গনে
  56.  ৫৬. বিসর্জন
  57. ৫৭. পদরেখা
  58. ৫৮. জলপ্রপাত হবো
  59. ৫৯. অভিযাত্রিনী
  60. ৬০. বিষণ্ণতা নেই

সংবিধিবদ্ধ ভালোবাসা  (কাব্যগ্রন্থ) – কোয়েল তালুকদার 

উৎসর্গ –

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি জসীমউদ্দিন হলে আবাসিক ছাত্র হওয়ার নিবেন্ধন ফরমে স্থানীয় একজন রেফারেন্সের নাম লিখে দিতে হয়েছিল, সেখানে লিখেছিলাম – ইকবাল হোসেন বাদল।

এই গ্রন্থখানি আমার সহপাঠি বন্ধু ইকবালকেই উৎসর্গ করলাম।

****

১. তুমি ছুঁয়ে দাও

এই!
আমি কী একেবারেই শুকনো জলহীন নদী হয়ে গেছি?
কোনও কী স্রোত নেই সেই নদীতে?

পা নামাও তুমি জলে,
বুদবুদ করে জল উথলে ভরে উঠবে নদী।
যতবার ডুবতে চাও ডুববে
যতবার মরতে চাও মরবে
সাঁতরাবে রাজহংসের মতো, ভেসে ভেসে
চলে যাবে অথৈ গহীনে।

আমি কী কেবল বালিয়াড়িতে পড়ে থাকা নিষ্প্রাণ ঝিনুক? তুমি কী তাই মনে করো?

ছুঁয়ে দাও, স্পর্শ করো আমাকে,
দেখবে — এক এক করে সব ঝিনুক ফুল হয়ে ফুটে উঠবে, তুমি সেই প্রস্ফুটিত ফুলের সুবাস নিতে পারো,
হৃদয়ের ফুলদানিতে সাজাতে পারো,
গন্ধে মাতাল হয়ে পাপড়িগুলো ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে পারো।

আমি কী সেই চন্দন, যে পুড়ে ছাই ভস্ম হয়ে গেছি? তুমি কী পোড়া ছাই মনে করো আমাকে ?
কোনই কী উত্তাপ নেই?

ছুঁয়ে দেখো আমাকে–
দাউদাউ করে লেলিহান হয়ে জ্বলে উঠব,
তুমি সেই আগুনে পুড়তে পারো, জ্বলতে পারো,
ছাইভস্ম হয়ে উড়ে যেতে পারো কোনও
অমরাবতীর দেশে।

তুমি কী আমাকে নিষ্প্রভ ধ্রুবতারা মনে করো?
কোনই কী ঔজ্জ্বল্য নেই আমার ?

কক্ষপথে এসো, এসো দ্রাঘিমাতে,
আমার ছায়াপথ আলোয় আলোয় ভরা,
আমরা দুজনই সেই আলোয় পুণ্য করব আমাদের দেহমন, জ্যোতির্ময় করব প্রেম, তুমি এসো ।

আমি যে এখনও পূর্ণতোয়া নদী, প্রস্ফুটিত ফুল, সুবাসিত চন্দন ও উজ্জ্বল ধ্রুবতারা।

২. চিরবদ্ধ অভিমান

আমার সমস্ত কন্ঠস্বর উচ্চকিত করে তোমাকে এত করে ডাকলাম —
তুমি শুনলে না।
সমস্ত চাহনি প্রজ্জ্বলিত করে তোমার দিকে এত করে তাকিয়ে রইলাম —
তুমি চোখ মেলে দেখলে না।
রক্তকরবীর রক্তাক্ত সৌরভ দিয়ে তোমাকে এত
করে ভালবাসলাম —
তবুও তুমি ভালোবাসলে না।

তোমার প্রতি চিরবদ্ধ অভিমান আমার –
সুগন্ধি লোবান আর সুরমার গন্ধ যতই ঘিরে থাক খাটিয়ার পাশে –
তুমি তার সুবাস নিতে আসবে না
কফিনের কাছে দাঁড়িয়ে যতই তুমি কাঁদতে থাকো
সেই চোখের জল আমার বন্ধ চোখ খুলে চেয়েও দেখবে না।

৩. অপ্রেয়সী এক রজনীগন্ধা

কাল আমার পুরোনো এই বাড়িটায় একটি দোয়েল নেমে এসেছিল ঝাঁঝা দুপুরে,
সে ডানা ঝাপটালো, পালক ফেলল, ঘুরে ঘুরে দেখল আঙ্গিনাটা।
ভালো লেগেছিল তার নরম পালক, পিপাসিত চঞ্চু, ভৈরবী রাগের মতো শিস।

কে রজনীগন্ধার লজ্জাহীন গোপন সুবাস ছড়িয়েছিল ! ভালো লেগেছিল তার রাতের বেলার বুভুক্ষু গন্ধ নিতে,
ভালো লেগেছিল তাকে পুণ্য জল ধারায় ভিজিয়ে দিতে, পৃথিবীর নির্জনে কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফেলতে পাপড়ি।

কে অমৃত জলের প্রস্রবণে ভেসেছিল , কে দিয়েছিল প্রথম প্রস্তাব দ্বিধা উপেক্ষা করে, তা জানবে কী করে মূর্খ দোয়েল, আর অপ্রেয়সী এক রজনীগন্ধা!

৪. মায়া

চাঁদ আছে কী নেই, তারা জ্বলছে কী জ্বলছে না
কে দেখবে তা আজ আলোহীন এই ছায়ার নীচে দাঁড়িয়ে?

কে আকাশের গায়ে লিখে গেল —
‘চলে যে যায়, সে চলে যায় দূরে বহু দূরে, নিস্প্রভ পদচিহ্ন ফেলে,
কে কোথায় ক্রন্দনধ্বনি মিশিয়ে দিচ্ছে এই শহরে
অযুত গাড়ির হুইশেলের শব্দ তরঙ্গে ….’

কোথায় কার ছায়া পড়ে থাকল,
কোথায় কোন্ পাতা মর্মর শুষ্ক হাওয়ায় কার দীর্ঘশ্বাস মিলিয়ে গেল…
শুধু মায়াগুলো তার পড়ে থাকল, লুকানো গেল না কোথাও।

৫. সংবিধিবদ্ধ ভালোবাসা

তোমাকে এখানেই আসতে বলেছিলাম
এখানেই এই খোলা আকাশের নীচে
বিকেলের সোনালি রোদ্রের ঘাসের উপরে বসতে বলেছিলাম
তুমি বসেছিলে ঠিকই, নিয়েছিলে আসন।

তুমি একবার সূর্যের দিকে মুখ ফেরালে
একবার মেঘের লাল আভার দিকে
আমি সন্ধ্যার পাখিদের ডেকে বলি চোখ বন্ধ করো
রাত্রির তারাদের বলি তোমরা জ্বলে ওঠো
যৌবনবতী চাঁদকে বলি তুমি তোমার আলো দাও।

হে প্রিয়তমা, কোথায় কিভাবে ভালোবাসতে হবে?
কিভাবে বর্ণনা করব তোমার স্তুতি?
আমি আকাশের কানে যা বলি নদীর কাছে তা বলি না
তোমার নিরব ভাষা কী পিয়ানোর সুর?
তোমার সারা শরীর জুড়ে উছলে ওঠে যে সিম্ফোনী
সেই সিম্ফোনীর কম্পন কী শুধু আমার শরীরের?
নাকি তোমারও?
নাকি এসবই আমাদের সংবিধিবদ্ধ ভালোবাসা।

৬. একালের চর্যাপদ

রচয়িতা —
লুই কোয়েল কঙ্কনপা

তোমারে কহিনু যবে প্রত্যুষ কালে
ভানু ওঠেনি পূব আকাশের ঢালে।।
চক্ষু মুদিয়া সুধাইলে শ্বাস ফেলিয়া
তরুতলে তখন ময়ুর পেখম মেলিয়া।।
তুমি বিনা কভু এ নাহি হামারি ঘর
সুরুজ কিরণ পড়িল তোমারি পর।।
কহিনু পিরিতির বাঁধনে দোঁহা দুজন
ঈশ্বর তাহাই করিল সুখের এ জনন।।
দুজন দুজনের রহিব দুজনের তরে
এই পণ মাঙ্গিনু প্রেমাঞ্জলিতে ভরে।।
কোয়েল রচিল এই কালের প্রেমপদ
হাসে লুই হাসে চর্যাকবি কাহ্নপাদ।।

৭. মোগল হেরেম কেঁপে ওঠে

ঘরের মধ্যে গুমোট অন্ধকার আলো জ্বলেনি
কৃষ্ণপক্ষ শক্লপক্ষ দু’পক্ষেই অন্ধকার
বসে আছি খাটের এই পাশে ভাবলেশহীন।

দিয়াশলাই খু্ঁজি বালিশের নীচে
আলো জ্বালাই, ধরাই সিগারেট।
সিগারেটের টানে জোনাকীর মতো আলো জ্বলে ওঠে
ঈষৎআলোয় দেখি- ওপাশে শুয়ে আছে রমণী একজন,
কণ্ঠে তার মুক্তার মালা করছে ঝিকমিক
হাতে তার রূপার বাজু পায়ে নুপুর।

সিগারেট টানছি নির্বিকার, ঐ মেয়ে ভিখারী নয়
সে শুয়ে আছে পাশেই মসৃন নগ্নতায়।

ঘাগরায় ঢেকে আছে উরু, বক্ষযুগল উন্মোচিত
কোন্ গোপন গহ্বর থেকে দ্যূতি ছড়ায় কোহিনুর
মোগল হেরেম যেন কেঁপে ওঠে
জ্বলে ওঠে ঘর, দগ্ধ হয় শয্যা, ঝলসে যায় শরীর।

৮. প্রেম বুভুক্ষুর আগুনে জ্বলে

এক বিকেলে আমরা হঠাৎ প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে উঠেছিলাম
আমি প্রথমেই ছুঁয়ে দেখছিলাম তোমার হাত
তুমি চোখ বন্ধ করে থাকলে।

আকাশের বিনম্র মেঘ সরে গেল
আমি মুহূর্তে বুঝতে পারি দীপ্তমান মানব অস্থি
তোমার ভিতরের সব বিন্যাস
যেখানে অলকানন্দার সুবাস বিন্দু বিন্দু ঝরে পড়ছে।

আমার শক্ত উদ্বাহু হাত
ধীরে ধীরে ধাবমান হলো তোমার দিকে
তুমি নৈঃশব্দে আসমানের ছায়ায় শুয়ে থাকলে
তোমার শরীরের কোমল কিনারায় পাড় ভাঙ্গছে তখন।

আমার হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে আসে
তোমার আন্তঃসিমানা থেকে বহিঃসিমানায়
তোমার সকল কক্ষপথ পেরিয়ে সুনির্মল নাভি তলে
সকল গোপন প্রান্ত রেখায়।

আমি অনুভব করি দেহের সকল তপ্ত দাহে
শীৎকারের সকল হ্রেষা ধ্বনিতে
প্রেম বুভুক্ষুর ক্ষুধার আগুনে জ্বলে আমাদের সকল শৌর্য বীর্য একসময় পুড়ে খাক হয়ে গেল।

৯. জোনাকিরা জ্বলে উঠুক

তোমার সব ভালোবাসা আমাকে দাও
সব স্বপ্ন, আমি চলে যাব পৃথিবী থেকে দূরে
যেখানে বিদ্বেষ নেই
তোমার সমস্ত রূপ মাধুরী, সব সৌরভ আমাকে দাও
আমি চলে যাব আকাশে ভেলা ভাসিয়ে
দূর তারার দেশে, যেখানে নেই কালপুরুষ।

তোমার দেহবল্লরীর সমস্ত বাঁকে
আমাকে পরিব্রাজক হতে দাও
আমার আঙ্গুলের জোনাকিরা জ্বলে উঠুক
রজহংসরা ভেসে বেড়াক জলস্রোতে
যেখানে নদী মিশে যায় শরীরের মোহনায়
সেই জল ও নদীতে আমাকে ভাসতে দাও
আমি চলে যাব।

১০. স্টপ ইট

রূপবতী রমণীর কাছে যাসনে যুবক
ঐটি আত্মহণনের পথ, যাসনে ,স্টপ ইট!
রাতের নীলে নীলকণ্ঠ পাখি হোসনে
পাগলা মেহের আলী হয়ে বলিস না –
‘তফাৎ যাও, দুনিয়া সব জুট হ্যায়।’
যুবক, তুই হেমন্তের সুর ছবি আর গান
বসন্তের ঐ ঘূর্ণী হাওয়ার ধুলি লাগাসনে
ওখানে বিষের সাপ, ছোবল তুলে আছে
যাসনে ঐ রমণীর কাছে – স্টপ,স্টপ ইট।

১১. এসো হাত পাতো

হাতটা এগিয়ে দাও।
রক্তকুচের রং দিয়ে লিখি তোমার নাম। লিখি তুমি আমার যা হও তাই।

নাম লেখালিখি ছিল আমার ছোটবেলার অভ্যাস। মাটিতে আঁচর কেটে লিখতাম প্রিয় ফুলের নাম,
পাখির নাম, নদীর নাম।
মনে মনে কতজনকে যে কত নাম রেখেছিলাম। জানত না কেউ-ই তারা।

মা বলত, মাটিতে আঁচড় কাটতে হয় না।
অমঙ্গল হয়। মা এখন নেই। কোথায় কোন অপার্থিব মেঘছায়ায় সে ঢেকে আছে কে জানে!

এখন কিন্তু একটাই নাম। তোমাকেই শত নামে ডাকি। কখন কোন নামে ডাকি মনেও থাকে না।
যে সব নামে ডাকি, সেই নামগুলোই লিখে দেব তোমার হাতে।

এসো। হাত পাতো।

১২. আকাশের সব নীল

আমি প্রতিদিন বিস্ময়ে দেখি-তুরাগ পাড়ের কাশবন
বালি মাটিতে ফুটে থাকা তুচ্ছ ঘাস ফুল
দেখি দিয়াবাড়ির আকাশ,শুনি কানপেতে সন্ধ্যার শব্দ,
কপালের উপর তোমার উড়ে পড়া চুল
দেখি স্বপ্নের মধ্যে ভালোবাসার কাতরতা।

ঘর থেকে বের হওয়ার বাঁশি শুনি
ধূসর বসন্ত সন্ধ্যায় যদি তুমি ডাক দাও
উড়ন্ত শশারের মতো স্বপ্ন নিয়ে উড়ে যাই
আকাশের সব নীল তখন লালচে হতে থাকে।

তোমাকে সাথে নিয়ে যে সন্ধ্যা আমি দেখি
যে রাত দেখি- বিমুগ্ধ প্রণয়ের যে কাতরতা
চোখের উপর চোখ রেখে বুঝতে পারি-
এই ক্লান্তির শহরে আমাদের সব প্রেমই অম্লান।

১৩. ভালোবাসি

তোমাকে ভালোবাসি।
এই কথাটি আর কাউকে বলতে ইচ্ছে
করে না।

তোমাকে ভালোবাসি।
এই কথাটি কারোর কাছ থেকে শুনতেও ইচ্ছে করে না।

তোমাকে ভালোবাসি।
এই কথা বলার পর কথা না রেখে চলে যায় শেষমেশ।

যারা কথা রাখবে বলে মনে করি তারাও
বলে না —
তোমাকে ভালোবাসি।

১৪. অসম্পূর্ণা নও

তুমি অর্ধাঙ্গিনী নও, অসম্পূর্ণাও নও, তুমি সর্বাঙ্গিনী সম্পূর্ণ রমণী। তোমার শরীর ঘিরেই আমার বসবাস। কেউ যদি কুৎসা রটায়, রটাক।

বুকের উপর তোমার আগুন পলাশ জ্বলে ওঠে, 
খসখস শব্দে এলমেল হয় শাড়ি রাতের বাতাসে
শালবন থেকে ঝরা পাতা কুড়িয়ে এনে ঢেকে দেব তোমার অস্পর্শ পুণ্যভূমি। 

ময়ুরপালক এনে মাথায় সাজাবো, যাব না কখনো ছেড়ে ছায়াপথে হেঁটে অন্যগ্রহে, রয়ে যাব পৃথিবীর উপর তোমার কাছে। 

তোমাকে সঙ্গে করে একদিন সমুদ্র ভ্রমণে যাব 
বালিয়াড়িতে হাঁটবে তুমি, ছলাৎঝিলিৎমিলি জলের শব্দে সন্ধ্যা নামবে যখন —-

তখন দুজনেই মৌন মুখর, দুজনেরই সামনে আলো 
নিভু নিভু জলরাশি, কোনো উদাসীনতা রেখো না, যতই নামুক অন্ধকার!

ঘরে এসে সযত্নে জ্বালিও তুমি প্রদীপখানি।

১৫. হাজার বছর পরে

আমি কোনো স্বপ্নের কথা বলছি না
কোনো কল্পনার কথাও বলছি না
প্রাগঐতিহাসিক কোনো ইতিহাসের কথাও নয়
কোনো লোকগাঁথার কল্প কাহিনী নয়।
আমার দু’চোখের সামনে যা দেখেছি
তাই বলছি—

পৃথিবীর প্রান্তর জুড়ে সবটাই যেন একটি ফুলের বাগান। গোলাপ চন্দ্রমল্লিকা আর মাধবীরা ফুটে আছে।দখিনা হাওয়ায় সুবাস ছড়ছে চারদিক। সাদা শাড়ির আ্ঁচল উড়িয়ে কে যেন আসছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, জন্মান্তরের পরিচিত কেউ হবে….

সেই মুখ, সেই চোখ, সেই চুল, সেই ভ্রুযুগল ! হঠাৎ মনে হলো– আমার দেহ, আমার আত্মা ক্লোন করে নিয়ে গেছে হাজার বছর পরের কোনো পৃথিবীতে। যেখানে দেখতে পাচ্ছি  এই ফুল, এই বাগান, আর অস্পষ্ট এই রমণীকে।

১৬. ছন্দে গীতিতে স্মৃতিতে

যমুনার পাড়ে এখনও নাকি সন্ধ্যা নামে 
বেতস সুগন্ধায়,
তোমার কথা মনে পড়ে শহরের চা কফি 
খাওয়ার সন্ধ্যায়।

সেই কবে ফেলে এসেছি তোমাকে
ঐ নদীটির স্রোতবক্ষে,
জীবনের এই অস্তবেলাতেও  রয়েছ 
তুমি অন্তরে সুরক্ষে।

আবার যদি কখনও ফিরে যাই ঐ
নদীটির তীরে,
দেখা কী পাবো সেখানে কোন ছিন্ন 
পাতার নীড়ে।

কোথাও খুঁজে পাবো নাকো তোমায়
কোন নামেই ডেকে,
স্বপ্নগুলো রেখে আসব পথের উপর 
পথের ধুলিতে ঢেকে।

এই দেহ মন এখনও যে কেন দোলে
দখিনা উদাস হাওয়ায় 
খেলাঘর ভেঙে গেছে সেই কবে তবু
তুমি আছ মর্মর মায়ায়। 

১৭. শোনায়নি কোনো গান

একবার চাঁদ কেঁদে ওঠে একবার সরোবর
কেঁদে ওঠে-
কত গান গাওয়া হল পূর্ণিমা রাতে
কেউ শোনেনি কোনো গান, না কোনো বোষ্টুমী
না কোনো সন্ন‍্যাসী।

কত বর্ষা কত বসন্ত চলে গেছে
কতো রাগ, কতো ভৈরবী সুর হারিয়েছে
কৃষ্ণপক্ষ রাতে-
একবার হৃদয় কেঁপে ওঠে, একবার দু’চোখ
জলে ভরে ওঠে।

চাঁদও ডুবে গেছে, সরোবরের জলও শুকিয়ে গেছে
পাহাড় অরণ্যের ঝড় ঝঞ্ঝা পথে
কেউ আসেনি আর, গায়নি কেউ কোনো গান কারো কানে কানে।

১৮. দ্রোহী 

তোমাকে ভালোবাসতে যেয়ে দ্রোহী হয়েছি
আমার আর বন্ধু হতে চায় না কেউ                                                        ভালোবাসা দিবসও হয়েএ গেছে তাই বন্ধুহীন।
 ,
আমি ভক্ত ছিলাম ঈশ্বরের
তারচেয়ে বেশি আসক্ত হয়ে গেছি এখন তোমার
তোমাকে ভালোবাসতে যেয়ে তাই দ্রোহী হয়েছি ঈশ্বরের।

তোমার বুকে জন্মেছে লাল গোলাপ, 
কেমন মৌতাত গন্ধ তার 
ভালোবাসার দিনে ফুলের তাই প্রয়োজন হয় না
দ্রোহী হয়ে গেছি তাই সকল ফুলদের কাছেও।

১৯. ওসিয়তনামা 

ভালোবাসব বলে যে ওসিয়ত আমরা করেছি
তার যেন বরখেলাপ না হয় 

আমি তোমার প্রেমিক হওয়ার জন্য নিয়তবদ্ধ 
ঠোঁটে নাগলিঙ্গমের রক্ত জমে আছে 
আজ ভালোবাসা দিবস —
এসো আলিঙ্গনবদ্ধ হই ভালোবাসায়।

আমার যা কিছু প্রেমময় তার সবটাই তোমার ,
উঠে দিব সব ব্যবচ্ছেদের ছেদ, দেবার নেবার তুমি সঙ্গী আমার, 
পাথরে পাথরে ঘষে জ্বলে ওঠে যে আগুন
আমরা সে আশুনে ভস্মিভূত করি আমাদের দেহ। 

বদনাম যা হবার হোক 
চিৎকার করে বলব তুমি আমার প্রিয় প্রিয়তমা।

যদিও তুমি আমার, 
নও তুমি  অন্য কারোর  
বিশ্বলোক থেকে তুলে আনলাম তোমকেই
তোমারই কম্পিত দেহ শিহরিত করে আমাকে।

তারপর  আর কোনো কথা নেই —

তারপর আমরা আমাদের মিলন পর্ব শেষ করে
ভালোবাসার ওসিয়তনামায় স্বাক্ষর করি।

২০. তোমাকে খুঁজি আমি

স্বপ্নের ভিতর নয় স্মৃতি হাতড়িয়েও নয়
পুরনো শ্যাওলা পরা প্রাচীরের গায়ে তোমার নাম লেখা খুঁজি, যে নামটি আগাছায় ঢেকে গেছে।
বহুকাল আগের ছেঁড়া কবিতার খাতায় কেঁপে কেঁপে লেখা পঙক্তিমালায় তোমার রূপ লাবণ্য খুঁজি,
খুঁজি উদ্বেগ হয়ে অ্যালবামে রাখা ধুসর মলিন তোমার  সাদাকালো ছবি।

এই শহর দিনে দিনে অচেনা হয়ে যায়, চেনা নদী দূরে সরে যায়
অপরাহ্ণ বেলায় অকাল সন্ধ্যা নেমে আসে, অসময়ে দুচোখ ভরে ঘুম চলে আসে। 

কেউই ফিরিয়ে দিতে পারেনা আর ভোরের আকাশ 
নিঝুম দুপুরের বিমুগ্ধ কথকতা
নিশুতি রাতের সুখ প্রণয় কথা,
ক্লান্ত অবসাদে জড়িয়ে ধরা সেই অনিঃশেষ শান্তি।

রাত্রির মধ্যাহ্নে ঘুম ভেঙে যায়, জেগে দেখি প্রিয় মুখ, 
মায়া করা সেই চোখ, সেই আনত চেয়ে থাকা,
শহরের রুক্ষ বৃক্ষরাজি বলে- সেই ছায়া-মায়া তুমি 
আজ পাইবে কোথায়? 

আমার জাগরণে, আমার চৈতন্যে দূর বহুদূর থেকে  পায়েলের শব্দ শুনতে পাই, সন্তর্পণে তুমি হেঁটে আসো, 
যাকে দেখি– সে তোমাকে চিনিতে পারি না যে!
যারে খুঁজি দেখিতে আমি পাই না তারে!

 
২১. বারান্দায় 

তোমাকে ভালোবাসি, 
এই কথাটি তোমাকে আমি  বোঝাতে পারিনি। 

যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাগানবিলাস ফুল ছুঁয়ে বলেছিলাম, ভালোবাসি। সেই  কথাটি বিশ্বাস করলে না তুমি। 

ভালোবাসি এই কথাটি বিশ্বাস করেছিল সেদিনের  ঝাউবনের হরিৎ পাতা, গাঁদা ফুল, শিশির ভেজা ভোরের হাওয়া আর হলুদ প্রজাপতি। 

যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমাকে বলেছিলাম ভালোবাসি, সেই বারান্দায় এখন অন্য কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

সেই বারান্দাটি এখন আর আমাদের নেই।

২২. হৃৎকম্পন নেই

সারারাত ধরে বাতাসের শব্দ
সারারাত ধরে পায়ের শব্দ
চূড়ির শব্দ, শিঞ্জিনীর শব্দ
সারারাত ঘুম জেগে থাকে
সারারাত স্বপ্ন জেগে থাকে–

স্বপ্নের মধ্যে তোমার যে মুখ আমি দেখি
তোমার ঠোঁটের চুম্বন স্পর্শের যে মদিরা
সেখানে কোনো হৃৎকম্পন নেই।
                                                     কোনো শব্দ শুনে আর কান পাতি না
কোনো স্পন্দনই জাগায় না শরীরে দোলা,
রাতের বোধিমূলে দেখি না তোমার হিরণ্য নগ্ন পোষাক
নির্ঘুম রাত্রির চাূহনিতে তোমাকে আর কোথাও
খুঁজেও পাই না।

২৩. ভালোবাসার পাগলামিগুলি

সকালবেলা হয়ত আমার আগে ঘুম ভেঙেছে, 
তখনও যদি ঘুমিয়ে থাকে তার সারারাতের
নির্ঘুম দুটি চোখ
আমি তার চোখের পাতায় স্পর্শ দিয়ে বলি —
জাগবে না? আমাকে দেখবে না? ভালোবাসবে না? 

ঘর হতে বেরিয়ে যাব, 
সে আমার টাইয়ের নট ঠিক করে দিচ্ছে,
বোতাম লাগিয়ে দিচ্ছে কোটের,
চুলের গন্ধ আসছিল আমার নাকে,
মাথা ভর্তি চুলে মুখ রেখে বলি —-
যেতে ইচ্ছা করছে না, এসো ভালোবাসি।

স্নানের পর হয়ত সে চুল শুকা্চ্ছে 
তখনও টপ টপ করে চুল থেকে ঝরে পড়ছে জল
আমি হয়ত এসেছি বাহির থেকে, 
শরীরে আমার ঘামের গন্ধ, সার্টে লেগে আছে ধূলো
তার শীতল বুকে তখন উষ্ণতা রেখে বলি —-
এসো ভালেবাসি, আবারও স্নান করো আমার সাথে।

বিকেল বেলা পার্কে হাঁটছি 
ইউক্যালিপটাসের পাতা ঝরে পড়ছে তার শাড়ির উপর, দুটো শালিক বসে আছে ঘাসে
মাধবীলতা জড়িয়ে আছে সোনালের ডালে
ছাতিমগাছের পাতার ফাঁক দিয়ে মুখে পড়ছিল  বিকেলের রোদ, 
সেই মৌন বিকেলে কানের কাছে মুখ রেখে বলি —-
চল যাই ঐ হাস্নাহেনার ঝাড়ে
ভালোবাসো শালিকের মতো, মাধবীলতার মতো জড়িয়ে।

সন্ধ্যায় জ্বালাতে দেইনা সন্ধ্যা বাতি
আঁধার নামে দুজনের মাঝে, কথা সব থেমে যায়
নৈঃশব্দ ঝুমঝুম করে ঘরের ভিতরে 
পাখিদের গান বন্ধ হয় তারও আগে, 
আমি তার চোখে দেখি সন্ধ্যাতারার আলো,
বিমুগ্ধ মুখ তুলে তাকে বলি —- 
আঁধার নামতে দাও, রাত আসতে দাও, আমাদের ভালোবাসাবাসি হবে।

২৪. হারাবার ঠিকানা

মাঝে মাঝে মনে হয় এই ঘর সংসার ছেড়ে,
এই শহর ছেড়ে, 
এই দেশ ছেড়ে, 
এই পৃথিবী ছেড়ে কোথাও চলে যাই।  
যেথায় গেলে কোনো ঘর নেই, 
মায়া নেই, 
বন্ধু নেই, 
প্রিয় কেউ নেই। 
যেথায় কিছু করবার নেই। 
কিছু পড়বার নেই। 
কিছু শুনবার নেই।
কিছু দেখবার নেই।

মনে হয়, সমস্ত মায়া পুড়ে ছাই করে
চলে যাই অচেনা পথে —-
মনে হয়, বিলুপ্ত সে মায়ায়
সমস্ত ক্লান্তি ছেড়ে
কারো মুখচ্ছবি মনে না নিয়ে হারিয়ে যাই।

২৫. অসমাপ্ত

এসেছিলে আচম্বিতে। চলে গেলে নিঃশব্দে। 
ধূসর রঙ ছড়িয়ে অস্তমিত সূর্যের মতো অস্তদিগন্তে মিলিয়ে গেলে। 

বসন্তসন্ধ্যা ঘন হয়ে আসে আজও। জোনাকির ঝংকারে প্রতিদিন শুনি —- এই বুঝি সে এলো, এই বুঝি এলো। 
মালবিকা শুধু একবার এসো তুমি, অরণ্যের পথ বেয়ে অন্তহীন এই কালস্রোতে। 

এসে পূর্ণ কর, এসে চরিতার্থ কর — অসমাপ্ত চুম্বন তোমার।

২৬. বলো, ভালোবাসি

একবার শুধু  ভালোবাসবার চেষ্টা করো —-
পৃথিবীর দু’টো সুন্দর যেন ক্লেদের না হয়
আমার চৈতন্য জুড়ে রাঙ্গা হয়েছে পলাশ শিমুলে,
সন্ধ্যাবেলায় আলো জ্বালাতে গিয়ে
সন্ধ্যা মালতির দিকে চেয়ে বলেছি
তুমি সুন্দর।

আমার সমস্ত অহংকার দিয়ে এই বিশ্ব জগতে
তোমাকে দিয়েছি অমরত্বের আসন,
যদি ভালো না বাসো নিঃসঙ্গ হব
ধুলো হয়ে যাব পথের,
তাই একটিবার বলো – ভালোবাসি।

২৭. শুধু একবার 

তুমি শুধু একবার খুলে দাও হৃদয়ের কপাট
এই উচ্ছল যুবকের সামনে, বন্ধ করোনা দরজা
একবার খুলে ফেলো লজ্জার অবগুন্ঠণ।

তোমাকে দেখাব কিভাবে ভালোবাসতে হয়
সব তছনছ করে, সব ভেঙ্গেচুরে গড়তে হয় শরীরশিল্প
হৃদয় ভাঙ্গতে হয় হৃদয়ের গহীনে যেয়ে।

আমি হাঁটু মুড়ে দু’হাতে পেতে চাই স্বর্ণরেণুর স্পর্শ
ভুলে যাওয়া ঢের ভাল স্মৃতি কাতর যন্ত্রণা
তুমি এই উন্মূল যুবকের বুকে মাথা রাখো
তোমার সব মণিকাঞ্চন বিলিয়ে দাও নিভৃতে।

তোমাকে পেতে চাই জলের মতো, নদীর মতো,
নুড়ি পাথর গড়িয়ে পড়ার ঝনঝন শব্দের মতো, 
স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার শিহরণের মতো —
অন্তহীন স্পর্শে জেগে উঠুক আমার প্রাণ।

২৮. তবুও স্বপ্নের তরে

তোমাকে ভালোবাসার মতো হৃদয় নেই
হৃদ স্পন্দন নেই
স্বপ্ন নেই
কোথাও প্রেম নেই 
ঘর নেই
শান্তির মতোন শান্তনার তরে
মানুষ নেই।

তবুও পৃথিবী স্বপ্নের মতোন, 
রাত্রির অন্ধকারে নক্ষত্রের দিকে চেয়ে থাকি
শুধু ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে পাওয়ার জন্যে।

২৯. এখানে নোঙর 

বন্দরে জাহাজ দাড়িয়ে আছে ভেঁপু বাজিয়ে আমায় ডাকছে
তুমি এসে ধর আমর হাত তোমার হাতে। 
তারপর …
জাহাজ সাগরের স্রোত ছুঁতে ছুঁতে চলে যাবে
অচেনা বন্দরে
অকূলে ভাসতে ভাসতে মনে হবে
দূরের ঐ বন্দর আমাদের নয়
তুমি তখনও ধরে আছ আমার হাত, মনে হবে এই জলধি আমাদের
এই জল আমাদের, এখানেই আমাদের নোঙর।

৩০. শিরোনামহীন

যে জলে উন্মাতাল ঢেউ নেই, 
আমি সেই নির্জিব জলে কী আমার রাজহংস 
ভাসাতে পারি ? 
বিন্দু বিন্দু স্বেদ কণা ঝরতে ঝরতে যদি উত্তাল হয় দিঘিও
সেখানেও যে সমুদ্র স্বাদ পাব তার নিশ্চয়তা কী! 

যদি সে উর্বশী না হয়, যদি না হয় অহল্যাও
আমি পাষাণই থেকে যাব প্রেমে কিংবা অপ্রেমে।

৩১. আগুন পলাশ

পার্ক রোড ধরে হাঁটতে হাটঁতে আজ যখন বাসায় ফিরছিলাম, তখন মনে মনে কয়েক লাইন কবিতা লিখেছিলাম। 

লিখেছিলাম চমৎকার কিছু পঙক্তি!

বাসায় এসে যখন খাতায় লিখতে বসি, তখন সেই পঙক্তিগুলি আর মনে করতে পারছিলাম না। 

কী লিখেছিলাম আমার মনের সেই খাতায়?

একদিন তপ্ত দুপুরবেলায় তুমি আগুন পলাশ বনে এসে দাঁড়াবে। রাঙা পলাশের আবীর মাখবে তোমার গালে।  তোমার বুক দুরুদুরু। আমার নামে কাজল দিবে চোখে, আদর মেখে নেবে তোমার ঠোঁটে। জুঁই ফুল দিয়ে তুমি চুলের বিনুনি গাঁথবে, খোঁপায় গুজবে হলুদ গোলাপ। 

এই কথাগুলো তখনকার কবিতার নয়। মন থেকে সেই অপূর্ব সুন্দর কথাগুলি মুছে গেছে।

আমি কবিতার খাতা বন্ধ করে দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়াই। কী আশ্চর্য! দেখি, তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছ।  বেনীতে জুঁই, খোঁপায় তোমার হলুদ গোলাপ, মুখে পলাশ রেণু। 

এ যে সত্যি!
বসন্ত যে এসে গেছে। আগুন পলাশ ফুটে আছে আমারই দরজার সামনে।

৩২. অস্তিত্ব

এখানে তোমার অস্তিত্ব ছাড়া কোনো ছায়া নেই
হাওয়ায় যে ঘ্রাণ সে তোমার শরীরের গন্ধ 
নিঃশ্বাসের যে শব্দ তা বহুকাল আগের একসাথে পথচলার শব্দের মতো —

দৃষ্টি সীমায় যতদূর চোখ যায় সেখানে তোমার  ছায়ামূর্তি, 
ক্ষীণ স্পন্দন যা শুনি তা তোমার প্রাণের।

এখানে দুটো প্রাণ ছাড়া অন্য কোনো দৃশ্য নেই
শব্দ বলতে আমাদেরই ভালোবাসার শব্দ
প্রতিধ্বনি যা তা আমাদের কথোপকথনের।

পথে যখন নেমেছি পথই নিয়ে যাবে গন্তব্যে —
এসো হাত ধরো, আমরা নিঃশঙ্ক চিত্তে এগুতে থাকি,
আমাদের এই পথ চলা থামবে না।

৩৩. তোমাদের কাছে একদিন

পিতা, এখানেই তুমি শুয়ে আছ মিশে গেছ
এই মৃত্তিকায়,
এখানকার সব মাটি দুর্বা ঘাসে ঢেকে গেছে–
ঠিক তোমার বাম পাশেই শুয়ে আছে– প্রিয়তমা পত্নী তোমার,
খেঁজুর গাছের পাতার ছায়া পড়েছে
তোমাদের উপর।

আঁধারের ভিতর তোমরা ঘুমিয়ে আছ —
তোমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায় না ঝিঁঝিঁ পোকাদের গানে
কিংবা ভোরের পাখিদের ডাক শুনে–
কোথায় তোমাদের সেই কাফনে মোড়ানও দেহ ?
যা খাটিয়ায় করে বহন করে আমিই এনেছিলাম একদিন,
এই মৃত্তিকা তলে মিশে গেছ, আত্মাও মিশে গেছে ঘাসে।

এই যে তোমাদের কাছে আজ আমি এখানে এসেছি
শুনেছ কি আমার পায়ের শব্দ? পেয়েছ কি —
আমার হৃৎ কম্পনের ধ্বনি? আমার দীর্ঘশ্বাস?
কিংবা মোনাজাতের সময় আমার ক্রন্দন?

ঘাসের আচ্ছাদনের মতো জড়িয়ে থাকতে ইচছা করে
আমিও একদিন আসবো,
ঘাস হয়ে জড়িয়ে থাকব তোমাদের কাছে।

৩৪. প্রতিশ্রুতি

ডাইরীর পুরনো পাতা উল্টাতেই একজায়গায় দেখতে পাই —
দুর্গম পথ মাঝে পথ হারিয়ে যখন পথ খুঁজছিলাম, তখনই তোমার দীপ্ত উচ্চারণ —
‘ আমি চেয়ে আছি, ঠিক তোমার পথের দিকেই, ধরো তুমি আমার উদ‍্যোত হাত, পথ হারাবে না।’

আরেক জায়গায় অস্পষ্ট লেখা — যদি শান্তি না পাও,
যদি শান্ত্বনা না চাও, 
দুঃখের অন্ধকারে যদি সুখ দেখতে না পাও
তবে আমি প্রদীপ শিখা জ্বালিয়ে ধরব।’

আরো কিছু লেখা আছে —
‘পাড়ি দিতে হবে অথৈ নদী, হাল ভাঙে যদি, জীর্ণ বাদাম ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, যদি যেতে না পারি তোমার কাছাকাছি।’

‘কি এক আশ্চর্য ঘোর লাগা আবেশে তুমি তোমার হাত দুটি হাতে রেখে অকম্পিত স্বরে বলেছিলে —
মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে বলব, ‘আমি তোমার, আমি তোমার আছি। আমি তোমারই থাকব।’

৩৫. দুপুরের পংক্তিমালা 

বসন্তে পাতা ঝরে, বসন্তেই আবার নতুন করে পল্লবিত হয় বৃক্ষ — ভালোবাসা চলে গেলে ভালোবাসা আসে, রাজা থাকলে যেমন রানী আসে —
আসলে কথাটা কেমন হলো! কথাটা হবে — সব ভালোবাসাই মিথ্যা হয় না।

এক কমলিত ঊষা প্রহরে কেউ একজন বিগলিত প্রেমকণ্ঠে বলেছিল — ‘জীবন জীবনকাল আমি তোমার হয়ে থাকব।’ এরপর রুপালি জলের ঢেউ তুলে কত ভালোবাসা সে ঢেলে দিল। 

তারপর সে একদিন  চলে গেল সব স্রোতধারা থামিয়ে দিয়ে। কিন্তু তার রেখে যাওয়া ভালোবাসা কী সে নিয়ে যেতে পেরেছে? 

আসলেই পারে নাই —
ভালোবাসার চুম্বন, আলিঙ্গন, নিমগ্ন প্রেমময় মুহূর্তগুলি কেউ কখনও ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে না, এই ভালোবাসাগুলি কখনও মিথ্যা হয় না।

 ৩৬. প্রিয় অমৃতা প্রীতম 

আমার বাড়ির নম্বর আমি তোমাকে দেবো না
কীভাবে কোন পথ দিয়ে আসতে হয়
তাও বলব না
বাড়ির সদর দরজায় থাকবে না আমার কোনও নামফলকও, চিনতে পারবে না তুমি ঠিকানা।

তারপরও যদি তুমি আসতে চাও, 
তাহলে শহরের প্রতিটি বাড়ির দরজায় এসে কড়া নাড়বে, 
সব বাড়ির মানুষদের সাথে কথা বলবে-
যে বাড়ির মানুষদের মুক্ত মনের হবে
যে বাড়ির মানুষদের আত্মায় আভাস পাবে ভালোবাসার
মনে করবে, সেই বাড়িটিই আমার, 
ঐ বাড়িতেই আমি থাকি।

কিন্তু অমৃতা, তুমি কোনও দিনই কোনও পথ দিয়ে কোনও পথ চিনে
আমার ঠিকানায় আসতে পারবে না কখনও ! তুমি এখন অনেক পথের দূরে!

৩৭. রাত্রি নিশীথের সঙ্গীত

পাথরও কোমল ফুল হয়ে ফুটে ওঠে তোমার ভালোবাসায়। আমি সে ফুল সাজিয়ে রাখি পরমানন্দে
হৃদয় কুঠিরে।  
তুমি গন্ধ ঝরিয়ে যাও,
কী যতনে বুকে তুলে নাও সন্ধ্যা মালতি।
রাতের তারা ঝিলমিল আকাশকে সাক্ষী রেখে, 
কী সহজেই তুমি বলতে পারো —
‘আমি তোমাকে ভালবাসি!’

তুমি পূর্ণিমা নিশীথিনী, 
তুমি হয়ে ওঠো রাত্রি নিশীথের সঙ্গীত —
যা জীবনব্যাপী শুনি আমি কান পেতে। 

৩৮. ঘুম নেই

সারারাত ঝরেছিল বৃষ্টি-
ঝুমবৃষ্টির শব্দে শুনতে পারিনি কোনও ফুল ফোটার গান
সারারাত তোমার পায়ের শব্দ বাজেনি
জানালায় লাগেনি এসে দমকা হাওয়া–
সারারাত ছিল তোমার পুরনো চিঠির।

স্বপ্ন দেখব বলে যখন ঘুম এসেছিল চোখে
স্বপ্নহীন ছিল সব ঘুম–
কাল সারারাত কোনও ফুলও ফোটেনি,
স্বপ্নও আসেনি।

৩৯. জলবাস

এই সমুদ্র দেখে মনে হয় এখানেই জলবাস আমার
এর উচ্ছাস, এর অতল গহবর, এর গর্জন, এর ভৈরবী নিনাদ
আমাকে কাছে ডাকে,
কতকাল অপেক্ষায় ছিলাম নদী হয়ে মোহনায় মিশব
কিন্তু পারিনি নদী হতে।
আজ এখানে এসে তোমার কূলে বসে আছি
তোমার উদাত্ত আহবান আমার প্রাণে জাগে
তুমি টেনে নাও তোমার জলের বুকে, হে জলধি!

৪০. হাজার দিন রাত্রি

হাজার বছর আমরা কেবল গল্প করেছি
হাজার বছর আমরা তাকিয়েছিলাম দুজন দুজনার মুখের দিকে

যদিও আমরা গান শুনতে পারতাম
কবিতা লিখে সময় কাটাতে পারতাম
হাজার বছর আমরা বসে থেকেছি ঘাসের উপর
হাজার বছর নক্ষত্রেরা ঝরে পড়েছে 

আমরা ভালবেসে পাথর হতে পারতাম
হতে পারতাম পারিজাত মধুমঞ্জরী
বৃষ্টি হয়েছে কত
তুষার পড়েছে কত
রোদ্দুর লেগেছে কত
জ্যোৎস্না ছুঁয়েছে কত
হাজার বছর আমরা জেগেই ছিলাম
স্বপ্ন দেখিনি কেউই

আমরা গল্প করেই সময় কাটায়েছি 
দুজন ছিলাম দুজনের মুখোমুখি
দুজন ছিলাম সমুদ্রমন্থনেও 

একবারও কী দুজন আলিঙ্গনে জড়াতে চেয়েছি?
একবারও কী কাছে টানতে চেয়েছি দেহ বৃত্তে? 
হাজার বছর কেবলই কী গল্প ছিল? 
সে যে আনন্দ বেদনার হাজার দিন রাত্রি ছিল।

৪১. নাগকেশরের গন্ধ

            
শিমুল দেখলেই রক্তভূক হয়ে উঠি
এই শহরে কোথায় পাবো শিমুল ?
তোমার সাদা জবায় এখন বসন্তকাল
তুমি হয়ে উঠেছ তাই রক্তকরবী ।

বসন্ত চলে যাক —
আসছে গ্রীস্মে তুমি রাধাচূড়ার আবির মেখে থেকো
আমি আসব কাছে — আমার শরীরে থাকবে তখন
বঙ্কিম রূপের নাগকেশরের গন্ধ। 

৪২. উত্তরপুরুষ

হীরা মাণিক‍্যের মুকুট পরে দাঁড়িয়েছিল এক রাজকুমার, 
এক রাজ‍্যহীন অপরাজিত কবিও সে, 
তার হাতে ছিল পূর্ব পুরুষদের অভিজ্ঞান, শতাব্দীর হেম অগ্নি।

সে সুজলা মাঠে বুঁনতে চেয়েছিল সুফলা ফসল,
করতলে রেখেছিল প্রত্নবীজ, সে চেয়েছিল মহামায়ার নাভীমূলের এক খন্ড উর্বর ভূমি,
চেয়েছিল একটি উত্তরপুরুষ।

হে রাজ রাজ‍্যশ্বরী প্রিয়তমা আমার,
তুমি আমাকে মাটির ছোঁয়া দাও, মহাকাল থেকে তুলে এনে এক দন্ড সময় দাও, 
আমি তোমাকে হেম শস্যের বীজ দেব। 

তুমি তোমাকে উৎকর্ষিত কর, 
প্রস্ফুটিত কর
সৌরভ ছড়াও অন্তর্লীনে, অন্তর শরীরে, সমুদ্র মন্থনে ফুটে উঠুক পারিজাত — আমার ভূমিপুত্র আমার ভূমিকন‍্যা।

৪৩. চেয়ে দেখি

পথ চলতে চলতে এখন আমি ক্লান্ত
এখন মনে হয় কেউ এসে আমার হাতটি ধরুক
কেউ ছায়ার মতো পাশাপাশি থাকুক।

এখন পরিপাটি করে কাপড় পরে থাকতে ইচ্ছা করে
মাথার চুলগুলো আঁচড়িয়ে রাখি
নখ, দাঁত, চিবুকও ঝকঝকে রাখি
চোখ কন্ঠ গ্রীবা স্মিত থাকুক
শরীরে মেশানো থাকুক সুগন্ধি আতর,
চলে যাবার সময় নিজেকে যেন অসুন্দর না লাগে। 

এখন আর ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছা করে না
মনে হয় সারাক্ষণ জেগে থাকি
জেগে থেকে চেয়ে দেখি এই পৃথিবীকে 
আর দেখি তোমার মায়াবী মুখখানি।

৪৪. অস্তাতলে যাত্রা

জীবনের এই পথ চলতে কত বাঁক যে পেরুতে হয়। এক বাঁকে সুখ, আরেক বাঁকে দুঃখ। এক বাঁকে প্রেম, অন‍্য আরেক বাঁকে বিচ্ছেদ। বাঁকে বাঁকে কত ব‍্যর্থতা, কত গ্লানি, কত যে দীর্ঘশ্বাস।

কত ঘাত পেরিয়েই তবে এই জীবন। তবুও জীবনের জন্য কত মায়া, কত প্রবল আকুতি বেঁচে থাকার! এই পৃথিবীর ধূলোর উপরে পড়ে থাকবার কত যে প্রচেষ্টা।

অস্তাচলের শেষ আলোর উপর কোনও ধূসর ছায়া পড়ুক, তা চাই না। তারপরও আবছায়া এসে পড়ে অস্তযাত্রার পথের উপর। আমার যে পথ চলতে ইচ্ছে করে  ঐ অস্তাচলের আঁধারের দিকেই।

৪৫. অভিশাপ দেব না

( ভারতের উত্তর প্রদেশের মূখ্য মন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ কর্ণাটকে এক জনসভায় বলেছেন– সংখ্যালঘূ মেয়েদের কবর থেকে তুলে এনে ধর্ষণ করতে। এর বিরুদ্ধে  পশ্চিম বঙ্গের কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যয় একটি প্রতিবাদী কবিতা লিখেছেন, যা সারা ভারত জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। আমারও কেমন যেন একটা দায় হলো একটি কবিতা লিখার। লিখলাম এই কবিতাটি। শ্রীজাতের কবিতার মতো অতো সুন্দর হয়তো হয় নাই। আমার এই কবিতাটি কোলকাতা কেন্দ্রীক অনলাইন গ্রুপ ‘গুরুচন্ডালী’তে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। আমার সেই কবিতাটি এখানে পোস্ট দিলাম।)

‘অভিশাপ দেব না’

যোগী, কি ভয়ঙ্কর লালসা তোমার ! আত্মাহীন প্রাণ, মৃত্তিকায় মিশে গেছে যে দেহ
তাকে তুমি ধর্ষণ করবে ! কামাতুর চোখে তুমি বিধেঁছ আজ ত্রিশূল
ছি ! যোগী, তুমি ভোগী হতে পারো, তাই মৃত রমণীর সাথে রতিক্রীড়া ?
এতই মাংসভূক তুমি? ক্ষুধার্ত কীট তুমি মলের, শকুনও, ছি !

জানোয়ার সঙ্গম করে জানোয়ারকে
কুকুর করে কুকুরীকে, পাখি করে পাখালীকে
এ সবই তাদের পবিত্র সঙ্গম
যোগী, তুমি জানোয়ারও নও, তুমি কুকুরও নও
তুমি কি মানুষ ? নাকি সন্ন্যাস ?
সন্ন্যাসও সঙ্গম করে রূপবতী কোনো বোষ্টুমীকে।

এ কেমন উত্থিত লিঙ্গ তোমার ! স্পন্দনহীন মৃত যোনী বুভূুুক্ষু ! ছি !
তোমার নোংরা হাত খুঁজবে মৃতের স্তন, জঙ্ঘা-
পবিত্র গীতার পাতা আজ ছিন্নভিন্ন হয়ে মহাকালের আকাশে উড়ছে
সীতা সন্ত্রস্ত হয়ে রাম রাম নাম ঝপছে
মা দূর্গা লজ্জায় আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকছে
গান্ধীজীর অহিংস বাণী হিন্দুকুশ পর্বতের প্রস্তুুরে মাথা ঠুকছে
তোমার কন্যা, জায়া, জননীরাই নির্লজ্জ কেবল ! ছি !

ছি ! যোগী, তুমি কোথায় প্রায়শ্চিত্ত করবে? কোথায় করবে পাপমোচন?
মহামতি শিবের কাছে যাবে ? তোমার লিঙ্গকে করবে কর্তন ?

কোলকাতার প্রিয় বান্ধবী সবিতা মালবীকে আমি বলেছি, মন্দিরে যেতে–
আমিও যাবো মসজিদে- প্রার্থনা করব তোমার জন্য– তুমি যেন মানুষ হও,
তোমাকে আমরা অভিশাপ দিতে চাই না,ঘৃণাও করতে চাই না।

২৩/৩/২০১৭ ইং
উত্তরা, ঢাকা। 

৪৬. খোলা জানালা

জানালা খুলে রেখেছি, পুকরপাড় থেকে ছাতিমগন্ধের
সন্ধ্যা আসুক কবরচাপা নিঃশব্দের মতো,
কত গল্প কবিতাই তো লিখেছি, এই দমবন্ধ দিনে।  

কবিতা তোমাকে ঘুমের দেশে পাঠিয়ে দিলাম।
আর কোনো গল্প লিখতে চাইনা কোনো বঞ্চিতের,, 
সব কোলাহল থেমে যাও, 
কীবোর্ড তুমিও।

চন্দ্রমাস গুনতে ভুলে গেছি, আজ রাতে কী ধরনের চাঁদ উঠবে তাও জানিনা, যেই চাঁদই উঠুক, বন্ধ জানালা খুলে দেখব তোমাকে। 

কেউ কী বাজাবে কোনো শরোদ, কিংবা পিয়ানো দূরে কোথাও বেবাগী সুরে….

২৪/৩/২০২০ ইং
দক্ষিণখান, ঢাকা। 

৪৭. করোনাকালীন লিমেরিক

আজিকার সূর্যের এমনই আলো সে শুধু মনখারাপের রোদ ছড়ায়
কুসুমপুরের পাতার বাঁশিওয়ালা সেই বালকটি এসে গান শোনায়……

মানুষই যদি না থাকে কে শুনবে তার  গান 
কে-ই মাখবে গায়ে সেই পুন্যের  সূর্য স্নান 

কে দেখবে গগন জুড়ে লক্ষ লক্ষ তারা, কে-ই বা থাকবে এই ধরায়।

৪৮. কবুলনামা

যে গান রাতের সেই গানই শোনাব 
আজ কলাবতি রাগে, 
যে খঞ্জনা পাখি হয়ে তুমি ঘরে ফিরে এসেছ 
সন্ধ্যার অস্তরাগে, 
সেই পাখিটারই আজ চন্দ্রস্নান হবে 
কেতকী সুবাস ফাগে।

চিত্রা অরুন্ধতী স্বাতী’রা নেমে এসে আজ 
রাত্রিকে করবে জ‍্যোতির্ময়, মেঘে’রা জল হয়ে ঝরে পড়ে পুণ‍্য করবে 
আমাদের প্রণয়।

তোমার নাকে পরাব আজ রক্তকুঁচের নাকফুল,
যদি অন্ধকার জড়িয়ে ধরে, তারপরও বলব — এসো, ভালোবাসা করো কবুল।

৪৯. গন্ধর্ব-নগরীর হেম

তোমাকে আজ উদাসীন উদাসীন লাগছে। গতকালও তুমি শ্রাবণ ধারার মতো বর্ষা নামিয়েছিলে। আজ যেন জলহীন নদী। তুমি হরণ করতে পারো না। তুমি শুরু জানো, শেষ করতে জানো না। কাল ছিলে আহলাদী, আজ তুমি হতচ্ছারী। 
তুমি কখনও চন্দন চন্দন, কখনও আবার গন্ধর্ব-নগরীর হেম। এ কোন্ রহস্য তোমার, হে প্রানেশ্বরী !

৫০. তুমি মরিও

সব মেঘ উড়ে চলে গেল তোমার আকাশ পানে,

তুমি জানলে না —
তোমার জন্য এই মেঘ কতোটুকু জল ঝরেছিল
সেই জলে কতটুকু আমার ভালবাসা ছিল।

যদি কখনও
জলে ডুব দিতে চাও, তবে আমার জলে এসে ডুব দিও
যদি কখনও —
জলে মরতে চাও ,তবে আমার জলে এসে তুমি মরিও।

৫১. অমর্তলোকের তুমি

তোমাকে ভালোবেসেছি স্বপ্নলোকের সকল স্বপ্ন দিয়ে । তুমি আমার ঘরেও এলে না। স্বপ্নেও এলে না।  

একদিন হেমন্ত সন্ধ্যায় তোমাকে বুকে টেনে বলতে চেয়েছিলাম –
‘স্বপন দুয়ার খুলে এসো অরুণ-আলোকে 
এসো মুগ্ধ এ চোখে- ক্ষণকালের আভাস হতে,
চিরকালের তরে এসো আমার ঘরে।।’ 

কিন্তু তোমাকে ছুঁইতে পারিনি। 
মনে হয়েছে স্পর্শ করলেই বুঝি কল্পলোকের এ ভালোবাসা ভেঙ্গে যাবে। 
মনে হয়েছে শত সহস্র অন্ধকার রাতের অমর্তলোকের ভালোবাসা হয়েই তুমি থাকো।

৫২. প্রবঞ্চিতের গল্প

তোমাকে ধোঁকা দেবার সাধ্যি অন্তত আমার নেই। আমার সৃষ্টির স্বপ্ন রাজ্যে তুমি আসতে চাইলে আসতে পারো।

মাথার উপরে নীল আকাশ, যেথায় রাত্তিতে অসংখ্য তারার আলোয় ভরে থাকে। ঠিক সেই আকাশটার নীচে মৃত্তিকার উপর আমার বাস। 

তুমি আসবে কী এমন একটি ভূবনে?

৫৩. এখনে বসন্ত

এবারও শিমুলের রক্তগন্ধ নেওয়া হলো না
এবারও রোদ্রগন্ধী দেহখানি অপুলকিত হয়ে থাকল,
এবারও মধুমাসে মধুক্ষণ হয়ে থাকল অবীর্যবান।

তুমি এই শহরেই হেমবতীর শাড়ি পরলে
বসন্তের ঝরে পড়া পলাশের গন্ধ মাখলে শরীরে,
মখমল ওড়না উড়ালে চৈত্রের বাতাসে
শিমুলের মধু কুসুম করলে পান
তুমি হয়ে উঠলে বীর্যাবতী।

শিমুল ফুটবে এখানেই, কুসুম মধু পান করব মধুবনে
আমরা উড়ব দিগাঙ্গনার মতো পাগল হাওয়ার প্লাবনে।

৫৪. সেও এক মৃত্যু

কালরাতে ঝাউঝোপের অন্ধকার থেকে আসা 
উন্মুখ বাতাসে তোমার বাজুবন্ধ বাজছিল ঝুমঝুম করে
কটিতে রূপার বিছায় এসে পড়েছিল চন্দ্রশুভ্র আলো,
হঠাৎ তোমার কালো কেশের খোঁপায় ফুটে উঠল কুন্দন ফুল
কণ্ঠে দেখলাম পদ্ম-কুসুম খচিত মণিহার
চুল উড়ছিল বসন্ত বাতাস লেগে উর্বশীদের মতো
চোখের কোণে এসে পড়ছিল শত নক্ষত্রের আলো
তুমি কাঁপছিলে জ্যোৎস্নার দ্যুতিতে
নাভির উপরে জ্বলছিল বিষনাগমণি, 
তুমি তখন বললে স্পর্শ করো —

আমি সেই মণিখণ্ড ধরতেই দহনে পুড়ে জ্বলতে থাকি 
অস্থিচর্ম ভেদ করে নীল আগুন দাউদাউ করে লেলিহান ছড়ায় চতুর্দিক,
আমি আতঙ্কে আর্তনাদ করে উঠি, এবং বলি — 
কীসের এ দহন? আমাকে তুমি এ কী করলে?

তুমি নিরুত্তর স্তব্ধ হেম —
আমি অদ্ভূত এক নীল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকি তখন।

৫৫. সকালের আলিঙ্গনে

সারারাত মেঘের ঘনঘটা ছিল, বৃষ্টি ছিল
স্বপ্ন মাধবীরা এসে ভর করেছিল ক্ষণে ক্ষণে,
প্রতিক্ষা করছি দখিণের জানালা খুলে
মাতাল হাওয়ায় আসবে তুমি নগ্ন বাহুর আলিঙ্গনে।

নীলাম্বরীর নামটিই শুনেছি দেখিনি কখনো তারে
আজ ওকে খুঁজতে বের হবো—
,যেখানে পাই পার্কে, লেকের পাশে কিংবা বনবাদারে।

 
৫৬. বিসর্জন

তুমি আমার কান্না নেবে? আমার মন বেদনার মর্মরতা নেবে, এবং মন খারাপের অশ্রু সিক্ত কমলগুলি? নাকি ভাসিয়ে দিয়ে আসব এই সব মর্মবেদনা দূরের কোনও স্তব্ধ নির্জরিনীতে? কিংবা শত প্রস্ফুটিত কোনও উৎপল দীঘিতে?

সব দুঃখ কষ্ট কী ভাসিয়ে দেওয়া যায়? সব প্রেম? ভালোবাসার মধুরতম স্মৃতি, সুখময় কোনও অভিজ্ঞান চিহ্ন? 

না, যায় না।

৫৭. পদরেখা

যে পথ দিয়ে চলে এসেছিলাম সেই পথ দিয়েই 
চলে যাব একা 
তোমার ভুবনে তুমি পড়ে রবে কোথাও পাবে না 
আমার দেখা 
যদি আমাকে খুঁজে পেতে চাও আঁধারে জ্বালিও আলোক রেখা 
চিনিয়ে দেবে তোমাকে পথের উপর ফেলে রাখা
আমার পদরেখা।

৫৮. জলপ্রপাত হবো

ভুলতে চাইলেই কি ভুলতে পারি 
বাহুডোরের উষ্ণতা ?
ভুলতে কি পারি মুখ থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টির গন্ধের মতো আশ্লেশ ?
পর্বতারোহী হয়ে ভ্রমণ করেছি পথের বাঁকে বাঁকে
ভুলতে কি পারি শরীরের খাঁজে খাঁজে সেইসব ভ্রমণ?
লতাগুল্ম বৃক্ষ ঝোপঝাড় মাড়িয়ে পৌঁছে গেছি যে প্রতাশ্রয়ে
ভুলতে কি পারি সেই সব রোমাঞ্চকর পথ ?

তুমি চাইলেই সেই পথের পরিব্রাজক হতে পারি
দিতে পারি আবারও আশ্লেশ, 
দিতে পারি ঈষাণের পুঞ্জিভূত যত মেঘ
বঙ্গোপসাগর থেকে জল নিয়ে মেঘে মেঘে ভেসে এসে জলপ্রপাত হতে পারি।

৫৯. অভিযাত্রিনী

তুমি পূর্ণিমার চন্দ্র কিরণের মতো
ব্রহ্মকমলের আকুল করা গন্ধের মতো
ঝুমকা লতার আবেশ জড়ানো মুগ্ধতার মতো

হাসিতে মুক্তা ঝরাও 
ডানা মেলে উড়ে বেড়াও প্রজাপতির মতো
আকাশের নীলে মিশে থাকো নীলাঞ্জনার মতো।

তুমি হেমন্ত সন্ধ্যার স্নিগ্ধতার মতো
সন্ধ্যার শেষ অস্তরাগের মায়ার মতো
সুপ্ত সুন্দর রাত্রির শান্তির মতো —

তোমাকে নিয়ে শ্রাবণ বৃষ্টির মেঘে ভেসে যাই
রাতের তারার আলোর বিচ্ছুরণে হেঁটে যাই
নিখিলের দুয়ার খুলে স্বর্গলোকে চলে যাই।

৬০. বিষণ্ণতা নেই

এই শহরকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না কেউ একজন
আজ চলে গেছে
বোঝা যাচ্ছে না কেউ চলে গেছে অনন্তের পথে আজ সকালে-
মসজিদে আযান হয়েছে, মুসুল্লীরা চলে গেছে সব নামাজে।

সংবাদপত্রের গাড়ি ছুটে যাচ্ছে মফস্বলের দিকে
কারখানার শ্রমিকেরা চলে যাচ্ছে কাজে
ক্লাশ শুরু হবার ঘন্টাধ্বনি বাজছে স্কুলে স্কুলে
ছাত্র ছাত্রীরা চলে যাচ্ছে ক্লাশে, কেউ হেঁটে,
কেউ রিক্সায়, কেউ বা গাড়িতে করে।

সকালের রোদ্দুরকে আজ বিষন্ন দেখায়নি
পাখিরা গান গেয়েছে, সে গানে বিষণ্ণতা নেই
পাশের বাসায় বালিকা গান শিখছে
হারমনিয়াম বাজছে, তবলার তাল থেমে নেই।

বিষণ্ণতা নেই অফিসগামী যাত্রীদের
বিষণ্ণতা নেই রিক্সাওয়ালার, ভ্যানওয়ালার,
বিষণ্ণতা নেই গার্মেন্ট শ্রমিকের, ঠেলা চালকের,
বিষণ্ণতা নেই হকারের, কোনও কামারের।

খেলার মাঠে, পার্কে, লেকের ধারে, মানুষ হাঁটছে
প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েছে হৃদরোগীরা
দোকানীরা দোকান খুলেছে, বিক্রি করছে পশরা
বাস স্টপেজে, স্টেশনে, লঞ্চঘাটে যাত্রিরা ছুটে যাচ্ছে
কারোরই চোখে মুখে কোনও বিষণ্ণতা নেই।

সকল বিষণ্ণতা আজ কেবল মৃতের আত্মজনের, 
এই শহর থেকে শববাহী এ্যাম্বুলেন্স
সাইরেন বাজিয়ে চলে গেল মৃতের গ্রামের দিকে, সেখানেই মাটির তলায় তার শেষ আশ্রয় হবে।

লেখক: কোয়েল তালুকদারবইয়ের ধরন: কাব্যগ্রন্থ / কবিতা

তুমি সেই মায়াজম (অনুকবিতা গ্রন্থ) – কোয়েল তালুকদার

হাত ছুঁয়ে-ছুঁয়ে দিয়েছি সব

হাত ছুঁয়ে-ছুঁয়ে দিয়েছি সব – কোয়েল তালুকদার

দুয়ারে তুমি দাঁড়িয়ে (গদ্যকবিতা গ্রন্থ) – কোয়েল তালুকদার

দুয়ারে তুমি দাঁড়িয়ে (গদ্যকবিতা গ্রন্থ) – কোয়েল তালুকদার

আলোগুলো জ্বালিয়ে দাও - কোয়েল তালুকদার

আলোগুলো জ্বালিয়ে দাও – কোয়েল তালুকদার

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.