• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে – শঙ্খ ঘোষ

লাইব্রেরি » শঙ্খ ঘোষ » মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে – শঙ্খ ঘোষ
Current Status
Not Enrolled
Price
Free
Get Started
Log In to Enroll

আমাদের শেষ কথাগুলি

আমাদের শেষ কথাগুলি গড়িয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে
আমাদের শেষ কথাগুলি

মৃত মানুষদের চোখে ভরে গেছে অর্ধেক আকাশ
আমাদের শব্দের ওপারে

তালসারির ভিতর থেকে উঠে আসছে আজ রাত্রিবেলা
নাম-না-জানা যুবকদের হৃৎপিণ্ড

তাদের রক্তের জন্য পথে পথে কলসি পাতা আছে
আমরা সসম্মানে তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাই

আর আমাদের কথাগুলি গোল আর ঝকঝকে হয়ে
গড়িয়ে যায় গতদিনের দিকে।

*

যদি

যদি আমি দেশ হয়ে শুয়ে থাকি আর এই বুকের উপরে যদি চলে যায়
 হাজার হাজার পা-র চলাচল

রক্তের ভিতরে শুধু বয়ে যায় জলসোত প্রতিটি রোমাঞ্চে যদি
ধান জেগে ওঠে

কান পেতে শুনি যদি মাঠ থেকে ফিরবার অবিরাম জয়ধ্বনি
চন্দনার গান

প্রতিটি মুখের থেকে যদি সব বিচ্ছেদের হেমন্তহলুদ পাতা
ঝরে যায়

হাত পেতে বলে যদি, এসো ওই আল ধরে

 চলে যাই সেচনের দেশে

যদি মাটি ফুলে ওঠে আর সব খরা ভেঙে
 ছুটে আসে বিদ্যুতের টান–

হতে পারে, সব হতে পারে যদি এই মহামৃত্তিকায় আমার মুখের দিকে
ঝুঁকে থাকো আকাশের মতো।

*

চড়ুইটি কীভাবে মরেছিল

১

ওরা চলে যাবার পর মনে হলো ঘরই আমার আকাশ
গান গাইলাম স্বাধীন

উড়াল দিলাম পুর্বপশ্চিম নীচের থেকে ওপরে আর
 দেয়াল থেকে দেয়াল

জানলাদরজা ঠুকরে দিলাম কাঠঠোকরার আদর দিয়ে
লুকোনো-সব খড়কুটোতে ছড়িয়ে দিলাম ঘর

সবই আমার সবই আমার এই খুশিতে ফুলে উঠল
 বুকের কাছে মখমলের শাদা

ডানায় ডানায় ঢেউ তুললাম গলায় গলায় ঢেউ তুললাম
 বিস্তারে বিস্তারে

ওরা চলে যাবার পর মনে হলো ঘরই আমার আকাশ
গান গাইলাম অনেক।

.

২

প্রহর? কত প্রহর হলো? এখনও কি দিন হয়নি?
আলোর পথ কোথায়?

টেবিল থেকে চেয়ারে আর চেয়ার থেকে গ্রিলের ওপর
 স্বাধীনতার শেষ?

আকাশ থেকে ছিঁড়ে আমায় ঘরের মধ্যে আকাশ দিয়ে
 কোথায় গেছে ওরা?

গলার কাছে শুকনো লাগে, বুকের কাছে শূন্য লাগে, ভুল করে কি একটা দানাও
 রেখে যায়নি ফেলে?

টেবিল থেকে চেয়ার আর চেয়ার থেকে গ্রিলের ওপর
কত প্রহর আর?

মুক্তি তো নয় এরা আমায় জাঁকজমকে ঘের দিয়েছে
 উড়াল দাও উড়াল দাও পাখা!

.

৩

কিন্তু কোথায় উড়াল দেবে? পুবপশ্চিম ওপরনীচে
 শাদা কেবল শাদা কেবল শাদা

একটা কোনো বিন্দু নেই যে বাতাস নেব ডানায় ভরে
অবশ হয়ে এল আমার গান

এ ঘের আমায় খুলতে হবে ভেবে এবার ছুটতে থাকি
 অসম্ভবের কোণগুলিতে ঝুঁকে

বুকের কাছে আস্তে আস্তে জমতে থাকে শাদা পাথর
ডানাও ছোট্ট পাটাতনের মতো

পুবপশ্চিম ওপরনীচে দেয়ালকাঠে ঠুকতে ঠুকতে
 ফুরিয়ে আসে নিশ্বাসের রেখা

কাঠের একটা পুতুল হয়ে উলটে গেলাম সদরকোণে
দরজা খুলে দেখুক ওদের ঠান্ডা মাথার খুন!

*

কোবালম বীচ

বয়স তিরিশ। কিন্তু সেটা খুব বড় কথা নয়
কিছু বেশি কিছু কম অনেকেই এ-রকম করে
দেশে বা বিদেশে এই দুশো বছরের ইতিহাসে
অনেকেই এ-রকম শূন্য থেকে শুন্যে মিশে যায়
ভাঙা ডানা পড়ে থাকে রাজপথে, গুহামুখে, চরে।
এইখানে বাঁক নিয়ে বাঁয়ে উঠে গেছে বড়ো টিলা
ডাইনে আরবজল স্থির হয়ে আছে একেবারে
নারকেলপাতার থেকে কিছুদূরে ভেসে আছে চাঁদ
 আমাদের চোখে আছে লঘু পালকের ছায়া, আর
 মুখে জাল, শুনি সব অপঘাত উত্তরেদক্ষিণে।
 সেই এক, একই কথা, লবণে ভরেছে ফুসফুস
সেই যবনিকা তুলে আবোরা আরো আরো যবনিকা
 খুলে দেখা বীজ যার কোথাও কিছুরই মানে নেই–
 অনেকেই এ-রকম শূন্য থেকে শূন্যে মিশে গেছে।

বেশ কিছুদিন হলো দেশবিদেশের মেলা শেষ
ঘরের চৌকাঠে ফিরে আপাতত নেই লোনা হাওয়া–
 আয়নায় দাঁড়িয়ে তবু এখনও হঠাৎ তাকে দেখি
বন্ধুর গল্পের শেষে যেন তার আত্মা তুলে নিয়ে
না তাকিয়ে নিচু স্বরে বালির উপরে হাত রেখে
কর্ণাটকি যে-ছেলেটি বলেছিল কোবালম বীচে
‘কিছু একটা করতে চাই, মরব না এভাবে বসে থেকে!’

*

হেতালের লাঠি

হেতালের লাঠি নিয়ে বসে আছি লোহার সিঁড়িতে
কালরাত্রি কেটে যাবে ভাবি, ওরা বাসর জাগুক
এমন রাত্রিতে কোনো ফণা এসে যেন না ওদের
 শিয়রে কুণ্ডল করে, কেটে যাক প্রেমের প্রহর।
 কিন্তু বড়ো ঘুম, এক কালঘুম মায়াঘুম কেন
 কেবলই জড়ায় চোখ, অবসাদে ভরে দেয় শিরা
সমস্ত চেতনাঘেরা নাগিনীপিচ্ছিল অন্ধকারে
 ঢিল হয়ে আসে মুঠি, খসে আসে হেতালের লাঠি।

তারও মাঝখানে আমি স্বপ্নের ভিতরে স্বপ্ন দেখি
দেখি ওরা হেঁটে যায় পৃথিবী সুন্দরতর ক’রে
নক্ষত্রবিলাসে নয়, দিনানুদিনের আলপথে
আর যতদূর যায় ধানে ভরে যায় ততদূর।
 আমি শুধু এইখানে প্রহরীর মতো জেগে দেখি
যেন না ওদের গায়ে কোনো নাগিনীর শ্বাস লাগে
 যেন কোনো ঘুম, কোনো কালঘুম মায়াঘুম এসে
 শিয়র না ছুঁতে পারে আজ এই নিশীথনগরে
 হেতালের লাঠি যেন এ-কালপ্রহরে মনে রাখে
 চম্পকনগরে আজ কানীর চক্রান্ত চারদিকে।

*

মন্ত্রীমশাই

মন্ত্রীমশাই আসবেন আজ বিকেলবেলায়। সকাল থেকে
 অনেকরকম বাদ্যিবাদন, পুলিশবাহার। আমরাও সব যে-যার মতো জাপটে আছি
ঘরখোয়ানো পথের কোনা।
 মন্ত্রীমশাই আসবেন আজ, তখন তাঁকে
একটি কথা বলব আমি।
 বলব যে এই যুক্তিটা খুব বুঝতে পারি
সবাইকে পথ দেবার জন্য কয়েকজনকে সরতে হবে।
 তেমন-তেমন সময় এলে হয়তো আমায় মারতে হবে
বুঝতে পারি।
 এ-যুক্তিতেই ভিটেমাটির ঊর্ণা ছেড়ে বেরিয়েছিলাম
অনেক আগের রাতদুপুরে ঘোরের মতো
কণ্ঠাবধি আড়িয়ালের ঝাপটলাগা থামিয়েছিলাম
 কম্বুরেখায় অন্ধরেখায় মানিয়েছিলাম
ছাড়তে হবে
সবার জন্য কয়েকজনকে ছাড়তে হবে।
 কিন্তু সবাই বলল সেদিন, হা কাপুরুষ হদ্দ কাঙাল
চোরের মতো ছাড়লি নিজের জন্মভূমি!
 জন্মভূমি? কোথায় আমার জন্মভূমি খুঁজতে খুঁজতে জীবন গেল।
 দিন কেটেছে চোরের মতো দিনভিখারির ঘোরের মতো
পথবিপথে, জন্মভূমির পায়ের কাছে ভোরের মতো
জাগতে গিয়ে স্পষ্ট হলো
 সবার পথে সবার সঙ্গে চলার পথে
আমরা শুধু উপলবাধা।
 আমরা বাধা? জীবন জুড়ে এই করেছি?
দেশটাকে যে নষ্ট করে দিলাম ভেবে কষ্ট হলো।
 এখান থেকে ওখানে যাই এ-কোণ থেকে ওই কোনাতে
একটা শুধু পুরোনো জল জমতে থাকে
চোখের পাশে
 আড়িয়ালের কিনার ঘেঁষে, কিন্তু তবু বুঝতে পারি
সবার জন্য এই আমাদের কয়েকজনকে সরতে হবে।
 একটা কেবল মুশকিল যে মন্ত্রীমশাই
ওদের মতো সবার মতো এই ভুবনের বিকেলবেলায়
জন্মভূমির পায়ের কাছে সন্ধ্যা নেমে আসার মতো
 মাঝেমধ্যে আমারও খুব বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে–

তার কী করা?

*

লজ্জা

বাবুদের        লজ্জা হলো
আমি যে        কুড়িয়ে খাব
সেটা ঠিক       সইল না আর
আজ তাই       ধর্মাবতার
আমি এই       জেলহাজতে
দেখে নিই       শাঠ্যে শঠে।

বাবুদের       কাচের ঘরে
 কত-না        সাহেবসুবো
আসে, আর     দেশবিদেশে
উড়ে যায়       পাখির মতো–
সেখানে         মাছির ডানায়
বাবুদের         লজ্জা করে।

আমি তা        বুঝেও এমন
বেহায়া          শরমখাকী
খুঁটে খাই        যখন যা পাই
সুবোদের        পায়ের তলায়।
খেতে তো       হবেই বাবা
না খেয়ে         মরব না কি!

বেঁধেছ        বেশ করেছ
কী এমন        মস্ত ক্ষতি!
গারদে           বয়েস গেল
তা ছাড়া        গতরখানাও
বাবুদের         কব্জা হলো–
 হলো তো       বেশ, তাতে কি বা
বুদের            লজ্জা হলো?

*

দেশ আমাদের আজও কোনো

জঙ্গলের মাঝখানে কাটা হাত আর্তনাদ করে
 গারো পাহাড়ের পায়ে কাটা হাত আর্তনাদ করে
 সিন্ধুর স্রোতের দিকে কাটা হাত আর্তনাদ করে
কে কাকে বোঝাবে কিছু আর
সমুদ্রে গিয়েছ তার ঢেউয়ের মাথার থেকে হাজার হাজার ভাঙা হাড়
 আলের ভিতর থেকে হাজার হাজার ভাঙা হাড়
 চূড়া বা গম্বুজ থেকে হাজার হাজার ভাঙা হাড়
তোমার চোখের সামনে লাফ দিয়ে আর্তনাদ করে
 সমবেত স্বর থেকে সব ধ্বনি মেলানো অকূলে
 কণ্ঠহীন সমবেত স্বর
 ধড় খুঁজে আর্তনাদ করে
হৃৎপিণ্ড চায় তারা শূন্যের ভিতরে থাবা দিয়ে
ধ্বংসপ্রতিভার নাচে আঙুলের কাছে এসে আঙুলেরা আর্তনাদ করে
 জলের ভিতরে কিংবা হিমবাহ চূড়ার উপরে
 কে কাকে বোঝাবে কিছু আর
অর্থহীন শব্দগুলি আর্তনাদ করে আর তুমি তাই স্তব্ধ হয়ে শোনো
দেশ আমাদের আজও কোনো
 দেশ আমাদের আজও কোনো
 দেশ আমাদের কোনো মাতৃভাষা দেয়নি এখনও।

*

আমাদের এই তীর্থে আজ উৎসব

বৈশম্পায়ন বললেন, মহারাজ! রাজা যুধিষ্ঠিরের রাজ্যলাভের ছত্রিশ বছর কেটে গেলে বৃষ্ণিবংশে ঘোরতর দুর্নীতি দেখা দিল। সেই দুর্নীতিপ্রভাবে যাদবেরা একদিন পরস্পর পরস্পরের বিনাশসাধন করলেন। মৌষলপর্ব, মহাভারত।

আমাদের এই তীর্থে আজ উৎসব
আমাদের এই তীর্থে আজ উৎসব

সময় ছিল হলুদজল, গন্ধ বুনো বল্লীদের
আবহমান মাটির
সাগরপার আর পাহাড়তলির ছড়ানো এই মিলনকোণ
আমাদের এই তীর্থে আজ উৎসব।

কালপুরুষ ঘুরে বেড়ায় গোপন পায়ে ঘরে ঘরে
উপড়ে নেয় মগজ
 ইঁদুর ঘোরে উল্কা খসে পলক ফেলতে কবন্ধ
আমাদের এই তীর্থে আজ উৎসব

সবাই সবার পাশ দিয়ে যাই কেউ কাউকে দেখতে পাই না
পাখির ঝাঁকও ডাইনে বেঁকে ওড়ে
বৃষ্টি নেই, সূর্য চাঁদ ধূসর লাল শামলা রং
বৃত্ত করে ঘোরায় নিজের পাশে

গরুই আজ গাধার মা, হাতির বাচ্চা খচ্চরের
বেজির পেটে ইঁদুর
 সারস ডাকে পেঁচার মতো, ছাগলদের শেয়ালডাক
 ঘরের বুকে রক্তপায়ে পাণ্ডুরং কপোত

ডালপালার কোটর ভেঙে একে একে বেরিয়ে আসে
 সাত্যকি আর কৃতবর্মার দল
পায়ের ক্ষুরে জয়ধ্বনি আঙুলচুড়োয় জয়ধ্বনি
আমাদের এই তীর্থে ঘোর উৎসব

হঠাৎ সবাই তাকিয়ে দেখি নিজের নিজের হাতের দিকে
সবুজ ঘাস? ভল্ল? না কি মুষল?
 লাফ দিয়েছে হরিণ, তার চমক সোনায় ঝলসে ওঠে
শেষ বিকেলের বোঝাপড়ার দিকে

আমরা যাদব আমরা, বৃষ্ণি আমরা অন্ধক
ঘোর তীর্থে আজ আমাদের খেলা
 হৃদয়ভানে এগোই আর কণ্ঠনালী আঁকড়ে ধরি
সূর্য যখন গড়ায় জলের নীচে

সবাই সবার চোখে ঘাতক, দেখি লুব্ধ লালা
নিজের নিজের সত্য বানাই নিজে
পাতা ঝরছে মাথার ওপর শিশিরজলে পাপ পোয় না
 চারদিকে ঢেউ, ফসফরাসের আলো

যাদব, আমরা বৃষ্ণি কিংবা অন্ধক
সাত্যকি বা কৃতবর্মার দল
মদ আমাদের আত্মঘাতের ভবিতব্য, বারণ ছিল
এ উৎসবে সবাই আজ মাতাল

জয়ধ্বনি তোলে নিশান আমার নিশান তোমার নিশান
 ভল্ল? না কি মুষল? না কি ঘাস?
 আমাদের এই পায়ের নীচে ভিন্ন সব জলস্রোত
 তাপ্তী আর কৃষ্ণা আর গঙ্গা

এই সে লোক প্রাণ নিয়েছে ছিন্নবাহু ভূরিশ্রবার
খড়ের চালে হঠাৎ লাগায় ফুলকি
ইমানহীন ক্লীব আর সুড়ঙ্গময় গুপ্তঘাতী
এই সে লোক ওই সে লোক এই সে

মনে কি নেই ঘুমের মধ্যে কিশোরদের হত্যা
বিস্ফোরণ, হাত-পা বাঁধা চুরমার
সবুজ ঘাস হলুদ ঘাস তীক্ষ্ণ ঘাস শরবনের
এবার সব ফিরিয়ে দেবার সময়

পুবের থেকে পশ্চিমে চাই, ভাঙছে অলীক উলটো খাঁচা
আমাদের এই তীর্থে এমন উৎসব
ত্রয়োদশীয় অমাবস্যা, চোখের মধ্যে বেঁধে বর্শা
লাফিয়ে ওঠে হৃৎপিণ্ডের আগুন

ছিটকে আসে হরিণ, তার মুক্তি নেই উদ্‌গতির
শরীর থেকে ছিঁড়ছে সব সুঘ্রাণ
কৃতবর্মার মাথায় ওই খড়্গ তোলে সাত্যকি
যাদব নেই, বৃষ্ণি ভোজ অন্ধক

আমরা আর যাদব নই, অন্ধক বা ভোজ
শৈনেয় বা বৃষ্ণি আমরা আজ
যাজকদের আগুনে আজ লাল নীল সবুজ শিখা
খুঁজে বেড়ায় ঝলসে নেবার হরিণ

সত্যকে আজ ঘুরিয়ে নিলেই এক লহমায় মিথ্যে, আর
 মিথ্যেকেই বানিয়ে নিই সত্য
পাতায় পাতায় খুঁজে বেড়াই কে আমাদের শত্রু, যেন
 কারোই কোনো বন্ধু নেই কোথাও

আমাদের এই তীর্থে আজ উৎসব
 আমাদের এই তীর্থে শেষ উৎসব
 আত্মঘাতের শবের ওপর উঠে আসছে লবণজল
সাগরজলে ভাসে আমার বংশ

চোখের সামনে সাত্যকি আর প্রদ্যুম্নের বিনাশ
 মনে পড়ে গান্ধারীশাপ শাম্বরঙ্গ ছল
অমোঘ নিয়ম ফলতে থাকে, ধুইয়ে দেয় অতীতভার
আমরা এগোই জলস্রোতও এগোয়

এই আমাদের শবের ওপর মিলছে এসে জলস্রোত
 তাপ্তী আর শতদ্রু বা গঙ্গার
পুবপশ্চিম ভাঙতে ভাঙতে ছুটে যাচ্ছে হস্তিনাপুর
আমরা এগোই জলস্রোতও এগোয়

যেদিকে চাই প্লাবনজল, ঘোড়াও যেন মাছের মতো
রথগুলি-বা ভেলা
পথ আবর্ত, ঘরগুলি হ্রদ, শেওলা যত রত্নরাশি
যেদিকে চাই যেদিকে চাই সাঁতরে যায় কুমির

ডুবুক সব শস্ত্র রথ, ধুয়ে ফেলুক সাগরজল
আমাদের এই প্রভাস যাক থেমে
ছুটছে কোন অভিষেকের অঘোর জল অতল জল
সবল জল হস্তিনাপুর মুখে

হরিণ তার রক্তরেখা মিলিয়ে দেয় শতদ্রুতে
 ব্রহ্মপুত্রে ছড়িয়ে রাখে অজিন
 মুখোশ ঝোলে মধ্যদেশে শিঙের বাহার জ্যোৎস্নাময়ী
গন্ধ কেবল উড়ছে দেশজোড়া

আমাদের এই তীর্থে আজ ভেঙে পড়ার উৎসব
তাকিয়ে আছে হাজার মাঠ গহ্বর
 বিনাশ তার আনন্দের উৎসারের প্রতীক্ষায়
ঝলসে ওঠে আকাশমুখী চিমনি

আমাদের এই তীর্থজল মাঠ খামার গহ্বরের
আমাদের এই তীর্থে শেষ উৎসব
ধ্বংস আর বিশ্বাসের, বিনষ্টি আর সৃষ্টিমুখ
আমাদের এই তীর্থে আজ উৎসব

আমাদের এই তীর্থে ঘোর উৎসব
 আমাদের এই তীর্থে শেষ উৎসব

[১৯৮৩]

*

ভিখিরির আবার পছন্দ

থাক সে পুরোনো কাসুন্দি
যুক্তিতর্ক চুলোয় যাক
 যেতে বলছ তো যাচ্ছি চলে
ভাঙবার শুধু সময় চাই

ভাঙবার শুধু সময় চাই
 এ রাস্তা থেকে ও রাস্তায়
হব কদিনের বাসিন্দা
কে না জানে সব অনিত্য।

কে না জানে সব অনিত্য
নিয়ে যাই তাই খড়কুটো
বেঁচে যে রয়েছি এই-না ঢের
 ভিখিরির আবার পছন্দ।

ভিখিরির আবার পছন্দ
 ঠিকই পেয়ে যাব যে-কোনো ঠাঁই
আবারও ভাঙার প্রতীক্ষায়
কেটে যাবে দিন আনন্দে।

কেটে যাবে দিন আনন্দে
ভাসমান সব বাসিন্দার।
 জীবন তো একই কাসুন্দি
 ভিখিরির আবার পছন্দ!

*

কাব্যতত্ত্ব

কাল ও-কথা বলেছিলাম না কি?
হতেও পারে, আজ সেটা মানছি না
কাল যে-আমি ছিলাম, প্রমাণ করো
আজও আমি সেই আমিটাই কি না।

মানুষ তো আর শালগ্রাম নয় ঠিক
একইরকম থাকবে সারাজীবন।
 মাঝে মাঝে পাশ ফিরতেও হবে
মাঝেমাঝেই উড়াল দেবে মন।

কাল বলেছি পাহাড়চূড়াই ভালো
আজ হয়তো সমুদ্রটাই চাই।
 দুয়ের মধ্যে বিরোধ তো নেই কিছু
 মুঠোয় ভরি গোটা ভুবনটাই।

আজ কালকে যোগ দিয়ে কী হবে?
সেটা না হয় ভাবব অনেক পরে।
 আপাতত এই কথাটা ভাবি–
 ফুর্তি কেন এত বিষম জ্বরে?

*

মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে

একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
তোমার জন্য গলির কোণে
ভাবি আমার মুখ দেখাব
 মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।

একটা দুটো সহজ কথা
বলব ভাবি চোখের আড়ে
 জৌলুশে তা ঝলসে ওঠে
 বিজ্ঞাপনে, রংবাহারে।

কে কাকে ঠিক কেমন দেখে
বুঝতে পারা শক্ত খুবই
  হা রে আমার বাড়িয়ে বলা
হা রে আমার জন্মভূমি!

বিকিয়ে গেছে চোখের চাওয়া
তোমার সঙ্গে ওতপ্রোত
 নিওন আলোয় পণ্য হলো
যা-কিছু আজ ব্যক্তিগত।

মুখের কথা একলা হয়ে
রইল পড়ে গলির কোণে
ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু
ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে।

*

জন্মদিন

তোমার জন্মদিনে কী আর দেব শুধু এই কথাটুকু ছাড়া
আবার আমাদের দেখা হবে কখনো

দেখা হবে তুলসীতলায় দেখা হবে বাঁশের সাঁকোয়
দেখা হবে সুপুরিবনের কিনারে

আমরা ঘুরে বেড়াব শহরের ভাঙা অ্যাসফল্টে অ্যাসফল্টে
 গনগনে দুপুরে কিংবা অবিশ্বাসের রাতে

কিন্তু আমাদের ঘিরে থাকবে অদৃশ্য কত সুতনুকা হাওয়া
ওই তুলসী কিংবা সাঁকোর কিংবা সুপুরির

হাত তুলে নিয়ে বলব, এই তো, এইরকমই, শুধু
দু-একটা ব্যথা বাকি রয়ে গেল আজও

যাবার সময় হলে চোখের চাওয়ায় ভিজিয়ে নেব চোখ
বুকের ওপর ছুঁয়ে যাব আঙুলের একটি পালক

যেন আমাদের সামনে কোথাও কোনো অপঘাত নেই আর
 মৃত্যু নেই দিগন্ত অবধি

তোমার জন্মদিনে কী আর দেব শুধু এই কথাটুকু ছাড়া যে
কাল থেকে রোজই আমার জন্মদিন।

*

মেঘের মতো মানুষ

আমার সামনে দিয়ে হেঁটে যায় ওই এক মেঘের মতো মানুষ
 ওর গায়ে টোকা দিলে জল ঝরে পড়বে বলে মনে হয়

আমার সামনে দিয়ে হেঁটে যায় ওই এক মেঘের মতো মানুষ
ওর কাছে গিয়ে বসলে ছায়া নেমে আসবে মনে হয়

ও দেবে, না নেবে? ও কি আশ্রয়, না কি আশ্রয় চায়?
আমার সামনে দিয়ে হেঁটে যায় ওই এক মেঘের মতো মানুষ

ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আমিও হয়তো কোনোদিন
হতে পারি মেঘ!

*

বোধ

যে লেখে সে কিছুই বোঝে না
 যে বোঝে সে কিছুই লেখে না
দু-জনের দেখা হয় মাঝে মাঝে ছাদের কিনারে
ঝাঁপ দেবে কি না ভাবে অর্থহীনতার পরপারে!

*

পদ্মসম্ভব

পাহাড়ের এই শেষ চুড়া
এইখানে এসে তুমি দাঁড়িয়েছ আজ ভোরবেলা
তোমার পায়ের নীচে পদ্মসম্ভবের মূর্তি, গুম্ফার উপরে আছো তুমি
বর্ণচক্র ঘোরে চার পাশে
ঘৃতপ্রদীপের থেকে তিব্বতি মন্ত্রের ধ্বনি মেঘের মতন উঠে আসে
ধ্বনির ভিতরে তুমি অবলীন মেঘ হয়ে আছো
 যতদূর দেখা যায় সমস্ত বলয় জুড়ে পাষাণের পাপড়ি মেলে দেওয়া
দিগন্তে দিগন্তে ওই কুয়াশামথিত শিখরেরা
পরিধি আকুল করে আছে
 তার কেন্দ্রে জেগে আছো তুমি
আর এই শিলামুখে বহুজনমুখরতা থেকে
আবেগের উপত্যকা থেকে
 মুহূর্তের ঘূর্ণি থেকে চোখ তুলে মনে হয় তুমিই-বা পদ্মসম্ভব
 তোমার নিরাশা নেই তোমার বিরাগ নেই তোমার শূন্যতা শুধু আছে।

লেখক: শঙ্খ ঘোষবইয়ের ধরন: কাব্যগ্রন্থ / কবিতা

পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ – শঙ্খ ঘোষ

বাবরের প্রার্থনা – শঙ্খ ঘোষ

শঙ্খ ঘোষের কবিতা

শবের উপরে শামিয়ানা – শঙ্খ ঘোষ

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.