• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

প্রতিবেশী – গৌরকিশোর ঘোষ

লাইব্রেরি » গৌরকিশোর ঘোষ (রূপদর্শী) » প্রতিবেশী – গৌরকিশোর ঘোষ
প্রতিবেশী গৌরকিশোর ঘোষ

প্রতিবেশী – গৌরকিশোর ঘোষ

প্রথম সংস্করণ: আগস্ট ১৯৯৫
প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড

দুই বাংলার লোককে

লেখকের বক্তব্য

‘প্রতিবেশী’ বের হল। হিন্দুরা মুসলমানদের প্রতিবেশী। মুসলমানরা হিন্দুদের প্রতিবেশী। খ্রিস্টানরা, বৌদ্ধরা, হিন্দুদের এবং মুসলমানদের প্রতিবেশী। আমরাও দেখেছি।

অমিতার বোন নমিতাকে নিয়ে, তায়েবকাকাকে নিয়ে অনেক কাহিনী আছে। ও কথাগুলো আর বলা হবে না। তার দায় লেখকের।

গৌকিশোর ঘোষ
27.7.95

.

ভূমিকা

গৌরকিশোর ঘোষের ‘প্রতিবেশী’ উপন্যাসটি ‘দেশ’ পত্রিকায় ২৫-১-৯২ তারিখে ৫০তম পরিচ্ছেদ এবং কাহিনীর দ্বিতীয় অধ্যায়ের শেষে এসে হঠাৎ থেমে গিয়েছিল। যতদূর জানি ওঁর আরও অনেকখানি লেখার পরিকল্পনা ছিল গোড়ায়। কিন্তু লেখার পরিশ্রমে আর প্রতি সপ্তাহের কিস্তি জমা দেবার ক্লান্তিতে ক্রমে লেখা সম্বন্ধেই যেন তাঁর কেমন একটা বিরাগ সৃষ্টি হয়েছিল মনে হয়। তা ছাড়া ওই সময়েই দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এবং ভাগলপুরের দাঙ্গা তাঁর মনকে এতই ব্যাপৃত রেখেছিল পুনর্বাসন সংক্রান্ত কাজে যে, অন্য দিকে দেবার মতো মন বা সময় প্রায়ই কিছু আর উদ্বৃত্ত থাকত না।

যাই হোক দৈহিক মানসিক নানা কারণেই লেখা আর অগ্রসর হয়নি। ভবিষ্যতে হবার সম্ভাবনা ইতিমধ্যে আরও ক্ষীণ হয়েছে কারণ গৌরের দেহযন্ত্র অসহযোগী হয়েছে। অত্যন্ত সজাগ মন নিয়েও গৌর এখন প্রকৃতির দুর্বোধ পরিহাসে প্রায় নীরবতার মধ্যে ডুবে আছেন। ফলে তাঁর মন যে আরও বিশেষভাবে আলোড়িত হচ্ছে এবং নানা ভাবনা-চিন্তাও জমে উঠেছে সে বিষয়ে আমার অন্তত কোনও সন্দেহ নেই। পদার্থবিদ-মহাকাশতাত্ত্বিক স্টিফেন হকিং, কঠিন প্রতিবন্ধক সত্ত্বেও, প্রযুক্তির কল্যাণে যে সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির সাহায্যে নিজেকে ব্যক্ত করতে পারছেন, সেরকম সুবিধা যদি গৌরও পেতেন তবে মনে হয় তাঁর অব্যক্ত ভাবনাগুলিরও নাগাল পেতাম আমরা।

এই রকম যখন পরিস্থিতি তখন আমরা—আত্মীয় বন্ধুরা—ভাবছিলাম যে ‘প্রতিবেশী’, যতখানি লেখা হয়েছে তা-ই স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বইয়ের আকারে প্রকাশ করা যায় কিনা। বিশেষ করে এই কারণে যে, এটিই তাঁর ‘এপিক ট্রিলজি’র চূড়ান্ত খণ্ড। এই ‘অসমাপ্ত’ খণ্ডটিও পূর্ববর্তী দুই খণ্ডের সঙ্গে একত্রে পাঠকের দরবারে পেশ না করলে লেখকের দীর্ঘ এবং অত্যন্ত পরিশ্রম-লব্ধ ওই সামাজিক-রাজনৈতিক পথ পরিক্রমা যেন একটা মনজিল পর্যন্ত এসে পৌঁছায় না।

বই আকারে ‘প্রতিবেশী’কে প্রকাশ করা সম্বন্ধে গৌরের মনে একটা দ্বিধা রয়েছে। ককারণ দ্বিতীয় অধ্যায়ের যেখানে এসে তিনি থেমেছেন তাতে কাহিনীটি সত্যিই একটা পরিণতি পেয়েছে কি ন পাঠককে স্পষ্ট কোনও লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় কি না, এ বিষয়ে তাঁর মনে সংশয় আছে। যদি না পৌঁছে থাকে তা হলে পাঠকের প্রতি অবিচার হবে, লেখকের প্রতিও নয় কি? এই বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছবার জন্য অগত্যা শীলা ঘোষের সাহায্যে ‘দেশ’-এর ফাইল কপি সংগ্রহ করে আর একবার সমালোচকের দৃষ্টিতে দেখে নিতে হল। দেখে অবশ্য আমার মনে হয়েছে যে, এই তৃতীয় খণ্ডটিও এক রকম একটা সমে এসে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু শুধু এইটুকু বলেই গৌরকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। কারণ দর্শাতে হবে।

তা হলে প্রথম খণ্ড অর্থাৎ ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ দিয়ে শুরু করতে হয়। তবে প্রথমেই বলে নেওয়া দরকার যে, উক্ত তিনটি খণ্ডে একই কাহিনীর ধারাবাহিক বিবৃতি নেই—বরং যা আছে সে হল একই বিষয়ের ঐতিহাসিক পরিণতি। উপন্যাসের পাত্রপাত্রীদের জীবনের টানাপোড়েনের সাহায্যে সাম্প্রতিক ইতিহাসের নক্শা বুনে গিয়েছেন লেখক। এই ইতিহাস এক প্রজন্ম কালের, কারণ প্রথম খণ্ডের কাহিনী শুরু হয়েছে ১৯২২-এ আর তৃতীয় খণ্ডের কাহিনী শেষ হয়েছে ১৯৪৬-এ এসে। অর্থাৎ ঠিক পঁচিশ বছরে। প্রথম খণ্ডের কাহিনী দ্বিতীয় খণ্ডে কিছুটা অনুসৃত হয়েছে বটে। ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ উপন্যাসের একটি গৌণ পাত্র, ফটিক মিঞা ওরফে শফিকুল মোল্লা, ‘প্ৰেম নেই’

উপন্যাসে মুখ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু তৃতীয় খণ্ড, ‘প্রতিবেশী’তে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশের অন্য এক কাহিনী দেখতে পাই।

তিনটি খণ্ডেরই মূলগত বিষয়টি কিন্তু একই, অর্থাৎ বাংলার হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক এবং পঁচিশ বছরে তার বিবর্তন। যা গোড়ায় ছিল ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে সংঘাত সেটাই কী করে ক্রমে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে এবং শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে পৌঁছে দেশকে খণ্ড খণ্ড করল তারই বস্তুনিষ্ঠ কিন্তু সহৃদয় চিত্রণ। ভারত ইতিহাসের এই সুপরিচিত ট্র্যাজিডি গৌরের উপন্যাসেও দুটি মানবমানবীর ব্যক্তিগত ট্র্যাজিডিতে পরিণত হয়েছে তৃতীয় খণ্ডে এসে।

‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ উপন্যাসের কাহিনী শুরু হয়, আগেই বলেছি, ১৯২২-এ। শেষ হয় ১৯২৫-এ এসে। এই কাহিনীর কেন্দ্রে যদিও রয়েছে বিবাহসূত্রে সম্পর্কিত দুটি একান্নবর্তী পরিবার কিন্তু বৃহত্তর পরিধিতে আছে সমগ্র গ্রাম-সমাজ এবং গ্রামীণ রাজনীতি। গৌরের বক্তব্যধর্মী উপন্যাস-ত্রয়ীর এই খণ্ডেই তাত্ত্বিক বক্তব্য অন্তর্লীন, যেন থেকেও নেই। আপাত দৃষ্টিতে রক্তমাংসের মানুষগুলির আনন্দ-বেদনায় প্রত্যাশা-বঞ্চনায় প্রাণের স্পন্দন এত তীব্র এবং তার বর্ণনা এমন হৃদয়গ্রাসী যে পটভূমির রাজনৈতিক-সামাজিক সমস্যাগুলি চোখে পড়ে কি না পড়ে।

কিন্তু গ্রাম সমাজ আর তার সামাজিক সংঘাত থেকে জাত রাজনীতি খুব সার্থক ভাবেই এই কাহিনীর পটভূমি রচনা করেছে। এই উপন্যাসের রাজনীতি শরৎচন্দ্রের গ্রাম্য দলাদলি মাত্র নয়। চরিত্র-হনন, অরুচিকর কলহবিবাদ আর ঘোঁট পাকানোতেই এর শেষ হয়ে যায় না। এই উপন্যাসের রাজনীতি আরও সদর্থে এবং গৃহীতার্থে রাজনীতি হয়ে উঠেছে, যার মূলে আছে হিন্দু মুসলমান বিরোধ। এই দুই সমাজের বৈষম্য আর পারস্পরিক বিরোধিতা বর্তমান শতাব্দীর প্রায় শুরু থেকেই যেভাবে দ্রুত একটা জটিল রাজনৈতিক সমস্যা ও শেষে প্রবল সংঘর্ষে পরিণত হল তার আনুপূর্বিক কিছু দলিল রয়েছে উপন্যাস তিনটিতে। কিন্তু প্রথম খণ্ডে আমরা শুধু তার প্রাথমিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক রূপটাই বেশি পাই।

মনে করুন হাটের সেই ঘটনা। তোলা তুলতে বাধা পেয়ে হাটমালিকের গোমস্তা নিরাপদর ক্ষিপ্ত আচরণ। সে ছোলেমান নিকিরির সরপুঁটির পসরা টান মেরে কাদায় ফেলে দিয়ে দু পায়ে দলতে থাকে। এই ঘটনার বর্ণনাটি অবিস্মরণীয়। এ ক্ষেত্রে অত্যাচারী হিন্দু—অত্যাচারিত মুসলমান; দুইই হিন্দু অথবা দুইই মুসলমান হতে পারত। হলে সেটা ব্যক্তিগত বিরোধ বলে গণ্য হত। কিন্তু দুজন দুই ভিন্ন সম্প্রদায়ের হবার ফলে এবং তৎকালীন রাজনীতির অনুকূল বাতাস পেয়ে একটা সাম্প্রদায়িক ক্রোধের সৃষ্টি করে।

সামাজিক রেষারেষি, আর্থিক প্রতিযোগিতা ততদিনে কলকাতা-কেন্দ্রিক রাজনীতির ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক দাঁও কষাকষিতে পরিণত হয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে দেশবন্ধুর হিন্দু-মুসলমান প্যাক্‌ট মুসলমানকে যেমন উৎসাহিত করেছিল হিন্দুকে তেমনই ক্ষুব্ধ করেছিল। ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’তে দেওয়ান বাড়ির মেজ-কর্তা রাজনৈতিক আকাশে সেদিন যে অশনি-সংকেত দেখতে পেয়েছিলেন তা দেখবার মতো গভীর বুদ্ধিবিবেচনা বেশি লোকের ছিল না। তিনি অক্ষম হতাশার সঙ্গে লক্ষ করছিলেন কেমন করে আশপাশের মানুষগুলি স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ক্রমে যার যার সম্প্রদায়ের মধ্যে ডুবে যাচ্ছিল। কোনও যথার্থ নির্ভীক ও নির্লোভ, আদর্শবাদী যুক্তিবাদী নেতাও তো ছিলেন না যিনি রাজনীতির আঁধির মধ্যে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন।

হিন্দু বলে নয়, বরং দুই সমাজের ঊর্ধ্বে উঠতে পেরে ছিলেন বলেই মেজকতার তখন মনে হয়েছিল, ‘এই দু বছরে কী করলেন দেশবন্ধু? মন্ত্রীদের বেতন যাতে না বাড়ে শুধু তাই নিয়ে হইচই। এর পরিবর্তে কী দিতে হল? সাম্প্রদায়িকতার বাঘের মুখে মাংসের টুকরো। যে আন্দোলন মানুষের মন থেকে এই হিংস্র বাঘকে চিরতরে তাড়িয়ে দিত, তেমন কোনও আন্দোলন কেন গড়ে উঠল না?’

দেশের আমজনতা আর কৃষক প্রজার দুঃখ নিয়ে সেদিন যেমন কংগ্রেসের তেমনই মুসলিম লিগেরও কোনও যথার্থ মাথাব্যথা ছিল না, অথচ ওদের উত্তেজিত করা হচ্ছিল মধ্যবিত্তের স্বার্থে। শিক্ষিত মধ্যবিত্তের চাকুরির বখরা নিয়ে কামড়াকামড়িই সেদিন জাতীয় ইসু হয়ে উঠেছিল।

‘প্রেম নেই’ উপন্যাসেও গ্রামীণ সমাজ কেন্দ্রে রয়েছে বটে তবে মফস্বল শহরের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠভাবে অনুভব করা যাচ্ছে। ‘দেওয়ান বাড়ির মেজকর্তার সাগরেদ’ ফটিক মিঞা এখন আর ইস্কুল মাস্টার নয়। দারেপুরের মিডিল ইংলিশ স্কুলে দু বছর অস্থায়ী হেড মাস্টারের পদে থাকার পরেও যখন তাকে ডিঙিয়ে তার চেয়ে কম যোগ্য সহকর্মী মাণিক্য বক্সীকে হেড মাস্টারের স্থায়ী পদ দেওয়া হল তখন ফটিক মিঞার আশাভঙ্গ হল। আর মোহভঙ্গ হল শুধু স্কুল কর্তৃপক্ষ সম্বন্ধেই নয়, সমগ্র হিন্দু সমাজের সম্বন্ধেও।

স্বভাবতই ইস্কুল থেকে ফটিক পদত্যাগ করল। আর চাকরি নয়, কারুর গোলামি নয়, এবার সে স্বাধীন ব্যবসা করবে। তাই শফিকুল মোল্লা ওকালতি পড়তে কলকাতা চলে গেল। নিষ্কপর্দক চাষীর ছেলে শফিকুলের কলকাতা-বাস এবং ওকালতি পড়া—সে এক কঠিন তপস্যা। তবে কলকাতার হিন্দু সমাজ, মুসলমান সমাজ আর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয়ের ফলে বিবেকবান বুদ্ধিমান যুবকটি যেন ক্রমে আরও বেশি করে তার সাম্প্রদায়িক সত্তাকে ভুলে একটি ব্যক্তি হয়ে উঠতে থাকে মেজোকর্তার মতো। এ দিকে বিচারবিবেচনা-সম্পন্ন মানুষ যেহেতু কোনও গোষ্ঠীর মধ্যে ভিড়ে যেতে পারে না তাই কার্যক্ষেত্রে একাকী সে বিশেষ কিছু করে উঠতেও পারে না। বিরুদ্ধ মতের ঘূর্ণী ঝড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে, অনুত্তেজিত নিষ্ক্রিয় দর্শকমাত্র। এবং তার ফলে একটা আত্মগ্লানিও বোধ করে।

কিন্তু ওকালতি করবার জন্য সে আর কলকাতায় ফিরে যেতে সাহস করল না। এমনকি জেলা শহরেও পশার জমানো সহজ হচ্ছিল না। ওদিকে অনাহারক্লিষ্ট মা-বাবার মুখ তাকে নিয়ত তাড়া করছে। তার সবচেয়ে বড় যে সম্বল আত্মবিশ্বাস তাতেও যেন চিড় ধরতে লাগল। তার হরি মুহুরিও যেন করুণা করেই বলে ‘এই গঙ্গাজলের মত মন নিয়ে আপনি ওকালতি করতি পারবেন না। এ বড় কঠিন ঠাঁই।’

এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যখন তার আত্মসম্মান-বোধের প্রশংসা করে তখন সে যেন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। ক্ষোভে ফেটে পড়ে, ‘আত্মবিশ্বাস! ওটা নিছক মরীচিকা। আত্মসম্মান গরিবের কাছে একটা বহুমূল্য আসবাব। ইয়াকুব, তোমার ঘরে তবু দু’ দিনের খাবার সংস্থান আছে। আমার তাও ছিল না। কিন্তু দম্ভ ছিল রাজা বাদশার মতো। উকিল হব। শ্বশুর আমাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। আমি তা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। বাপের বোঝা হইনি, শ্বশুরের বোঝা হইনি। আমার এক সহপাঠিনী বান্ধবী সাহায্য করতে চেয়েছিলেন, হাইকোর্টে তাঁর বাবার জুনিয়র হতে বলেছিলেন। সেই সাহায্যও ফিরিয়ে দিয়েছি। অথচ এখন সেই ধনী শ্বশুরের মাসোহারাতেই ফটিকের সংসার চলছে, এক বছর ধরে।

এদিকে শফিকুলের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তার ভার অবশ্য সম্পূর্ণই তার মা-বাবা সানন্দে নিয়েছেন। তবু মনে একটা অস্বস্তি তো থাকেই। ওদিকে তখন সাম্প্রদায়িক রাজনীতির একটা সংকট মুহূর্ত। কংগ্রেস আর কৃষক প্রজা পার্টির মধ্যে কোয়ালিশানের সম্ভাবনা শফিকুলকে শেষ বারের মতো আশান্বিত করে। কিন্তু এবারেও আশাভঙ্গ হয়। সরকার গঠন করেই প্রথমে সমস্ত রাজবন্দীদের বিনাশর্তে মুক্তি দিতে হবে—এই ছিল কংগ্রেসের দাবি। আর প্রথমেই প্রজাস্বত্ব আইন প্রণয়ন করে জমিদারের হাত থেকে কৃষককে মুক্ত করতে হবে—এটা ছিল কৃষক-প্রজা পার্টির দাবি। কোন্টাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তাই নিয়ে একমত হতে না পারায় কোয়ালিশানের সম্ভাবনা ধূলিসাৎ হল। শূন্যস্থান পূর্ণ করার জন্য বাংলার রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে এগিয়ে এল মুসলিম লিগ। শফিকুল হতাশ ও বিভ্রান্ত।

এই সময়েই যখন তার প্রথম সন্তানটিই মৃত ভূমিষ্ঠ হয় তখন শফিকুল তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক হতাশার মধ্যে যেন আর কোনও সীমারেখা দেখতে পায় না। লেখকের কলমে ব্যাপারটা অবশ্য প্রতীকী। কিন্তু বেদনাটা সত্য হয়ে উঠেছে।

এর পর শেষ ধাপ ‘প্রতিবেশী। সে সম্পূর্ণ একটা অন্য জগৎ। শহর কলকাতায় যার আজন্ম কেটেছে সেই বিচিত্র জীবনকাহিনীর নায়িকা অমিতা এখন অনারোগ্য ক্যানসার রোগের প্রান্তিক দশায় পৌঁছে। তার নিঃসঙ্গ প্রহরের স্মৃতিচারণের ভিতর দিয়ে যে যুগটা ধরা পড়েছে, তার রাজনৈতিক

আবহ ক্রমে কেমন করে পারস্পরিক সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতায় আবিল হয়ে উঠল, সেই ইতিহাসও যত্ন করে অনুধাবন করেছেন লেখক তাঁর উপন্যাসে। অল্পদিনের মধ্যে বাংলা তথা সারা ভারতের রাজনীতিই যেন দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হল।

বলতে গেলে মাত্র একটি চরিত্রের সাহায্যে তখনকার জটিল রাজনৈতিক চিত্রটিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার দুঃসাধ্য দায়িত্ব নিজের উপর আরোপ করেছিলেন লেখক। অমিতার স্মৃতিতে ভিড় করে আসা মানুষগুলি তো তখন ছায়াছবি। তারই প্রেক্ষিতে একটি সংরক্ত প্রেমের কাহিনীও বুনে গিয়েছেন গৌরকিশোর। শামীম আর অমিতার সেই প্রেম যখন পারিবারিক আর রাজনৈতিক ধাক্কায় বিপর্যস্ত সেই সময়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান করার আশায় অমিতাকে একদিন প্যারাগনে আসতে বলেছিল শামীম। কিন্তু দিনটা ছিল ১৬ই অগস্ট ১৯৪৬। সেদিন কলকাতায় ডিরেক্ট অ্যাকশান যে কী চেহারা নেবে তা ওরা কেউই বুঝতে পারেনি। অমিতা সেদিন প্যারাগনে পৌঁছতে পারেনি। শামীম কি পেরেছিল? কে জানে? এর পরে তো চির-বিচ্ছেদ। আরও ঠিক এক বছর পরে ভারত-পাকিস্তানের বিচ্ছেদ ঘটল। এটাও প্রতীকী! কিন্তু যন্ত্রণাটা তো মিথ্যা নয়।

এখানে এসে কি একটা উপন্যাস শেষ হতে পারে না? শেষ করার জন্য লেখকের কোনও জবাবদিহির প্রয়োজন হয় কি? গৌরের হয়তো মনে হয়েছে, হয়। আমার মনে হচ্ছে, হয় না। পাঠক বিচার করুন।

মহৎ সৃষ্টির একটা লক্ষণ তো এই যে তা যেন শেষ হয়েও শেষ হতে চায় না। পাঠক নিশ্চয়ই সেই অশেষকে কল্পনায় গড়ে তুলবার মতো যথেষ্ট রসদ পেয়েছেন।

গৌরী আইয়ুব

Book Content

প্রথম অধ্যায়
প্রতিবেশী – ১.১
প্রতিবেশী – ১.৫
প্রতিবেশী – ১.১০
প্রতিবেশী – ১.১৫
দ্বিতীয় অধ্যায়
প্রতিবেশী – ২.১
প্রতিবেশী – ২.৫
প্রতিবেশী – ২.১০
প্রতিবেশী – ২.১৫
প্রতিবেশী – ২.২০
প্রতিবেশী – ২.২৫
প্রতিবেশী – ২.৩০
প্রতিবেশী – ২.৩৫
প্রতিবেশী – ২.৪০
প্রতিবেশী – ২.৪৫
প্রতিবেশী – ২.৫০
লেখক: গৌরকিশোর ঘোষ (রূপদর্শী)বইয়ের ধরন: উপন্যাস
গড়িয়াহাট ব্রিজের উপর থেকে, দুজনে

গড়িয়াহাট ব্রিজের উপর থেকে, দুজনে – গৌরকিশোর ঘোষ 

মনের বাঘ – গৌরকিশোর ঘোষ

মনের বাঘ – গৌরকিশোর ঘোষ

গৌড়ানন্দ সমগ্ৰ গৌরকিশোর ঘোষ

গৌড়ানন্দ সমগ্ৰ – গৌরকিশোর ঘোষ (অসম্পূর্ণ)

কমলা কেমন আছে

কমলা কেমন আছে – গৌরকিশোর ঘোষ 

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.