• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)

লাইব্রেরি » পঞ্চানন ঘোষাল » পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল (প্রথম খণ্ড)
পুলিশ কাহিনী ১

পুলিশ কাহিনী ১ – পঞ্চানন ঘোষাল

পুলিশ কাহিনী – প্রথম খণ্ড – পঞ্চানন ঘোষাল
মণ্ডল বুক হাউস
প্রথম প্রকাশ – ১লা বৈশাখ ১৩৬১ সন
প্রকাশক – শ্ৰীসুনীল মণ্ডল
প্রচ্ছদপট – শ্রীগণেশ বসু

সমিত ঘোষালকে
ডঃ পঞ্চানন ঘোষাল
I.P.S. [RETD.] M.Sc. D. Phil J.P.

.

ভূমিকা

রায় বাহাদুর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় C.I.E. মহোদয় খেদ করে বলেছিলেন যে আজও বাঙালীদের কোনও ইতিহাস লেখা হয় নি। উনি দীর্ঘকাল মুশ্লীম শাসনকাল সত্ত্বেও বাঙলা দেশে হিন্দু জমিনদারদের আধিক্যের কারণও জানতে চান। বাঙলার এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ হিসট্রি তথা প্রশাসনীয় ইতিহাস এই পুস্তকে প্রথম লেখা হলো। বাঙলার আদ্যোপান্ত বিচার ও পুলিশ ব্যবস্থার গবেষণাতে বিভিন্ন যুগের রাজনৈতিক অবস্থা স্বভাবতই এসে যায়।

প্রমাণ মূলতঃ দুই প্রকারের হয়, যথা (১) প্রত্যক্ষ প্রমাণ (২) পরিবেশিক প্রমাণ। [Circumstantial evidence] প্রত্যক্ষ সাক্ষীর অভাবে মাত্র পরিবেশিক প্রমাণ দ্বারা অপরাধীদের ফাঁসী পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই ইতিহাস গঠনেও উহার সাহায্য গ্রহণীয়। বহু বিষয়ে কিছু ‘হাঁ’ উল্লেখের সাহায্য নেওয়ার পর [পসিটিভ এভিডেন্স] কিছু ‘না’ উল্লেখের [নেগেটিভ এভিডেন্স] কারণও বিবেচ্য। বক্তব্য বিষয় নিম্নোক্ত কয়টি বিষয় দ্বারা প্রমাণ করবো।

ভূমিকার মূল উদ্দেশ্য এই যে মূল পুস্তকের আলোচ্য বিষয় হতে কিছু উল্লেখ্য অংশ বাদ পড়েছে। ঐগুলি নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো। আশা করি পাঠকরা যথাযথ স্থানে পাঠ কালে ঐগুলি সংযুক্ত করবেন।

প্রতাপাদিত্য

এটি স্বীকৃত সত্য যে উনি প্রদেশ শাসক নবাবকে পরাজিত ও বিতাড়িত করেছিলেন। কিন্তু—এর পরও তিনি বীর যোদ্ধা ছিলেন কিনা এ সম্বন্ধে কোনও কোনও ঐতিহাসিক প্রশ্ন তুলেছেন। অবস্থা সঙ্গীন না হলে মানসিংহের মতো সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাধ্যক্ষের অধীনে বিরাট সম্মিলিত মোগল ও রাজপুত বাহিনী বাঙলা দেশে প্রেরিত হতো না। মানসিংহকে এজন্য বহু প্রতাপ বিরোধী বাঙালী ভূঁইয়াদের সাহায্য নিতে হয়েছিল। প্রতাপাদিত্য বাখরগঞ্জ খুলনা যশোহর ঈশ্বরপুর ও গড় কমলে দুর্গ এবং সাগরদ্বীপে নৌ-ঘাঁটি তৈরী করেন। তাঁর সর্দার শঙ্কর, কালী ঢালী, কমল খোজা ও সূর্যকান্তর মতো দক্ষ সেনাধ্যক্ষ ছিল। তিনি প্রদেশ নবাবের বিরুদ্ধে জয়ী হলেও তাঁর শক্তিক্ষয় হয়। সেই অবস্থাতে তাঁকে সমগ্র মোগল সাম্রাজ্যের পূর্ণ শক্তির সহিত যুদ্ধ করতে হয়। জনৈক ক্ষুদ্র নৃপতির পক্ষে উহা নিশ্চয়ই অসীম সাহস ও শক্তির পরিচয়। জয় পরাজয় কিছুটা ভুল ভ্রান্তি ও ভাগ্যের উপরও নির্ভরশীল। আশ্চর্য এই যে তাঁর চির শত্রু মির্জানাথের পুস্তকের উপর নির্ভর করে ওঁকে বিচার করা হয়। বাদশাকে খুশী করার জন্য প্রতাপ নিন্দা তাদের কাছে বিশ্বাস্য। কিন্তু—প্রাচীন কবিদের প্রতাপ প্রশস্তি [বাহান্ন হাজার যাঁর ঢালি] গ্রহণীয় নয়। জিজ্ঞাস্য এই যে তাহলে অন্য ভূঁইয়াদের সম্বন্ধে ঐরূপ কবি প্রশস্তি নেই কেন? এখানে একমাত্র পরিবেশিক প্রমাণ উভয় মতবাদের সুমীমাংসা করতে পারে।

পলাশীর যুদ্ধ

১৭৫৭ খ্রীঃ ২২ জুন ক্লাইভের বাহিনী ভাগীরথী পার হয়ে নবাবের ছাউনির দুই মাইল উত্তরে এক লক্ষ আম্রবৃক্ষ সম্বলিত বিরাট লক্ষবাগ নামক আম্রবাগিচাতে প্রবেশ করলো। ক্লাইভের বাহিনীতে ৯৫০ জন গোরা সৈন্য [লাল পল্টন] ও তেলিঙ্গী বাহিনী সহ ২১০০ দেশীয় সিপাহী। তাদের মাত্র আটটি ছোট ও দুটি বড় কামান ছিল। নবাব বাহিনীর ছিল ৫০ হাজার পদাতিক, ১৮০০০ অশ্বারোহী ও পঞ্চাশটি বড় কামান। ফরাসী সেনাপতি সফ্রের অধীনে চারটি ছোট কামান। সফ্রের বাহিনীর পিছনে মীরমদন ও মোহনলালের বাহিনী এবং সমগ্র যুদ্ধ স্থানকে ঘিরে ছিল রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ ও মিরজাফরের বাহিনী। এরা সকলে আক্রমণ করলে ক্লাইভ বাহিনীর চিহ্ন মাত্র থাকতো না। ক্লাইভ সিলেক্ট কমিটিতে সাক্ষ্য দেওয়ার কালে উহা স্বীকার করেন।

বেলা এগারটায় ভীষণ বৃষ্টি এলো। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা বারুদ ঢাকার আচ্ছাদন আনে নি। তবে বিলাস সামগ্রীর অভাব ছিল না। বারুদ ভিজে নবাবের মতো ফরাসীদেরও কামান নিস্তব্ধ। কিন্তু ইংরাজদের ত্রিপল থাকাতে বারুদ ভেজে নি। এই সুযোগে জনৈক ইংরাজের ভুলে যুদ্ধ আরম্ভ হলো। সফ্রের কামান দাগার স্থানটি তখন ইংরাজদের দখলে। তাকে সাহায্য করতে গিয়ে মীরমদন আহত ও তাঁর কয়জন আত্মীয় সেনানী নিহত হলেন। অবস্থা বিরূপ বুঝে মোহনলাল তাঁর বাঙালী সেনাদল সহ ইংরাজদের আক্রমণ করলেন। ইংরাজ বাহিনী ঐ আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে হটতে আরম্ভ করেছে। ঐ সুযোগে ফরাসী গোলন্দাজ সফ্রে পুনরায় কামান দাগছে। কিন্তু—তখনও মীরজাফর ও ইয়ার লতিফ এবং সেনাপতি রায়দুর্লভের [বিরাট। মূল বাহিনী নিষ্ক্রিয়। নবাব সব বুঝে মীরজাফরের পদতলে মুকুট রেখে তাদের যুদ্ধ করতে তাঁর কাতর অনুরোধ জানালেন। মীরজাফর সেই দিনের মতো যুদ্ধ বন্ধ রেখে পরদিন সকালে যুদ্ধ করতে রাজী হলেন। মোহনলাল নবাবের ঐ রূপ নির্দেশ পেয়ে বলে পাঠালেন—‘এখন আর পিছু হটা নয়।’ তবু তাঁর কড়া পুনরাদেশে মোহনলাল তাঁর বাহিনীকে পিছু হটতে আদেশ দিলেন। ততক্ষণে প্ৰকৃত অবস্থা বুঝে নবাবের ‘মারসীনারী’ বিদেশী সৈন্যরা শিবির ত্যাগ করতে শুরু করেছে। কিন্তু রায় দুর্লভের বাঙালী সৈন্যরা পালায় নি। এখানে মোহনলাল এবং রায় দুর্লভের অধীন বাঙালী সৈন্যরা নবাব আনুগত্যে দ্বিধাবিভক্ত। তবে তারা আদেশ মতো কার্য করেছে। এতো বড় সুযোগের সদ্ব্যবহার ইংরাজরা করেছিল। ইতিমধ্যে নবাবের এক আত্মীয় শিরে নবাবের রাজছত্র ধরে তাঁকে ইংরাজদের বন্দুকের নিশানা করেছে। মোহনলাল ঐ ছত্র সরাতে ছুটে এলেন। এর ফলে আরও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলো। নতুবা একা মোহনলাল ও তাঁর বাঙালী বাহিনী ক্লাইভকে বিতাড়িত করতেন :

এই যুদ্ধের ফলাফল যাই হোক না কেন, উহা প্রমাণ করে তখনও বাঙালী সৈন্য সাফল্যের সহিত ব্যবহৃত হতো। বাবর তাঁর আত্ম-জীবনীতে রাজপুতদের তাচ্ছিল্য করলেও স্বীকার করেছিলেন যে ‘বাঙালীরা ভালো যুদ্ধ করে।’ উনি ক্ৰোধ প্ৰকাশ করে লেখেন যে তিনি বাঙালীকে দেখে নেবেন। পাঠানদের সাহায্যকারী ভূঁইয়ারদের বাঙালী সৈন্যদের লক্ষ্য করে তাঁর ঐ উক্তি। প্রাচীন দিগ্‌বিজয়ীদের বাঙালী নৌ সৈন্যদের প্রতি ভীতি রঘুবংশ কাব্যে উল্লেখিত। কিন্তু এতো সত্ত্বেও বাঙালীদের দ্বারা প্রথম দেশীয় বাহিনী তৈরি করলেও ইংরাজরা পরিশেষে বাঙালীকে সেনাবাহিনী ও সাধারণ পুলিশের পদেও নিযুক্ত করতে চান নি। সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, কৃষক বিদ্রোহ, পাইক বিদ্রোহ ও নীল বিদ্রোহ দ্বারা বাঙালীরা পলাশীর যুদ্ধের ভুল কিছুটা শুধরেছিল। পরিবেশিক প্রমাণ দ্বারা এই ব্যবস্থার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা সম্ভব।

হিন্দু জাতি

হিন্দু কোনও ধর্মের নাম নয়। উহা একটি জাতির নাম। ভারতীয়রা মুশ্লীম খৃস্টান বৌদ্ধ জৈন শিখ বৈষ্ণব শাক্ত গাণপত্য শৈব প্রভৃতি ধর্মীয় হলেও জাতি ও সংস্কৃতিতে সকলেই হিন্দু। এই বিষয় স্বীকার করে নবাব বাদশারাও এদেশকে হিন্দুস্থান বলেছেন। হিন্দু শব্দ কোনও ধর্মের সংজ্ঞাও নয়। হিন্দু নামে ধর্মের কোনও প্রচারক নেই। কোনও নিয়ম ও আচার পালন না করেও লোকে হিন্দু। এমন কি নাস্তিক ও জড়বাদী, একেশ্বরবাদী প্রভৃতিও হিন্দু। ইহা একটি সমন্বয় বাচক [ফেডারেশন অফ রিলিজনস্] অপৌরুষেয় ধর্ম। এতে ব্যক্তিগত মত ও পথ সর্বতোভাবে স্বীকৃত। [হীনতা বর্জনকারী মানব নিচয় হিন্দু বলে আপনারে দেয় পরিচয়—আনন্দবাজার] হিন্দু অর্থে সৎ ব্যক্তি মাত্রকেই বুঝায়। অর্থাৎ শুনহ মানুষ ভাই। সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই। তবে একথাও ঠিক যে ওই হিন্দু ধর্মই সমগ্র ভারতকে একতাবদ্ধ রেখে ছিল।

আসিন্ধু সিন্ধু পর্যপ্তাঃ যস্য
ভারত ভূমিকা পিতৃভূ পুণ্যভূ
শ্চৈব স বৈ হিন্দুরীতি স্মৃতিঃ

এই মতবাদ আবহমানকাল হতে প্রচলিত না থাকলে হিন্দুরা ধর্ম সম্বন্ধে এত উদার হতো না। কিন্তু—ইংরাজরা কায়েমী স্বার্থ রক্ষার্থে হিন্দু বিদ্বেষী হয় এবং সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্রয় দিতে থাকে। তবে বাঙালীদের স্বাধীনতা প্রিয়তা ও ব্রিটিশ বিরোধিতার জন্য বাঙালীরাই তাদের লক্ষ্য হয়। আশ্চর্য এই যে প্রথমে এই বাঙালীদেরই ইংরাজরা মস্তকোপরি রেখেছিল। তৎকালে বড় সাহেব বলতে জনৈক ইংরাজ ও ছোট সাহেব বললে জনৈক বাঙালীই বোঝাতো।

[হিন্দু ধর্ম সম্পর্কিত এরূপ ধারণার জন্য হিন্দু রাজন্যবর্গ ও জমিনদার শাসকরা প্রজাদের ধর্মান্তর গ্রহণে বাধা দেন নি। অন্যদিকে—হিন্দু মুশ্লীম উভয় শ্রেণীই নিজেদের বাঙালী উপজাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করেছে।]

আরোপক পুলিশ

সম্রাট অশোক প্রথমে বাজারের নিয়ন্ত্রণে প্রথম আরোপক সংস্থা তৈরি করেন। সম্ভবতঃ—গুপ্ত সম্রাটরা উহার অনুকরণ করেন। কিন্তু—সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী [১২৯৬—১৩১৬] মধ্যযুগীয় ভারতে প্রথম আরোপক সংস্থার [এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ] স্রষ্টা। বাজারের লেনদেন ও দর নিয়ন্ত্রণে শাহান-ই-মুণ্ডি [শাহান = তত্ত্বাবধায়ক। মুণ্ডি = বাজার] নামে এক কর্মীর অধীনে ঐ আরোপক সংস্থা থাকে। ক্রেতাকে ঠকালে ও সপ্তাহে একদিন বাজার বন্ধ না রাখলে উনি ব্যবস্থা নিতেন। ওজনে কম দ্রব্য দিলে ব্যাপারীর দেহ হতে সম পরিমাণ মাংস কেটে নেওয়া হতো। শাহান-ই-মুণ্ডির কাছারী বাজারগুলির মধ্যে থাকতো। ছুটির দিন তথা সাপ্তাহিক বন্ধের দিন উহা হরিতাল রঙে রঞ্জিত করা হতো। তাই আজও বাজার বন্ধের দিনকে হরতাল বলা হয়।

আগ্নেয় অস্ত্র

শুক্রনীতি খ্রীঃ পূঃ প্রাচীন পুস্তক। উহাতে স্পষ্টতঃ উক্ত আগ্নেয়াস্ত্র তিন প্রকার, যথা লঘু নালিকা, নালিকা ও বৃহন্নালিক। [৪র্থ অধ্যায়, ৭ম প্রকরণ] লঘু নালিকার বিবরণে উক্ত—উহা পঞ্চবিতস্তি তথা আড়াই হাত। একটি লৌহ নির্মিত নল বা নলি। উহার মূলে আড়ভাবে একটি ছিদ্র। মূল হতে ঊর্ধ্ব পর্যন্ত আঃভূখি বা গর্ত। মূলে ও অগ্রভাগে লক্ষ্যার্থে তিল বিন্দু মাছি। যন্ত্রের আঘাতে অগ্নি নির্গমনার্থে যুক্ত প্রস্তর খণ্ড। [চকমকি বন্দুক?] অগ্নিচূর্ণ তথা বারুদের আধারভূত কর্ণ। উত্তম কাষ্ঠের উপাঙ্গ ও বুধ্নতথা ধরবার মুঠ। মধ্যাঙ্গুলী প্রবেশে সক্ষম অগ্নিচূর্ণের গহ্বর। উহার ক্রোড়ে অগ্নিচূর্ণ সন্নিবেশের দৃঢ় শলাকা। উহার আয়তন মতো উহা দূরভেদী। বৃহন্নালিকের গর্ভ তথা নীরেট লৌহ গোলক। ফাঁপালো গোলার মধ্যে ক্ষুদ্রগুলি। লঘু নালিকের নাল বা ছিদ্রের উপযুক্ত সীসক বা ধাতু গুলিকা। নালাস্ত্র লৌহসার দ্বারা নির্মিত। অগ্নিচূর্ণ তথা বারুদ সম্বন্ধে শুক্রাচার্যের উক্তি। সুভচি, গন্ধক ও কয়লা যথাক্রমে পাঁচ, এক ও এক পল বা অংশ। আয়ুর্বেদ মতে সুভচি অর্থে সোরা। অর্ক সুহী ও অন্য বৃক্ষের কাষ্ঠ বদ্ধ স্থানে কয়লার জন্য জ্বালানো। ঐ কাঠকয়লার গুঁড়া করে ও চেলে স্লুহী অর্ক লশুন আদি রসে মিশ্র ও শুষ্ক করে কাঁকী করে অগ্নিচূর্ণের তৈরি। ১৪০৪ খ্রীঃ প্রেমনগর কামান ও বন্দুকে সুরক্ষিত ছিল। vide T.A.S.B. vol. xxx viii p. 1 (1869) (page 40-41) বর্তমান ইংরাজ লেখকদেরও মতে ভারতে কামান ও বন্দুক প্রথম সৃষ্ট। প্রতীত হয় যে ওগুলি পারিবারিক ঘরানাতে ছিল। যুদ্ধাপেক্ষা পরবে বেশী ব্যবহৃত হতো। হাউই তথা রকেট ভারতে সৃষ্ট ও ব্যবহৃত। প্রাচীন বহু গ্রন্থে আগ্নেয়াস্ত্রের আভাস বা বিবরণ আছে। এইগুলি ব্যবহারের প্রয়োজনীয় শিক্ষা ধৈর্য ও উৎসাহ জনগণের হয়তো ছিল না।

সম্ভবত ধনুকের তীরের অগ্রমুখে হাওয়াই বাধা হতো। তারপর [অগ্নি-সংযোগ করে] ঐ তীর নিক্ষেপ করা হতো। ঐ তীর উহাকে কিছুটা দূর পৌঁছে দিলে বাকি পথ [অগ্নিদাহের পর] উহা নিজ বলে অতিক্রম করতো। ঐরূপ অস্ত্রকে অগ্নিবাণ আখ্যা দিলে ভুল হবে না।

কিন্তু—শুক্রনীতি সংস্কৃত গ্রন্থের প্রাচীনত্ব নির্ধারিত না হলে উহা বিতর্কমূলক থাকবে। [বলা বাহুল্য—আগ্নেয়াস্ত্র অতি উন্নত না হওয়া পর্যন্ত তীর ধনুকের চলন থাকে।] ভারতের মতো প্রতিবেশী প্রাচীন চীন দেশেও বারুদ তৈরি হতো। পুরাকালে চীনের ও ভারতের মধ্যে আনাগোনা ও লেনদেন সুবিদিত।

বিষ্ণুপুরের রাজারা এক’শ মন ওজনের বহু লৌহ কামান তৈরি করেন। উহার নলের বিরাট ব্যাসে বিরাট গোলা পোরা যেত। উহার দ্বারা বাঙালী যোদ্ধারা বহুবার মারহাটা বর্গীদের হটাতে পেরেছিল। [নবাবের কালে বাঙালী কর্মকাররাই কামান ও বন্দুক তৈরি করেছে।]

সিপাহী মিউটিনীর পর ব্রিটিশরা ভারতের জনগণ দ্বারা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার এবং বহন ও রক্ষণ লাইসেন্স ব্যতিরেকে এক্সপ্লোসিভ এ্যাকট ও আর্মস্ এ্যাকট দ্বারা বন্ধ করেন। হিন্দু ও মুশ্লীম সরকার ভারতের জনগণকে ইংরাজের মতো নিরস্ত্র করে নি।

বাঙালী

কেউ কেউ বলে—বাঙালীরা আর্য অনার্য দ্রাবিড়ের মিশ্র জাতি। এ জন্য সর্বভারতীয় বোধ ও প্রীতি বাঙালীদের রক্তেতে। বাঙালীর [হিন্দু মুশ্লীম খৃষ্টান বৌদ্ধ] দেহাকৃতি ব্লাড গ্রুপিং ও নৃতাত্ত্বিক তথ্য এ বিষয়ে বিবেচ্য। ঐ তথ্য হিন্দু মুশ্লীমের দ্বিজাতি তত্ত্ব রাতিল করে। এরা কখনও [ভূঁইয়ার রাও] এক নেতার অধীনে একতাবদ্ধ হয় নি। বরং পারস্পরিক বিদ্বেষ ও আত্মধ্বংসী রাজনীতির এরা সহজে শিকার হয়। কিছু ব্যক্তির মতে এরা ঘর জ্বালানে পর ভুলানে। এরা বারে বারে নিজেদের ক্ষতি করে সমগ্র ভারতের উপকার করে। এরা ভাবপ্রবণ, দুঃখ বিলাসী ও আদর্শবাদী। ওদের প্রথম মুভমেন্টে তারা রাজধানী হারায় ও প্রদেশের উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের বেহাত হয়। ওদের দ্বিতীয় মুভমেন্টে তারা সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারাতে নিজ দেশে পরবাসী হয়। ওদের তৃতীয় মুভমেন্টে পদের প্রদেশ খান খান তিন খান হয়ে যায়। চতুর্থ কোনও মুভমেন্ট করলে তাদের উপকার হবে কিনা তা বিবেচ্য। প্রতিবার এরা নিজেরা পিছিয়ে সমগ্র ভারতকে এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এ জন্য এরা কখনো কারো নিকট সাধুবাদ পায় নি। নিজেদের জন্য ছাড়া অন্য সকলের জন্য এরা ভাবে ও প্রাণপণ করে। এত বড় স্বার্থত্যাগী ও আত্মভোলা জাতি পৃথিবীতে বিরল। কিন্তু—নিজেদের মধ্যে দলাদলি ও হানাহানি তাদের মধ্যে আজও আছে।

ইতিহাস

সর্বদেশের মতো প্রদেশের রাজধানীর ভাষা বাঙালী জনগণ দ্বারা গৃহীত হয়। এ জন্য রাজধানী গৌড়ের ও শান্তিপুরের মার্জিত ভাষার প্রভাব বাঙলা ভাষার উপর সুস্পষ্ট।

কয়েকজন জবরদখলী ও নবাবদের ব্যক্তিগত জীবন নিশ্চয়ই ইতিহাস নয়। প্রশাসনিক ইতিহাসই সর্ব দেশের প্রকৃত ইতিহাস। কারণ—ঐ প্রশাসন ব্যবস্থার সহিতই জনগণের সুখদুঃখ ও সুবিধা অসুবিধা বিজড়িত। এই সঙ্গে সমাজ বিবর্তনের ইতিহাসেরও অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক রয়েছে।

ব্যবসায়

বাঙালীর নৌ-শিল্প দারোগাদের সাহায্যে বলপ্রয়োগে ধ্বংস করা হলেও ঐ-ভাবে তাদের তাঁত-শিল্প নষ্ট করা হয় নি। তাঁতীদের অঙ্গুলী কর্তনের কাহিনী অলীক। ইংল্যাণ্ডের মতো পরাধীন ভারতে শিল্প বিপ্লব সম্ভব হয় নি। ইংল্যাণ্ডের যন্ত্র চালিত তাঁতের সহিত বাঙালী তাঁতীরা প্রতিযোগিতাতে অক্ষম হয়, কলিকাতার লাহা পরিবার ইংল্যাণ্ডের লাট্টু মার্কা বস্ত্রের সর্ব ভারতীয় এজেন্ট হলেন। তাঁরা ঐ ব্যবসায়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছিলেন। বিড়লারা পরে ঐ ব্যবসায়ে তাঁদের বেনিয়ান হন। কিন্তু—লাহা পরিবার ব্যবসায় ছেড়ে অধিক সম্মান পেতে [জমিনদারী ক্রয় করে] জমিনদার হলেন। ফলে বিড়লা হাউস তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হলো।

বাণিজ্য লক্ষ্মী বাঙালীদের ত্যাগ করে ক্ষেত্রীদের নিকট ও ক্ষেত্রীদের ত্যাগ করে [পরে] মাড়বারীদের নিকট চলে গেল। এখন উহা তাদের নিকট হতে ভাটিয়াদের নিকট চলে যাচ্ছে। জমিনদার হওয়ার লোভ আয়েসীজীবন ও ক্ষেত্র বিশেষ চরিত্রহানি উহার কারণ। বস্তুতঃ পক্ষে—বর্ধমান বা নাটোর রাজ্যের পার্শ্বে বিড়লারাও আসন পেতো না। বাঙালী ব্যবসায়ীরা নামেতে মহারাজা হতে চাইলেন। রাজনীতি ও চাকুরি সম্বল বাঙালীদের পূর্বস্থানে ফেরার চেষ্টা কম। তাই এখন তাদের মুখের একমাত্র বুলি—‘সব কিছু জাতীয় করণ করো।’

হিন্দু বাঙালীদের পূর্বকালীন জাহাজী বাণিজ্য ও কলোনী স্থাপন সুবিদিত। ১৭৮২ খৃষ্টাব্দেও ফস্টার সাহেব হীরাট নগরে ১০০ জন এবং ভার্শীশ নগরে ১১০ জন হিন্দু বণিক দেখেছেন। বাজমশীদ, আস্ত্রারণ, ভেজদ, কাস্পিয়ান ও পারস্য সাগর কূলেও বহু হিন্দু বণিক সপরিবারে বাস করতো। কলিকাতা শহরে বাঙালী বসাক ও শেঠ পরিবার ও অন্যরা প্রাচীন ব্যবসায়ী। সপ্তগ্রাম ও চুঁচুড়ার সুবর্ণ বণিকরাও তখন সক্রিয়। পরে—এরা সকলে কলিকাতাতে ইংরাজদের সঙ্গে ব্যবসা ভাগাভাগি করে। ১৮৫১ খ্রীঃ বণিক সভা প্রতিষ্ঠা কালেও তাতে বহু বাঙালী ব্যবসায়ীর নাম পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হতে হটলেও ব্যবসা ক্ষেত্রে তখনও বাঙালী হটে নি। অর্থাৎ—অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তারা তখনও পরাধীন নয়। কিন্তু সরকার অনুগৃহীত ব্রিটিশ উৎপাদকের সহিত প্রতিযোগিতাতে মুচী মাঝি প্রভৃতি দেশীয় কারিগররা হেরে চাষের মাঠে ভিড় জমালো। বাঙালী ধীরে ধীরে ব্যবসার ক্ষেত্র হতেও বিদায় নিল। পুস্তকের এই ভূমিকাতে বাঙালীকে আমি তাদের পূর্ব কৃতিত্ব স্মরণ করালাম। তাদের আমি বলতে চাই যে ‘আত্মানাং বিদ্ধি’ অর্থাৎ নিজেদের চিনুন।

পূর্বে বাঙালী কনট্রাক্টারদের দ্বারা স্বর্ণ রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রা তৈরি করানো হতো। ঐ কালে ঐ সকল ধাতুতে খাদ না থাকাতে সমমূল্যের জন্য মুদ্রা জাল হতো না। ব্রিটিশ গভর্মেন্ট নিজস্ব টাঁকশাল স্থাপন করে খাদ মিশ্রিত মুদ্রা তৈরি করতে।

***

সৌজন্যে – বইবিন্দু

Book Content

প্রথম অধ্যায় – পরিসংজ্ঞা
দ্বিতীয় অধ্যায় – প্রাচীন-পুলিশ
তৃতীয় অধ্যায় – মধ্যবর্তী পুলিশ
চতুর্থ অধ্যায় – বাংলা পুলিশ
সপ্তম অধ্যায় – কলিকাতা-পুলিশ
পরিশিষ্ট পুলিশ কাহিনী
লেখক: পঞ্চানন ঘোষালবইয়ের ধরন: ইতিহাস ও সংস্কৃতি

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.