নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি – শংকর
নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরি – শংকর
.
গোড়ার কথা
সে প্রায় দুশো বছরের আগেকার কথা। সুইডেনের এক বিজ্ঞানী ভদ্রলোকের খেয়াল হলো পৃথিবীর জীবজন্তু এবং কীটপতঙ্গদের কোমো নির্ভরযোগ্য তালিকা নেই! মাথায় তাঁর ভূত চাপলো তিনি নিজেই এই অভাব পূরণ করবেন। সুতরাং সর্বত্র তাঁর অনুসন্ধান শুরু হলো এবং তারপর কাগজকলম নিয়ে লিখতে বসলেন পৃথিবীর প্রথম জীবজগৎ তালিকা। ভদ্রলোকটির নাম কার্ল ফন লিনিয়াস।
লিনিয়াস তাঁর কর্মবহুল জীবনকালে মাত্র ৪৩৭৯টা নাম সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তারপর এই দুশো বছর ধরে পৃথিবীর আরও কত মানুষ পর্বত, সাগর, মরুভূমি, জলাজঙ্গল ও জনপদে নতুন কীটপতঙ্গ আবিষ্কারের নেশায় নিজেদের যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য এমন কি জীবন ব্যয় করলেন। ব্রুস, বাটলার, ক্রিস্ট্যাল, টেলর, কীবিল—এবং আমাদের জীমূতবাহন সেন, যাঁকে নিয়ে এই নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরির কাহিনী।
জীমূতবাহন বলতেন, “আমার কাছেই ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার পোকা-মাকড়ের নাম আছে। অর্থাৎ তোমাদের আট পৃষ্ঠার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার সবগুলো পাতায় কোনোরকম হেডিং না দিয়ে যদি শুধু পোকাদের নাম ছাপিয়ে যাওয়া যায় তাহলেও পুরো আট সপ্তাহ লাগবে।”
এখনও নাকি প্রতি বছর চার হাজার নতুন পোকার নাম সংগ্রহ হচ্ছে এবং কারও কারও ধারণা, পৃথিবীতে অন্তত দেড় কোটি রকমের কীটপতঙ্গ আছে।
জীমূতবাহন সেনের নাম পাঠক-পাঠিকাদের কাছে অপরিচিত না-ও হতে পারে। কিন্তু ঈশিতা সেন, ইন্দুমতী দেশাই, মদালসা আর অমিতাভ মিত্রের খবরাখবরও যে তাঁরা রাখবেন এটা আশা করা যায় না। প্রেস ট্রাস্ট অফ ইণ্ডিয়া জীমূতবাহন সম্পর্কে কয়েক লাইনের যে সংবাদ প্রচার করেছিলেন, সংবাদপত্র পাঠকরা তার থেকে জীমূতবাহনের সংবাদ হয়তো জানতে পেরেছেন।
পি-টি-আই পরিবেশিত সেই সংবাদ স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাবিক সে সম্পর্কে অবশ্যই তর্কের অবকাশ আছে। কিন্তু সবটুকু কি জানা গিয়েছে? টেলিপ্রিন্টারে পাঠানো সামান্য ক’লাইন খবরের পিছনে অনেক সময় যে বৃহৎ ঘটনা লুকিয়ে থাকতে পারে জীমূতবাহনের জীবন তাই প্রমাণ করে।
নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটরির কাহিনী শুরু করবার আগে শ্রীমতী ঈশিতা সেনের কাছে আমার একটি ব্যক্তিগত আবেদন আছে। জীমূতবাহনের এই ইতিবৃত্ত তাঁর হাতেও পৌঁছতে পারে। এই কাহিনী যে তাঁর মতঃপুত হবে এমন আশাও রাখি না। কিন্তু এইটুকু প্রথমেই বলে রাখতে চাই, কাউকে আঘাত দেবার জন্যে বা লোকচক্ষে ছোট করবার জন্যে এই কাহিনীর সৃষ্টি নয়। শ্রীমতী সেনের কাছে আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, তিনি যেন ভুল না বোঝেন কাউকে।
বাংলা দেশ থেকে অনেক দূরে এই কাহিনীর পটভূমি। ট্রেনে করে অমিতাভ মিত্র চলছিল জীমূতবাহনের সেই কর্মকেন্দ্রে।
Leave a Reply