• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

তুমি তো তেমন গৌরী নও – শঙ্খ ঘোষ

লাইব্রেরি » শঙ্খ ঘোষ » তুমি তো তেমন গৌরী নও – শঙ্খ ঘোষ
Current Status
Not Enrolled
Price
Free
Get Started
Log In to Enroll

এই নদী, একা

গা থেকে সমস্ত যদি খুলে পড়ে যায়, আবার নতুন হয়ে ওঠা
সজীবতা
এর কোনো মানে আছে। অপরাধী? প্রতিদিন কত পাপ করি
তুমি তার কতটুকু জানো?
হাতের মায়ায় কত অভিশাপ সঞ্চিত রেখেছি, পাশাপাশি নদী,
 তাও সব খুলে যায়; চেনা শহরের থেকে দূরে
 উঁচুনিচু সবুজের ঢল
 তার পাশে মাঝে মাঝে নত হতে ভালো লাগে লাবণ্যে উদ্ভিদ
তুমি তার কতটুকু জানো? এই নদী, একা
দু-চোখ সূর্যাস্তে রাখে প্রবাহিত, বলে
আমি কি অনেক দূরে সরে গেছি?

*

শুশুনিয়া

ক্রমশ মিলায় দূরে শুশুনিয়া, বাংলা চাল
 সাঁওতালসঙ্ঘের আদিমানবীর চোখ
 আবার নতুন করে ঘিরে পাওয়া অবিশ্বাস, ভয়

যদিও কোথাও নেই, তবু এই গোধূলি সুঠাম
বাঁকুড়ার ঘোড়া মধ্যমাঠে, মুহূর্তে সমস্ত স্থির
এমনকী মুহূর্তই স্থির

আমরা সবাই খুব পরিমিত স্বাভাবিক কথা বলি
কিছুই ঘটেনি যেন, সত্যিও ঘটেনি কিছু, তবু
যেসব প্রপাতধারা কখনো দেখিনি তার আসে শুশুনিয়া

পাথরকীর্ণ দুঃখ, হামাগুড়ি দিয়ে নেমে আসা
সিঁথিপথে লতানো বিষাক্ত বীজ
 তাছাড়া আমারও হাত অন্য মানবীর হাতে ধরা

আর তুমি
পাহাড়ের পায়ে বসে কেঁপে ওঠো সতেজ ঝর্নার জল ঠোঁটে
দশ দিকে প্রকৃতি বিস্তর খোলা

আমার মুখেও কি না খুলে যায় ষোলো আনা লোভ
জলই জীবন, দস্যু জল–

ক্রমশ মিলায় দূরে শুশুনিয়া, বাংলা চাল
সহায় সম্বল!

*

মিথ্যে

এই মুখ ঠিক মুখ নয়
মিথ্যে লেগে আছে
 এখন তোমার কাছে যাওয়া
ভালো না আমার।

তুমি স্নেহে সুদক্ষিণা বটে
মেঘময় ঠোঁট নেমে আসে
তোমার চোখের জলে আজও
পুণ্যে ভরে ওঠে রুদ্ধ দেশ
 আমি তবু ছিঁড়ে যাই দূরে
এই মুখ ঠিক মুখ নয়
হলুদ শরীর থেমে যায়
বোধহীন, তাপী
তোমার অনেক দেওয়া হলো
আমার সমস্ত দেওয়া বাকি।

*

অশুচি

সবাই সতর্ক থাকে দুপুরে বা মধ্যরাতে তুলে দেয় খিল
 পথের ভিখিরি মা-ও ভাঙা ক্রাচে ভর করে বুঝে নেয় মাছির গুঞ্জন
আমারই সহজ কোনো প্রতিরক্ষা নেই
চুরি হয়ে যায় সব বাক্স বই সামঞ্জস্য
অথবা শুচিতা।

তাই পথে পথে ঘুরি, ফিরে যায় গৈরিক গোধূলি
এমন মুহূর্তগুলি চিতায় তুলেছি আজ চণ্ডালের মতো
তবু কেন
আমি যদি এতই অশুচি তবে পথিকেরা আজও কেন জল চায়
আমার দুয়ারে?

*

ভিখারি বানাও কিন্তু তুমি তো তেমন গৌরী নও

আমাকে কি নিতে চাও? কত জরি ছড়াও সুন্দরী
দুই হাতে ঝরাও ঝালর

আমাকে কি নেবে তুমি? কখনো দেখিনি আগে চোখে
এত নিরুপম ভালোবাসা

তোমার মেদুর হাসি ধরেছি বিশ্বের পাশাপাশি
 আণবী ছটায় জ্বলে ঠোঁট

আমাকে কি নিতে চাও? নেবে কোন্ শূন্য মাঠ থেকে?
 হায় তুমি অন্নপূর্ণা আজ।

চাও শুধু সমর্পণ, একে একে সব নাও খুলে
মেদ মজ্জা হৃদয় মগজ

তারও পরে চাও আমি খোলাপথে হাঁটু ভেঙে বসে
হাতে নেব এনামেল বাটি

জড়াও রেশমদড়ি কত জরি ছড়াও সুন্দরী
দিন দিনে চাও পদতলে

ভিখারি বানাও, কিন্তু মনে মনে জানোনি কখনো
তুমি তো তেমন গৌরী নও।

*

দশমী

তবে যাই
 যাই মণ্ডপের পাশে ফুলতোলা ভোরবেলা যাই
 খাল ছেড়ে পায়ে পায়ে উঠে-আসা আলো

যাই উদাসীন দেহে শুরুগুরু বোধনের ধ্বনি
 যাই সনাতন বলিদান

কপালে দীঘল ভালো পূজার প্রণাম
যাই মুখটাকা জবা চত্বর অঙ্গন বনময়

যাই ছায়াময় ভিড়ে মহানিশি আরতির ধোঁয়া
দোলে স্মৃতি দোলে দেশ দোলে ধুনুচির অন্ধকার

মঠের কিনার ঘিরে কেঁপেওঠা বনবাসী হাওয়া
যাই পিতৃপুরুষের প্রদীপ-বসানো দুঃখ, আর

ঠাকুমা যেমন ঠিক দশমীর চোখে দেখে জল
যাই পাকা সুপুরির রঙে-ধরা গোধূলির দেশ
আমি যাই

*

পুনর্বাসন

যা কিছু আমার চারপাশে ছিল
ঘাসপাথর
সরীসৃপ
ভাঙা মন্দির
যা কিছু আমার চারপাশে ছিল
নির্বাসন
 কথামালা
একলা সূর্যাস্ত
যা কিছু আমার চারপাশে ছিল
ধ্বস
তীরবল্লম
ভিটেমাটি
সমস্ত একসঙ্গে কেঁপে ওঠে পশ্চিমমুখে
 স্মৃতি যেন দীর্ঘযাত্রী দলদঙ্গল
ভাঙা বাক্স পড়ে থাকে আমগাছের ছায়ায়
 এক পা ছেড়ে অন্য পায়ে হঠাৎ সব বাস্তুহীন।

যা কিছু আমার চারপাশে আছে
শেয়ালদা
ভরদুপুর
উলকি দেয়াল
যা কিছু আমার চারপাশে আছে
কানাগলি
স্লোগান
মনুমেন্ট
 যা কিছু আমার চারপাশে আছে
শরশয্যা
ল্যাম্পোস্ট
 লাল গঙ্গা
সমস্ত একসঙ্গে ঘিরে ধরে মজ্জার অন্ধকার
তার মধ্যে দাঁড়িয়ে বাজে জলতরঙ্গ
চুড়োয় শূন্য তুলে ধরে হাওড়া ব্রিজ
পায়ের নীচে গড়িয়ে যায় আবহমান

যা কিছু আমার চারপাশে ঝর্না
উড়ন্ত চুল
উদোম পথ
ঝোড়ো মশাল
যা কিছু আমার চারপাশে স্বচ্ছ
ভোরের শব্দ
 স্নাত শরীর
শ্মশানশিব
 যা কিছু আমার চারপাশে মৃত্যু
একেক দিন
হাজার দিন
জন্মদিন
সমস্ত একসঙ্গে ঘুরে আসে স্মৃতির হাতে
অল্প আলোয় বসে-থাকা পথভিখারি
যা ছিল আর যা আছে দুই পাথর ঠুকে
 জ্বালিয়ে নেয় প্রতিদিনের পুনর্বাসন

*

ভূমধ্যসাগর

আমাদের দেখা হলো আচম্বিতে
 অধিকন্তু শীতে
 পশ্চিমপ্রেরিত আমি, তুমি এলে পূর্বের প্রহরী
দুই প্রান্ত থেকে ফিরে আমাদের দেখা হলো ভূমধ্যসাগরে।

হাতে হাত তুলে নিই, তুমি স্রোতে কেঁপে ওঠো, বলো
‘এ কী
কী সাজে সেজেছ নেশাতুর
তোমারও দু-হাতে কেন কঙ্করেখার উচ্ছলতা
দেখো কত দীন হয়ে গেছ
সমস্ত শরীর জুড়ে বিসর্পিণী অত্যাচার অপব্যয় ছন্নছাড়া ভয়
এ তো নয় যাকে আমি রচনা করেছি স্তব্ধ রাতে
কেন তুমি এলে
আমাদের দেখা হলো এ কোন্ শীতার্ত পাংশু পটে
 পশ্চিমবিলাসী তুমি, আমি পূর্ব দুঃখের প্রহরী!’

ঠিক, সব জানি
আমরা অনেকদিন মুখোমুখি বসিনি সহজে।
 তোমার শ্যামল মুখে আজও আছে সজীব সঞ্চার
পটভূমিকায় ওড়ে সমুদ্রের আন্তরিক হাওয়া
 আমি ভ্রষ্ট উপদ্রব নিয়ে ফিরি মেরুদণ্ড ঘিরে
এমনকী সমুদ্রে ফেলি ছিপ
কিন্তু তবু
ছেড়ে দাও হাত, শুধু দেখো এই নীলাভ তর্জনী
ভূমধ্যসাগর
 পুব বা পশ্চিম নয়, দেখো ওই দক্ষিণ জগৎ
 অসম্ভব তৃতীয় ভুবন এক জ্বলে ওঠে দূর বন্য অন্তরাল ভেঙে।

তাই এইখানে নেমে আমাকে প্রণত হতে হয়
আমারও চোখের জলে ভরে যায় অরুণা ধরণী
দু-হাতে কলঙ্ক বটে, তবু
আমারই শরীর ভেঙে জেগে ওঠে ভবিতব্য দেশ
মৃত্যুর ঝুমকে আর ঝোপে ঝোপে দিব্য প্রহরণে।
 কলঙ্কে রেখো না কোনো ভয়
এমন কলঙ্ক নেই যা এই দাহের চেয়ে বড়ো
 এমন আগুন নেই যা আরো দেহের শুদ্ধি জানে
তুমি আমি কেউ নই, শুধু মুহূর্তের নির্বাপণ
 আমাদের ফিরে যেতে হয় বারে বারে
দেশে দেশে ফিরে ফিরে ঘুরে যেতে হয়
পরস্পর অঞ্জলিতে রাখি যত উদ্যত প্রণয়
 সে তো শুধু জলাঞ্জলি নয়, তারই বীজে
 অসম্ভব তৃতীয় ভূবন এক জেগে ওঠে আমাদের ভেঙে
 তাই এইখানে নেমে আমাদের দেখা হলো সমুদ্রের পর্যটক তটে।

ধূপের মতন দীর্ঘ উড়ে যায় মেঘাচ্ছন্ন দিন
তোমার শরীর আজ মিলে যায় সমুদ্রের রঙে
আমাদের দেখা হয় আচম্বিতে ভূমধ্যসাগরে।
 কখনো মসৃণ নয় দেখো আমাদের ভালোবাসা
তোমাকে কতটা জানি তুমি-বা আমাকে কত জানো
তাই আমাদের ভালোবাসা
প্রতিহত হতে হতে বেঁচে থাকে দিনানুদিনের দন্ধ পাপে
আমি যদি নষ্ট হই তুমি ব্যাপ্ত করো আর্দ্র হাত
তোমার ক্ষমার সজীবতা
আমার সঞ্চার আরো দীপ্য করে দেশ দেশান্তরে
আর মধ্যজলে
চোখে চোখে জ্বলে ওঠে ঘোর কৃষ্ণ বিস্ফারিত সসাগরা তৃতীয় ভুবন।

ফেরার সময় হলো, এসো সব সাজ খুলে ফেলি
দুই হাতে আপন্ন সংসার
 নিয়ে চলো ঘরে

দিন হয়ে এল ক্ষীণ ভূমধ্যসাগরে।

*

আরুণি উদ্দালক

আরুণি বললেন, আমি জ্ঞানার্থী গুরু আদেশ করলেন, যাও, আমার ক্ষেত্রের আল বাঁধো। পরে তার ব্যাকুল আহ্বানে উঠে এসে বললেন আরুণি, জলপ্রবাহ রোধ করতে না পেরে আলে আমি শুয়ে ছিলাম, এখন আজ্ঞা করুন। ধৌম্য জানালেন, কেদারখণ্ড বিদারণ করে উঠেছ বলে তুমি উদ্দালক, সমস্ত বেদ তোমার অন্তরে প্রকাশিত হোক। পৌষ্য পর্বাধ্যায়, আদিপর্ব, মহাভারত

তবে কি আমিই ভুলে যাই? দিকচক্রবাল শুধু বাসা বানাবার অন্য ছল?
তবে কি অস্তিত্ব বড়ো অস্তিত্বের বেদনার চেয়ে? কার বাসা? কতখানি বাসা?
তোমার সমগ্র সত্তা যতক্ষণ না-দাও আমাকে
ততক্ষণ কোনো জ্ঞান নেই
ততক্ষণ পুরোনো ধ্বংসের ধারে অবসন্ন শরিকের দিঘি।
 নীল কাঁচে আলো লেগে প্রতিফলনের মতো স্মৃতি, রাজবাড়ি
কবুতর ওড়ানো চত্বর
ভাঙা গ্রামে পড়ে আছে, শোনো
তবু একজন ছিল এই ধুলাশহরে আরুণি
সে আমাকে বলে গিয়েছিল আল বেঁধে দেবে সে শরীরে।

আমি গুরু অভিমানে বসে আছি সেই থেকে, দিন যায়- রাত
আবার রাত্রির পরে দিন, অস্পষ্ট দু-হাত
নেমে আসে জানুর উপরে
 জানা ও কাজের মধ্যে বহু সেতু, দেখাশোনা নেই
 ঘরে ঘরে সকলেই নিঃসঙ্গ প্রস্তুত করে লক্ষ্মী-উপাসনা
যে যার আপনসুখে চলে যায় পূর্ণিমার দিকে
আমার নিঃশীল বসে থাকা
 বিকল্প বন্ধুতা দেয় ঘটে জমে-থাকা জল অলস মন্থর
হৃদয়ের কাছাকাছি মুখ নিলে ঘুরে যায় পাঁচটি পল্লব পাঁচ দিকে
আর সেই অবসরে ফেটে যায় জলস্রোত, কেননা প্রকৃতি নাকি শূন্যের বিরোধী।

হাঁটুজল   বুকজল   গলাজল
শান্তিজল হয়ে ওঠে   নীলজল   পীতজল   গলাজল
ঘট ভেঙে আমাদের ধরে ফেলে অতর্কিতে ভাসমান শূন্যের বিরোধী
 মধ্যরাত ছুঁড়ে দিলে নিজের পায়ের ভর খুলে যায় পঞ্চশীলময়
আর সেই অবসরে ছোটে বাণিজ্যের ঢেউ ছলনা প্রস্তুত থাকে দিগন্ত অবধি
 যে-কোনো আঘাত লেগে উড়ে আসে চালচিত্র ধ্বসে যায় প্রাচীরের তল
কে কোথায় আছে বলে টলে পড়ে যায় সব কবুতর ভাঙা রাজবাড়ি
 তোমাদের হাতেগড়া একাল-ওকাল-জোড়া ব্রিজগুলি ঝলকে মিলায়
পাশের বাড়ির বৌ শেষরাতে অন্ধকার ডানা ঝাপটায় ভোলা স্রোতে
এদিকে সকাল আসে প্রায় পরিহাসময় কাঞ্চনজঙ্ঘার যোগ্য রুপালি ঠমকে

বলে গিয়েছিল বটে, আছে কি না-আছে কে বা জানে
 ভুলে যায় লোকে।
 আবার সমস্ত দিক স্থির করে জল
 এ-ও এক জন্মাষ্টমী যখন দু-হাত-জোড়া নীল শিশু হাতে নিঃস্ব দেহ
জল ভেঙে যায়
আলোর কুসুমতাপে ছড়ানো গো-কুল
যে-কোনো যমুনা থেকে পায়ে বাজে বিপরীত চৌকাঠে জড়ানো তিন বোন
 মুহূর্তের তুড়ি লেগে উড়ে যায় সমূহ সংসার
 কেননা দেশের মূর্তি
কেননা দেশের মূর্তি দেশের ভিতরে নেই আর।

গড়ে তুলবার দিকে মন দেওয়া হয়নি আর কী
সহজেই বাঁধ ভেঙে যায়
 চেতাবনি ছিল ঠিক, তুমি-আমি লক্ষই করিনি
কার ছিল কতখানি দায়
আমরা সময় বুঝে ঝোপে ঝোপে সরে গেছি শৃগালের মতো
আত্মপতনের বীজ লক্ষই করিনি
আমার চোখের দিকে যে ভিখারি হেসে যায় আমি আজ তার কাছে ঋণী
এত দ্বিধা কেন বলে লাঞ্ছনা করেছে যারা তাদের সবার কাছে ঋণ
 অবনত দিন
 ভাবে, একা বাঁধ দেবে, তা কি কখনোই হতে পারে?
 আমাদের বিশ্বাস ঘটে না
 আমাদের ঘরে ঘরে প্রতি পায়ে জমে ওঠে পলি
আর অলিগলি
আতুর বৃদ্ধের হাতে খুঁজে ফেরে হারানো শরীর
আমাদের ঠোঁটে ওঠে হাসি
 দুপুরে বাতাসভরা কেঁপেওঠা অশথের পাতা
যেমন নির্জন শব্দ তোলে
এখনও অম্বার স্বর ততখানি ঝরে পড়ে ‘সুমন সুমন’
আমাদের চোখে ভাসে সাবেক করুণা
অথবা কখনো
নিজেরই অথর্ব দেহ যেমন ধিক্কারে টেনে প্রতি রাত্রিবেলা
তোমার মুক্তির পায়ে ছুঁড়ে ফেলে দিই
 তেমনই দূরের জলে দিয়ে আসি মৃত গাভী গলিত শূকর আর তোমাকেও মা
 মুখে যে আগুন রাখি তত পুণ্য রটে না আমার
মৃত্যুশোকে কার অধিকার
কেবল অম্বার কণ্ঠ এখনও নদীর জলে ‘সুমন, সুমন’
আর আমি বলে উঠি এসো এসো উঠে এসো উদ্দালক হও
স্পষ্ট হও, বাঁচো–
 শুধু মুখ অভিমানে বসে থেকে জলস্রোতে কখন যে আরুণি সুমন
তৃষ্ণাদেবতার মূলে একাকার হয়ে যায় তা আমার বোধেও ছিল না

কখনো চোখের জল হয়ে ওঠে সোনা
কিন্তু কখন? সে কি এই আচ্ছন্ন বিলাপে?
দীর্ঘ আলপথ ঘুরে এই কুব্জ ক্যারাভান তোমার দুয়ারে এসে ভিখারি দাঁড়ায়
আর তুমি
 শোকের আতসগড়া তুমি কী সুন্দর মজ্জাহীন
রাত্রিগুলি ওড়াও আকাশে
বণিকের মানদণ্ড মেরুদণ্ড বানাও শরীরে
 বেতন জোগাও চোখে প্রত্যহযাপনছলে রাজপথে অন্ধকার ঘরে
 তখন?
হে নগর, দীপান্বিতা ভাস্বতী নগরী
আকণ্ঠ নাগরী
 মহিষের ধ্বস্ত দেহে যত লক্ষ রক্তবিন্দু জ্বালায় শকুন
 তোমার রাত্রির গায়ে তার চেয়ে বেশি ফুলঝুরি
পোহালে শর্বরী
তোমারই প্রভাতফেরি মেতে ওঠে ত্রাণমহোৎসবে।

হবে, তাও হবে। মাথা খুব নিচু করে সবুজ গুল্মের ছায়া মুখে তুলে নিলে
ওর দেহ হয়ে ওঠে আমাদেরই দেহ, তাছাড়া এ অভিজ্ঞতার
অন্য কোনো মানে নেই
যখন আঙুল থেকে খুলে পড়ে নির্মল নির্ভর
তখনও দুখানি হাত দুঃখের দক্ষিণ পাশে স্থির রাখা
আরো একবার ভালোবাসা
 এই শুধু, আর কোনো জ্ঞান নেই
আর সব উন্নয়ন পরিত্রাণ ঘূর্ণমান অগণ্য বিপণি দেশ জুড়ে
যা দেয় তা নেবার যোগ্য নয়
আমাদের চেতনাই ক্রমশ অস্পষ্ট করে সাহায্যের হাত
আছে সব সমর্পণে- এমনকী ধ্বংসের মধ্যে– আবার নিজের কাছে
 ফিরে আসা, বাঁচা। তাই
যে বলেছে আজও এই প্লাবনে সংক্ষোভে মেঘে আমার সমস্ত জ্ঞান চাই
সে বড়ো প্রত্যক্ষ চোখে আপন শরীর নিয়ে বাঁধ দিতে গিয়েছিল জলে–

লোকে ভুলে যেতে চায়, সহজেই ভোলে।

*

জাবাল সত্যকাম

আচার্য বললেন, এমন বাক্য ব্রাহ্মণেই সম্ভব। হে সৌম্য, সমিধ আহরণ করো, তোমায় উপনীত করব, কারণ সত্য থেকে তুমি ভ্রষ্ট হওনি। ক্ষীণ ও দুর্বল গোধনের চারশো তাকে পৃথক করে দিয়ে বললেন, অনুগমন ক… বনাভিমুখে তাদের চালিত করে সত্যকাম জানালেন ‘সহস্র পূর্ণ না হলে আমি ফিরব না’।। ছান্দোগ্য উপনিষদ ৪।৪

তুমি দিয়েছিলে ভার, আমি তাই নির্জন রাখাল।
 তুমি দিয়েছিলে ভার, আমি তাই এমন সকালসন্ধ্যা
আজানু বসেছি এই উদাসীন মর্যাদায়
চেয়ে আছি নিঃস্ব চোখে চোখে।
 এ কি ভালোবাসে ওকে? ও কি একে ভালোবাসে?
 আমারই দু-হাতে যেন পরিচর্যা পায়
ভালোবাসাবাসি করে। যখন সহস্র পূর্ণ হবে
ফিরে যাব ঘরে
 যখন সহস্র পূর্ণ হবে
আয়তনবান এই দশ দিক বায়বীয় স্বরে
 ফিরে নেবে ঘরে
এখন অনেকদিন বন্ধুদল তোমাদের হাতে হাতে নই
 এখন স্পষ্টই
আমার আড়াল, বনবাস।

.

২

ভাবো সেই সন্ধ্যাজাল অস্ফুট বাতাস আমি আভাময় পায়ে হেঁটে গেছি
 পাথরবিছানো পথে পথে
তোমার দুঃখের পাশে দীক্ষা নেব ইচ্ছা ছিল কত
প্রেমের পল্লব সর্বঘটে
ভেবেছি এত যে দল, দল দল, আমারও কি জায়গা নেই কোনো?
 মাঠের বিপুল ভেঙে দোলানোলণ্ঠন যায়, দূরে সরে বালকের স্মৃতি
 প্রধান সড়কে আমি, আমারও কি জায়গা নেই কোনো?
 পদ্মার তুফান দেয় টান নৌকো খান খান
পেরিয়ে এসেছি কত সেতু
তোমার দুঃখের পাশে বসে আছে জনবল চোখে রুপা ইলিশের দ্যুতি
আমিও প্রণাম করি বুকে লাগে শ্যামল বিনয়ভূমি, তুমি
মাথায় রেখেছ হাত স্নেহভরে, বলো
‘কী তোমার গোত্রপরিচয়?’

পরিচয়? কেন পরিচয় চাও প্রভু?
ওই ওরা বসে আছে অন্ধকার বনচ্ছায়ে সকলেই ঋদ্ধপরিচয়?
 বনে ভরে আগুনকুসুম
আপন সোপানে কারা জলস্রোতে দেখেছিল মুখ?
 বুকে জ্বলে আগুনকুসুম
আমি যে আমিই এই পরিচয়ে ভরে না হৃদয়?
 কেন চাও আত্মপরিচয়?
কোথায় আমার দেশ কোন্ স্থিতি মৃত্তিকার কুল
কোন্ চোখে চোখ রেখে বুকের আকাশ ভরে মেঘে
 দেশদেশান্তর কালকালান্তর কোথায় আমার ঘর
তুমি চাও গোত্রপরিচয়।
পিছনে পিছনে এত বাঁধা আছে হৃদয়ের মানে আর
শিকড়ে শিকড়ে জমে টান
গঙ্গা এত বহমান দীর্ঘ দেশকাল জুড়ে আমারও হৃদয়
ধুলো পায়ে ফিরে বলে কোথায় আমার গোত্র
কী আমার পরিচয় মা?

ছুটে সরে যাই দূরে ঘরে পরে সদরে অন্দরে
কী আমার পরিচয় মা
 শহরে ডকে ও গ্রামে ফুলে ওঠে পরিশ্রম গাছে ওড়ে রঙিন বেলুন
কী আমার পরিচয় মা
ধরো নদীতীর শোনো শব্দ যেন জমে ছিল জাহাজের সারি
জেটিতে জুটায় ভালোবাসা
 টন টন শস্যে মুখ ঢেকে যায় রৌদ্রহীন শস্যের শরীর গলে যায়
কী আমার পরিচয় মা
পোশাকের নীচে আমি আমার ভিতরে জমে নির্বোধ পোশাক
 আমার দেহের কোনো পরিত্রাণ থাক না-ই থাক
 মুখে ঠিক উঠেছিল গ্রাস
কী আমার পরিচয় মা
দারুণ কুঠারে কেউ ছিঁড়ে দিয়েছিল দড়ি
দ্রুত খুলে যায় সব তরী
টেবিলে গেলাস রেখে উঠে আসে প্রণয়িনী হাত ভাঁজ করে বলে, এসো,
 কনুই বাঁকিয়ে ওরা মিশে যায় ক্রিসমাস ভিড়ে
 টুইস্ট টুইস্ট টুইস্ট
কিছুতেই কিছু নয় ললাটে না ভাষায় না
নতনীল বুকে কিছু নয়
আমার জিভের বিষে ঝরে যায় জরতী ভিখারি
 সব গাড়ি থেমে থাকে রমণীর রক্তিম নখরে
কী আমার পরিচয় মা?

.

৩

বহুপরিচর্যাজাত আমি, প্রভু, পরিচয়হীন।
ওরা হাসাহাসি করে, মুখে থুতু দেয়, ঢিল ছুঁড়ে মারে, আমি
 পরিচয়হীন
 জলস্থল সর্বতল আমার বিলাপে কাঁপে পরিচয়হীন
 গোপনে আপনভূমি ক্ষয়ে যায় কবে
যেমন চোখের আড়ে সরে যায় বসন্তবয়স আর
 পিয়ানোর পিঠে জমে ধুলো
যেমন উত্তান রাত কেঁপে ওঠে মহোৎসবে নীল
 হাতে হাত ছুঁয়ে গেলে বিষ হয়ে ফুলে ওঠে শিরা ও ধমনী, ওরা বলে
কিছুতেই কিছু নয় ভাষায় না পোশাকে না মুখের রেখায় কিছু নয়,
কী-বা আসে যায়
বুকের তোরণে কোনো স্বাগতম রাখেনি যুবতী
কী সুন্দর মালা আজ পরেছ গলায়
আজ মনে পড়ে মাগো তোমার সিঁদুর এই নিখিল ভুবনে
জন্মেছিস ভর্তৃহীনা জবালার ক্রোড়ে
 ভাষায় না পোশাকে না মুখের রেখায় নয় চোখের নিহিত জলে নয়
আমি খুব নিচু হয়ে তোমার পায়ের কাছে বলি, আজ ক্ষমা করো প্রভু
আয়তনহীন এই দশ দিকে আজ আর আমার দুঃখের কোনো ভারতবর্ষ নেই।

বহুপরিচর্যাজাত পথের ভিক্ষায় জন্মদিন
 প্রভু এই এনেছি সমিধ
 অন্ধকার বনচ্ছায়ে দীর্ঘ তালবীথি সত্যকাম
 এনেছি সমিধ
আমার শরীর নাও দুই হাতে পুঁথি ও হৃদয়
 তুমি চাও আত্মপরিচয়
শস্যময় ভালোবাসা প্রান্তরে নিহিত বর্তমান
আমার তো নাম নেই, তুমি বলেছিলে সত্যকাম

এখন স্পষ্টই
 আমার আড়াল, বনবাস
এখন অনেকদিন বন্ধুদল তোমাদের হাতে হাতে নই।
 যখন সহস্র পূর্ণ হবে
 ফিরে যাব ঘরে
যখন সহস্র পূর্ণ হবে
 আয়তনবান এই দশ দিক গাঢ়তর স্বরে
 ফিরে নেবে ঘরে
এখন আজানু এই উদাসীন মাঠে মাঠে আমার সকাল
তুমি দিয়েছিলে ভার আমি তাই নির্জন রাখাল।

লেখক: শঙ্খ ঘোষবইয়ের ধরন: কাব্যগ্রন্থ / কবিতা

শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা

গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ – শঙ্খ ঘোষ

আদিম লতাগুল্মময় – শঙ্খ ঘোষ

শঙ্খ ঘোষের কবিতা

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.