কল্পনা চাকমার ডায়েরি
কল্পনা চাকমার ডায়েরি
সম্পাদনা—হিল উইমেন্স ফেডারেশন
প্রথম প্রকাশ—১২ জুন ২০০১, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪০৮
প্রকাশক—হিল উইমেন্স ফেডারেশন
প্রচ্ছদ—রবীন আহসান
অক্ষরবিন্যাস : মিজানুর রহমান, সায়দিয়া গুলরুখ ও রতন
আলোকচিত্র সংগ্রহে : শুভাশীষ চাকমা, ছোটন, ফারহানা
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : এডভোকেট দেবাশীষ চাকমা বাবলু
পরিবেশক : শ্রাবণ, ২৮ আজিজ সুপার মার্কেট (নিচতলা), শাহবাগ, ঢাকা-১০০০
.
উৎসর্গ
নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জাতিসত্তার স্বীকৃতি আদায়ের লড়াইয়ে যে সব অকুতোভয় নির্ভীক প্রতিবাদী বন্ধু আত্মোৎসর্গ করেছেন
এবং
যারা অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতিত হয়ে জীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করে দুঃসহ জীবন যাপন করছেন
এবং
যে সব মা-বোন দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হয়েছেন ॥
.
কল্পনাকে উদ্ধারের দাবিতে যাঁরা শহীদ হন
শহীদ মনতোষ (১৫)
শহীদ রূপন (১৫)
শহীদ সমর বিজয় (১৬)
শহীদ সুকেশ (১৬)
.
“বোনেরা জেগে উঠুন
শৃংখল ভেঙ্গে ফেলুন।
আমাদের অধিকার একদিন প্রতিষ্ঠা হবেই হবে”
– কল্পনা চাকমা

কল্পনা চাকমা
মা : বাঁধুনি চাকমা (মৃত)
বাবা : গুণরঞ্জন চাকমা (মৃত)
কল্পনা অপহরণের তারিখ : ১২ জুন ১৯৯৬
.
“দূর অতীত থেকেই নারী জাতির উপর নির্যাতন নিপীড়ন চলে আসছে। নারী জাতির লাঞ্ছনা-বঞ্চনা অপমান দাসত্ব কোন গোপন ব্যাপার নয়। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বেই তা বিভিন্ন রূপে নগ্নভাবে প্রকাশিত। এরই মধ্যে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান সমস্যার জন্য নারী পুরুষ সকলকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, নির্যাতন চালানো হচেছ। নারীদের উপর অমানবিক ধর্ষণ নির্যাতন লাঞ্ছনা-বঞ্চনা শ্লীলতাহানী নারীহত্যা ইত্যাদি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।
এই আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের সংগঠন এইচ ডব্লিউ এফ ইতিমধ্যে নিজস্ব স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে বৃহত্তর আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করছে। জুম্মজাতির অধিকার এবং নারীদের সমান অধিকার আদায়ের সংগ্রামে উপনীত হয়েছে। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং নারীদের সমান অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে নিয়োজিত। কিন্তু আমরা জানি সমাজের নিপীড়িত শ্রেণী ও জনগণের মুক্তি ব্যতিত পৃথকভাবে নারী জাতির মুক্তি হতে পারে না। … কারণ নারীর উপর শোষণ নির্যাতন সমাজে বিদ্যমান শ্রেণী শোষণ নির্যাতন ও মানুষে মানুষে অসাম্যের ব্যবস্থা থেকেই উদ্ভুত। যে মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণ নিপীড়নের বর্বর ব্যবস্থা যতদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে দুরীভূত না হবে অর্থাৎ পাহাড়ী জনগণের প্রাণের দাবি স্বায়ত্তশাসন যতদিন পর্যন্ত দেয়া না হয় ততদিন এর একটি রূপ হিসেবে নারী নিপীড়নও দুরীভূত হতে পারে না। …..আমাদের এই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে আর ঘরের কোণায় বসে থাকার সময় নেই। শুধু গিন্নী হয়ে রান্নাঘরে বসে থাকলে চলবে না। এই লক্ষ্যে আমাদের ঘুণেধরা সমাজ ব্যবস্থা, নারীদের গণ্ডিবদ্ধ জীবন যাপন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এটা আমাদের অস্বীকার করার নয়। সে জন্য আমাদের এই ঘুণেধরা সমাজ ব্যবস্থা পেছনে রেখে জুম্মদের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার তথা নারীদের সমান অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সকল প্রগতিশীল নারী পুরুষদের এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাই। নারী পুরুষের বিভেদ আমরা মানিনা। যে বিভেদ আমরা প্রত্যক্ষ করি তা সামাজিক। অতএব বন্ধুরা এ বিভেদকে সামাজিকভাবে উৎখাত করা সম্ভব। এই ঘুণেধরা সমাজ পরিবর্তনের জন্য অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে আমাদের সবাইকে এবং বর্তমান যুব তারুণ্য শক্তিকে।”
কল্পনা চাকমা
Leave a Reply