• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

কবিতার বিষপান – মোস্তাকিম হোসাইন মৃদুল প্রধান

লাইব্রেরি » কবিতার বিষপান – মোস্তাকিম হোসাইন মৃদুল প্রধান
কবিতার বিষপান

সূচিপত্র

  1. ডিসেম্বরের কবিতা
  2. গড় আয়ু
  3. ইচ্ছে
  4. ভালোবাসাহীন
  5. শরৎ
  6. ভালোবাসি প্রকৃতি
  7. সমতা
  8. প্রেম ও কিছু কথা
  9. অতি সামান্য
  10. আমি কবি নই
  11. গরীব চাষা
  12. ষড়ঋতু ও প্রেম
  13. যদি ভালো না বাসতে
  14. ঋতুরাজের অসমাপ্ত প্রেম
  15. কাল্পনিক
  16. চিঠি
  17. জোনাকি
  18. চাষা
  19. শিশুদের জন্য
  20. প্রেমিকা
  21. ফেব্রুয়ারি’র কবিতা
  22. বাবা!
  23. বৃষ্টি
  24. তুমি নেই
  25. অনিমেষ ও জুঁইফুল
  26. ফাল্গুন
  27. প্রেমিক কে?
  28. ভালোবাসা
  29. এলোমেলো
  30. প্রাণের জেলা
  31. অদৃশ্য কথামালা
  32. পাখি
  33. মানুষ
  34. কল্পিত কবিতা
  35. চাতকিনী
  36. অবকাশ
  37. ফাল্গুন
  38. নীল চিরকুট
  39. স্বৈর প্রেম
  40. চৈত্রের শিলাবৃষ্টি
  41. এলুমিনিয়ামের চাঁদ
  42. জোছনা রাত
  43. কেমন আছো মাধবী
  44. সন্ধ্যা মালতির কথা
  45. দূরত্ব
  46. লুকোচুরি
  47. মিক
  48. কবিতার বিষপান
  49. আমি
  50. উপেক্ষার বদলে প্রেম
  51. ধ্বংস
  52. বুলেটের বৃষ্টি, রক্তের বন্যা
  53. নষ্টনীড়ে
  54. মিঠাই
  55. নবান্ন এলো
  56. ফড়িং জীবন
  57. উচ্চমাধ্যমিক ও আমি
  58. বর্ষা
  59. অষ্টাদশী প্রেম – একটি ছোটগল্প
  60. ফেয়ারওয়েল

কবিতার বিষপান – মোস্তাকিম হোসাইন মৃদুল প্রধান

ডিসেম্বরের কবিতা

ডিসেম্বরের বাতাসে 
শোনা যায় বিজয়ের গান,
ডিসেম্বরের বাতাসে 
ভেসে আসে বিজয়ের ঘ্রাণ।

ডিসেম্বর এলে মনে পরে যায়,
 ৭১’এ পাকবাহিনী কেমন করে
 লেজ গুটিয়ে পালায়।

ডিসেম্বরের শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে, 
শহীদ ভাইয়ের শুকিয়ে যাওয়া, 
লাল রক্তের দাগ আজও লেগে আছে।

বুকের তাজা রক্ত দিয়ে কেমন করে, 
আনলো তারা স্বাধীনতা ছিনিয়ে?

পাকিস্তানের দোসররা বলছি তোদের শোন_
বাংলাদেশের স্বাধীনতা,বাঙ্গালির রক্তে কেনা। 
স্বাধীন দেশে আর কত পুড়াবি মানুষ? 
হুশিয়ার!  এবার সাবধান হয়ে যা! 
জাগলে আবার বাঙ্গালি বীরেরা, 
পালানোর পথ খুঁজে পাবিনা।

গড় আয়ু

আমাদের এ শহর বদলে যাচ্ছে, 
শতশত কলকারখানা গড়ে উঠছে। 
মানুষের কাজ যন্ত্র’ই করছে,
দিনেদিনে কর্মঠ মানুষ গুলোও অলস হচ্ছে।

আমাদের এ গাঁ বদলে যাচ্ছে, 
কৃষিজমিতে মানুষ দালান গড়ছে।

এ শহরের নীল আকাশে এখন শুধু, 
কারখানা আর যন্ত্রের কালো ধোঁয়া।

এ গাঁয়ের বনবাদাড়ে নেই আর তেমন গাছপালা 
নিধন করেছে সব, বদলে যাওয়া সভ্যতা।

দুষিত হচ্ছে এ শহরের বায়ু, 
বদলে যাচ্ছে শহর ও গাঁয়ের জলবায়ু। 
দিনেদিনে কমে যাচ্ছে 
এ শহর ও গাঁয়ের মানুষের গড় আয়ু।

ইচ্ছে

জানো আজকাল আমারো খুব ইচ্ছে করে 
জোনাকি হতে।
ইচ্ছে করে রাতের মুক্ত আকাশে 
উড়ে বেড়াতে।

ইচ্ছে করে স্তব্ধ গাঁয়ে সন্ধেবেলা 
ঝিঝি পোকার ডাক শুনতে। 
ইচ্ছে করে বাড়ির সামনের মাচায় বসে
আকাশের তারা গুলো গুণতে।

ইচ্ছে করে চাঁদের আলোয় 
মেঠোপথে হাঁটতে।
ইচ্ছে করে রাত্রি জেগে 
তোমার কথা ভাবতে।

এসব ইচ্ছে কেন করে 
তা আমি জানিনা। 
আমার ইচ্ছেয় কেউ বাঁধা দিলে
তা আমি মানিনা।

তাইতো আমি রাত্রি জেগে 
জোনাকিদের মাতামাতি দেখি একলা বসে। 
আপন মনে ভাবি তোমার কথা। 
ঝিঝি পোকার ডাক শুনি 
আর সারা রাত তোমাকে 
কাছে পাওয়ার প্রহর গুনি। 
আমি আমার ইচ্ছে মতোই চলি।

ভালোবাসাহীন

এসেছে কতো ঘাত-প্রতিঘাত, 
কখনো কি ছেড়েছি তোমার হাত। 
নিরবতায়, নিশ্চুপে ভালোবোসেছি 
তোমায় অগাধ।

তুমি দিয়েছ কতো যন্ত্রণা,
হৃদয়ে দিয়েছ কত ব্যথা, 
তবুও তুমি হীনতায় কখনো
 ভুলিনি তোমার কথা।

কোন দোষে দুষ্ট আমি, 
কোন ভুলে পেয়েছ আঘাত, 
কেন আমায় গিয়েছ ছেড়ে চলে
যাওয়ার আগে তাও যাওনি বলে।

আমাদের ভালোবাসা ছিল কতো রঙিন 
সামান্য ভুলে তুমি করলে আমায় 
            “ভালোবাসাহীন”

তোমার প্রতিক্ষায়,তোমার অপেক্ষায়
কাটছে আমার নিদ্রাহীন রাত, 
ক্লন্তিহীন দিন। 
আমি বহুদিন ভালোবাসাহীন!

বুক ভরা আশা নিয়ে আছি বেঁচে। 
তুমি আসবে আবার ফিরে 
আমার ধূসর হৃদয় করবে রঙ্গিন।

তুমি একবার ফিরে এসো 
আমি সব ভুল শুধরে নেবো। 
আকাশ বানাবো, 
সে আকাশে ভালোবাসাহীনতা উড়িয়ে দেবো। 
নতুন করে তোমায় ভালোবাসবো।

তুমি ফিরে এসো, 
আমি আর পারছিনা সহ্য করতে 
এই একাকিত্বতা, এই ভালোবাসাহীনতা।

শরৎ

আমিই ছিলাম ভুল 
ভেবেছিলাম এই শরৎ এ
 ফুটবেনা কাশফুল।

এ শরৎ এ-ও ফুটেছে কাশফুল 
করছে আবার নতুন করে কাউকে ব্যাকুল।

ফুটেছে কাশফুল পুকুরের পারে, নদীর ধারে, বনে
এ শরৎ এ কাশফুল ফোটেনি শুধু আমার মনের গহীনে।

গত শরৎ এ-ও ভরা ছিল মন কাশফুলে 
সে কাশবেন তুমি হাওয়া হয়ে এসেছিলে। 
দমকা হাওয়ায় কাশবন উঠেছিলো দুলে।

কাশবেন তুমি এসেছিলে প্রশান্তি পেতে 
কাশবন তোমায় মুগ্ধ করেছে 
তার ঘ্রাণ হীন সৌন্দর্যে।

ধবধবে সাদা শরৎ এ-র কাশবন 
তুমি করে নিয়েছিলে আপন।

ঋতুচক্র ভারী নিষ্ঠুর 
হঠাৎই কাশফুল হয়ে গেল বিলীন 
চলে এলো হেমন্ত। 
তোমার মুখ হয়ে গেল মলিন।

কাশফুল’কে ভুল বুঝে 
তুমি চলে গেলে দূরদেশে 
আমার মনের কাশবন ছেড়ে।

ভালোবাসি প্রকৃতি

এতোদিন আমি একলা বসে ভেবেছি শুধু। 
কেন আমি ভালোবাসি প্রকৃতি? 
নিজেই আমি প্রশ্ন করেছি নিজেকে, 
কেন আমি ভালোবেসেছি প্রকৃতিকে?

আজ বিবেক আমায় দিল সেই প্রশ্নের উত্তর। 
সেটা লিখতেই আজ ধরেছি কলম
খুলেছি খাতা পত্তর।

নিঃস্বার্থে আমি ভালোবাসিনি প্রকৃতিকে 
ভালোবেসেছি নিজ স্বার্থে।
 
প্রকৃতি আমায় দিয়েছে 
বেঁচে থাকার সকল উপাদান। 
প্রকৃতি আমায় শিখিয়েছে
একসাথে বাঁচতে,লতা-পাতার মতন।

প্রকৃতি আমায় শিখিয়েছে উদার হতে। 
প্রকৃতি আমায় শিখিয়েছে নীরব থাকতে। 
প্রকৃতি আমায় শিখিয়েছে ফুলের মতো 
অন্যের জন্য নিজের জীবন দিতে ।

প্রকৃতি যদি বিরূপ হয়,  
 তবে বেঁচে থাকাও বড় দায়।

প্রকৃতির আলোয় আমি 
সুন্দর এই পৃথিবী টা দেখি। 
দেখার আছে আরও অনেক কিছুই বাকি। 
তাইতো আমি ভালোবাসি প্রকৃতি।

সমতা

কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছেনা।  
কেউ খাচ্ছে, কেউ খাচ্ছেনা।

বৃটিশদের ভাগ করা 
সেই দুই শ্রেণী,
এখনো বদলায়নি।

এক শ্রেণী শাসক, 
         এক শ্রেণী শোষক।

বৃটিশরা কবে ছেড়ে গেছে এই বাংলা, 
তবুও কি এই দুই শ্রেণীতে ফিরেছে সমতা।

এখনো কেউ মরছে ক্ষুধার জ্বালায়, 
কেউ আবার ভুগছে অস্বস্তিতে 
অতিরিক্ত খাওয়ায়।

এরপর কত সমাজ সংস্কারক এসেছে, 
সমতার কথা গিয়েছে বলে। 
তবুও তো ফেরেনি সমতা।

হয়তোবা এভাবেই চলবে,
এ সমাজ বদলাবেনা কোনোদিন। 
শাসকের লাথি খেয়েই 
অনায়াসে কেটে যাবে 
শোষকের রাত দিন।

প্রেম ও কিছু কথা

আমি আর কখনো তোমার কাছে প্রেম চাইবো না 
প্রেমের মানে এখন আমি কিছুটা বুঝেছি। 
যেটাকে আমি প্রেম ভাবতাম সেটা ছিল মোহ 
তোমাকে বলা কাব্যিক কথাগুলো, 
তোমার চোখে চোখ রেখে গোটা 
একটা শতাব্দী কাটিয়ে দিতে চাওয়া,
কমলার কোয়ার মতো তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে অনায়সে মরে যেতে চাওয়া, 
এসব ছিল পাগলের প্রলাপের মতোই। 
ভীষন শরীর খারাপ হলে মানুষ যেমন প্রলাপ বকে 
প্রেমে পরলেও ঠিক সেরকমই। 
তোমার শরীর পাওয়াকে অর্থাৎ যৌনতাকে পূর্ণতা ভাবতাম, 
তোমার শরীরে আমি  সুখ খুঁজতাম, ক্ষমা করো। 
এটাকেই আমি ভালোবাসা বলে জানতাম, তুমিও। 
ভালোবাসার নামে আমরা যা আদানপ্রদান করেছি তা শুধুই পাপ, 
ভালোবাসা অতোটা সস্তা নয় যতোটা সহজে আমরা নিজেদের বিলিয়ে দেই। 
যাঁরা ভালোবাসাকে চিনেছে তারা এর কাছে যেতে ভয় পায়। 
সেজন্য বলছি আমি আর কখনো তোমার কাছে প্রেম চাইবো না, 
তবুও আমি তোমাকে ভালোবেসে যেতে চাই মাধবী। 
                       ক্ষমা করো! 
আমার এই মোহো টাকেই সত্য মনে হয়। 
আমি জানি আমি ভুল তবুও, ক্ষমা করো!

অতি সামান্য

ওগো শুনছো

_হ্যাঁ বলো

কিছু যে কথা বলার আছে তোমায়

_কি কথা বলো
 
বলবো বটে, তবে কথাগুলো যে বড় অগোছালো।

_অগোছালো তবে গুছিয়েই বলো

কি করে বলবো গুছিয়ে, কথা গুলো যে যাচ্ছে গুলিয়ে।

_কী এমন বলবে কথা বলতে তোমার এত দ্বিধা?

না তেমন কিছুই না।

_তাহলে নির্দ্বিধায় বলেই ফেলনা।

বলছি তবে রাগ করোনা।

_আচ্ছা বলো রাগ করবোনা।

বলছি তোমায় আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি।

_ওমা এতদিন আমি অপেক্ষায় আছি আজ বলছো ভালোবাসি।

বহুদিন আগেই ভেবেছিলাম ভালোবাসার কথা বলবো তোমায়।

_তাহলে এতদিন বলনি কেন?

কি করে বলবো তোমার কাছে আমি অতি সামান্য।

আমি কবি নই

আমি কবি নই, 
তবুও একটি কবিতা লেখার জন্য 
জেগে থাকি রাতের পর রাত। 
রাত যতই গভীর হয়
ব্যর্থ প্রেমিকের মতো বর্ণরা 
এসে উঁকি দেয় আমার বর্ণকুটিরে ।
বলে আমায় তারা নাকি দুঃখ ভুলে যেতে চায়।
বলি তাদের দুঃখ কি এতো সহজে ভোলা যায়।
গভীর রাতে বর্ণকুটিরে একলা আমি অকারণেই জেগে থাকি । 
অকারণেই রাত জেগে ছন্দ হীন কবিতা লিখি। 
আর অর্থ হীন কবিতার পঙক্তিতে তোমায় খুঁজি। 
 রাত আমি একা জাগি না সঙ্গ দেয় আমায় ব্যর্থ বর্ণেরা। 
কবিতা আমি লিখিনা 
ডাইরির পাতায় ব্যর্থ বর্ণেরা তাদের হারানো বর্ণদের খুঁজে পেয়ে_
 মনে শত আক্ষেপ নিয়ে জড়িয়ে ধরে। 
আর বর্ণের প্রেম পূর্ণতা পেয়ে ফুটে ওঠে কবিতা হয়ে। 
আমি কবি নই 
আমি কবিতা লিখিনা।

গরীব চাষা

আমরা তো ভাই গরীব চাষা
কে বুঝবে আমাদের মনের ভাষা। 
আমরা তো ভাই দুঃখী চাষা
কে দেখাবে আমাদের সুখের আশা।

আমরা তো ভাই সারাদিন রোদে পুড়ে 
মাঠে ফলাই সোনার ধান। 
দিনশেষে দুমুঠো ভাতের জন্য 
গাই আপনাদের’ই জয়গান।

আমরা তো ভাই গরীব চাষা
সভ্যতা তো ভাই গড়ি আমরাই। 
পেটের দায়ে সূলভ মূল্যে 
আমরা সভ্যতা বিক্রি করে দেই।

আমরা তো ভাই গরীব চাষা
দিনে দিনে গড়েছি কতশত সভ্যতা। 
সভ্য হতে পারিনি শুধু আমরা।

সভ্যতা গড়তে গিয়ে রোদে ঝলসে গেছে 
আমাদের গায়ের কালো চামড়া।

আমরা তো ভাই পাথরের যুগ থেকেই চাষা 
কত সুশীলের জন্ম দিয়েছে আমাদের মতো চাষারা।

সুশীলেরা কী ভুলে গেছে সেই সভ্যতা 
সুশীলেরা কি সেই পাথরের যুগের কথা জানেনা? 
যদি জানে তবে কেন তারা চাষাদের
প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয় না।

ষড়ঋতু ও প্রেম

মনে পরে কি তোমার 
সেই প্রথম আলিঙ্গন। 
মনে কি পরে 
প্রথম সেই গভীর চুম্বন।

মনে পরে কি সেই 
প্রথম গ্রীষ্মের কথা,
প্রখর রৌদ্র দিনে হয়েছিল 
তোমার আমার দেখা।

মনে কি পরে সেই 
প্রথম বর্ষার কথা, 
মেঘের গর্জনের মতো 
গর্জন করে বলেছিলাম 
ভালোবাসার কথা।
 
মনে পরে কি সেই 
প্রথম শরৎ এর কথা,
নদীর ধারের সাদা কাশবনে বসে 
তোমার দুটি হাত ধরে 
বলেছিলাম তোমায় ভালোবাসি এই কথা।

মনে কি পরে তোমার সেই
 প্রথম হেমন্তের কথা, 
সোনালী ধানক্ষেতের আলপথ  দিয়ে 
হেঁটে যেতে যেতে 
বলেছি প্রথম প্রেমের কত কথা।

মনে পরে কি তোমার সেই 
প্রথম শীতের কথা, 
একই চাদর দুজনে মুড়িয়ে 
বলেছি কত মনের কথা।
 
মনে পরে কি সেই 
প্রথম বসন্তের কথা, 
তোমার জন্যে 
গোলাপ আনতে গিয়ে 
আমার হাতে বিঁধেছিল কাটা।

যদি ভালো না বাসতে

জানো প্রিয় তুমি যদি আমায় ভালো না বাসতে
তবে ব্যালকনির পাশে আম গাছটায় জোড়া শালিক বসতো না।

তুমি যদি আমায় ভালো না বাসতে 
রাস্তায় ওপারের দোকানটা থেকে রঙ্গিন কাগজ কেনা হতোনা।

তুমি যদি আমায় ভালো না বাসতে 
জোছনা রাতে খালি পায়ে ঘাসের ওপর দাড়িয়ে চাঁদ দেখা হতোনা।

তুমি যদি আমায় ভালো না বাসতে 
তবে অগোছালো ছন্দে কবিতা লেখা হতোনা।

তুমি যদি আমায় ভালো না বাসতে 
অসময়ে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া হতোনা।

তুমি যদি আমায় ভালো না বাসতে 
তবে অকারণে রাত্রি জাগা হতোনা।

তুমি যদি আমায় ভালো না বাসতে 
তবে আমার ঠোঁট পুড়ে যেত। 
তুমি ভালো না বাসলে 
আমার রক্তমাখা হৃদয় টা কুচকুচে কালো হয়ে যেত।

তুমি যদি আমায় ভালো না বাসতে 
তবে আমি হাসতে ভুলে যেতাম। 
তুমি যদি আমায় ভালো না বাসতে 
তবে আমি অনুভবহীন হয়ে যেতাম।

তুমি যদি আমায় আগলে না রাখতে 
আমি হয়তো অনেক আগে
ঈশ্বরের কাছে চলে যেতাম।

ঋতুরাজের অসমাপ্ত প্রেম

শীতের শেষের দিকে যখন মৃদু শীতল হাওয়া বইছিল 
প্রকৃতি শীতল হয়ে গিয়েছিল, 
তেমনি একটি  কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরবেলা ছিল।

আমি শীতের হাওয়া খেতে পথে বেরিয়েছিলাম। 
কুয়াশা সরিয়ে আমি তাকে দেখতে পেয়েছিলাম। 
তাকে দেখার জন্যে আমি প্রত্যহ ভোরে সেই পথে দারিয়ে থাকতাম।

সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতো। 
শীত ঋতু শেষ হয়ে, ঋতুরাজ বসন্ত এলো। 
চারিদিক ফুলে  ❀  ফুলে❀ ভরে গেল। 
বাতাসে প্রেমের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পরলো। 
সদ্য যৌবনে পা রাখা আমার মনে প্রেমের বাসনা জাগলো।

বুকের ভেতর ক্ষানিকটা সাহস সঞ্চয় করে 
রোমান্টিক কবিতার দু-চারটে লাইন সহ একটি প্রেমপত্র লিখে 
ভোরবেলা দারিয়ে রইলাম সেই পথে।

অনেক দুরে তার আবছা দেখে আমার বুক ধরফর করতে লাগলো। 
সে অনেক কাছে চলে এলো 
বুকে সঞ্চিত সাহস দিয়ে প্রেমপত্র টি ধরিয়ে দিলাম তাঁর হাতে। 
সে হতভম্ব বুনে গেল।

কিছু না বলে প্রেমপত্র টি হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে সেই স্থান ত্যাগ করলো। 
তারপর সূর্য উঁকি দিল,
ভোর ঠেলে সকাল হয়ে গেল ।

কাল্পনিক

ফাগুনের আগুন গায়ে মেখে 
তুমি এসেছিলে আমার সামনে। 
তোমার দিকে তাকিয়ে ভেবেছিলাম জলন্ত আগ্নেয়গিরি।

রোদ জ্বলা দুপুরে হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।
জলন্ত আগ্নেয়গিরি নিভে গেল। 
আগ্নেয়গিরি থেকে রূপকথার রাজকন্যা বেরিয়ে এল।

চারিদিক থমথমে হয়ে গেল। 
তোমায় একবার ছুয়ে দেখার ইচ্ছে হলো।

তোমায় ছোঁবো ভেবে 
এক জায়গায় দারিয়ে 
ষড়ঋতু পেরিয়ে গেল। 
কাব্যিক বর্ণ গুলো হারিয়ে গেল। 
কবি নির্বাক বুনে গেল। 
শিল্পীর তুলির রং শুকিয়ে গেল। 
তবুও তোমায় আর ছুয়ে দেখা হলো না।

চিঠি

সেদিন একটা চিঠি লিখেছিলাম তাকে 
আজও অপেক্ষায় আছি
ফিরতি চিঠি আসবে ডাক যোগে।

সে হয়তো চিঠির উত্তর লিখে ফেলেছে ডাক বাক্সে। 
চিঠিটা হয়তো  পরছেনা ডাক পিয়নের চোখে।

এভাবেই কেটে গেল কয়েকটা দিন
ফিরতি কোনো  চিঠি নেই,
আর ফিরতি চিঠির অপেক্ষায় আমার চোখে ঘুম নেই।

কেটে গেল কয়েকটা মাস 
তবুও এলোনা কোনো  ফিরতি চিঠি।
তবু্ও আমি সে চিঠির আশা ছাড়িনি।

হয়তো ভাবছেন এই ই-মেইল’এর যুগে এসে 
আমি চিঠি কেন লিখছি? 
তবে শুনুন বলি,
আমি দিনে দিনে একটু সেকেলে হয়ে যাচ্ছি।

জোনাকি

আবছা আলোয় জ্বলছে হলুদ বাতি।
আবছা আলোয় উড়ছে অগ্নি পাখি।
আধার রাত্রে উড়ছে চারিদিকে।
পুকুরের কালো জলে পরছে তাদের প্রতিচ্ছবি।
কী অপরূপ আহা!
কখনো গাছের মগডালে হলদে আলো জ্বলে, আবার নিভে।
ক্লান্ত হয়না কি এই সন্ধ্যা পাখি।
কি অপরূপ আহা!
জোনাকি!

চাষা

আমার গাঁয়ের চাষা ওরা,
ক্ষেতেই ওদের জীবন  সারা। 
বোঝে নাতো সমাজ ওরা,
ওদের সমাজ সবার সেরা।

নেই হিংসে, নেই বিদ্বেষ। 
বিদ্যে ছারা ওরা আছে বেশ।

সারাদিন মাঠে খেটে,
সন্ধ্যে কাঁটায় গাঁয়ের হাটে। 
ওদের ঘরে নেইকো টিভি,
তাই বোঝেনা রাজনিতী।

হাট থেকে বাড়িতে ফিরে,
দু মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে,
ঘুমিয়ে পরে শান্ত মনে।

ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখে,
তাদের ক্ষেতে সোনা ফলে। 
তাইতো তারা ভোরে উঠে,
খুশি মনেই ক্ষেতে চলে।

শিশুদের জন্য

এই আগ্নেয়াস্ত্রের যুগে এসে যেখানে সবাই ব্যস্ত, হাইড্রোজেন, পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজে,
সবাই যখন ব্যস্ত অত্যাধুনিক অস্ত্র আবিষ্কারে, 
সবাই যখন স্বপ্ন দেখছে বিশ্ব জয়ের, 
ঠিক এই সময়ে আমি 
রঙ্গিন কাগজে তৈরি করছি নানানরকম ফুল,
ভালোবাসা ছড়িয়ে দেব বলে।

এই প্রযুক্তির যুগে এসে সবাই যখন মত্ত অন্ত জালে, 
কেউ জানছে বিশ্বগ্রাম ধারণা, 
কেউ ব্যাস্ত অত্যাধুনিক সফটওয়্যার তৈরিতে, 
দিনরাত খাটছে বিশ্বটাকে এক করতে, 
কেউ আবার চাইছে প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্বগ্রামের দখল নিতে।

এই স্নায়ুযুদ্ধ,সাইবার যুদ্ধের যুগে 
আমি কবিতা লিখছি 
পৃথিবীটা শিশুদের নিরাপদ আবাসস্থল করবো বলে।

প্রেমিকা

আমি যদি বনের পাখি হতাম 
বনে বনে শুধু তোমায় খুঁজতাম।

আমি যদি বালিহাঁস কিংবা পানকৌড়ি হতাম 
জলের তলায় শুধু তোমায় খুঁজতাম।

আমি যদি শঙ্খচিল হতাম 
নীল আকাশে শুধু তোমায় খুঁজতাম।

আমি যদি শান্তির কবুতর হতাম
তবে প্রেমিকের লেখা চিঠি পায়ে বেধে
তোমার খোঁজে ছুটতাম।

হয়তো তোমায় কখনো পেতাম খুঁজে 
হয়তো কখনো পেতাম না খুঁজে। 
কখনো হয়তো জলপরী হয়ে তুমি সারা দিতে
জলের তলে।

কখনো বা নির্বাসিত রাজকুমারী হয়ে সারা দিতে গহীন অরণ্যে।

আমি তোমার সারা পেয়ে পক্ষিরাজ ঘোড়ার মতো তিক্ষ্ণ গতিতে ছুটতাম তোমার দিকে। 
তোমার পদচিহ্ন  চোখে ঠিকই পড়তো। 
শুধু তুমি অদৃশ্য হয়ে যেতে।

আমি যদি মানুষ হতাম 
সত্যি বলছি সারাটা জীবন তোমায় 
আমার বুকের ভেতর আগলে রাখতাম।

ফেব্রুয়ারি’র কবিতা

মেস্তাকিম হোসাইন মৃদুল প্রধান

ওই যে কৃষ্ণচূড়ার মগডালে ফুটেছে 
রক্তবর্ণ কৃষ্ণচূড়া। 
ওটা সালামের রক্তে রাঙ্গানো হয়েছে।

ও গাছে ফুটে আছে যে লাল রঙ্গা রক্ত জবা
সেটা রাঙ্গানো হয়েছে রফিকের রক্তে হয়তোবা।

যে রক্তিম গোলাপ দিয়ে আমরা প্রকাশ করি আমাদের ভালোবাসা, 
সে গোলাপ অমন রক্তিম হয়েছে জব্বারের বুকের রক্তে ভিজে।

ওই যে পতাকা উড়ছে দেখছো ওখানেও একফোঁটা লেগে আছে বরকতের রক্তের দাগ। 
শহীদ মিনারের মাঝে যে রক্ত বৃত্ত দেখছো
ওটা রাঙ্গিয়েছে ৫২’র শহীদ ভাইয়েরা তাদের বুকের রক্ত দিয়ে।

আজ আমি কবিতা লিখছি,
একটি কৃষ্ণচূড়ার জন্য । 
আজ আমি বাংলায় গান গাইছি, 
একটি রক্তজবার জন্য। 
আজ আমি সাবলীলভাবে বলছি “ভালোবাসি”,
একটি রক্তিম গোলাপের জন্য।

বাবা!

বুঝ হওয়ার পর থেকেই দেখছি মানুষটা কতটা পরিশ্রম করে আমাদের জন্য। 
সারাদিন অফিস শেষে বাড়িতে ফিরে ক্লান্ত দেহ নিয়ে আবার শুরু করে দেয় কোনো না কোনো কাজ।

মানুষটার শরীর খারাপ হলে কোনোদিন প্রকাশ করতো না খুব চাপা স্বভাবের,
অতিরিক্ত শরীর খারাপ হলে সর্বোচ্চ ২ ডোস সবচাইতে কম মূল্যের ওষুধ খেলেই নাকি ঠিক হয়ে যায়। 
আমি বড়ো হচ্ছি বাবারও বয়স বাড়ছে, এখন মানুষটার মুখের দিকে তাকালে কেমন মায়া লাগে,খুব কষ্ট হয়। 
এবার মানুষটার একটু বিশ্রাম দরকার।
পরিশ্রম করতে যে তার এখন  কষ্ট হয় এটা তার মুখ দেখলেই বোঝা যায়। 
রোজ রাতে নাকি মা’কে বলে ছেলেগুলোকে দেখে রেখো, মানুষটার জন্য কিচ্ছু করতে পারিনা, মুখ ফুটে কখনো  বলতেও পারিনা ভালোবাসি বাবা!  
তোমার আর এতো পরিশ্রম করার দরকার নাই আমি তো আছি।

বৃষ্টি

বৃষ্টি হচ্ছে বৃষ্টি হোক 
অবিরাম বৃষ্টি হোক৷
অবিরত বৃষ্টি হোক।

মেঘের আবরণ ছিড়ে যাচ্ছে যাক। 
বৃষ্টির ফোটার আঘাতে 
মৃত্তিকা কষ্ট পাচ্ছে পাক। 
তবুও আজ বৃষ্টি হোক।

মহাকাশের দুঃখ গুলো আজ ঝরে যাক। 
প্রকৃতির বুকে লেগে থাকা কলঙ্ক গুলো 
আজ ধুয়ে যাক।

কাল হতে নাহয় নতুন রূপে নতুন প্রকৃতি দেখবো। 
কিংবা মহাকাশের দুঃখহীন নতুন কোনো রূপ দেখবো। 
আজ সারাদিন সারারাত সারাক্ষণ শুধু বৃষ্টি হোক।

তুমি নেই

তোমায় খুঁজি হন্যে হয়ে 
তুমি এখানে নেই, ওখানে নেই, 
তুমি বাস্তবতায় নেই, স্বপ্নেও নেই, 
তুমি তোমাতে নেই, 
তুমি আমাতেও নেই, 
তুমি তোমার ভুল গুলোতে নেই, 
তুমি সাজিয়ে রাখা ফুল গুলোতে নেই। 
তুমি ছন্দে নেই।
তুমি কবিতায় নেই।
তুমি আমার গল্পে নেই।

মনে রেখো থাকো তুমি যেখানে
যখন, যেভাবেই, 
আমি বাসবো ভালো
 শুধু তোমাকেই।

অনিমেষ ও জুঁইফুল

অনিমেষঃ জুঁইফুল, আমাকে দেখে কি তোমার প্রেমিক মনে হয়?

জুঁইফুলঃ হুম আপনি ক্ষানিকটা প্রেমিক স্বভাবের।

অনিমেষঃ তাই, তা ঠিক কেন এমনটা মনেহয়?

জুঁইফুলঃ আপনার স্থির চোখের চাহনি দেখে, আপনার নম্রতা, মৃদু গলার স্বর শুনে।

অনিমেষঃ (একগাল হেঁসে) লজ্জা দিচ্ছ।

জুঁইফুলঃ সত্যি বলছি অনিমেষ বাবু।

অনিমেষঃ সে আমি জানি।

জুঁইফুলঃ কি করে জানেন?

অনিমেষঃ জুঁইফুল কখনো মিথ্যে বলেনা।  আর…!

জুঁইফুলঃ আর কি?

অনিমেষঃ আর… সেদিন তুমি তোমার ডায়েরি ফেলে এসেছিলে মনে আছে?

জুঁইফুলঃ ডায়েরি টা আপনি পেয়েছেন (লজ্জায় লাল হয়ে গেল জুঁইফুল কারণ সে ডায়েরিতে লেখা ছিল তার সব মনের কথা।)

অনিমেষঃ মুচকি হেসে বললো হুম।

জুঁইফুলঃ অনিমেষ বাবু?

অনিমেষঃ হ্যাঁ জুঁইফুল বলো।

জুঁইফুলঃ (চোখের কোনে জল ভারি গলায়)  ভালোবাসি আপনাকে।

অনিমেষ বুকে টেনে নিল জুঁইফুল’কে চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো পাগলি মেয়ে!

ফাল্গুন

গাছে গাছে ফুটে আছে,  
নানান রঙ্গের নানান ফুল।

মৌমাছি উড়ছে মহানন্দে, 
তার চাক পূর্ণ আজ মধুতে।

হলদে আর লাল শাড়িতে
 ভরে গ্যাছে এ শহুর।
বাসন্তী রঙ্গের পাঞ্জাবিতে
সুদর্শন পুরুষ। আর_
কপালে লাল টিপ, 
ঠোঁটে উজ্জ্বল লিপস্টিক, 
রমনীদের খোলাচুল মাথায় 
গাজরা ফুলের ক্রাউন।

প্রকৃতি আজ সেজেছে, 
আঠারো’র যুবতীর মতোন, 
প্রকৃতিতে এসেছে আজ ফাল্গুন।

প্রেমিক কে?

সবাই যখন ভালোবেসে গাছ থেকে সদ্য ফোঁটা
টকটকে লাল গোলাপ টি সামান্য টাকায় কিনে
উপহার দেয় প্রেমিকাকে, 
তখন আমি গোলাপ কে ভালোবেসে গোলাপের বর্ণনা দেই প্রেমিকাকে। 
তুমিও একটা গোলাপ আর চেয়ে দেখো গোলাপ গাছেই কত্তো সুন্দর! 
 কি দরকার তাকে হাতে নিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে বন্দী করে রাখার। 
গোলাপ প্রকৃতির মাঝেই মানানসই 
মোবাইলের স্ক্রিনে নয়।।

তাহলে আসল প্রেমিক কে?

ভালোবাসা

এইযে মেয়ে শুনছো, হ্যাঁ তোমাকেই বলছি,

_আমি

হ্যাঁ তুমি, এখানে একলা কি করছো, অমন আকাশ পানে চেয়ে আছো কেন?  
কিছু কি খুঁজছ??

_ হ্যাঁ খুঁজছি

কি খুঁজছ বলো?

_ ভালোবাসা!

হাহাহা! তোমার ও চশমায় হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা খুঁজে পাবেনা, যাও ফিরে যাও।

_ কেন খুঁজে পাবো না?

আমিও কয়েক আলোকবর্ষ ধরে আকাশ পানে চেয়ে ভালোবাসা খুঁজেছি, পাইনি। 
ইদানীং তো ব্যার্থ প্রেমিক/প্রেমিকারা বয়োস্কপ দিয়ে ভালোবাসা খুঁজেও ব্যার্থ হচ্ছে। 
তাই বলছি তুমি আর থেকোনা এখানে যাও ফিরে যাও।

এলোমেলো

সেদিন বলেছিলাম না তোমায়,
আমি একটা কবিতা লিখবো। 
আর সেই কবিতার শিরোনাম কবিতা দিব।

ভাবছি আজই কবিতা শিরোনামের 
সেই কবিতাটি লিখবো।

জানোই তো আমি কবি নই,
আমার ভেতর কবিত্ব গুণ নেই। 
বলতো এখন কবিতা লেখার মতো
শব্দ আমি কোথায় খুঁজে পাই।
 
শব্দের খোঁজে আমি 
কোথায় থেকে কোথায়  যাই। 
এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াই 
শব্দেরা তো কোত্থাও নেই।

ছন্দেরো তো কোনো ঠিকঠিকানা নেই।  
তবে কি শব্দ আর ছন্দেরা সব অবসর নিল। 
শব্দ আর ছন্দ ছারা তো
আমার কবিতা এলোমেলো।

প্রাণের জেলা

নদীর তলায় নুড়িপাথর, 
আছে সেথায় পাঁচটি গড়।
হিমালয়ের কন্যা খ্যাত, 
সবুজ পাতার শহর। 
আমাদের প্রাণের জেলা 
         “পঞ্চগড়”
 মীরগড়ের মিষ্টি টোপা
    খেতে ভারি মজা। 
 দেশজুড়ে সুনাম এখন 
      পঞ্চগড়ের চা। 
নীরবে যাচ্ছে বয়ে মহানন্দা,
  চাওয়াই আর করতোয়া 
 দূর আকাশে দিচ্ছে উঁকি 
  রূপবতী কাঞ্চনজঙ্ঘা। 
প্রাচীন ইতিহাস আর ঐতিহ্য ভরা
    ভিতর গড়ে লুকিয়ে আছে 
 পৃথু রাজের দিঘি মহারাজা। 
চারিদিকে ভরপুর চা,বালি, পাথর। 
     আমাদের প্রাণের জেলা 
                “পঞ্চগড়”

অদৃশ্য কথামালা

চলো হারিয়ে যাই,
যেখানে দুঃখবিলাস করতে পারবো নির্বিঘ্নে

যেখানে পাখিরা ছাড়া কেউ কথা বলবে না

লালকার্পেটের মতো কৃত্রিমতা না থেকে থাকবে   শুধু পাতার আস্তরণ, যাতে আলতো পা ফেললে প্রকৃতিকে অনুভব করা যাবে

পাহাড়ি ঝর্ণার ছন্দে থৈ থৈ করে নেচে উঠবে মন

যেখানে বইবে বিশুদ্ধ বাতাস, যার প্রতিটি প্রশ্বাসে মিলবে প্রশান্তি আর
 প্রতিটি নিশ্বাসে অস্বস্তির নির্গমন।

যেখানে হঠাৎ করে ঝিমঝিমিয়ে বৃষ্টি নামবে, বৃষ্টির ফোটা গুলো এতোটাই তীব্র সেখানে দুঃখ গুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।

যেখানে হাত,পা ছড়িয়ে সজোরে চিৎকার করা যাবে, বুকের ভেতর জমতে থাকা আর্তনাদ আর অদৃশ্য ব্যথার প্রতিক্রিয়া স্বরুপ

যেখানে স্থবির হয়ে থাকা আকাশ মনোযোগী হয়ে শুনবে তোমার আর্তনাদ

আর তার প্রতিধ্বনি জানান দেবে, তুমি একলা কই এ প্রকৃতি আছে তোমার সাথে

আকাশের জবাবে স্বস্তি ফিরে হৃদয়ে, 
তখন মনে হয় সব ব্যাথা, সব ব্যার্থতা কাগজের নৌকোর মতো ভাসিয়ে দেই পাহাড়ি নদীতে। 
 সব ভুলে মত্ত হয়ে যাই, আর

পাখি

নিম গাছটার সরু ডালে 
দুটি পাখি গাইছে গান,

উঁচু ডালে, অচেনা নতুন রূপ, 
জানিনে সেই পাখির নাম,

পাখির ভাষা বুঝিনে আমি,
তবুও কেন জুড়ায় প্রাণ।

মানুষ

কে হিন্দু, কে মুসলিম 
কে বৌদ্ধ, কে খ্রিস্টান
আমি এসব ধর্ম জাতের 
বুঝি না কিছুই। 
একই রক্ত সকলের দেহে 
সকলেই আমার ভাই। 
তাই আমি সব বিভেদ ভুলে 
সকলেরই বুকে টেনে নেই।

কল্পিত কবিতা

তোর লাল পেড়ে বেনারসি, 
তোর মুখে মিষ্টি হাসি।

তোর কপালের কালো টিপ,
তোর কালো লম্বা কেশ, 
তোকে আজ লাগছে বেশ্।

তোর দেবীর মতো কৃষ্ণকালো দুটি আঁখি, 
জানিস কি_
তোকে আমি কতোটা ভালোবাসি?

চাতকিনী

বসন্তের বাতাসে এলোমেলো
তোর কালো কেশ, 
তোকে আজ লাগছে বেশ্!

তোর শুকনো ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,
আর গোলাপ রঙ্গা শাড়ী, 
দেখলে মনেহয় স্বর্গের পরি!

তোর ডাগর চোখের মাতাল করা চাহনি, 
তোকে ভীষণ ভালোবাসি, চাতকিনী!

অবকাশ

দীর্ঘ অবকাশ_
তোমার দেখা পাইনা বহুদিন, 
বুকের ভেতর জমেছে কথার পাহাড় 
কিছু কথা সাদামাটা, কিছু কথা রঙ্গিন।

বলবো তোমায় বুকের গহীনে জমে থাকা সব কথা
অবকাশ শেষে যখন আবার হবে আমাদের দেখা।

আমার হৃদয়ে জমে আছে অনেক ভালোবাসা 
সব ভালোবাসায় উজাড় করে দেব তোমায়,
অবকাশ শেষে যেদিন আবার হবে আমাদের দেখা।

ফাল্গুন

আজ এই ফাল্গুনে,
নীল শাড়ী পরে হেঁটে কোথা যাও তুমি
নির্জন দুপুরে। 
খোঁপায় তোমার লাল গোলাপ,
চারিদিকে বসন্তের তাজা ফুলের ঘ্রাণ। 
নিটোল পায়ে তোমার রূপোর নূপুর। 
মাতাল করা তোমার চুলের ঘ্রাণ। 
অজানা কত শিহরণ।

এতোটা পথ পেরিয়ে ক্লান্ত তুমি, নিশ্বাস ভারি, 
কোনো এক গাছের ছায়ায় বসে,
হৃদয়ের গহীনে আঁকছো, 
কোনো এক রূপকথার ছবি।

নীল চিরকুট

বহুদিন হলো 
নীল ডায়েরিতে কবিতা লেখি না।

বহুদিন হলো
কাব্যের ভাষায় ভালোবাসি কথাটা তোমায় বলিনা।

জানি তোমার বুকে জমে আছে, 
অনেক অভিমান আর ব্যাথা

তাইতে আজ নীল চিরকুটে 
লিখে দিলাম তোমায় ভালোবাসার কথা।

স্বৈর প্রেম

তোর জীবনে যদি স্বৈরশাসক হই আমি, 
তুই কি গণতন্ত্র চাইবি মাধবী?

ধরে নে তোর সব অধিকার গুলো থাকবে আমার হাতে মুষ্টিবদ্ধ, 
যখন চাইবো ভালোবাসতে হবে, 
মাঝরাতে হুকুম করবো নববধূর মতো সাজতে,
চোখের কাজলটা ক্ষানিকটা এবরোথেবরো হলে চোখ ধুয়ে আবার কাজল দিতে হবে চোখে, 
ঠোঁটের লিপস্টিক টা আমায় আকর্ষিত না করলে বলবো টকটকে লাল লিপস্টিক ঠোঁটে দিতে, 
জানি লাল রং তোর পছন্দ না তবুও। 
তুই যখন খুব ব্যাস্ত বাসন মাজার কাজে ঠিক সেসময় আমি বলবো এক্ষুনি আমার সাথে বেরুতে হবে। 
তুই যখন স্নানের ঘরে স্নান করবি দরজায় কিল দিয়ে বলবো আমার এখন তোকে চাই…

তুই কি গণতন্ত্র চাইবি মাধবী?

চৈত্রের শিলাবৃষ্টি

চৈত্রের প্রচন্ড তাপদাহে 
খানিকটা শিলাবৃষ্টি।

আমার তৃষ্ণাত্ব প্রেমিক হৃদয়ে,
ফিরায় স্বস্তি।

দু-এক ফোটা জল পেয়ে যেন 
নিভে যায় জলন্ত আগ্নেয়গিরি।

বৃষ্টির ফোঁটায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় 
হৃদয়ের সক্রিয় পারমাণবিক চুল্লী।

হচ্ছে হোক আরও খানিকটা
চৈত্রের শিলাবৃষ্টি।

এলুমিনিয়ামের চাঁদ

এখন মধ্যরাত 
চারিদিকে শুনশান নীরবতা।

প্রকৃতি যেন ঘুমিয়ে পড়েছে, 
ঝিঝি পোকারাও আর ডাকছে না।

বাড়ির সামনে ব্যাস্ত সড়ক এ 
আর যানবাহনের হর্ণ বাজছে না।

আবছা অন্ধকার, 
কোথাও কোনো কৃত্রিম আলো জ্বলছে না।

মধ্যরাত অবধি একলা জেগে আছে শুধু, 
ওই এলুমিনিয়ামের চাঁদ টা।

জোছনা রাত

একদিন এমন জোছনা রাতে 
বেরিয়ে পরবো সন্ধ্যেবেলা, 
 হাত রেখে তোমার  হাতে
কাটিয়ে দেবো সারাটি বেলা।

হাঁটবো দু’জন নদীর ঘাটে 
ডিঙি নৌকায় ভাসবো, 
ভেসে যাবো মাঝ নদীতে 
জোনাক পোকার হাঁটে।

জোছনা রাতে জোনাকির আলোতে 
দেখবো প্রাণভরে তোমার চাঁদমুখ । 
তুমি লজ্জা পেয়ে মুখ লুকবে 
আমার বুকে, তাতেই আমার সুখ।

কেমন আছো মাধবী

কনকনে শীতে শিশির ভেজা শহরের অপরদিকে
কেমন আছো তুমি মাধবী?

এখনও কি কারো কথা ভেবে চোখের জল ফেল ?নাকি দিব্যি আছো?

মনে পরে কি কুয়াশায় ঢাকা সেসব ভোরের কথা,
নাকি ভুলে গিয়েছো?

হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ গুলো কি কখনো দেখো?

যেমন করে আমি চাইতাম, 
সে কি সেভাবেই জাপ্টে ধরে তোমায়?

সন্ধ্যের পর বাইরে থাকলে তাকেও কি বকা দেও,
তাড়াতাড়ি ফেরার জন্য তাড়া দেও?

মাধবী, কেমন কাটছে এই শীত তোমার জানিও?

সন্ধ্যা মালতির কথা

কতো কথা তোমায় বলবো ভাবি 
বুক পকেটে কতো কথা জমিয়ে রাখি,

তোমার দিকে তাকানো বারণ,তবুও
লুকিয়ে দেখি তোমার কাজল কালো আঁখি।

তোমার ঠিকানায় চিঠি লিখতে করেছ মানা 
এখন আমি একগুচ্ছ সন্ধ্যা মালতির কথা 
মেঘে ঢাকা কালো আকাশের ঠিকানায় লিখি,
তোমার ঠিকানায় আর লিখিনা।

দূরত্ব

মাধবী, 
আমরা তো একই শহরে থাকি, 
তবুও কেন এতোটা দূরত্ব আমদের?  
এতো কাছে থেকেও মনেহয় 
মানচিত্রের দু’দিকে দুজন, 
মাঝে এক অজানা কোনো মহাসাগর।

কবে পারি দেবো সে মহাসাগর, 
কবে আমাদের দেখা হবে মাধবী? 
অজানা জলপথে আর কতদিন এভাবে ভাসবো আমি?

আমার জাহাজ ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পরেছে। 
আর কতদিন এভাবে অজানায় ভাসলে ভাস্কো-ডা-গামা, কলম্বাসের মতো তোমার কাছে পৌঁছনোর পথ আবিষ্কার করতে পারবো?

লুকোচুরি

আকাশ পানে চেয়ে দেখো 
লুকোচুরি খেলা। 
ও বেলা ছিল সূর্যের আকাশ 
চাঁদের এ বেলা।

রাতের আকাশ জুড়ে জ্বলজ্বলে 
তাঁরার মেলা । 
দিনের আকাশে ভাসছে দেখো 
শুভ্র মেঘের ভেলা।

চাঁদের ভয়ে সূর্য পালায় 
সূর্যের ভয়ে চাঁদ। 
লুকোচুরি খেলা চলছে তাদের
সারা দিন-রাত।

মিক

আমি অতোটা প্রেমিক ছিলাম না 
আপনি বাধ্য করেছেন আমাকে প্রেমিক হতে। 
আমি আপনাকে ভালোবাসতাম না,
ভালোবাসা যে কি তা জানতাম না, 
আপনার কন্ঠস্বর আমাকে
বাধ্য করেছে ভালোবাসতে। 
আমি বুঝতাম না ভালোবাসার মানে, 
আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝেছি
ভালোবাসা কাকে বলে । 
এখন আমিও মস্ত বড়ো প্রেমিক,
আপনার অপেক্ষায়… 
কাটিয়ে দিতে পারি সারাটা জীবন।

আপনাকে ভালোবাসতেই হবে, 
আমিও বাধ্য করবো ভালোবাসতে!

কবিতার বিষপান

কবিতারা চায় বহুকাল বেঁচে থাকতে 
চায় মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে। 
কবিতারা প্রেমের মতোই হয়, অদ্ভুত 
কখন যে কি আবদার করে বসে ।

কবিতারাও চায় প্রেমিক আলতো স্পর্শ 
চায় কেউ ডাগর চোখে ড্যাবড্যাব করে 
তাকিয়ে থাকুক তাদের দিকে।  
মাধবী, আমার কবিতারা তোমাকে চায়।

তোমায় বলছি মাধবী, আমি না থাকলে 
আমার কবিতগুলোকে দেখে রেখো। 
ওরা ভীষণ জেদি, ওদের আবদার গুলো রেখো। 
আমায় ভালোবাসতে বলছিনা, 
কবিতাদের ভালোবেসো।

সেবার যখন তুমি অভিমান করে 
মুখ ফিরিয়ে নিলে,আমায় আঘাত দিলে। 
আমি সামলে নিয়েছিলাম নিজেকে, 
কিন্তু..
ডায়েরি খুলে দেখি ডায়েরির ২৬ পৃষ্ঠায় 
তোমাকে নিয়ে যে কবিতা লিখেছিলাম 
তার মৃতদেহ পরেআছে, 
বিষ পানে আত্মহত্যা করেছে সে।

মাধবী, আমি না থাকলে আমার 
কবিতাগুলোকে দেখে রেখো, 
ওরা যে ভীষণ জেদী।

কথা দাও আগলে রাখবে তো..?

আমি

আমার কাছে চাইছো আমায়,
আমি তো থাকি না আমাতে।

আকাশের কাছে চেয়ে দেখো 
আমি থাকি তাঁরার ভিরেতে।

চেয়ে দেখো নদীর কাছে, 
 থাকি আমি জলে মিশে।

চাইতে পারো বনের কাছে, 
আমি থাকি বনের সবুজ ঘাসে।

আমায় খুঁজো পাখির মাঝে,
উড়ি আমি নীল আকাশে।

উপেক্ষার বদলে প্রেম

আমাকে একবার চেয়ে দেখো 
নিজেকে বিলিয়ে দেবো খুব সস্তায়। 
আর দশজন প্রেমিকের মতো
প্রেমের বদলে প্রেম চাইবো না 
উপেক্ষা দিও, বিরহ অনল দিও
বিনিময়ে আমি ভালোবাসা দেবো।

ভালোবাসতে হবে না আমাকে, 
আমাকে যে ঘৃণা করো তুমি 
একথাটা একবার 
তোমার মৃদু স্বরে বলো। 
তোমার ঘৃণা ভরা চোখ নিয়ে 
আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও 
বিনিময়ে আমি ভালোবাসা দেবো।

ধ্বংস

হিরোসিমা, নাগাসাকি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে আমি একটা অত্যাধুনিক শহর গড়েছিলাম,   
আমার বুকের ভেতরে। 
আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, 
পারমাণবিক, হাইড্রোজেন, অণু পরমাণু দিয়ে তৈরি কোনো বোমা আমার সে শহরকে ধ্বংস তো দূরের কথা স্পর্শও করতে পারবেনা । 
আমি ভেবেছিলাম আমার শহর ধ্বংস করতে পারবে এমন উপাদান এ পৃথিবীতে নেই। 
সবশেষে আমি ভীষণ আশ্চর্য হলাম, 
একজনের বাকযন্ত্র থেকে উৎপাদিত কয়েকটি ধ্বনি একত্রিত হয়ে পারমাণবিক, হাইড্রোজেনের থেকে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে ব্যপক ধ্বংসলীলা চালালো আমার সে শহরে। 
ক্ষত-বিক্ষত করে দিল আমার স্বযত্নে গড়া শহর।

বুলেটের বৃষ্টি, রক্তের বন্যা

টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার মতো শব্দ হচ্ছিল 
২৫ মার্চ রাতে, 
হ্যাঁ বৃষ্টিই হচ্ছিল, তবে এ বৃষ্টি আকাশের বৃষ্টি নয়,
পাক সেনাদের বন্দুক থেকে বেরনো গুলির বৃষ্টি।

যে মানুষগুলো সারাদিন ব্যস্ত রাখে ঢাকা শহর, 
রিক্সা টানে, দোকান করে, ফুটপাতের হকার,  
পরিশ্রম করে অফিস আদালতে সারা দিনভর। 
রাত্রিবেলা আধোঘুমে তাদের ক্লান্ত শরীর ।

আচমকা শুরু হয় ঢাকার বুকে 
 মুষলধারে বুলেটের  বৃষ্টি, 
ঘুমন্ত মানুষেরা আতঙ্কে, বৃষ্টি হতে বাঁচতে
শুরু করে  ছোটাছুটি।

কোথাও যেন নেই রেহাই, 
বুলেটের বৃষ্টিতে ভিজে একাকার সবাই।

এখন যেমন তলিয়ে যায় ঢাকার রাজপথ
সামান্য বৃষ্টিতে,
সেদিনও  তলিয়ে ছিল ঢাকার রাজপথ 
বৃষ্টির ফলে ঝড়া ঘুমন্ত মানুষের বুকের রক্তে।

নষ্টনীড়ে

চৈত্রের দুপুরে
রেখেছিলাম হাত, তোমার হাতের ঘরে—
চোখ রেখেছিলাম তোমার মায়াবী চোখে।
সেই চোখের ঝিলিকে গেঁথেছিলাম
হৃদয়ে এক ছোট্ট নীড়।

তুমি বলেছিলে—
“যাবো না কোনোদিন, রেখে তোমায় একা,
সব ছেড়ে বাঁধব ঘর
তোমার হৃদয়ের ওই ছোট্ট নীড়ে।”

তবে হঠাৎই তুমি গেলে,
কোথায় হারিয়ে?
নীরব সেই পথের ধুলো আজো কাঁদে…
ফিরবে কি কখনো তুমি
আমার এই নষ্টনীড়ে?

মিঠাই

কি হে মদন বাবু, যাচ্ছো কোথা?
— যাচ্ছি দাদা শ্বশুর বাড়ি।
হাতে ঝুলছে কী ওটা?
— আজ্ঞে দাদা, মিঠাইর হাঁড়ি।

বৌদির কেন মুখ ভারি?
— দেখুন না দাদা, ছ’মাস পরে
যাচ্ছি বাপের বাড়ি।
উনি নিয়েছে মিঠাই শুধু,
একটা হাঁড়ি!

আমার বল্টু সোনা ভীষণ
ভালোবাসে খেতে মিঠাই-মুড়ি।
নিয়ে গেলে বাপের বাড়ি,
মিঠাই যদি শুধু এক হাঁড়ি—
লাগবে কিন্তু কাড়াকাড়ি!
কথা হবে আশেপাশে দশ বাড়ি,
মান-সন্মান আমার খাবে
ধুলোয় গড়াগড়ি!

দাদা, আমরা চলি, যেতে হবে—
অনেকটা পথ, হচ্ছে দেরি।

নবান্ন এলো

ফসলের মাঠে,
দুলিতেছে সোনালী ধান 
কৃষকের মুখে হাসি, 
গুণগুণ করে গাহিছে গান।

নবান্ন এলো!  নবান্ন এলো! 
কিষাণের ধান কাটা শেষ হলো,
সোনার ধান গোলাতে তুলিল। 
মৃদু শীতে মোর গাঁ’য়েতে, 
পিঠা পায়েসের ধুম পরিল।

নবান্ন এলো!  নবান্ন এলো! 
নবান্নের স্নিগ্ধ ঘ্রাণে _
গ্রাম খানা মোর ভরিয়া গেল।

নবান্ন এলো!  নবান্ন এলো!
ফসলের মাঠ শুন্য পরিয়া রহিল,
সেথায় নবান্নের মেলা বসিল।

নবান্ন এলো!  নবান্ন এলো! 
কৃষকের বঁধু-কন্যারা বায়না ধরিল। 
সোনার ধান হাঁটে বিকাইয়া, 
চুড়ি,ফিতা, আলতা কিনিয়া লইলো।

নবান্ন এলো!  নবান্ন এলো! 
করিছে সকলে তোড়জোড়,
মেলার হইবে আজি “ঐতিহ্যের ঘোড়দৌড়”!

কী অপরূপ মোর সোনার গাঁ, 
যেন সোনার ফ্রেমে বাঁধা।

ফড়িং জীবন

একদা আমার ফড়িং জীবন ছিল,
একদা আমি জোনাকি ছিলাম,
পাখি হয়ে উড়তাম আকাশজুড়ে।
আমি ভীষণ প্রেমিক ছিলাম।

তারপর_
তারপর আকাশে
বোমারু বিমান আর যুদ্ধ দেখতে দেখতে
সিদ্ধান্ত নিই—
আমার হৃদয় বিমানের বুকে স্থাপন করবো।

তারপর থেকে—
বোমারু বিমানের বুকে শুধুই প্রেম!
প্রেম, আর প্রেম!
আর আমার বুকে শুধুই যুদ্ধ!
যুদ্ধ! যুদ্ধ!

উচ্চমাধ্যমিক ও আমি

সময়টা ২০২৩ নিলয় উচ্চমাধ্যমিক ১ম বর্ষের ছাত্র বেশ শান্তশিষ্ট ভদ্র স্বভাবের একটা ছেলে। ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।  সে সময় করোনা মহামারীর কারণে পুরো বিশ্ব স্থবির। নিলয় ছাত্র হিসেবে আহামরি ভালোও না আবার এক্কেবারে যে খারাপ তাও না। এসএসসির পর সে শহর থেকে কিছুটা দূরে একটা বেসরকারি কলেজে ভর্তি হয়, জিপিএ  ভালো না হওয়ার কারণে সে সরকারি কলেজে চান্স পায়নি, তাতে তার তেমন কোনো আফসোস নেই। সে নিয়মিত কলেজে ক্লাস করে ফিরে আসে, নিলয়ের বন্ধুর সংখ্যা খুবই নগণ্য কারণ সে সহজে কারো সাথে  মিশতে পারে না কিন্তু একবার মিশে গেলে যার সাথে মিশে সেই বুঝে। খুব অল্পতেই সেই মানুষগুলোকে খুব আপন করে নেয়। এভাবেই যাচ্ছিল নিলয়ের দিনকাল।

উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফলের জন্য নিলয় শহরের নামকরা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। সেই কোচিং সেন্টারের পরিচালক নিলয়ের চাচ্চু। নিলয়ের নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে, কোচিং-এ  আশেপাশের নামকরা সরকারি কলেজের ছাত্রছাত্রীরা পরে, নিলয় তাদের সাথে পাল্লা দিতে পছন্দ করেনা, সে নিয়মিত কোচিং-এ যায় ক্লাস করে  ক্লাস শেষে প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলে না,  একলা ফিরে আসে। এভাবে মাসখানেক কেটে যাওয়ার পরে নিলয় কিছুটা মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়। নিলয়ের বন্ধুর তালিকায় নতুন দু’একটা নাম যুক্ত হয়। এর মাঝে কোচিং-এ বেশ কিছু নতুন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়, বলে রাখা ভালো তখন করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে গেলেও অনেকে সচেতন হয়ে মাস্ক পরতো, কোচিং-এও প্রায় সকলেই মাস্ক ব্যবহার করতো। নিলয় কখনো কোনো মেয়েদের দিকে সেভাবে তাকায় না আড়াল থেকে তাকালেও লজ্জা বোধ করতো। সেদিন আইসিটি ক্লাস চলছিল নিলয় ক্লাসে মনোযোগী এমন সময় ক্লাসরুমের দরজায় কেউ কড়া নাড়লো স্যার ভেতরে আসার অনুমতি দিলেন দরজা ঠেলে ভেতরে এলো হয়তো নতুন ছাত্রী। সবাই  অমনোযোগী হয়ে সেদিকে তাকাল, ততক্ষণে ক্লাসরুম প্রায় ভর্তি ছিল শুধু ফাঁকা ছিল নিলয়ের সামনে একটা বেঞ্চ। মেয়েটা ক্লাস রুমে ঢোকার সময় নিলয় একবার চোখ তুলে মেয়েটাকে দেখে তারপর আর তাকানোর সাহস হয়নি তার। প্রথম দেখাতেই নিলয়ের অদ্ভুত একটা অনুভূতি হতে থাকে, বুক ধুকধুক করতে থাকে। মেয়েটি যে নিলয়ের সামনের বেঞ্চে বসেছে, ক্লাস আবার পূর্বের অবস্থায়, নিলয় সেটি বুঝতেই পারেনি, আইসিটি ক্লাস শেষে বাংলা ক্লাস শুরু হয় নিলয় সেদিন আর ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছিল না। মাথা নিচু করে সে শুধু মেয়েটার ভেতরে প্রবেশ করাটাই কল্পনা করছিল, খোলা চুল, মুখে মাস্ক, অসম্ভব সুন্দর আর মায়াবী দুটো চোখ। বাংলা স্যার রসিক মানুষ সে নিলয়ের অন্যমনস্কতা বুঝতে পেরে ঠাট্টা করলেন, ক্লাসের সকলেই হেসে ওঠে নিলয় তখন কল্পনা থেকে বেরিয়ে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা কারণ নিলয়ের সামনে সেই খোলা চুল, খোলা চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ। ক্লাস শেষে নিলয় বাড়িতে ফিরে আসে সন্ধ্যেবেলা পড়ার টেবিলে বসে সে দুটো চোখের কথা ভাবে কি অদ্ভুত রকম সুন্দর দুটো চোখ কয়েক সেকেন্ড মাত্র দেখেছে তাতেই সে এতো আনমনা। পড়াশোনা সেদিন রাতে আর হলোনা, ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুক স্ক্রোল করছে তাতেও মন বসছেনা, নিলয় সেদিন খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লো শুয়ে শুয়ে শুধু সেই ভেতরে প্রবেশের দৃশ্যটাই ভাবছিল, সেদিন রাতে আর ঘুমোতে পারলো না অপেক্ষায় করতে থাকলো কখন সকাল হবে অবশেষে দূর মসজিদ থেকে নিলয় ফজরের আজান শুনতে পেল, কিছুক্ষণ বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে উঠে পরলো, তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে বসলো কলেজের কিছু পড়া বাকি ছিল সেগুলো করে নিলয় কলেজ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, নয়টা বাজতেই সে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল, কলেজ শেষেই কোচিং। নিলয়ের ভেতর অস্থিরতার ভাব কখন কলেজ শেষ হবে কোচিং-এ যাবে। সময় যেন কাটছিলই না। দুপুর দুইটায় কলেজ ছুটি, নিলয় কোচিং এর উদ্দেশ্যে রওনা হয় ১০ মিনিট পরে কোচিং-এ পৌঁছে দেখে সেই মেয়েটি ক্লাসে বসে আছে সঙ্গে আরও অনেকেই আছে নিলয় ও ব্যাগ রেখে বসে পরলো মেয়েরা গল্প করছিল নিলয় অন্যদিকে তাকিয়ে আছে মেয়েদের কথা গুলো তার কানে আসছিল,কেউ একজন জিজ্ঞেস করলো তোমার নাম কি, কোন কলেজ নিলয় কান খাড়া করে শুনছিল সে বুঝতে পেরেছিল প্রশ্নটা নতুন মেয়েটাকে করা হয়েছিল। অত্যন্ত মৃদু সুরে উত্তর দিল “আমি খুশি”। এমন সময় ক্লাসরুমে স্যার প্রবেশ করল সবাই চুপচাপ হয়ে ক্লাসের বইখাতা খোলা শুরু করলো। নিলয়ের কানে বাজছিল খুশি নামটা, ক্লাসে স্যারের লেকচারের বদলে সে শুনতে পাচ্ছিল “আমি খুশি”। সে দিনও কোনোভাবে ক্লাস শেষ করে নিলয় বাড়িতে ফিরে এলো। নিলয়ের কল্পনায় এখন যেন দুটো চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায়না। রাত্রিবেলায় শুয়ে শুয়ে ফেসবুক স্ক্রোল করছিল নিলয় সে লক্ষ করলো সাজেস্ট ফ্রেন্ড এ Khushi Akter নামের একটা একাউন্ট, প্রোফাইলে যে ছবি তা নিশ্চয়ই খুশির’ই, এর আগে মাস্ক পরে থাকার কারণে নিলয় খুশির মুখাবয়ব দেখতে পায়নি, কিন্তু ছবিতে চিনতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি নিলয়ের, চোখ দেখেই সে নিশ্চিত হয় এ সেই খুশি।

নিলয়ের ফেসবুকে অপরিচিত কোনো ফ্রেন্ড নেই স্বভাবের কারণে সে আগ বাড়িয়ে কাউকে রিকুয়েষ্ট দেয়না। কিন্তু খুশির একাউন্ট পাওয়ার সাথে সাথে সে অনেক আগ্রহের সহিত রিকুয়েষ্ট দিয়ে অপেক্ষায় থাকে তার বিশ্বাস রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করবে। এক সপ্তাহ কেটে গেল রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করলো না, খুশির সাথে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয় কিন্তু কোনোদিন কথা বলার সাহস হয়নি নিলয়ের। রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট না করার নিলয় খানিকটা বিষন্ন মনে রিকুয়েস্ট ক্যান্সেল করে দেয়। অনেকেই বলে উচ্চমাধ্যমিক জীবনে একবার হলেও প্রেম জাগে, কথাটা সত্যি কি না জানিনা তবে নিলয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ মিলে গেছে।  ফেসবুকে খুশি কে পাঠানো ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট ক্যান্সেল করে দেওয়ার পরে আবার একদিন শুক্রবার রিকোয়েস্ট পাঠায় সৌভাগ্যবশত সেদিন সে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করে নেয়, নিলয় তো মহাখুশি। রিকুয়েস্ট একসেপ্টের প্রথম দুএক মাস তার প্রতি খুবই আগ্রহী ছিল, প্রতিটা দিন তার আইডি ঘাঁটতো, বারবার ওর ছবি গুলো দেখতো, ওর স্টোরি দেখার অপেক্ষায় থাকতো। সময়টা এমন ছিল ওর স্টোরির স্ক্রিনশট দিয়েই নিলয়ের গ্যালারি ভর্তি হয়ে থাকতো। বিশেষ করে ও যখন শাড়ি পরে কোনো ছবি দিতো খুব  সুন্দরী লাগতো ওকে। ওর চোখ বরাবরই নিলয়ের  ভালো লাগত কিন্তু সেদিকে আর বেশিদূর এগোনো হয়নি ওর পোস্ট দেখা, স্টোরি দেখা আর লাভ রিয়েক্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, ওর ইনবক্সে ম্যাসেজ দিয়ে কথা বলার মতো পর্যাপ্ত সাহস জুগিয়ে উঠতে পারেনি। এর মাঝে সে একবার ইন্ডিয়া যায় ফেসবুকের মাধ্যমেই জানতে পারে নিলয়। তারপর থেকে খুশি আর সেভাবে কোচিং এ প্রেজেন্ট থাকতো না, ওর দেখাও পেতো না খুব একটা আর সবচেয়ে বড় কথা ওর বেশ আত্ম অহংকার ছিল সেটা নিলয়ের ভালো লাগত না । সে যাই হোক এভাবেই সময়ের পরিক্রমায় খুশি নামটা কিছুটা ঝাপসা হতে শুরু করে নিলয়ের জীবন থেকে । 
এর মাঝেই তাদের উচ্চমাধ্যমিকের রুটিন বেরোয় কোচিং এর একাডেমি কোর্স শেষে শুরু হয় প্রস্তুতি কোর্স। প্রস্তুতি কোর্সে আরও অনেক নতুন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়, সাথে পুরোনো যারা ছিল তাদের অনেকে আছে অনেকে নেই। পরীক্ষার আর দু-মাসের মতো সময় বাকি পড়াশোনার দিকে একটু মনোনিবেশ করার চেষ্টা করছিল নিলয়। পড়াশোনা আর টুকটাক ফেসবুকিং চলছিল একদিন ফেসবুক স্ক্রোল করার সময় হঠাৎ একটা আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এলো মেয়ে মানুষের নামে আইডি, খুশি ছাড়া কারো আইডি সেভাবে খুঁতিয়ে দেখতো না নিলয় কিন্তু সেদিন কি ভেবে যে আইডি টা খুঁতিয়ে দেখলো, তার চোখে পরলো আইডিতে মাত্র ৩ জন ফ্রেন্ড রয়েছে আগ্রহের সহিত রিকুয়েষ্ট টা একসেপ্ট করলো।

বেশ কিছুদিন পরে একদিন ওই আইডি টা থেকে একটা ম্যাসেজ আসলো ম্যাসেজ টা ঠিক এইরকম -মাধবী টা কে? (নিলয় টুকটাক লেখালেখি করতো। তার একটা ছোট্ট পেইজ আছে ‘বর্ণকুটির’ সেখানেই মাধবী নামটা প্রায়ই লিখতো) নিলয় উত্তর  উত্তর না দিয়ে  উল্টো জিজ্ঞেস করলো আপনি কে?  ওপাশ থেকে উত্তর এলো একটা নাম বললো (নামটা গোপনই থাক) নিলয় বিশ্বাস করলো না ভাবলাো হয়তো পরিচিত কারো ফেইক একাউন্ট।  বিশ্বাস না করার যথেষ্ট কারন ছিল কেননা যেই নামটা বলেছিল সেটা কোচিং এর টপার গার্ল যাকে নিলয় সেভাবে তাকে  চিনেও না, কোনোদিন সরাসরি  কথাও হয়নি সে নিলয়ককে ম্যাসেজ দিয়েছে একারণে বিশ্বাস করতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল । যাইহোক বিশ্বাস করে বললো তাকে,  আসলে মাধবী বলতে কেউ নেই জাস্ট নামটা ভালোলাগে তাই লেখি মাঝে মাঝে। এ থেকেই পরিচয় মেয়েটার সাথে, তারপর ওর কাছে বিভিন্ন নোটস, সাজেশন নিত। মেয়েটা অনেক টা ইসলামিক মাইন্ডের, ছেলেদের সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ  করতো না, জানিনা কেন নিলয়কে একটু প্রশ্রয় দিত, নিজে থেকেই ম্যাসেজ দিয়েছিল, তবে নিলয় যে তাকে মাঝে মাঝেই ম্যাসেজ দেয় কোনো না কোনো প্রয়োজনে এতে সে হয়তো বিরক্ত বোধ করতো । কিন্তু নিলয়ের অজান্তেই কেমন যেন একটা ভালোলাগা তৈরি হয় মেয়েটার প্রতি। তাকে   ম্যাসেজ দেওয়ার ছুতো খুঁজতো, ওর সাথে কথা বলতে খুব ভালোলাগত। মেয়েটা নিলয়কে বারণ করতো ওকে ম্যাসেজ না দেওয়ার  জন্য, ওর বারণ মানতো না এভাবে কখন যে ওর প্রতি ভালোলাগা টা এতোটা তীব্র হয় বুঝতেই পারেনি।

সব কিছু খুলে না বললেও ইঙ্গিতে প্রায় সব বলে ফেলে যে তাকে নিলয়ের ভালোলাগে। তার সাথে পরিচয় হওয়ার পর খুশির কথা ভুলেই যায় প্রায়। কিন্তু মেয়েটা কোনো রকম সম্পর্কে জড়াতে রাজি হয়না, নিলয়কে বোঝায় একটা ছেলে একটা মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারেনা, অথচ নিলয়ের ভেতর এই তীব্র ভালোলাগা টা তৈরিই হয়েছে তার জন্য। এখন সে এসব না ভেবেই হঠাৎ একেবারে কথা বলা বন্ধ করে দেয় ফেসবুকে তাকে আর পায়না। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আর ৩৪-৩৫ দিন বাকি, ওর এমন হঠাৎ প্রস্থানে নিলয় পড়াশোনায় মন দিতে পারছিলনা, সারাক্ষণ তার কথা মনে পরতো।

০৭ জুলাই ২০২৪ সকাল থেকে একটানা বৃষ্টি পড়ছে, গতকাল বিকেল টাও এমনই বৃষ্টিমুখর ছিল। নিলয়ের তখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলছিল। মাঝখানে এই ৩৪-৩৫ দিনের অনেক কথাই আছে সব কথা লিখছি না। মেয়েটা নিলয়কে আনব্লক করে ফেসবুকে তাদের মাঝে আরও টুকটাক কথা হয় এভাবেই চলছিল সবকিছু।  পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসছিল এর মাঝে ২৬ জুন ২০২৪ নিলয়ের কোচিং-এ শেষদিন ছিল সেদিন নিলয়ের মন বেশ বিষন্ন ছিল কারণ উচ্চমাধ্যমিক জীবনে এই কোচিংই তার সঙ্গী বা প্রিয় ঠিকানা ছিল । গুটিকয়েক বন্ধুবান্ধব, পরিবার, কোচিং, আর সেই মেয়েকে নিয়ে ভাবনা’ই ছিল নিলয়ের উচ্চমাধ্যমিক জীবনে। এখানে আর আসা হবেনা, সেই মেয়েটাকে আর লুকিয়ে দেখা হবে না এসব ভেবেই তার মন খারাপ ছিল। ২৫ তারিখ রাত্রিবেলা নিলয় মেয়েটিকে এসএমএস করে বলে তার সাথে দুমিনিট কথা বলতে চায়, কিন্তু মেয়েটা রাজি হয়নি কথা বলতে। যাইহোক ২৬ তারিখ দিনটা এভবেই কেটে গেল।  সেদিন নিলয় মেয়েটার উদ্দেশ্যে একটা কবিতা লেখে

আর কিছুক্ষণ থেকে যান না এ শহরে 
আর অল্প কিছুক্ষণ,
আপনি সম্মতি দিলে 
রঙ্গিন ফুলে ভরিয়ে দেবো 
এই কংক্রিটের শহর। 
এনে দেবো শুভ্র মেঘ, ঝুম বৃষ্টি। 
আকাশ ভরিয়ে দেবো রঙ্গিন বেলুন, 
প্রজাপতি,শঙ্খচিল  আর বাহারি ফানুশে, 
আর কিছুক্ষণ থাকুন,
চলুন  একসাথে হাঁটি দু-এক পা, 
পিচঢালা রাস্তায় এনে দেবো 
ভোরের সবুজ শিশির ভেজা ঘাস।
দূর করে দেবো সব যান্ত্রিকতা, 
থাকবে না  কোনো কর্কশ হর্ণ, কালো ধোঁয়া। 
আর অল্পক্ষণ থাকুন, সূর্য ডুবে গেলে
সব কৃত্রিম আলো নিভিয়ে দেবো 
এনে দেবো জ্যোৎস্না, 
জোনাকি ও উজ্জ্বল চাঁদের আলোয় ভরে যাবে শহর। 
আপনি চলে গেলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে এ শহর,
ছাই হয়ে যাবে প্রেমিকের হৃদয়। 
আপনি থেকে যান প্লিজ আর কিছুক্ষণ,
আর কিছুদিন, 
আরও কিছুদিন……. প্লিজ!

কিন্তু সেটার ও কোনো উত্তর পায়নি নিলয় শেষ হয়ে যায় কোচিং এর দিনগুলো।

এরপর পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া শুরু মেয়েটাকে আর বিরক্ত করছিল না নিলয়। পরীক্ষার আগের রাতে মেসেঞ্জারে পরীক্ষার জন্য শুভকামনা জানায় মেয়েটিও নিলয়কে ভালোভাবে পরীক্ষা দেওয়ার কথা বলে। ৩০ তারিখ প্রথম পরীক্ষা ছিল পরীক্ষা শেষে নিলয় বাসায় এসে রেস্ট নিচ্ছিল সাথে ফেসবুকও স্ক্রোল করছিল, মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ আসলো সেই মেয়েটার মেসেজ, লিখেছে কেমন এক্সাম দিলেন, নিলয় উত্তর দিল তাকেও জিগ্যেস করলো সেও উত্তর দিল। তারপর আর তেমন কথা হয়নি । এভাবে প্রতিদিন পরীক্ষার পর দু’একটা এসএমএস হতো তাদের মাঝে। মেয়েটা এমন ভাবে কথা বলতো নিলয়ের মন দূর্বল হয়ে যেতো তার প্রতি, একবার ভাবতো সেও হয়তো তাকে ভালোবাসে আর একবার ভাবতো না এটা ভালোবাসা না, এরকম একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় নিলয়ের মাঝে।

নিলয় সারাক্ষণ উদগ্রীব হয়ে থাকে তার সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু নিজে থেকে কিছু বলতেও পারেনা এই ভয়ে যে, যদি হঠাৎ আবার কথা বলা বন্ধ করে দেয়। তাই সে খুব সীমিত কথা বলতো তার সাথে,শুধু প্রয়োজনীয় দু’চারটে কথা। এই ভেবেই নিলয় খুশি হয় যে তার সাথে অন্ততপক্ষে কথাটা তো হয়। নিলয়ের বিশ্বাস ছিল সে একদিন না একদিন তার মনে জায়গা করে নিতে পারবে।

তখন সারাদেশে কোটা ইস্যুতে আন্দোলন হচ্ছিল, পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হলো। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ, চারিদিকে লাশের মিছিল। সেসময় সরকারের বিরুদ্ধে মেয়েটিও রাজপথে নেমে আসে প্রতিবাদ জানাতে। নিলয় তাকে বারণ করে কিন্তু সে নিলয়ের কথা শুনে না। নিজ হাতে প্লেকার্ড বানিয়ে নেমে আসে রাজপথে। নিলয় আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল রাজনৈতিক কারণে। সেসময় নিলয় দুজনের অবস্থান ভাবনায় কবিতাটি লিখে–

রক্ত শোকের এই শহরে
তোমার আমার ভিন্নমত, 
একই পথে স্লোগান ধরি 
মনেহয় তবু যেন ভিন্ন পথ। 
তুমি হলে বিদ্রোহ 
আমি হই ব্যারিকেড। 
সময় পেরিয়ে যাবে, 
কেটে যাবে সব সংকট। 
ভালোবাসা থেকেই যাবে 
স্থির করবো দু’জনে একই মত।

আগস্টের অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর নিলয়দের পারিবার ভীষণ বিপদে পরে কারণ তারা পতিত সরকারের সমর্থক ছিল, তাদের বাড়িতে ভাঙ্গাচুর হয়। অনেকদিন বাড়িতে থাকতে পারেনি তারা সেসময় মেয়েটা নিলয়ের খোঁজ নিত সবসময় এবং বোঝা যেত যে সে চিন্তিত। তারপর আস্তে আস্তে সবকিছু স্বভাবিক হতে থাকে। নিলয়দের উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল বের হয়। সেদিনও তাদের বেশ ভালো কথা হয়।

ফলাফলের কিছুদিন পর জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধ, মেয়েটা ঢাকার নামকরা এক কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয় নিলয় থেকে যায় পঞ্চগড়ে। তাদের মাঝে যে যোগাযোগ টা তৈরি হয়েছিল তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ৩-৪ মাস কঠোর পরিশ্রম করে মেয়েটা ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় সহ নামকরা কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। এদিকে নিলয়ের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার, নিলয়কে তার চাচ্চুর সেই কোচিং সেন্টারে যোগদান করতে হয় বিভিন্ন চাপে। সেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি কাজ করে নিলয় পড়াশোনায় পিছিয়ে যায় যার ফলে সে কোথাও চান্স পায়না। মেয়েটা যেদিন ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে চান্স পায় সেদিন নিলয় তাকে কল করে অভিনন্দন জানানোর জন্য কিন্তু পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথেই ফোন কেটে দেয়। নিলয় সেদিন ভীষণ কষ্ট পায়। কোনো যোগাযোগ নেই বিষন্নতায় কাটছিলো নিলয়ের কর্মময় ব্যস্ত জীবন। একদিন নিলয় তার ডেস্কে কাজ করছিল এমন সময় ৫-৬ জন ছেলেমেয়ে আসলো নিলয়ের চাচ্চু অর্থাৎ কোচিংএর পরিচালকের দেখা করতে, তারা এই কোচিংএই পড়তো উচ্চমাধ্যমিকে।সবাই নিলয়ের ক্লাসমেট সেখানে সেই মেয়েটিও ছিল তারা সবাই ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। এসব দেখে নিলয় খুব কষ্ট পায় সেদিনের ফোন কেটে দেয়ার কথাটা মনে পরে। নিলয় বাকি ক্লাসমেটদের সাথে হায় হ্যালো করলেও সেই মেয়েটার সাথে কথা বলার সাহস পেল না একবার শুধু চোখে চোখ পরেছিল। নিলয় ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট পাচ্ছিল করণ তারা ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে তাদের কতো কদর অথচ নিলয়কে এখানে কাজ করতে হয়। আজ যদি সেও একটা সুযোগ পেত ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে পড়ার। সেদিন মেয়েটাকে হঠাৎ দেখার পর নিলয় আরও বেশি উতলা হয়ে যায় আবার ভেতরে ভেতরে একটা চাপা কষ্টও অনুভব করে। নিলয় ভাবে সে ব্যর্থ, মেয়েটি যেদিন ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে চান্স পায় সেদিন নিলয় লিখেছিল –

একদিন হঠাৎ দেখা হয়ে যাবে আমাদের 
আপনি ঢাবির লাল বাসে জানালার পাশে
আমি দাড়িয়ে ফুটপাতের চায়ের দোকানে 
কবিতার বই হাতে,
কিছুক্ষণ জ্যামে আটকে থেকে 
আপনার বাস ছুটে চলবে গন্তব্যের দিকে 
আপনাকে আরেক নজর দেখার জন্য
আমি অনন্তকাল দাড়িয়ে থাকবো
পথের ধারে সেই ফুটপাতে।

#ব্যর্থ_আমি

তারপর অনেক চেষ্টা করেও নিলয় আর কোনোদিন মেয়েটার সাথে কোনোভাবে যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি। জানেনা এখন সে কোথায় আছে কেমন আছে। নিলয় নিজের ব্যর্থতা অসহায়ত্বতা কে দোষ দেয়। এখনো মেয়েটর জন্য অপেক্ষায় থাকে, কবিতার সেই লাল বাসে জানালার পাশে কখনোই দেখা হয়নি তার সাথে। অপেক্ষায় আক্ষেপে কেটে যায় উচ্চমাধ্যমিক জীবন।

বর্ষা

২১শে বৈশাখ, বৃহস্পতিবার।
দুপুরের পর বিকেলের কিছু আগে কালো মেঘে ঢেকে যায় পুরো নীল আকাশ। সবুজ শ্যামল প্রকৃতি মুহূর্তেই ভয়াল রূপ ধারণ করে। শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি, কালবৈশাখীর ঝড়।

নীলয় খুব ভালোবাসে বৃষ্টি।
সে সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পেরোনো একজন কলেজ ছাত্র। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, চোখে গোল চশমা। নীলয়ের ছোট পরিবার—বাবা, মা আর ছোট ভাই। ছোটবেলা থেকেই সে বেশ শান্তশিষ্ট, নরম ও বিনয়ী। ছাত্র হিসেবে খুব মেধাবী না হলেও একেবারে খারাপও নয়। তবে সে খুব অলস আর মনোযোগহীন। টেবিলে বসে একটানা দু-তিন ঘণ্টা পড়ার মতো ধৈর্য তার নেই। তবে কবিতা পড়তে আর আবৃত্তি শুনতে সে ভীষণ ভালোবাসে। এমন রাতও কেটেছে যখন সে সারা রাত কবিতা আবৃত্তি শুনে রাত পার করেছে—বিশেষ করে বৃষ্টির রাতে।

সেদিনও বৃষ্টির আগে সে কবিতাই পড়ছিল। হঠাৎ শুরু হলো কালবৈশাখী ঝড়। নীলয় জানালার কাচের ফাঁক দিয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল বাইরের দিকে। বিদ্যুতের চমকানো, মেঘের গর্জন—সব তার খুব পছন্দ। বৃষ্টির সময় সে চা খেতে ভালোবাসে, তাই নিজে গিয়ে রান্নাঘরে এক কাপ চা বানিয়ে আনল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে দেখতে লাগল ঝমঝমে বর্ষণ। মুষলধারে বৃষ্টির ফোঁটা আকাশ থেকে মাটিতে পড়ছে, বারান্দা থেকে দেখা যায় পাশের পুকুরটি। সেই পুকুরের পানিতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ায় অসাধারণ সুন্দর এক দৃশ্য তৈরি হচ্ছিল তার চোখে। বাড়ির সামনের বাগানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজে যেন নতুন রূপ ধারণ করেছে—নববধূর মতো।

একটা মজার ব্যাপার হলো—নীলয় কিছুদিন ধরেই একটা মেয়ের প্রতি দুর্বলতা অনুভব করছিল। মেয়েটির নাম ‘বৃষ্টি’। সে প্রায়ই বৃষ্টির কথা ভাবত। এমনটা আগে কখনো হয়নি। কলেজের বসন্ত উৎসবের পর থেকেই সে এমনটা অনুভব করতে শুরু করে। নীলয় খুব লাজুক বলে মেয়েদের সঙ্গে তেমন কথা বলতে সাহস পায় না।

সেদিন ছিল কলেজের বসন্ত উৎসব। ছেলে-মেয়েরা সবাই রঙিন সাজে সেজেছিল—ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি, মেয়েরা লাল শাড়ি, চুলে তাজা ফুল। নীলয় সেদিন কলেজে কবিতা আবৃত্তি করেছিল—“বনলতা সেন”। আবৃত্তির সময় হঠাৎ তার চোখ যায় বৃষ্টির দিকে। বৃষ্টিও অন্য মেয়েদের মতোই সেজেছিল, তবু কেন যেন বৃষ্টি সবার থেকে আলাদা লাগছিল তার কাছে। নীলয়ের চোখ আটকে যায় বৃষ্টির মুখচ্ছবিতে।

আবৃত্তি শেষে মঞ্চ থেকে নামতেই তার বুক ধকধক করতে থাকে। যে নীলয় কোনোদিন মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার সাহস পায়নি, সে সেদিন ভিড়ের মাঝে বৃষ্টিকে খুঁজতে থাকে। নীলয়ের আবৃত্তি শুনে বৃষ্টিও উঠে দাঁড়ায়, মেয়েদের পেছনে তাকিয়ে তাদের দেখা হয়ে যায়। দুজনেই মুখোমুখি।
নীলয় নির্বাক।
বৃষ্টি মৃদু হেসে বলে, “আবৃত্তি খুব সুন্দর হয়েছে।”
নীলয় তাকে ধন্যবাদ জানায়। সমস্ত দ্বিধা ভেঙে, লজ্জা পেরিয়ে সে বলে, “তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে।”
বৃষ্টি একটু লাজুক মুখে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যায়।

কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে নীলয় শুধু বৃষ্টির কথাই ভাবে। বসন্ত কেটে গেছে, গ্রীষ্ম এসেছে। এর মধ্যে তাদের মাঝে অনেক কথা হয়েছে। তবে এত কথা বলার পরও কেউই ভালোবাসার কথা বলতে সাহস পায়নি—যদিও দুজনেই দুজনকে ভালোবাসে।

আজ ২১শে বৈশাখ—বৃষ্টির জন্মদিন।
নীলয় ঠিক করেছে, আজই সে বলে দেবে তার ভালোবাসার কথা। ফোনটা হাতে নিয়েই সে বৃষ্টিকে কল করবে বলে ঠিক করল। কিন্তু সেই মুহূর্তেই বৃষ্টির নম্বর থেকে একটি কল আসে।

বাইরে তখনো বৃষ্টি থামেনি।
ফোনের ওপাশে মৃদু এক নারীকণ্ঠ—বৃষ্টির গলা।

নীলয় বৃষ্টিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। কিছুক্ষণের কুশল বিনিময়ের পর বৃষ্টি বলে, “তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।”
নীলয়ও বলে, “আমারও তোমাকে কিছু বলার আছে।”

কে আগে বলবে—এই নিয়ে কিছুক্ষণ মান-অভিমান চলার পর নীলয় বলে ফেলে,
“বৃষ্টি, সেই বসন্ত উৎসবের পর থেকেই তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।”
বৃষ্টি চুপচাপ থাকে। অনেকক্ষণ পরে সে বলে,
“এই কথাটা আমিও এতদিন ধরে চেপে রেখেছিলাম… আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।”

—

অষ্টাদশী প্রেম – একটি ছোটগল্প

অপর্ণা—সবে মাধ্যমিক পেরিয়েছে। ছিমছাম গড়ন, জীবনানন্দ দাশের “বনলতা সেন”-এর মতো চুল, আর চোখদুটি এতটাই মায়াবী যে তার চোখের বর্ণনায় অনায়াসেই একটি উপন্যাস লেখা যেতে পারে। মফস্বলের এক রক্ষণশীল পরিবারে বড় হওয়া অপর্ণা স্কুলে যাওয়া-আসার পথে কম প্রেমপত্র পায়নি। তবে সে এসবকে কখনো পাত্তা দিত না।

মাধ্যমিকে ভালো ফল করায় পরিবারের ইচ্ছায় শহরের এক সনামধন্য কলেজে ভর্তি হয় অপর্ণা। শহরে আসার পর থেকেই নিজেকে খুব আড়ালে রাখতে শুরু করে—কলেজ, কোচিং আর প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা বাইরে যেত না। বাইরে বের হলে বোরকা ও হিজাবে পুরোপুরি ঢাকা থাকত তার মুখ।

একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে, মাঝ রাস্তায় হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডাক দিল—
“এই যে, শুনছেন?”

অপর্ণা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পেছনে ফিরে তাকায়। দেখে, তাদের কলেজেরই এক ছেলে দ্রুত হেঁটে আসছে তার দিকে। ছেলেটি কাছে এসে বলে,
“সরি, এভাবে রাস্তায় ডাক দেওয়ার জন্য। আপনার নামটা কি জানতে পারি?”
অপর্ণা মৃদু স্বরে বলে, “অপর্ণা।”
ছেলেটি হাসিমুখে পরিচয় দেয়, “আমি স্বাজিন, দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি।”

অপর্ণা কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিল, কিন্তু ভাগ্যক্রমে তাদের রাস্তা একই হওয়ায় দুজনেই একসঙ্গে হাঁটতে থাকে। যেতে যেতে স্বাজিন নানা প্রশ্ন করে, আর অপর্ণাও এক কথায় উত্তর দেয়।

এরপর প্রায় প্রতিদিনই তাদের দেখা হতো—কলেজে যাওয়া-আসা, আড্ডা, গল্প। ধীরে ধীরে স্বাজিনের সঙ্গে অপর্ণার বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে। এই শহরে অপর্ণার পরিচিত কেউ ছিল না, তাই স্বাজিনের সঙ্গে সে স্বস্তি বোধ করত। যে কোনো সমস্যা হলে স্বাজিন পাশে থাকত।

কয়েক মাস পর, স্বাজিন বুঝতে পারে—সে অপর্ণাকে ভালোবেসে ফেলেছে। একদিন সাহস করে অপর্ণাকে ভালোবাসার কথা জানায়।
অপর্ণা চুপ করে যায়। কারণ সে এই সম্পর্কটাকে কেবল বন্ধুত্ব হিসেবেই দেখেছিল।

এরপর কিছুদিন তাদের যোগাযোগ বন্ধ থাকে।
অপর্ণাও তখন অষ্টাদশী—ভেতরে ভেতরে স্বাজিনের অভাব অনুভব করতে থাকে। অবশেষে একদিন অপর্ণা নিজেই ফোন করে সবকিছু খুলে বলে, জানায়—সে-ও স্বাজিনকে ভালোবাসে।

এরপর তাদের সম্পর্ক আবার আগের মতো হয়ে যায়। ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আর নির্ভরতায় কেটে যেতে থাকে সময়। কলেজজীবনের দিনগুলো শেষ হতে থাকে। সামনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা।

পরীক্ষার সময় দুজনের যোগাযোগ কমে যায়।
পরীক্ষা শেষে অপর্ণা চলে যায় ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতির জন্য। স্বাজিন নিজ শহরেই প্রস্তুতি নেয়।
দূরত্ব বাড়ে, ঝগড়াও বাড়ে।
ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি, অভিমান, দুঃখ।

এভাবেই একদিন,
সমাপ্তি ঘটে তাদের সেই অষ্টাদশী প্রেমের।

—

ফেয়ারওয়েল

আর কিছুক্ষণ থেকে যান না এ শহরে,
আর অল্প কিছুক্ষণ—
আপনি সম্মতি দিলে
রঙিন ফুলে ভরিয়ে দেবো
এই কংক্রিটের শহর।

এনে দেবো শুভ্র মেঘ, ঝুম বৃষ্টি,
আকাশ ভরিয়ে দেবো রঙিন বেলুন,
প্রজাপতি, শঙ্খচিল আর বাহারি ফানুশে।

আর কিছুক্ষণ থাকুন,
চলুন একসাথে হাঁটি দু-এক পা—
পিচঢালা রাস্তায় এনে দেবো
ভোরের সবুজ শিশিরভেজা ঘাস।

দূর করে দেবো সব যান্ত্রিকতা,
থাকবে না কোনো কর্কশ হর্ণ, কালো ধোঁয়া।

আর অল্পক্ষণ থাকুন,
সূর্য ডুবে গেলে সব কৃত্রিম আলো নিভিয়ে দেবো—
এনে দেবো জ্যোৎস্না,
জোনাকি ও উজ্জ্বল চাঁদের আলোয় ভরে যাবে শহর।

আপনি চলে গেলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে এ শহর,
ছাই হয়ে যাবে প্রেমিকের হৃদয়।

আপনি থেকে যান, প্লিজ,
আর কিছুক্ষণ,
আর কিছুদিন,
আরও কিছুদিন… প্লিজ!

—

বইয়ের ধরন: কাব্যগ্রন্থ / কবিতা
আহা টুনটুনি উহু ছোটাচ্চু - মুহম্মদ জাফর ইকবাল

আহা টুনটুনি উহু ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

অবাঞ্ছিত উইল - কাসেম বিন আবুবাকার

অবাঞ্ছিত উইল – কাসেম বিন আবুবাকার

মেয়েদের ব্রতকথা - আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

মেয়েদের ব্রতকথা – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

ক্রুসেড ২৫ – দুর্গম পাহাড়

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.