অন্তিম অভিযান – দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
কিশোর কল্পবিজ্ঞান সিরিজ
কল্পবিশ্ব পাবলিকেশনস
প্রথম ইবুক প্রকাশ: এপ্রিল ২০২৩
প্রচ্ছদ: কল্পবিশ্ব
আমার প্রথম সম্পাদক,
শ্রদ্ধেয় শ্রী সুকুমার বাগচিকে
ভূমিকা
‘অন্তিম অভিযান’ লেখাটা আমার বহুকালের সঙ্গী। তবে এ লেখা প্রথমে উপন্যাস আকারে তৈরিই হয়নি। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে অসম-এর সময় প্রবাহ নামের বাংলা দৈনিকে (প্রসঙ্গত সেখানেই আমার পেশাদারি লেখার হাতেখড়ি) রবিবারের কমিকস হিসেবে বের হয়েছিল লেখাটা। স্ক্রিপ্ট আমার, ইলাসট্রেশন আমার গৃহিণীর।
তখনও মোবাইল ফোন সাধারণ্যে আসেনি। ইন্টারনেট, সে-ও একেবারেই শিশু। ফলত এ-লেখার উপাদান জোগাড় করা একটা রোমাঞ্চকর কাজ হয়ে উঠেছিল। থাকতাম শিলং-এ। সেখানকার কেন্দ্রীয় পুস্তকশালা এ লেখার অনেক মালমশলাই জুগিয়েছে। এবং এর চরিত্রচিত্রণের অনেক মডেল জুগিয়েছেন পেশাক্ষেত্রে আমার ও গৃহিণীর একাধিক কর্তা ও কর্ত্রী। ব্যাপারটা ভেঙে বলি। সবে ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে কাজের জোয়ালে জুতেছি তখন। আদেশ দিই যত, আদেশ মানতে হয় তার চতুর্গুণ। দায়িত্বমুক্ত ফুরফুরে জীবনটাকে মিস করতাম খুব। ফলে অফিসের কর্তারা তখন এনিমি নম্বর ওয়ান। এ-লেখার প্রত্যেক ভিলেনই সেই সময়কার একেকজন কর্তা ও কর্ত্রীর মডেলে গড়া। কমিক ভার্শনের ছবিগুলোতে সেই চেহারাদের আদল খুব ভালো ফুটিয়েছিলেন গৃহিণী। ভাগ্য ভালো সেই কর্তা-কর্ত্রীদের কেউই বাংলা ভাষাটা জানতেন না। ফলে প্রাণে বেঁচে গেছি, যদিও অফিসের বাঙালি কর্মীমহলে সে নিয়ে বেশ খানিক হাসাহাসি চলত।
এর বেশ কয়েক বছর পরে, আমি তখন মধ্যপ্রদেশে চলেছি বদলি নিয়ে। বইপত্র নিয়ে যাবার জন্য কার্টনে বোঝাই চলছিল, এই সময় সেই কমিকসের পেপার কাটিংগুলো ট্রাঙ্ক থেকে বের হল। তাদের একত্র করে কাগজে সেঁটে একটা বই বানিয়ে বাঁধিয়ে নিয়ে একসঙ্গে দেখতে গিয়ে মনে হল, এইবার একে একটা উপন্যাসে বদলে দেওয়া যাক। অতএব জয়ঢাক পত্রিকার পাতায় ধারাবাহিকভাবে বের হওয়া শুরু হল অন্তিম অভিযান। দীর্ঘ ব্যবধানে টেকনোলজি, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান, এই সবকিছুই অনেক বদলে গেছে ততদিনে। অতএব কাহিনিতেও সেই দাবি মেনে বদল এসেছে অনেক। কিন্তু এর অন্তর্লীন সুরটি একই রয়ে গেছে। সে হল, মানুষের বিচিত্র রূপ। বড় ঝগড়া করি আমরা। আত্মধ্বংসী যুদ্ধ আমাদের রক্তে। অথচ সেই আমরাই আবার কোনও গ্রহব্যাপী বিপদ এলে রুখে দাঁড়াই। আত্মধ্বংসী অস্ত্র বদলে গিয়ে হয়ে ওঠে আত্মরক্ষার হাতিয়ার। হার মেনে নেওয়া আমাদের স্বভাবে নেই। এমনই একটা গ্রহব্যাপী ক্যাটাস্ট্রফের বিরুদ্ধে সফল এক যুদ্ধের গল্প ‘অন্তিম অভিযান’।
ভালোবেসে লেখা। জার্গনের ছড়াছড়ি নেই। নিকট ভবিষ্যতের কাহিনি। তার গ্যাজেট, যানবাহন সবকিছুকেই খানিক খানিক চেনা যায় তাই। বর্তমানের লজিক্যাল এক্সট্রাপোলেশনে নিকট ভবিষ্যতের এই ছবিকে আপনাদের হাতে তুলে দিতে আনন্দ হচ্ছে খুব।
আশা করি ভালো লাগবে।
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
.
লেখক পরিচিতি
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্যের জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা নৈহাটি শহরে। ১৯৯৫ সালে গুয়াহাটির সময় প্রবাহ দৈনিক পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে লেখকজীবনের শুরু। তারপর থেকে ছোটবড় বিভিন্ন পত্রিকায় ছোট ও বড়দের জন্য নিয়মিত লিখে চলেছেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ ইলাটিন বিলাটিন, কল্পলোকের গল্পকথা, দোর্দোবুরুর বাক্স, ঈশ্বরী, ঠগির আত্মকথা, গভীর উত্তর সরণিতে, যাত্রী। তা ছাড়াও তাঁর গল্প সংকলিত হয়েছে বিভিন্ন প্রকাশনার গল্প সংকলনে।
ভ্রমণসাহিত্যের জন্য কলম সম্মান পেয়েছেন ২০১১ সালে।
.
বিশ শতকের শেষের দিকে জ্যোতির্বিদ ব্রায়ান জি মার্সডেন গণনা করে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, ২১২৬ সালের ১৪ আগস্ট পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়তে পারে ধূমকেতু সুইফট টাটল। তার পনেরো কিলোমিটার ব্যাসার্ধের নিউক্লিয়াসের আঘাতে পৃথিবীর বুক থেকে হয়তো মুছে যাবে গোটা জীবজগৎটাই। সম্ভাব্যতাতত্ত্বের চুলচেরা হিসেব জানিয়েছিল, সংঘাতের সম্ভাবনা দশ হাজারে মাত্রই এক। কিন্তু—
—একবিংশ শতাব্দীর ষষ্ঠ দশক। সৌরজগতের সীমানা ছাড়িয়ে বহুদূরে উর্ট মেঘমণ্ডলে, গভীর মহাশূন্যের শীতলতায় জমাট বাঁধা একটা ধুলো গ্যাস আর বরফের পিণ্ড, তার যাত্রাপথের দূরতম বিন্দুতে পৌঁছে গতিমুখ বদলে নিল। শুরু হল ধূমকেতু সুইফট টাটলের শেষ সূর্যমুখী যাত্রা— তার অন্তিম অভিযান।
দশকের পর দশক কেটে গেছে, তারপর। সবার অলক্ষে অজানা অতিথি এসে পৌঁছোল সৌরমণ্ডলের সীমানায়। তারপর, দূরতম গ্রহ প্লুটোর কক্ষপথ অতিক্রম করে, তীব্র গতিতে দূরত্বকে গ্রাস করতে করতে ছুটে চলল সূর্যের দিকে। একখণ্ড জমাট ধুলোর পিণ্ডের চলন বিচলিত করতে পারে না মহাকাশের বিশালদেহী গ্রহনক্ষত্রদের। কিন্তু তার গতিমুখ ক্রমশই বিচলিত করে তুলছিল একজন মানুষকে। সৌরমণ্ডলের তৃতীয় গ্রহটির মৃত উপগ্রহের বুকে একজন মানুষের চোখে, তখন ঘুম নেই—
Leave a Reply