• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৫৮. ঘটনাটা ঘটল সন্ধেবেলায়

লাইব্রেরি » শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় » উপন্যাস (শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়) » পার্থিব - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় » ০৫৮. ঘটনাটা ঘটল সন্ধেবেলায়

ঘটনাটা ঘটল সন্ধেবেলায়। খুব দূরেও নয়। পারুল বলতে গেলে বীণাপাণির খুব নিকট পড়শী, মহেন্দ্রবাবুর মেজো মেয়ে। একটু কেমনধারা যেন মেয়েটা। বড় খোলামেলা, সবসময়ে বোকার মতো হিহি হাসি। যখন তখন সিনেমায় যাবে। যাত্রা, জলসা কিছু বাকি রাখবে না। একটু ঢলানিও আছে।

পারুল ম্যাটিনি শো দেখে ফিরছিল। বড় রাস্তা থেকে মাঠের পথে নেমে বাড়ি ফিরছে, এমন সময় চারটে ছোকরা তাকে ধরে টেনে নিয়ে যায়। বেশি দূরেও নয়। মৈনুদ্দিনের বাঁশঝাড়ের পিছনে একটা পতিত জমিতে নিয়ে কাপড়জামা টেনে ছিঁড়ে খুলে ফেলে পারুলকে ছিবড়ে করে ফেলে রেখে গিয়েছিল তারা। মেয়েটার জ্ঞান ছিল না।

একটু রাতের দিকে চেঁচামেচি ডাক খোঁজ শুরু হল। বীণাপাণির বাড়িতেও খোঁজ করতে এলেন মহেন্দ্রবাবু।

পারুলকে দেখেছ বীণা? শুনছি সিনেমায় গিয়েছিল, এখনও ফেরেনি।

না তো কাকাবাবু, দেখিনি।

বড় ভয়ের কথা হল। রাত প্রায় দশটা বাজে।

বীণা তার টর্চ বাতিটা নিয়ে ঘরে তালা দিয়ে বেরিয়ে এল, চলুন তো দেখি।

দাঁড়াও। খড়ের গাদায় উঁচ খোজা হবে। পাড়ার ছেলেদের জানাবো না ভেবেছিলাম। এখন ভাবছি জানানোই ভাল। বড় ভয় হচ্ছে।

কিছু বলে যায়নি? দেরি হবে বলে কিছু বলেনি?

না। ম্যাটিনি শোয়ে গিয়েছিল। দেরি হওয়ার কথা নয়।

তা হলে ক্লাবের ছেলেদের খবর দেওয়াই ভাল।

মহেন্দ্রবাবু চলে গেলেন, কিন্তু বীণা ঘরে গেল না। মেয়েদের যে কত বিপদ, কত লোভ-লালসার নজরবন্দী হয়ে যে তাদের থাকতে হয় সে কথাই সে ভাবছিল টর্চ হাতে দাঁড়িয়ে।

আধা ঘন্টাও পার হল না, একটা শশারগোল উঠল। টর্চ হাতে এগিয়ে গেল বীণা। একটু এগোতেই দেখল, ছেলেরা ধরাধরি করে মাঠ থেকে তুলে আনছে পারুলকে।

ধর্ষিতা কোনও মেয়েকে এর আগে কখনও দেখেনি বীণা। আজ দেখল। খোলা দাওয়ায় শশাওয়ানো ঠাণ্ডা, রক্তাক্ত জ্ঞানহীন দেহ। কম্বল দিয়ে ঢাকা দেওয়া হয়েছে। মুখে গাজলা কাটছে। পারুলের মা, দিদি, ঠাকুমা কাঁদছে, ক্লাবের ছেলেরা তড়পাচ্ছে, মহেন্দ্ৰবাবু মাথায় হাত দিয়ে বসা। কিছু স্পর্শ করল না বীণাকে। সে শুধু পারুলকে দেখছিল। তার শরীরের ভিতর থকে একটা হলকা যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। রাগে, বিদ্বেষে, ঘেন্নায় যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে মাথা। রাত এগারোটার পরও পাড়াসুষ্ঠু লোক এসে জুটেছে মহেন্দ্রবাবুর বাড়িতে। যেন একটা মস্ত পরব।

বীণার পিছন দিকেই একটা জটলা। মাঝবয়েসি কয়েকজন তোক চাপা গলায় কথা বলছিল। তাদের মধ্যে একজন বলল, মেয়েটাও সুবিধের ছিল না মশাই। রেপ কি আর অমনি হয়? এক হাতে তালি বাজলেই হল!

বীণা ঘুরে লোকটার মুখে টর্চের আলো ফেলল অভদ্রের মতো। বলল, আপনি কিছু দেখেছেন?

লোকটা চমকে উঠে বলল, কি দেখব?

আপনি পারুলকে দেখেছেন, রেপ হওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছিল?

নিজের কণ্ঠস্বরের তীব্রতা বীণাকেও চমকে দিল।

লোকটা একটু ভেরিয়ে হয়ে বলে, দেখার কী আছে। সবাই জানে।

বীণা এক পা এগিয়ে গিয়ে বলল, কি জানে?

সেটা কি আপনাকে বলতে হবে নাকি?

বীণা সটান লোকটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, হঁ। আমাকে বলতেই হবে। মেয়েটা খারাপ কি ভাল সে কথা পরে হবে, তার আগে বলুন রেপ করাটা ভাল না খারাপ?

লোকটা একটু ভড়কে গিয়ে বলে, রেপ ভাল তো বলিনি!

আপনি তো রেপ করাটাকেই সাপোর্ট করছেন। এই যে বললেন, এক হাতে তালি বাজে না। যেন মেয়েটাও রেপ হওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল। তাই বুঝি!

অন্য লোকেরা তাড়াতাড়ি মধ্যস্থ হয়ে যেতে দাও, যেতে দাও বলে লোকটাকে একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে গেল। বীণার ইচ্ছে হচ্ছিল লোকটাকে জুডোপেটা করে।

ডাক্তার এল। কী একটু দেখেটেখে বলল, পুলিশে খবর দিয়েছেন? না দিয়ে থাকলে দেওয়া উচিত। আর হাসপাতালে রিমুভ করুন। থরোলি পরীক্ষা হওয়া দরকার।

পারুলকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন বীণা ঘরে ফিরে এল। দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসে অনেকক্ষণ ধরে গরম শ্বাস ফেলল ফোঁস ফোঁস করে। বুক জ্বালা করছে। পারুলের সঙ্গে যে তার খুব একটা ভাব ছিল তা নয়। পাড়ার মেয়ে বলে চিনত। কিন্তু আজ পারুলের এই সৰ্বনাশ যেন পারুলের বন্ধু করে তুলল তাকে। দুনিয়ার যত ধর্ষিত নারীর জ্বালা যেন সে পেতে লাগল আজ রাতে।

কেন রেপ হবে মেয়েরা? কেন হবে? কেন তারা পুরুষের হাতে এরকম বেমক্কা লাঞ্ছিত হবে দুনিয়ার সব জায়গায়? কেন ফাঁসি দেওয়া হয় না ধর্ষণকারীদের?

খানিকক্ষণ ঘরের মধ্যেই উদ্‌ভ্রান্তভাবে ঘুরে বেড়াল বীণা। বড় অস্থির লাগছিল তার। তারপর হঠাৎ জ্বালা, রাগ, বিদ্বেষ উড়ে গেল। একা ঘরে তার হঠাৎ ভীষণ ভয় করতে লাগল। তার নিরাপত্তা বলতে তো কিছুই নেই। সামান্য এই ঘরখানা কত পলকা। ধর্ষণকারী তে ইচ্ছে করলে ঘরেই এসে তাকে আক্রমণ করতে পারে। যেমাঠের রাস্তায় আজ রেপ শুল সেখান দিয়ে তো তাকেও একা ফিরতে হয় মাঝে মাঝে। তা হল সেও কি একদিন পলের মতো শিকার হয়ে যেতে পারে?

এই ভয় এমন ঠাণ্ডা করে দিল তাকে যে, বীণা সারা রাত ঘুমমাতে পারল না। শীত পড়েছে, কিন্তু শরীরের এই ঠাণ্ডা বেই সে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল।

পরদিন সকালে সে কাকার ঠেক-এ হাজির হল গিয়ে।

কাকা, একটা ব্যবস্থা করো।

কিসের ব্যবস্থা বীণা?

শোনোনি কাল রাতে পারুল রেপ হয়েছে?

কে পারুল?

মহেন্দ্রবাবুর মেয়ে।

কী মুশকিল! মহেন্দ্রবাবুটাই বা কে?

আমাদের পাড়ার।

তিনি তো বিখ্যাত লোক নন যে চিনব।

বিখ্যাত না-ই বা হল। আমি তো চিনি।

রেপ হল কি করে?

স্যাটিনি শো দেখে সন্ধেবেলায় ফিরছিল, তখন হয়েছে।

তার আমি কী ব্যবস্থা করব?

তার ব্যবস্থার কথা বলিনি। পারুলের ব্যবস্থা যা করার ডাক্তার আর পুলিশ করবে। ব্যবস্থা আসলে কিছুই হবে না। রেপিস্টদের চিনলেও পুলিশ ধরবে না। ধরলেও কেস ঝুলে থাকবে। আমি আমার ব্যবস্থার কথা বলছি। আমার আর ও-পাড়ায় থাকতে সাহস হচ্ছে না।

কাকা একটু হেসে বলে, অত ভয় পেলে চলবে কেন? রেপ তো হয়েই থাকে। তা বলে মেয়েরা তো আর ঘরে বসে নেই।

এটা কথা নয় কাকা। তুমি এমনভাবে বলছ যেন রেপটা জলভাত।

আরে, রাগ করছ কেন? শেফালি রেপ হয়েছে বলেই যে আর সবাই হবে তার কোনও মানে নেই।

শেফালি নয়, পারুল।

ওই হল। খোঁজ নিয়ে দেখ, হয়তো মেয়েটা ছেলেগুলোর সঙ্গে মিশত-টিশত। হয়তো একটু অ্যাডভেনচারাস টাইপের ছিল। সেই সব মেয়েই রেপ হয় যারা ওটা ইনভাইট করে।

বীণা ফুঁসে উঠল, কাল ঠিক এরকমই একটা কথা বলছিল একটা লোকতোমরা পুরুষমানুষেরা আসলে সবাই একরকম। তোমার কেন ধারণা হল যে, মেয়েটাই খারাপ?

আচ্ছা মানছি, মেয়েটা ভাল। কিন্তু রেপ হওয়ার মতো একটা পরিস্থিতি তো চাই। নইলে সব মেয়েই তো হত। তা যখন হচ্ছে না তখন ধরতে হবে–

দয়া করে চুপ করবে?

কেন, কী হল।

তুমিও ওই লোকটার মতোই খারাপ। শোনো কাকা, মেয়েরা সবাই জানে, পুরুষেরা কী রকম। সুযোগ পেলেই যে ভারা মেয়েদের হরির লুটের বাতাসা মনে করে তা আমি জানি।

তুমি বড় রেগে যাচ্ছ।

এর পরও রাগ না হয়ে পারে, বলো!

আচ্ছা আমি ক্ষমা চাইছি। এখন বলে তো কী হয়েছে।

বলেছি তো। আর শুনতে চেও না। আমার একটা ব্যবস্থা করবে।

কি ব্যবস্থা? তোমার সঙ্গে একটা মেয়েকে রাখতে বললাম, তা তো রাখলে না?

ওটা মোটেই কোনও ভাল ব্যবস্থা নয়।

তা হলে নিমাইকে ফিরিয়ে আনো।

নিমাই! সে কেন ফিরবে! ইয়ার্কি করছ? এসব নিয়ে ইয়ার্কি করা ভাল নয় কাকা।

দেখ, ফের রেগে যাচ্ছে! ইয়ার্কি মোটেই করিনি।

আগে আমাকে বলো তো, মেয়েদের আর কতদিন এরকম পাহারা দিয়ে রাখতে হবে?

কাকা গম্ভীর হয়ে বলে, যতদিন রোপস্ট করে ততদিন।

রেপিস্টদের ফাঁসি দাও না কেন? যাকগে, সেই মেয়েটা কোথায় আছে?

নেই। সে একটা ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে।

বাঁচা গেছে।

তুমি বরং ঘরটা ছেড়ে শহরের দিকে চলে এসো।

নিজের ঘর ছেড়ে দেবো?

উপায় কি?

বীণা কিছুক্ষণ গুম হয়ে বসে থেকে হঠাৎ বলল, আমার মনটা একদম বিগড়ে গেছে।

ব্যাপারটা তুমি বড্ড বড় করে দেখছ। পচা-গলা একটা সমাজে থাকে। কত পাপ হচ্ছে চারদিক! গা বাঁচিয়ে এ মধ্যেই তো থাকতে হবে আমাদের। আর লড়াই করতে হবে।

তুমি কি লড়াই করছ শুনি?

আমিও লড়ছি বীণা। সামাজিক পাপের সঙ্গে আমার লড়াইয়ের হাতিয়ার নাটক। যার যা আছে সে তো তাই নিয়েই লড়বে, নাকি? আমাদের আর কোন হাতিয়ার আছে বলো!

বীণা গোঁজ হয়ে বসে থেকে কিছুক্ষণ পরে বলল, আমার বড় ভয় করছে। পারুলের মুখখানা দেখে এত কষ্ট হচ্ছিল কাল।

হওয়ারই কথা। ভেবো না, দলের কোনও মেয়েকে সঙ্গে কয়েকটা দিন রাখে। তারপর দেখা যাবে।

বীণা উঠল।

হাসপাতালে গিয়ে যখন পারুলকে ফের দেখল বীণা তখন তার জ্ঞান ফিরেছে। তার মা বসে আছে পাশে। তাকে দেখে পারুল ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

কী হয়ে গেল বীণাদি।

কী হয়েছিল বলবে?

পুলিশকে বলেছি। পুলিশ আরও উন্টে এমন সব প্রশ্ন করতে লাগল যেন দোষটা আমারই।

পুলিশও যে পুরুষমানুষ। কি হয়েছিল?

যা হয়। একা ফিরছিলাম। চারটে ছেলে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল।

চারজন?

হ্যাঁ।

ফলো করে এসেছিল?

কী জানি। কাউকে লক্ষ করিনি আগে।

হঠাৎ এসে ধরল?

হ্যাঁ। চারজনকে দেখলাম রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে আছে। পাশ কাটাতে যেতেই একজন হাত ধরে ফেলল। বলল, আমাদের সঙ্গে যাবে? মেলা টাকা দেব।

এত সাহস?

ওরা আমাদের বেশ্যা বলেই বোধ হয় ভাবে। আমি ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চেঁচাতে যাচ্ছি, অমনি একজন মুখ চেপে ধরল।

তারপর?

আরও শুনতে চাও? টেনে নিয়ে গিয়ে পতিত জমিটায় ফেলে দিল। তারপর মনে হচ্ছিল যেন, মানুষ নয়, চারট কুকুর আমাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে। আমার কী হবে বীণাদি।

কী আবার হবে? এ সমাজে কিছু হয় নাকি? সব মেনে নিতে হয়।

আমার যে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। পাকা কথা হয়ে গেছে। ওরা কি আর নেবে আমাকে?

বীণা থমকে গেল। তারপর বলল, কেন নেবে না?

ধ্যুৎ। রেপ হওয়া মেয়েকে কেউ নেয়?

বীণা স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ।

পারুল কাঁদতে কাঁদতে বলে, কিছুই পোপন থাকবে না বীণাদি। এতক্ষণে তাদের কাছে বোধ হয় খবর পৌঁছে গেছে। কী হবে বলে তো?

বীণা পারুলের হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, শোনো, ওরকম কথা বলে না। বিয়েটাই মেয়েদের সব নয়। বিয়ে না হলেও জীবনটা নষ্ট হয়ে যায় না। মেয়েরা এত সহজে ভেঙে পড়ে বলেই তো লড়াই করতে পারে না। শক্ত হও তো। কয়েকটা কুকুর তোমার জীবন নষ্ট করে দেবে কি হয়?

দিল তো।

মোটেই দিল না। আমি মনে করি, মেয়েরা পুরুষের তুলনায় অনেক উন্নত মানুষ। তাদের অনেক কিছু করার আছে।

এমনকি বাবা অবধি আজ সকালে আমাকে বকাকি করে গেছে, জানো?

কী বলেছেন উনি?

বলেছে, আমারই নাকি দোষ। কেন সন্ধেবেলা আমি একা ফিরছিলাম, কেন আমি এত স্বাধীনচেতা, এইসব।

একা ছাড়া উপায় কি? আমাকেও কত রাতে একা ফিরতে হয়।

তোমার সম্পর্কে পাড়ার লোক তো কত কথাই বলে!

তুমি বলো না তো!

না, বীণাদি। আমি জানি, তুমি কত কষ্ট করে সংসার করছ। নিমাইদার সঙ্গে আমার খুব ভাব ছিল। নিমাইদা তোমার কথা কত বলেছে আমাকে।

কী বলেছে?

বলত তুমি নাকি বেহুলার মতো অনেক সাধ্যসাধনা করে তবে নিমাইদাকে শক্ত অসুখ থেকে ভাল করেছ। শ্বশুরশাশুড়িকে খাইয়ে পরিয়ে রেখেছ। তোমার খুব প্রশংসা করত।

পারুলের ঘোমটা টানা মা এবার বীণার দিকে চেয়ে বলল, নিমাই আমার ছেলের মতো। কী সুন্দর গলা। কত কীৰ্তন শুনিয়েছে আমাদের। তাকে দেখছি না কেন?

আছে।

তোমার কথা সত্যিই খুব বলত বাছা। এখন এ মেয়েকে নিয়ে কী করব বলো তো! সারা রাত কেঁদেছি। চোখের জল বোধ হয় ফুরিয়ে গেল। একটা পরামর্শ দাও তো মা।

বিয়ে যদি ভেঙে যায় তো যাক। ও নিয়ে ভাববেন না। পারুল গান গাইতে পারে?

খালি গলায় গায়। ভালই গায়।

ও সুস্থ হয়ে উঠুক, আমি কাকাকে বলে ওকে যাত্রায় ঢুকিয়ে দেবো।

যাত্ৰা! যাত্রা করলে কী হবে! বিয়েটার কথা ভাবছি।

বিয়ের কথায় বিরক্ত হল বীণা। বলল, দেখুন মাসিমা, এদেশে এখনও মেয়েরা নিজের ইচ্ছেয় বিয়ে করতে পারে না। তাদের কেউ পছন্দ করলে, দাদরিতে বনিবনা হলে তবেই বিয়ে।

তাই তো বটে।

লটারি খেলার মতো। বিয়ের জন্য বসে থাকলে মেয়েদের কিছু হবে? দেশভর্তি ছেলেগুলো সব বেকার, বিয়ে করবে কে? তারপর এই ঘটনা। বিয়ে নিয়ে ভাবছেন কেন?

তাহলে?

ওসব পরে ভাবা যাবে মাসিমা। আচ্ছা, পারুল, ওরা কারা ছিল জানো? কাউকে চিনতে পেরেছিলে?

পারুলের চোখের পাতা যেন একটু কাপল। একটা মেয়ে মিথ্যে কথা বললে অন্য মেয়ে তা যেন বুঝতে পারে। পারুল স্তিমিত গলায় বলল, না তো!

একটুও চেনা লাগল না কাউকে?

না বীণাদি। বোধ হয় বাইরের ছেলে।

কত বয়স হবে?

পঁচিশ-ছাব্বিশ বলে মনে হয়।

প্যান্ট-শার্ট পরা?

একজনের পরনে পায়জামা ছিল।

আবার দেখলে চিনতে পারবে?

জানি না। এত ভয় পেয়েছিলাম যে, কিছু মনে পড়ছে না।

বীণা ভ্রূ কুঁচকে পারুলের দিয়ে চেয়ে রইল। তার মনে হয়, পারুল মিথ্যে কথা বলছে। ধর্ষণকারীদের কাউকে হয়তো সে চেনে।

তবে বীণা আর আকচাকিচি করল না। বলল, ডাক্তাররা কী বলছে! কবে ছাড়বে তোমাকে?

দু-তিন দিন লাগবে।

পুলিশ কী বলে গেল?

আরও নাকি জানতে আসবে। তুমি আমার কাছে একটু বসবে বীণাদি? বসলে আমার একটু সাহস হয়।

আমি নিজেই তো ভীতু।

তুমি মোটেই ভীতু নও। একা একা কেমন ডাকাবুকোর মতো থাকো, তোমাকে সবাই ভয় খায়।

আমি বুঝি দেবী চৌধুরানী?

তোমার বেশ তেজ আছে? আমাদের নেই। আমার জায়গায় তুমি হলে ওরা পারত না।

বীণা বিছানার একধারে একটু বসল। তারপর বলল, তোমার প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে করে না?

খুব করে।

কি ভাবে নেবে?

তা তো জানি না। ইচ্ছে করে ওদের ধরতে পারলে জলবিছুটি দিই। আমার ভবিষ্যৎটাই তো নষ্ট হয়ে গেল।

বীণা মাথা নেড়ে বলে, নষ্ট হবে কেন? নতুন ভবিষ্যৎ তৈরি হবে। যারা রেপ হয় তারা পচে যায় না।

তুমি বেশ বলো। ঠিক যেন সিনেমার ডায়ালগ।

নাটক করি বলে বলছ?

না না, ছিঃ। তা নয়। কথাগুলো সুন্দর। সাহস হয় শুনলে।

তোমার এখন সাহসই তো দরকার। অনেকে যা হয়েছে তা মেনে নেয়। তুমি মেনে নিও না।

কী করব তা বলে দেবে?

ভেবে বলব। এখন নয়। আমারও অনেক লড়াই আছে। অনেক পথ যেতে বাকি।

কিন্তু তুমি তো রেপ হওনি বীণাদি। হলে বুঝতে।

পারুল হঠাৎ ফের ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল। কাঁদতে লাগল।

বীণা চুপ করে বসে রইল। সে ডায়ালগ দেয় বটে। কিন্তু তার ভিতরটা বড় শূন্য।

Category: পার্থিব - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
পূর্ববর্তী:
« ০৫৭. চয়ন যখন পড়ায়
পরবর্তী:
০৫৯. বাড়ির প্ল্যান পাল্টাতে হল »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑