৩. ভোকাবুলারি জয়ের ৫টি কৌশল

ভোকাবুলারি জয়ের ৫টি কৌশল

বিভিন্ন ভর্তিপরীক্ষা থেকে শুর করে জীবনের নানা স্তরে ভালো করার ক্ষেত্রে প্রায়ই কাল হয়ে দাঁড়ায় ভোকাবুলারি বা শব্দভান্ডার ভালো না থাকাটা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যে, আমরা ভোকাবুলারি মুখস্থ করে কিছুদিন পরেই আবার ভুলে যাই। এজন্যে ভোকাবুলারিই অনেকসময় আমাদের সফলতা অর্জনের শত্রু হয়ে পড়ে!

একটা ঘটনা বলি। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা দেয়ার প্রস্ত তি নিচ্ছিলাম, ইয়া মোটা একটা বই মুখস্থ করেছিলাম। একগাদা শব্দ, সব আমার মুখস্থ! কিন্তু হলো কী, যেই না ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলো, হঠাৎ দেখলাম সেগুলো আর আমার মাথায় নেই! বেমালুম ভুলে গিয়েছি প্রায় সবগুলোই!

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্যে কয়েকটা টিপস ফলো করতে পার। চলো দেখে আসি কেমন সেই টিপস :

১. আমরা যখন প্রায় একই বানান বা উচ্চারণের শব্দ বারবার দেখি,আমরা গুলিয়ে ফেলি কোনটি আসলে কোন শব্দের অর্থ। এ জন্য শব্দ মুখস্থ করে পড়ার সময় একটু উল্টেপাল্টে নিতে হবে। প্রথমে না হয় A দিয়ে শুরু এমন একটা শব্দ পড়লে, আর তারপর A যুক্তশব্দ না পড়ে Z দিয়ে শুরু এমন আরেকটা শব্দ পড়ে ফেললে! তাতে আর এ সমস্যাটা হবে না।

২. যদি এমন হয় যে, তুমি একটা শব্দ বেশ কয়েকবার পড়েছ, কিন্তু এখন আর সেটা মনে পড়ছে না। তখন কী করবে? এর প্রস্তুতি নিতে হবে আগেই। কঠিন শব্দগুলো পড়ার সাথে সাথে মনের মধ্যে মজার কোন বাক্য বানিয়ে নিতে হবে ওই শব্দটি দিয়ে। তাতে শব্দার্থ ভুলে গেলেও, বাক্যটি কিন্তু ঠিকই মনে থাকবে! লাইভ ভিডিওটি থেকে দেখে নাও উদাহরণগুলোও!

৩. একই অর্থের অনেকগুলো শব্দ থাকতে পারে, আর সেগুলো প্রায়ই নানা সমস্যার সৃষ্টি করে! এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় খুব সহজ। একটা শব্দ পড়ার সময় চটপট তার Synonym গুলোও পড়ে ফেলো! তাতে একটির জায়গায় অনেকগুলো শব্দ একেবারে শেখা হয়ে গেল!

৪. আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যে আমরা শব্দগুলো মুখস্থ করি এবং কিছুদিন পরই আবার ভুলে যাই। এর সমাধান হচ্ছে Read Memorize-Repeat. অর্থাৎ পড়ে মুখস্থ করে আবারো প্রাকটিস করতে হবে। এ নিয়ে আরো জানতে দেখে ফেলো লাইভ ভিডিওটা!

৫. তোমার যে মোবাইল ফোনটি ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রামে চষে বেড়ায়, সেই মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করেই কিন্তু উন্নত করতে পার ভোকাবুলারি! আমাদের প্রচুর সময় নষ্ট হয় ট্রাফিক জ্যামে। আমরা এই জ্যামে বসে কিন্তু ফোনে ভোকাবুলারি অ্যাপ ব্যবহার করে শিখতে পারি ভোকাবুলারি! এছাড়াও আমাদের 10 Minute School এর Surprise সব সেকশন থেকেও তুমি শিখে নিতে পারো ভোকাবুলারি!

একটুখানি চেষ্টা আর পরিশ্রম করলেই কিন্তু আয়ত্তে আনা ভোকাবুলারির সাতসতেরো! দরকার শুধু সেই মনোযোগ আর নতুন কিছু শেখার আগ্রহ!

.

অপরিচিতের সাথে কিভাবে ফোনে কথা বলবো?

Cold calling বলে ইংরেজিতে একটা কথা আছে। না, এর সাথে ঠান্ডা কথার কোনো সম্পর্ক নেই, ঠান্ডা কথা আবার কী? Cold calling শব্দটার মানে হলো অপরিচিত কারো সাথে প্রথমবারের মতো কথা বলা। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, এগুলো নিয়ে লেখার কী দরকার?

সত্যিটা হলো, এসব নিয়েই জানা দরকার সবার। আমরা ইন্টারনেটে শত শত বস্নগ পড়ি, ইউটিউবে ট্রেন্ডি ভিডিও দেখি। সেখানে শেখানো হয় কীভাবে সুন্দর করে কথা বলে মেয়েদের ইম্প্রেস করতে হয়, কোন স্টাইল ফলো করতে হয় আরো কত কী। অথচ কোনো অফিশিয়াল আলোচনার ক্ষেত্রে সামনাসামনি দেখা সাক্ষাতের থেকে ফোনেই বেশি কথাবার্তা হয়! তাই অপরিচিতের সাথে কীভাবে কথা বলবে, সেটা শিখে নেয়া জরুরী।

প্রথমবার কাউকে ফোন দেয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। এগুলো মেনে চললে ফোনের ওপাশের মানুষটি ভাববে তুমি একশ ভাগ প্রফেশনাল- আর এতে সুসম্পর্কও গড়ে উঠবে!

১. নিজের পরিচয় জানাও আগে

ফোন করলে, ওপাশ থেকে পরিচয় জানতে চাইলো, তুমি বলে দিলে তোমার প্রিয় ডাকনামটি, পাড়াতো ছোটবোনটি তোমাকে যে নামে ডাকে–তাহলে কি ব্যপারটা প্রফেশনাল হলো? একদমই না। তুমি যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ কর, অথবা সে মানুষটি যে প্রতিষ্ঠানের নাম শুনে তোমার সাথে কথা বলতে রাজি হয়েছে, তুমি সে নামটাই বলল। ভাইয়া, আমি টেন মিনিট স্কুল থেকে আয়মান বলছি। এখন শুনতে ভালো লাগছে না?

আরেকটা বিষয়। তুমি যাকে কল করছ, এটা জেনেই কল করছ যে এই মানুষটি আসলে কে। তাই ফোন দিয়েই ভাই, আপনি কে বলছেন? বলে সময় নষ্ট করবে না। এতে যাকে কল করছ তিনি নিজেও মহা দিল উঠতে পারেন। কুশলাদি বিনিময় করলে ভালো হয় এ জায়গাটায়।

২. নিশ্চিত হয়ে নাও ফোনের ওপাশের মানুষটি ব্যস্ত কি না

তুমি ফোন দিয়েছ দরকারি কাজে। উনি ব্যস্ত থাকলেও হয়তো ফোন খাতিরে দুএকটা কথা বলে দিতে পারেন, কিন্তু তোমার দায়িত্বই বলা চলে যে উনি ব্যস্ত থাকলে পরে একসময় ফোন দেয়া।

এভাবে বলতে পার, আমি জানি আপনি অনেক ব্যস্ত একজন মানুষ, আপনার কি কথা বলার দুই মিনিট সময় হবে? এতে দুটো বিষয় হচ্ছে। উনি ব্যস্ত না থাকলেও তোমার কথায় অনেক খুশি হচ্ছেন, তোমার কথায় তাঁর নিজেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে তোমার কাছে। এই সুন্দর ব্যবহারটুকু অনেক কাজে দেবে ভবিষ্যতে।

৩. কথা শেষ মানে পরিচয় শেষ না

কাজের কথা বলা শেষ। এখন কী তুমি ফোন রেখে দেবে? মোটেও না। তোমার কাজের একটা Call to action রেডি রাখতে হবে না? জেনে নাও এরপরে তার সাথে কবে কথা বলা যাবে। কোথায় দেখা করা যাবে। ইমেইল আইডি নিয়ে রাখবে, হাল আমলের ফেসবুক আইডি জানা থাকলে তো আরো ভালো!

৪. বারবার কল নয়

ধরো তুমি একজন মানুষকে ফোন দিলে। সে ফোনটা রিসিভ করল না। তুমি কি তাকে বারবার ফোন দিয়ে জ্বালাতে থাকবে? একটু পর কল করতে থাকবে? মোটেও না। এটা খুব খারাপ দেখায়, মানুষটিও বারবার কলে বিরক্ত হয়।

এক্ষেত্রে তুমি যেটা করতে পারো, সেটা হচ্ছে উনার ফোনে একটা টেক্সট করে রাখতে পার। ফেসবুক-মেসেঞ্জারের যুগে মেসেজিং করাই হয় না আর তেমন। কিন্তু দেখ, বারবার কল না দিয়ে ফোনে একটা ছোট্ট টেক্সট করে রাখাটা কিন্তু অনেক কাজের হবে।

ধরো তুমি টেক্সট দিলে, যে তুমি একটা স্কুলের ডিবেট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, ক্লাবের ইভেন্ট নিয়ে তুমি কথা বলতে চাও। উনি কখন ফ্রি জানলে তুমি কল দেবে। এখানে দুটো বিষয় হয়। এক হলো যে, মানুষটি অর্ধেক জেনেই গেল কেন তুমি কথা বলতে চাও, এতে তোমার সময় বাঁচল। আরেকটা বিষয় হলো যে উনি তোমার জন্য সময় বের করে রাখতে পারবেন টেক্সট দেখে।

বাংলায় একটা কথা আছে, জানো তো? পাত্তা না দিলে পাত্তা আদায় করে নিতে হয়। সেজন্য যদি কখনো দেখ যে কেউ তোমার কল রিসিভ করছে। না বা ঠিকঠাক কথা হচ্ছে না, তাহলে বুঝবে শুরুর দিকের নিয়মগুলোতে কোনো না কোনো ভুল হয়েছে! শুধরে নিয়ে আবার কথা শুরু কর, দেখবে সুন্দর একটা প্রফেশনাল সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে!

.

সালাম দেয়া এবং ভালো গুণের প্রশংসা করা

কয়েকদিন আগের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হচ্ছি, হঠাৎ দেখি বয়োজ্যেষ্ঠ একজন মানুষ, গালভরা দাড়ি, যিনি আমার পাশেই নামাজ পড়েছেন- এসে সুন্দর করে একটা সালাম দিলেন। আমাকে। একটু চমকে গেলাম, ভাবলাম যে সাধারণত ছোটরা বড়দের সালাম দেয়, আর এই সিনিয়র মানুষটি আমাকে সালাম দিলেন! উনি তো কোনো টিচারও হতে পারেন!

আমার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে মানুষটা মুচকি হাসলেন। বললেন, অবাক হচ্ছ, বাবা? এ আর এমন কী, প্রায় সবাই অবাক হয়ে তাকায়! আমি আমতা আমতা করে বললাম, আসলে এমন তো কখন হয়নি আমার সাথে, তাই একটু চমকে গেছি। ভদ্রলোক বললেন, যে এই সালাম দেয়ার কাজটা শুরুর পর অনেকেই অবাক হতো। উনি সিনিয়র মানুষ, তাই অবাক হওয়ার মাত্রাটা একটু বেশিই হতো। মজার ব্যাপার হলো, এই বিষয়টা বুঝতে পেরে তিনি বেশি করে সালাম দেয়া শুরু করেন। নিজের থেকে ছোটদের সালাম দিতেন, নিজের স্টুডেন্ট দেখলেও সালাম দিতেন।

এ পর্যায়ে বুঝলাম যে ভদ্রলোক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আরো ভালো লাগল, একজন শিক্ষক এমন একটা দারুণ কাজ করে যাচ্ছেন! কথায় কথায় তিনি জানালেন, কাউকে যদি অবাক করতে চাও, তাহলে এই কাজটা করে দেখতে পার। মানুষটা অবাক হবে, পাশাপাশি তার মনটাও ভালো হয়ে যাবে!

আমার কাছে একটু অবাক লাগছিল, যে একটা সালাম কী করে মন ভালো করে দিতে পারে? আমি নিজেই তখন সবাইকে সালাম দেয়া শুরু করলাম। বাসার দারোয়ানকে দেখলে সালাম দিতাম, ড্রাইভারের সাথে দেখা হলে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করতাম, দোকানদার মামার কাছ থেকেও শুনতাম কেমন আছেন তিনি। এখানে যেটা হতো, এই সালাম বা কুশলাদির কোনোটাই আশা করতেন না তারা। এজন্য যখন তাদেরকে এগুলো দেয়া হতো, অন্যরকম একটা আনন্দ পেতেন কর্মজীবী মানুষগুলো। আসলেই মনটা ভালো হতো তাদের।

বিদেশে যখন গিয়েছিলাম, তখন দেখেছি রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসার সময়ে, মানুষেরা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হাসি দেয় একটা। মুচকি হাসি, কিন্তু অপরিচিতজনের সেই হাসিতে মনটা একটু হলেও ভালো হয়ে যায়! বাংলাদেশে আমি চেষ্টা করেছিলাম এরকম, মানুষজন এমন ভু কুঁচকে তাকিয়েছে, যে বুঝেছি এদেশে আপাতত হাসি থেরাপি কাজে লাগবে না। তাই সালামই সই!

মানুষের দিনটাকেই সুন্দর করে দেয়ার আরো কিছু টিপস দেয়া যেতে পারে এখানে।

প্রশংসা করা :

আরে! তোর কালকের স্ট্যাটাসটা তো অসাধারণ ছিল!

দোস্ত, ছবি যেইটা তুলেছিলি গতকাল, অন্য লেভেলের হয়েছে, সত্যি!

তোর এত সুন্দর গানের গলা, মাশাআল্লাহ!

এই ধরনের প্রশংসা করতে কখনো দ্বিধা করবে না। কারো প্রতিভা থাকলে তার প্রশংসা করলে সে আরো বেশি উদ্দীপনা পাবে এগিয়ে যাবার, তার পরের কাজগুলো আরো ভালো হবে!

গুণের কদর করা :

তুই না থাকলে আজকে ক্রিকেট ম্যাচটা হেওে যেতে হতো!

রাত তিনটায় তুই যদি রক্ত দিতে না আসতি, কী যে হতো!

মানুষের অনেক মানবীয় গুণাবলী আছে। সেগুলোর যথাযত মূল্যায়ণ করলে তারা অনেক বেশি সুখী হবে। তোমার কোনো বন্ধু যদি অনেক কষ্টে কোনো কাজ কওে, সেই গুণের কদও করবে, দেখবে তারা আরো বেশি সহায়তা করবে পরে!

অনুপ্রেরণা দেয়া :

দোস্ত, কোনো চিন্তা করিস না। আমরা আছি না? সব ঠিক হয়ে যাবে।

যেকোন সমস্যায় খালি আমাকে একটা কল দিবি। সব মুশকিল আসান করে দেব!

মানুষের অনেক রকম সমস্যা চলতে পারে, ব্যাড প্যাঁচ যেতে পারে, সময়টায় বন্ধু বা পরিচিত একজন হিসেবে তোমার প্রথম কাজ হবে তা সহায়তা করা। তাদের সমস্যায় বন্ধু হিসেবে এগিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন কাল করে দিয়ে তাদের সময়টা যাতে আরেকটু ভালো হয় সে খেয়াল রাখা। তাদের জন্যে অনুপ্রেরণার কারণ হও, তারা খুশি হবেই!

সমাদর করা :

মা, আজকের কাচ্চিটা যা হয়েছে না!

আব্বু, তোমার এই গিটটা ফাটাফাটি হয়েছে!

মানুষ মানুষের জন্যে অনেক কিছুই করে। কিন্তু সবকিছুকে ঠিকভাবে সমাদর করি না আমরা অনেকেই। তাতে মানুষটি মনে একটু হলেও কষ্ট পায়, মনে করে তার এই পরিশ্রম বুঝি বৃথা গেল! তাই সব কাজকে সমাদর করবে। ধন্যবাদ দেবে, এপ্রিশিয়েট করবে। তাহলে মানুষগুলো খুশি থাকবে।

এই কাজগুলো কিন্তু রাতারাতি একদিনে হয় না। এগুলোর জন্য গড়ে তুলতে হয় সু-অভ্যাস। তাই, সুখে থাক, সুখে রাখ- এ লক্ষ্যে অভ্যাসগুলো রপ্ত করে ফেল, দেখবে নিজেরই ভালো লাগবে!

.

“তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না” থেকে আত্মরক্ষার কৌশল

গতানুগতিক পড়ালেখার বাইরে নতুন কিছু করতে গেলেই অনেকগুলো বাধার মুখে পড়তে হয়। নিজের বাসায় পরিবারের বাধা তো আছেই, বাইরের অনেকগুলো মানুষের কথা শুনতে হয়। পদে পদে এসব বাধা জয় করে নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়াটা বেশ কঠিন মনে হয় তখন। দেখে আসা যাক কেমন সে বাধা!

১. পরিবারের আপত্তি

বাংলাদেশের বেশিরভাগ পরিবারের সন্তানদের কাছে আশা থাকে যে ছেলে বড় হয়ে পড়ালেখা করে ভালো চাকরি করবে, অর্থ উপার্জন করে পরিবারের দেখভাল করবে। সন্তান বড় হয়ে যখনই অন্যরকম কিছু করতে যায়, তখনই শুরু হয় বিভিন্ন রকম বাধা! ধরো তুমি নতুন কিছু করলে। নতুন একটা উদ্যোগ শুরু করলে। পরিবার থেকে বলবে,

এসব করে কোনো লাভ আছে? ফিউচার কী এসবের?

তুই যে এগুলো করিস, মানুষ শুনলে কী বলবে?

তোর মামা-চাচার ছেলেমেয়েরা কত বড় বড় জায়গায় আছে, তোর কী হবে?

এত শত প্রশ্নের পর যখন তোমার উদ্যোগটা একটু হলেও দাঁড়িয়ে যাবে, তখন শুরু হবে আরেক সমস্যা। এবার বাসা থেকে শুরু করবে তোমার পড়ালেখা নিয়ে কথা বলা।

পাশের বাড়ির আপার দুই ছেলেই দেখ মেডিকেলে। আর তুই? কী সব করে বেড়াস!

এই যে এসব করিস, নিজের সিজিপিএর দিকে একবার তাকিয়েছিস?

এমনকি তুমি তোমার কাজ নিয়ে জনপ্রিয় হলেও তাঁদের হতাশা কাটবে না। তারা বারংবার প্রশ্ন তুলেই যাবেন!

২. পাশের বাসার আন্টি

শুধু প্রতিবেশীরাই নয়, এই শ্রেণিতে পড়ে তোমার দুরসম্প আত্মীয়রাও। এদের খোঁজ পাওয়া যায় না কখনোই, শুধু তোমার পরী রেজাল্টের সময় এদেরকে দেখা যায়। আর দেখা যায় তোমার কোনো নতুন উদ্যোগের শুরুতেই বাগড়া বাধাতে।

ভাবী, আপনার ছেলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে এসব কী করছে? মানা করেন বখে যাবে!

আপা, সময় থাকতে ছেলেকে পড়তে বসান। রেজাল্ট কেমন হচ্ছে ওর?

আমার এক পরিচিত আপার ছেলেও এইসব কাজ করে বেড়াতো। এখন ঘুরে বেড়ায়, বেকার। বুঝলেন তো ভাবী?

এত শত কথার ভিড়ে পরিবারের চাপটা খুব করে ঘাড়ের উপরে আসে, সে আর নামতেই চায় না!

লোকে কী ভাবলো!

আরেকটা হচ্ছে তোমার নিজের ভয়। পরিবারের এত শত কথা শোনার পর তোমার নিজেরও মনে হয় এটাই মাথায় আসে, যে তুমি যে কাজটা করছ সেটা ঠিক হচ্ছে তো? যদি এই কাজে ব্যর্থ হও, তাহলে বাসায় কী বলবে? এই ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে কাজ করাটা ঠিক উচিত হবে না হয়তো! সাথে বাসায় বলা কথাগুলো মাথায় বাজতে থাকে–

এইসব করতে থাকলে বিয়ে দিয়ে দিব একেবারে। বউ-সংসার চালাতে গেলে সব পাগলামি যাবে!

চাকরি-বাকরি তো হবে না, এইসব করে আর কতদিন চলবা?

দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষলাম এতদিন। এই ছেলে তো আমার মানসম্মান নষ্ট করবে পুরা!

এসব কথার পরে তোমার নিজের ভেতরের উদ্যমি মনটা একটু একটু করে নিস্তেজ হয়ে পড়বে, শোকাহত হবে।

৩. সহজ সমাধান :

একটা বিষয় সব সময় মাথায় রাখবে। তুমি একটা সমাজে বাস কর, তাই সমাজকে বাদ দিয়ে তুমি চলতে পার না। আর সমাজের সাথে চলতে থাকলে সমাজের অদ্ভুত মানুষগুলোর উদ্ভট চাপ তোমার উদ্যোগকে বাধা দিতেই থাকবে। তোমার হাতে এখন দুটো অপশন খোলা :

ক. সমাজের চাপে একদম সংকুচিত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া।

খ. সমাজের চাপকে থোড়াই কেয়ার করে নিজের কাজ করে যাওয়া।

এখন তুমিই বলো, নিজের স্বপ্নকে পাথরচাপা দিয়ে কি তুমি প্রথম অপশনটি বেছে নিতে পারবে? তাহলে তোমার সাথে ইন্টারনেটের ওই বিখ্যাত মিমটির পার্থক্য কী? সেখানে বলা হয়, বেশিরভাগ মানুষের জীবন তিন ধাপে শেষ হয়, জন্মানো- লোকে কী বলে এই ভয়ে কিছু না করা- মৃত্যু!

নতুন কোনো কিছু শুরু করলে সমালোচনা আসবেই। আসবে হতাশা, আসবে ব্যর্থতা। তাই বলে তুমি সব ছেড়েছুঁড়ে চলে যাবে? হাল ছেড়ে দেবে? নাকি দ্বিতীয় অপশনের মতো সব হতাশা আর সমালোচনা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে কাজে লেগে পড়বে নতুন করে?

পাশের বাসার আন্টি কেন তোমার ক্যারিয়ারের দিকপ্রান্তে থাকবে? তুমিই গড়বে তোমার ভাগ্য। আর এজন্য তোমাকেই নিতে হবে জীবনের সিদ্ধান্ত গুলো। নিজেই ভাবো জীবন নিয়ে কী করবে। যেখানে আগ্রহ, সেখানে কাজ কর। যা নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছা করে, সেটা নিয়েই এগোও। ইচ্ছাশক্তি থাকলে তোমাকে আটকাবে কে?

.

একটি কমন অভ্যাস

অভ্যাস না বলে এটিকে আসলে বদঅভ্যাস বলাই ভালো। এটি হলো, সবরকম ব্যর্থতার পেছনে আমরা ভাগ্যকে দায়ী করতে থাকি। পরীক্ষায় ফেল করলে, বলে বসলাম ভাগ্যে ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ হলে না, অজুহাত তৈরি ভাগ্য সহায় হলো না। চাকরির ইন্টারভিউতে বাদ হয়ে গেলে, তখনও সেই ভাগ্যকেই আসামি করতে হচ্ছে।

সত্যি বলতে কী, সবকিছুতে এভাবে ভাগ্যের দোষ দেবার কোনো কারণই নেই। Luck, Fate এগুলো আমাদের জীবনের অংশ বটে, কিন্তু তুমি নিজেই পারো তোমার ভাগ্য বদলাতে। তুমি চাইলেই সাফল্য আসবে, তখন আর ভাগ্যের নাম নিতেও হবে না। নিজের সাফল্য তাই তোমার নিজের কাছেই।

নিজের ভাগ্য নিজেই গড়তে চাইলে কিছু ধাপ ফলো করে দেখতে পার। আমার নিজের জীবনে এই ধাপগুলো বেশ কাজে লেগেছে, আশা করছি। তোমারও অনেক উপকারে আসবে!

ধাপ-১

শুরুটা হোক নিজের একটা লক্ষ্য ঠিক করে ফেলা দিয়ে। হ্যাঁ, সব মানুষ। সমান নয়, সবার কর্মক্ষমতা বা মেধা সমান নয়। তাই নিজের সামর্থ অনুযায়ী ঠিক করে ফেলো তুমি জীবন নিয়ে কী করতে চাও, তাহলেই সফলতার পথে এগিয়ে যেতে পারবে। চেষ্টা করবে নিজের লক্ষ্যটি নির্দিষ্ট করে সে অনুযায়ী কাজ করে যেতে।

ধাপ-২

এবার চেষ্টা কর লক্ষ্য অর্জনের পথে যে ধাপগুলো পার করবে, সেগুলো একটি একটি করে কাগজে টুকে রাখার। তাহলে পেছনে ফিরে তাকালে তোমার জীবনের ভুলগুলো চোখে পড়বে, তোমার অসঙ্গতিগুলোকে ঠিক করে আগের থেকে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে এগিয়ে যেতে পারবে।

ধাপ-৩

অঙ্গীকারবদ্ধ থাকো, যে ধরনের কাজই কর না কেন। তুমি যদি তোমার কাজের প্রতি আগ্রহী হও, সেটি নিয়ে সফল হতে চাও, তবে সবসময় অঙ্গীকারবদ্ধ থেকে এগিয়ে যেতে হবে। নিজের উপর বিশ্বাস রেখে কাজ করে যেতে হবে।

ধাপ-8

ভাগ্যকে দোষারোপ করবে না, একেবারেই না। ভাগ্য তোমার সাথে থাকবে তখনই, যখন তুমি নিজ আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে কাজ করবে। কথায় বলে না, Fortune Favours the Brave? তাই বীরত্বের সাথে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেলে ভাগ্য এভাবেই তোমার সহায় হবে।

ধাপ-৫

নিজের ভুলকে স্বীকার করাটা খুব বেশি দরকার। তুমি মানুষ, কোনো মেশিন নও যে নিখুঁতভাবে সব কাজ করবে। তোমার ভুল হতেই পারে, আর তাই সেগুলোকে অস্বীকার করবে না। নিজের ভুল স্বীকার করে সেগুলো ভবিষ্যতে আর যাতে না হয়, সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

ধাপ-৬

সময়ের সদ্বব্যবহার করতেই হবে। একজন সফল মানুষের জীবনে সময়ানুবর্তিতা খুবই দরকারি একটা কাজ। ধরো তুমি সময়ের কাজ সময়ে করলে না, ফেলে রাখলে। তাহলে পরের কাজগুলোর সাথে নতুন এই কাজটাও এসে যোগ হবে, আর তাতে পুরনো এই কাজটা আর কখনোই করার সময় হবে না। এজন্য সময়কে ঠিকভাবে কাজে লাগাও!

ধাপ-৭

আত্মনির্ভরশীল হও। পরনির্ভরশীলতা সাফল্যের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে সেক্ষেত্রে তুমি সাফল্য পেলেও সেটি তোমার একার হবে না, আর তাকে আদতে সাফল্য বলা যায় কি না তাতে তুমি নিজেও সন্দিহান হয়ে পড়বে। তাই নিজের উপর নির্ভরশীল হবার চেষ্টা কর।

ধাপ-৮

জীবনে চলার পথে যেকোনো সময়, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেবার সময় পরামর্শ নিতে লজ্জার বালাই করবে না। পরামর্শ পেতে পার তোমায় চরম শত্রুর কাছ থেকেও, পরামর্শ পেতে পার একেবারে ক্ষুদ্র কোনো ব্যক্তির কাছ থেকেও, তাই কখনো পরামর্শকে অগ্রাহ্য করবে না। মনে রাখবে, কারো পরামর্শই ফেলনা নয়, তাই সফল জীবন গড়তে এগুলোর অনে দরকার রয়েছে।

সফলতা পাওয়া খুব সহজ কোনো কাজ নয়। তাই বলে ভাগ্যের হাতে সবকিছু সঁপে দেয়াটা হবে চূড়ান্ত বোকামির পরিচয়! নিজের মতো করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে কাজ করে গেলে ভাগ্যও তোমায় সঙ্গ দেবে, দিতেই হবে!

.

পরিশ্রমকে হ্যাঁ বলো

আমাদের জীবনে ব্যর্থতা আসার অন্যতম একটা কারণ কি জানো?

আমরা আসলে পরিশ্রম করতে চাই না। আমাদের সবসময় লক্ষ্য থাকে। কীভাবে সহজে, শর্টকাটের সাহায্য নিয়ে হলেও কোনো কাজ শেষ করে ফেলতে পারবো। পরিশ্রম করতে আমাদের ইচ্ছেটা থাকে না, খুঁজতে থাকি এমন কোনো উপায় যাতে একফোঁটা ঘাম না ফেলেই কাজ করে নিতে পারব। সত্যি বলতে কি, এমন মানসিকতা প্রায়শই ব্যর্থতার জন্ম দেয়। পরিশ্রম দেখলে এই যে আমরা উল্টো পথে দৌড় দেই, এখান থেকে ফিরে আসতে পারলে কিন্তু সাফল্যের দেখাও মিলবে। তাই পরিশ্রমের রাস্তায় যাওয়ার চিন্তা করতে হবে সবাইকে। প্রশ্ন আসতেই পারে, পরিশ্রমী হতে হলে কী করতে হবে? এ প্রশ্নেরও উত্তর আছে। কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে পরিশ্রমী না হোক সেটি হবার পথে এগিয়ে যাওয়া যাবে।

১. নিজের কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নাও

পরিশ্রম করতে আমাদের আলসেমির একটা কারণ হলো বড় বড় কাজ করতে গেলে অনেক বেশি ক্লান্তি চলে আসে। কাজের বহর দেখলেই হতাশ হয়ে যেতে হয় কাজ করার ইচ্ছেই করে না। পরিশ্রম তো অনেক দূরের কথা। তাই যে কাজই হোক, সেগুলোকে যদি আমরা ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে শেষ করি, তাহলে একদিকে যেমন দ্রুতগতিতে কাজ এগোবে, অন্যদিকে পরিশ্রম করতেও ক্লান্তি লাগবে না।

২. নিজের লক্ষ্য অর্জনে ফোকাস করো

অন্যের লক্ষ্য কেমন, তারা লক্ষ্য অর্জনে কতদূর গেছে সেদিকে তাকিয়ে হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। বড়জোর অন্যের লক্ষ্যপূরণ থেকে উদ্দীপনা নিতে পার তুমি যে, ও পারলে আমি কেন নয়? কিন্তু তুমি তোমার লক্ষ্যে অবিচল থাকবে। লক্ষ্য নিশ্চিত না থাকলে পরিশ্রমে আগ্রহ মেলে না। আর তাই নিজের লক্ষ্যটি ঠিকঠাক রাখো, এগিয়ে চলো পরিশ্রম করে।

৩. ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখো

তোমার জীবনে যেকোনো কাজে হতাশা আসতেই পারে। ভেঙে পড়াটা অস্বাভাবিক না তাই। কিন্তু সেজন্যে পরিশ্রম করা ছেড়ে দেবার কিন্তু কোন কারণ নেই! ইতিবাচক মনোভাব রাখার চেষ্টা করবে সবসময়। মনে রাখতে হাজারো ব্যর্থতার পর যে সাফল্য আসে, সেটির মূল্য সবচেয়ে বেশি।

৪. নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখো

প্রায়ই দেখা যায় যে খুব পরিশ্রমী একজন মানুষের জীবনে বড় রকমের হতাশা যে, নেমে এসেছে। এমন সে হতাশা, মানুষটিকে ভেঙে দিয়েছে ভেতর থেকে। কেন জানো? কারণ তার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। যত বড় আঘাতই আসুক না কেন, নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকলে সেগুলোকে মোকাবেলা করা যাবে ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম দিয়ে।

৫. পরিশ্রমী মানুষের সাথে মেশো

আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি। তা হলো, তুমি যে ধরনের মানুষদের সাথে বেশি চলাফেরা কর, যাদের সাথে বেশি মেশা হয় তোমার, সেই মানুষগুলোর আচার আচরণ, চরিত্রগুলো খানিকটা হলেও তোমার মধ্যে বিরাজ করে। এজন্যে দেখা যায় খুব জ্ঞানী কোনো মানুষের শিষ্যদের। অনেকেই জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়।

ইংরেজি ভাষা চর্চা করতে আমাদের নতুন গ্রুপ- 10 Minute School English Language Club-এ যোগদান করতে পারো! এখানেও ব্যাপারটা একই রকম। চেষ্টা কর পরিশ্রমী মানুষদের সাথে পরিচিত হবার তাদের সান্নিধ্য পাবার। এতে করে তোমার নিজের মধ্যেও এক ধরনের পরিশ্রমী মনোভাব চলে আসবে। তুমিও হতে চাইবে তাদের মতো পরিশ্রমী। এভাবে পরিশ্রমের ভূতটাও তোমার মাথায় চেপে বসবে।

বর্তমান যুগ হলো মহা ব্যস্ততার যুগ আবেগের দান নেই এখানে। তাই পরিশ্রমীরাই সফল হবে এই যুগে। তাই সফলতা পেতে হলে অবশ্যই তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, অনুশীলন করে যেতে হবে। তবেই পাবে সাফল্যের দেখা!

.

প্রতিযোগিতায় যে গুণগুলো থাকা প্রয়োজন

বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনটা অন্য সব সময়ের থেকে আলাদা। নতুন নতুন বন্ধু বান্ধবীর দেখা, আড্ডা, নিজের ক্যারিয়ার গড়ার ভাবনা থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছুর শুরুটা হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার শুরুরটাও এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই হয়। এগুলো আবার স্কুল কলেজের মতো নয়, এসবের কোনো কোনোটায় সাফল্য বদলে দিতে পারে ক্যারিয়ারের গতিপথ!

বিভিন্ন বিজনেস কম্পিটিশন রয়েছে, যেগুলোয় সাফল্য পেলে নামজাদা সব প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করা যায়, অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ মেলে। সাথে থাকে বড় অঙ্কের প্রাইজমানি, আর হয় অভিজ্ঞতা। এছাড়াও MUN বা Debate এর মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে একদিকে যেমন নিজের Public Speaking Skill বাড়তে থাকে আবার অন্যদিকে নিজের একটা পরিচিতিও হয়, যা ক্যারিয়ারে অনেক কাজে লাগে।

যে কোনো প্রতিযোগিতাই হোক না কেন, এগুলোর জন্যে খুব দরকারি কিছু জ্ঞান মাথায় রাখতে হয়। যেকোন প্রতিযোগিতা, যেখানে কথা বলা বা Public Speaking এর বিষয়টি রয়েছে সেখানেই এই বেসিক বিষয়গুলো জানা খুব বেশি দরকারি হয়ে পড়েঃ

১. সবসময় গল্প দিয়ে শুরু কর

ছোটবেলায় তোমরা সবাই একটা বিষয় নিশ্চয়ই খেয়াল করে থাকবে। ধরো স্কুলের টিচার খুব আগ্রহ করে অনেক বড় কোনো টপিক পড়াচ্ছেন। বিষয় নিয়ে তার আগ্রহের শেষ নেই, কিন্তু পড়াচ্ছেন একঘেয়ে ভাবে, তার পড়ানোতে তোমাদের কোনো আগ্রহ আসছে না। কিছুদিন পর তুমি খেয়াল করলে যে ওই টপিকের কিছুই আর তোমার মনে নেই!

কারণটা কি জানো?

কারণটা হলো তুমি তার পড়ানোয় মোটেও আগ্রহ পাওনি, তাই সে টপিকটা সেই ক্লাসের পরেই ভুলে গিয়েছে। মজার ব্যাপারটা হলো, এই একই টপিক যদি তোমার টিচার একটু মজা করে, একটু গল্প বলে পড়াতেন, তাহলে গল্পের সাথে সাথে কিন্তু তোমার টপিকটাও মনে থাকবে, কোনোক্রমে ভুলে গেলেও গল্পটা তোমার মনে থাকবেই!

তুমি যখন কোনো প্রতিযোগিতায় প্রেজেন্টেশন দিতে যাও, অথবা কথা বলতে শুরু কর, এখানে মনে করবে এই টিপসটির কথা। মনে রাখবে। তোমার সেই টিচারের মতো করে উপস্থাপন করতে দিতে গেলে সেখানে উপস্থিত বিচারকের অবস্থাও হবে সেই তোমার মতো, তারা দ্রুতই আগ্রহ হারাবেন। কিন্তু এর জায়গায় যদি একটু কায়দা করে তুমি গল্প দিয়ে শুরু কর, তাহলে বিচারকদের আগ্রহ পাবে তুমি, আর তাতেই প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সম্ভাবনা অনেকগুণে বেড়ে যাবে!

২. ভুল থেকেই শিক্ষা নাও

তুমি প্রথম কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছ। প্রথমবারেই একেবারে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসবে, সে সম্ভাবনা খুব বেশি নেই। প্রথমবার নয় শুধু, শুরু র দিকে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হওয়াটাই তাই স্বাভাবিক। অনেককেই দেখেছি এই প্রথম দিককার ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিতে।

তোমরা মোটেও সেটি করবে না। ইংরেজিতে একটি কথা আছে–

Every master was once a terrible disaster.

অর্থাৎ যে কেউ তার কাজে পারদর্শী হয়ে থাকলেও, শুরু র দিকে তাদের প্রায় সবাই ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছেন। বিখ্যাত লেখিকা জে কে রাউলিং এর বিশ্বজোড়া জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা হ্যারি পটার সিরিজ প্রথমে কোনো প্রকাশকই নিতে চাননি। তিনি ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু চেষ্টা থামাননি। একটা সময় যখন হ্যারি পটার প্রকাশিত হলো, বাকিটা ইতিহাস। এখন তিনি বিশ্বের সফলতম লেখকদের একজন।

সফল ব্যক্তিরা সারাজীবনই সফল ছিলেন না। ব্যর্থতার নাগপাশে বদ্ধ থাকতে হয়েছে তাদের অনেককেই। কিন্তু তারা বিজয়ী, কারণ ব্যর্থতাকে জয় করে সাফল্যের পথ চিনে নিয়েছেন তারা। তুমিও তাই প্রথম দিককার ভুলগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে ভুল থেকে শিক্ষা নাও। সাফল্য আসবেই!

৩. আত্মবিশ্বাসী হও

তোমার মেধার কমতি নেই। তোমার মাথায় আইডিয়া গিজগিজ করে। তুমি খুব করে চাও কোনো একটা প্রতিযোগিতায় জিততে। কিন্তু কোনো একটা কারণে হচ্ছে না। কথা বলার ওই মঞ্চে যাও তুমি অনেক আশা আর উত্তেজনা নিয়ে, কিন্তু কথা বলতে গেলেই সমস্যা।

এমন যদি হয় তোমার অবস্থা, তাহলে তুমি আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছ। যেকোনো প্রতিযোগিতায় জিততে হলে এই আত্মবিশ্বাসের খুব বেশি প্রয়োজন। তোমার জ্ঞান বুদ্ধি সবই থাকতে পারে, কিন্তু আত্মবিশ্বাস না থাকলে এসব প্রতিযোগিতায় সাফল্যের দেখা খুব একটা পাবে না তুমি।

ধরো, তুমি একটা প্রতিযোগিতায় গেলে। একটা বিজনেস কম্পিটিশন। সেখানে তুমি অনেক তথ্য, অনেক কৌশল নিয়ে গেলে। কিন্তু আসল কথা বলার সময়, উপস্থাপন করার সময় আর ভালোভাবে বলতে পারলে না। কথা জড়িয়ে গেল। আটকে গেল তোমার বিজয়ের সম্ভাবনা।

অন্যদিকে, তোমার বন্ধুটির প্রস্তুতি তোমার মতো নয়। কিন্তু সে আত্মবিশ্বাসের শক্তিতে বলিয়ান। তার উপস্থাপনায় হয়তো তোমার মতো তথ্যের ভার নেই, কিন্তু আত্মবিশ্বাস আছে। তোমার বন্ধুটিরই কিন্তু বিজয়ী হবার সম্ভাবনা বেশি হবে!

তাই আত্মবিশ্বাসী হতেই হবে। একবার ভাবো তো, তোমার অমিত প্রতিভা, মেধা আর প্রস্তুতির সাথে যদি যুক্ত হয় আত্মবিশ্বাস- অসাধারণ কিছু করে ফেলতে পারবে তুমি! তাই আজ থেকেই প্রস্তুত হও আত্মবিশ্বাসী হতে, সারা জীবন সেটি তোমার কাজে দেবে!

আশা করা যায় এই তিনটি টিপস মাথায় রাখলে পরের যেকোনো প্রতিযোগিতায় তোমাকে আমরা দেখতে পাব বিজয়ী হিসেবে। বিজয়ীর বেশে ঘরে ফিরে তুমি বলবে, পরিশ্রম আর কৌশলই আমাকে সাফল্য এনে দিয়েছে!

.

আইডিয়াকে কাজে লাগাও, সাফল্যের পথে পা বাড়াও

আমাকে প্রায়ই অনেকে এসে জিজ্ঞেস করে, ভাইয়া আমার মাথায় দান একটা আইডিয়া আছে, কী করব এই আইডিয়া দিয়ে? এগুলোকে বাস্তবায়ন করব কীভাবে? আমি তখন চুপচাপ ওদের আইডিয়াটা শুনি। অবাক হয়ে আবিষ্কার করি, ছোট ছোট ছেলেগুলো অসাধারণ সব আইডিয়া নিয়ে ভাবে, এসব আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু হলে পুরো দেশের আদলই পালটে যেত!

সমস্যা হলো, এই আইডিয়াগুলো বেশির ভাগ সময়েই আইডিয়াই থেকে যায়। এগুলোর আর বাস্তবে রুপান্তর করা হয়ে ওঠে না। ব্যস্ততা, অপর্যাপ্ত ফান্ড এবং উদ্যোগের অভাব- সবমিলিয়ে আইডিয়াটা ভুলেই যায় সবাই। আর এই অসাধারণ আইডিয়াগুলো যাতে হারিয়ে না যায়, তার জন্যে একটা সূত্র আছে। সূত্রটা খুব সাধারণ।

Idea X Effort = Result

বিষয়টা একটু বুঝিয়ে বলা যাক। একটা গল্প বলা যাক। একজন মানুষ, ধরা যাক তার নাম সাদমান। সাদমান অস্বাভাবিক মেধাবী একটা ছেলে, সারাদিন তার মাথায় আইডিয়া গিজগিজ করে। খুব সম্প্রতি তাঁর মাথায় দারুণ একটা ক্যাম্পেইনের আইডিয়া এসেছে, যেটা করলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যার একটা দারুণ সমাধান হবে!

তো সে ক্যাম্পেইন করতে গিয়ে পদে পদে সমস্যায় পড়তে থাকল। প্রথমেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বলল এই ক্যাম্পেইন করার মত যথেষ্ট জায়গা নেই শহরে। সে লোকবল পেল না, প্রয়োজনীয় টাকাও যোগাড় করা গেল না। একটা সময় সাদমান মহা হতাশ হয়ে পড়ল, তার দারুণ আইডিয়াটি কি তাহলে জলে গেল?

এই গল্পের দুই রকম শেষ আছে। একটা হলো সাদমানের ব্যর্থতার। এত শত বাধা পেরিয়ে সাদমানের আইডিয়া নিয়ে কাজ করার আগ্রহটা চলে যায় একটা সময়। সে ওসব বাদ দিয়ে অন্য কাজে মনোনিবেশ করে। হারিয়ে যায় আইডিয়া, হারিয়ে যায় সেটি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা।

আরেকটা হলো সাদমানের সাফল্যের। এই ভার্সনে সাদমান হার মানেনি। সে লড়াই করে গেছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাদমান চেষ্টা করে গেছে তার আইডিয়ার বাস্তবায়নের। অবশেষে, একটা সময় তার ক্যাম্পেইন সফল হয়, সে তার আইডিয়া নিয়ে কাজ করে যায়, ঢাকার জলাবদ্ধতা ধীরে ধীরে কমে আসে।

এই গল্পটার সাথে আজকের লেখার সূত্রটার বড় একটা মিল রয়েছে। গল্পে সূত্রটার এপিঠ-ওপিঠ দুটোই দেখা গেছে। একটা মজার ব্যাপার হলো, ছোটবেলায় শেখা সেই সূত্র, যে 0 এর সাথে কোনোকিছুর গুণ করলে ফলাফল শূন্য হয়- এটাই এখানে কাজে লেগেছে।

খেয়াল করে দেখ, গল্পের শেষটার প্রথম ভার্সন, যেখানে সাদমানের আইডিয়াটি হারিয়ে যায় সেখানে সাদমানের Effort এর জায়গাটায় 0 বসেছে। আর ওই 0 এর সাথে আইডিয়ার গুণফল কিন্তু শূন্যই হয়েছে! সে এখানে Effort দেয়নি, শুধুমাত্র আইডিয়া নিয়েই কাজ করে গেছে। ফলাফল হিসেবে শূন্যের বেশি কিছুই আসেনি!

গল্পের শেষটার দ্বিতীয় ভার্সনে আবার দেখা গেছে সূত্রটার সত্যিকার ব্যবহার। এই ভার্সনে সাদমান হাল ছেড়ে দেয়নি। সে তার মতো করে Effort দিয়েই গেছে, আর তার ফলাফল হিসেবে Result ও এসেছে, সাদমান পেয়েছে সাফল্যের দেখা!

সূত্রটাকে এভাবে দেখা যায়, যে তোমার যত ভালো আইডিয়াই থাকুক না কেন, আইডিয়াকে কাজে না লাগালে, আইডিয়ার পেছনে খাটাখাটুনি না করলে কোনোভাবেই তুমি এগোতে পারবে না। তাই সময় থাকতেই আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করে দাও। হাল ছাড়বে না, শত বাধা পেরিয়ে তুমিই পারবে বিজয়ী হতে!

.

মার্শমেলো টেষ্ট ও দুরদর্শীতা

ষাটের দশকে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক খুব মজার এস, পরীক্ষা করেন। তিনি চার বছর বয়সের কয়েকজন শিশুকে একটা কমে মধ্যে রাখেন। শিশুদের সবার সামনে একটা করে মার্শমেলো, যেটা একজাতীয় মিষ্টি খাবার, রাখা হয়। সবাইকে এবার একটা শর্ত দেয়া হয়। শর্তটা হলো, যে পনেরো মিনিট পরে ওই শিক্ষক রুমে আসবেন, এবং কেউ যদি ওই পনেরো মিনিটে তার মার্শমেলোটা না খেয়ে থাকে, তাহলে আরেকটা মার্শমেলো পাবে সে।

লোভনীয় প্রস্তাব, কিন্তু চার বছরের শিশুরা সে প্রস্তাবের কতটুকুই বা বুঝবে? যাহোক, ক্যামেরায় পুরো এক্সপেরিমেন্টটা ধারণ করা হয়। পনেরো মিনিট পরে শিক্ষক রুমে প্রবেশ করেন, এবং দেখেন যে বেশিরভাগ সময়েই গড়ে প্রতি তিনজন শিশুর একজন তার মার্শমেলোটা রেখে দিয়েছে, যাতে সে পরে আরেকটা মার্শমেলো খেতে পারে!

পরীক্ষার পরের ধাপে এই শিশুগুলো একটু বড় হলে, একাডেমিক পড়ালেখা শুরু করলো। স্ট্যানফোর্ডের সেই শিক্ষক শিশুদের বেড়ে ওঠার দিকে নিবিড় লক্ষ্য রাখেন, দেখেন কে কোনদিকে ভালো করছে। শিশুরা বড় হয়, কলেজে ভর্তি হয়। এসময়ে ওই শিক্ষক একটা বিষয় খেয়াল করেন। সেই যে, তিন জনে একজন মার্শমেলো না খেয়ে জমিয়ে রেখেছিল। সেই ছেলেগুলো তিনটি ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে আছে।

১. SAT Score :

SAT হচ্ছে আমাদের দেশের ভর্তি পরীক্ষাগুলোর মতো। বাইরের দেশে। এই স্কোরের উপর ভিত্তি করেই বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ভর্তি নেয়া হয়। দেখা যায় যে, এই এক্সপেরিমেন্টের বাচ্চাগুলোর মধ্যে মার্শমেলো জমিয়ে রাখা বাচ্চারা SAT এ অন্যদের থেকে অনেক ভালো নম্বর পেয়েছে!

২. Low Drop Out Rate :

আরেকটা বিষয় খেয়াল করা যায় ওই শিশুগুলোর মধ্যে। যারা তখনই মার্শমেলোটি খেয়ে নিয়েছিল, তাদের মধ্যে ড্রপ আউট বা কলেজ থেকে বের হয়ে যাবার প্রবণতা বেশি ছিল। অন্যদিকে, যারা জমিয়েছিল, তাদের এই ড্রপ আউটের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য! নেই বললেই চলে।

৩. BMI Rating :

BMI বা Body Mass Index রেটিং থেকে বোঝা যায় একজন মানুষ কতটুকু সুস্থ, সে শারীরিকভাবে কতটুকু ফিট, ফ্যাটের পরিমাণ কেমন আছে মর। এই রেটিংয়ে ভালো থাকাটা সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্যে অনেক বেশি দরকার। আর ওই মার্শমেলো জমানো ছেলেগুলো রেটিংয়ের দিক দিয়ে একেবারে উপরের দিকে ছিল!

এই পরীক্ষার একটা ফল দেখা যায়। সেটা হলো যে, শর্ট টার্ম গ্র্যাটিফিকেশন বা সাময়িক মোহকে পাত্তা না দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী কোনো সিদ্ধান্ত যারা নেয়, জীবনে তাঁদের সফল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই টেস্টের যে ছেলেগুলো মার্শমেলো পনেরো মিনিটের জন্যে জমিয়ে রেখেছে, বড় হয়ে তারাই অন্যদের থেকে এগিয়ে গেছে। এই একটা দক্ষতা আছে বলেই তারা এটা পেরেছে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিন্তু এটাই অহরহ ঘটতে থাকে। সাময়িক মোহের পেছনে ছুটতে থাকি আমরা, কখনো তার দেখা পাই আমরা, কখনো পাই না। কিন্তু এই ছোটাছুটিতে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনাগুলো আর কাজে লাগানো হয় না আমাদের। এক পর্যায়ে সাময়িক মোহের চক্রেই আটকা পড়ে যেতে হয়।

আজ ঘুমাতে যাবে বলে যে পড়ালেখাটা কম করলে, সেটা গিয়ে তোমার পরীক্ষায় বাজে ফল আনতে পারে। কিংবা বন্ধুদের সাথে ডিল করবে ভেবে যে প্রজেক্টের কাজটা বাদ দিলে, সেই কাজটাই তোমার জন্যে এনে দিতে পারে বিশাল সাফল্য?

তাই চেষ্টা কর দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তা করতে। সাময়িক এসব মোহ, আনন্দ বারবার আসবে। এগুলো হারিয়ে যাবে না। কিন্তু এদের পেছনে ছুটলে দীর্ঘ মেয়াদে গিয়ে ভুগতে তোমাকে হবেই! তাই এই সাময়িক মোহ বা Instant Gratification কে ত্যাগ করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করলেই দেখবে সাফল্য আসবে। এখন তো জেনে নিলে, এই প্রক্রিয়াটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত!

.

নিজেকে জানো

আমি একটা সময় নিয়মিত ব্যাচে পড়াতাম। তো সব ব্যাচের প্রথম ক্লাসে আমার কমন প্রশ্ন ছিল, তুমি নিজেকে কতটুকু জানো?

প্রায় সবাই হাত তুলে বলত, তারা নিজেকে পুরোপুরি জানে।

তারপর তাদের বলা হতো, আচ্ছা, তাহলে বলো দেখি, তিনটা শব্দ, যা তোমাকে বর্ণনা করবে?

তখন দেখা যায় বেশিরভাগই একটা শব্দও বলতে পারছে না। যারা দুএকটা বলেছে, তারাও নিজেদের শব্দগুলো নিয়ে নিজেই নিশ্চিত না!

মুচকি হেসে তখন বলতেই হয়, নিজেকে তাহলে আর কতটা চিনলে? ইন্টারভিউ বোর্ডে যদি তোমাদের জিজ্ঞেস করা হয়, নিজেকে নিয়ে কিছু বলতে, তাহলে কি আজকের মত আটকে যাবে? অথবা কোনো চায়ের কাপের আসরে যদি বলা হয়, তোমার পরিচিতি দাও- কী জবাব দেবে?

আমি যদি নিজেকে একই প্রশ্ন করি, উত্তর আসে- Teacher, Dreamer, Friend. তাই আমার নিজেকে নিয়ে আমি অন্তত এই ব্যাপারটায় ভীষণ পরিষ্কার। এখন প্রশ্ন হলো, তোমরা কীভাবে নিজেদের জানতে পারবে? সমাধান সহজ। ছোট্ট কিন্তু দরকারি বেশ কিছু কাজ করলেই আরামে নিজেকে জানতে পারবে তোমরাও। কাজগুলো এবার দেখে আসা যাক

১. নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা রাখো

তোমার ব্যক্তিত্বই মানুষের কাছে তোমার আসল পরিচয়। তুমি ছেঁড়া জিন্স পর বা স্যুট পর, তোমাকে অন্যদের থেকে আলাদা করবে তোমার ব্যক্তিত্ব। তাই নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা রেখো। ব্যক্তি হিসেবে তুমি কেমন, সেটা তোমার থেকে ভালো কেউ জানবে না, তাই নিজের খবর নিজেকেই রাখতে হবে।

২. নিজেকে প্রকাশ কর তিন শব্দে

চেষ্টা কর নিজেকে তিনটি শব্দে প্রকাশ করার। যদি তাও না পার, তাহলে দটি শব্দ। না পারলে একটি। ধীরে ধীরে দেখবে তুমি নিজেকে দেখতে পাবে তিনটি শব্দের মধ্যে। এরপর অপেক্ষা। প্রতিদিন তিনটি করে শব্দ লিখবে, দেখবে সেগুলোর কোনো পরিবর্তন আসছে কি না। পরিবর্তন আসলে সেই পরিবর্তনের মাঝেই নিজেকে জানবে তুমি।

৩. নিজের দোষ গুণগুলো খুঁজে নাও

Self-assesment বা নিজেই নিজেকে যাচাই করা খুবই দরকারি একটি পদক্ষেপ, যদি তুমি নিজেকে জানতে চাও। নিজের ভালো দিকগুলো, ভালো গুণ বা চরিত্রগুলো খুঁজে নাও। তারপর খারাপ দিকগুলোকেও আরেক পাশে রাখো। চিন্তা করতে থাকো, কী করে এই খারাপ দিকগুলোকে ভালোর দিকে আনা যায়। এভাবেই নিজেকে চিনবে তুমি।

৪. জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করো

তোমার জীবনের লক্ষ্য কী? সে প্রশ্নের উত্তরও যদি তোমার না জানা থাকে, তাহলে তুমি আসলেই নিজেকে ঠিকমত চেনো না। একজন মানুষ তার নিজের আত্মাকে চিনবে তখনই, যখন তার লক্ষ্য থাকবে নিশ্চিত, আর সে সেই লক্ষ্যে থাকবে স্থির, অবিচল। তাই নিজের লক্ষ্য ঠিক কর। যদি ডাক্তার হতে চাও, সে পথে এগোও। শিক্ষক হতে চাইলে শিক্ষকতার রাস্তায় এগিয়ে চলো। তবেই না নিজেকে জানবে!

৫. নিজের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলো ভালোভাবে জানো

তোমার কী কী ভালো লাগে, কী খেতে ভালো লাগে, কী করতে ভালো লাগে, সে সম্পর্কে তোমার পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। ছোটবেলায় মা যেমন সব খাবার ভাতের সাথে মাখিয়ে খাওয়াতো, বুঝতেও না কী খাচ্ছো বড়বেলায় এমনটা করলে হবে না। তোমার কিসে ভালো লাগে, কিসে খারাপ লাগে সেটি পরিষ্কারভাবে জেনে নাও, নিজেকে আবিষ্কার কর। তাহলেই চিনবে নিজেকে।

সক্রেটিসের সেই Know Thyself উক্তিটির মতোই নিজেকে খুঁজে ফিরছে হাজারো মানুষ। তুমি কি তাদেরই একজন হবে, নাকি সাফল্যের বিজয় মঞ্চে উঠে আসবে নিজেকে সত্যি জেনে?

সিদ্ধান্ত কিন্তু তোমারই!

.

কিন্তু সিজিপিএ?

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কাউকে ইদানীং তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে জিজ্ঞেস করলে দুই ধরনের উত্তর পাওয়া যায়। এক দল আছে যারা মহানন্দে নতুন এই জীবন উপভোগ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন এক্সটা কারিকুলার এক্টিভিটির পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবনটা বেশ উপভোগ্যই বলতে গেলে।

আরেক দল হচ্ছে সিজিপিএ পাবলিক। এদের দিন দুনিয়ার সবকিছু ঘিরে শুধুই সিজিপিএ। ডিবেট করতে যাবার কথা বললে তারা সিজিপিএর দোহাই দেয়। গান গাইতে বললে সিজিপিএ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেতে বললে সিজিপিএ; কোনো ক্লাবে যোগ দেবার কথাতেও তাদের ওই একটাই উত্তর কিন্তু আমার সিজিপিএর কী হবে? অবস্থা এমন যে এদের আবেগও হয়ে গিয়েছে সিজিপিএ নির্ভর। প্রেম তাদের শুধু সিজিপিএর সাথেই! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যে, এই দলের বেশিরভাগকেই যদি তাদের সিজিপিএ জিজ্ঞেস করা হয় মুখটা কেমন কালো হয়ে যায়। মৃদু স্বরে উত্তর আসে, ২.৯০!

আমরা আজকে প্রথম দলটা নিয়েই কথা বলব। যারা শুধু সিজিপিএ না, বরং চারপাশের দুনিয়াটারও একটা জীবন্ত অংশ হতে চায়। তাদের অনেকেরই প্রশ্ন, দ্বিতীয় দল এভাবে পাগলের মতো সিজিপিএর পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছে কেন? খুব ভালো সিজিপিএ ছাড়া কি জীবনে সাফল্য পাওয়া যাবে না?

.

নিয়ন্ত্রণে রাখো নিজের সুখ

আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটে, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সুযোগই নেই। সমস্যা হলো যে, এটি নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সুযোগ নেই জেনেও আমরা ওই ঘটনাগুলো নিয়েই সারাদিন পড়ে থাকি, আমাদের মনোযোগ কেড়ে নেয় সেগুলো। আর তাই জীবন সবসময় সুখী হয় না, সুখে থাকতে পারিনা আমরা। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্যে চমৎকার একটা সূত্র আছে।

সূত্রটার নাম 90/10 Principle। Stephen Covey নামের এক ভদ্রলোকের আবিষ্কার। তিনি এখানে দেখিয়েছেন কীভাবে জীবনের ছোটখাটো নিয়ন্ত্রণহীন খারাপ ঘটনাগুলোকে ইতিবাচকশক্তি বা Positive energy দিয়ে বশে আনা যায়। তিনি পুরো ধারণাটা একটা গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। গল্পটা বলা যাক।

একটা ছোট পরিবার। বাবা, মা এবং ছোট্ট একটি মেয়ে। তারা একদিন সকাল বেলা নাস্তা করছে। ছোট মেয়েটা হঠাৎ ভুল করে চায়ের কাপ ফেলে দেয় বাবার ইস্ত্রি করা শার্টের উপর। বাবা তো রেগে আগুন! মেয়েকে প্রচন্ড একটা ধমক দিলেন, স্ত্রীকে বকাবকি করলেন, কেন সে চায়ের কাপ টেবিলের কিনারে রাখল? বকা খেয়ে আহ্লাদি মেয়েটি জোরে কেঁদে উঠল।

কিছুক্ষণ পর শার্ট পাল্টিয়ে এসে বাবা দেখেন তার মেয়ে তখনও কান্না করছে, খাবার এখনো শেষ করেনি। তিনি আরো ধমকালেন মেয়েকে। মেয়ে আরো বেশি কান্না করতে শুরু করল। ইতিমধ্যে মেয়ের স্কুলের বাসটাও চলে গেল। এখন বাবাকেই স্কুলে পৌঁছে দিতে হবে। এসব ভেবে। বাবার মনে আরো রাগ জমে উঠল।

মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেবার পথে স্বাভাবিকের চাইতে জোরে গাড়ি চালাতে গিয়ে জরিমানা গুণতে হলো। যে মেয়ে প্রতিদিন বাবাকে বাই না বলে স্কুলে ঢোকে না, সেই মেয়ে আজ বাবাকে বিদায় না জানিয়ে এক দৌড়ে চলে গেল স্কুলে।

তিনি অফিসে পৌঁছালেন ১৫ মিনিট দেরি করে। খেয়াল করে দেখ তাড়াহুড়োয় অফিসের ব্রিফকেস আনতে ভুলে গেছেন। এখন আরো বিপদ অফিসের বস তার উপর চড়া। দিন তীব্র খারাপের দিকে যেতে লাগল। অফিসের কাজও ঠিকমত হলো না। রাত্রে অফিস শেষে বাসায় এসে দেখলেন মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

অথচ অন্যদিন বাবা আসলেই সবার আগে মেয়ে দৌড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে, জিজ্ঞেস করে বাবা, আমার জন্যে কী এনেছ? আজ সে আসলো না। তার স্ত্রীও আজ অনেকটাই নীরব। তিনি একা একা খাওয়া-দাওয়া করলেন। তারপর ঘুমিয়ে পড়লেন। দিনটা তো খারাপ গেলই, এখন রাতটাও। এভাবে পরিবারের মাঝে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হলো।

অথচ গল্পটা যদি এমন হতো,
ছোট্ট মেয়েটা ভুল করে চায়ের কাপ ফেলে দিল। ফেলে দিয়েই ভয় আর অনুশোচনায় সে কান্না করতে শুরু করলেই বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন- থাক, সমস্যা নেই। আমিও অনেকবার আমার বাবার গায়ে চা ফেলেছি। তবে হ্যাঁ, এখন থেকে সাবধান, ঠিক আছে?

মেয়েটা একটু হেসে বলল- আচ্ছা বাবা, আর হবে না। মেয়ে তখন স্কুলে গেল। বাবা সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে সুন্দর করে ৫ মিনিট আগেই অফিসে পৌঁছালেন। অফিসের বস তার কাজের প্রশংসা করলেন। সারাদিন অফিসে কাজ করে রাতে বাসায় আসতেই মেয়েটা দৌড়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরল, বাবার আনা চকলেটগুলো একটা একটা করে খেতে লাগল। পুরো পরিবার হাসি আর আনন্দের সাথে ডিনার করল। একটি সুখী ও সুন্দর পরিবার দেখা গেল।

দিনটা অনেক সুন্দর গেল, তাই না? প্রথম গল্প আর শেষ গল্পের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। প্রথম গল্পে বাবার মেজাজের কারণে পুরো দিনটাই খারাপ গেল পরিবারের সবার জন্য। আর পরের গল্পটা খুব সহজেই সুন্দর সমাপ্তিতে পৌঁছালো শুধুমাত্র বাবা তার মেজাজ ঠিক রেখেছেন বলে। স্টিফেন কভে বলেন, প্রথম ঘটনাটি পুরোটাই বাবার দোষ। কারণ, চায়ের কাপ পড়ে যাবার মতো আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মধ্যে ১০% এমন ঘটনা থাকে যেগুলোর উপরে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিন্তু ওই ১০% অনিচ্ছাকৃত ঘটনার উপর আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটার উপর নির্ভর করে বাকি ৯০% ঘটনা ঠিকভাবে যাওয়া না যাওয়া।

প্রথম গল্পে বাবা ১০% সেই ঘটনাটি নিয়েই ভেবেছেন, নেতিবাচকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। ফলাফল? একটি বাজে দিন। দ্বিতীয় গল্পে বাবা সেই ১০% ঘটনাটিকেই অনিয়ন্ত্রিত ভেবে ধরে নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। ফলাফল? একটি ভালো দিনের সমাপ্তি।

আমাদের জীবনে অনেক সময় এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যেগুলোতে আমাদের কোনো হাত না থাকলেও তাতে অনেক সমস্যা হয়। ধরো, স্যুটেড বুটেড হয়ে প্রেজেন্টেশন দিতে যাচ্ছ, হঠাৎ উপর থেকে একটা কাক তোমার কালো স্যুটে প্রাকৃতিক কর্ম সেরে দিল। এখন তুমি তো আর কাককে আক্রমণ করতে পারবে না, বিষয়টি মেনে নিয়ে তোমাকে স্যুট পরিষ্কার করার উপায় খুঁজতে হবে। তাহলেই দিনটা খারাপ না হয়ে ভালোর দিকে যাবে।

এরকম অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। আসল কথা হলো, তোমার সুখ, তোমার সাফল্য সবই নিজের কাছে। তুমি চাইলেই পার এসব বদলাতে। তোমার ইচ্ছাশক্তিই আসলে নিয়ন্ত্রণ করবে তোমার জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য।

.

হয়ে ওঠো পাওয়ার পয়েন্টের জাদুকর

পাওয়ার পয়েন্ট নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভাসে সেই অতি পরিচিত, সফটওয়্যারটি, প্রেজেন্টেশন বানানোর ক্ষেত্রে যার বিকল্প নেই বললেই চলে। দারুণ দরকারি এই সফটওয়্যারটির কাজের ক্ষেত্র কিন্তু শুধমাত্র প্রেজেন্টেশনেই সীমাবদ্ধ নেই! বরং বলতে গেলে প্রেজেন্টেশনের স্লাইড বানানো পাওয়ার পয়েন্টের অনেকগুলো কাজের একটা মাত্র। মজাদার এই পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে দারুণ সব কাজ করে ফেলা যায়, যেগুলো তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে তোমাকে অনেকটা এগিয়ে রাখবে অন্যদের থেকে। তাহলে চলো দেখে আসা যাক পাওয়ার পয়েন্টের জাদু!

১. খুব সহজে ভিডিও বানানো

পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে যে ভিডিও বানানো যায়, ব্যাপারটা শুনে অবাক হলে বুঝি? আসলেই পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহার করে দারুণ সব ভিডিও তৈরি করা সম্ভব। দরকার শুধু সঠিক ব্যবহারটা জানা। আমরা অনেকেই কিন্তু দেখেছি পাওয়ার পয়েন্টের সাহায্যে এনিমেশন করা। একটা লেখা বা ছবি অন্য দিকে চলে যায়, উড়তে থাকে- এমন কত কী। এগুলোকে যদি সেভ করার সময় mp4 এ কনভার্ট করা যায়, তাহলেই দারুণ মজাদার এবং কাজের সব ভিডিও বানানো খুবই সম্ভব!

২. ইলাস্ট্রেটরের বিকল্প

ইলাস্ট্রেটরে কাজ করতে গিয়ে অনেকেরই অনেক রকম সমস্যা হয়, যার মূল কারণ হলো এর কাজ বোঝা একটু জটিল। পাওয়ার পয়েন্টে এসব জটিলতার বালাই নেই, তাই প্রথমবার ডিজাইন করতে এসে যে কেউ মহানন্দে চমৎকার সব ডিজাইন করে ফেলতে পারে!

৩. নিজেই তৈরি কর ইনফোগ্রাফিক

ইনফরমেশন আর গ্রাফিক, দুয়ে মিলে ইনফোগ্রাফিক। জটিল সব তথ্য গ্রাফিকে দেখিয়ে সহজে বুঝিয়ে দেবার অস্ত্র হলো ইনফোগ্রাফিক। দারুণ এই জিনিসটি তৈরি করা কিন্তু খুব কঠিন কিছু নয়!

তোমার পাওয়ার পয়েন্টের স্লাইডটিকে একটু লম্বা করে নাও, তারপর তোমার ছবি আর ইনফরমেশনগুলো সেখানে বসিয়ে ডিজাইন করে ফেললো। তারপর pdf বা ছবি আকারে এক্সপোর্ট করে ফেলো। তাহলেই হয়ে গেল তোমার ইনফোগ্রাফিক!

৪. আর নয় কভার ডিজাইন নিয়ে ঝামেলা

আমরা অনেক সময় অনেক কাজেই কভার ডিজাইন নিয়ে ঝামেলায় পড়ি। ধরো তুমি তোমার ব্যাচ থেকে কোনো ম্যাগাজিন বের করতে চাচ্ছ, সেটির জন্যে কভার ডিজাইন লাগবে। আবার যেকোনো টার্ম পেপার বা এসাইনমেন্টের কভার ডিজাইন করতেও প্রায়ই ঘাম ছুটে যায় সবার। অথচ পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহার করলে এই কাজটিই হয়ে যায় মহা সহজ! পাওয়ার পয়েন্টে সব ধরনের টুলস দেয়াই আছে, দরকার শুধু তোমার সদিচ্ছা আর সৃজনশীলতা।

৫. নিজের সিভি নিজেই ডিজাইন কর

বিভিন্ন জব সেক্টরে চাকরির জন্যে দরকার হয় একটি সিভি। তোমার সিভিই চাকরির বাজারে তোমার পরিচয়, আর তাই সেটিকে হতে হয় চমৎকার। পাওয়ার পয়েন্ট দিয়ে এই মানসম্মত সিভি তৈরি করা সহজ হয়ে যায় অনেকটাই!

কিংবা ধরো কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সাথে পরিচিত হতে চাও তুমি। পাওয়ার পয়েন্টে ডিজাইন করা নিজের একটা বিজনেস কার্ড থাকলে ঝট পট তাকে দিয়ে ফেলে স্মার্টলি পরিচিত হতে পার তুমি! দরকার শুধু বিভিন্ন সাইজে ডিজাইন করা তোমার সিভি।

৬. এনিমেশন তৈরি এখন হাতের নাগালে

টিভি বা কম্পিউটারের পর্দায় এনিমেটেড কার্টুন দেখে বিমলানন্দ পাই আমরা সবাই। কিন্তু যদি বলি, এ ধরনের এনিমেশন তুমি ঘরে বসেই করতে পারবে? অবিশ্বাস্য লাগছে না শুনতে? অবিশ্বাস্য হলেও এটি সত্যি। পাওয়ার পয়েন্টের জাদুর ছোঁয়ায় তুমিও পারবে নানা রকম এনিমেশন করে নিজের স্কিল বাড়াতে। সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে করতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পার এনিমেশনেও।

৭. ওয়েবসাইট ডিজাইন কর নিজেই

আমি যদি বলি, তোমরা এখন যে 10 Minute School এর ওয়েবসাইটটি দেখছ, সেটির পুরো ডিজাইন করা হয়েছে পাওয়ার পয়েন্টে!

অস্বাভাবিক শোনালেও এটাই সত্যি, যে পাওয়ার পয়েন্টের সাহায্যে ওয়েন সাইটের ডিজাইনগুলোও করা সম্ভব। পাওয়ার পয়েন্টে যেসব টুল রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করে নিজেই করে ফেলতে পার একটি ওয়েব সাইটের ডিজাইন।

৮. ঝামেলাবিহীন লিফলেট ডিজাইন

ধরো, তুমি ছোটখাট একটা ব্যবসা শুরু করেছে। তোমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এখনো কেউ চেনে না। সবাইকে চেনাতে হলে তাই দরকার ব্যাপক প্রচার। এটির শুরু করতে হবে তোমাকে লিফলেট তৈরি করে। না, অমুক ভাইকে তমুক মার্কায় ভোট দিন; এরকম লিফলেট তৈরি করলে কিন্তু হবে না! পাওয়ার পয়েন্টে একটি স্মাইড নিয়ে সেটি A4 সাইজ করে মনমতো ডিজাইন করে ফেলল। তারপর সেটিকে প্রিন্ট কর। বাস, হয়ে গেল তোমার লিফলেট!

৯. ফেসবুক পোস্ট ডিজাইন করা

তুমি নিশ্চয়ই দেখেছ ফেসবুকে বড় বড় পেজগুলো বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করে, যেগুলোর কোনোটিতে হয়তো কোনো বিজ্ঞাপন, কোনোটিতে ঘোষণা আবার কোনো কোনোটি তথ্য নিয়ে। এই পোস্টগুলো কিন্তু তুমিও বানিয়ে ফেলতে পার! কিভাবে?

প্রথমে পাওয়ার পয়েন্টে যাও। এরপর তোমার স্লাইডটাকে Square আকারে রাখো। তারপর ওটার উপরে ডিজাইন করেই ছবি আকারে এক্সপোর্ট কর। এবং এরই সাথে সাথে তুমিও বানিয়ে ফেললে চটকদার ফেসবুক পোস্ট! তাহলে আর দেরি কেন? ঝটপট ঘুরে এসো পাওয়ার পয়েন্টের রাজ্য থেকে আর নিজেকে দক্ষ করে তোলো প্রযুক্তির নতুন এই যুগে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *