১. আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও কিছু স্বপ্নের কথা

নেভার স্টপ লার্নিং – আয়মান সাদিক

উৎসর্গ

সৎ, নির্ভীক, আলোকিত ও সুন্দর পৃথিবী গড়ার স্বপ্নে বিভোর দৃঢ়প্রত্যয়ী তরুণ প্রজন্মকে!

ভূমিকা

শেখার কোনো নির্দিষ্ট সময়, স্থান কিংবা সীমা-পরিসীমা নেই। আমরা প্রত্যেকেই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানছি ও শিখছি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তব জীবন ও কর্মমুখী শিক্ষাও সমভাবে প্রয়োজনীয়।

আর তাই, সমাজে ও কর্মক্ষেত্রে নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করতে আমাদেরকে বেশিকিছু কৌশল রপ্ত করতে হবে। এ কৌশল বা আইডিয়াগুলোই আমাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

এ বইটিতে এমনই কিছু ছোট্ট ছোট্ট আইডিয়া, কৌশল, হ্যাঁক সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে যাতে করে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়াকে প্রাধান্য দেয়ার পাশাপাশি নিজেদেরকে দক্ষ, অভিজ্ঞ, যোগ্য, কুশলী এবং আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাটাকেও প্রাধান্য দেয় এবং প্রিয় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ভূমিকা পালন করতে পারে।

.

সূচি

০১ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও কিছু স্বপ্নের কথা। ০২ দৃষ্টিভঙ্গী বদলালেই বদলে যাবে জীবন ০৩ চীনা বাঁশের গল্প ০৪ মাদিবা থেকে আমাদের অনুপ্রেরণা ০৫ আমার ভর্তি যুদ্ধের গল্প। ০৬ এবার মানসিক অশান্তিকে জানাও বিদায় ০৭ একটি ভিডিও বাঁচাতে পারে লক্ষ প্রাণ! ০৮ দোষটা কি আসলে তেলাপোকার? ০৯ গোলাপি হাতি থেকে রক্ষা পাওয়ার রহস্য ১০ পৃথিবীর সবথেকে ভালো আইডিয়াগুলো কোথায় পাওয়া যায়? ১১ সুন্দর মানসিকতা গড়ে তোলার ৬টি উপায় ১২ সিজিপিএ আসলে কতটা প্রয়োজন? ১৩ মন ভালো করার টোটকা ১৪ একজন বৃক্ষমানবের গল্প ১৫ সময় বাঁচানোর শতভাগ কার্যকর কৌশল! ১৬ ফেসবুক সদ্ব্যবহারের ৩টি কার্যকরী আইডিয়া ১৭ ছাত্রজীবনে অর্থ উপার্জনের ১০টি উপায় ১৮ ডিজিটাল ওরিয়েন্টেশন ও একটি স্বপ্নের কথকতা ১৯ শিক্ষাজীবনে যে ১০টি কাজ না করলেই নয় ২০ প্রতিনিয়ত করে চলেছি যে ৪টি ভুল! ২১ বিনোদনের ফাঁকে ফোকাস করো নিজের উন্নতি ২২ ভোকাবুলারি জয়ের ৫টি কৌশল। ২৩ অপরিচিতের সাথে কিভাবে ফোনে কথা বলবে ২৪ সালাম দেয়া এবং ভালো গুণের প্রশংসা করা ২৫ তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না থেকে আত্মরক্ষার কৌশল ২৬ একটি কমন অভ্যাস ২৭ পরিশ্রমকে হা বলো ২৮ প্রতিযোগিতায় যে গুণগুলো থাকা প্রয়োজন ২৯ আইডিয়াকে কাজে লাগাও, সাফল্যের পথে পা বাড়াও ৩০ মার্শমেলো টেষ্ট ও দুরদর্শীতা ৩১ নিজেকে জানো ৩২ কিন্তু সিজিপিএ? ৩৩ নিয়ন্ত্রণে রাখো নিজের সুখ ৩৪ হয়ে ওঠো পাওয়ার পয়েন্টের জাদুকর ৩৫ টলারেন্স নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ৩৬ চ্যাটিং করা থেকে যদি দারুণ কিছু হয়, চ্যাটিং করা ভালো! ৩৭ রাজার অসুখ আর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ৩৮ আমার প্রথম পাবলিক পরীক্ষা আর ডোপামিন ইফেক্টের গল্প ৩৯ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন গড়ে তোলো এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম দিয়ে ৪০ Sunk Cost-কে না বলল, সাফল্যের পথে এগিয়ে চলো! ৪১ ইন্টারভিউয়ের কথকতা ৪২ এখনই লিখে ফেলো তোমার সিভি! ৪৩ ফেসবুকের সঠিক ব্যবহার করে হয়ে ওঠো আদর্শ নাগরিক। ৪৪ সময় নষ্টের মূলে যে ৮টি কারণ ৪৫ সময় ব্যবস্থাপনার ৫টি কার্যকর কৌশল। ৪৬ সমালোচনা ৪৭ নিজেকে জানা, Elevator Pitch এবং আমাদের অবস্থান!

.

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও কিছু স্বপ্নের কথা

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখনও তা পুরোপুরি যুগোপযোগি এবং বাস্তব সম্মত হয়ে উঠেনি। শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য এখনও ভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য ভালো ফলাফল করা অন্যদিকে শিক্ষার লক্ষ্য হলো কর্মক্ষেত্রের চাহিদা অনুযায়ী, সুস্থ, দক্ষ ও সুন্দর মানসিকতা সম্পন্ন আলোকিত নাগরিক তৈরী। করা। নিরস শিক্ষাপোকরণ যেমন শিক্ষার্থীদের উৎসাহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমনি ভালো ফলাফল করার অসুস্থ প্রতিযোগিতাও শিক্ষার্থীদেরকে প্রকৃত শিক্ষা হতে বঞ্চিত করছে। আমি স্বপ্ন দেখি শিক্ষার্থীরা ফলাফলের উদ্বিগ্নতায় না ভুগে নিত্য নতুন উদ্ভাবনী শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে আনন্দের সাথে তাদের নিজ নিজ পছন্দের বিষয়ে বাস্তব সম্মত ও আধুনিক শিক্ষা অর্জন করবে।

তাই ভাবলাম, স্বপ্নগুলো না হয় লিখেই ফেলি, জানিয়ে দেই পুরো বিশ্বকে!

১. যা শিখছি বুঝে শিখছি :

আমরা অনেক সময় না বুঝে না জেনে অনেক কিছু পড়ে ফেলি, মুখস্ত করে ফেলি। আমরা কিন্তু জানিও না আসলে এই শিক্ষাটা আমাদের ঠিক কোন কাজে লাগবে, কেন কাজে লাগবে।

আমি স্বপ্নে দেখি, এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীরা কোনোকিছু পড়ার আগে জানবে, কেন তারা সেটি পড়ছে? তাদের পরিষ্কার ধারণা চলে আসবে যে, এ বিষয়টি পড়লে তারা এভাবে উপকার পাবে। তাদের মনে আর প্রশ্ন জাগবে না যে, এসব পড়ে কি হবে? কি লাভ?

২. গোল্ডেন নয় শেখার জন্যে পড়ালেখা :

একটা সময় ছিল যে কেউ গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেলে আমার খুব ভালো লাগত। মনে হতো যে অসাধারণ একটা কাজ করে ফেলেছে সেই ছেলেটি বা মেয়েটি। কিন্তু এখন আর সেদিন নেই। এখন কেউ গোল্ডেন পেলে আমার মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করে। মনে হয় এই রেজাল্টের জন্যে শিক্ষার্থীটিকে কতই না ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। নিশ্চয়ই তাকে গন্ডায় গন্ডায় কোচিং প্রাইভেট আর মডেল টেস্টের জ্বালাতনে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। রেজাল্ট একটুখানি খারাপ হলে না জানি তার বাবা মা তাকে কত বকাঝকা করেছেন!

তাই আমি স্বপ্ন দেখি সেই দিনের, যখন শুধু গোল্ডেন জিপিএ পাবার জন্যে কেউ পড়ালেখা করবে না, শেখার জন্যে পড়ালেখা করেই গোল্ডেন পেয়ে যাবে।

৩. Never Stop Learning :

এমন এক যুগে আমাদের বসবাস, যেখানে আমরা সিলেবাসের বাইরে এতটুকুও পড়তে চাই না। সিলেবাস তো সিলেবাসই, এর মধ্যেও আমরা শুধু পড়তে চাই পরীক্ষায় যেগুলো আসতে পারে। সাজেশন নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে গেছে আমাদের। কিন্তু ব্যাপারটা হলো, শেখার কোনো শেষ নেই।

মানুষ হিসেবে আমরা সবাই এক-একটা বইয়ের মত। কেউ হয়তো ফিলোসফির বই, কেউ ফিজিক্সের। সবার কাছেই কিছু না কিছু শেখার আছে। সেজন্যে শেখার মানসিকতাটা ধরে রাখতে হবে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যেন আমরা শিখে যেতে পারি, সে স্বপ্নই দেখি আমি।

৪. মুখস্ত নয় বুঝে পড়ো :

নকল করা খুব খারাপ একটা কাজ। বাড়ী থেকে মুখস্ত করে এসে পরীক্ষা হলে উত্তর দেয়াটাও কিন্তু একরকম নকলই বলা চলে! একগাদা তথ্য মুখস্ত করে সেটা দিয়ে পরীক্ষায় পাশ করাটা মোটেও কাম্য নয়। মুখস্ত করার দরকার আছে, কিন্তু অবশ্যই সেটি বুঝে বুঝে করতে হবে। তাই আমি স্বপ্ন দেখি এমন এক বাংলাদেশের, যেখানে সব ছাত্র ছাত্রী ঝাড়া মুখস্ত করে বুঝে বুঝে পড়ালেখা করবে।

৫. পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষাকে কৃতিত্বদান :

আমাদের মনের মধ্যে একটা ধারণা ঢুকে গেছে যে, সিজিপিএ বা। জিপিএতে ভালো গ্রেডিং অর্জনই হচ্ছে জীবনের সব। এছাড়া জীবনে ভালো। কিছুই করার নেই। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে, বিভিন্ন মানুষ কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ে ভালো। একটা বনে একটা বাঁশ পুতে দিয়ে যদি সিংহ, নেকড়ে, বাঘ, হাতি আর বানরকে বলা হয় যে, যে প্রাণী আগে বাঁশে চড়তে পারবে, সে-ই সেরা। তাহলে বানর হেসেখেলে চড়তে পারবে সেখানে। তার মানে কি সে সেরা? মোটেও না!

একইভাবে, সিজিপিএ ভালো না হলেই যে সে ভালো নয়, এমন ধারণা পাল্টাতে হবে। কেউ হয়তো ভালো ছবি আঁকে, ভালো গান গায়, ভালো কবিতা লেখে যা সিজিপিএতে কখনো আসবে না। তাই বলে কি এসব গুণের কোন মূল্য নেই? আমার স্বপ্ন হলো, এমন একটা দিন আসবে যখন একাডেমিক পড়ালেখার কৃতিত্বের পাশাপাশি এসব সহশিক্ষাকেও কৃতিত্বের সাথে দেখবে সবাই!

৬. বুদ্ধির পরিচয় শুধু পড়ালেখায় নয় :

অনেকেরই ধারণা, বুদ্ধিমত্তা যাচাই করার একমাত্র উপায় হলো পড়ালেখা। পড়ালেখায় ভালো তো সে বুদ্ধিমান আর পড়ালেখায় খারাপ তো তার বুদ্ধি কম। কিন্তু আমি বলব, পড়ালেখায় ভালো হওয়াটা বুদ্ধিমত্তার স্রেফ একটা অংশ। এছাড়াও অনেক কিছু আছে, যেগুলো না জেনে শুধু পড়ালেখায় ভালো হলে তাদের দিয়ে পৃথিবীর খুব বেশি উপকার আসলে হয় না। তাই আমি স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশের সবাই পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য সহশিক্ষামূলক কাজেও উদ্বুদ্ধ হবে।

সত্যি বলতে কি, বাংলাদেশে পড়ালেখাটা আসলে মোটেও আনন্দের নয়। কিন্তু সেটিকে যদি আনন্দময় করে তোলা যেত, শিক্ষার্থীরা যদি হাসতে হাসতে শিখতো, তাহলে ব্যাপারটা অসাধারণ হতো না? আমাদের এই স্বপ্নগুলো পূরণ হলে আমরা এমন এক বাংলাদেশ দেখব, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা আনন্দের সাথে শিখছে। ভাবতেই কি দারুণ লাগে, তাই না?

.

দৃষ্টিভঙ্গী বদলালেই বদলে যাবে জীবন

আমাদের তরুণ প্রজন্মের বড় একটা অংশকে আমি দেখি হতাশায় ভুগতে। তারা অনেক ডিপ্রেসড জীবন নিয়ে মহা চিন্তিত। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, এই হতাশা আসছে কোত্থেকে? উত্তর মেলে, এই হতাশার মূলে আছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই এক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে পারলে কিন্তু জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়, জীবনের অঙ্ক মেলাতে আর হতাশ হতে হয় না। আজ তাই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে সুখী একটা জীবন পাবার তিনটি উপায় বলে দিচ্ছি।

১. সবকিছুকে কঠিন করে না নিয়ে সহজভাবে চিন্তা কর

আমাদের সবারই কিন্তু এ ধরনের বন্ধু আছে যারা সবসময় বলতে থাকে দোস্ত আমার কী হবে, আমি পড়া কিছু পারি না! আর রেজাল্ট বের হলে দেখা যায় ফাটাফাটি একটা নম্বর পেয়ে যায় তারা। আবার আরেক রকম বন্ধু আছে যারা বেশি পড়ালেখা করে না, আর সেটি নিয়ে তাদের মাথাব্যথাও নেই। একশতে পাশ নম্বর চল্লিশ তুলতে পারলেও তারা খুশি।

প্রথম ধরনের বন্ধুদের মনে সবসময় চলতে থাকে যে, বেশি করে ভালোমত পড়াশোনা না করলে রেজাল্ট খারাপ হবে, তার চাকরি-বাকরি হবে না, বিয়ে হবে না, কিচ্ছু হবে না! তার জীবনে নেমে আসবে মহা অন্ধকার। আর দ্বিতীয় ধরনের বন্ধুদের মাথায় খেলা করে অন্য বিষয়। পরীক্ষা তাদের কাছে স্রেফ একটা পরীক্ষাই। এটায় খারাপ করলে পরেরটায় ভালো করবে, সুযোগের তো আর অভাব নেই এমনই চিন্তাধারা তাদের। তাহলে যেটা দেখা যাচ্ছে, স্রেফ দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা বলে দুজন বন্ধুর পরীক্ষা নিয়ে ধারণা বেমালুম আলাদা হয়ে যাচ্ছে!

আমাদের জীবনটাও কিন্তু ঠিক এরকমই। চারপাশে তাকালে দেখা যাবে প্রচুর মানুষ আছে যারা অনেক কিছু করেও সুখী না, তাদের কাছে জীবনটাই একটা হতাশার নাম, সবকিছুই কঠিন তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে। ভালো কিছু করলেও সেটিকে তাদের কাছে অনেক কম মনে হয়!

কিছু মানুষ আবার জীবনটাকে খুব সহজভাবে নেয়। তাদের কাছে সম্ভাবনা এলে তারা তা হাসিমুখে গ্রহণ করে, সাফল্য পায়। আবার ব্যর্থতায় ভেঙে না পড়ে তারা নতুন কিছুর পথে এগিয়ে যায়। সবকিছুকে সহজভাবে নেয়ার বিরল প্রতিভা তাদের।

আমরা আমাদের জীবনকে কীভাবে গড়ব, সেই বন্ধুদের মত বড্ড কঠিন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চালাতে পারি, আবার দ্বিতীয় শ্রেনির এই মানুষগুলোর মত সহজ দৃষ্টিভঙ্গিতেও রাখতে পারি। Choice কিন্তু আমাদের হাতেই!

২. নিজের জীবন থেকেই খুঁজে নাও সুখ

একটা গল্প বলি। দুটো বাচ্চার গল্প। একজন থাকে মস্ত একটা আলিশান বাড়ির আঠারো তলায়। আঠারো তলার জানালা থেকে সে দেখে, ছেঁড়া একটা হাফপ্যান্ট পরে আরেকটা বাচ্চা বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলছে। আলিশান বাড়ির বাচ্চাটাকে তার মা নামতে দেয়নি, বৃষ্টিতে খেললে যদি তার অসুখ করে!

আলিশান বাড়ির বাচ্চার মনে বড় কষ্ট। তার মনে হয় সে যদি এই ছেলেটা হতো, তাহলে বুঝি কতই না মজা করে বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলতে পারতো! মজার ব্যাপার হলো, ঠিক ওই সময় নিচের বাচ্চাটার মনে চলছে আরেক কথা। তার বাসায় অভাব, অনাহার। তার মনে হয় সে যদি ওই আলিশান বাড়ির ছেলেটা হতো, তাহলে না জানি কী সুখে থাকতে পারতো! বড় বাসা, ভালোজামা কাপড় ভালো খাবার সবই পেত সে!

পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেও এই সমস্যাটা বিদ্যমান। অন্য মানুষ কী করে, তারা কেমন সুখে আছে এটি নিয়েই তারা প্রতিনিয়ত চিন্তিত। হতাশা তাদের শেষ হতেই চায় না! অথচ অন্যের জীবন নিয়ে না গবেষণা করে নিজের জীবনের খুঁটিনাটি একটু দেখলে, দুঃখভরা জায়গাগুলো একটু ভালো করার চেষ্টা করলে কিন্তু খুব ভালো থাকা যায়।

অন্যের কথা না ভেবে, অন্যের পথে না চলে, নিজেই নিজের জীবন গড়ে তুলতে পারলে আর কিছু লাগেই না। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে তাই জীবনটাও হয়ে যাবে অনেক সুখের।

৩. স্বপ্নগুলোকে উড়তে দাও

প্রবাদ আছে, আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই ২৫ বছর বয়সে মরে যায় আর পঞ্চাশ বছর পর তার দেহটা কবর দেয়া হয়। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও কথাটা সত্যি। ২৫ বছরে গ্রাজুয়েশনের আগে আমাদের মনে কতই না স্বপ্ন থাকে, এটা করবো সেটা করবো। একের পর এক আইডিয়া আসতে থাকে মাথায়। দিতে ইচ্ছে করে ইউরোপ টুর, আরো কত কি! কিন্তু গ্রাজুয়েশনের পর পরিবার থেকে চাপ আসে বিয়ে করতে হবে, চাকরি নিতে হবে।

চাকরিগুলো বেশিরভাগ সময়েই মনমতো হয় না, হতাশা বাড়তে থাকে। সাথে থাকে সংসার চালানোর চাপ, আর জীবন হয় কষ্টের। সেই যে স্বপ্নগুলোর মৃত্যু হলো মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধের চাকরি করে আর সংসারের ঘানি টেনে, সেখানেই আমাদেরও আসলে মৃত্যু হয়। থাকে শুধু নিরস দেহটাই।

কিন্তু এমনটা হবার তো কোনো দরকার নেই! নিজের চিন্তা-ভাবনাকে একটু পাল্টিয়ে দেখি আমরা। চিন্তা করে দেখি, নিজের জন্যে, দেশের জন্যে বলার মত কী করছি আমরা, যদি কিছু না করেই থাকি, তাহলে করা শুরু করতে দোষ কী? বয়সটা হোক পঞ্চাশ কিংবা আরো বেশি, কাজের কাজ করলে সেটি কোনো বাধাই নয়। নিজে কিছু করা শুরু করলেই দেখবে নিজেরও ভালো লাগছে, ইচ্ছে করেছে আরো ভালো কাজ করতে!

.

চীনা বাঁশের গল্প

আমাদের দেশে আমরা এই যে গ্রামে গেলেই বাঁশঝাড় দেখি, এগুলো হতে কিন্তু খুব বেশি সময় লাগে না, মোটামুটি দ্রুতই বেড়ে ওঠে বাঁশগুলো। চীনা বাঁশের ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যপারটা মোটেও এরকম না! চীনা বাঁশের কাহিনীটা একটু আলাদা।

ধরো তুমি একটা চীনা বাঁশের বীজ বপন করলে। এরপর তোমাকে সেই বাঁশটাকে পানি দিতে হবে, সার দিতে হবে, অনেক যত্নআত্তি করতে হবে। এখানেই শেষ নয়, নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে তার, পাশাপাশি অন্যান্য কাজগুলোও নিয়মিত করতে হবে।

অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এত কিছু করার পর দেখা যায় প্রথম বছরে চারার নামগন্ধ নেই, সেটি বাড়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। প্রথম বছর যায়, দ্বিতীয় বছর আসে। এ বছরেও কোনোরকম লক্ষণ দেখা যায় না। তৃতীয় বছরেও যখন দেখা যায় না কোনো সম্ভাবনা, অনেকেই মনে করতে থাকে বীজটা মরে গেছে। বাঁশ হবার সম্ভাবনা নেই। এই করেই একেবারেই নিষ্ফল চতুর্থ বছরও যখন যায়, তখন মোটামুটি সবাই আশা ছেড়ে দেয় বাশ হবার। চমক দেখা যায় এর পরপরই। চতুর্থ বছরের শেষে দেখা গেল ছোট্ট একটা চারার মত উঠেছে সেখান থেকে। পরের দিন থেকেই তুমি দেখবে হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে চীনা বাঁশগুলো! এক ফিট, দু ফিট করতে করতে এই দেখা যাবে ৫ সপ্তাহে ৯০ ফুটি দানব বাঁশে পরিণত হয়েছে এই চীনা বাঁশগুলো!

একেবারে হাল ছেড়ে দেয়ার অবস্থা থেকে রাতারাতি এই অস্বাভাবিক উন্নয়ন একটু ভাবার বিষয়ও বটে। বাঁশ গাছ থেকে এ শিক্ষাটা আমাদের জীবনেও নেয়া যেতে পারে। কীভাবে? এই পাঁচ বছরে চীনা বাঁশ কিন্তু থেমে থাকেনি, তারা মাটির তলে শক্ত ভিত গড়ে তারপরেই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। জীবনে এই জ্ঞানটা কাজে লাগাতে পারলেই কেল্লাফতে! এই বাঁশ থেকেই জীবনের দরকারি ৩টা শিক্ষা নেয়া যায়ঃ

১. সবকিছুর শুরু সেই ভিত্তি থেকেই

চীনা বাঁশগুলো কিন্তু একেবারেই বড় হয়ে যায় নি। কারণ মূল শক্ত না হলে ৯০ ফুটি একটা বাঁশ দাঁড়াতেই পারবে না, এইজন্যে পাক্কা ৫ বছর ধরে এটি শুধুমাত্র মাটির তলে নিজের মূল-শেকড় ঠিক করেছে। আর ঠিক এই কারণেই যত ঝড়-ঝাঁপটা আসুক, যে দুর্যোগই হোক, চীনা বাঁশ টিকে থাকবে স্বমহিমায়! অন্যদিকে অন্য সাধারণ বাঁশের মত হলে সেগুলোর মত চীনা বাঁশও সহজে ভেঙে পড়ত।

আমাদের জীবনটাও অনেকটা এরকমই। জীবনে আমরা দুই ধরনের সাফল্যের পেছনে ছুটতে পারি। দ্রুত এবং ক্ষণিকের বা শর্ট টার্ম সাফল্য, আর বিলম্বিত বা লং টার্ম সাফল্য। শর্ট টার্মে তুমি বেশ সফল হয়ে যেতে পার, কিন্তু তোমার এই সাফল্য বেশিদিন থাকবে না। অন্যদিকে লং টার্ম হতে অনেক সময় নিলেও, দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য নিশ্চিত! তাই নিজেকে গোড়া থেকে তৈরি কর, নিজের বেসিক ভালো করে তারপর নিজেই এগিয়ে যেতে থাকো সাফল্যের দিকে।

২. ছোট ছোট ধাপে এগিয়ে যাও

চীনা বাঁশগুলো কিন্তু রাতারাতি বিশাল বড় হয়ে যায়নি। তারা সময় নিয়েছে, এবং একটা সময়ে এসে এগুলো বড় হয়েছে। টানা ৫ বছর ধরে ছোট ছোট ধাপে এরা নিজেদের মূলের উন্নতি করেছে, সেগুলোকে ধারণক্ষম করেছে। তারপরই না এদের সগর্ব আত্মপ্রকাশ!

আমাদের জীবনটাও এমনই। তুমি চাইলেই হুট করে বিশাল কোনো সাফল্য পেয়ে যেতে পার না। সময় লাগবে, শ্রম আর ভাগ্যের সহায়তাও লাগবে। তাই তুমি যে কাজে ভালো, যা নিয়ে তোমার আগ্রহ আছে; সেটি তুমি তোমার মতো করে ছোট ছোট ধাপে করতে থাকো, উন্নত হও। একটা সময়ে দেখবে তুমিও সেই চীনা বাঁশের মতো বিশাল মহীরুহ হয়ে উঠছে।

৩. অধ্যবসায়, ধৈর্য, বিশ্বাস

চীনা বাঁশ যখন ৪ বছরেও হচ্ছিল না, তখন অনেকেই হতাশ হয়ে আর যত্ন আত্তি করেনি বাঁশের। তাদের মনে বিশ্বাস ছিল না। তারা ভেবেছিল এই গাছ মরে গেছে। কিন্তু আর একটা বছর পরে যে একটা মহীরুহ জন্মাবে সেই ছোট্ট জায়গাটিতে, সে খবর তারা জানত না। যারা কঠোর অধ্যবসায়ের সাথে দিনের পর দিন গাছের যত্ন নিয়েছে, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছে-তারাই বিশাল বাঁশের মালিক হতে পেরেছে।

আমাদের জীবনেও এই তিনটি গুণের খুব বেশি দরকার। তুমি জীবনে সফলতার মুখ সহজে নাও দেখতে পার, হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে থাকতে পার। কিন্তু তাতে যদি হাল ছেড়ে দাও তাহলে কোনো লাভ নেই। অধ্যবসায় দেখাও, লেগে থাকো যে কাজটি ভালোবাস তার পেছনে। একটু ধৈর্য ধরো, নিজের উপর বিশ্বাস রাখো- সাফল্য আসবেই!

চীনা বাঁশের গল্পটি শুধু গল্প নয়, জীবন বদলে দেয়ার মত একটি অনুপ্রেরণা এটি। আশা করছি সবাই মিলে চেষ্টা করবে সুন্দর ও সফল জীবন গড়ার!

.

মাদিবা থেকে আমাদের অনুপ্রেরণা

দক্ষিণ আফ্রিকার একজন কিংবদন্তির নাম শোনেনি এ পৃথিবীতে এমন মানুষের দেখা পাওয়া ভার। অনেকে তাকে চেনে মাদিবা হিসেবে, অনেকের কাছে তিনি নিপীড়িতদের মুক্তির দূত। শত বর্ণবাদ দূর করে এই মানুষটি এগিয়ে গিয়েছিলেন মুক্তির পথে, হয়েছিল একটি দেশের জাতির পিতা। শুধু তাই নয়, পুরো বিশ্বে অনুপ্রেরণার আরেক নাম তিনি। নাম তার নেলসন ম্যান্ডেলা।

যদি প্রশ্ন করা হয় ত্যাগ ও তিতিক্ষার চরমতম প্রমাণ দিয়ে কে নিজের আদর্শকে বাস্তবায়ন করেছেন? উত্তর আসবে, নেলসন ম্যান্ডেলা। কিছুদিন আগে প্রয়াত কিংবদন্তীতুল্য এই মানুষটি পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিত তার সংগ্রাম আর ক্ষমাশীলতার জন্যে। তার গল্প শুনে আসি তাহলে!

একজন বিপ্লবীর উত্থান

তরুণ ম্যান্ডেলার মনে সবসময় বিরাজ করত একটি স্বপ্নবর্ণবাদহীন, শান্তি পূর্ণ একটি দক্ষিণ আফ্রিকার। সে লক্ষ্যে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। সুষ্ঠু আর সুন্দর এক শাসনব্যবস্থার স্বপ্ন ছিল তার মনে। বর্ণ যাই হোক, সবার অধিকার সমান–এই লক্ষ্যে লড়াইটা তিনি শুরু করেছিলেন তখন থেকেই। জনপ্রিয়তার শুরু টা সেখানেই। পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা যখন সম অধিকারের জন্যে গনগনে কড়াই হয়ে উঠেছিলো, সেসময়ে ম্যান্ডেলাই ছিলেন বিপ্লবের মধ্যমণি।

কারারুদ্ধ

ম্যান্ডেলার এই অবাক উত্থান শাসকদের মোটেও পছন্দ হয়নি। জনতার নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে তারা ক্রমশ নিজের শত্রু ভাবতে শুরু করেছিল। আর শত্রুর শেষ রাখতে নেই, তাই হত্যাচেষ্টাও হয় তার উপর। যদিও মানুষের ভালোবাসাই বারবার বাঁচিয়ে দেয় তাকে। কিন্তু একটা সময় সরকার তাকে ধরে ফেলে। ম্যান্ডেলার বহু বছরের জেল হয়। তৎকালীন সরকার প্রধান FW. De klerk এর দেয়া কারাবন্দিত্ব মেনে নিতে হয় মাদিবাকে।

জেলজীবন

কারাগারের জীবনটা খুব সুখের ছিল না ম্যান্ডেলার জন্যে। অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন, নিজের প্রিয় দেশটার দুরবস্থা মেনে নিতে বড় বেশি কষ্ট হচ্ছিল তার। পরিবারকে রেখে থাকাটা কষ্টকর, দেশের মানুষগুলোর দুঃখে নিজেও দুঃখিত হতেন তিনি। কিন্তু আগুনের দিন শেষ হচ্ছিল না। জেলজীবনে এই মানুষটা যেই অধ্যবসায় আর দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন, তা সত্যিই অনন্য।

মুক্তি

অবশেষে মুক্তির দিন ঘনিয়ে এলো। তুমুল বিপ্লবের মুখে নেলসন ম্যান্ডেলা মুক্তি পেলেন টানা ২৭ বছর কারাবন্দী থাকার পর। তারপরের গল্পটা বিজয়ের। যে ম্যান্ডেলাকে দুই যুগেরও বেশি জেলে বন্দী থাকতে হয়েছে, সেই মাদিবা ধীরে ধীরে দেশের প্রধান হয়ে উঠলেন! প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা, আর শপথ নিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সকল সমস্যার সমাধান তিনি করবেনই, শান্তিপূর্ণভাবে! ধৈর্যশীলতার অনন্য। নিদর্শন দেখালেন মাদিবা, বিশ্ব অবাক হয়ে দেখল তার কীর্তি!

এ কেমন ক্ষমা?

সাধারণ কোনো নেতা নির্দোষ হয়েও ২৭ বছর জেল খেটে আসলে তাকে যে কারাবন্দী করেছে তার সঙ্গ ত্যাগ করে, প্রতিশোধ নেয় বা নিদেনপক্ষে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ম্যান্ডেলা যে অস্বাভাবিক রকম উদার একজন নেতা!

তিনি দূরদর্শিতা দেখালেন, তাই প্রতিশোধ, রাগ কিছুই দেখালেন না। উল্টো নিজে প্রেসিডেন্ট হয়ে ২৭ বছর আগে তাকে কারাবন্দী করা F.w. De klerk কে নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট বানালেন গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে। সকল শত্রুকে ক্ষমা করে দিলেন তিনি, এমন মহানুভবতা পৃথিবীর ইতিহাসে বড়ই বিরল।

ম্যান্ডেলা যখন প্রথম প্রেসিডেন্ট হন, দক্ষিণ আফ্রিকা তখন তুমুল বিপর্যস্ত একটি দেশ। বর্ণবাদ ছড়িয়ে গেছে সবদিকে, প্রকাশ্যে খুন-ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সবাই ধরেই নিয়েছিল, একটা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ কিংবা আর্মিদের ক্ষমতা নেয়া ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে কখনোই দক্ষিণ আফ্রিকার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এখানে ম্যান্ডেলা আবারও বিস্ময় দেখালেন। দেশটি থেকে বর্ণবাদ দূর করলেন কোনোরকম রক্তক্ষয় ছাড়াই। শান্তির বাণী ছড়িয়ে ধ্বংসপ্রায় একটা দেশকে উন্নত করার দিকে নিয়ে গেলেন মাদিবা। আর প্রমাণ করলেন, Positive Energy থাকলে সবই সম্ভব। নিজের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব থাকলে অনেক কিছুই করে ফেলা যায়। এ যেন ইচ্ছে থাকলে উপায় হয় প্রবাদটির আফ্রিকান প্রমাণ!

বন্ধুদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয়, মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়, এটি অনেক সময় কদর্য একটা আকারও নিয়ে নেয়। অথচ ম্যান্ডেলা তাকে ২৭ বছর জেলে বন্দী করা মানুষটার সাথে মিলে দেশ চালিয়েছেন! এখান থেকে তোমাদের অনুপ্রেরণা নেয়া উচিত, যে ম্যান্ডেলা পারলে তুমিও পারবে।

জীবনে সুখী থাকার খুব দরকারি একটা টিপস হলো Negative Energy কে নিজের ভেতর থেকে বের করে দেয়া। জীবন থেকে সব রকম নেতিবাচক চিন্তা চলে গেলেই সুখী, সুন্দর জীবন হবে সবারই।

.

আমার ভর্তি যুদ্ধের গল্প

আমার ভর্তিযুদ্ধের শুরু টা হয় একটা বড় ধাক্কার মধ্য দিয়ে। সে এমন এক কাহিনি, ভাবলে এখনো অবাক লাগে!

খুলেই বলি। সবে এইচ,এস,সি দিয়েছি। পরীক্ষার পরে যা হয় আর কী, মনের মধ্যে বেশ ফুরফুরে একটা ব্যাপার হচ্ছে। এর মধ্যেই আবু আম্মু ধরে বেঁধে একটা ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি করে দিলেন। বেশ নামজাদা কোচিং, একগাদা স্টুডেন্ট। সবার মুখ ভার, সবাই এমন সিরিয়াস চোখে তাকিয়ে আছে যেন প্রথম দিনই তাদের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে! আমার উলটো এসব দেখে বেশ হাসিই লাগল, মনে হলো এরা অকারণেই এত সিরিয়াস, এসব কদিন পরেই কেটে যাবে!

প্রথম ক্লাস। বোরিং লেকচার হচ্ছিল ভেক্টর নিয়ে। এই চিহ্ন ওই চিহ্ন দেখতে দেখতে মাথাটা একটু ধরে এসেছিল। একটু পরেই দেখি, সেই ইন্টারনেট মিমগুলোর মতোই ফাঁকা বোর্ড ভরে উঠেছে একগাদা আঁকিঝুঁকিতে! মাথায় হাত আমার, কিছুই তো বুঝলাম না! একটু পর আবার। ভাইয়া বলে বসলো, পরের ক্লাসে পরীক্ষা নেয়া হবে। আমি আগাগোড়াই ফাঁকিবাজ মানুষ, মনে করলাম এমনিই হয়তো ভয় দেখাচ্ছেন ভাইয়া।

পরের ক্লাস। ভাইয়া এসেই বললেন পরীক্ষা নেবেন। আমার তো মাথায় বাজ পড়ল, প্রিপারেশনও তো নেইনি সেরকম! যাহোক, পাশে দেখি একজন দুটো ক্যালকুলেটর বের করলো। আমি দেখে অবাক, একটা ক্যালকুলেটর দিয়েই তো হয়ে যায়, দুটো কেন দরকার হবে? মুচকি হেসে ভাবলাম, এই ছেলে পাক্কা নার্ড মনে হয়! ওমনি দেখি পাশের জনও দুটো ক্যালকুলেটর বের করলো! সেটা আবার যে সে ক্যালকুলেটর নয, ES 991 লেখা শক্তিশালী একটা ক্যালকুলেটর। আর আমি? একটাই ক্যালকুলেটর, সেটা আবার MS 100, নিজেকে মনে হলো Nokia 1100 ফোন নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে এসেছি আইফোনের সাথে!

পরীক্ষার প্রশ্ন বেশ কঠিন ছিল। অন্তত আমার কাছে আর কী! প্রিন্স নেইনি, আর জীবন তো রূপকথা না, তাই আমি এই পরীক্ষায় এক বিশের বেশি আর তুলতে পারলাম না। শুধু এই পরীক্ষাই না পায়। অনেকগুলো পরীক্ষায় বিশ পার হচ্ছিলই না! এখানে একটা সমস্যা ছিল ৮ পরীক্ষার নম্বরগুলো বাসায় টেক্সট করা হয়। আমি বেঁচে গিয়েছিলাম কারণ। বাসার নম্বর দেয়া ছিল আম্মুর, আর আম্মু কখনো টেক্সট চেক করেন না। কিন্তু ওই যে, চোরের দশ দিন গৃহস্থের একদিন! একদিন ফেঁসে গেলাম। আমিও। আব্বু আম্মুর ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিলেন, হুট করে তার চোখে পড়ল একগাদা মেসেজ। তিনি বলে উঠলেন, আরে! এতগুলো টেক্সট এগুলো কিসের নম্বর!

ডাক পড়ল আমার। তিনি তার সুপুত্রকে ডেকে বললেন, বাবা, এ কী অবস্থা তোমার নম্বরের?

আমি এযাত্রায়ও বেঁচে গেলাম এটা বলে, যে পরীক্ষাগুলো সব হয় বিশ নম্বরে! ভাগ্যক্রমে ওই মেসেজগুলোতে মোট নম্বর বলা হতো না, আর এই সুযোগে আরো একটাবার রক্ষা পেয়ে গেলাম!

বিড়ালেরও নয়টা জীবন থাকে, আমার ভাগ্য কী আর সবসময় ভালো হবে? হয়ও নি। সর্বনাশটা হলো অন্য আরেকদিন। আমার এক মহা ট্যালেন্টেড বন্ধু আমার সাথেই নিয়মিত পরীক্ষা দিতে যেত। তো একদিন আমাদের গাড়ি আসতে দেরি হয়েছে, আমার বন্ধুটি বাসায় এসে বসেছে। অমনি আব্বুর আক্রমণ, পড়ালেখা এবং অন্য সব নিয়ে। কথায় কথায় তিনি বললেন, বাবা, তোমার পরীক্ষার নম্বর কেমন আসছে?

বন্ধুটি ইনিয়ে বিনিয়ে বলল, যে তার পরীক্ষা ভালো হচ্ছে না, নম্বর কম আসছে। এই যেমন গত পরীক্ষাতে মাত্র ৫৭ পেয়েছে সে!

আন্ধু আমার দিকে, আমি আব্বুর দিকে- এমন এক অবস্থা হয়ে গেল। ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালগুলোর মতোই! বাংলায় বজ্রাহত বলে একটা কথা আছে, আমার অবস্থা তখন তেমনই। আব্বু কিছু বললেন না। সন্ধ্যায় কোচিং থেকে ফিরলাম, ফিরে এসে শুরু হলো আমার উপর ঝাঁড়ির রোলার কোস্টার চালানো।

আব্বু সুন্দর করে বললেন, বাবা, আমাদের গ্রামে হালচাষ করার লোকের একটু কমতি দেখছি। তুমি না হয় যাও, হালচাষ কর? পড়ালেখায় তো মনে হচ্ছে হবে না তোমার!

আম্মু সাধারণত এসবে আমার পক্ষ নেয়, এবার দেখি আম্মুও আব্বুর সাথেই দুকথা শুনিয়ে দিল! সবমিলিয়ে বিশাল হতাশাজনক ব্যাপার। না, ধরা খেয়েছি সেজন্যে নয়, আসলেই কোথাও চান্স না পেলে তো মহা বিপদ! এই যে একটা ধাক্কা খেলাম, এই ধাক্কাটা পরে গিয়ে আমার অনেক কাজে লেগেছে।

সত্যি বলতে কী, এমন হতাশার পরে অনেকেই হার মানে, হাল ছেড়ে দেয়। আমি দেইনি। সব পরীক্ষায় গড়ে বিশ পেতে পেতেই একটা সময় বুঝতে পেরেছি কীভাবে ভালো করতে হবে, শেষমেষ তো আইবিএর মতো ভালো একটা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েই গেলাম!

ভর্তি যোদ্ধাদের উদ্দেশে তাই বলছি, পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই। ভর্তি পরীক্ষার সময়টা সবার জন্যই খুব কঠিন যায়, তাই বলে হাল ছেড়ে দিও না। আমি যদি একশতে বিশ পেয়ে ভালো কোথাও সুযোগ পেয়ে যেতে পারি, তুমি কেন নও?

অনেককেই দেখি হতাশ হয়ে যায় তাঁদের এস,এস,সি বা এইচ,এস,সির রেজাল্ট ভালো না হলে। মজার ব্যাপার কী জানো? রেজাল্ট খারাপ নিয়েও কিন্তু অনেকে চলে যায় হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানে! চোখ রগড়ে ওঠার মতো কথা, তাই না? সত্যিটা হলো, একাডেমিক এসব হতাশা ভুলে নিজেকে বিশ্বের জন্যে প্রস্তুত করলে বড় মঞ্চে আরো বড় সাফল্য আসবে তোমার। সে সাফল্যের স্বাদ বড় মধুর!

.

এবার মানসিক অশান্তিকে জানাও বিদায়

বেশ কিছুদিন আগের কথা। 10 Minute School এর তখন কোনো অফিস ছিল না। একটা ফেসবুক গ্রুপ ছিল, সেখানে সব মেম্বাররা ছিল। ওই গ্রুপে কে কোন কাজ করবে, কি কি কাজ হবে সবকিছুর হিসেব রাখা হতো। যখন যার কোন এনাউন্সমেন্ট দেয়া লাগবে, সে তখন ফেসবুকে লাইভে গিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে দিত। এরকমই একটা লাইভ সেশনে একদিন শামির মোন্ত জিদ বিভিন্ন স্কিল শেখাচ্ছিল, সবাই গোগ্রাসে গিলছিল ওর লেসনগুলো।

লাইভ ভিডিওর একেবারে শেষদিকে ছিল আমাদের মেন্টাল হেলথ নিয়ে ডিসকাশন। এখানেও কথা বলছিল বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের হতাশার কারণগুলো। তাদের Anger, Frustration, Stress. এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে দেখা গেল যে, কমবেশি সবারই এ সমস্যাগুলো রয়েছে।

সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো, এই মানসিক সমস্যাগুলো চলে যায় না। আমরা যতই ভুলে থাকতে চাই, এরা আরো তত বেশি জেঁকে বসে। একটা সময় পারমানেন্টলি এই সমস্যাগুলো আমাদের ভেতরে গেঁথে যায়। ডিপ্রেসড জিম্বি হয়ে ঘুরে বেড়ায় তরুণ প্রজন্ম।

আমরা চিন্তা করে দেখলাম, এর একটা সমাধান দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ, শামির বুদ্ধি দিল, এখনই আমরা একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ থ্রেড খুলে ফেলি না কেন! এই থ্রেডে আমরা প্রতিদিন তিনটা করে কাজ বা ঘটনার নাম বলব, যার জন্যে আমরা জীবনের কাছে কৃতজ্ঞ। ব্যাপারটা শুনতে অবাক লাগলেও, ধীরে ধীরে দেখা গেল আমাদের সবার জীবনেই তিনটার অনেক বেশি কারণ রয়েছে বাকি জীবনভর কৃতজ্ঞ থাকার!

এতে যে ব্যাপারটা হলো, এই সুখের অভিজ্ঞতা, এই কৃতজ্ঞতার সন্ধান করতে গিয়ে সবার মনটাই ভালো হয়ে যায় আর তাতে এই যে মানসিক সমস্যাগুলো, ডিপ্রেশন বা স্ট্রেস আর হানা দিতে পারছে না কাউকেই! রাতারাতি ডিপ্রেসড প্রজন্ম হয়ে উঠল প্রাণোচ্ছল এক প্রজন্ম, আনন্দের আর শেষ নেই!

তুমি আর তোমার বন্ধুদের মাঝেও কি এমন ডিপ্রেশন আর অন্যান্য মানসিক সমস্যা বিরাজ করছে? তোমারও কি মনে হচ্ছে এই Anxiety বা। ফ্রাস্ট্রেশন এর সাথে চলতে বড় কষ্ট হচ্ছে? তাহলে তুমিও তোমার বন্ধুদের নিয়ে শুরু করে দিতে পার এই প্রক্রিয়াটি, হাসি ফুটবেই তোমাদের মুখে! এছাড়াও আরো বেশ কিছু কাজ করতে পার এসব মানসিক সমস্যা দূর করতে, যেমন :

১. নিয়ন্ত্রিত জীবন :

একটি সুন্দর নিয়ন্ত্রিত জীবন থাকলে কিন্তু হতাশা ঘিরে ধরতে পারে না। নিজের জীবনের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকলে কাজ কর্ম করেই আসলে দিন। কেটে যাবে, ডিপ্রেশন পাত্তাই পাবে না!

২. অনিদ্রাকে না বলো :

এটি একটি পরীক্ষিত ব্যাপার যে, বেশি রাত জাগলে সেটি মনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, জন্ম নেয় বিভিন্ন মানসিক সমস্যা। তাই রাত জাগা নিশাচর পাখি না হয়ে ঠিক সময়ে ঘুমিয়ে গেলে মন সুস্থ থাকবে, সুস্থ থাকবে দেহ। ফলশ্রুতিতে ফ্রাস্ট্রেশন দুরেই থাকবে!

৩. নৈরাশ্যবাদী হবে না

একটা গ্লাসের অর্ধেক পানি ভর্তি। গ্লাসটি সম্পর্কে একজন আশাবাদীর বক্তব্য হবে যে, গ্লাসটি অর্ধেক ভর্তি। আর একজন নৈরাশ্যবাদী বলবে, গ্লাসের অর্ধেক খালি। তুমি অবশ্যই নৈরাশ্যবাদী হবে না। কারণ নিরাশা একবার যদি নিজেকে ভর করে তাহলে অন্যান্য মানসিক সমস্যাগুলো এসে জুড়বে সাথে সাথে।

৪. নিজেকে ব্যস্ত রাখো

Procrastination বা অকারণে সময় নষ্ট করাটা এই প্রজন্মের জন্যে ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কাজ না করে সময় নষ্ট করার পরপরই একটা সময় নিজের মধ্যে হতাশা কাজ করে। মনে হয় জীবন নিয়ে কী করলাম আমি? এখান থেকেই নানান মানসিক সমস্যা এসে যোগ দেয়। নিজেকে সবসময় কিছু না কিছু করে ব্যস্ত রাখতে হয় তবেই না রক্ষা চি এসব সমস্যা থেকে। নতুন কিছু করার চেষ্টা কর, নতুন নতুন আইডি জন্ম দিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখো।

তুমি নিজেই কিন্তু নিজের হতাশাকে সাফল্যে রূপান্তর করতে পার, দরকার কেবল একটু নিজের ওপরে নিয়ন্ত্রণ আর আত্মবিশ্বাস।

.

একটি ভিডিও বাঁচাতে পারে লক্ষ প্রাণ

কিছুদিন আগে কানাডায় একটা স্টুডেন্ট কনফারেন্সে গিয়েছিলাম। সেখানে বক্তৃতা দিয়েছিল এক ফ্রেঞ্চ ভদ্রলোক। হাস্যোচ্ছল মানুষ, তার সাথে একটা সেলফি তোলার সুযোগও হয়েছিল। সে হলো আমরা যাকে বলি ইন্টারনেট সেলিব্রেটি। সেসব অনেক দিন আগের কথা। এইতো সেদিন একটা ভিডিও ইন্টানেটে খুব বেশি ভাইরাল হলো, সোমালিয়াকে নিয়ে ভিডিও। দেখেই মনে হলো, আরে! এ তো জেরোম জার! খুব আগ্রহী হয়ে শুরু করলাম ভিডিওটি দেখা। দেখে মনে মনে তাকে একটা স্যালুট জানালাম, অসাধারণ কাজ করেছেন তিনি! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় যে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলা যায়, সেকথা এখন আর পুরনো নয়। কিন্তু জেরোম জার এবং আরো অনেকেই এই মাধ্যমটির সহায়তাকে নিয়ে গেছেন একেবারে অন্য এক মাত্রায়। জেরোমের গল্প বলি :

১. সোমালিয়ার কান্না

সোমালিয়ার নাম আমরা শুনেছি দুর্ভিক্ষপীড়িত আফ্রিকান একটি দেশ হিসেবে, গৃহযুদ্ধ আর অপ-রাজনীতির চাপে যে দেশটির মানুষগুলোর জীবন দুর্বিষহ। এ মুহূর্তে সেখানে একটা দুর্ভিক্ষ চলছে, আর দেশটার অর্ধেকের বেশি মানুষ সেখানে না খেয়ে আছে। ভয়ানক অবস্থা। কিছুদিন আগে একটা ছোট বাচ্চা পানির অভাবে মরে গেছে, আর এই খবরটা জেরোমের কানে এসেছিল। একজন সাদা মনের মানুষ জেরোম তখন গুগল করতে শুরু করলো, কীভাবে এমন ভয়ানক দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচানো যায় সোমালিয়ার নিরীহ মানুষগুলোকে? অবাক হয়ে জেরোম আবিষ্কার করল যে, সাহায্য তো অনেক দূরের কথা, দেশটিতে বিমানব্যবস্থা বলতে মাত্র একটি এয়ারলাইন্স! Turkish Airlines নামে সেই এয়ারলাইন্সকে কেন্দ্র করে তাই জেরোম জার প্ল্যান করলেন সোমালিয়াকে বাঁচানোর।

বিশ্ব কাঁপানো এক ভিডিওঃ যেই ভাবা সেই কাজ, জেরোম তখনই এম ভিডিও বানিয়ে ফেললো। ভিডিওর শেষে দিল একটা হ্যাঁশট্যাগ, অছন ব্যাপার, এই এক হ্যাঁশট্যাগই বদলে দিল অনেক কিছু। তার পাশাপানি অন্যান্য সেলিব্রিটিরাও শেয়ার দিল এই ভিডিওটি, তারাও শুরু করল এই হ্যাঁশট্যাগ দিয়ে সোমালিয়াকে বাঁচানোর আকুতি।

২. রাজি হলো সবাই

অবাক কান্ড, ব্যাপারটা টার্কিশ এয়ারলাইন্সের কান পর্যন্ত গেল। তারা জেরোম জারের সাথে কথা বলল, এবং খুশিমনে রাজি হলো তাদের একটি কার্গো বিমান যেটা সোমালিয়াতে যায়, পুরোপুরি কার্গো ফ্রি করে জেবোমদের দিতে। কার্গোর ধারণক্ষমতা ছিল ৬০ টন। পুরোপুরি ফাঁকা এই কার্গো বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী আর খাবার নিয়ে ভর্তি করতে আবার দরকার প্রচুর টাকা। সেগুলো কোথায় পাওয়া যাবে?

৩. জেরোমের আরেক উদ্যোগ

জেরোম বানিয়ে ফেলল আরেকটা ভিডিও। এখানে সে পুরো বিশ্বকে দেখালো যে, ৬০ টন কার্গো ফাঁকা রয়েছে, এখন মানুষের সাহায্যই পারে এই কার্গোটি ভর্তি করতে। সে এবং তার এই Campaign এর সবাই মিলে তাই শুরু করল Crowd funding, যেখান থেকে টাকা উঠলেই কার্গোর জন্যে সবকিছু কেনা যাবে।

৪. সাফল্য

তাদের লক্ষ্য ছিল এক মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠন এবং পনেরো দিনে যেন সেটি তুলে ফেলা যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তিন দিনেই জেরোম ও তার ক্যাম্পেইন তুলে ফেলল দু মিলিয়ন ডলার বা ১৬ কোটি টাকা! পুরো টাকাটা দিয়ে প্রচুর রিলিফ কেনা হলো, শুকনো খাবার কেনা হলো। এক কার্গোর আইডিয়াতেই দুর্ভিক্ষের কষ্টের অনেকটা উপশম হলো সোমালিয়ার দরিদ্র সেসব মানুষের।

আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি এখনো ফোনে আমার সাথে জেরোমের সেই সেলফি দেখছি, আর জেরোম সেই ফোন আর একটা ক্যামেরার সাহায্যে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলছে! অবাক হতেই হয়!

আমরা সবাই হয়তো জেরোমের মতো ইন্টারনেট সেলিব্রেটি নই। আমাদের ফেসবুক পোস্ট, ইন্সটাগ্রামের ছবি হয়তো তেমন শেয়ার হয় না। কিন্তু সবাই মিলে যদি এগিয়ে আসি যেকোনো সামাজিক সমস্যার পরিবর্তনে, তাহলেই কিন্তু বিপ্লব আনতে পারি আমরাও, সেটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যেই!

.

দোষটা কি আসলে তেলাপোকার?

গুগলের নতুন সিইও সুন্দর পিচাই। অসম্ভব গুণি এই মানুষটির একটি গল্প খুব জনপ্রিয় হয়েছিল কিছুদিন আগে। গল্পটি বলতে গেলে অনেকের ধারণাই পালটে দিয়েছিল নিজের জীবন সম্পর্কে! অথচ গল্পটি ছিল ছোট একটি তেলাপোকাকে নিয়ে।

সুন্দর পিচাইয়ের অভ্যেস প্রতিদিন সকালে একটা নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টে বসে সকালের নাস্তা করা। যেখানে বসে কফির কাপটা হাতে নিয়ে। চারপাশের মানুষগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে তার বড় ভালো লাগে। কোনো এক সকালে পিচাই যথারীতি সেই রেস্টুরেন্টে এসে বসেছেন। তার ঠিক পাশের টেবিলেই দুজন ভদ্রমহিলা বসেছেন। সকাল বেলা, রেস্টুরেন্ট বেশ জমজমাট।

এমন সময় হলো কি, কোত্থেকে একটা তেলাপোকা উড়ে এসে ঠিক সুন্দর পিচাইয়ের পাশের টেবিল, মানে ওই ভদ্রমহিলাদের টেবিলে বসল। ভদ্রমহিলা দুজন তো রীতিমতো লঙ্কাকান্ড বাধিয়ে ফেললেন। চিৎকার চেঁচামেচি করে সে এক ভয়ানক অবস্থা! ছোট্ট তেলাপোকা, সে এই শোরগোলের মধ্যে ভয় পেয়ে দিল এক উড়াল। পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এক ওয়েটার। হাত ভর্তি গরম খাবার। একটুখানি এদিক সেদিক হলেই খাবারসহ পড়ে যেতে হবে তাকে। তেলাপোকা উড়ে এসে সেই ওয়েটারটির কাঁধে এসেই বসল। ততক্ষণে ভদ্রমহিলাদ্বয়ের চিৎকারে পুরো রেস্টুরেন্টের নজর ওই তেলাপোকার দিকে। সবাই রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে ওয়েটার কী করে দেখার জন্যে।

ওয়েটার করলেন কি, খুব শান্তভাবে তার হাতের খাবার পাশের টেবিলে রাখলেন। তারপর আরো শান্ত ভঙ্গিতে এক টোকায় তেলাপোকাটাকে কাঁধ থেকে পুরো রেস্টুরেন্টের বাইরেই ছুঁড়ে ফেরে দিলেন। তার পরের মুহূর্তেই সে আবার খাবার পরিবেশন শুরু করলো, যেন কিছুই হয়নি এতক্ষণ!

ব্যাপারটাতে সবাই বেশ মজা পেলেও সুন্দর পিচাইয়ের মনে তখন আরো গভীর একটা বিষয় চলছে। তার মনে হলো, ভদ্রমহিলাগুলোর চিৎকারে কোনো লাভ তো হয়ইনি, তাতে অহেতুক গোলযোগ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ঠান্ডা মাথায় ওয়েটারের দারুণ সিদ্ধান্তে ব্যাপারটা আর। কোনোরকম ঝামেলায় গড়ায়নি!

পিচাইয়ের মনে হলো, আমাদের জীবনটাও কিন্তু এরকমই! যেকোনো সিচুয়েশনে আমরা যদি অকারনে React করি তাহলে ব্যাপারটা আরো খারাপের দিকে গড়াবে। কিন্তু সেখানে যদি আমরা Respond করি, তাহলে কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই অন্যরকম হয়ে যাবে! ছোট্ট দুটি শব্দ React আর Respond, কিন্তু দুটির পার্থক্য পুরো ঘটনাকেই পালটে দেয়।

এক তেলাপোকার গল্প থেকে কিন্তু আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমাদের সমাজে নতুন কিছু করতে গেলে, নিজের মত চলতে গেলে অনেকে অনেক কিছুই বলে। মানুষের সমালোচনার কোনো শেষ নেই, সমালোচনা চলতেই থাকে। তুমি যেভাবেই থাকো না কেন, সমাজের কেউ

কেউ সেটি নিয়ে একটু হলেও ভ্রম্নকুটি করবেই! এটা বলতে গেলে একটা রীতি হয়ে গেছে আমাদের সমাজের।

এই সমালোচনা, তিরস্কার, ভ্রূকুটি এগুলো হচ্ছে ওই তেলাপোকাটার মতো। এরা যেকোনো জায়গা থেকে কোনো না কোনোভাবে উঠে আসবেই! কিন্তু তুমি নিজেকে ওয়েটারের জায়গায় দেখবে, নাকি ওই ভদ্রমহিলার জায়গায় এটিই বদলে দেবে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি। ভদ্রমহিলা দুজন ভয় পেয়েছেন, অহেতুক চিৎকার করে লোকসমাগম করেছেন। তাতে কিন্তু তাদের খুব সম্মান বৃদ্ধি পায়নি!

আমাদের জীবনে আমরা এই ভদ্রমহিলাদ্বয়ের মত ভয় পেলে তাতে সমালোচনা আমাদের পেয়ে বসবে। আমাদের মনের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যাবে যে আমরা অকর্মা, কোনো কাজ পারি না, আমাদের দিয়ে কিচ্ছুটি হবে না। তাতে ক্ষতি বৈ লাভ কিছু হচ্ছে না।

অন্যদিকে তুমি যদি ওয়েটারের জায়গায় নিজেকে দেখ, ঠান্ডা মাথায় যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত থাকো, তাহলেই কিন্তু জীবন অনেক সুন্দর আর সহজ হয়ে ওঠে। ওয়েটার যেমন শান্ত হয়ে এক টোকা সব সমস্যার সমাধান করেছেন, তোমরাও তেমনি সমালোচনাকে তুড়ি মেনে উড়িয়ে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই! এতে যেটা হবে, তোমার আত্মবিশ্বাস থাকবে পরিপূর্ণ, পরের কাজগুলোতে আরো সাহস করে আরো ভালো কাজ করতে পারবে! দারুণ হবে না সে ব্যাপারটা?

সুন্দর পিচাইয়ের গল্পটা এজন্যেই বলা যে, আমাদের জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে সমালোচনা আর তিরস্কার। এসবের ভারে নুয়ে না পড়ে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে আপন আত্মবিশ্বাসে। তবেই না লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারবে তোমরা!

.

গোলাপি হাতি থেকে রক্ষা পাওয়ার রহস্য

আমার এক স্যার একদিন আমার উপর ছোট্ট একটা এক্সপেরিমেন্ট করেন। তিনি আমাকে বলেন, আয়মান, তুমি একটা কাজ কর। চোখ বন্ধ করে যেকোনো কিছু নিয়ে চিন্তা কর। আমার তখন সামনে পরীক্ষা, সেটি নিয়ে মহা দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করছে। আমি পরীক্ষা নিয়েই ভাবতে শুরু করলাম। খানিক বাদে স্যার আবার বলে বললেন, কিন্তু আয়মান, একটা নিয়ম আছে। তুমি যা কিছু নিয়েই ভাবো, গোলাপি হাতি নিয়ে চিন্তা করাই যাবে না।

কিছুক্ষণ পরে স্যার চোখ খুলতে বললেন। আমি একরাশ স্বস্তি নিয়ে চোখ খুলতেই স্যারের প্রশ্ন : তাহলে একবার বল, এতক্ষণ কী নিয়ে চিন্তা করলে?

আমাকে বলতেই হলো যে, স্যার ওই গোলাপি হাতির নিয়মটা বলার পর থেকে মাথায় শুধু গোলাপি হাতিই ঘুরছে, এমনকি চোখ খোলার পরেও! স্যার মৃদু হেসে বললেন, এরকমই হয়। এটাকে বলা হয় Pink Elephant Syndrome.

আমরা সবসময় সেটা নিয়েই ভাবি যেটা করতে মানা করা হয় আমাদের। এজন্যেই তোমাকে যদি কেউ বলে, দুঃখ করো না, তখন মনের মধ্যে দুঃখ আরো বেড়ে যায়!

স্যারের কথা শুনে আমার মনে হলো, আসলেই তো! স্যারের কথা কিন্তু একশো ভাগ সত্য! এরকম তো আমার সাথেও অনেক হয়! আমি যদি খুব ডিপ্রেসড থাকি, তখন যদি কেউ এসে বলে দোস্ত ডিপ্রেসড থাকিস না, প্রেসার নিস না, তখন কিন্তু আমার আরো বেশি খারাপ লাগে। বিষয়টা সেভাবে দেখলে আসলে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে মানুষগুলো কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেয়!

এতোকিছু ভাবার পর মাথায় আরেকটা বিষয় এলো যে এ সমস্যাটা থেকে আমাদের যে দুশ্চিন্তা, ফ্রাস্ট্রেশন আরো বেড়ে যায়, তার কি কোনো সমাধান নেই? ভাবতে ভাবতেই মনে হলো এরও একটা সমাধান আছে। আমার এমনটা হলে সে সমাধানটাই আমি কাজে লাগাতাম!

এমন একটা সমস্যা থেকে রেহাই পেতে হলে আসলে আমাদের এগোতে হবে ধাপে ধাপে। কয়েকটি ধাপে চেষ্টা করলে কিন্তু এই গোলাপি হাতি কাছ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। চলো জেনে নিই এ ধাপগুলো :

ধাপ-১ প্রথমেই চিন্তা করতে হবে, আসলে সমস্যাটা কী? তুমি যদি ডিপ্রেসড থাকো, যদি হতাশা তোমাকে ঘিরে থাকে, তাহলে সেসবকে দূর করার পরিবর্তে সেগুলো নিয়েই কাজ করে যাবার চেষ্টা করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ ধরনের সমস্যা জীবনে থাকবেই, এগুলো। নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে তোমাকে। কিন্তু শুধুমাত্র এসব নিয়ে চললেও কিন্তু হবে না আবার!

ধাপ-২ সমস্যাটা চিহ্নিত করার পর সেটি নিয়ে ভাবা যাবে না। সমস্যা কীভাবে দূর করব, সমস্যা আমার কী ক্ষতি করবে এসব নিয়ে ভাবতে থাকলে যত দিন যাবে তোমার চারপাশ ঘিরে শুধু সেই সমস্যাকেই দেখতে পাবে, আর কিছুর দেখা পাবে না। তাই সমস্যা নিয়ে না ভেবে সমস্যা সমস্যার জায়গায় আমি আমার জায়গায় মনে করে কাজ করে যেতে হবে।

ধাপ-৩ নতুন কোনো কাজে লেগে পড়তে হবে। কাজ বলতে কাগজ কলম পিষে অফিসের কাজ করতে হবে, তা কিন্তু নয়। নতুন কাজ হতে পারে যেমন খেলাধুলা করা, নতুন কোনো একটা গল্পের বই পড়া কোনো একটা মুভি দেখা। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে, আর সেজন্যেই এসব করার দরকার। এগুলো ছাড়াও তোমার পছন্দের যেকোনো কাজ করেও তুমি নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পার।

ধাপ-৪ নিজেকে যখন ব্যস্ত রাখতে শুরু করেছ, তখন দেখবে ধীরে ধীরে তোমার দুশ্চিন্তা, হতাশা এরকম সমস্যাগুলো আর তোমার কর্মব্যস্ততার সাথে পেরে উঠছে না। আর পারবেই বা কেন? তুমি তো মহাব্যস্ত তোমার কাজগুলো নিয়ে! এখন তোমাকে তুলনামূলক দরকারি কাজ শুরু করতে হবে। পড়ালেখা এবং তোমার নিজের জন্যে দরকারি সব কাজ শুরু করে দিতে হবে এখনই!

ধাপ-৫ নিজেকে ব্যস্ত রাখলে তুমি, পাশাপাশি নিজের জন্যে একটু সময়ও বের করে ফেলেছ তুমি। আর কী লাগে? এই সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করলেই দেখবে তোমার এই যে দুশ্চিন্তা আর হতাশা সব চলে গেছে! কাজের চাপে তুমি সেটা টেরও পাওনি! এখন নিজের মত করে চলতে শুরু করবে তুমি আবার যদি কোনোদিন হতাশায় পড়, জানোই তো কি করতে হবে! সোজা ধাপ ১ এর চলে গেলেই কেল্লাফতে!

মন খারাপ, হতাশা, দুশ্চিন্তা, এসব আমাদের মানসিক ব্যাপার। এগুলোকে মন থেকে ঝেড়ে ফেলা বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। তাই এগুলো নিয়েই নতুন কোনো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে দেখা যাবে সব সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যায়।

.

পৃথিবীর সবথেকে ভালো আইডিয়াগুলো কোথায় পাওয়া যায়?

যদি প্রশ্ন করি, পৃথিবীর সবথেকে ভালো আইডিয়াগুলো কোথা থেকে আসে? অনেক রকমের উত্তর আসবে। কেউ বলবে বাথরুম থেকে, কেউ বলবে অবসর সময় থেকে, কেউ আবার ঠাট্টার ছলে বলবে বিয়ে করলে মাথায় অনেক ভালো আইডিয়া আসে! এমন অনেক রকম উত্তরের মেলায় সঠিক উত্তরটি কি জানো? পৃথিবীর সবথেকে ভালো আইডিয়াগুলো আসে। কবরস্থান থেকে। শুনে খুব অবাক হচ্ছো তাই না?

একটা ভিডিওতে দেখলাম এটাই বলা হয়েছে। যুক্তিটাও বেশ চমৎকার। আমাদের মাথায় দারুণ দারুণ সব আইডিয়া আসতে থাকে প্রায়ই। এই আইডিয়াগুলোর প্রায় সবগুলোই আমরা একটা সময়ে ভুলে যাই। যেগুলো ভুলি না, সেগুলোর কিন্তু প্রয়োগও করা হয় না বেশিরভাগ সময়েই। সব আইডিয়া এসে জমে মাথায়, আর এতো শত আইডিয়া মাথায় নিয়ে আমরা এক সময়ে মরে যাই। আমাদের সাথে সাথে আইডিয়াটাও কবরে চলে যায়। এজন্যেই বলা হয়েছে, সবথেকে ভালো আইডিয়াগুলোর সন্ধান মেলে কবরেই!

এর কারণটা কি জানো? কারণ হলো আমাদের দ্বিধা। ধরো, তোমার একটা ফাটাফাটি আইডিয়া আছে মাথায়। তুমি এমন একটা প্রজেক্টের প্লান করলে, যেটা পুরো ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম কমিয়ে দেবে সহজেই! আইডিয়া সুন্দর, চেষ্টা করলে হয়তো এগিয়ে যেতে পারবে তুমি প্লান নিয়ে। এসময়ে বাগড়া দেয় দ্বিধা। তোমার মধ্যে কনফিউশন শুরু হয়ে যায়–পারবে তো ঠিকমত সব কাজ করতে? ভুল হবে না তো? অর্থায়ন করতে সমস্যা হবে কি?

এতো শত দ্বিধা আর আমি কি পারবো? এমন প্রশ্নের ভীড়ে এক সময় কাজের আগ্রহটাই চলে যায়। তোমার দ্বিধাই জয়ী হয়, সেই প্রজেক্টে ধুলো জন্মে। একসময় সেটা আর কোনো কাজেই আসে না, তোমার প্লান তোমার মনেই রয়ে যায়। একটা সময়ে ওই ভিডিওর মতোই তোমার স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় তোমার সাথেই।

ওয়ারেন বাফেট একটা কথা বলেছিলেন, We dont see our lost opportunities, as we see our failures. সোজা একটা কথা, কিন্তু এর অর্থ অনেক গভীর। তুমি যখন কোনো কাজে ব্যর্থ হও, তখন তোমার চোখে পড়ে সেই ব্যর্থতাটাই। সেখানে তোমার ফোকাস রেখে তুমি সিদ্ধান্ত নাও, তাই ওই ব্যর্থতাকে ফলাফল ভেবে তুমি আর সেই কাজে এগোতে চাও না। একবার ভেবে দেখ তো, তুমি যদি ওই ব্যর্থতার দিকে চোখ না দিয়ে যে সুযোগটা হাতছাড়া হতে পারে সেদিকে চোখ দাও, তাহলে কিন্তু তোমার ওই কাজটা করার প্রতি আগ্রহ আরো বেড়ে যাবে!

ব্যর্থতা আসতেই পারে, হতাশ হতেই পার তুমি। কিন্তু তাই বলে যদি হাল ছেড়ে দাও, তাহলে যে সুযোগটা হাতছাড়া হতে যাচ্ছে, সেই সুযোগ আবার পাবে কি তুমি? এটুকু ভেবেও কিন্তু এগিয়ে যেতে পার তুমি, সাফল্য আসতে বেশি দেরি হবে না!

আইডিয়া সবার মাথায় আসে না, তাই তোমার আইডিয়াগুলো হারিয়ে গেলে সেগুলো আরেকজনের মাথা থেকে আসবে, সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। নতুন পৃথিবী খুব প্রতিযোগিতামূলক, এখানে তোমার একটা ভালো আইডিয়া তোমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে অন্যদের থেকে। আইডিয়াগুলোকে তাই হারিয়ে যেতে দিও না।

তোমার জীবনে ব্যর্থতা আসতেই পারে। টেন মিনিট স্কুল শুরু করার সময় হাজারটা ব্যর্থতা এসে জুড়েছিল আমাদের সাথে। সব সমস্যার সমাধান। হয়েছে, আমরা একবারও হাল ছাড়িনি। আর হাল না ছাড়ার পর একটা সময়ে টেন মিনিট স্কুল এখনকার অবস্থায় এসেছে, পরিচিতি পেয়েছে। আমাদের আইডিয়াগুলো যদি আমরা এভাবে কাজে না লাগাতাম, তাহলে হয়তো টেন মিনিট স্কুলও পড়ে থাকত কোনো খসড়া খাতায়। তা হয়নি, কারণ, হাল ছাড়েনি টেন মিনিট স্কুল টিম।

তোমাদের তাই বারবার একটা কথাই বলব, হাল ছেড় না। আইডিয়াগুলোকে হারিয়ে যেতে দিও না। নিজের স্বপ্নকে ফলো কর, সাফল্য দেখা দেবেই!

.

সুন্দর মানসিকতা গড়ে তোলার ৬টি উপায়

Great minds talk about ideas; average minds talk about events; small minds talk about people.

এই উক্তিটা প্রথম যেদিন শুনেছিলাম, মনে হয়েছিল কেউ যেন সপাটে একটা চড় মেরেছে আমাকে। নিজের কাছেই মনে হয়েছিল, আমিও তো প্রায়ই মানুষকে নিয়ে একথা সেকথা বলি, সমালোচনা করি। ব্যাপারটা বেশ খারাপ লেগেছিল তখন। আমার বন্ধু শামিরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যে এমনটা আসলে কেন হচ্ছে আমাদের সাথে? সবজান্তা শামিরের উত্তর ছিল, যে আমরা আসলে নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে প্রায়ই সংশয়ে থাকি, নিজের আত্মবিশ্বাসটা থাকে না। এইজন্যেই অন্য কারো নামে খারাপ কিছু বললে বা সমালোচনা করলে এক ধরনের আত্মতুষ্টি পাওয়া যায় আর কী।

ভেবে দেখলাম, কথা কিন্তু মিথ্যা না। ছোটবেলায় যখন মা এসে বলতো, স্কুলে ফার্স্ট হতে পারিস না কেন? তখন আমার অজুহাত তৈরিই থাকতো, যে ফার্স্ট বয়ের অনেক টিচার, তার আসলে ব্রেইন নেই, টিচারের জোরে ফার্স্ট হয়। কলেজ বা স্কুলে কো-কারিকুলার কোনো কাজে কেউ ভালো করলে আমরা বলতাম, ও তো পড়াশোনায় অনেক বাজে, এজন্যে ডিবেট করে নাম কুড়াচ্ছে। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কম্পিটিশনে যখন কোনো প্রাইজই আনতে পারছিলাম না, তখন বন্ধুদের বলতাম, আরে দোস্ত, আমার আইডিয়াটা সবচেয়ে বেশি ব্রিলিয়ান্ট ছিল, জাজগুলো সেটা বুঝতেই পারলো না!

আসলে ব্যাপারটা সত্যি। আমরা অন্যদের ব্যাপারে খারাপ কথা, সমালোচনা করে নিজের দোষগুলোকে, নিজের অপ্রাপ্তিগুলোকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করি। তাই Great Mind তো পরের কথা, অন্তত Small Mind যাতে আর না হতে হয়, সে চেষ্টা টা তো করাই যায়। সমস্যা হলো, অন্যদের নিয়ে কথা বলাটা আমাদের একরকম অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। কী করে রক্ষা পাওয়া যায়। এমন অভ্যাস থেকে? এই প্রশ্নের কয়েকটি সমাধান রয়েছে।

১. সংকীর্ণমনা হবে না

নিজের মনকে ছোট্ট খাঁচায় বন্দি করে রাখা যাবে না। শুধুমাত্র শোনা খবরে বিশ্বাস করতে হবে, এমনকোনো কথা নেই কিন্তু! তথ্যের এই যুগে চেষ্টা করো নিজেকে ছড়িয়ে দেয়ার, যতোটা পার তথ্য জেনে নেবার। এতে যেমন তোমার জ্ঞান বাড়বে, তেমনি বিবেকবোধ আরো উন্নত হবে, অন্য মানুষকে নিয়ে কথা বলবার ইচ্ছটাই থাকবে না!

২. গসিপ থেকে দূরে থাকো

মানুষ তোমাকে নিয়ে গসিপ করতেই পারে, তোমার পেছনে তোমার নামে আজেবাজে কথা ছড়াতে পারে। তার মানে এই নয় তুমিও তাদের নিয়ে গসিপ করা শুরু করবে। তাহলে ওদের সাথে তোমার পার্থক্য থাকলো কোথায়?

৩. মানুষ নয়, সমস্যার দিকে ফোকাস করো :

তোমার অফিসের বস কিংবা সহকর্মী কিংবা স্কুলের সহপাঠি কোনো কাজে ভুল করলে বা সমস্যা সৃষ্টি করলে তাদের সমালোচনা না করে সমস্যার দিকে নজর দাও। মানুষ ভুল করতেই পারে, অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাদের দোষ না দিয়ে সবার আগে সমস্যার সমাধানের দিকে ফোকাস করো।

৪. শুধু নিজেকে নয় বিশ্বকে নিয়ে ভাবো :

বর্তমান বিশ্ব কিন্তু খুব সুখে নেই। বিভিন্ন রকম দূষণ, দেশে দেশে যুদ্ধ, জঙ্গিবাদ থেকে শুরু করে নানা সমস্যায় পৃথিবী এখন জর্জরিত। তাই আশেপাশের মানুষদের সমালোচনায় তোমার সময় নষ্ট না করে শুরু করো বিশ্বকে জানার, বিশ্বের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করার। কারণ পরোক্ষভাবে হলেও বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর প্রভাব তোমার উপরেও পড়বে!

৫. নিজের ইচ্ছেমতো হুট করে সিদ্ধান্ত নেবে না

কোনো ঘটনা ঘটলে সেটি নিয়ে দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে চলে আসবে না। আগে ভাবতে থাকো কি বিষয়ক সমস্যা, এই নিয়ে বাকিদের কি মতামত। কেনো এই সমস্যা বা ঘটনাটি ঘটেছে, এবং এই নিয়ে কি করা যায় সমাধান হিসেবে। ঘটনার একদম মূলে চলে যাও, তবেই সত্যের সন্ধান পাবে।

৬. শুধু সমস্যা নয় সমাধানের দিকে তাকাও

আমাদের বড় একটা সমস্যা হলো কোনো বিপদ বা সংশয়ে আমরা সমাজ না খুঁজে একজন আরেকজনের দোষ খুঁজতে থাকি। এটাই আসলে আমাদের হিসেবে আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। এজন্যে যেকোনো সমস্যায় সমাধানের দিকে ফোকাস করা খুবই দরকারি। সমাধানের খোঁজ বের হলে কিন্তু আর মনের মধ্যে খচ খচ করবে না কার দোষ এটা খুঁজে বের করতে! আর এই সমাধান বা আইডিয়াই তোমাকে Great Mind. হতে সাহায্য করবে।

তুমি চাইলেই নিজেকে Poor Mind থেকে Great Mind এ পরিণত করতে পার, দরকার শুধু একটু চেষ্টা আর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। কথায় বলে, দৃষ্টিভঙ্গি বদলালেই বদলে যায় জীবন, তাই তুমিও বদলে যাও, হয়ে যাও একজন Great Mind এর মানুষ!

1 Comment
Collapse Comments

এই ব্যাপারটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ না পরলে কেউ বুঝবেই না !
এটা পরে আমার নিজেকে অনেক অপরাধি মনে হচ্ছে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *