০৫. সাধনা ও পরিশ্রম

পঞ্চম পরিচ্ছেদ
সাধনা ও পরিশ্রম

সাধনা ও পরিশ্রম ব্যতীত জগতে কোন উন্নতি হয় না। কপালের জোরে লক্ষ টাকা পাবে—এ কখনো বিশ্বাস করো না। যে কোন কাজই কর না, সম্যক পারদর্শিতা লাভ করতে হলে বহু বছর সাধনা করতে হবে।

ছোট নগণ্য ক্ষুদ্রকে ঘৃণা করো না। ক্ষুদ্রের সাহায্যেই বিরাটের সৃষ্টি। ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলি কাজে লাগালে জীবনে সোনা ফলাতে পারবে। রাতারাতি কেউ বড় মানুষ হয় না। হঠাৎ কোন সুবিধা কারো হয় না। হলেও তা বিশ্বাস করে নিজেকে দুর্বল করো না।

যারা কাপুরুষ তারাই ভাগ্যের দিকে চেয়ে থাকে। পুরুষ চায় নিজের শক্তির দিকে। তামোর বাহু, তামোর মাথা তামোকে টেনে তুলবে, তোমার কপাল নয়।

একদিন দুইদিন করে জীবনের দীর্ঘ সময় চলে যাচ্ছে-জগতে যারা বড়, তারা অপচয় সহ্য করবেন না।

ওয়াট যে সময় দোকানে বসে বেচাকেনা করতেন। সেই সময় তিনি রসায়নশাস্ত্র ও জার্মান ভাষা আলোচনা করে উভয় বিষয়েই পণ্ডিত হয়েছিলেন। তুমি এ কথা শুনে হয়ত বিস্মিত হবে। স্টিফেনসন ইঞ্জিনে কয়লা যোগাতেন। আর অঙ্ক করতেন।

যত সময় তুমি হাসিগল্পে ও ঠাট্টায় কাটিয়ে দাও-তার ভিতর থেকে বেশী নয়, এক ঘণ্টা সরিয়ে রাখা। সমস্ত দিনে-রাত্রে মাত্র এই এক ঘণ্টা যদি তুমি কোন কোন বিষয় আলোচনা করা দেখতে পাবে, দশ বছর পরে তুমি একজন বড় পণ্ডিত হয়েছ। বন্ধু ও সঙ্গীদের কাছে তোমার সম্মান বেড়েছে। হয়ত তুমি সমস্ত জগতের ইতিহাস জেনে ফেলেছ—অঙ্কশাস্ত্ৰে প্ৰভূত পণ্ডিত্য লাভ করেছ, একজন বিখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হয়ে পড়েছ কিংবা অর্থসহ সমস্ত কোরআন শরীফ বা গীতাখানা মুখস্থ করে ফেলেছ।

ডাক্তার ম্যাসন গাড়ীতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবার সময় একখানা বৃহৎ পুস্তক অনুবাদ করে ফেলেছিলেন। ডাক্তার ডারউইন বেড়াবার সময়েই তার অধিকাংশ বই লিখতেন। ডাক্তার বার্নে গান শিখাবার জন্য যখন এক ছাত্রের ইতালীয় ভাষার ব্যাকরণ।

এক উকিলের কেরানী বাসা থেকে অফিসে যাবার পথে শিখেছিলেন। গ্ৰীক ভাষা। ভাত খেতে ডাকলে ডিজুসে সব সময়েই দেরি করতেন। তার মানে, সে সময় তিনি বই লিখতেন। খাবার আগের সময়টুকুও বিনা কাজে ফেসে যেতে দিতেন না।

কামার ইলিহু বুরিট দোকান ঘরের ঠিকঠকির মধ্যে বসে আধুনিক ও পুরাতন ত্রিশটি ভাষায় পণ্ডিত হয়েছিলেন।

পথে যদি ৫০০ টাকা পাও তা হলে তোমার আনন্দের সীমা থাকে না। সময় রূপ অমূল্য রত্ন তোমার পায়ে জড়িয়ে পড়েছে, সেদিকে তোমার ভ্ৰক্ষেপ নাই। মানুষের কাছে টাকা চাও, সে তোমাকে ঘৃণা করবে। সময় সম্পদ নিয়ে তোমার দরজায় দাঁড়িয়ে-দয়া করে তার রত্ন উপহারগুলি গ্রহণ করা।

কতকগুলি যুবক বাক্সটারের কাছে দেখা করতে যেয়ে বলেছিল-মহাশয়! আমাদের ভয় হচ্ছে, আপনার সময় নষ্ট করছি। অভদ্ৰ (?) জ্ঞানী বাক্সটার বললেন-নিশ্চয়ই।

জ্ঞানী যারা তাঁরা নিরন্তর সময়ের প্রান্তর হতে মণি-মুক্তা কুড়িয়ে নিচ্ছেন। তুমি আমি সুযোগের আশায়, সময় নাই বলে বা দারিদ্র্যের মিথ্যা অজুহাতে বোকার মত দাঁড়িয়ে আছি। কাজ কর—কাজ কর—সব অবস্থায় সকল সময়ে যে কোন কাজ কর, তার ফল পাবে। প্রথম প্রথম হয়তো তোমার পরিশ্রম সার্থক হবে না-তাতে নিরাশ হয়ে না। বিখ্যাত সাহিত্যিক এডিসন স্পেকটেটর লিখে গৌরব অর্জন করবার আগে বস্তা বস্তা কাগজ লিখেছিলেন। সেইগুলি অকেজো ঘরের মধ্যে পড়ে থাকলেও, সেইসব মাবিশ লেখার ভিতরেই তাঁর গৌরব— উন্নতির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *