• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

কাক উড়ে গেলে তাল পড়ে যায় – বিশ্বজিৎ চৌধুরী

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » গল্প » কাক উড়ে গেলে তাল পড়ে যায় – বিশ্বজিৎ চৌধুরী

জানি বিশ্বাস করবেন না। তবু বলি, বাস টার্মিনালে এসে প্রথমেই যে মেয়েটাকে দেখে প্রায় চমকে উঠেছিলাম, চমকে ওঠা কেন, মুগ্ধ হয়েছিলাম বলা চলে, সেই মেয়েটাই উঠে বসেছেন আমার বাসটিতে, এবং আমার ঠিক পাশের আসনটিতেই। শুনতে বোকা বোকা মনে হবে, তবু নিরুপায় হয়ে কবুল করি, এত সুন্দর মেয়ে আমি আগে কখনো দেখিনি।

এত সুন্দর মানে, দীর্ঘাঙ্গীর দীর্ঘ কালো সোজাসাপ্টা চুল, বাড়তি একপরত কাজলে গভীর করে তোলা চোখ দুটিতে সব সময়ই যেন ঈষৎ কৌতুক। মুখের আদলটি একেবারেই সাদা-কালো যুগের বাংলা ছবির নায়িকাদের মতো। সে কারণেই হয়তো মনে হতে থাকে, আগে কোথাও, কখনো কি দেখেছি? কিন্তু আমি নিশ্চিত এ ধরনের সংশয় বা অনুমানের কথা তাঁর সামনে গিয়ে আপনি প্রকাশ করতে পারবেন না। এঁরা সে ধরনেরই মেয়ে যাঁরা এসব কথা শুনলে মুখের ওপর বলে বসেন-‘সুন্দরী মেয়ে দেখলে এ রকমই মনে হয়।’

নীল জিন্সের প্যান্ট আর বুকের ওপর কালো সুতোয় কাজ করা মেরুন রঙের একটি ফতুয়া পরেছেন-ওড়নাটি গলায় পেঁচানো, বেদেনীর কণ্ঠে জড়িয়ে যেমন ঝুলে থাকে সাপ। নিজের দৈর্ঘø সম্পর্কে কোনো সংশয় নেই বলে ফরসা পায়ে সরু ফিতের ফ্ল্যাট স্যান্ডেল।

টিকিট কাউন্টারের সামনে আমি তাঁর দৃপ্ত ও সাবলীল ভঙ্গি দেখেছি। এঁদের দিকে খুব বেশি তাকানো যায় না, চোখে চোখ পড়লে বিপদ, কেননা সেই দৃষ্টিতে থাকে তীব্র ভর্ৎসনা, যাতে নিজের মর্যাদা কমে যায় নিজের কাছেই। তবে ছলে-ছুতোয়, নানা অছিলায় যেটুকু লক্ষ করা সম্ভব তাতেও তাঁর শরীরের যথার্থ কাঠামোর প্রশংসা আপনাকে করতেই হবে, যেসব মাপজোখ দিয়ে আজকাল সৌন্দর্য যাচাই হয় নানাবিধ প্রতিযোগিতায়, সেই পরিসংখ্যান মেনেই যেন তৈরি এই তরুণীর শরীর।

আমার গন্তব্য কক্সবাজার, মেয়েটির এত দূর নাও যেতে পারে। তবে এই ভেবে ভালো লাগছে, অন্তত চট্টগ্রাম পর্যন্ত তো থাকছেনই সহযাত্রী। শীততাপ-নিয়ন্ত্রিত বাসগুলো খুবই আরামদায়ক, আসনগুলো পেছন দিকে অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়ে নেওয়া যায়। পার্শ্ববর্তিনী ছোট্ট রিডিংলাইট জ্বেলে বই খুলে বসেছেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কৃষ্ণকান্তের উইল। দেখে আমি মুগ্ধ, সাদা-কালো যুগের ছবির নায়িকার সাথে যে তুলনা টেনেছিলাম, তার একটা সার্থকতাও যেন পাওয়া গেল। সুনীল-শীর্ষেন্দু-হুমায়ূন রেখে একেবারে বঙ্কিম! নিজে আমি ব্যবসা প্রশাসন পড়েছি বাধ্য হয়ে। ভালো ছাত্র ছিলাম, অভিভাবকেরা চেয়েছিলেন আমি ভালো চাকরি করব। তাঁদের সেই চাওয়া এখন প্রায় পূর্ণ। যাকে তাঁরা জীবনের সাফল্য ভাবেন, আমি তার সিঁড়িতে পা দিয়েছি, এখন পেছন ফিরে আমার সাহিত্যপ্রীতির কথা মনে করে, কিংবা কী হতে চেয়েছিলাম ভেবে দুঃখ পাওয়ার কোনো মানে নেই। আমি এখন আত্মীয়-বন্ধুমহলে বিশেষ খাতির-যত্ন পাওয়ার মতো জায়গায় আছি। আমার পরিবার তো মনে হয় পাত্র হিসেবে আমার বাজারমূল্যের বিষয়টি রীতিমতো উপভোগই করছে। এত কিছুর পরও এ মুহূর্তে আমি কিন্তু মোটেও সপ্রতিভ নই।

সুন্দরী মহিলার কাছাকাছি আসা বা পাশে থাকায় এই এক সমস্যা, সৌন্দর্যের কাছে সবকিছু ্লান হতে থাকে। এই যেমন এখন মনে হচ্ছে, আমার উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত দু ইঞ্চি কম। যে অদ্ভুত প্রশ্নটা কখনো মাথায় আসেনি অর্থাৎ আমার নাকের নিচের গোঁফটা আমার চেহারার সাথে মানানসই কি না তাও এখন ভাবাচ্ছে আমাকে। কিন্তু শক্ত হতে হবে, নিজেকে প্রমাণের একটা ব্যাপার থাকছে এর মধ্যে। গুছিয়ে কিছু একটা বলা দরকার।
: বঙ্কিম বুঝি আপনার প্রিয় লেখক?
: না।
: আমার খুব প্রিয়, মানিক-তারাশঙ্করও··· আজকালকার লেখকদের কিছু তো পড়াই যায় না, তবে হাসান আজিজুল হক···আপনি আগুনপাখি পড়েছেন?
: না। সিলেবাসের বাইরে তেমন কিছু পড়া হয় না আমার।
কথাটি বললেন এমন দৃঢ় কণ্ঠে যেন মূর্খতাও অহঙ্কারের বিষয় হতে পারে। সুন্দরী গাধা কথাটি কি আর সাধে চালু হয়েছে। বুঝলাম বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী। মনের টানে না, অন্য কোনো বিভাগে সুযোগ না পেয়ে সাহিত্য পড়তে গেছেন।
: চট্টগ্রাম যাচ্ছেন না কক্সবাজার?
: কক্সবাজার, আমার বাড়ি ওখানে।
: ওহ, তাই নাকি, আমারও কক্সবাজার···
কথাটা কি একটু বেশি উল্লসিত হয়ে বলে ফেললাম? অনেককেই দেখেছি একই এলাকায় বাড়ি হলে পরস্পরের বিষয়ে উৎসাহী হয়ে ওঠেন, কিন্তু এ ব্যাপারেও মেয়েটি নিস্পৃহ। এ রকম অনাগ্রহী মুখের দিকে তাকিয়ে কথা চালিয়ে নিতে ভরসা হয় না।
এবার বইটা বন্ধ করেছেন, আড়চোখে দেখলাম হাতব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট আয়না বের করে একবার দেখে নিয়েছেন নিজেকে। তোমারও আয়না দেখতে হয় মেয়ে! রিডিংলাইটটা নিভিয়ে দিয়েছেন, মাথাটা একটু পেছনে হেলিয়ে দিয়ে বন্ধ করেছেন চোখ।
ঢাকায় যানজট ছাড়িয়ে এসে এখন বাস ছুটছে সাঁই সাঁই। এতক্ষণ অন্য যাত্রীদের দিকে তাকানোর ফুরসত হয়নি আমার। এখন দেখি তাঁদের অধিকাংশই নিদ্রিত। এই ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারি না, রাতের বাসে বা ট্রেনে চাপলে প্রথম সুযোগেই ঘুমিয়ে পড়তে চান যাত্রীরা, অথচ বাড়িতে এত তাড়াতাড়ি বিছানায় যান না কেউ।

চলন্ত এই নিদ্রাগারে আমিও বা কতক্ষণ আলাদা হয়ে থাকব, চোখ বুজে নানা কিছু ভাবতে ভাবতে কখন একটু তন্দ্রার মতো হয়েছিল টের পাইনি। আমার আবার স্বপ্ন দেখার রোগ আছে, জেগে হোক বা ঘুমিয়ে। ওইটুকু তন্দ্রার মধ্যেও তাই স্বপ্ন এসে উপস্থিত। স্বপ্নটি একটি চমৎকার ফুলবাগানের। সেই ফুলবাগানের মধ্যে ম ম করা গন্ধে বিভোর হয়ে আমি হাঁটছি আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে বাজছে রবিঠাকুরের গান-‘ফুলের বনে যার কাছে যাই তারেই লাগে ভালো, ও রজনীগন্ধা তোমার···।’ নিদ্রা গভীর না হলে স্বপ্ন দীর্ঘস্থায়ী হয় না, এবারও হলো না। তন্দ্রা ছুটে গেলে বুঝতে পারলাম, ফুলের বাগান সত্য নয়, কিন্তু ফুলের ম ম করা গন্ধটা সত্য। সেই গন্ধের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে দেখি সত্য স্বপ্নের চেয়েও স্বপ্নময়। ফুলের না, আমার নাকে এসে লাগছে শ্যাম্পু করা চুলের গন্ধ, কেননা পার্শ্ববর্তিনীর ঘুমন্ত মুখটি কখন আশ্রয় নিয়েছে আমার বুকে। নিশ্চয় তাঁর অজ্ঞাতে ও অনিচ্ছায়, কিন্তু এই পড়ে পাওয়া সুখ অনুভব করতে গিয়ে হঠাৎ নিজের ওপরই অভিমান হলো-আরও আগে কেন এ রকম সুখের সন্ধানে আমি কিছুটা সময় ব্যয় করিনি। ব্যবসা প্রশাসনের ভালো ফলাফল আর অভিভাবক-কথিত সাফল্যের সিঁড়িতে পা দেওয়ার জন্য কত কিছু পাশ কাটিয়ে এসেছি, অথচ রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পীরা টিভি চ্যানেলগুলোতে তখন ‘জীবনের পরম লগন কোরো না হেলা কোরো না হেলা’ গেয়ে প্রাণপাত করেছেন।

জানি বিশ্বাস করবেন না, তবু বলি, সুন্দরী আমার বক্ষলগ্ন ছিলেন প্রায় সারা রাত। একটা উদ্বেগও ছিল, তাঁর এই অসতর্কতার জন্য আমাকেই না দায়ী করে বসেন। আমি নিজেও এ ব্যাপারে সচেতন নই প্রমাণের জন্য ঘুমের ভান করে চোখ বন্ধ রাখি। কিন্তু যাত্রাবিরতির জন্য কুমিল্লায় একটি রেস্টুরেন্টের সামনে বাস থামতেই জ্বলে উঠল সব কটি লাইট। যাত্রীরা সবাই প্রায় নেমে পড়ছেন দেখেও আমি নিরুপায়, আমার বক্ষলগ্নার ঘুম ভাঙাতে ভরসা পাই না, আবার তেমন ইচ্ছেও করে না। সবাই নেমে যাওয়ার পর বাসের গাইড বললেন, ‘নামবেন না? আপনার স্ত্রী কি অসুস্থ?’

প্রশ্ন শুনে আমি বিচলিত, অনুচ্চ স্বরে এমনভাবে ‘হ্যাঁ’ বললাম, তার যেকোনো অর্থ হতে পারে, গাইড তাঁর পছন্দমতো অর্থ বুঝে নিয়ে নেমে পড়লেন বাস থেকে। আমার বুকে মুখ রেখে কী এমন নিরাপত্তার সন্ধান পেয়েছেন, এত লোকের ওঠা-নামা বা কথাবার্তার মধ্যেও ঘুম আর ভাঙে না নিদ্রিতার? বাকি যাত্রীরাও গাইডের মতোই কিছু একটা অনুমান করে নিশ্চিত আছেন হয়তো-নইলে দুই অপরিচিতকে এভাবে রাতযাপনের সুযোগ দিতে আপত্তি করতে পারতেন তাঁরাও।

সেই কালঘুম ভাঙল সুবেহ সাদিকে, বাস এসে থামল যখন চট্টগ্রামে। একটু নড়াচড়া আর নিশ্বাসের ছন্দপতনে বুঝেছি নিদ্রা সম্পন্ন, ততক্ষণে আমার দু চোখ তো বন্ধই, নিজেকে ঘুমে অচেতন প্রমাণের জন্য দু ঠোঁটও কিছুটা আলগা করে নিয়েছি। যাত্রীরা নামতে শুরু করেছেন, অনেকের এখানেই শেষ, আমরা বাকিরা প্রায় ঘণ্টা খানেক বিরতির পর রওনা হব কক্সবাজার।
: শুনুন, এক্সিকিউজ মি···এই যে···।

বুঝলাম আমার উদ্দেশ্য সফল, পাশ কেটে নামতে হবে বলে আমার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছেন পার্শ্ববর্তিনী, আমি প্রায় ধড়ফড় করে জেগে ওঠার ভঙ্গিতে তাকালাম। দু চোখে তার স্পষ্ট বিরক্তি, ‘জার্নিতে এত ঘুমালে চলে?’

আশ্চর্য, কে কাকে কী বলছে! আমি হাসব না কাঁদব সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে সরে জায়গা করে দিলাম। তিনি নেমে গেলেন সাবলীল ভঙ্গিতে।

ওয়াশরুমে মুখ ধুতে গিয়ে দেখি আমার শার্টের বুকের দিকটা ভেজা! এ যেন বি্নয়কেও ছাপিয়ে যায়, শৈশবের পর থেকেই বলা চলে নারীসঙ্গবঞ্চিত জীবন আমার, কিন্তু একটি পরিণত বয়সের যুবতী ঘুমালে তাঁর কষ বেয়ে লালা গড়াতে পারে এমন কথা গল্প-উপন্যাসে পড়েছি বলেও তো মনে পড়ে না।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখি ওয়েটিংরুমের এক কোণে বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন, পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে মুখে অসাধারণ পরিতৃপ্তি। আমি এইমাত্র এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছি, পৃথিবীর সৌন্দর্যের চেয়ে বড় কোনো গুণ নেই, এ রকম চেহারা-সুরত থাকলে যেকোনো পাপ করে মাপ পাওয়ার অধিকার আছে তাঁর।

২·
যথেষ্ট হয়েছে, ভাবছি এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলব না, কেননা বহুজাতিকের একজন মাঝারি গোছের কর্মকর্তার (এই বয়সেই) পক্ষে এত ভাবাবেগ মানায় না। শুধু জানিয়ে রাখি, যথাসময়ে কক্সবাজারে পৈতৃক বাড়িতে পৌঁছেছি নিরাপদে। পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে ডেকে আনা হয়েছে পাত্রী পছন্দ করার জন্য। বিষয়টি যত অনাধুনিকই হোক না কেন, আমার জন্য এর চেয়ে উৎকৃষ্ট আর কোনো ব্যবস্থা যে হতে পারে না, সেটা আমার পরিবার যেমন বুঝেছে, আমিও।

বিকেলের কনে দেখা আলোয় আমরা গুষ্টিসুদ্ধ কনের বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। সমুদ্রপারের লোকজনের মন বড় বলে একটা কথা চালু আছে, সেই বড় মন প্রমাণের সবচেয়ে সোজা ও বহুল প্রচলিত পন্থা হচ্ছে আপ্যায়নের বিশাল আয়োজন। এখানেও সে রকমই হলো, যদিও তাতে নাগরিক-মার্জিত ব্যাপারটি নেই-নানা রকম পিঠাপুলির সাথে কেক, পেস্ট্রি পিৎজা, সন্দেশ, জিলাপি, চা, কোলাজাতীয় পানীয়-মোটামুটি বিকেলের খাবার হিসেবে ঘরে বা বাজারে যা কিছু স্বীকৃত তার সবই। তার চেয়েও বড় বিড়ম্বনা হলো প্রায় প্রতিটি পদই খাওয়ার জন্য সাধাসাধি করতে থাকা।

পুরোনো ধাঁচের বড়সড় বাড়ি, বড় উঠোন, বুকসমান সীমানা দেয়াল ও খিলানে কাজ করা চুনসুরকির প্রাচীন তোরণটি এ বাড়ির বাসিন্দাদের অতীত নিয়ে সম্ভম জাগিয়ে দেয়।

সিলিংটি অনেক উঁচু বলে পুরোনো পাখাটির হাওয়া নিচে খুব একটা পৌঁছায় না, তদুপরি ঘরভর্তি মানুষের কৌতূহল ও আপ্যায়নের আতিশয্যে আমি ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত ও বিরক্ত। বিরক্তির প্রায় শেষপর্যায়ে দুই প্রবীণার সাথে ঘরে প্রবেশ করেছেন কনে।
জানি বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু বিশ্বাস করবেন না-ই বা কেন, নিয়তি বলে একটা কথা আছে না, নিয়তি নিয়ে গ্রিক ট্র্যাজেডির মতো বাংলা সাহিত্যেও তো কম জল ঘোলা হয়নি। সেই নিয়তির টানেই বোধ করি পাত্রী হিসেবে এসে দাঁড়িয়েছেন আমার বাসের সেই সহযাত্রী। শাড়িপরা ব্রীড়ানত ভঙ্গিতে তিনি আরও অসাধারণ। পাত্রী হিসেবে তাঁকে পছন্দ বা অপছন্দের সিদ্ধান্ত নেব আমি? আমি বরং তাঁর মতামতটা জানতে চাই, এই আর্জি ফিসফিস করে জানাতেই প্রকৃত সমঝদার একজন ঘোষণা করলেন, ‘আজকালকার শিক্ষিত ছেলেমেয়ে, নিজেরাই বরং কথাবার্তা বলে নেওয়া ভালো।’
ছোট্ট একটি কামরায় ‘শিক্ষিত ছেলেমেয়েকে’ একান্তে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হলো।
: আশ্চর্য! আমি ভাবতেই পারিনি, মানে আপনি···
: কেন, আমি তো তখনই বুঝতে পেরেছি···।
: বুঝতে পেরেছেন? কী করে বুঝলেন?
: বিয়ে ঠিক হচ্ছে শুনে খুব টেনশনে ছিলাম ভাই, কোন্‌ বাঁদরের হাতে না তুলে দেয়। দুলাভাই তো আপনার একটা বর্ণনা দিয়েছিলেন, কথাবার্তা শুনে বুঝে ফেলেছি এটাই সেই ছাগল, বুঝে আমার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।

ছাগল! নিজের সম্পর্কে এ রকম কথা ইহজন্মে কোনো মেয়ের মুখে শুনব আমি কল্পনাও করতে পারিনি। কিন্তু শুনে বরং ভালো লাগছে বলে আরও বি্নয় বোধ করছি। হায়, ভালো-মন্দ লাগার কত কিছুই জানতাম না এত দিন।

৩·
তিন দিনের ছুটিটাকে আরও সাত দিন বাড়িয়ে সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে আজ ঢাকা ফিরছি। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে আমার বুকে মাথা রেখে অকাতরে ঘুমোচ্ছেন পার্শ্ববর্তিনী। ঘুমান, তাতে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে আমার শার্টটা ভিজে যাচ্ছে বুকের কাছে।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০০৮

Category: গল্পTag: বিশ্বজিৎ চৌধুরী
Previous Post:সেজান মাহমুদ
Next Post:প্রমিথি

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑