1 of 2

০৫. সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী সাহাবায়ে কিরাম

সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী সাহাবায়ে কিরাম

ইবন ইসহাক বলেন, ওই ঘটনার একদিন পর হযরত আলী (রা) তাদের নিকট আসেন। তখন রাসূলুল্লাহ ও হযরত খাদীজা নামায আদায় করছিলেন। আলী (রা) বললেনঃ আপনারা এ কী করছেন? রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, এটি আল্লাহর দীন। তার নিজের জন্য এ দীনকে তিনি মনােনীত করেছেন এবং এ দীন সহকারে তিনি রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। আমি তখন তোমাকে একক ও লা-শরীক আল্লাহর দিকে এবং তার ইবাদতের দিকে আহবান করছি। আমি তোমাকে আহবান জানাচ্ছি। লাত ও উষযা প্রতিমা পরিত্যাগ করতে। হযরত আলী (রা) বললেন, এটি তো এমন একটি বিষয়, যা ইতোপূর্বে আমি কখনো শুনিনি। আমার পিতা আবু তালিবের। সাথে আলোচনা না করে আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে ঘোষিত হওয়ার পূর্বে আবু তালিবের নিকট এ গোপনীয় বিষয়টি প্রকাশিত হোক রাসূলুল্লাহ্ (সা) তা সমীচীন মনে করলেন না। তাই হযরত আলী (রা)-কে বললেন, হে আলী! তুমি যদি এখনই ইসলাম গ্ৰহণ না কর, তবে আপাতত বিষয়টি গোপন রেখ, কাউকে বলো না। হযরত আলী (রা) ওই রাত অপেক্ষা করলেন।

এরপর আল্লাহ্ তা’আলা হযরত আলী (রা)-এর অন্তরে ইসলাম গ্রহণের আগ্রহ সৃষ্টি করে দিলেন। ভোর বেলা তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট গেলেন এবং বললেন, আপনি আমার নিকট কি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন? রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, প্রস্তাবটি এই, তুমি সাক্ষ্য দিবে। যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আর তুমি লাত ও উযযা প্রতিমাকে পরিত্যাগ করবে এবং সকল প্রকার অংশীবাদিতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবে। হযরত আলী তাই করলেন এবং ইসলাম গ্ৰহণ করলেন। তবে পিতা আবু তালিবের ভয়ে তিনি

করছিলাম আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিবের নিকট। সূর্য যখন উদিত হল এবং আকাশের অনেক উপরে উঠে গেল, তখন আমি ক’বাগৃহের দিকে তাকিয়েছিলাম। আমি দেখতে পেলাম, একটি যুবক সেখানে এসে আকাশের দিকে তাকাল। তারপর কা’বাগৃহের সম্মুখে এসে সেটিকে সামনে রেখে দাঁড়িয়ে গেল। অবিলম্বে সেখানে উপস্থিত হল একটি বালক এবং সে তার ডান পাশে দাঁড়িয়ে গেল। এরপর এল। একজন মহিলা। সে দাঁড়াল ওদের দু’জনের পেছনে। প্রথম যুবকটি রুকূতে গেল। সাথে সাথে বালক ও মহিলাটি রুকূতে গেল। যুবকটি রুক থেকে মাথা তুলল। বালক এবং মহিলাটিও রুক থেকে মাথা তুলল। তারপর যুবক সিজদায় গেল। ওরা দু’জনও সিজদায় গেল। আমি বললাম, হে আব্বাস! এতো এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার। তিনি বললেন, আশ্চর্যজনকই বটে। আব্বাস বললেন, যুবকটির পরিচয় তুমি জােন কি? আমি বললাম, না, জানি না! তিনি বললেন, সে হল আমার ভাতিজা মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন আবদুল মুত্তালিব। বালকটির পরিচয় তোমার জানা আছে কি? আমি বললাম, না, জানা নেই। তিনি বললেন, সে হল আবু তালিবের পুত্র আলী (রা)। ওদের পিছনে মহিলাটি কে চেন কি? আমি বললাম, না, চিনি না। তিনি বললেন, সে হল আমার ভাতিজার স্ত্রী। খুওয়ায়লিদের কন্যা খাদীজা (রা)। ভাতিজা মুহাম্মদ (সা) আমাকে বলেছে, আপনার প্রতিপালক হলেন আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালক। তার কাজকর্ম এই যা এখন তুমি দেখেছি। আল্লাহর কসম দুনিয়াতে ওই দীনের অনুসারী ওই তিনজন ব্যতীত অন্য কেউ আছে বলে আমার জানা নেই।

হাযিয ও কালবী বলেছেন যে, সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন হযরত আলী (রা)। কালবী (রা) বলেন, হযরত আলী নয় বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইবন ইসহাক বলেছেন, পুরুষদের মধ্যে হযরত আলী (রা) প্রথম ঈমান আনয়ন করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে নামায আদায় করেন এবং তাঁকে সত্য বলে গ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল দশ বছর। ইসলামের পূর্বেও তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর পরিবারভুক্ত ছিলেন।

ওয়াকিদীও হযরত আলী (রা) দশ বছর বয়সে ইসলাম গ্ৰহণ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

ওয়াকিদী বলেন, আমাদের ইমামগণ এ বিষয়ে একমত যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নবুওয়াত লাভের এক বছর পর হযরত আলী (রা) ইসলাম গ্রহণ করেছেন।

মুহাম্মদ ইবন কাআব বলেন, এই উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেছেন খাদীজা (রা) এবং পুরুষদের মধ্যে প্রথম ঈমান আনয়নকারী দু’জন হলেন হযরত আবু বকর (রা) ও হযরত আলী (রা)। হযরত আবু বকরের ঈমান আনয়নের পূর্বে হযরত আলী ঈমান আনয়ন করেন। পিতার ভয়ে হযরত আলী (রা) তাঁর ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রেখেছিলেন। একদিন তাঁর পিতার মুখোমুখি হলে তাঁর পিতা বলেন, তুমি কি ইসলাম গ্রহণ করেছ? তিনি বললেন, হ্যা। পিতা বললেন, তবে তোমার চাচাত ভাইকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। অবশ্য, সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন। হযরত আবু বকর (রা)।

ইবন জারীর তার ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, শু’বা……ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, সর্ব প্রথম নামায আদায় করেছেন আলী আবদূর হামীদ হযরত

জাবির থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) নবুওয়াত লাভ করেছেন সোমবারে আর আলী (রা) নামায আদায় করেছেন মঙ্গলবারে। আবু হামযা নামে জনৈক আনসারী ব্যক্তি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যায়দ ইবন আরকাম (রা)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট সর্বপ্রথম ইসলাম গ্ৰহণ করেছেন আলী ইবন আবী তালিব (রা)। বৰ্ণনাকারী বলেন, এরপর এ বর্ণনাটি আমি নাখঈ এর নিকট পেশ করি। তিনি এটি প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন যে, সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন আবু বকর (রা)। উবায়দুল্লাহ ইবন মূসা……… আব্বাদ ইবন আবদুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমি আলী (রা)-কে বলতে শুনেছি, আমি আল্লাহর বান্দা তার রাসূলের ভাই এবং আমিই সিদীকে আকবর তথা প্রধান সত্যায়নকারী। আমার পরে কেউ এ উপাধি দাবী করলে সে হবে মিথ্যাবাদী। অন্যদের নামায আদায়ের সাত বছর পূর্ব থেকেই আমি নামায আদায় করে এসেছি।

ইবন মাজাহ (র) মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈল … উবায়দুল্লাহ ইবন মূসা ফাহিমী সূত্রে এ হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। উবায়দুল্লাহ ইবন মূসা মূলত শিয়া। তবে তিনি বিশুদ্ধ হাদীছ বর্ণনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত। তবে আবু হাতিম বলেছেন সে মূলত একজন কট্টর শিয়া। আলী ইবন মাদানী বলেন, সে প্রচুর অগ্রহণযোগ্য হাদীছ বৰ্ণনা করেছে। মিনহাল ইবন আমার আস্থাভাজন বর্ণনাকারী। তাঁর শায়খ হলেন আব্বাদ ইবন আবদুল্লাহ আসাদী কুকী। আব্বাদ সম্পর্কে আলী ইবন মাদীনী বলেছেন যে, হাদীছ শাস্ত্রে তিনি দুর্বল লোক বলে গণ্য। ইমাম বুখারী (র) বলেছেন, এই রাবী সন্দেহমুক্ত নন। ইবন হাইয়ান তাকে আস্থাভাজনদের অন্তর্ভুক্ত রেখেছেন।

মোদ্দাকথা উপরোক্ত হাদীছটি সর্বাবস্থায়ই অগ্রহণযোগ্য। হযরত আলী (রা) এমন কথা বলেননি। লোকজনের নামায পড়ার সাত বছর পূর্বে তিনি নামায আদায় করেছেন এটা কী করে সম্ভব? এমন কথা কল্পনাই করা যায় না। আল্লাহই ভাল জানেন। অন্যান্য আলিমগণ বলেন, এই উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্ৰহণ করেছেন। হযরত আবু বকর সিদীক (রা)।

বস্তৃত এই সব বক্তব্যের সমন্বয়সূচক ব্যাখ্যা এই যে, মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্ৰহণ করেন। হযরত খাদীজা (রা)। তিনি সকল মহিলা থেকে এ ব্যাপারে অগ্রবতী। কারো কারো মতে নারী-পুরুষ সবার চেয়ে অগ্রবতীর্ণ। ক্রীতদাসদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন হযরত যায়দ ইবন হারিছ (রা)। বালকদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্ৰহণকারী হযরত আলী ইবন আবী তালিব (রা)। কারণ, তখন তিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। স্বাধীন এবং প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্ৰহণ করেন। হযরত আবু বকর সিদীক (রা)। ইতোপূর্বে যাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের তুলনায় হযরত আবু বকরের ইসলাম গ্ৰহণ অধিকতর কল্যাণকর ও তাৎপর্যবহ ছিল। কারণ, তিনি ছিলেন আরবের সম্মানিত নেতা, কুরায়শ বংশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ও সম্পদশালী লোক। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রতি আহ্বানকারী, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যে ধনসম্পদ ব্যয় করে তিনি সকলের প্রিয় ও ভালোবাসার পত্র হয়ে উঠেছিলেন। এ বিষয়ে পরে আলোচনা আসবে।

ইউনুস ইবন ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত আবু বকর সিদীক (রা) প্রিয়নবী (সা)-এর সাথে সাক্ষাত করে বলেছিলেন, আপনার সম্পর্কে কুরাশের লোকেরা যা বলছে তা কি সত্য? তারা তো বলছে যে, আপনি আমাদের উপাস্যদেরকে বর্জন করছেন, আমাদের বুদ্ধিমান

লোকদেরকে মূখ্য ঠাওরাচ্ছেন এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের কাফির সাব্যস্ত করছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হ্যা, তাই। আমি তো আল্লাহর রাসূল ও তার নবী। তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন তার দেয়া রিসালাত প্রচার করার জন্যে এবং তোমাদেরকে সত্য পথে আল্লাহর দিকে ডাকার জন্যে। আল্লাহর কসম, এটাই সত্যপথ। হে আবু বকর! আমি তোমাকে একক লা-শরীক আল্লাহর দিকে আহবান জানাচ্ছি। তুমি অন্য কারো ইবাদত করবে না। তার আনুগত্যের ব্যাপারে তোমার নিকট সহযোগিতার আহবান জানাচ্ছি।

রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাকে কুরআন পাঠ করে শোনালেন। হযরত আবু বকর (রা) তাৎক্ষণিকভাবে তা গ্রহণ বা বর্জন কিছুই করলেন না। এরপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং মূর্তিপূজা ত্যাগ করলেন। আল্লাহর শরীক তথাকথিত অংশীদারগুলোকে বর্জন করলেন এবং ইসলামের সত্যতা স্বীকার করলেন। ঈমানদার এবং সত্যায়নকারীরূপে তিনি বাড়ী ফিরে

গেলেন।

বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, আমি যাকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি সে-ই প্রথমে দ্বিধাদ্বন্দুে ভুগেছে, ইতস্তত করেছে এবং চিন্তা-ভাবনা করেছে কিন্তু আবু বকর (রা) তার ব্যতিক্রম। আমরা তার নিকট ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব দেয়ার পর তিনি কোনরূপ দ্বিধা করেননি। কোন প্রকারের ইতস্তত ভাবও প্রকাশ করেননি। দেৱীও করেননি। ইবন ইসহাকের বর্ণনায় উল্লিখিত তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সমর্থনও করেননি বর্জনও করেননি বক্তব্যের অর্থ এটিই। কারণ, ইবন ইসহাক ও অন্যরা উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নবুওয়াত লাভের পূর্বেও হযরত আবু বকর (রা) রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাহচর্যে থাকতেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা, সৎ স্বভাব ও মধুর চরিত্র সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত ছিলেন। এসব গুণাবলী তাকে সৃষ্টিজগতের সাথে মিথ্যাচার থেকে বিরত রেখেছে, তাহলে তিনি কেমন করে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যাচার করবেন? এজন্যে “আল্লাহ তাকে রাসূল রূপে প্রেরণ করেছেন” শুধু এটুকু বক্তব্য শুনে তিনি তা’কে সত্যবাদী বলে মেনে নিয়েছেন। কোন প্রকারের বিলম্বও দোদুল্যমানতা দেখাননি।

হযরত আবু বকর (রা)-এর জীবনী বিষয়ক একটি পৃথক গ্রন্থে আমরা তাঁর ইসলাম গ্রহণের পটভূমি ও বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করেছি। তাঁর মর্যাদা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যাবলীও আমরা সেখানে উল্লেখ করেছি। এরপর আমরা হযরত উমর ফারুক (রা)-এর জীবনী আলোচনা করেছি। তাঁরা উভয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা) থেকে যে সব হাদীছ বৰ্ণনা করেছেন, সেগুলো তথায় সন্নিবেশিত করেছি। হযরত আবু বকর (রা) থেকে যে সকল হাদীছ, মন্তব্য ও ফাতাওয়া বর্ণিত হয়েছে, উক্ত গ্রন্থে সেগুলো আমরা এনেছি। উক্ত গ্ৰন্থ তিন খণ্ডে সমাপ্ত হয়েছে। সকল প্ৰশংসা আল্লাহর।

হযরত আবু বকর (রা) ও হযরত উমর (রা)-এর মাঝে সৃষ্ট বিতর্ক বিষয়ক আবু দারদা’ কর্তৃক বর্ণিত হাদীছে। সহীহ বুখারীতে উদ্ধৃত হয়েছে যে, প্রসঙ্গক্রমে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছিলেন :

আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে তোমাদের নিকট রাসূল রূপে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু তোমরা আমাকে বলেছিলে আপনি মিথ্যাবাদী আর আবু বকর বলেছিলেন, তিনি সত্যই বলেছেন। আবু বকর (রা) নিজের জানমাল দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এখন আমার সম্মানার্থে তোমরা কি আমার এই সাথীকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবে? শেষ কথাটি তিনি দু’বার বলেছেন। এরপর থেকে হযরত আবু বকর (রা) কারো পক্ষ থেকে ক্লেশদায়ক কোন আচরণের সম্মুখীন হননি। এটিত প্রায় সুস্পষ্ট দলীল যে, হযরত আবু বকর (রা) সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি। ইমাম তিরমিয়ী ও ইবন হিব্বান শু’বা…আবু সাঈদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, প্রসঙ্গক্রমে আবু বকর (রা) বলেছিলেন, আমি কি ওই খিলাফতের অধিকতর যোগ্য নাই? আমি কি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি নাই? আমি কি অমুক অমুক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী न्द्रे?

ইবন আসাকির… হারিছ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হযরত আলী (রা)-কে বলতে শুনেছি, পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হলেন হযরত আবু বকর (রা) আর রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে নামায আদায়কারী সর্বপ্রথম পুরুষ হলেন আলী ইবন আবু তালিব। (द्मा)।

শু’বা… যায়দ ইবন আরকাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে প্রথম নামায আদায় করেছেন আবু বকর সিদীক (রা)। এ হাদীছ ইমাম আহমদ, তিরমিয়ী ও নাসাঈ (র) প্রমুখ শু’বা সূত্রে উল্লেখ করেছেন। ইমাম তিরমিয়ী মন্তব্য করেছেন যে, এটি হাসান ও সহীহ হাদীছ।

ইতোপূর্বে শু’বা… যায়দ ইবন আরকাম সনদে ইবন জারীরের বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে যে, যায়দ ইবন আরকাম (রা) বলেছেন, সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন আলী ইবন আবু তালিব। আমর ইবন মুররা বলেন, এ বর্ণনা আমি ইবরাহীম নাখাঈ-এর নিকট আলোচনা করেছিলাম। তিনি এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেছেন যে, সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন আবু বকর সিদীক (রা)।

ওয়াকিদী আপনি সনদে আবু আরওয়া দাওসী এবং আবু মুসলিম ইবন আবদুর রহমানসহ একদল পূর্ববতী বৰ্ণনাকারী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। হযরত আবু বকর সিদীক (রা)। ইয়াকুব ইবন সুফিয়ান বলেন…হযরত ইবন আব্বাস (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেছেন কে? উত্তরে তিনি বলেন, আবু বকর সিদীক (রা)। তুমি কি হাসসানের ওই বক্তব্য শুননি :

যদি কোন আস্থাভাজন দীনী ভাইয়ের ব্যথা-বেদনা ও দুঃখ-কষ্টের কথা উল্লেখ করতে চাও তবে তোমার ভাই আবু বকর (রা)-এর ভোগ করা দুঃখ-বেদনার কথা উল্লেখ করো। দীনের উন্নয়নে ও প্রসারে তিনি যে ত্যাগ ও কুরবানী করেছেন তা উল্লেখ করো।

خير البرية أو فاها وأعد لها – بعد النبى وأولأها بما حملاً নবী করীম (সা)-এর পর তিনিই জগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, বিশ্বস্ততম ও শ্রেষ্ঠ ন্যায়বিচারক। তিনি যা সহ্য করেছেন তার বদৌলতে তিনি সর্বোত্তম।

و الثانی المحمود مشاهده–و اول الناس منهم صدق الرسلاً নবী করীম (সা)-এর অব্যবহিত পরেই তাঁর স্থান তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকারী এবং তার অবস্থান প্রশংসাযোগ্য। মানুষের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি রাসূলগণকে সত্য বলে গ্ৰহণ করেছেন।

عاش حميدا لامر الله متبعا – بأمر صاحبه الماضى وما انتقلاً আল্লাহর নির্দেশ মান্য করে এবং তার দীর্ঘদিনের সাখী মুহাম্মদ (সা)-এর পদাংক অনুসরণ করে তিনি প্রশংসনীয় জীবন যাপন করেছেন। ওই পথ থেকে তিনি কখনো বিচুর্য্যত হননি।

আবু বকর ইবন আবী শায়াবা….. আমির থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত ইবন আব্বাস (রা)-কে জিজ্ঞেস করেছি। অথবা তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, সর্বপ্রথম ইসলাম গ্ৰহণ করেছেন কে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তুমি কি হাসসানের বক্তব্য শুননি? এ বলে তিনি উপরোল্লিখিত কবিতাটি আবৃত্তি করলেন। হায়ছাম ইবন আব্দী হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবুল কাসিম বাগভী বলেন, ইউসুফ ইবন মাজিশূন বলেছেন, আমি আমাদের অনেক শায়াখের সান্নিধ্য পেয়েছি। তন্মধ্যে মুহাম্মদ ইবন মুনকাদির, রাবীআ ইবন আবু আবদুর রহমান, সালিহ ইবন কায়সান এবং উছমান ইবন মুহাম্মদ প্রমুখ রয়েছেন। হযরত আবু বকর সিদীক (রা) যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী, এ বিষয়ে তাদের কেউই বিন্দমাত্ৰ সন্দেহ পোষণ করতেন না।

আমি বলি যে, ইবরাহীম নাখাঈ মুহাম্মাদ ইবন কাআব, মুহাম্মদ ইবন সীরীন এবং সাআদ ইবন ইবরাহীম প্রমুখ (র) অনুরূপ বলেছেন। আহলুস সুন্নাহ জামাআতের অধিকাংশের নিকট মশহুর অভিমত এটিই। w

সাআদ ইবন আবী ওয়াককাস এবং মুহাম্মদ ইবন হানফিয়্যাহ থেকে ইবন আসাকির বর্ণনা করেছেন যে, তারা দু’জনে বলেন, হযরত আবু বকর সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী নন, বরং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলাম গ্রহণকারী। সাআদ বলেন, হযরত আবু বকর (রা)-এর পূর্বে আরো পাঁচজন ইসলাম গ্ৰহণ করেছিলেন। সহীহ বুখারীতে হাম্মাম ইবন হারিছের বর্ণিত হাদীছে আছে যে, আম্মার ইবন ইয়াসির (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে দেখেছি যে, তার সাথে রয়েছেন। পাঁচজন ক্রীতদাস, দু’জন মহিলা এবং আবু বকর (রা)।

ইমাম আহমদ ও ইবন মাজহ আসিম ইবন আবু নুজুদ সূত্রে যির থেকে ইবন মাসউদের বরাতে হাদীছ বর্ণনা করেছেন যে, প্রথম ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিলেন সাতজন।

রাসূলুল্লাহ (সা), আবু বকর (রা), আম্মার (রা), তার মা সুমাইয়া (রা), সুহায়ব (রা), বিলাল (রা) ও মিকদাদ (রা)। বস্তৃত আপন চাচার তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে আল্লাহ তা’আলা নির্যাতন থেকে রক্ষা করেছেন। আর আবু বকরকে রক্ষা করেছেন অন্যান্যদেরকে তার গোত্রের মাধ্যমে অন্যান্যদেরকে মুশরিকগণ ধরে নিয়ে যায় এবং লোহার পোশাক পরিয়ে প্রখর রৌদ্রের মধ্যে দগ্ধ করতে থাকে। অবশেষে হযরত বিলাল ব্যতীত অন্যরা মুশরিকদের ইচ্ছানুযায়ী ১ বক্তব্য দিতে বাধ্য হন। কিন্তু হযরত বিলাল (রা) আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে নিজের জীবনকে তুচ্ছ এবং নিজের সম্প্রদায়কে গুরুত্বহীন জ্ঞান করেন। ফলে, মুশরিকগণ তাকে নিয়ে বালকদের হাতে তুলে দেয়। তারা তাকে রশিতে বেঁধে নিয়ে অত্যাচার করতে করতে মক্কার অলিতে-গলিতে ঘুরতে থাকে। তিনি তখনও বলছিলেন ‘আহাদ’ ‘আহাদ আল্লাহ—এক আল্লাহ এক। ছাওরী (র) থেকে মুরসালরূপে এ হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে।

ইবন জারীর (র).. মুহাম্মদ ইবন সাআদ ইবন আবী ওয়াককাস থেকে সূত্র ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে অগ্রহণযোগ্য একটি বর্ণনায় বলেছেন যে, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আবু বকর (রা) কি আপনাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী? উত্তরে তিনি বলেছিলেন না, তা নয়। তাঁর পূর্বে ৫০ জনের অধিক লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তবে তিনি আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলাম গ্রহণকারী ছিলেন।

ইবন জারীর বলেন, অন্য একদল আলিম বলেছেন যে, সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন যায়দ ইবন হারিছ (রা)। অন্যদিকে ইবন আবী যি’ব থেকে ওয়াকিদী বর্ণনা করেন, আমি যুহরীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন কে? তিনি বললেন, খাদীজা (রা)। আমি বললাম পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, যােয়দ ইবন হারিছা! (রা), অনুরূপভাবে উরওয়া সুলায়মান ইবন ইয়াসার এবং আরো অনেকে বলেছেন যে, পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন যায়দ ইবন হারিছ (রা)।

উপরোক্ত সবগুলো মন্তব্য ও অভিমতের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ইমাম আবু হানীফা (র) বলেছেন, স্বাধীন বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। হযরত আবু বকর সিদীক (রা), মহিলাদের মধ্যে হযরত খাদীজা (রা), ক্রীতদাসদের মধ্যে যায়দ ইবন হারিছা! (রা) এবং বালকদের মধ্যে হযরত আলী ইবন আবু তালিব (রা)।

মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন, আবু বকর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণ এবং তা প্ৰকাশ করার পর তিনি লোকজনকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। নিজ সম্প্রদায়ের লোকজনের নিকট তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও মিশুকরুপে পরিচিত ছিলেন। কুরায়শ বংশের তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ কুলজী বিশারদ ছিলেন। উক্ত বংশের কল্যাণ-অকল্যাণ সম্পর্কে তিনি ছিলেন সর্বাধিক অবগত। ব্যবসায়ী, চরিত্রবান এবং সর্বজন পরিচিত ব্যক্তি হিসেবে তার প্রসিদ্ধি ছিল। তাঁর জ্ঞান গরিমা ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং সুন্দরতম সাহচর্য লাভের আশায় লোকজন তাঁর নিকট উপস্থিত হত। যারা তার নিকট আসত, তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে তিনি বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন মনে করতেন, তাদেরকে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতেন। মুহাম্মদ ইবন ইসহাক বলেন, আমার জানা মতে

১. প্রাণরক্ষার জন্য এমনটি করা জাইয। —সম্পাদকদ্বয়

যুবােয়র ইবন আওয়াম (রা), উছমান ইবন আফফান (রা), তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ (রা), সাআদ ইবন আবু ওয়াককাস ও আবদুর রহমান ইবন আওফ (রা) প্রমুখ তার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর দরবারে হাযির হন। সাথে ছিলেন। হযরত আবু বকর (রা)। রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত পেশ করেন এবং তাদেরকে কুরআন পাঠ করে শুনান এবং তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, ইসলাম-ই সত্য ও সঠিক ধর্ম। তখন তারা ঈমান আনয়ন করেন। ইসলাম গ্রহণে অগ্রবতী এই আটজন রাসূল (সা)-কে সত্য নবী বলে মেনে নেন এবং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তার নিকট যা এসেছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেন।

ওয়াকিদী তালহা ইবন উবায়দিল্লাহ (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদিন আমি বুসরার-১ বাজারে উপস্থিত হই। তখন একজন যাজককে তার উপাসনালয়ে দেখতে পাই। তিনি বলছিলেন, মওসুমী ব্যবসায়ীদেরকে জিজ্ঞেস করো তাদের মধ্যে হারম শরীফের অধিবাসী কেউ আছে কিনা? তালহা (রা) বললেন, আমি বললাম, হ্যা, আমি আছি। তিনি বললেন, আহমদ কি ইতো মধ্যে আবির্ভূত হয়েছেন? আহমদ কে? আমি জিজ্ঞেস করলাম-তিনি বললেন, আবদুল্লাহর পুত্র এবং আবদুল মুত্তালিবের দৌহিত্র আহমদ এটি তা তার আবিভাবের মাস। তিনি সর্বশেষ নবী। তার আবির্ভাবের স্থান হল মক্কার হারাম শরীফ। তিনি হিজরত করে যাবেন। খেজুর বৃক্ষশোভিত পাথুরে এবং লবণাক্ত জমিতে। অতএব আপনি সতর্ক থাকুন, তার থেকে কল্যাণ লাভে কেউ যেন আপনার চেয়ে অগ্রগামী না হয়। বর্ণনাকারী তালহা (রা) বলেন, যাজকের কথা আমার মনে দাগ কাটে। আমি দ্রুত ওখান থেকে বেরিয়ে পড়ি এবং মক্কা উপস্থিত হই।

এখানে কোন নতুন ঘটনা ঘটেছে কিনা আমি জানতে চাই। লোকজন বলল, হ্যা ঘটেছে বৈকি। আবদুল্লাহর পুত্র আল-আমীন মুহাম্মদ নিজেকে নবী বলে দাবী করেছেন। আবু বকর ইবন আবু কুহাফা তার অনুসরণ করেছেন। আমি হযরত আবু বকরের (রা) নিকট গেলাম এবং বললাম, আপনি কি ওই লোকের অনুসরণ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যা করেছি। তুমিও তাঁর নিকট যাও এবং তার অনুসরণ করা। কারণ, তিনি সত্যের প্রতি আহবান করছেন। তালহা (রা) যাজকের বক্তব্য আবু বকরকে জানালেন। হযরত আবু বকর (রা) হযরত তালহা (রা)-কে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট গিয়ে উপস্থিত হলেন। তালহা (রা) ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং যাজকের বক্তব্য রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জানালেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাতে খুশী হলেন। আবু বকর (রা) ও তালহা (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের পর নাওফিল ইবন খুওয়ায়লিদ ইবন আদবিয়্যা তাদের দু’জনকে পাকড়াও করে। সে কুরায়শের সিংহ বলে পরিচিত ছিল। একটি রাশিতে সে তাদের দু’জনকে বেঁধে ফেলে। বনু তায়ম গোত্রের কেউই তাদেরকে রক্ষা করতে পারল না। এ জন্যে আবু বকর (রা) ও তালহা (রা)-কে সাখীদ্বয় নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ R۹! چSIIg|T &6–اللهم اگ فناشر ابن العد ویة ۶۲) گa”SII Fا آ5)}ه ی (11) আদুবিয়্যা-এর অনিষ্ট থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। এটি বায়হাকীর বর্ণনা।

১. এটা কিন্তু ইরাকের প্রসিদ্ধ বসরা নগরী নয়। এটা সিরিয়ার একটি স্থান, যা পরবতীতে হুরবান বা হারান

নামে বিখ্যাত হয়। —সম্পাদকদ্বয়

হাফিযী আবুল হাসান খায়ছমাহ … আইশা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা হযরত আবু বকর (রা) যাত্রা করলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে। জাহিলী যুগেও তাঁরা দু’জনে অন্তরঙ্গ ছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে তার সাক্ষাত হল। আবু বকর (রা) বললেন, হে আবুল কাসিম আপনার সম্প্রদায়ের আসরে তো আপনি অনুপস্থিত থাকেন। আর লোকজন সকলেই আপনার সমালোচনা করে এবং আপনাকে তাদের বাপ-দাদার ব্যাপারে অর্থাৎ তাদের ধর্মত্যাগের ব্যাপারে দোষারোপ করে। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “আমি আল্লাহর রাসূল। আমি তোমাকে আল্লাহর দিকে আহবান জানাচ্ছি। তার কথা শেষ হওয়ার পর পরই আবু বকর (রা:) ইসলাম গ্রহণ করলেন। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা) চলে গেলেন। হযরত আবু বকর (রা:) ইসলাম গ্রহণের কারণে তিনি এত আনন্দিত হয়েছিলেন যে, মক্কার উপত্যকার অধিবাসীদের মধ্যে কেউই তখন এত আনন্দিত ছিল না। তারপর আবু বকর (রা) চলে গেলেন এবং উছমান ইবন আফফান, তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ, যুবােয়র ইবন আওয়াম এবং সাআদ ইবন আবু ওয়াক্কাস-এর সাথে গিয়ে সাক্ষাত করলেন। তারা সকলেই ইসলাম গ্রহণ করলেন। পরদিন তিনি উছমান ইবন মাযউন, আবু উবায়দা ইবন জাররাহ, আবদুর রহমান ইবন আওফ, আবু সালামা ইবন আবদুল আসাদ এবং আরকাম ইবন আবুল আরকাম প্রমুখের নিকট গেলেন। তাঁরা সবাই ইসলাম গ্ৰহণ করলেন। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন।

আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ বলেন, আবু মুহাম্মদ ইবন ইমরান হযরত আইশা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীগণ (রা) যখন একত্রিত হলেন, তখন তারা ছিলেন ৩৮ জন। হযরত আবু বকর (রা) প্রকাশ্যে বের হওয়ার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে পীড়াপীড়ি শুরু করলেন। রাসূলুল্লাহ বললেন, আবু বকর! আমরা কিন্তু সংখ্যায় কম। আবু বকর (রা) প্রকাশ্যে বের হওয়ার জন্যে পীড়াপীড়ি করতেই লাগলেন। অবশেষে রাসূলুল্লাহ্ (সা) প্রকাশ্যে বের হলেন। অন্যান্য মুসলিমগণ মসজিদের বিভিন্ন স্থানে ছাড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেকে নিজ নিজ গোত্রের মধ্যে অবস্থান নেয়। হযরত আবু বকর (রা) জনসমক্ষে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। বস্তৃত হযরত আবু বকর (রা) প্রথম বক্তা, যিনি প্রকাশ্যে লোকজনকে আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি আহবান করলেন। মুশরিকগণ অবিলম্বে হযরত আবু বকরের উপর এবং মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মসজিদের বিভিন্ন স্থানে থাকা মুসলমানদেরকে তারা ভীষণ প্রহার করে। হযরত আবু বকর (রা)-কে তারা পায়ের নীচে ফেলে পিষ্ট করে এবং তাকে বেদম মারপিট করে। পাপিষ্ঠ উতবা ইবন রাবীআ তার কাছে আসে এবং পুরনো ভারী দুটো জুতো দিয়ে তাকে প্রহার করে, সেগুলো দিয়ে তার চোখে, মুখে আঘাত করে এবং তার পেটের উপর উঠে দাঁড়ায়। তাকে এমন প্রহার করা হয় যে, তাঁর নাক-মুখ চেনা যাচ্ছিল না। সংবাদ পেয়ে বানু তোয়মের লোকেরা দ্রুত সেখানে হাযির হয় এবং মুশরিকদের হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে। একটি কাপড়ে মুড়িয়ে তারা তাকে তুলে নেয় এবং তাঁর বাড়ীতে নিয়ে পৌঁছায়। তাঁর মৃত্যু যে আসন্ন তাতে তাদের কোন সন্দেহ ছিল না।

এরপর বনু তায়ম গোত্রের লোকজন মসজিদে ফিরে গিয়ে মুশরিকদেরকে শাসিয়ে দিয়ে বলে, আবু বকর (রা)-এর মৃত্যু হলে আমরা উতবা ইবন রাবী আকে খুন করে তার প্রতিশোধ নেব। এবার তারা তার নিকট ফিরে আসে এবং আবু কুহাফা ও বনু তায়মের লোকেরা তাকে ডাকতে থাকে। এক সময় তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন। দিনের শেষ ভাগে তিনি কথা বলতে শুরু করেন এবং সর্বপ্রথম যে কথাটি বললেন, তা হলো রাসূলুল্লাহ্ (সা) কোথায়, তিনি কেমন আছেন? এ কথা শোনে লোকজন তাকে ভৎসনা করে এবং একা রেখে চলে যায়। তারা তার মা উন্মুল খায়রকে বলে যায়, “চেষ্টা করে দেখুন, ওকে কিছু খাওয়ানো যায়। কিনা।” তারা চলে যাওয়ার পর তিনি তাকে কিছু খেয়ে নেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন আর আবু বকর (রা) শুধু বলছিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) কেমন আছেন? তার মা বললেন, আল্লাহর কসম তোমার বন্ধু সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। তিনি বললেন, আপনি খাত্তাবের কন্যা উন্মু জামীল-এর নিকট যান এবং তার কাছ থেকে জেনে আসুন। তিনি উন্মু জামীলের নিকট গেলেন এবং বললেন, “আবু বকর তো মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ-এর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে। উন্মু জমীল (রা) বললেন, আমি আবু বকরকেও চিনি না মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহকেও চিনি না। আপনি যদি ভাল মনে করেন, তাহলে আমি আপনার সাথে আপনার ছেলের নিকট যেতে পারি। উন্মুল খায়র বললেন, তবে চল। উন্মুল খায়রের সাথে উন্মু জামীল (রা) এলেন। তখন আবু বকর (রা) শয্যাশায়ী মুমূর্ষ। উন্মু জমীল (রা) তাঁর নিকটে এলেন এবং এই করুণ অবস্থা দেখে চীৎকার করে বললেন, হায়। কাফির ও পাপিষ্ঠের দল আপনার এ দুরবস্থা করেছে।

আমি নিশ্চিত আশাবাদী যে, আপনার প্রতি জুলুমের প্রতিশোধ আল্লাহ তা’আলা তাদের থেকে নেবেন। হযরত আবু বকর (রা) বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) কেমন আছেন? উম্মু জামীল (রা) বললেন, পাশে তো আপনার মা রয়েছেন, তিনি আমাদের কথাবার্তা শুনছেন। আবু বকর (রা) বললেন, তার জন্যে কোন অসুবিধা হবে না। উন্মু জমীল জানালেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) সুস্থ ও ভাল আছেন। তিনি এখন কোথায় আছেন আবু বকর (রা) জিজ্ঞেস করলেন। উম্মু জমীল (রা) জানালেন যে, তিনি এখন ইবনুল আরকাম (রা)-এর বাড়ীতে আছেন। আবু বকর (রা) বললেন, আল্লাহর কসম রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে সাক্ষাত না করা পর্যন্ত আমি কোন খাদ্য পানীয় মুখে তুলিব না। তারা দু’জনে তাঁকে অপেক্ষা করতে বললেন।

অবশেষে সন্ধ্যাবেলা যখন পথচারীদের আনাগোনা কমে গেল, লোকজন নিজ নিজ গৃহে চলে গেল, তখন তাদের দু’জনের গায়ে ভর করে তিনি যাত্রা করলেন এবং তারা তাকে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট পৌছিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর উপর ঝুকে পড়লেন এবং তাকে চুম্বন করলেন। অন্যান্য মুসলমানগণও তাঁর প্রতি ঝুকে পড়লেন। তাঁর অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ্ (সা) অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন। আবু বকর (রা) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা)। পাপিষ্ঠ উতবা আমার মুখে যা আঘাত করেছে তা ব্যতীত অন্যত্র এখন আমার খুব একটা ব্যথা-বেদনা নেই। এই যে আমার আম্মাজান, তিনি তাঁর সন্তানের প্রতি স্নেহশীল। আপনি তো বরকতময় সত্তা, তাকে আল্লাহর পথে আসার দাওয়াত দিন এবং আল্লাহর নিকট দু’আ করুন আপনার মাধ্যমে যেন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন। রাসূলুল্লাহ

(সা) তার জন্যে আল্লাহর দরবারে দু’আ করলেন এবং তাকে আল্লাহর দিকে আহবান জানালেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। তাঁরা একমাস রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে ওই গৃহে অবস্থান করলেন। তখন তারা ছিলেন। ৩৯ জন পুরুষ মুসলমান। হযরত আবু বকর (রা) “যেদিন প্রহৃত হলেন, সেদিন হযরত হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব ইসলাম গ্রহণ করেন।

উমর ইবন খাত্তাব অথবা আবু জাহল ইবন হিশাম, এ দু’জনের একজন যেন ইসলাম গ্রহণ করেন সে জন্যে রাসূলুল্লাহ্ (সা) দু’আ করেন। ইসলাম গ্রহণ করলেন। হযরত উমর (রা)। রাসূলুল্লাহ্ (সা) দু’আ করেছিলেন বুধবারে আর উমর (রা:) ইসলাম গ্ৰহণ করলেন বৃহস্পতিবারে। তাঁর ইসলাম গ্রহণে রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও গৃহে অবস্থানকারী মুসলিমগণ সমুচ্চ স্বরে তাকবীরধ্বনি উচ্চারণ করেন। মক্কার উচ্চভূমি পর্যন্ত ওই ধ্বনি শোনা গিয়েছিল। ইতোমধ্যে আবুল আরকাম বেরিয়ে আসে। সে ছিল অন্ধ কাফির। সে বলছিল, “হে আল্লাহ, আমার পুত্ৰ আরকামকে ক্ষমা করুন। সে তো ধর্মত্যাগী হয়েছে। হযরত উমর (রা) দাড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা)। আমরা আমাদের দীন ও ধর্মমতকে গোপন রাখব কেন? অথচ আমরা সত্য অনুসরণকারী। আর ওরা ওদের দীন প্রকাশ করছে অথচ তারা বাতিলের অনুসরণকারী।

রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, হে উমর (রা:)! আমরা তো সংখ্যায় কম। আমরা কেমন বিপদের সম্মুখীন হয়েছি তা তো তুমি দেখতেই পোচ্ছ! উমর (রা) বললেন, যে মহান প্ৰভু আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন তার কসম করে বলছি, কুফারী অবস্থায় আমি যে সকল মজলিসে বসেছিলাম এখন আমি ওই সকল মজলিসে গেয়ে ইসলামের কথা প্রচার করব। তিনি ঘর থেকে বের হলেন। বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করলেন। তারপর কুরায়শদের নিকট গেলেন। তারা তাঁর অপেক্ষায় ছিল। আবু জাহ্ল ইবন হিশাম বলল, অমুকে বলছে যে, তুমি নাকি পিতৃধৰ্ম ত্যাগ করেছ। হযরত উমর (রা) বললেন :

آشنهاد آن لااله الاً الله و خدهٔ لاشریلن لهٔ و آن محمد ا عبدهٔ ور سلولهٔআমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মান্বুদ নেই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই এবং এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তৎক্ষণাৎ মুশরিকরা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাল্টা তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন উতবার উপর এবং তাকে হাঁটু দিয়ে চেপে রেখে বেদম প্রহার করতে থাকেন। তিনি তার দু’চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিলেন। উতবা চিৎকার জুড়ে দেয়। এ দৃশ্য দেখে অন্যরা ভয়ে দূরে সরে যায়। উমর (রা) উঠে দাঁড়ালেন।

এরপর আক্রমণ করার জন্যে যে তাঁর নিকটবতী হচ্ছিল, তাকেই তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করছিলেন। অবশেষে সবাই ব্যর্থ হযে পালিয়ে যায়। ইতোপূর্বে হযরত উমর (রা) যে সকল মজলিসে উপস্থিত হতেন তার সবগুলোতেই তিনি গেলেন এবং তাঁর ঈমান আনয়নের কথা প্রকাশ করলেন। তারপর সবার বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্যে কুরবান হোন! আপনার কোন অসুবিধা নেই। কুফৱী অবস্থায় আমি যত মজলিসে যেতাম তার সব কাটিতে গিয়ে আমি আমার ঈমান আনয়নের কথা নিৰ্ভয়ে প্ৰকাশ করে এসেছি।

রাসূলুল্লাহ্ (সা) সাখীদেরকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেন। তাঁর সম্মুখে ছিলেন। হযরত উমর (রা) ও হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব। তিনি বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করলেন এবং নিরাপদে যুহরের নামায আদায় করলেন। এরপর তিনি আরকামের বাড়ীতে ফিরে এলেন। হযরত উমর (রা) তখনো তার সাথে ছিলেন। এরপর উমর (রা) একা ফিরে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-ও বাড়িতে চলে গেলেন।

বিশুদ্ধ অভিমত এই যে, মুসলমানদের অবিসিনিয়ায় হিজরতের পর হযরত উমর (রা) ইসলাম গ্রহণ করেন এবং এটি নবুওয়াতের ৬ষ্ঠ বছরের ঘটনা; যথাস্থানে তার আলোচনা হবে। আলাদাভাবে তাদের জীবনী সংক্রান্ত ভিন্ন গ্রন্থে হযরত আবু বকর ও উমর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের বিস্তারিত বিবরণ আমরা উল্লেখ করেছি। সকল প্ৰশংসা আল্লাহর।

সহীহ মুসলিমে আবু উমামা হাদীছে আমর ইবন আবাসা সুলামী থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নবুওয়াত লাভের প্রথম দিকে আমি একদা তার নিকট উপস্থিত হই। তখন তিনি অবস্থান করেছিলেন মক্কায়। তিনি তখন নিজেকে গোপন রাখতেন। আমি বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, “আমি নবী”। আমি বললাম, কেমন নবী? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল। আমি বললাম, আল্লাহ কি আপনাকে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যা অবশ্যই। আমি বললাম, তবে তিনি কী পয়গাম সহকারে পাঠিয়েছেন? তিনি বলেন, এ বাণী নিয়ে প্রেরণ করেছেন যে, তোমরা যেন একক আল্লাহর ইবাদত করবে: প্রতিমাগুলো ভেঙ্গে ফেলবে এবং আত্মীয়তা বন্ধন অটুট রাখবে। তিনি বলেন, আমি বললাম, যে পয়গাম দিয়ে আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে তা কতই না উত্তম। এ বিষয়ে আপনার অনুসরণ করেছে। কারা? তিনি বললেন, একজন স্বাধীন লোক এবং একজন ক্রীতদাস। অর্থাৎ আবু বকর (রা) ও বিলাল (রা)। আমরা বললেন, এরপর আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং আমি হলাম চতুর্থ ইসলাম গ্রহণকারী। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি আপনার সাথে থাকব।? তিনি বললেন, না, তুমি বরং আপাততঃ তোমার সম্প্রদায়ের নিকট চলে যাও। যখন সংবাদ পাবে যে, আমি প্রকাশ্যে বের হয়েছি, তখন তুমি আমার নিকট এসে আমার সাথে যোগ দিও।

উপরোক্ত হাদীছে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উক্তি স্বাধীন ও অধীন শব্দ দু’টি জাতিজ্ঞাপক অর্থাৎ স্বাধীন প্রকৃতির লোকজন এবং ক্রীতদাস প্রকৃতির লোকজন আমার অনুসরণ করেছে। সেটির ব্যাখ্যায় শুধু আবু বকর (রা) ও বিলাল (রা)-এর নাম উল্লেখ করা সঠিক কিনা তা ভেবে দেখার বিষয় বটে। কারণ, আমর ইবন আবাসার পূর্বে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। যায়দ ইবন হারিছা (রা) কিন্তু হযরত বিলালের পূর্বে ইসলাম গ্ৰহণ করেছিলেন। তাহলে আমর ইবন আবাসা নিজেকে চতুর্থ ইসলাম গ্রহণকারী মনে করাটা ছিল তার অবগতি অনুসারে। অর্থাৎ তিনি মনে করেছিলেন যে, তিনি চতুর্থ ইসলাম গ্রহণকারী। মূলতঃ তখন মুসলমানগণ নিজেদের ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রাখতেন। অনাত্মীয় এবং বেদুঈন তো দূরের কথা ঘনিষ্ট আত্মীয়দের নিকটও তাঁরা তা প্রকাশ করতেন না। সহীহ বুখারীতে আবু উমামা.. সাঈদ ইবন মুসায়্যাব (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি সাআদ ইবন আবু ওয়াককাস (রা)-কে বলতে শুনেছি, যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তখনো অন্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করেননি। সাতদিন পর্যন্ত আমিই ছিলাম। তৃতীয় ইসলাম গ্রহণকারী।

বস্তৃত আমি যেদিন ইসলাম গ্রহণ করি, সেদিন অন্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি, তাঁর এই বক্তব্য স্বাভাবিক কিন্তু এক বর্ণনায় আছে। আমি যেদিন ইসলাম গ্রহণ করেছি, সেদিন ব্যতীত অন্যদিনে কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। তার এই বক্তব্যটি স্পষ্ট নয়। কারণ তাতে বোঝা যায় যে, তাঁর পূর্বে কেউ ইসলাম গ্ৰহণ করেননি। অথচ ইতোপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে হযরত আবু বকর সিদীক (রা), আলী (রা), খাদীজা (রা) ও যায়দ ইবন হারিছ (রা) তাঁর পূর্বে ইসলাম গ্ৰহণ করেছিলেন।

ইসলাম গ্রহণে তাদের অগ্ৰগামিতা সম্পর্কে উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বলে কেউ কেউ বর্ণনা করেছেন। ইবন আহীর এরূপ বর্ণনাকারীদের অন্যতম। ইমাম আবু হানীফা (র) সুস্পষ্ট ভাবে বলেছেন যে, নিজ নিজ পর্যায়ের লোকদের মধ্যে উল্লিখিত ব্যক্তিবৰ্গই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্ৰহণ করেছেন।–

উপরোল্লিখিত হাদীছে সাআদ ইবন আবু ওয়াককাস (রা)-এর এ বক্তব্যও রয়েছে যে, সাতদিন পর্যন্ত আমিই ছিলাম তৃতীয় ইসলাম গ্রহণকারী। তাঁর এ বক্তব্যও অস্পষ্ট। তিনি তার ব্যক্তিগত ধারণা অনুযায়ী এ বক্তব্য রেখেছেন এমনটি বলা ছাড়া আমি অন্য কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছি না। আল্লাহই ভাল জানেন।

আবু দাউদ তায়ালিসী বলেন, হাম্মাদ ইবন সালামা. আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদিনের ঘটনা। আমি তখন উঠতি বয়সের বালক। আমি মক্কায় উকবা ইবন আবু মুআয়তের বকরী চর্যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার নিকট এসে উপস্থিত হলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও হযরত আবু বকর (রা)।

তারা তখন মুশরিকদের হাত থেকে হিজরত করে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা বললেন, হে বালক! তোমার কাছে কি দুধ আছে, যা আমাদেরকে পান করাতে পোর। আমি বললাম, আমি তো মালিকের পক্ষ থেকে এগুলোর আমানতদার। আপনাদেরকে দুধ পান করানোর ইখতিয়ার আমার নেই। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, আচ্ছা তোমার নিকট কি এমন কোন মাদী বকরী আছে যা এখনো প্ৰজননযোগ্য নয়। আমি বললাম, হ্যা, আছে বটে। এরূপ একটি মাদী বকরী। আমি তাদের নিকট নিয়ে আসি।

হযরত আবু বকর (রা) সেটির রশি ধরে রাখলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) সেটির স্তনে হাত রেখে দুআ করলেন। বকরীটির স্তন দুধে ভরে উঠল। হযরত আবু বকর (রা) একটি গর্তকৃতির পাথর নিয়ে এলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) সেটিতে দুধ দােহন করলেন। তিনি নিজে এবং আবু বকর (রা) দু’জনেই দুধ পান করলেন। তারপর আমাকে দুধপান করালেন। এরপর স্তনের উদ্দেশ্যে বললেন, সংকুচিত হয়ে যাও। সেটি সংকুচিত ও ছােট হয়ে গেল। পরে আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসি এবং তাকে বলি যে, ওই পবিত্র বাণী অর্থাৎ কুরআন আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, তুমি বরং শিক্ষা গ্ৰহণ সক্ষম বালক। তাঁর মুখ থেকে আমি ৭০টি সূরা শিখেছিলাম। ওই সূরাগুলো পাঠে কেউই আমার সমকক্ষ ছিল না।

ইমাম আহমদ (র) আফফান সূত্রে হাম্মাদ ইবন সালামা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। হাসান ইবন আরাফা আবু নাজুদ সূত্রে এটি বর্ণনা করেছেন। বায়হাকী বলেন, আবু আবদিল্লাহ

আল-হাফিয… মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন উছমান থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, খালিদ ইবন সাঈদ ইবন আস প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তার ভাইদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্ৰহণ করেন।

তাঁর ইসলাম গ্রহণের সূচনা এভাবে হয়েছিল যে, একরাতে তিনি স্বপ্নে দেখেন তিনি একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাড়িয়ে আছেন। আগুনের বিস্তৃতি এত অধিক ছিল যা একমাত্র আল্লাহই জানেন। তিনি দেখেন যে, এক আগন্তক এসে তাকে আগুনের মধ্যে ফেলে দিতে উদ্যত। অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর কোমর জাপটে ধরে তাকে টেনে রাখছেন, আগুনে পড়ে যেতে দিচ্ছে না। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং বলেন, আল্লাহর কসম এটি অবশ্য সত্য স্বপ্ন। তারপর হযরত আবু বকর (রা)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। তিনি তার স্বপ্নের কথা তাকে জানালেন। তিনি বললেন, এতে তোমার কল্যাণ কামনা করা হয়েছে। ইনি আল্লাহর রাসূল। তুমি তাঁর অনুসরণ কর। অতি সত্বর তুমি তার অনুসরণ করবে এবং ইসলাম গ্ৰহণ করবে। আর ইসলাম তোমাকে আগুন থেকে রক্ষা করবে। তোমার পিতা কিন্তু আগুনে প্রবিষ্ট হবেই। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে সাক্ষাত করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তখন “আজিয়াদা” নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। খালিদ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! হে মুহাম্মদ (সা)! আপনি কিসের দিকে ডাকছেন? তিনি বললেন, আমি তোমাকে ডাকছি। একক লা শরীক আল্লাহর দিকে এবং একথার দিকে যে, মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। উপরন্তু একথার প্রতি যে, তুমি যে পাথরের পূজা করছ, সে পাথর কিছুই শুনে না, লাভ-ক্ষতি করতে পারে না, কিছু দেখে না এবং কে তার পূজা করল কে পূজা করল না তার কিছুই জানে না। সেই পাথরপূজা তোমাকে ত্যাগ করতে হবে।

খালিদ বললেন,

—আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। তাঁর ইসলাম গ্রহণে রাসূলুল্লাহ (সা) অত্যন্ত খুশী হলেন। খালিদ চলে গেলেন। তাঁর পিতা তাঁর ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জেনে তাঁকে খুঁজে আনতে লোক পাঠালো। তাকে ধরে নিয়ে আসা হলে সে তাকে মাটিতে ফেলে। লাঠি দ্বারা পেটাতে থাকে। এভাবে তার মাথায় লাঠি ভাঙ্গে এবং সে বলে, আল্লাহর কসম আমি আর তোকে আহার্য দেব না। খালিদ বলেন, আপনি যদি আমার আহার্য বন্ধ করেন, তবে আমার জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন মতে খাদ্যের ব্যবস্থা আল্লাহ্ তা’আলাই করবেন। অবশেষে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট চলে গেলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাকে সাদরে গ্রহণ করলেন এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে থাকতে লাগলেন।

রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর চাচা হযরত হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিবের ইসলাম গ্ৰহণ

ইউনুস ইবন বুকােয়র বলেন, মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক বলেছেন যে, একজন প্ৰচণ্ড স্মরণশক্তি সম্পন্ন মুসলমান আমাকে বলেছে, সাফা পাহাড়ের নিকট আবু জাহল রাসূলুল্লাহ (সা)-এর

মুখোমুখি হয়। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে ভৎসনা করে তাঁকে পীড়া দেয় এবং তাঁর দীনের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে। উক্ত ঘটনা তার চাচা হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিবের কর্ণগোচর করা হয়। তক্ষুণি হামযা আবু জাহলের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তার নিকট গিয়ে তিনি তাঁর ধনুক দিয়ে আঘাত করে প্রহারে প্রহারে তাকে রক্তাক্ত করে দেন। তখন কুরায়শ বংশের বনী মািখযুম গোত্রের কতক লোক আবু জাহলের সাহায্যে হামযা-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তারা বলে যে, আমরা তো দেখতে পাচ্ছি। আপনি পিতৃধৰ্ম ত্যাগ করেছেন!! হামযা (রা) বললেন, পিতৃধৰ্ম বর্জনে আমাকে কে বাধা দিবে? আমার ভাতিজার পক্ষ থেকে এমন কিছু নিদর্শন আমার নিকট স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যার প্রেক্ষিতে আমি সাক্ষ্য দিতে পারি যে, নিশ্চয়ই সে আল্লাহর রাসূল এবং সে যা বলে তা সত্য। অতএব, আল্লাহর কসম আমি তার পথ ছাড়ব না, তোদের সাধ্য থাকলে আমাকে বাধা দে তো দেখি!

আবু জাহল বলল, আবু আমারাকে ছেড়ে দাও, কারণ আল্লাহর কসম আমি তো তার ভাতিজাকে বিশ্ৰী গালি দিয়েছি। হযরত হামযা যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন কুরায়শরা বুঝতে পারলো যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তিনি আত্মরক্ষা করার মত সামৰ্থ অর্জন করেছেন। ফলে ইতোপূর্বে তাঁর সাথে তারা যে জুলুম-নির্যাতনমূলক আচরণ করত। তা থেকে তারা এখন বিরত থাকল। এ বিষয়ে হযরত হামযা (রা) একটি কবিতা পাঠ করেছিলেন ॥১

ইবন ইসহাক বলেন, এরপর হযরত হামযা (রা) নিজের বাড়িতে ফিরে যান। এবার তার নিকট উপস্থিত হয় শয়তান। সে বলে, আপনি কুরায়শ বংশের সন্ত্রান্ত নেতা। আপনি কি ওই ধর্মত্যাগীর দলে ভিড়লেন? আর নিজের পিতৃপুরুষের ধর্মত্যাগ করলেন? আপনি যা করলেন তার চাইতেও মৃত্যু তো উত্তম ছিল। হযরত হামযা মনে মনে বললেন, হে আল্লাহ! আমি যা করেছি তা যদি সঠিক ও সত্য হয়, তবে আমার অন্তরে তাকে দৃঢ় করে দিন। অন্যথায় তা থেকে বের হওয়ার উপায় করে দিন।

তিনি রাত কাটালেন। কিন্তু সে রাতে শয়তান তার মনে এমন কুমন্ত্রণার জাল বিস্তার করল। যা অন্য কোন দিন করেনি। ভোরে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট গিয়ে বললেন, ভাতিজা! আমি তো এমন বিষয়ে জড়িয়ে পড়েছি যা থেকে বের হওয়ার পথ আমার জানা নেই। কোন ব্যাপার সত্য, নাকি বিভ্ৰান্তি সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে তার উপর অবিচল থাকা আমার মত ব্যক্তির জন্য কষ্টকর। তুমি আমাকে কিছু বল। তোমার বক্তব্য শুনতে আমি খুব আগ্রহী। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাকে উদ্দেশ্য করে ওয়ায-নসীহত করলেন। তিনি তাঁকে পুরস্কারের সুসংবাদ এবং শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলেন। তাতে আল্লাহ তা’আলা হযরত হামযা (রা)-এর অন্তরে ঈমান দান করলেন। তখন তিনি ঘোষণা দিলেন যে, আমি সুস্পষ্টভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সত্য নবী। সুতরাং হে ভাতিজা! তুমি তোমার দীন প্রকাশ্যে প্রচার করে যাও!!! আল্লাহর কসম আমি আমার পূর্ব ধর্মমতে থেকে আসমানের নীচের সমগ্র দুনিয়া পেলেও তা আমার মনঃপূত ১. এখানে হযরত হামযা (রা)-এর কবিতা উল্লেখ করা হয়নি। সুহায়লী তাঁর ‘রাওদুল উনুক’ গ্রন্থে একটি কবিতা

নয়। বরং এই দীন গ্রহণ করে আমি ধন্য। এভাবে হযরত হামযা (রা)-এর মাধ্যমে আল্লাহ আ’আলা তাঁর দীনকে শক্তিশালী করলেন। বায়হাকী হাকীম…… ইউনুস ইবন বুকােয়র সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

হযরত আবু যর গিফারী (রা)-এর ইসলাম গ্ৰহণ

হাফিয বায়হাকী (র) বলেন, আবু আবদুল্লাহ আল হাফিয…… আবু যর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমার পূর্বে মাত্র তিনজন লোক ইসলাম গ্ৰহণ করেছিলেন। আমি হলাম চতুর্থ মুসলমান। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হয়েছিলাম এবং বলেছিলাম আসসালামু আলায়কা ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই আর মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রাসূল। তখন আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর মুখমণ্ডলে তৃপ্তি ও আনন্দের চিহ্ন দেখতে পাই। এটি একটি সংক্ষিপ্ত বৰ্ণনা।

হযরত আবু যর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (র) বলেন, আমর ইবন আব্বাস…… হযরত ইবন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নবুওয়াতপ্রাপ্তির সংবাদ শুনে হযরত আবু যর (রা) তাঁর ভাইকে বললেন, তুমি ওই জনপদে যাও এবং যে লোকটি নিজেকে নবী বলে দাবী করছে এবং তার নিকট আকাশ থেকে সংবাদ আসে বলে প্রচার করছে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে এসে আমাকে জানাও। তুমি তার বক্তব্য শুনে এসে আমাকে তা জানাবে। তখন তার ভাই রওনা হলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন এবং তাঁর বক্তব্য শুনলেন। এরপর তিনি হযরত আবু যর (রা)-এর নিকট ফিরে এসে বলেন যে, আমি তাকে দেখেছি। তিনি সৎকর্মের আদেশ দেন এবং এমন বাণী শুনান যা কবিতা নয়। আবু যর (রা) বললেন, না, আমি যেমনটি চেয়েছিলাম, তেমন সন্তোষজনকভাবে জানাতে পারলেন না।

এবার প্রয়োজনীয় পাথেয় সংগ্ৰহ করে এবং পানির মশক সাথে নিয়ে তিনি নিজেই রওনা হয়ে পড়েন এবং মক্কায় গিয়ে উপস্থিত হন। তিনি এসে মসজিদে প্ৰবেশ করেন এবং সেখানে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে খুঁজতে থাকেন। তিনি তাঁকে চিনতেন না। কাউকে জিজ্ঞেস করাও তিনি সমীচীন মনে করলেন না। এভাবে রাতের কিছু অংশ কেটে যাওয়ার পর তিনি শুয়ে পড়েন। হযরত আলী (রা) তাকে দেখতে পান এবং তিনি যে একজন বহিরাগত মুসাফির তা বুঝতে পারেন। তাই তিনি তাকে সাথে নিয়ে গেলেন এবং আতিথ্য দান করলেন। তাদের কেউই একে অন্যকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। ভোরে আবু যর গিফারী (রা) তাঁর মালপত্র এবং মশক নিয়ে মসজিদে এলেন। দিনভর সেখানে থাকলেন। তখনও তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নযারে পড়েননি। সন্ধ্যায় তিনি তার প্রথম দিনের স্থলে ফিরে এলেন। হযরত আলী (রা) তাকে দেখলেন এবং বললেন, হায় লোকটি বুঝি তার উদ্দিষ্টের সন্ধান পায়নি। তিনি তাঁকে সেদিন নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন এবং রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করে দিলেন। তাদের কেউ কাউকে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না।

তৃতীয় দিনেও আবু যর গিফারী (র) মসজিদে এলেন এবং আলী (রা) আবারও তাকে তাঁর বাড়ি নিয়ে গেলেন। এবার হযরত আলী (রা) তাকে বললেন, হে আগন্তুক! আপনার আগমনের

উদ্দেশ্য আমাকে বলবেন কি? আবু যর (রা) বললেন, আপনি যদি আমাকে কথা দেন যে, আমাকে সঠিক সন্ধান দেবেন, তবে আমার উদ্দেশ্যের কথা আপনাকে বলব। হযরত আলী (রা) কথা দিলেন। আবু যর (রা) তখন তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য তাঁকে খুলে বললেন। হযরত আলী (রা) বললেন, তিনি সত্যবাদী এবং তিনি আল্লাহর রাসূল। আগামী সকালে আপনি আমার সাথে যাবেন। আপনার জন্যে ক্ষতির আশংকা রয়েছে এমন কোন পরিস্থিতি দেখলে আমি দাঁড়িয়ে প্রস্রাবের ভান করবো। আমি যদি স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকি, তবে আপনি আমার পেছনে পেছনে যাবেন এবং আমি যেখানে প্ৰবেশ করি আপনি সেখানে প্ৰবেশ করবেন।

হযরত আলী (রা) রওনা হলেন। আবু যরও তাকে অনুসরণ করলেন। এভাবে হযরত আলী (রা) রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হলেন। সাথে হ্যবত আবু যর (রা)-ও উপস্থিত হলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর আলাপ-আলোচনা শুনলেন এবং তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাকে বললেন, তুমি তোমার সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে যাও এবং ওদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করবে। আমার পক্ষ থেকে অন্য নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তুমি সেখানেই অবস্থান করবে। হযরত আবু যর (রা) বললেন, যে মহান প্ৰভু আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছে তার কসম, তাদের মধ্যে আমি চীৎকার করে করে এ দীনের দাওয়াত দেবো। তিনি ওখান থেকে বের হলেন এবং মসজিদে গিয়ে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা দিলেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল। এ বলে তিনি সেখানে দাঁড়ালেন। কাফিরগণ তাকে প্ৰহার করতে শুরু করলো।” তাদের প্রহারে তিনি মাটিতে পড়ে যান। হযরত আব্বাস (রা) সেখানে আসেন এবং তার উপর উপুড় হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, দুর্ভোেগ তোমাদের জন্যে, তোমরা কি জান না যে, এ লোকটি গিফার গোত্রের? তোমাদের তো ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যে ওপথে সিরিয়ায় যাতায়াত করতে হয়। ওদের হাত থেকে তিনি তাঁকে রক্ষা করলেন। পরের দিনও হযরত আবু যর গিফারী অনুরূপ উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা দিলেন। এবারও তারা তার উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালালো। হযরত আব্বাস (রা) এসে তাঁকে রক্ষা করলেন। এ হল সহীহ বুখারীর ভাষ্য।

সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থে তাঁর ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি আরো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম আহমদ হযরত আবু যর গিফারী (রা)-এর বয়াতে বলেন যে, তিনি বলেছেন, আমি, আমার ভাই আনীস এবং আমার মাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের সম্প্রদায় গিফার গোত্র থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। গিফার গোত্রের লোকেরা যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাসগুলোতেও যুদ্ধ-বিগ্রহ। বৈধ মনে করত। আমরা আমাদের এক মামার বাড়ি গিয়ে উঠলাম। তিনি অত্যন্ত ধনাঢ্য ও সমাজ্যের গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আমাদের আদর-আপ্যায়ন করলেন।

আমাদের এ সম্মান দেখে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়। মামাকে আমাদের বিরুদ্ধে বৈরী করে তোলার জন্যে তারা তাকে বলে যে, আপনি ঘর থেকে বের হওয়ার পর আনীসই তো ঘরের মালিক হয়ে বসে। মামা ঘরে ফিরে আমাদেরকে তা জানালেন। আমি বললাম, এতদিন আমাদের প্রতি আপনি যে সহানুভূতি দেখিয়েছেন এখন তো আপনি সেটি মান করে দিলেন। এরপর তো আপনার এখানে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

তারপর আমরা আমাদের বাহনগুলো নিয়ে সেগুলোর উপর সামানপত্র চাপিয়ে মক্কায় চলে আসি। আমাদের মামা তখন কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলেন। এদিকে আমার ভাই আনীস আমাদের উত্নীগুলো এবং তার প্রতিপক্ষ এক লোকের অনুরূপ উস্ত্রীপাল বন্ধক রেখে সে এবং ওই মালিকের মধ্যে কে উত্তম সে বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে। উভয় পক্ষ একজন গণককে সালিস ও মীমাংসাকারী মেনে নেয়। মীমাংসাকারী সিদ্ধান্ত দেয় যে, আনীসই উত্তম। অনন্তর সে আমাদের উষ্ট্রীপাল এবং অপরপক্ষের বন্ধক রাখা অনুরূপ উগ্ৰীপাল নিয়ে ফিরে আসে।

হে ভাতিজা! আমি কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাথে সাক্ষাতের তিন বছর পূর্বেও নামায পড়েছি। আমি বললাম, কার উদ্দেশ্যে ওই নামায ছিল? তিনি বললেন, আল্লাহর উদ্দেশ্যে। আমি বললাম, কোন দিকে মুখ করে নামায আদায় করেছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে যেদিকে ফিরিয়েছেন সেদিকে। তিনি বলেন, আমি ইশার নামাযও আদায় করতাম। শেষ রাতে আমি নিজেকে কাপড়ের মত হালকা বলে অনুভব করতাম। এভাবে সূর্য উদিত হত এবং দিনের

আলো ছড়িয়ে পড়ত। তিনি বলেন, তখন আমার ভাই আনীস বলে যে, মক্কায় আমার কিছু কাজ

আছে। সুতরাং আমি ফিরে আসার পর আপনার সাথে সাক্ষাত হবে। সে চলে গেল। এরপর সে আমার নিকট আসতে দেরী করে। আমি বললাম, বিলম্বের কারণ কি? সে বলল, সেখানে জনৈক ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাত হয়। লোকটি দাবী করছে যে, আল্লাহ তাকে আপনার ধর্মমতের সপক্ষে রাসূল রূপে প্রেরণ করেছেন। আমি বললাম, লোকজন তার সম্পর্কে কী বলে? সে বলল, তারা তাঁকে কবি, জাদুকর ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত করছে। আমার ভাই আনীস একজন কবি ছিল। সে বলল, আমি তো গণকদের কথাবার্তা শুনেছি। তিনি কিন্তু গণকদের মত কথা বলেন না। অভিজ্ঞ ও খ্যাতিমান কবিদের নিকট আমি তাঁর নিকট শ্রুত বাণীর উল্লেখ করেছি। কিন্ত তা যে কবিতা এমন কথা কেউ বলেননি। আল্লাহর কসম, তিনি কিন্তু নিশ্চয়ই সত্যবাদী আর ওরা মিথ্যাবাদী। আবু যর (রা) বললেন, তুমি কি এখানে আমার কাজগুলো সামাল দিতে পারবে যাতে করে আমি ওখানে যাওয়ার সুযোগ পাই? সে বলল, হ্যা পারব। তবে মক্কাবাসীদের আক্রমণের ব্যাপারে আপনি সতর্ক থাকবেন। কারণ, তারা মুহাম্মাদ (সা)-কে দোষারোপ করে এবং তার প্রতি নির্যাতন চালায়।

হযরত আবু যর (রা) বলেন, আমি রওনা হই এবং মক্কায় গিয়ে পৌছি। সেখানকার একজন দুর্বল মানুষ খুঁজে নিয়ে আমি তাকে বলি, যে ব্যক্তিকে ওরা ধর্মত্যাগী বলছে, সে লোকটি কোথায়? লোকটি আমার দিকে ইঙ্গিত করে। আর আমনি কফিরের দল ও উপত্যকার অধিবাসীরা ঢ়িল হাড় নিয়ে আমার উপর আক্রমণ শুরু করে। আমি অচেতন হয়ে পড়ে থাকি। অবশেষে আমাকে উঠিয়ে নেয়া হয়। আমাকে যখন উঠিয়ে নেয়া হয়, তখন আমি যেন তীর নিক্ষেপের রক্তিম লক্ষ্যবস্তু। আমি যম যম কৃপের নিকট আসি এবং ওই পানি পান করি। রক্তগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করি। এরপর আমি ক’বাগৃহ এবং তার গিলাফের মধ্যখানে অবস্থান করতে থাকি। ভাতিজা! আমি দীর্ঘ ৩০ দিন ৩০ রাত ওখানে অবস্থান করি। যমযমের পানি ছাড়া অন্য কোন খাদ্য আমার ছিল না। তাতেই আমি এত স্বাস্থ্যবান ও মোটা হয়ে পড়ি যে, আমার পেটের চামড়ার ভাজ বিলুপ্ত হয়ে সব সমান হয়ে যায়। ক্ষুধাজনিত কোন দুর্বলতা আমি অনুভব করিনি।

এক পূর্ণিমা রাতের ঘটনা। মক্কাবাসীরা সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শুধু দু’জন মহিলা বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করছিল। তারা আসাফ ও নায়েলা প্রতিমার উপাসনা করছিল। আমি বললাম, তোমরা আসাফ ও নায়েলা প্ৰতিমার একটিকে অন্যটির সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। আমার বক্তব্য তাদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল না। এরপর আমি বললাম, ওগুলোতো কাঠের ন্যায় জড়পদার্থ আমি কিন্তু ওগুলোর প্রতি আগ্রহী নই। এরপর তারা দু’জন এ খেদোক্তি করতে করতে ফিরে যাচ্ছিল যে, এখানে যদি আমাদের কোন লোক থাকত, তবে মজা দেখতাম। পথিমধ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও হযরত আবু বকর (রা) তাদের সম্মুখে পড়লো। তারা দু’জন পাহাড় থেকে নেমে আসছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল, কা’বা গৃহ ও তার গিলাফের মাঝে আমরা একজন ধর্মত্যাগী ব্যক্তিকে দেখে এসেছি। তারা বললেন, সে তোমাদেরকে কী বলেছে? তারা বলল, সে এমন কথা বলেছে, যা মুখে বলা যায় না। রাসূলুল্লাহ্ (সা) ও হযরত আবু বকর (রা) এসে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং কা’বা গৃহের তাওয়াফ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) নামায আদায় করলেন। এরপর আমি তার নিকট এলাম। সর্বপ্রথম আমি তাকে ইসলামী রীতিতে অভিবাদন জানাই। তিনি বললেন।

তোমার প্রতি শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বৰ্ষিত হোক। তুমি কে হে? আমি বললাম, আমি গিফার গোত্রের লোক। তিনি তার নিজের কপালে হাত রাখলেন। আমি মনে মনে বললাম, নিশ্চয়ই আমি গিফার গোত্রের লোক শুনে তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আমি ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে তার হাত ধরতে যাচ্ছিলাম। তখন তাঁর সাথী হযরত আবু বকর (রা) আমাকে থামিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) সম্পর্কে আমার চাইতে তিনিই অধিক জানতেন।

রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তুমি কবে থেকে এখানে আছ? আমি বললাম, ত্রিশ দিন-রাত অবধি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে খাদ্যসামগ্ৰী সরবরাহ করে কে? আমি উত্তর দিলাম, যমযমের পানি ব্যতীত অন্য কোন খাদ্য আমি খাইনি। আমি এও বললাম যে, ওই পানি পান করেই আমার পেটের চামড়ার ভাজ সমান হয়ে গিয়েছে আর আমি আমার মধ্যে ক্ষুধাজনিত কোন দুর্বলতা অনুভব করি না। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই যম যম কৃপ বরকতময় কৃপ এবং ওই পানি খাদ্যগুণ সম্পন্ন। হযরত আবু বকর (রা) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি আজ রাতে তার আহারের ব্যবস্থা করি। তিনি তাই করলেন। এরপর তারা দু’জন যাত্রা করলেন।

আমিও তাদের সঙ্গে গেলাম। হযরত আবু বকর (রা) একটি দরজা খুললেন এবং আমাদের জন্যে তাইফের আঙ্গুর নিয়ে এলেন। এতদিন পর এই প্রথম আমি খাদ্য গ্রহণ করলাম। এরপর কয়েক দিন আমি সেখানে অবস্থান করি। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, একটি খেজুর বীথি অঞ্চলের উদ্দেশ্যে আমি এ স্থান ত্যাগ করব। আর সেটি সম্ভবত ইয়াছরিব অঞ্চল। তুমি আমার পক্ষ থেকে তোমার সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট আমার দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিতে পারবে? তাহলে তোমার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা তাদের কল্যাণ সাধন করবেন এবং এর বদৌলতে আল্লাহ্ তা’আলা তোমাকে সাওয়াব দান করবেন।

হযরত আবু যর (রা) বলেন, আমি তখন ওখান থেকে আমার ভাই আনীসের নিকট আসি। সে আমাকে বলে, আপনি কী করে এলেন? আমি উত্তর দিলাম যে, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে সত্য বলে গ্রহণ করেছি। তখন আনীস বললেন, আপনার ধর্মমতের প্রতি আমার অসন্তুষ্টি নেই। আমিও ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-কে সত্য বলে মেনে নিলাম। এবার আমরা উপস্থিত হলাম। আমাদের মায়ের নিকট। আমাদের মা বললেন, তোমাদের ধর্মমতের প্রতি আমার কোন অসন্তুষ্টি নেই। আমিও ইসলাম গ্ৰহণ করলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-কে সত্য বলে মেনে নিলাম। সওয়ারীতে আরোহণ করে আমরা আমাদের গিফার গোত্রে ফিরে আসি।

রাসূলুল্লাহ্ (সা) মদীনা যাওয়ার পূর্বেই তাদের কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করে। খিফাফ ইবন ঈসাইন ইবন রাখসত গিফারী তাদের ইমাম ছিলেন। তখন তিনিই তাদের নেতা ছিলেন। অন্যরা বলেছিল যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) মদীনায় আসার পর আমরা ইসলাম গ্রহণ করব। রাসূলুল্লাহ (সা) যখন মদীনায় পদার্পণ করলেন, তখন তারা ইসলাম গ্ৰহণ করল। তাদের সহযোগী গোত্র আসলাম গোত্রের লোকেরাও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এল। তারা বলল। ইয়া রাসূলাল্লাহ! গিফার গোত্র আমাদের ভ্ৰাতৃ গোত্র। ওরা যে ভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছে আমরাও সেভাবে ইসলাম গ্রহণ করতে চাই। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ

গিফার গোত্ৰ আল্লাহ তাদের ক্ষমা করুন এবং আসলাম গোত্র আল্লাহ তাদেরকে নিরাপদ রাখুন। ইমাম মুসলিম (র) হুদাবা ইবন খালিদ সূতি সুলায়মান ইবন মুগীরা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। হযরত আবু যর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা অন্য বর্ণনায় ও এসেছি, তবে তাতে আরও অতিরিক্ত তথ্য রয়েছে। আল্লাহই জানেন। “রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নবুওয়াত লাভের সুসংবাদ” অধ্যায়ে হযরত সালমান ফারসী (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *