১১. বনি ক্বারাইজার হত্যাযজ্ঞঃ মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে খুশির দিন

অধ্যায়-১১
বনি ক্বারাইজার হত্যাযজ্ঞঃ মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে খুশির দিন
লেখক: আয়েশা আহমেদ

বনি ক্বারাইযা হত্যাযজ্ঞের দিনটি ছিল মদীনার মুসলিম উমমাহর জন্য সবচেয়ে খুশীর, সবচেয়ে উৎসব মুখর দিন।নবী ক্বারাইযা গোত্রের সকল প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের (প্রায় ৯০০) শিরোচ্ছেদ এবং নারী ও শিশুসহ তাদের সমুদয় সম্পদ বিলিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আল-তাবারী ৮: ৩৮ :“আল্লাহর রাসূল নির্দেশ দিলেন যে, সকল প্রাপ্তবয়স্ক ইহুদী পুরুষ এবং বয়ঃসন্ধিপ্রাপ্ত বালকের শিরোচ্ছেদ করতে হবে। নবী তারপর বনি ক্বারাইযা ইহুদীদের সম্পদ, স্ত্রীগণ ও সন্তানদেরকে মুসলমানদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন।”কোরআনের দু’টি আয়াতে সংক্ষেপে এ ঘটনার উল্লেখ আছে (৩৩ : ২৬-২৭) :“তোমরা অনেককে কতল করেছিলে, এবং অনেককে বন্দী করেছিলে … এবং আল্লাহ তোমাদেরকে দিয়েছিলেন তাদের জমি, তাদের বাড়ীঘর, এবং তাদের জিনিসপত্র  ও নারীগণকে, এবং এমন এক জমিনের কর্তৃত্ব যেখানে তোমরা (আগে) যাও নাই। এবং আল্লাহ সর্বশক্তিমান।”

মদীনার সকল উৎফুল্ল মুসলমান বর্ণাঢ্য শিরোচ্ছেদ প্রদর্শনী এবং ঘটতে যাওয়া নারী বিতরণ দেখার জন্য সমবেত হয়েছিল। বাজার এলাকায় একটা গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। কয়েকজন পুরুষ ইহুদী পুরুষদের বিবস্ত্র করে তাদের যৌনকেশ গজিয়েছে কিনা তা পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিল। যাদের তলপেটের নীচে লোম ছিল তাদেরকে কতল করার জন্য বাছাই করা হয় এবং বাকীদেরকে দাস শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।  সুনান আবু-দাউদ, পুস্তক ৩৮, সংখ্যা ৪৩৯০:

আতিয়াহ্‌ আল ক্বারাজির বর্ণনা করেন : “আমি বনু ক্বারাইজার বন্দীদের মধ্যে ছিলাম। তারা (সাহাবীরা) আমাদেরকে পরীক্ষা করল, এবং যাদের তলপেটের নীচে লোম গজাতে শুরু করেছে তাদেরকে হত্যা করা হল এবং যাদের লোম গজায় নাই তাদেরকে হত্যা করা হল না। যাদের লোম গজায় নাই আমি তাদের একজন ছিলাম।”

তাদের কাপড়চোপড় যুবতীদের জন্য রেখে দেওয়া হয়। নবী হত্যাযজ্ঞের আয়োজন তদারক করেন; আলী, আবুবকর, ওমর ও হামযাসহ অনেক সাহাবা এই শিরোচ্ছেদ সম্পাদন করেন . . . . . দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করার এই প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন নবী নিজে। তিনি উচ্চস্বরে নারায়ে তকবির আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে ক্বারাইযা গোত্রের প্রধান কাব বিন আসাদের গলা কেটে ফেলেন। এভাবে হত্যা উৎসব শুরু হয়। গুরুতর আহত মৃত্যু পথযাত্রীর গলা দিয়ে যখন গলগল করে রক্ত বের হচ্ছিল, তখন উপস্থিত নারী-পুরুষ আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিচ্ছিল এবং আল্লাহ ও মুহামমদের প্রশস্তিসূচক গান গাইছিল।

আধুনিক কালের ভিডিওতে দেখা যায়, আধুনিক কালের তরুণ জিদাহীরা নবী এবং অন্যান্য মুমিনের সুন্নত অনুসরণ ক’রে যখন অবিশ্বাসী ব্যক্তির দেহ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তখন তারা আল্লাহু আকবর ধ্বনি দেয় এবং আল্লাহর হামদ গায়। ব্যাপারটা যেন অনেকটা তেমন। উলঙ্গ ইহুদী পুরুষদেরকে পর্যায়ক্রমে গর্তের কিনারায় আনা হচ্ছিল এবং তাদের মাথা কেটে ফেলা হচ্ছিল এবং শরীর গর্তে ফেলা হচ্ছিল। প্রতিটি ইহুদীকে হত্যা করার সময় মুসলমান নারী-পুরুষ আনন্দে নাচছিল (৯/১১-তে ফিলিস্তিনীরা যেভাবে নেচেছিল)।

এই হত্যাযজ্ঞ শেষ হওয়ার পর জায়গা-জমি, ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং নারী ও শিশুদেরকে বিতরণ করা হয়। প্রথমে পবিত্র নবী তার নির্ধারিত অংশ হিসাবে সবকিছুর শতকরা ২০ ভাগ রেখে দেন।  লুঠের মধ্যে অনিন্দ্য সুন্দরী কিশোরী রেহানাকে তিনি ভোগ করার জন্য ভাগে পান। বাকী যুবতীদেরকে লটারীর মাধ্যম জিহাদীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বুখারী, খণ্ড ৫, পুস্তক ৫৯,  সংখ্যা ৩৬২ :“ইবনে ওমর বর্ণনা করেন : নবী তখন তাদের পুরুষগণকে হত্যা করলেন এবং তাদের নারী, শিশু ও সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে বিতরণ করে দিলেন. . . . . . . ।”

“সিরাত এ রাসূলুল্লাহ,” ইবনে ইসহাক, পৃ ৪৬৪ :“মদীনায় বনি ক্বারাইযা গেত্রের ৮০০-৯০০ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে মাথা কেটে হত্যা করার এবং গর্তে নিক্ষেপ করার পর নবী তাদের সম্পত্তি, স্ত্রীগণ ও শিশুদের গণিমতের মাল হিসাবে ভাগ করে দিলেন . . . . তিনি আমর বিন খানুফার কন্যা রেহানাকে নিজের জন্য নিলেন।”একজন নারী তার পরিবার ও সম্প্রদায়ের খুনীদের যৌনদাসী হবার পরিবর্তে মৃত্যু বরণ করতে চেয়ে তাকে হত্যা করার জন্য কাকুতি-মিনতি করেছিল। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ আল-জবিরকে থাবিতের সুপারিশে হত্যা করা হয় নাই, কারণ অতীতে জাবির তার প্রাণ রক্ষা করেছিল। অবশ্য জাবির বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু পছন্দ করেছিল, কারণ তার প্রিয়জনদের ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। এতে নবী ভীষণ রেগে যান। তিনি চিৎকার করে বলেন, “যাও তোমার বন্ধুদের সঙ্গে নরকের আগুনে যোগ দাও।” এবং তিনি থাবিতকে নির্দেশ দেন, যেন সে নিজে তার উপকারী বন্ধুর গলা কেটে ফেলে।

আমাদের নবী সুদর্শনা রেহানাকে ভোগ করার জন্য তাড়াতাড়ি ঘটনা স্থল ত্যাগ করেন। শোকাভিভূত এই কিশোরী সকাল বেলায় তার ভাইদের, বাবা ও স্বামীর গলা কেটে ফেলতে দেখেছে। তাকে সারারাত ধর্ষণ করার পর নবী বিয়ের প্রস্তাব দেন, যদি সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। সে তার স্বামীসহ আপন প্রিয়জনদের হত্যাকারীর স্ত্রী হতে অস্বীকৃতি জানায়। আমাদের নবী ছিলেন সুন্দরী রমণীদের সত্যিকার গুণগ্রাহী। তিনি তাকে তার হারেমে রক্ষিতা হিসাবে রেখে দেন। এ ব্যাপারটা না মেনে রেহানার উপায় ছিল না।

সেই রাতটি ছিল অনেক অবিবাহিত মুমিনের জন্য অত্যন্ত সুখের। তাদের নবীকে ধন্যবাদ, তারা প্রথমবারের মত নারীদেহ ভোগ করতে পেরেছিল। অনেকে নিজের মনমত অন্য অবিবাহিত বন্ধুর সঙ্গে ভাগ করে ভোগ করেছিল, কারণ লটারীতে তাদের ভাগ্যে যুবতী রমণী জোটে নাই। বর্তমান কালের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ১২ বছরের একটি মেয়েকে কয়েকজন তালেবান মিলে ধর্ষণ ক’রে তাদের প্রিয় নবীর সুন্নত পালন করছে। পার্থক্য হচ্ছে ১২ বছর বয়সী যেসব ক্বারাইযা মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছিল তাদের দুঃখে কাঁদার জন্য পরিবারের কেউ অবশিষ্ট ছিল না। পরদিন সকালে আমাদের নবী লক্ষ্য করলেন যে, অনেক যুবক জিহাদী ফজরের নামাজ আদায় করতে আসে নাই। বাধ্যতামূলক নামাজ আদায়ে না আসার জন্য সারারাত জেগে ফূর্তি করা কোন অজুহাত হতে পারে না। তিনি তাদের কুড়েঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন। তারা তখন সারারাত ফূর্তি করে বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল।

বুখারী, খণ্ড ৬, পুস্তক ১১, সংখ্যা ৬২৬ :“নবী বললেন, ’যারা নামাজের জন্য বাড়ী থেকে বের হয় নাই তাদেরকে পুড়িয়ে মার, তাদেরকে তাদের ঘরের ভিতর জীবন্ত দগ্ধ কর।”এত বেশী উলঙ্গ জিহাদীকে জ্বলন্ত কুড়েঘর থেকে ছুটে পালাতে এর আগে কখনো দেখা যায় নাই। তাদের দাড়িতে এবং তলপেটের নীচের লোমে আগুন ধরে গিয়েছিল। খারাপ মুসলমানদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারা বিশেষ ধরনের সুন্নত। ভাল মুসলমানরা আজকের দিনেও এ সুন্নত পালন করে। ক্বারাইযা গনিমতের এক পঞ্চমাংশ নবী তার ভাগে পেয়েছিলেন। এটি ছিল তার জীবনে পাওয়া বড় ধরনের লুঠের ভাগ। তার ভাগে একশতর বেশী নারী পড়েছিল। সবচেয়ে সুন্দরী কমবয়সীদের নিজের ভোগের জন্য রেখে বাকী কয়েকজনকে তিনি বন্ধু ও আত্মীয়দের মধ্যে বিলিবণ্টন করে দেন।তাবারির ইতিহাস (The History of Tabari), খণ্ড ৮, পৃ ২৯-৩০।

নিজের ভাগে পাওয়া নারীদের মধ্য থেকে নবী রায়তাহ বিনতে হিলাল নামে একজনকে যৌনদাসী হিসাবে ভোগ করার জন্য তার জামাতা আলীকে উপহার দেন। তিনি তার জামাতা উসমান বিন আফানকে জয়নব বিন হায়ান নামের আর এক যৌনদাসীকে এবং শ্বশুর ওমর ইবন খাত্তাবকে অজ্ঞাতনামা এক যৌনদাসী উপহার দেন। ওমর যৌনদাসীটিকে তার ছেলে আবদুল্লাহকে দেন। নবীর অন্যান্য বিশিষ্ট সাহাবাদের অধিকাংশই উপহার হিসাবে যৌনদাসী পেয়েছিলেন।

অবশিষ্টদের বিক্রির জন্য নজদে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিক্রির টাকা দিয়ে অস্ত্র ও ঘোড়া কেনা হয়।(তাবারি, খণ্ড ৩৯) :“তখন আল্লাহর রাসূল সাদ বিন জায়িদকে কিছু সংখ্যক ক্বারাইযা বন্দীসহ নজদে পাঠালেন। এবং তাদের বিনিময়ে তিনি অস্ত্র ও ঘোড়া কিনলেন।”

(নিবন্ধটি Ayesha Ahmed-Gk Massacre of Bani Quraiza: Muslim Ummah’s Happiest Day-এর বাংলায় ভাষান্তর। মূল ইংরাজী নিবন্ধটি রবিবার, ৩১ মে ২০০৯ তারিখে ইসলাম ওয়াচ (www.islam-watch.org)-এ প্রকাশিত হয়)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *