• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

মৃত্যুর স্বাদ – রকিব হাসান

লাইব্রেরি » রকিব হাসান » মৃত্যুর স্বাদ – রকিব হাসান
Current Status
Not Enrolled
Price
Free
Get Started
Log In to Enroll

মৃত্যুর স্বাদ

গল্পটা বলেছিল একজন বুড়ো সৈনিক, বহু বছর আগে। হলপ করে বলেছে সে, এটা সত্যি ঘটনা। কেউ বিশ্বাস করেছে তার কথা, বিস্ময়ে থ হয়ে থেকেছে। কেউ করেনি, হেসেছে মুখ বাকিয়ে। আড়ালে গিয়ে বলেছে, ‘গুল মারার আর জায়গা পায়নি।”

সত্য কি মিথ্যে সে তর্কে গেলে অনেক কথাই আর শোনা হয় না, অনেক বিস্ময়কর সত্যি ঘটনাও চাপা পড়ে যায় বিস্মৃতির আড়ালে। কাজেই, মনে হয় বলে ফেলাই ভাল। যে বিশ্বাস করল, করল, যে করল না, করল না।

যাকে নিয়ে এই গল্প, তার নাম বিল ডেনভার। অনেক অ্যাডভেঞ্চারই করেছে সে জীবনে, তবে এক সেপ্টেম্বরের সকালে দক্ষিণ ডাকোটায় একটা গ্রিজলি ভালুকের সঙ্গে হাতাহাতি হওয়ার পর যে ঘটনা ঘটিয়েছে তার কোন তুলনা হয় না। তখন তার বয়েস চল্লিশ। কিছু কিছু মানুষের টিকে থাকার বিস্ময়কর ক্ষমতার এটা একটা উদাহরণ। আমেরিকার বুনো পশ্চিম সম্পর্কে অনেক রোমাঞ্চকর গল্প শোনা যায়। কেউ হয় দক্ষ পিস্তলবাজ, কেউ অসাধারণ দুঃসাহসী, কেউ বা আবার বিন্দুমাত্র প্রাণের মায়া না করে বেরিয়ে পড়ে সাংঘাতিক সব অ্যাডভেঞ্চারে। বিল ছিল একজন অ্যাডভেঞ্চারার।

শুরুতে নাবিক ছিল সে, অফিসার। ১৮১৭ সালে ক্যারিবিয়ান সাগরে কুখ্যাত জলদস্যু জা ল্যাফিটির হাতে বন্দি হয়। সমস্ত নাবিকসহ বিলের জাহাজ দখল করে ল্যাফিটি। বেঁচে থাকার একটা সুযোগ দেয় বিলকে–হয় তার সঙ্গে দস্যুতায় যোগ দিতে হবে, নয়তো তক্ষুণি অন্য দুনিয়ায় পাড়ি জমাতে হবে। মরার চেয়ে ডাকাত হতেই বেশি আগ্রহ দেখায় বিল। কিন্তু বছরখানেকের বেশি সহ্য করতে পারেনি। গালস্টেন আইল্যাণ্ডে থাকার সময় একদিন ল্যাফিটির আদেশ অমান্য করে বসে। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। পালায় সে। একজন সঙ্গীকে নিয়ে সাঁতরে বহু মাইল বিপদসঙ্কুল সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে গিয়ে ওঠে আমেরিকার উপকূলে। তার প্রধান দুশ্চিন্তা ছিল তখন নরখাদক ইনডিয়ানদের নিয়ে। লুকিয়ে লুকিয়ে এগোতে থাকে। উদ্দেশ্য, লুইজিয়ানা সীমান্ত দিয়ে টেকসাসে ঢুকে পড়া।

কারানকাউয়া নরখাদকদের ফাঁকি দিল সে ঠিকই, কিন্তু হিসেবে গোলমাল করে পথ হারিয়ে ফেলল। উত্তর-পুবে যাওয়ার বদলে সরে চলে এল উত্তর-পশ্চিমে। লুইজিয়ানায় না ঢুকে ঢুকল গিয়ে পশ্চিম কানসাসে, পাউনি ইনডিয়ানদের এলাকায়। ধরা পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে দেবতার উদ্দেশ্যে তার সঙ্গীকে বলি দিয়ে দেয়া হলো। কিন্তু অসামান্য দক্ষতায় বিল পটিয়ে ফেলল ইনডিয়ানদের সর্দারকে। তার কাছে সামান্য কিছু জিনিস ছিল, সেগুলো উপহারও দিল। তার ব্যবহারে এবং উপহার পেয়ে সর্দার এতই খুশি, মৃত্যুদণ্ড তো মওকুফ করে দিলই, বিলকে ধর্মপুত্র করে নিল।

১৮১৯ সাল পর্যন্ত পাউনি সেজে রইল বিল। তারপর একদিন তার ধর্মপিতা সেইন্ট লুইসে রওনা হলো উইলিয়াম ক্লার্কের সঙ্গে দেখা করার জন্যে। ক্লার্ক তখন ইনডিয়ান অ্যাফেয়ার্সের সুপারিনটেনডেন্ট। বিলকে সঙ্গে নিল সর্দার। সেইন্ট লুইসে এসে আবার সাদা-মানুষ হয়ে গেল বিল।

১৮২৩ সালের বসন্তে অ্যাশলি-হেনরির দলে যোগ দিয়ে মিসৌরির উজানে পার্বত্য অঞ্চলে রওনা হলো বিল। নতুন প্রদেশ মিসৌরির একজন বেশ ক্ষমতাশালী লোক তখন জেনারেল অ্যাশলি। সেনাবাহিনী ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। ফারের ব্যবসা করে টাকা কামাচ্ছেন দেদার। আগের বছরও আরেকটা দলকে পার্বত্য অঞ্চলে পাঠিয়েছেন ফার সংগ্রহ করে আনার জন্যে। তিনি শুনেছেন, পেরুর সোনার খনিতে যত সম্পদ আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্পদ নাকি আছে মিসৌরির উজানে বনে-প্রান্তরে। টাকার লোভ নেই বিলের, কেবল অ্যাডভেঞ্চারের লোভেই ভিড়ে গেল অ্যাশলির সঙ্গে।

দুর্ধর্ষ অ্যারিকারা (আমেরিকানরা নাম বিকৃত ও সংক্ষিপ্ত করে রী বলে ডাকত) ইনডিয়ানদের এলাকার ভেতর দিয়ে গেছে পথ। বাধা দিল ওরা। পিছিয়ে আসতে হলো অ্যাশলির দলকে। লড়াইয়ে মারা গেল পনেরোজন সৈন্য, আহত হলো অনেক। পায়ে আঘাত পেল বিল। অ্যাশলি বুঝলেন এই বিজয়ের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে রী-রা। তার আগেই ওদেরকে দমন করতে হবে। সৈন্য সাহায্য চেয়ে আমেরিকান সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সংবাদ পাঠালেন তিনি।

 সাহায্য পাঠানো হলো। কিন্তু হিসেবে ভুল করে সব ভজঘট করে দিলেন দলপতি কর্নেল লিভেনওয়ার্থ। তাকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে ছেড়ে দিল রী-রা। সাহস আরও বেড়ে গেল ওদের।

 দলবল নিয়ে নদীর ভাটিতে নেমে যেতে বাধ্য হলেন অ্যাশলি আর তার ফিল্ড লীডার মেজর অ্যানড্রু হেনরি। ভীষণ হতাশ তারা। নদীপথ বন্ধ। সামনে এগোতে হলে এখন স্থলপথ ছাড়া গতি নেই। ফোর্ট কিউয়া থেকে কুড়িয়ে-বাড়িয়ে কয়েকটা ঘোড়া হয়তো জোগাড় করা যায়। চড়ে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না, ইয়েলোস্টোনের ফোর্ট হেনরি পর্যন্ত রসদ বয়ে নিতে পারলেই ধরে নিতে হবে ভাগ্য খুবই ভাল। ঘোড়ার জন্যে মেজর হেনরিকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন অ্যাশলি। উধাও হয়ে গেছে রী-রা। কোথায় গেছে কেউ জানে না। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ। যে কোন সময় যে কোনখানে ওদের সামনে পড়ে যাওয়ার ভয় আছে এখন।

 আগস্টের মাঝামাঝি ফোর্ট কিউয়া থেকে তেরোজনের দল নিয়ে মিসৌরির উজানে রওনা হলেন হেনরি। পশ্চিমে চলে যাবেন একেবারে গ্র্যান্ড রিভার পর্যন্ত। দক্ষিণ ডাকোটার সাংঘাতিক দুর্গম অঞ্চলের ভেতর দিয়ে গেছে পথ। কাটাঝোপে ভরা, নির্জন, শুকনো, বসতিহীন অঞ্চল। কয়েক রাত পরেই আক্রমণ করল ইনডিয়ানরা। দুজন লোক মারা গেল তার, আরও দুজন আহত হলো।

দলে বিলও রয়েছে। দলপতির কথা মানতে চায় না, বেপরোয়া, বেয়াড়া, নিজের মন মত চলে। এভাবে চলতে গিয়েই পড়ল গ্রিজলি ভালুকের খপ্পরে। একটা ঝোপের ভেতর দুই বাচ্চাকে নিয়ে শুয়ে ছিল ভালুকটা। মানুষ দেখে গেল খেপে। তেড়ে এল।

 রাইফেল তুলে ভালুকের বুকে গুলি করল বিল। ভেবেছিল এক গুলিতেই খতম হয়ে যাবে। কিন্তু হলো না। আরেকবার নলে গুলি ভরে পাউডার ঠাসতে ঠাসতে তিরিশ সেকেণ্ড লেগে যাবে। অত সময় নেই। ফলে যা করার তাই করল সে। রাইফেল ফেলে সাহায্যের জন্যে চিৎকার করতে করতে দিল দৌড়।

দশ কদমও যেতে পারল না। ধরে ফেলল তাকে ভালুক। এক থাবায় ফেলে দিল মাটিতে।

দলে দুজন অভিজ্ঞ সৈনিক আছে। একজন ব্ল্যাক হ্যারিস, আরেকজন হিরাম অ্যালেন। বিলের চিৎকার শুনে প্রথম সেখানে গিয়ে পৌঁছল হ্যারিস। ভালুকের একটা বাচ্চা তাড়া করল তাকে নিয়ে গিয়ে ফেলল পানিতে। বুক পানিতে দাঁড়িয়ে বাচ্চাটাকে গুলি করে মারল সে।

দলের অনন্যরা এসে দেখল ছুরি নিয়ে বিশাল এক ভালুকের সঙ্গে লড়াই করছে বিল। ভালুকটা থাবা মারছে, চিরে ফালাফালা করছে নখ দিয়ে, আর বিলও চিৎ হয়ে পড়ে থেকে যেভাবে পারছে ওটার গায়ে ছুরি বসাচ্ছে।

মুহূর্ত দেরি না করে গুলি চালাতে শুরু করল ওরা। বিলের গুলি আর ছুরির আঘাতেই অনেকটা কাহিল হয়ে গিয়েছিল ভালুকটা। টলে পড়ল বিলের পাশে।

 তাকানো যায় না বিলের দিকে। সমস্ত শরীর ক্ষতবিক্ষত। গালের হাড় দেখা যায়। পাঁজরের হাড় ভেঙেছে। প্রতিবার দম নেয়ার সময়ই ভুরভুর করে রক্তের বুদবুদ বেরোয় গলা থেকে। অন্তত পনেরোটা মারাত্মক আঘাত রয়েছে, যার একটাই মানুষের মৃত্যু ঘটানোর জন্যে যথেষ্ট।

সবাই বুঝল, আর কয়েক মিনিটের বেশি বাঁচবে না বিল। তার দিকে তাকিয়ে বিষন্ন সহানুভূতির হাসি হাসল তারা, কোন সান্ত্বনা দিতে পারল না। কয়েক মিনিট পর যখন মরল না সে, ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। কারণ লাশটাকে কবর দেয়ার পর সেদিন আর দিনের আলো থাকবে না।

রাত হলো। ওদেরকে অবাক করে দিয়ে তখনও মরল না বিল।

মরল না সকালেও। জটিল হয়ে গেল পরিস্থিতি। আরেকটা রাত এখানে কাটানো বিপজ্জনক। রী-রা যেকোনখানে থাকতে পারে। এক জায়গায় বেশি সময় কাটাতে গেলে টের পেয়ে চলে আসতে পারে ওরা। তার আগেই নিরাপদ জায়গায় পালানো দরকার। বিপদে পড়ে গেলেন হেনরি। মুমূর্ষ একজন মানুষকে এভাবে ফেলে যাওয়াটা অমানবিক, আবার প্রায় মৃত একজনের জন্যে সুস্থ দশটা জীবনের ঝুঁকি নেয়াটাও বোকামি। ইতিমধ্যেই অস্থির হয়ে উঠেছে সবাই। শেষে আর কোন উপায় না দেখে বললেন, দুজন লোক বিলকে কবর দেয়ার জন্যে থেকে গেলে ভাল হয়। কোন চাপাচাপি নেই। কেউ যদি ইচ্ছে করে থাকতে চায় তবেই থাকবে।

রাজি হয়ে গেল উনিশ বছরের এক নিগ্রো তরুণ। নাম জিম ব্রিজার।

কিন্তু এরকম একটা অনভিজ্ঞ ছেলেকে এই ভয়ঙ্কর এলাকায় একলা ফেলে যাওয়া আর তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া একই কথা। অন্যদের দিকে তাকালেন হেনরি। অভিজ্ঞ আরও একজনকে রেখে যেতে চান ছেলেটার সঙ্গে।

জন ফিজেরাল্ড নামে একজন বলল, নিরানব্বই ভাগ মরা একটা প্রায় লাশের জন্যে দুজন মানুষের মাথা কাটা পড়াটা কি উচিত হবে? রীদের বিশ্বাস নেই।

হেনরি তখন ঘোষণা করলেন, যে থাকবে তাকে চল্লিশ ডলার পুরস্কার দেয়া হবে। এত টাকা ফিজেরান্ডের তিন মাসের বেতন। সামান্য দ্বিধা করে সে-ই থাকতে রাজি হয়ে গেল।

সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আর একটা মুহূর্তও দেরি না করে ক্যাম্প ভাঙার নির্দেশ দিলেন হেনরি। যত জলদি পারেন বাকি আটজনকে নিয়ে পৌঁছে যেতে চান ইয়েলোস্টোনে।

বেশ গর্বিত ভাবভঙ্গি তখন জিমের। তার ধারণা, সবগুলো চোখই প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে তার দিকে। কল্পনাও করছে না, সেফ ‘বোকা’ বলে তার জন্যে মনে মনে আফসোস করছে এখন অভিজ্ঞ মানুষগুলো।

ক্যাম্প তুলে নিয়ে রওনা হয়ে গেল ওরা।

একটা কি দুটো ঘণ্টা ফিজেরাল্ড কিংবা বিলের দিকে কোন নজরই দিল না জিম। চুপচাপ বসে তাকিয়ে রইল তার রাইফেলের দিকে। মন চলে গেছে মিসৌরিতে, বাড়িতে। কামারের কাজ করতে হত তাকে ঘৃণা করত কাজটাকে। মনে হত, বাপের কামারশালায় বসে গোলামি করছে। তাকিয়ে থাকত নদীর দিকে। দেখত নদীতে ভেসে যাওয়া কীলবোটগুলোকে। ধুকধুক ধুকধুক করে চলেছে উজানের বুনো অঞ্চলের দিকে, ওগুলোতে চেপে তারও বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করত অজানার উদ্দেশে। ওসব অঞ্চল থেকে ফিরে এসে অনেক রোমাঞ্চকর গল্প বলত মানুষ। সে সব শুনতে শুনতে বিভোর হয়ে যেত সে। বারো বছর বয়েস থেকেই স্বপ্ন দেখেছে সেখানে যাওয়ার। সেই সুযোগ সে পেয়েছে। এসেছেও এখানে। তারপর? মলিন, বিষন্ন হাসি হাসল রাইফেলটার দিকে তাকিয়ে।

ফিজেরাল্ডের কথায় চিন্তায় ছেদ পড়ল তার, ‘আমি আশপাশটা ঘুরে দেখতে যাচ্ছি। তুমি ওকে দেখো।’

কি দেখবে বুঝতে পারল না জিম। কি দেখার আছে? কি করার আছে? একটাই কাজ আছে, সেটা বিলের মৃত্যুর পর। তাকে কবর দিতে হবে।

ফিজেরাল্ড চলে গেলে উঠে দাঁড়াল সে। তাকাল বিলের দিকে। ভয়াবহ সব ক্ষত। শার্ট ছিড়ে ছিড়ে ব্যাণ্ডেজ করে দেয়া হয়েছে কোনমতে। জখম পুরো ঢাকেনি তাতে, বেরিয়ে আছে। গা গুলিয়ে উঠল তার। আহত মানুষটার পাশে পড়ে আছে একটুকরো ছেঁড়া কম্বল। সেটা তুলে নিয়ে গিয়ে ঝর্না থেকে ভিজিয়ে এনে একটা কোণ চেপে ঢুকিয়ে দিল তার ঠোঁটের ফাঁকে।

সামান্য কেঁপে উঠল বিলের চোখের পাতা। চুষতে শুরু করল ভেজা কম্বলটা।

বড় ধীর হয়ে পড়েছে যেন সময়, কাটতে আর চায় না। কিছুই করার নেই অপেক্ষা করা ছাড়া। খাওয়ার জন্যে পানি আছে, আর সঙ্গে আছে শুকনো মাংস। তাজা মাংসের জন্যে গুলিও করা যাবে না। শব্দ শুনে হাজির হয়ে যেতে পারে রীরা। তবে ঝোপের মধ্যে একধরনের বুনো জাম আছে, মোষেরা খায়, সেগুলো তুলে এনে খাওয়া যেতে পারে।

কম্বল চোষা থেমে গেছে। সেটা বের করে আনার জন্যে হাত বাড়াল জিম। পেছনে কথা বলে উঠল ফিজেরাল্ড, ‘নিঃশ্বাস কেমন?’

বিলের নাকের কাছে হাত রাখল জিম। খুবই আস্তে। থেমে থেমে।

‘বেশি দেরি আর করবে না তাহলে। তাড়াতাড়ি গেলেই বাঁচি। এরকম জায়গায় একা থাকতে ভয় লাগে।’

শুনতে ভাল লাগল না জিমের। একা কোথায় ফিজেরাল্ড? জিমকে গোণায়ই ধরছে না। এটা এক ধরনের অবহেলা। নীরবে উঠে গিয়ে ঝোপ থেকে একমুঠো জাম পেড়ে আনল। চিপে চিপে সেগুলোর রস ফেলতে লাগল বিলের ঠোঁটের ফাঁকে।

চুপচাপ বসে আছে ফিজেরাল্ড। তাকাচ্ছেও না জিম কিংবা বিলের দিকে। তবে তার অস্বস্তিটা টের পাচ্ছে জিম।

রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে মোটা কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল দুজনে। রীদের ভয়ে আগুন জ্বলতে পারছে না। অন্ধকারে শুয়ে জিম আশা করছে ফিজেরাল্ড কথা বলুক। যা খুশি বলুক। অন্তত বোঝা যাক, দুজন মানুষ আছে এখানে। বিল তো থেকেও নেই। সকাল পর্যন্ত টিকবে কিনা কে জানে। মরা মানুষকে এখন আর ভয় করে না জিম। দেড় বছর হলো এসেছে এই পার্বত্য এলাকায়। আসার পর থেকে কত মানুষকে যে মরতে দেখেছে! মৃত্যু গা-সওয়া হয়ে গেছে এখন। তবু, অন্ধকারে ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে কয়েক ফুট দূরে পড়ে থাকা আবছা কালো আকৃতিটার দিকে তাকিয়ে ছমছম করে উঠল শরীর। অদ্ভুত একটা অনুভূতি। পাশে শুয়ে থাকা ওই দেহটা জীবিত না মৃত বোঝা যাচ্ছে না।

কিন্তু পরদিন সকালেও দেখা গেল বেঁচে আছে বিল। তার গায়ে হাত দিয়ে দেখল ফিজেরাল্ড। বলল, ‘জ্বর এসেছে। আর বেশিক্ষণ বাঁচবে না। রক্তপাত আর ক্ষতের যন্ত্রণায় শেষ না হলেও জ্বরের আক্রমণ সইতে পারবে না।

এসব কথা শুনতে ভাল লাগল না জিমের। তবু আশঙ্কা যেন তার মনকে খামচি দিয়ে ধরল। যদি আরও চোদ্দ দিনেও মারা না যায় বিল? কি করবে ওরা?

বসে থেকে থেকে সময় কাটে না। ঘুরতে বেরোল সে। একধরনের মরু অঞ্চলই বলা চলে জায়গাটাকে। রোদে পুড়ে মিহি বালিতে পরিণত হয়েছে জমির ওপরের অংশের মাটি। রোদ আর বাতাসে শুকিয়ে খটখটে করে দিয়েছে সেজঝোপ আর কটনউডকে। অল্প কিছু পাতা যা-ও বা লেগে আছে ওগুলোতে, তা-ও সবুজ নয়, ধূসর। যেদিকে চোখ যায় পাহাড় আর টিলাটকর, কাটাঝোপে ছাওয়া। নীরব, রুক্ষ, কেমন শূন্য প্রকৃতি।

সে রাতে গায়ে কম্বল জড়িয়ে শুয়ে শুয়ে চারপাশের শূন্যতার কথা ভাবতে লাগল জিম। কোন আশ্রয় নেই এখানে, নেই নিরাপত্তা।

তৃতীয় দিন সকালেও মারা গেল না বিল। মৃদু স্বরে প্রলাপ বকছে থেকে থেকে। মাঝে মাঝে চোখও মেলছে। শূন্য দৃষ্টি।

বিড়বিড় করে গাল দিচ্ছে ফিজেরাল্ড। কাকে কি বলছে বোঝা যায় না। তিনদিন ধরে আছে জিমের সঙ্গে, কিন্তু কথা বলে না। ব্যাপারটা এখন আর অবাক করে না জিমকে। পার্বত্য অঞ্চলে থাকতে থাকতে কেমন যেন হয়ে যায় মানুষগুলো। বোবা। নিষ্ঠুর। নিজেকে ছাড়া যেন আর কিছুই বোঝে না।

চার দিনের দিন সকালে দ্বিধায় পড়ে গেল জিম, বুঝতে পারল না বিল বেঁচে আছে না মরে গেছে। বুকের ওঠা-নামা চোখে পড়ছে না। বোধহয় মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গেছে। গা ঠাণ্ডা। জ্বর প্রায় নেই।

বিকেল বেলা কথা বলতে শুরু করল ফিজেরাল্ড। হঠাৎ করেই জিমের প্রশংসা শুরু করল, তার মত ভাল লোক হয় না, নিজের প্রাণের মায়া না করে রয়ে গেছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আরও নানা কথা। এই যেমন, যতটা করেছে ওরা, চল্লিশ ডলারের তুলনায় অনেক বেশি করে ফেলেছে। বিল তো মরবেই। কোনমতেই সে বাঁচবে না। ওরকম একটা প্রায়-লাশের কাছে দিনের পর দিন বসে থাকার কোন মানে হয় না।

মরল না বিল। পরদিন সকালেও বেঁচে রইল। অস্থির হয়ে উঠেছে ফিজেরাল্ড। কিছুতেই পথে আনতে পারছে না জিমকে। তার ইঙ্গিত যেন বুঝতেই পারছে না ছেলেটা।

ঠিকই পারছে জিম। কিন্তু কানে তুলছে না।

সেদিন বিকেলেও একই অবস্থা বিলের। সেই প্রায়-মৃত্যুর জগতে রয়ে গেল। না ফিরল হুঁশ, না মরল।

পরদিন সকালে চোখ মেলল বিল। শূন্য দৃষ্টি আর নেই। ফিজেরাল্ডকে জানাল সেকথা জিম।

‘নেই তো ভাল কথা,’ কর্কশ কণ্ঠে বলল ফিজেরাল্ড। ‘থাকুক। চোখদুটো এখন তার দরকার হবে।’

মালপত্র গোছাতে শুরু করল সে। ‘অনেক বেশি থেকে ফেলেছি, আর না। চল্লিশ ডলারে পাঁচ দিন থাকার কথা নয় আমাদের। কিন্তু থেকেছি।’ একটা ঘোড়া রেখে যাওয়া হয়েছিল। মাল গুছিয়ে নিয়ে তাতে তুলল। ‘আমি আর থাকছি না।’

কিছু বলছে না জিম। তাকিয়ে আছে বিলের দিকে। আধবোজা হয়ে আছে চোখ। দু-একবার পাতাও নড়ল। হয়তো ঘোরের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু জিমের মনে হচ্ছে, সব দেখতে পাচ্ছে বিল, ওদের কথা শুনতে পাচ্ছে।

‘তুমি থাকবে, না যাবে?’ ভোঁতা গলায় জিজ্ঞেস করল ফিজেরাল্ড।

‘যাওয়াটা কি ঠিক হবে?’

‘তর্ক করতে চাই না। ইচ্ছে হলে থাকে। তবে ওদের হাতে পড়লে কি করবে সেটাও শুনে নাও। শরীরে পাইনের ডাল ঢুকিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে দেবে, যাতে ধীরে ধীরে পুড়ে মরো। কিংবা হয়তো জ্যান্ত রেখেই আস্তে আস্তে চামড়া ছাড়াবে। দেখো ছেলে, এখনও বয়েস তোমার অল্প। একটা লাশের জন্যে এভাবে কষ্ট পেয়ে মরার কোন অর্থ হয় না। ভাল চাও তো চলো আমার সঙ্গে।

জিমের মনে হলো তার শরীরটাই চলছে, সে নয়। অনেক ভারি লাগছে দেহটা।

‘ওর জিনিসগুলোও নিয়ে নাও,’ ফিজেরাল্ড বলল। বিশ্বাস করতে পারছে না জিম। হাঁ করে তাকিয়ে আছে।

‘জলদি!’ ধমকে উঠল ফিজেরাল্ড ‘ছুরি, রাইফেল, সব নাও। কিছুই রেখে যাওয়ার দরকার নেই। এসব জিনিসের আর প্রয়োজন হবে না ওর।’ তবু জিম নড়ছে না দেখে কিছুটা নরম হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করল, ‘ও মরে গেলে কি হত? জিনিসগুলো কি ওর সঙ্গে কবর দিতাম? নাও, নিয়ে নাও। ভাববে ও মরে গেছে। আমরা ওকে কবর দিয়ে চলে গেছি। কেউ জিজ্ঞেস করলেও এ-কথাই বলবে।’

বিলের দিকে সরাসরি তাকাতে পারছে না জিম। চোখের কোণ দিয়ে দেখল। মনে হলো, নড়তে চাইছে বিল। কিছু বলতে চাইছে।

ঘুরে দাঁড়াল সে। গিয়ে দাঁড়াল ঘোড়াটার কাছে।

যেন ঘোরের মধ্যে ঘোড়াটার পাশে পাশে হেঁটে চলল সে। কয়েক মাইল পর্যন্ত এগোল এভাবেই। তারপর প্রচণ্ড রেগে গেল। অসুস্থ বোধ করছে।

জিম আর ফিজেরাল্ড চলে যাওয়ার পর আবার বেহুঁশ হয়ে গেল বিল। কতদিন পর ঘুম ভাঙল বলতে পারবে না। ভাঙতেই চিৎকার করে ডাকতে গেল দুজনকে, ফিরে আসার জন্যে। কিন্তু ডাকল না। বুঝতে পারল, লাভ নেই, অনেক দেরি হয়ে গেছে। গরম হয়ে আছে শরীর। পানির জন্যে অস্থির। জিভ শুকনো, ফুলে উঠেছে।

গড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল ঝর্নার কাছে। তীব্র ব্যথা ছড়িয়ে পড়ল শরীরে। আবার বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছিল। থেমে বিশ্রাম নিতে নিতে ভাবল, কি ভাবে যাওয়া যায়। আরেকবার গড়ান দিল। দম আটকে আসতে চাইল ব্যথায়। উপুড় হয়ে মুখ গুঁজে দিল মাটিতে। কিছুক্ষণ ওভাবে পড়ে থেকে আবার এগোনোর চেষ্টা করল। গড়াতে গেলে বেশি ব্যথা লাগে, বুকে হেঁটে এগোল। অনেক, অনেকক্ষণ পর টের পেল, ভেজা মাটিতে ঠেকেছে ঠোঁট।

পানি খাওয়ার আর শক্তি নেই। ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙলে দেখল পানির কিনারে পড়ে আছে। মুখ বাড়াতেই পানির নাগাল পেল। যতটা পারল খেলো। তবে খেতে পারল খুব অল্পই। দেখল, ক্ষতগুলো থেকে আবার রক্ত পড়ছে। প্রতিটি জখমের ব্যথা আলাদা করে বুঝতে পারছে না। সমস্ত শরীরেই ব্যথা, এক রকম ব্যথা। আবার ঘুমিয়ে পড়ল সে।

ঘুম ভাঙল। এইবার খিদে টের পেল। ভালই। তার মানে সেরে উঠছে শরীর। কাছেই একটা ডাল থেকে ঝুলে আছে গোটা দুয়েক জাম। সেদিকে এগোতে শুরু করল সে। কয়েক গড়ান দিয়েই বুঝল, যেতে পারবে না। কাজটা আগামী দিনের জন্য স্থগিত রেখে ঘুমিয়ে পড়ল আবার।

পরদিন সকালে মাখা আরও পরিষ্কার হয়ে এল। প্রথমেই মনে পড়ল জামের কথা। গাছের গোড়ায় পৌঁছল। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল, পাড়বে কিভাবে? এক কাজ করা যায়। গাছের গোড়ায় শরীরের ভর দিয়ে চেপে নোয়ানোর চেষ্টা করতে পারে। তাতে ভেঙেও যেতে পারে গাছ।

ভেঙেই গেল গাছটা। কিন্তু এইটুকু পরিশ্রম করার পরই মনে হলো, শরীরের ওপর দিয়ে ঘোড়া দাবড়ানো হয়েছে। অনেকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে এগোল জামগুলোর দিকে। এক এক করে খেয়ে শেষ করে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। গাঢ় হলো না ঘুম। স্বপ্নে দেখল জিম আর ফিজেরাল্ডকে। চলে যাচ্ছে যেন ওরা চলে যাওয়ার আগে ওদের কথাবার্তাও শুনতে পেল।

পরদিন সকালে জেগে উঠে মনে করতে পারল সে, কি ঘটেছিল তার। বিড়বিড় করে গাল দিল, ‘কুত্তার বাচ্চারা! সব জিনিস নিয়ে গেছিস আমার, মরার জন্যে ফেলে গেছিস!’

সারাটা দিন কখনও ঘুমিয়ে, কখনও জেগে কাটাল। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে ঠিক করল, এখান থেকে বেরিয়ে যাবে সে। শুধু যাবেই না, একটা বোঝাপড়াও করবে জিম ও ফিজেরাল্ডের সঙ্গে। উত্তেজিত হয়ে উঠতেই আবার যেন নতুন করে এসে শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়ল ব্যথা।

কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে জেগে দেখে কাছেই অলস ভঙ্গিতে পড়ে আছে একটা র্যাটলম্নেক। একটা আস্ত পাখিকে গিলেছে। ফুলে আছে পেট। একবার দেখেই বুঝতে পারল, ওটাকে শেষ করতে খুব একটা ক্ষিপ্ত হতে হবে না তাকে। হাতের কাছেই পাথর পড়ে আছে। একটা তুলে নিয়ে মাথায় কয়েক বাড়ি দিয়েই মেরে ফেলল। ধারাল পাথরের সাহায্যে সাপের মাংস কেটে নিয়ে পানিতে চুবিয়ে চুবিয়ে খেলো। শক্তি ছড়িয়ে পড়তে লাগল শরীরে।

বেলা বাড়ছে। গরম হয়ে উঠছে সব কিছু। গরম হচ্ছে শরীর। ভাবল, দেরি করে লাভ নেই। এখুনি রওনা হবে ফোর্ট কিউয়ার উদ্দেশ্যে। ফোর্ট হেনরির চেয়ে ওটা কাছে। তাছাড়া যেতে হবে ঢালুর দিকে, উজানে হাঁটার চেয়ে সহজ। পানির কাছাকাছি থাকাই ভাল। পথ হারানোর ভয় থাকবে না, পানিও পাওয়া যাবে।

তাড়াহুড়ো করার কারণ, খাবার যা খেয়েছে, সেটা হজম হতে দেরি হবে না। আবার পাবে কি পাবে না এখানে, জানা নেই। চলার মধ্যে থাকলে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মোষ আছে। আরও শিকার পাওয়া যায়। একলা একজন মানুষ ডাকোটার এই অঞ্চলে বেঁচে থাকতে পারে, সঙ্গে যদি একটা রাইফেল আর একটা ছুরি থাকে। কিন্তু দুটোই নিয়ে গেছে হারামজাদারা! ঠিক আছে, হাল ছাড়বে না। আর কিছু যদি না-ই মেলে গাছের মূল খেয়েই বাঁচবে। পাউনিদের সঙ্গে বহুকাল বাস করেছে। বুনো এলাকায় কি করে টিকে থাকতে হয় জানে।

 হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে লাগল সে। সাংঘাতিক দুর্বল শরীর। মনে হচ্ছে পিঠে করে একটা খচ্চর বয়ে নিয়ে চলেছে। দিনের অর্ধেক পেরোতে না পেরোতেই ক্লান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়ল। নড়াচড়ায় খুলে গেছে আবার অনেক জখমের মুখ। রক্ত পড়ছে। চলতে চলতে দুই-দুইবার বেহুঁশ হওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।

বিশ্রাম নিয়ে আবার চলতে লাগল সে। সারা দিনে এক মাইল পেরোল। নিজেকে সাহস দিল, অনেক এসেছে। আগামী দিন আরও বেশি পথ পেরোতে পারবে।

কিন্তু পরদিনও মাইলখানেকের বেশি এগোতে পারল না।

তৃতীয় দিনে কিছুটা বেশি পারল বটে, কিন্তু বুঝল, এভাবে আড়াইশো মাইল পাড়ি দেয়া সম্ভব নয়।

দুদিন পর খোলা প্রান্তর থেকে ভেসে এল নেকড়ের ডাক। কি ব্যাপার দেখার জন্যে হামা দিয়ে এগোল সে। দেখল একটা মোষের বাচ্চাকে ঘিরে ফেলেছে নেকড়েরা। মেরে ফেলতে দেরি করল না। খাওয়ার জন্যে ছিড়তে শুরু করল। দেখে যেন খিদে আরও বেড়ে গেল তার। সব মাংস শেষ করে ফেলার আগেই জানোয়ারগুলোকে তাড়াতে হবে। কিন্তু কিভাবে তাড়াবে? হামা দিয়ে গিয়ে আর যা-ই করুক, নেকড়ে তাড়াতে পারবে না। বরং তাকে অসহায় দেখলে উল্টে আরও আক্রমণ করে বসবে ওগুলো।

শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল বিল। পেটে কিছুটা খাবার পড়তেই উন্মত্ত ভাব অনেকটা শান্ত হয়ে এল নেকড়েগুলোর। এইই সুযোগ। মরিয়া হয়ে উঠল সে। একটা লাঠি তুলে নিয়ে তাতে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। মাথা ঘুরে উঠল। দুলে উঠে পড়তে গিয়েও পড়ল না, টলটলায়মান অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইল কেবল অসাধারণ মনের জোরে। চিৎকার করে উঠল পাউনিদের মত করে। তীক্ষ্ণ এক ধরনের চিৎকার। শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে একরম শব্দ করে ওরা। বহুবার দেখেছে বিল, এই শব্দে অনেক কাজ হয়। ঘাবড়ে যায় শিকার। তখন ওটাকে বাগে আনা সহজ হয়।

দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সে। দুলছে। মনে হচ্ছে, সাগরের ভীষণ ঢেউয়ে ভাসছে তার ডিঙি। তবে চিৎকারে কাজ হয়েছে। সরে গেল নেকড়েগুলো।

মোষটার কাছে পৌঁছল সে। লাঠি ভর করে অনেক কষ্টে বসল। পড়ে যেতে চাইছে শরীর, কিন্তু এখন পড়তে দেয়া চলবে না। ঝাঁকুনি কিংবা টান লাগলে ক্ষতের মুখগুলো আরও বেশি খুলে যাবে। এত কষ্টের পর রক্তক্ষরণে মরতে চায় না। কয়েক মিনিটের বেশি বিশ্রাম নিল না। অনেকটা নেকড়েদের মতই মুখ নামিয়ে কামড়ে কামড়ে খেতে লাগল চাক চাক মাংস। মাথায় একটাই চিন্তা, আমি বাঁচব, আমি বাঁচব।

দিন কয়েক ওখানেই পড়ে রইল সে। রাতে ঘুমাল। দিনে খেলো। খিদে পেলে আর দেরি করে না। রক্ত, মাংস, যকৃত, হৃৎপিণ্ড, নাড়ীভুড়ি, কিছুই বাদ দিল না। তার পরেও কিছুটা মাংস বেঁচে গেল। তবে সেটা আর খাওয়ার উপযুক্ত নেই। পচে গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে।

ওই জায়গা যখন ছাড়ল, তখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে। হাঁটতে পারে। নিজেকে সম্রাট মনে হচ্ছে এখন। ঝোপের ওপর দিকে তাকাতে পারে। দেখতে পারে ওপাশে কি আছে। ভালুক কিংবা ইনডিয়ানদের আসতে দেখলে সতর্ক হতে পারবে। ভাগ্য ভাল হলে আর হাতের কাছে পেয়ে গেলে খরগোশ কিংবা অন্য কোন ছোট প্রাণী মেরে খেতে পারবে। মাথা তুলে দাড়াঁতে পারায় আরেকটা বড় সুবিধে হলো, সর্বক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হবে না একঘেয়ে ধূসর ভেজা মাটির দিকে। দিগন্তের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত চোখে পড়ছে। আবার মানুষ মনে হচ্ছে নিজেকে, চতুস্পদ জন্তু নয়।

অনেকটা শুকিয়েছে ক্ষতগুলো। ভরসা পাচ্ছে, পুরোপুরিই শুকাবে। কেবল পিঠের একটা জখম খুব বেশি। সেটার কি হবে বুঝতে পারছে না। ওখানে হাতও পৌঁছায় না ঠিকমত। যাই হোক, সারাদিনে এখন মাইল দশেক এগোতে পারবে। তিনটে ভাবনা এখন মাথায়: বেঁচে থাকতে হবে, ফোর্ট কিউয়াতে পৌছতে হবে, প্রতিশোধ নিতে হবে।

দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে, রী ইনডিয়ানদের চোখ এড়িয়ে, আরও নানা প্রতিকুলতা পেরিয়ে গ্রিজলির সঙ্গে হাতাহাতির সাত সপ্তাহ পর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফোর্ট কিউয়াতে পৌঁছল সে। তাজ্জব করে দিল ফোর্টের পরিচালক কেইওয়া ব্যাজুকে।

আসতে পেরে খুশি হয়েছে বিল, কিন্তু এতে তাজ্জব হওয়ার কিছু দেখল না সে। ইচ্ছে থাকলে একজন মানুষ অনেক কিছু করতে পারে। জানতে পারল, মনদন গায়ে একটা অভিযাত্রী দল পাঠাচ্ছে ব্র্যাজু। খবর পেয়েছে শান্তিপ্রিয় মননদের কাছ থেকে একটা গ্রাম কিনে নিয়েছে রী-রা। কথা দিয়েছে ওরা ভাল হয়ে যাবে।

খুনখারাপির মধ্যে আর যাবে না। ব্যাজু দেখল এই সুযোগ। দুটো গোত্রের সঙ্গেই মিলমিশ করে নিয়ে ফারের ব্যবসা চালাবে। শুভেচ্ছা সফর আর বাণিজ্যিক চুক্তি স্থাপনের জন্যে ছয় জনের একটা দল গড়েছে সে। দলপতি একজন ফরাসী, অ্যান্টনি সিটোলা। সঙ্গে যাবেন লুইস-ক্লার্ক, অভিযানের বিখ্যাত দলনেতা কারবোনা। যেতে ইচ্ছুক সপ্তম আরেকজনকে পেয়ে খুশিই হলো ব্র্যাজু। কিন্তু বিলের আচারআচরণ সুবিধের মনে হলো না তার। কিছুটা অদ্ভুত। একটা মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে মরতে মরতে বেঁচে এসেছে, শরীর ভালমত সারেইনি, এখনই আবার বেরিয়ে পড়তে চায়। তবে এটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাল না সে। ইচ্ছে করে যেতে চাইছে যখন যাক।

নভেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে যাত্রা করল দলটা। নৌকায় করে জলপথে চলেছে ওরা। পথে হঠাৎ ঠিক করলেন কারবোনা, হেঁটে যাবেন। রীদের গ্রাম মননদের মাইলখানেক দক্ষিণে, আর মননের আরও কিছুটা উজানে টিলটনস ফোর্ট। রীদের গাঁয়ের পশ্চিম প্রান্ত ঘুরে ফোর্টে চলে যাওয়ার ইচ্ছে তাঁর। অঘটনের আশঙ্কা করছেন তিনি। মননদের বিশ্বাস করেন তিনি, রীদের নয়। নৌকার মাঝিদের একথা বলতে তারা মুচকি হাসল। সিটোলাসেরও ভয় ভয় করতে লাগল। তবে কারবোনা একাই তীরে নামলেন। পরদিন বিলও তাকে তীরে নামিয়ে দিতে বলল। দুটো গ্রাম থেকে খানিকটা দূরে নদীতে একটা বড় রকমের বাঁক আছে। সেখানে তাকে নামিয়ে দেয়া হলো। গ্রামবাসী ইনডিয়ান কিংবা ফোর্টের ভালমন্দ নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই। সে যেতে চায় ফোর্ট হেনরিতে। যত শর্টকাটে তাড়াতাড়ি যেতে পারে ততই ভাল।

কয়েক মাইল গিয়েই কয়েকজন ইনডিয়ান মহিলাকে চোখে পড়ল। তাকে দেখে চিৎকার করে বনে ঢুকে গেল ওরা। বিল বুঝল, ওরা রী। তাকে ধরার জন্যে এল বলে পুরুষেরা। ছুটতে লাগল সে। কিন্তু কয়েকটা জখম পুরোপুরি সারেনি। ভাল করে দৌড়াতে পারল না। তীক্ষ্ণ চিৎকার করতে করতে তেড়ে এল কয়েকজন রী যোদ্ধা। আর বাঁচার আশা নেই। হাল ছেড়ে দিল বিল। ঠিক এই সময় উল্টো দিকে ঘোড়ার খুরের শব্দ শোনা গেল। ছুটে এল আরেকদল অশ্বারোহী ইনডিয়ান। ওরা মনদন। দ্রুত এসে বিলকে ঘোড়ার পিঠে তুলে নিল একজন। যেদিক থেকে এসেছে সেদিকে ছুটতে শুরু করল।

বিলের ভাগ্য ভাল, রীদের চিৎকার কানে গিয়েছিল মনদন যোদ্ধাদের। ওদের ওপর এমনিতেই খেপে আছে মনদনরা, মহাবিরক্ত। ভয় পাচ্ছে, রীদের শয়তানিতে ভীষণ রেগে গিয়ে প্রতিশোধ নিতে আসবে শ্বেতাঙ্গরা, তছনছ করে দেবে সমস্ত ইনডিয়ান গ্রাম। বিলকে ফোর্টে পৌঁছে দিল ওরা। কারবোনা আগেই এসে বসে আছেন। সেদিন বিকেলে ফোর্টে খবর এল, সিটোলার দলকে নদীতেই ধরে জবাই করে ফেলে দিয়েছে রী-রা।

এসব খবর ঠেকাতে পারল না বিলকে। পরদিন সকালে উঠেই ফোর্ট হেনরিতে রওনা হলো সে। নদীর পুব পাড় ঘেঁষে চলল যেখানে রীদের সামনে পড়ার ভয় কম। আরও দুই জাতের দুর্ধর্ষ ইনডিয়ানের বাস ওই এলাকায়। অ্যাসিনিবোয়নিস ও ব্ল্যাকফিট। তৃণভূমির বাসিন্দা ব্ল্যাকফিটেরা তো শ্বেতাঙ্গদের ত্রাস।

প্রচণ্ড তুষারপাত শুরু হলো। জমে গেল এক ফুট পুরু হয়ে। মিসৌরির এই অঞ্চলে গাছপালা নেই বললেই চলে, মাইলের পর মাইল শুধু তৃণভূমি। ফলে কোথাও বাধা না পেয়ে আরও উন্মত্ত ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে ঝড়ো বাতাস বয়ে যায় শাই-শাই শাই-শাই। কোন কিছুকেই পরোয়া করল না বিল। এগিয়েই চলল। দুর্যোগে ভরা দিন আর ভয়াবহ ঠাণ্ডা অনেকগুলো রাত কাটিয়ে, তিনশো মাইল পথ পাড়ি দিয়ে প্রায় তিন সপ্তাহ পর ঠিকই এসে হাজির হলো ফোর্ট হেনরিতে। কিন্তু দুর্গের কাছাকাছি পৌঁছেই টের পেল, কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। খুব সাবধানে কাছে এসে উঁকি দিয়ে দেখল ভেতরে ঘোরাফেরা করছে কয়েকজন সিউজ ইনডিয়ান। এরা খুনখারাপির মধ্যে সাধারণত যেতে চায় না, শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে মোটামুটি সম্পর্ক ভাল। তাদের কাছে জানতে পারল বিল, ব্ল্যাকফিটদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে দলবল নিয়ে দুর্গ ত্যাগ করে বিগ হর্নে চলে গেছেন হেনরি। ওখানে যেতে হলে যতটা এসেছে সে আরও ততটা যেতে হবে উজানের দিকে। কুছ পরোয়া নেই। রওনা হয়ে গেল বিল।

১৮২৩, ৩১ ডিসেম্বর রাতে দুর্গে বসে নিউ ইয়ার উদযাপন করছেন অ্যানড্রু হেনরি। ব্ল্যাকফিটদের এলাকা থেকে বহুদূরে ক্রো-দের এলাকায় চলে এসেছেন। ক্রো-রা ভাল। তাদের সঙ্গে ভাব করে নিয়ে ফার জোগাড়ের ব্যবস্থা করেছেন। এলাকাটাও ভাল। সর্বক্ষণ খুনে ইনডিয়ানদের ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে না। প্রচুর মোষ আছে তৃণভূমিতে। দীর্ঘ শীত কাটাতে অসুবিধে নেই। ফলে মন ভাল সবারই।

বাইরে গর্জন করে ফিরছে তুষার মেশানো কনকনে ঝড়ো হাওয়া। এই সময় দুর্গের দরজায় ঘন ঘন করাঘাতের শব্দ হলো। কে থাবা দেয় এই অসময়ে? অবাক হয়ে দরজা খুলে দিল দ্বাররক্ষী। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারল না। দাঁড়িয়ে আছে বিল ডেনভারের ভূত! লম্বা লম্বা চুল, দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল, তুষারে ছাওয়া। পরনের চামড়ার পোশাকে পুরু হয়ে জমে থাকা তুষার শক্ত হয়ে গেছে।

সোজা এসে হলরুমে ঢুকল বিল, যেখানে আনন্দ করছে দুর্গের সমস্ত লোক। স্তব্ধ হয়ে গেল কোলাহল। ঘোষণা করল সে, ‘আমি বিল ডেনভার। ফিজেরাল্ড আর ব্রিজারের খোঁজে এসেছি। কোথায় ওরা?’

ভুল যে দেখছে না নিশ্চিত হওয়ার জন্যে একজন এগিয়ে এসে ছুঁয়ে দেখল বিলকে। অন্যেরা ঘিরে এল। প্রশ্নের পর প্রশ্ন শুরু হলো। ওসবের জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না সে। বলল, ‘ফিজেরাল্ড আর ব্রিজার আমাকে ফেলে এসেছে মরার জন্যে। আমার রাইফেল আর জিনিসপত্র সব নিয়ে এসেছে। বাঁচার জন্যে কী না করেছি আমি। কিউয়াতে গেছি। সেখান থেকে মনদন, তারপর থেকে খুঁজতে খুঁজতে এসেছি এখানে। কোথায় ওরা?’

হেনরি জানালেন, ‘ফিজেরাল্ড চলে গেছে। সভ্য এলাকায় ফিরে যাবে। অ্যাশলির কাছে দুর্গ বদলের খবর নিয়ে গেছে ব্ল্যাক হ্যারিসের দল। তাদের সঙ্গে গেছে সে। ক্যানোতে করে নদীপথে ভাটির দিকে।’

‘ব্রিজার কোথায়?’ জিজ্ঞেস করল বিল। ‘নিগারের বাচ্চাটা?’

হাত তুলে নীরবে ঘরের কোণে দেখালেন হেনরি।

চেয়ারের মধ্যে যেন ডুবে যেতে চাইছে বিজার। জড়সড় হয়ে বসে আছে। বিলকে দেখে পাথর হয়ে গেছে। কল্পনাই করতে পারেনি জ্যান্ত হয়ে উঠে আসবে আবার কোন লাশ।

দুর্গম হাজার মাইল পথ পেরিয়ে এসেছে যার সন্ধানে তার দিকে ভাল করে তাকাল বিল। বিষন্ন চেহারার এক নিগ্রো তরুণ। বড় বেশি ছেলেমানুষ। এরই জন্যে এত কষ্ট করে এত পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে? কি প্রতিশোধ নেবে ওরকম একটা বাচ্চাছেলের ওপর! পরক্ষণেই কঠোর করে তুলল মনকে। বয়েস যাই হোক, শাস্তি ওকে পেতেই হবে। পার্বত্য এলাকার আইন লঙ্ঘন করেছে সে। অসহায় অবস্থায় সঙ্গীকে একা ফেলে পালানোর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

হাত নেড়ে জিমকে উঠে আসতে ডাকল বিল।

কুষ্ঠিত পায়ে কাছে এসে দাঁড়াল জিম। ‘তোমাকে আমি এখন খুন করব,’ বিল বলল, ‘বুঝতে পারছ সেটা?’

‘করুন। আপনার যা ইচ্ছে করুন। অনুশোচনায় জ্বলে-পুড়ে মরছি আমি। একটা মুহুর্তের জন্যে স্বস্তি নেই। যেন ভূতে তাড়া করে ফেরে সারাক্ষণ।’

দীর্ঘ একটা মুহূর্ত তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বিল। ধীরে ধীরে বলল, ‘আমাকে মরার জন্যে ফেলে এসেছিলে তুমি। জিনিসপত্র লুট করে এনেছ। রাইফেল আর ছুরিটাও রেখে আসোনি, তাহলেও আমার অনেক সুবিধে হত। ক্ষুধায় তৃষ্ণায় কাহিল হয়ে মাইলের পর মাইল হামাগুড়ি দিয়েছি, অবর্ণনীয় যন্ত্রণা সহ্য করেছি, আর বার বার প্রতিজ্ঞা করেছি তোমাদেরকে নিজের হাতে খুন করব আমি। কিন্তু ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করতে আর ইচ্ছে করছে না এখন। নিজের ভুলও যখন বুঝতে পেরেছ, যাও, দিলাম মাপ করে।’

কিন্তু প্রাণভিক্ষা পেয়েও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল না জিম। কোনরকম ভাবান্তর হলো না চেহারায়। টলতে টলতে ফিরে গেল নিজের জায়গায়। অসুস্থ বোধ করছে।

অনেকখানি হালকা হয়ে গেল বিলের মন। ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল সে। একজন একটা হুয়িস্কির গ্লাস এনে ধরিয়ে দিল তার হাতে। কিন্তু দুই চুমুকের বেশি দিতে পারল না তাতে। জ্ঞান হারাল।

পরদিন সকালে জেগে উঠে প্রথমেই ফিজেরাল্ডের কথা মনে পড়ল তার। পিছু নেয়ার কথা ভাবল। কিন্তু আগের মত প্রতিশোধের প্রবল ইচ্ছেটা নেই আর। দিন কয়েক ওই দুর্গেই শুয়ে-বসে কাটাল সে। বাইরে প্রচণ্ড তুষারঝড়। এই আবহাওয়ায় বেরোতে ইচ্ছে করল না।

তবে ফিজেরাল্ডকে শেষ পর্যন্ত খুঁজে বের করেছিল বিল। এর জন্যে আরও কয়েকবার দুর্গম অঞ্চল পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। কয়েকবার খুনে ইনডিয়ানদের কবলে পড়ে মরতে মরতে বেঁচেছে। কিন্তু ফিজেরাল্ডের মুখোমুখি দাঁড়াল এসে একদিন।

তবে তাকেও মারেনি বিল। জিমের মতই মাপ করে দিয়েছে।

***

লেখক: রকিব হাসানসিরিজ: সেবা ওয়েস্টার্ন সিরিজবইয়ের ধরন: সেবা প্রকাশনী
তিন গোয়েন্দা ভলিউম ৩/১ - রকিব হাসান

তিন গোয়েন্দা ভলিউম ৩/১

তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১৮

তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১/২ - রকিব হাসান

তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১/২

তিন গোয়েন্দা ভলিউম ২৮

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑

Login
Accessing this book requires a login. Please enter your credentials below!

Continue with Google
Lost Your Password?
egb-logo
Register
Don't have an account? Register one!
Register an Account

Continue with Google

Registration confirmation will be emailed to you.