২৪. রিটা স্কীটারের স্কুপ

২৪. রিটা স্কীটারের স্কুপ

বক্সিং ডের দিন সকলে দেরি করে ঘুম থেকে উঠল। আগের মতো গ্রিফিন্ডর কমনরুম অনেক শান্ত; কমনরুমে যারা বসে তারা প্রায় সকলেই মাথামুন্ডুহীন আলোচনা–গল্প করছে। যাদের ভাল লাগছেনা তারা চোখ বন্ধ করে বড় বড় হাই তুলছে। হারমিওনের মাথার চুল ফিটফাটে নেই, আবার যে কে সেই, অনেকটা ঝোপের মতো। ও হ্যারির কাছে স্বীকার করেছিল, নাচের দিন মাথার চুলে সেটিং করার জন্য বেশ খানিকটা স্লীকইজির হেয়ার পোসান লাগিয়েছিল। কিন্তু সেই পোসান লাগানোর অনেক হেপা–তাই রোজ সম্ভব নয়। ও পা ছড়িয়ে বসে ওর বেড়াল ক্লকুশ্যাঙ্ক-এর কানের তলা আদর করে আঙ্গুল দিয়ে চুলকাচ্ছে।

রন আর হারমিওন অলিখিত বোঝাপড়ায় এসেছে যে তারা অর্থহীন আজে বাজে তর্ক–বির্তকের ভেতর যাবে না। মোটামুটি আবার বন্ধু হয়ে গেছে, যদিও আগের মত গভীর নয়। হ্যারি ও রন কোনো সময় নষ্ট না করে প্রথমেই হারমিওনকে ম্যাডাম ম্যাক্সিম আর হ্যাগ্রিডের কথাবার্তা কতটুকু শুনতে পেয়েছিল সবটুকু খুলে বলে। হ্যাগ্রিড অর্ধদানব শুনে হারমিওন রনের মতই হতভম্ব!

হারমিওন বলল–আমার মনে ওই রকম এক সন্দেহ ছিল। এও জানি হ্যাগ্রিড দানব নয়–কারণ পিওর দানবদের উচ্চতা কম করে বিশ ফিট হয়। কিন্তু এই সব হচ্ছে আমাদের দানবদের সম্বন্ধে ছোটবেলা থেকে গড়ে ওঠা এক মানসিকতা! যা আমার রক্তের মধ্যে মিশে গেছে। দানবরা সকলেই ভয়ঙ্কর নয়… আমাদের ওয়্যার উলভস (নিজেকে সাময়িকভাবে নেকড়ে বাঘে রূপান্তরিত করার মতো শক্তি) সম্বন্ধে কু–সংস্কারের মতো। এক রকমের গোঁড়ামি বলতে পারা যায়, ঠিক বলছি না?

রন এমনভাবে তাকাল, যেন কথার জবাবটা বেশ কড়া করে দিতে পারে, কিন্তু আর একটা ঝগড়ার মধ্যে ও যেতে চাইল না। জবাবটা ছিল হারমিওনের দৃষ্টির আড়ালে সায় না দেওয়ার জন্য মাথা নাড়া।

ছুটির প্রথম সপ্তাহটা ওরা নানারকমভাবে হোম ওয়ার্ক ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকি আর দেওয়া যাবে না। কাজ শুরু করতে হবে। ক্রিস্টমাসে অনেক কাজ, হৈ চৈ, হুড়োহুড়ি করে সকলেই ক্লান্ত। তাহলেও অন্যদের কথা না ভেবে হ্যারি নিজের কথা ভাবল, অনেক কাজ পড়ে রয়েছে, একটু নার্ভাস অনুভব করতে লাগল।

সবচেয়ে বড় ঝামেলা, ফেব্রুয়ারির চব্বিশ আর ক্রিস্টমাসের দিনের ব্যবধান খুবই কম মনে হল হ্যারির। তাছাড়া সোনার ডিমের মধ্যে কি আছে তার সমাধান সূত্র নিয়েও কোন কাজ–কর্ম হ্যারি করেনি। করতেই হবে, ফেলে রাখলে চলবে না। তাই ওর কাজ হল প্রত্যেকদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ট্রাঙ্কের ভেতর থেকে ডিমটা ডরমেটরিতে বসে মুখটা খুলে কান পেতে থাকা। প্রতিদিনই আশা করে থাকে দ্বিতীয় টাস্কের একটা সূত্র পাবেই। কিন্তু কোনও কিছু শুনতে পায় না। মুখটা খোলে, নাড়া দেয়, কখনও ধীরে কখনও ভীষণ জোরে, কিন্তু সবই ব্যর্থ হয়ে যায়। কিছুই শুনতে পায় না। মাঝে মাঝে রেগে মেগে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ব্যর্থতার ভয়ে ও কাবু হয়ে থাকে।

তাহলেও সেডরিকের ইঙ্গিত–পরামর্শ ও ভোলে নি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ও সেডরিককে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু কেন ও জানে না। ওর দেওয়া ইঙ্গিত–পরামর্শ ছাড়াই যদি কুর সমাধান করতে পারে, তাহলে তো ভালই। সেডরিক প্রথম টাস্কের আগে, হ্যারির কাছ থেকে যা যা শুনেছিল–তার প্রতিদান বোধহয় দিতে চায়। কিন্তু চোর ব্যাপারটা এখনও ওর মাথা থেকে নামেনি। যা হোক ও কারও প্রতিদান চায় না।

অবিরাম তুষারপাত হচ্ছে। মাঠের ওপর পুরু বরফ জমে যাচ্ছে। মাঠ–ঘাট গ্রীন হাউজের দরজা জানালার ফ্রেম, কাঁচ সবকিছুতে বরফ, বাইরে থেকে দেখাই যায় না, তো হারবোলজির ঘরে গিয়ে কাজ ম্যাজিক্যাল প্রাণীদের দেখভাল করা ওই আবহাওয়াতে কিছু করা সম্ভব নয়। যাই হোক, ওরা হ্যাগ্রিডের কেবিনে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিলে হ্যাগ্রিডের বদলে ছোট ঘোট ছাঁটা চুলের এক বুড়িকে দেখল। বৃদ্ধার সব চুল পাকা ও থুতনিটা লক্ষ্য করার মতো।

-এস ভেতরে এস… পাঁচ মিনিট আগে বেল বেজেছে, তাড়াতাড়ি কর, বৃদ্ধা বলল। ওরা মুখের তুষার সরাতে সরাতে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধাকে দেখতে লাগল।

–আপনি কে? আপনাকে তো এখানে আগে দেখিনি? হ্যাগ্রিড নেই? রন সামান্য হতাশ হয়ে বলল।

–আমি, আমি প্রফেসর প্ল্যাঙ্ক। গ্রাবলী প্ল্যাঙ্ক। আমি তোমাদের ম্যাজিক্যাল প্রাণীদের দেখভাল বিভাগ-এর একজন অস্থায়ী।

–হ্যাগ্রিড কোথায় গেছেন? হ্যারি জিজ্ঞেস করল।

–ও অসুস্থ, প্রফেসর প্ল্যাঙ্ক ছোট করে জবাব দিলেন।

হ্যারির কানে মৃদু ও অস্বস্তিকর হাসি এসে কানে বাজল। ও ফিরে দেখল শ্রীদারিনের ছেলে–মেয়েরা শুধু নয়, ড্রেকো ম্যালফয় ও এসে গেছে ক্লাস করার জন্য। সকলেই বেশ খুশি ওরা কেউ প্রফেসর প্ল্যাঙ্ককে দেখে একটুও অখুশি নয়।

–তোমরা এদিকে এসো, প্রফেসর গ্রাবলী প্লাঙ্ক বললেন। ওরা দেখল বক্কবেটনের অনেকগুলো ঘোড়া বাইরে ঠকঠক করে কাঁপছে।… ওরা তিনজনে প্রফেসর প্ল্যাঙ্কের পিছু পিছু চলল। হ্যাগ্রিডের কেবিনে ওর ঘরের সামনে গিয়ে দেখল ঘরের সব পর্দা টানা। হ্যাগ্রিড কি ঘরে আছেন… অসুস্থ?

হ্যারি বলল–হ্যাগ্রিডের কী হয়েছে?… বেশ জোরে জোরে হেঁটে প্রফেসর প্ল্যাঙ্ককে ধরতে চেষ্টা করল।

–ঠিক আছেন, ভাবনার কিছু নেই।

–হ্যাঁ আমি ভাবছি, ওনার কী হয়েছে? হ্যারি দৌড়ে গিয়ে বলল।

প্রফেসর গ্রাবলি–প্ল্যাঙ্ক এমন ভাব করে রইলেন যেন হ্যারির কথা কানে ঢোকেনি। যেখানে ঘোড়াগুলো শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে, উনি সেটা ছাড়িয়ে অরণ্যের প্রান্তে এসে একটা গাছের কাছে দাঁড়ালেন। ওরা দেখল, একটা বড় আর খুব সুন্দর ইউনিকর্ন শেকল দিয়ে বাঁধা রয়েছে (ইউনিকর্ন শক্তিশালী ইন্দ্রজালিক পবিত্র প্রাণী। ধরা খুব শক্ত। ওরা দেখতে খুব সুন্দর, পাখাগুলো চিকন। ওদের হত্যাকরা ভয়াবহ অপরাধ। যাদের হারাবার কিছু নেই, সবকিছু পাবার সম্ভাবনা আছে কেবল তারাই সেই অপরাধ করতে পারে)

অনেক ছাত্রী ইউনিকর্নকে দেখে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল–উ–উ–উ কি সুন্দর দেখতে।

ল্যাভেন্ডর ব্রাউন বলল–ওঃ কি সুন্দর। একে ধরল কেমন করে? শুনেছি ধরা খুব শক্ত!

ইউনিকর্নটা এত শুভ্র যে বরফ তার কাছে ধূসর। ও সোনালী রং এর খুড় দিয়ে (খুব সম্ভব ভয় পেয়ে) মাটি খুঁড়ছিল। শিংওয়ালা মাথা দিয়ে সেগুলো সরিয়ে দিচ্ছিল।

প্রফেসর বললেন,–শোন তুমি ওর সামনে দাঁড়িও না। হ্যারিকে যেন চেপে ধরলেন।–ওরা ছেলেদের চাইতে মেয়েদের স্পর্শ ভালবাসে। মেয়েরা, তোমরা আগে আগে চল। খুব সাবধান ইউনিকর্নকে।

মিসেস প্ল্যাঙ্ক আর মেয়েরা ইউনিকনের সামনে দিয়ে চলল। ছেলেরা ঘোড়ার আস্তাবলের বেড়ার কাছে দাঁড়িয়ে রইল।

মিসেস প্ল্যাঙ্ক সামান্য দূরে চলে গেলে, হ্যারি রনকে বলল–তোমার কি মনে হয়, হ্যাগ্রিডের কি হয়েছে? ক্রীউটের কিছু?

ম্যালফয় পটারের কথা শুনে বলল–আরে তোমরা যা ভাবছে তা নয়, ওকে তো কেউ আক্রমণ করেনি। আসলে, ও নিজের কুৎসিত হাঁড়ির মতো মুখটা দেখাতে লজ্জা পাচ্ছে।

হ্যারি তীক্ষ্ণ স্বরে বলল-এসব কথার মানে?

হ্যারির কথা শুনে ম্যালফয় রোবসের পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা ভাঁজ করা পত্রিকা বের করল।

ম্যালফয় বলল–তুমি চাইলে পড়ার পর এটা রেখে দিতেও পার।

হ্যারি কাগজটা ওর হাত থেকে ছিনিয়ে নিল। তারপর পড়তে শুরু করল। রন, সিমাস, ডিন, নেভিল ওর ঘাড়ের পেছনে থেকে পড়তে লাগল। একটা ছোট প্রতিবেদন, হ্যাগ্রিডের ছবি দেওয়া, ছবিতে ওকে খলনায়কের মতো দেখাচ্ছে।

ডাম্বলডোরের মারাত্মক ক্রটি
আমাদের বিশেষ সংবাদদাতা রিটা স্ফীটার জানান, হোগার্টের ডাকিনীবিদ্যা ও জাদু স্কুলের মাথায় ছিটগ্রস্থ হেড মাস্টার মি, ডাম্বলডোর কোন বিবেচনা না করেই বিতর্কিত ব্যক্তিদের স্কুলে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এই বছর সেপ্টেম্বর মাসে, তিনি অ্যালস্টর ম্যাড–আই মুডিকে অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত করেন। ডার্ক আর্ট প্রয়োগের প্রতিরোধ শেখানোর জন্য তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুডি মানুষকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাওয়ার জন্য কুখ্যাত, ও একজন অবসরপ্রাপ্ত অরর। তার এই মনোনয়নে ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের বড় বড় কর্তারা খুবই অসুখী হয়েছেন, তারা জানেন মুডির বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তার বিরুদ্ধে মত পোষণ করলেই নয়, এমনকি কেউ যদি তার সামনে নড়ে চড়ে উঠে তাদেরকেও আক্রমণ করে থাকেন। একবার হোগার্টের অনেকেই মুডির সামনেই ওর কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল। আধা পাগল ডাম্বলডোর মুডিকে কেয়ার অব ম্যাজিক্যাল ক্রিয়েচারস (ম্যাজিক্যাল প্রাণীদের দেখ–ভাল) সম্পৰ্কীয় শিক্ষাদানের জন্য কাজ দিয়েছেন।

রুবিয়স হ্যাগ্রিড নিজেই স্বীকার করেছেন, তাকে হোগার্ট স্কুল থেকে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় বিতাড়িত করা হয়েছিল। তাকেও গেম–কীপার হিসেবে ডাম্বলডোর নিযুক্ত করেছেন। গত বছর হ্যাগ্রিড অসম্ভব প্রভাব বিস্তার করে অনেক যোগ্য প্রার্থীকে উপেক্ষা করে তাকে কেয়ার অব ম্যাজিক্যাল ক্রিয়েচারসে অতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে হেডমাস্টারকে দিয়ে নিযুক্ত করিয়ে নিয়েছেন।

হ্যাগ্রিড একজন ভয়াবহ বিরাট আকারের হিংস্র চেহারার মানুষ। হ্যাগ্রিড তার নবলব্ধ ক্ষমতাবলে সমস্ত ছাত্র–ছাত্রীদের বীভৎস প্রাণী দেখিয়ে ত্রাসের সঞ্চার করে চলেছেন। ডাম্বলডোর সব জেনেও চোখ বন্ধ করে আছেন।

হ্যাগ্রিড তার ক্লাসগুলোতে কতিপয় ছাত্র–ছাত্রীদেরকে পঙ্গু করেছেন, যা সত্যিই ভয়ঙ্কর। চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ড্যাকো ম্যালফয় বলেছে, আমি ও আমার এক বন্ধু ভিনসেন্ট ক্লাবকে হিপোগ্রিফ আক্রমণ করেছিল, ওকে ফ্লবার ওয়ার্মস কামড়ে দিয়েছিল। আমরা সকলে হ্যাগ্রিডকে ঘৃণা করি, কিন্তু এসব প্রকাশ্যে বলতে ভয় পাই।

এত অঘটন হওয়ার পরও, হ্যাগ্রিডের মনে হয় ওই রকম ভয় ভীতিকর শিক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকার কোনও ইচ্ছে নেই। ডেইলি ফেটের সংবাদদাতার কাছে গত মাসে মি. হ্যাগ্রিড স্বীকার করেছেন ভয়ঙ্কর সব জম্ভদের সংকর ব্লাস্ট এন্ডেড ক্রিউট সংখ্যা বাড়াচ্ছেন, যারা অতি ভয়ঙ্কর পাঁচটা তো হবেই। ওই রকম সাংঘাতিক বিপদজনক জম্ভর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে ম্যাজিক্যাল প্রাণী সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগের লক্ষ্য রাখার কথা। মনে হয় হ্যাগ্রিড সকল বাধা–নিষেধের উর্দ্ধে।

এই প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করলে বলেন,আমি কিছু মজা করছি।

এটাই শেষ নয় ডেইলি প্রফেট বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে মি. হ্যাগ্রিড একজন অকলুষিত রক্তের জাদুকর নন–যা তিনি সর্বদাই ভান করেন, শুধু তাই নয়, তিনি মানুষও নন। আমরা যা জেনেছি তার মা দানবী ফ্রিড উলফা, যার বর্তমান ঠিকানা অজানা।

গত শতাব্দী থেকে ওই রকম বর্বর দানবরা এখন আমাদের দেশে প্রায় নিশ্চিহ্ন হবার মুখে। মুষ্টিমেয় যে কজন আছে তারা ওই ব্যক্তি যার নাম বলা যায় না, মাগলদের গণহত্যা করেছে। দেশে আত্মঞ্চের রাজত্ব চালাচ্ছে।

আবার অনেক দানবকে যারা যার নাম বলা যায় নার হত্যালীলার সঙ্গী হয়েছে, তাদেরকে অবররা হত্যা করলেও, ফ্রিডউলফা নিহতদের মধ্যে একজন নন। খুব সম্ভবত: সে বিদেশে পালিয়ে অন্যান্য দানবদের সঙ্গে মিশে রয়েছে। বিদেশে পাহাড়–পর্বতে এখনও কিছু দানব আছে। যদি সেইসব দানবের বংশধররা কেয়ার অব ম্যাজিক্যাল ক্রিয়েচারস শিক্ষা বিষয় পরিচালনা করে; তাহলে বলা যায় ফ্রিডউলফার পুত্র তার মার বর্বর আচরণ জন্মসূত্রে পেয়েছে।

একটু ঘুরিয়ে বলা যায়, হ্যাগ্রিড সেই ছেলেটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব পাতিয়েছে যে ইউ–নো–হুঁর ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। আবার হ্যাগ্রিডের মা, পালিয়ে যাওয়া দানব, যারা ইউ–নো–র দলের তাদেরকে সমর্থন করে। খুব সম্ভব হ্যারি পটার, তার প্রিয় বন্ধুটির অপ্রিয় সত্য সম্বন্ধে কিছুই জানে না। কিন্তু এখানে অ্যালবাস ডাম্বলডোরের অবশ্যই কর্তব্য রয়েছে, হ্যারি পটার ও তার বন্ধুদের সতর্ক করে দেওয়া। ওই অর্ধদানবের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার বিপদ সম্বন্ধে সাবধান করা।

হ্যারি কাগজের বিশেষ সংবাদতার রিপোর্টটি পড়বার পর রনের দিকে তাকাল! রন রিপোর্টের বিষয়বস্তু শুনতে শুনতে থ বনে গিয়েছিল।

ও বলল, এত খবর পেল কোথা থেকে?

কিন্তু সে বিষয়ে হ্যারি একটুও চিন্তিত নয়।

হ্যারি ম্যালফয়ের দিকে থুতু ফেলে বলল–আমরা সকলে হ্যাগ্রিডকে ঘৃণা করি এ কথার মানে কী? কেন ওর বিরুদ্ধে বিষাদগার করা হচ্ছে।… ফ্লবারওয়ার্ম ক্রাবকে কামড়েছে? আমি যতদূর জানি তখন ওর দাঁত উঠেনি যে ক্যাবকে কামড়াবে। ক্রাবের বেশ আত্মতৃপ্ত ভাব মনে হল।

ম্যালফয় বলল,–হ্যাগ্রিডের শিক্ষকের ভূমিকা তাহলে এখানেই খতম।

ম্যালফয়ের খুশিতে চোখ দুটো চকচক করতে লাগল। অর্ধদানব… আমার ধারণা ওর অসুখ–টসুখ কিছু নয়… ওর যখন বয়স কমছিল তখন হয়ত এক বোতল স্কেলে–গ্রো গিলেছে। বাবা-মায়েরা ওকে ভয় পেতেন… ভাবতেন রাক্ষসটা হয়ত তাদের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের খেয়ে ফেলবে। হাঃ হাঃ হাঃ শব্দে ম্যালফয় হেসে উঠল।

–তুমি…।

প্রফেসর গ্রাবলী চিৎকার করে বললো, কথা বন্ধ কর, দয়া করে এ দিকে একটু মন দাও! মেয়েরা ইউনিকর্নের গায়ে তখন টোকা মারবে। হ্যারি লেখাটা পড়ে অসম্ভব ক্রুব্ধ। কাগজটা হাতে নিয়ে রাগে থর থর করে কাঁপতে লাগল। ইউনিকনের দিকে মাঝে মাঝে তাকাতে লাগল। প্রফেসর প্ল্যাঙ্ক এখন ছেলে–মেয়েদের উঁচু গলায় ইউনিকর্ন সম্বন্ধে বলছেন, যেন পেছনে দাঁড়ানো ছেলেরাও শুনতে পায়।

ক্লাস শেষ হবার পর লাঞ্চ খেতে যেতে যেতে পার্বতী বলল–ম্যাজিক্যাল ক্রিয়েচারস বলতে ইউনিকর্নকে নেওয়া যায়, হ্যাগ্রিডের ওই মারাত্মক জগুলো নয়।

হ্যারি রেগে গিয়ে বলল–তাহলে হ্যাগ্রিড সম্বন্ধে তোমার মতামত জানতে পারি?

–ওর সম্বন্ধে? পার্বতী বলল–ওকে গেমকীপার হিসেবে রাখা চলতে পারে।

বলড্যান্সের পর থেকে পার্বতী হ্যারি সম্বন্ধে আর কোনও আগ্রহ দেখায়নি। ওর ধারণা হ্যারি ওকে ডুবিয়েছে। নাচে কোনও মনোযোগ দেয়নি। তাহলেও এক গাদা ছেলে বন্ধু নিয়ে ভালই আছে পার্বতী। পরে সাপ্তাহিক ছুটির ভ্রমণে বক্সটেনের ছেলেদের নিয়ে একটা প্রোগ্রাম করেছে হগফমেছে।

 গ্রেটহলে যেতে যেতে হারমিওন বলল–প্রফেসর প্ল্যাঙ্ক সত্যি সুন্দর করে সব বুঝিয়ে দিলেন। ইউনি সম্বন্ধে যা যা বললেন তার অর্ধেকও আমার জানা ছিল না।

-এইটে দেখেছো? পড়। হ্যারি বলতে গেলে হারমিওনের মুখের সামনে মেলে ধরলো ডেইলি ফেটে প্রকাশিত কাটিংটা।

পড়তে পড়তে হারমিওনের মুখ হা হয়ে গেল। রনের মতই তার লেখাটা পড়ার পর প্রতিক্রিয়া হল। ওই সাংঘাতিক মহিলা এত সব খবর কোথা থেকে পেল? হ্যাগ্রিড সেদিনের সাক্ষাৎকারে নিশ্চয়ই এ–গুলো বলেননি।

গ্রিফিন্ডরদের টেবিলে কাছে গিয়ে বলল–না, উনি বলতে যাবেন কেন। তারপর ধপাস করে চেয়ারে বসে বলল–আমাদেরকেও তো আগে এসব কথা বলেন নি। আমার ভাগ্যভাল… আমার সাথে স্কীটারের কথা হয়নি। আমার মনে হয় মহিলা বদ্ধপাগল। তার সম্বন্ধে যা যা লিখেছে… হ্যাগ্রিড অবশ্যই বলেননি। যা খুশি তাই লিখে যাচ্ছে।

–হতে পারে ও হ্যাগ্রিডের মাদাম ম্যাক্সিমের সঙ্গে ক্রিস্টমাস বলে কথাবার্তা শুনেছে, হারমিওন শান্তভাবে বলল।

রন বলল–আমরা বাগানে মাদাম ম্যাক্সিমকে হ্যাগ্রিডের সঙ্গে দেখেছি। সে কথা তো তোমাকে বলেছি। যাইহোক ও ভবিষ্যতে স্কুলের ভেতর ঢুকতে পারবে না। হ্যাগ্রিড জানিয়েছেন ডাম্বলডোরকে বিষয়টি জানিয়েছেন। ওর এখানে ঢোকা নিষিদ্ধ।

–ওর কাছে অদৃশ্য হবার রোবস তো থাকতে পারে, খাবার নিতে নিতে বলল হ্যারি। হ্যারি এত রেগে আছে যে পাত্র থেকে চিকেন ক্যাসেরোল তুলতে ওর হাত কাঁপছে।–ঝাড়ু–ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থেকে সকলের কথাবার্তা শুনে থাকতে পারে।

হারমিওন বলল–তুমি আর রনের মতো!

রন বলল–আমরা হ্যাগ্রিডের কথা মোটেই লুকিয়ে শুনিনি। আমরা ওখানে বেড়াতে গিয়ে শুনেছি।

সেই দিন–ই ডিনারের পর ওরা তিনজনে হ্যাগ্রিডের খবর নিতে ওর কেবিনের দিকে গেল। ওরা দরজা নক করতেই ফ্যাংগ তীব্রস্বরে ঘেউ ঘেউ করে উঠল। হ্যাগ্রিড ঘরের ভেতর থেকে বললেন–কে?

–হ্যাগ্রিড আমরা, হ্যারি জোরে জোরে বলল।–দরজাটা খুলবেন।

হ্যাগ্রিড কোনও জবাব দিলো না। ওরা বাইরে থেকে ফ্যাঙ্গের দরজায় আঁচড় টানার শব্দ শুনতে পেল। রন একটা জানালার কাছে গিয়ে কপাটে ঘা দিতে লাগল। তাও হ্যাগ্রিড দরজা খুললেন না। কোনও জবাবও দিলেন না।

ফিরে যাবার সময় হারমিওন বলল–আশ্চর্য! উনি আমাদের এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন? উনি কি মনে করছেন যে, অর্ধ–দানব বিষয়টি আমাদের কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে।

কিন্তু তারা না করলেও হ্যাগ্রিড করেন। পুরো সাত সাতটা দিন ওরা হ্যাগ্রিডের কোনও দেখা পায়নি। গ্রেট হলে খেতেও আসেন নি।

গ্রাবলী প্লাঙ্ক হ্যাগ্রিডের একের পর এক ক্লাশ নিয়ে যাচ্ছেন।

হ্যারি যাতে ম্যালফয়ের টিটকারির উত্তর না করতে পারে এই কারণে টিচাররা কাছাকাছি থাকলে বলে,–আরে তুমি হাফব্রিড বন্ধুর অভাবে কষ্ট পাচ্ছ? হাতির মতো লোকটাকে দেখতে পাচ্ছ না এই কারণে?

জানুয়ারির মাঝামাঝি হগসমেডে যাবার ব্যবস্থা হয়েছে। হারমিওন ভেবে ছিল হ্যারি যাবে না। হ্যারি যাবে শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল।

–আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়ত যাবে না, কমনরুমে একা একা বসে বসে ডিম সংক্রান্ত কাজ করবে।

–ছাড় ও সব কথা। আমার মাথায় দারুণ একটা প্ল্যান এসেছে–হ্যারি মিথ্যে কথা বলল।

হারমিওন বলল–তাই… বাঃ বাঃ খুব ভাল কথা।

হ্যারির মনের মধ্যে কাজ না করার অপরাধ বোধ ঝাঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু দিলেও ও আমল দিল না। যাই হোক ভালই হবে, এটাই ও ভাবতে লাগল। হারমিওনের হ্যারির গলার স্বর, বলার ভঙ্গি তেমন পছন্দসই মনে হলো না। ভুরু কোঁচকাল। ওর হাতে এখনও পাঁচ সপ্তাহ সময় আছে, এর মধ্যে ডিমের কু পাবেই… একটা কিছু করবেই। যদি হগসমেড়ে যায় তো হ্যাগ্রিডের সঙ্গে দেখা হতে পারে। হ্যাগ্রিডকে ফিরে আসতে বলবে হোগার্ট স্কুলে।

শনিবার ওরা তিনজনে ক্যাসেল থেকে বেরিয়ে পড়ল। ক্যাসেলের বাইরে বেশ ঠাণ্ডা। ভিজে রাস্তা দিয়ে গেটের কাছে পৌঁছল। লেকে নোঙর করা ডারমস্ট্রাংগদের জাহাজের পাশ দিয়ে যেতে যেতে ডেকে ভিক্টর ক্রামকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। পরণে শুধু সাঁতারের পোশাক। গায়ে চর্বি নেই, বেশ মজবুত শক্ত সমর্থ চেহারা। ওরা কিনারা থেকে দেখল ক্রাম দুহাত বাড়িয়ে লেকের জলে ডাইভ দিল।

হ্যারি বলল–মনে হয় ছেলেটা পাগল! লেকের মাঝজলে ওর কাল মাথাটা দেখে বলল। জানুয়ারি মাসে বরফ ঠাণ্ডা জলে কেউ সাঁতার কাটে!

হারমিওন বলল–ওর দেশের ঠাণ্ডা আরও বেশি। আমার মনে হয় এখানে এসে ওর গরম লাগছে।

–তাই হবে।

হারমিওন বলল–তুমি জান ছেলেটি খুব ভদ্র, ভাল ছেলে। তোমরা যে রকম ভাবছো ওকে সে রকম সে মোটেই নয়। ও আমাকে বলেছে, আমাদের দেশটা ওর খুব ভাল লাগছে।

রন কথাটা শুনে চুপ করে রইল। সে ভিক্টর কাম সম্বন্ধে কোনও কথা আলোচনা করতে চায় না। কিন্তু হ্যারি বক্সিং ডেতে ওর বিছানার তলায় একটা কাঠের তৈরি ছোট একটা বাহু দেখেছিল। মনে হয় মডেল থেকে কেটেছে। মডেলের গায়ে বুলগেরিয়ার কিডিচ খেলার রোব।

ওরা নরম কাদায় ভরা হাইস্ট্রিট দিয়ে নামার সময় হ্যারি শুধু উদভ্রান্তের মতো রাস্তার দু–ধারে তাকায়–আশা যদি হঠাৎহ্যাগ্রিডের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। কোথায় কোনও দোকানে, পথে হ্যাগ্রিডকে দেখতে না পেয়ে হ্যারি বলল–আমরা যদি থ্রি ক্ৰম স্টিকে যাই তো কেমন হয়?

পাবটা কখনই খালি থাকে না। ওরা ঢুকে দেখল তিলধারণের স্থান নেই। হ্যারি সবকটা টেবিলে তাকাল। হ্যাগ্রিডকে দেখতে পেল না। ওর মন খুব দমে গেল। ম্যাডাম রসমেট্রাকে ওরা তিনজনে তিনটে বাটার বিয়র অর্ডার দিল এবং ভাবল এখানে আসাটা অনাবশ্যক হল। তার চেয়ে হারমিওন যা বলেছিল কমনরুমে বসে বসে ডিমের বিলাপ শোনা অনেক ভাল ছিল।

–আচ্ছা হ্যাগ্রিড তো অফিসেও যান না? কথাটা বলেই হারমিওন জোরে জোরে বলে উঠল-এই দেখ দেখ।

পাবের দেওয়ালে ছোট একটা আয়না লাগান। হ্যারি সেই আয়নাতে লুডো বেগম্যানের প্রতিবিম্ব দেখতে পেল। একটা অন্ধকার কোণে বসে রয়েছেন–সঙ্গে বেশ কয়েকটা গবলিন (বেটে ভুত/ অপদেবতা)। গবলিনদের সঙ্গে খুব চাপা হলেও দ্রুত কথা বললেন বেগম্যান। গবলিনরা প্রত্যেকেই তাদের হাত বুকে জড়ো করে রেখেছে, মুখ ভয়ার্ত।

হ্যারির মনে হল বেগম্যান থ্রি ক্রমষ্টিকে ছুটি উপভোগ করতে এসেছেন, ট্রাই উইজার্ড টুর্নামেন্ট নেই, বিচারক হয়েও বসতে হবে না। আবারও বেগম্যানকে দেখল, ওকে খুবই বিচলিত দেখাচ্ছে। অনেকটা সেই অরণ্যের মধ্যে ডাক মার্ক আসার আগের মতো বিচলিত। হঠাৎ বেগম্যান মুখটা সামান্য তুলতে হ্যারিকে দেখতে পেলেন। দেখতে পেয়ে দাঁড়ালেন।

হ্যারি শুনতে পেল বেগম্যান ডবলিনদের বলল–অপেক্ষা কর, আমি এক সেকেন্ডের মধ্যে আসছি। বেগম্যান দ্রুত পায়ে হ্যারির সামনে এসে দাঁড়ালেন। বেগম্যানের মুখে বিচলিত ভাবের বদলে শিশুসুলভ হাসি।

হ্যারি! বেগম্যান বললেন,–আরে তুমি কেমন আছ? ভাবছিলাম একদিন তোমার কাছে যাব! সব ভালভাবে চলছে তো?

হ্যারি বলল–ভালই, ধন্যবাদ।

–হ্যারি তোমার সঙ্গে কী দু একটা ব্যক্তিগত কথা বলতে পারি? বেগম্যান উৎসাহের সঙ্গে বললেন।

–তোমরা কথা বল, রন বলল। হারমিওনকে নিয়ে রন একটা ফাঁকা টেবিলের খোঁজে গেল।

বেগম্যান, হ্যারির হাত ধরে একটু নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে গেলেন। বেগম্যান বললেন, হ্যারি তোমার হর্নটেলের সঙ্গে আকাশযুদ্ধ সত্যই চমৎকার হয়েছিল। সেদিন তোমাকে অভিনন্দন জানান হয়নি। আমি খুশি, আমার অভিনন্দন..।

হ্যারি বলল–ধন্যবাদ। হ্যারি জানে শুধু এই কথা বলার জন্য বেগম্যান একে আলাদা করে ডেকে আনে নি। অভিনন্দন তো রন হারমিওনের সামনে করতে পারতেন। বেগম্যান মনে হয় তাড়াতাড়ি কিছু বলতে চান না। হ্যারি আড় চোখে দেখল বেগম্যান আয়নাতে অদূরে বসা গবলিনদের দিকে তাকালেন।

হ্যারি দেখল গবলিনরাও বেগম্যানের দিকে পিটপিট করে তাকাচ্ছে।

-একেবারেই দুঃস্বপ্ন বেগম্যান চাপা গলায় হ্যারিকে বললেন। লক্ষ্য করলেন হ্যারির দৃষ্টি গবলিনদের ওপর।–ওদের ইংরেজি তেমন ভাল নয়… মনে করিয়ে দেয় কিডিচ ওয়ার্ল্ডকাপে বুলগেরিয়নদের।… তবে বুলগেরিয়ানরা ইংরেজি ভাল বলতে না পারলেও আকারে–ইঙ্গিতে কি বলছে বুঝিয়ে দিত। কিন্তু এরা যে কি বলাবলি করে তার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝি না। আমি একটি শব্দ জানি ব্ল্যাড ভ্যাক… এর মানে গাইতি। আমি অবশ্য শব্দটা ব্যবহার করতে চাই না… ওরা ভাববে হয়ত গাঁইতি নিয়ে হুমকি দিচ্ছি। কথাগুলো বলে হো : হো : করে হেসে উঠলেন।

–ওরা কী চায়? হ্যারি দেখল গবলিনরা বেগম্যানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।

হঠাৎ বেগম্যান অসম্ভব নার্ভাস হয়ে বললেন,–ও হ্যা…… ওরা বাটি ক্রাউচের খোঁজে এসেছে।

-এখানে এসে খোঁজ করছে কেন? উনি তো লন্ডনে মন্ত্রণালয়ে বসেন। তাই?

বেগম্যান বললেন, আমার কোন ধারণা নেই–ক্রাউচ কোথায় আছেন।… শুনেছি কাজে আসছে না… তা প্রায় সপ্তাহ দুই হল। ওর সহকারী পার্সি বলছে, ও নাকি অসুস্থ। মনে হয় পাচা পাঠিয়ে কাজ–কর্ম চালিয়ে নিচ্ছে। তুমি কিন্তু এই কথাগুলো কাউকে বলবে না। রিটা স্কিটার যেখানে সেখানে ঢু মেরে বেড়াচ্ছে। এখন ও বাটির অসুস্থতার ব্যাপার নিয়ে অদ্ভুত কিছু লিখে বসবে। হয়ত লিখে বসবে বার্থা জোরকিনসের মতো ও লাপাত্তা।

হ্যারি বলল–আপনি বার্থা জোরকিনস সম্বন্ধে কিছু শুনেছেন?

–না, বেগম্যান বললেন। আবার ওকে চিন্তিত দেখাল।… ওর খোঁজে লোক লাগিয়েছি। ভাবতে অদ্ভুত লাগে। আমার কাছে খবর আছে ও আলবেনিয়াতে ওর দ্বিতীয় কাযিনের (চাচাত/মামাত ভাই অথবা বোন) দেখা করেছে… তারপর সেখান থেকে দক্ষিণে ওর আন্টির কাছে।… তারপর হাওয়াতে উড়ে গেল!… কারও সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার মতো মেয়ে ও নয়। কিন্তু আমরা এখানে বসে করছি টা কি?… গবলিন, আর জোরকিন্স নিয়ে বোকা বোকা কথা… এখন থাক, তোমার সাথে যে বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি সেটি হলো টুর্নামেন্ট… তোমার সোনার ডিমের বিষয়টা কতদূর এগোল?

হ্যারি বলল, ( মিথ্যে কথা), খুব একটা মন্দ নয়।

বেগম্যান বুঝতে পারলেন হ্যারি সত্যি কথা বলছে না।

–শোন হ্যারি, আমি যখন থেকে শুনেছি এই টুর্নামেন্টে তোমাকে কেউ নাম দিয়েছে বিষয়টি আমার খুবই খারাপ লেগেছে। তুমি নিজে যাওনি। (খুব আস্তে বললেন)… যদি তুমি চাও আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।… ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিতে পারি… আমার তোমাকে খুব ভাললাগে… আরও ভাল লেগেছে দুর্ধর্ষ ড্রাগনদের সঙ্গে লড়াইয়ে তোমার কুশলতা দেখে! এ বিষয়ে তুমি কী মনে কর।

হ্যারি বেগম্যানের বিরাট গোলাকার মুখে ছোট ছোট শিশুদের মতো নীল চোখের দিকে তাকাল।

–কাজটি আমাদের একা একা বের করতে হবে… তাই না?… খুব সতর্কতার সঙ্গে হ্যারি বলল, যাতে ম্যাজিক্যাল গেমস বিভাগের প্রধান মনে না করেন বেগম্যানকে অভিযুক্ত করছে ও।

–হ্যাঁ, হ্যা… তুমি যথার্থ কথা বলেছ হ্যারি, বেগম্যান অধৈর্য হয়ে বললেন…. কিন্তু মন চাঙা কর। আমাদের এখন হোগার্টের জয় চাই… আমরা সবাই তা চাই।

–আপনি সেডরিককে সাহায্যের জন্য বলেছেন? হ্যারি জিজ্ঞাসা করল।

বেগম্যান সামান্য ভুরু কোচকালেন।

–না আমি বলি নি, বেগম্যান বললেন। আমি আগেই বলেছি তোমাকে আমি পছন্দ করি… ভাবছিলাম যদি কোনও সাহায্যে আসতে পারি।

–ধন্যবাদ, হ্যারি বলল… আমার মনে হয় সমস্যার সমাধান করে এনেছি, আর হয়ত দু চারদিন সময় লাগতে পারে ডিমটাকে ভোলার।

হ্যারি ঠিক জানে না কেন বেগম্যানের সাহায্য ওর দরকার নেই। বেগম্যানকে ও খুব ভাল করে জানে না, বেশ অপরিচিত এই কারণে। তার সাহায্য নেওয়া ওর কাছে মনে হয় ঠকানোর সমতূল্য। আর হারমিওন, রন অথবা সিরিয়সের কাছে পরামর্শ চাওয়া সেই পর্যায়ের নয় কী।

ফ্রেড আর জর্জ ওদের দিকে আসতে দেখে বেগম্যান চুপ করে গেলেন।

–হ্যালো মি. বেগম্যান, ফ্রেড হাসতে হাসতে বলল।–অনুমতি দিলে আপনার জন্য পানীয় আনতে পারি।

–না, ধন্যবাদ, বেগম্যান বললেন অপ্রাপ্ত হতাশা নিয়ে।

ফ্রেড ও জর্জ দুজনেই হতাশ হল, সন্দেহ নেই। ওদের মনে হল বেগম্যানের পানীয় গ্রহণ না করার জন্য হ্যারি দায়ী। এমন এক মুখ করে ওরা হ্যারির দিকে তাকিয়ে রইল।

বেগম্যান বললেন, তোমার সঙ্গে কথা বলে খুব ভাল লাগল হ্যারি, আচ্ছা আজ তবে চলি।… বেগম্যান চলে গেলেন।

বেগম্যান পাব থেকে চলে গেলে গবলিনরাও ওর পিছু পিছু চলে গেল। হ্যারি গেল রন আর হারমিওনের কাছে।

হ্যারি আসার সঙ্গে সঙ্গে রন বলল–উনি কি চাইছিলেন?

–সোনার ডিমের ব্যাপারে সাহায্য করতে চাইছিলেন।

হারমিওন বলল–ওটা তার উচিত হয়নি। মনে হয় ও খুব আঘাত পেল সাহায্যের কথাটা শুনে।–উনিতো একজন বিচারক… তাছাড়া তুমি তো সব সমাধান করে ফেলছ… তাই না হ্যারি?

হ্যারি বলল–মোটামুটি।

–শোন ডাম্বলডোর জানতে পারলে কিন্তু মোটেই খুশি হবেন না… ব্যাপারটা চিটিং হবে–হারমিওন বলল…, আমার মনে হয় উনি সেডরিককেও এই রকমভাবে সাহায্য করতে চাইছেন।

হ্যারি বলল–না, সেডরিককে বলেননি। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।

রন বলল–ডিগরিকে কেউ সাহায্য করলে কারও কিছু যাবে আসবে না।

হারমিওন বলল–বেগম্যানের সঙ্গে যেসব গবলিন বসেছিল তাদের দেখে খুব ভাল মনে হয় না।… বাটার বিয়রে চুমক দিল,–ওরা এখানে কি মতলবে এসে ছিল?

বেগম্যান বলছিলেন,–ওরা কাউচের খোঁজ করতে এসেছিল।… ক্রাউচ এখনও অসুস্থ… অফিসে যাচ্ছেন না তাই।

রন বলল–হতে পারে, পার্সি ওকে স্লো পয়জনিং করছে। মনে মনে ভাবছে ক্রাউচ গেলে ওর সুবিধে হবে… ডিপার্টমেন্ট অব ম্যাজিক্যাল কো–অপারেশনের হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট হবে।

হারমিওন রনের দিকে তাকাল। এই সব ব্যাপার নিয়ে ঠাট্টা–তামাশা করা ঠিক নয় তাকানোর মধ্যে ফুটে উঠল। আশ্চর্য গবলিনরা মি. ক্রাউচের খোঁজ করছিল… তাদের কাজ তো ম্যাজিক্যাল প্রাণী সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ অফিসে।

হ্যারি বলল–ক্রাউচ অনেক ভাষা জানেন, কথাও বলতে পারেন… হতে পারে ওরা ইন্টারপ্রেটার (দোভাষী) চাইছে।

রন বলল–হারমিওন তোমার ওদের জন্য চিন্তা হচ্ছে?… SPUG গঠন করতে চাও… বা ওই রকম একটা কিছু? সোসাইটি (S) ফর দ্যা প্রোটেকশন (P) অব আগলি (U) গবলিনস (G) (কুৎসিত গবলিনদের রক্ষাকারী গোষ্ঠী)?

হারমিওন ব্যঙ্গ করে হাসল হাঃ হাঃ হাঃ–গবলিনদের রক্ষা করার প্রয়োজন হয় না। গবলিন বিদ্রোহ সম্বন্ধে প্রফেসর বিনসের মন্তব্য জান না?

রন–হ্যারি সমস্বরে বলে উঠল, না।

–তাহলে শোন, ওরা জাদুকরদের সাথে কিভাবে চলতে হয় সে বিষয়ে যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে, হারমিওন বলল। খুব তাড়াতাড়ি বারবার চুমুক দিয়ে বাটারবিয়র শেষ করে দিল। ওরা বুঝলে খুবই চালাক, হাউজ এলফর মত হাবাগোবা নয়… যে নিজের কথা ভাবে না।

রন দরজার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি সূচক কণ্ঠে বলল, ওহ্ হ।

ঠিক তখনই রিটা স্কীটার পাবে ঢুকেছে। পোশাক পাল্টেছে… হলদে কলার মতো রং-এর বরাব পরেছে। হাতের বড় বড় নখে শকিং পিংক নেল পলিশ লাগিয়েছে। সঙ্গে এক ভুড়িওয়ালা ফটোগ্রাফার! ওরা টেবিলের ধার দিয়ে হেঁটে হেঁটে জায়গা খুঁজতে লাগল। ও কাছে এলে তিনজনে ওর দিকে তাকাল। ও খুব দ্রুত কিছু বলছে। মুখ দেখে মনে হয় কোনও কিছু হয়েছে তার জন্য ও খুব খুশি ফিস ফিস গলায় বলছে…..

…মনে হয় আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না, কেন এমন হবে তুমি ভেবে দেখ। এখানে একদল গবলিনের সঙ্গে বসে কি আলোচনা করছিল? ওদের কি দেখাচ্ছিল… বাজে কাণ্ড–কারখানা সকলেই ওকে মিথ্যুক বলে জানে… ওই ম্যাজিক্যাল স্পোর্টস-এর প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া লুডো বেগম্যান… ওর সম্বন্ধে কিছু লিখতে হবে… তা না হলে ঠিক হবে না।

হ্যারি বেশ জোরে জোরে বলল–কারও সর্বনাশের চেষ্টা হচ্ছে নিশ্চয়ই?

ওর কথা শুনে পাবের অনেকে হ্যারির দিকে তাকাল, রিটা ওর অলংকৃত চশমার আড়ালে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।

রিটা খুশিতে উপছে পড়ে বলল–আহ্ হ্যারি… তোমায় দেখে খুব ভাল লাগল। এস এখানে এসে বস।

–তোমার ধারে কাছেও আসতে চাই না, হ্যারি অসম্ভব রেগে বলল–তুমি হ্যাগ্রিড সম্বন্ধে আজেবাজে কথা লিখেছ কেন?

রিটা স্ফীটার ওর মোটা করে আঁকা দুই ভুরু উঁচু করল।

–আমাদের পাঠকের সত্য কথা জানার অধিকার আছে।… হ্যারি, আমি আমার কর্তব্য…।

–হ্যাগ্রিড আধা–দানব হলে পাঠকদের কি আসে যায়? হ্যারি আরও জোরে, বলল–তিনি তো কোনও দোষ করেন নি।

পাবে যারা ছিল, তাদের কারও মুখে একটুও কথা নেই ম্যাডাম রোজমেটা বারের কাউন্টার থেকে দেখতে লাগলেন। এত বেশি নার্ভাস যে বোতল থেকে বিয়ার ঢালার সময় গেলাস থেকে উপছে পড়ছে সেদিকে খেয়াল নেই। রিটা স্কীটার ছোট করে হাসল। তারপর কুমিরের চামড়ার হাতব্যাগ থেকে দ্রুত লিখিয়ে পালক বের করে বলল–হ্যারি তুমি হ্যাগ্রিড সম্বন্ধে একটি ছোট সাক্ষাৎকার দিতে ইচ্ছুক?–মানে তাকে কতটুকু জান এই আর কি। সেই শক্তিশালী আধা–দানবের সঙ্গে বন্ধুত্ব… তার কারণ এইসব আর কি। তুমি কী ওকে ধর্ম পিতা বানাতে চাইছ?

হারমিওন কথাটা শুনে তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। ওর হাতে গ্লাসভর্তি বাটার বিয়র। মনে হয় একটা গ্রেনেড ধরে রয়েছে। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,–শয়তান মহিলা… তুমি তোমার কাগজে স্টোরি লেখার জন্য স্থান–কাল–পাত্র ভুলে যতটুকু নিচে নামার… যাও। এখন তুমি লুডো বেগম্যানের মতো মানুষকে ধরেছ?

রিটা স্কীটার বলল–দুই মেয়ে বেশি চেঁচামেঁচি না করে চুপটি করে বসে থাক। যা জানো তা বল না। রিটার চোখ দুটো লাল, এমনভাবে হারমিওনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে যেন ওকে গিলে খাবে। আমি লুডো বেগম্যানের সম্বন্ধে যা জানি, শুনলে তোমার মাথার চুল খাড়া হয়ে উঠবে।

হারমিওন বলল–চল রন, আমরা এখান থেকে যাই। ওরা পাব থেকে বেরিয়ে চলে এলো।

সকলের দৃষ্টি ওদের দিকে। হ্যারি দরজার মুখ থেকে রিটার দিকে তাকাল। দেখল রিটা ওর দ্রুত লিখিয়ে পালক দিয়ে একটা পার্চমেন্টে কিছু লিখছে।

রন যেতে যেতে খুব আস্তে আস্তে বলল–হারমিওন এবার তোমার পালা। চেষ্টা করুক! হারমিওন ক্ষিপ্তভাবে বলল, রাগেও থর থর করে কাঁপছে। ও আমাকে বাচ্চা ফাজিল মেয়ে বলল? আমি হ্যারি আর হ্যাগ্রিডের পেছনে লাগার মজা দেখাব।

–রিটা স্কীটারের সঙ্গে অযথা গোলমালে যেও না, রন বলল–মাটি খুঁড়ে কিছু। বের করে তোমার সম্বন্ধে লিখবে।

হারমিওন বলল–আমার বাবা-মা ডেইলি প্রফেট পড়েন না। তাছাড়া আমার লুকোবার কিছু নেই। হারমিওন প্রায় দৌড় দেবার মতো হাঁটতে লাগল। এত জোরে হাঁটছে যে রন ও হ্যারি ওর সঙ্গে তালরেখে হাঁটতে পারছেন। রন জানে হারমিওন রেগে গেলে আর হুশ থাকে না। একবার তো ম্যালফয়কে চড় মেরেছিল।

এক রকম দৌড়তে দৌড়তে ওরা হ্যাগ্রিডের কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়াল। সেখান থেকে দেখল তখনও ওর ঘরের জানালায় পর্দা ঝুলছে। ওরা শুনতে পেল ফ্যাংগের মারাত্মক ঘেউ ঘেউ ডাক।

হারমিওন দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বলল,–অনেক হয়েছে হ্যাগ্রিড, এবার দরজা খোলে। আমরা জানি আপনি এখানে আছেন। দানব না–মানব সে নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না হ্যাগ্রিড… তবে ওই গর্দভ রিটাকে কর্মচ্যুত করতেই হবে। আপনি যা করবেন, বলবেন তাই হবে। প্লিজ দরজা খুলুন… আমাদের সঙ্গে একটি বার দাঁড়ান।

দরজা খুলে গেল। হারমিওন কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল। দেখল সামনে হ্যাগ্রিড নয় ডাম্বলডোর দাঁড়িয়ে।

ওদের তিনজনের উদবিগ্র মুখের দিকে তাকিয়ে স্মিত মুখে ডাম্বলডোর বললেন,–শুভ সন্ধ্যা।

হারমিওন তো তো করে বলল–আমরা মি. হ্যাগ্রিডের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম।

–তা আমি বুঝতে পেরেছি বাইরে দাঁড়িয়ে কেন, ভেতরে এস। হারমিওন বলল…. না আমরা..।

ওরা তিনজনে হ্যাগ্রিডের কেবিনে ঢুকল। ফ্যাংগ হ্যারির ওপর আনন্দে ঝাঁপিয়ে পড়ল। অসম্ভব জোরে শুধু ডাকা নয়, জিব দিয়ে হ্যারির কান চাটতে লাগল। হ্যারি তাড়া দিয়ে ফ্যাংগকে ভাগিয়ে দিল।

ওরা দেখল হ্যাগ্রিড ওর টেবিলে বসে আছেন, সামনে বড় মগে চা। দেখে মনে হয় কোনো কারণে ভেঙে পড়েছেন। মুখটা ফোলা ফোলা… চোখ দুটো বসে গেছে।

–হাই, হ্যাগ্রিড, হ্যারি বলল।

হ্যাগ্রিড মুখ তুলে তাকালেন।

তারপর বললেন–হ্যাঁ কি ব্যাপার? গলার স্বর কর্কশ।

ডাম্বলডোর বললেন–চা খেলে কেমন হয়! বলেই জাদুদণ্ডটা ঘুরপাক খাওয়ালেন। সঙ্গে সঙ্গে টিট্রে… কেক, প্রেসট্রি ইত্যাদি টেবিলের ওপর এসে গেল। ওরা তিনজনে চেয়ারে বসল।

সামান্য চুপ থাকার পর ডাম্বলডোর বললেন,–মিস গ্রেঞ্জার জোরে জোরে কি বলেছে শুনতে পেয়েছ হ্যাগ্রিড?

ডাম্বলডোরের কথা শুনে হারমিওনের মুখটা সামান্য লাল হয়ে গেল। কিন্তু ডাম্বলডোর হাসলেন।–হারমিওন, হ্যারি, রন মনে হয় তোমার কাছ থেকে কিছু শুনতে চায়… যেভাবে রেগে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিচ্ছিল… দরজা হয়ত ভেঙে যেত।

–হ্যাঁ আমরা জানতে চাই! হ্যারি বলল, হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে,–আপনি জানেন না ওই স্কীটার গরুটা। কথাটা শেষ না করেই ডাম্বলডোরের দিকে তাকিয়ে লজ্জিত স্বরে বলল–দুঃখিত প্রফেসর।

ডাম্বলডোর মৃদু হেসে বুড়ো আঙ্গুল নাচাতে নাচাতে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যারি, আমি সামান্য সময় কালা হয়ে গেছিলাম, তোমার কথা শুনতে পাইনি।

–আমরা বলতে চাই ওই মহিলা যা লিখবে আপনি কোনও প্রতিবাদ করবেন না, মেনে নেবেন? আপনি জানেন ও কী লিখেছে?

হ্যাগ্রিডের সবুজ চোখ দিয়ে দু–ফোঁটা জল গাল গড়িয়ে পড়ে ওর দাঁড়িতে মিশে গেল।

–হ্যাগ্রিড তোমায় আমি যা যা বলেছি তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি তোমাকে, তোমার সম্বন্ধে অসংখ্য ছাত্র–ছাত্রীদের মা-বাবা, অভিভাবকরা যা লিখেছেন দেখিয়েছি।… লিখেছে, আমি যদি তোমাকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দিই… তাহলে তাদেরও কিছু বলার আছে।

–না না ডাম্বলডোর সকলে নয়, সকলে নয়… হ্যাগ্রিড বলল।

–সত্যি হ্যাগ্রিড তুমি যদি চাও সারা দুনিয়ার লোক তোমার জনপ্রিয়তা মেনে নেবে ও তুমি সারা জীবন তোমার এই কেবিনে কাটাতে পারবে।–ডাম্বলডোর তার আধখানা চাঁদের মতো চশমা দিয়ে হ্যাগ্রিডের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। মনে আছে আমি যখন এই স্কুলের দায়িত্ব নিয়ে আসি… আমার পরিচালনা সম্বন্ধে নালিশ জানিয়ে একটি চিঠিও আসেনি; কিন্তু এখন সব কিছু বদলে গেছে, যাচ্ছে। আমাকে পড়াশুনা নিয়ে থাকতে হয়… কারও সঙ্গে কথাটথা তেমন বলতে ভাল লাগে না।

–জানি, কিন্তু তুমি তো আমার মতো অর্ধদানব নয়।

–হ্যাগ্রিড, আপনি তো জানেন ডার্সলেরা আমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করে।

–হ্যারি তুমি সুন্দর একটি উদাহরণ দিয়েছ। তোমার মা-বাবা জাদুকর আর ওরা মাগল।… আমার আপন ভাই অ্যাবেরফোর্থ অবৈধভাবে একটা ছাগলের ওপর জাদু প্রয়োগের জন্য তাকে আসামি করা হয়েছিল। অন্তত: কাগজে–কলমে তাই আছে। কিন্তু অ্যাবেরফোর্থ ভয় পায়নি। ও মাথা উঁচু করে চলত, কেননা ও জাদু প্রয়োগ করেনি, স্বাভাবিক কাজ–কর্ম করত।

হারমিওন বলল–আমাদের ছেড়ে যাবেন না হ্যাগ্রিড। হ্যাগ্রিডের চোখের জল পড়া থামে না।

ডাম্বলডোর দাঁড়ালেন। বললেন, হ্যাগ্রিড আমি আপনার পদত্যাগ পত্র নিলাম। আপনি যেমন পড়াচ্ছিলেন তেমনই পড়িয়ে যান। 

ডাম্বলডোর ধীরে ধীরে হ্যাগ্রিডের কেবিন থেকে চলে গেলে হ্যাগ্রিড বললেন, ভালো মানুষ, ডাম্বলডোর সত্যই মহৎ।

হ্যাগ্রিড চেয়ার ছেড়ে উঠে বললেন, তোমাদের আমি আমার পিতার ছবি খুব সম্ভব দেখাই নি। দেখিয়েছি?

হ্যাগ্রিড ঘরে গিয়ে একটা ফটো নিয়ে এলেন। ছোটখাট এক জাদুকরের সঙ্গে হ্যাগ্রিড!… সাত আট ফিট লম্বা হ্যাগ্রিডের কাঁধে বসে ছোটখাট এক মানুষ। পাশেই একটা আপেল গাছ। তার উচ্চতা দেখে হ্যাগ্রিডের উচ্চতা বোঝা যায়। শক্ত–সমর্থ চেহারা, মুখে দাড়ি–গোঁফ নেই।.. ছবিটা তোলা হয়েছিল আমি হোগার্টে ভর্তি হবার সময়ে। আমার তখন এগার বছর বয়স। তার দু বছর পর বাবার মৃত্যু।… বাবার মৃত্যুর পর আমাকে গেমকীপারের কাজ করতে হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, মানুষকে ভরসা করবে, বিশ্বাস হারাবে না। নতুন, পুরনো দিনের কথাবার্তা বলে অনেক সময় কেটে গেল। হ্যাগ্রিড আর আগের মতো নয়। নিজের ওপর আস্থা ফিরে পেয়েছেন। এই বার ফিরতে হবে।

যাবার সময় হ্যাগ্রিড বললেন, হ্যারি সোনার ডিম সম্বন্ধে তোমার কাজ–কর্ম শেষ হয়েছে? দ্বিতীয় টাস্কের সময় তো এসে গেল।

হ্যাগ্রিডের কাছে হ্যারি কেমন করে মিথ্যে কথা বলবে! হ্যাগ্রিড তো সাধারণ মানুষ নয়। হ্যারির প্রিয় বন্ধু, পিতার বন্ধু… ডাম্বলডোরের বন্ধু শুধু নয় অতি বিশ্বস্ত লোক!

হ্যারি, রন, হারমিওন খুশি মনে ক্যাসেলের দিকে চলল। হ্যাগ্রিড চাইছেন, হ্যারি টুর্নামেন্টে জিতুক। বিছানায় শুয়ে হ্যারির মনে হল সোনার ডিমের ওজন অনেক বেশি… ওকে সব আত্মভিমান বিসর্জন দিয়ে কাজটা করতে হবে। দেখতে হবে সেডরিক যা বলেছে তা সম্ভব কিনা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *