০৩. ইনভিটেসন

০৩. ইনভিটেসন

কিচেনে গিয়ে হ্যারি দেখল ওকে বাদ দিয়েই আঙ্কেল–আন্টি আর ডাডলি টেবিলে আয়েশ করে বসে নাস্তা শুরু করে দিয়েছে। ও ঘরে ঢোকার সময় কেউ ওর দিকে তাকালও না। আঙ্কেল ভার্ননের লাল গোল মুখটা সকালের ডেইলি মেইল পত্রিকার আড়ালে ঢাকা ছিল। আন্টি পেটুনিয়া ছুরি দিয়ে একটা গ্রেপফুট চার টুকরো করছেন। ওর ঘোড়ার মতো বড় বড় দাঁত বেরিয়ে রয়েছে। ঠোঁট দুটো রস সিক্ত।

ডাডলি স্বাভাবিকভাবে ক্ষিপ্ত। চেয়ারটা ছোট তাই আরাম করে বসতে অসুবিধে হচ্ছে। ও সব সময় চৌকো টেবিলটার একপাশে বসে। কারও সামনা সামনি নয়। আন্টি পেটুনিয়া গ্রেপফুটের এক চতুর্থাংশ ডাডলির টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন, ডাডলি সোনা এটা তোমার… মিষ্টি মেশান নেই। ডাডলি লাল চোখে মার দিকে তাকাল। গরমের ছুটিতে বাড়ি আসার পর ওর মনে হয় মানুষের জীবন এত যে আনন্দদায়ক হয় কেমন করে! ও ফোর্থইয়ার রিপোর্ট নিয়ে বাড়ি ফিরেছে।

আঙ্কেল–আন্টিও কম মার্ক পাওয়ার জন্য ওকে নয়, প্রতিবার স্কুল টিচারদের যেমন দোষ দেন–তেমনি দিয়ে চলেছেন। আন্টির মতে ডাডলির অনেক প্রতিভা আছে, হিংসুটে স্কুল টিচাররা ঠিক ওকে বুঝতে পারে না। আঙ্কেল ভার্নন বলেন, ডাডলি আহ্লাদি মেয়েদের মতো হোক এটা আমি চাই না। ছেলেরা ছেলেদের মতো হবে। ঘ্যানঘ্যানে প্যানপ্যানে নয়–দুর্দান্ত। রিপোর্টে ও স্কুলে মারামারি করে লিখেছে–আন্টি বললেন–আহা আমার ছেলে ক্লাশের ছেলেদের মারে… একদম মিথ্যা কথা। ও এত নরম মনের ছেলে একটা মাছি পর্যন্ত মারতে কষ্ট পায়… মোটাসোটা ছেলে হলে কি হবে। স্কুলের নার্স লিখেছে, ডাডলি যেন ডায়েট করে? যেসবগুলো খেতে মানা করেছে তা সবই ডাডলির অতি প্রিয় খাদ্য যেমন–ফিজ্জি ড্রিংক, কেক, চকোলেট বার, বার্জার। খাবে ফল, সবজি ইত্যাদি। বাড়ির সকলের জন্য আন্টি ওর খাদ্য তালিকা করেছেন। তফাৎ এই লিস্টটা ফ্রিজে সেঁটে রাখেননি। ডাডলি বেচারি খাবে না আর ওরা খাবে তা কি করে হয়? পাড়ার লোকেরা ঠাট্টা করে ওকে দেখে বলে একটা ধেড়ে তিমি মাছ।

ডাডলি খুব খুশি… ওকে একা একা শাক পাতা–ঘাস খেতে হয় না। তাহলে ও হ্যারির চেয়ে কম খেতে দিলে অসম্ভব রেগে যায়। আন্টি পেটুনিয়া মনে করে ডাডলির স্বভাব ঠিকমত রাখার একমাত্র পথ হচ্ছে ওকে ভাল–মন্দ বেশি করে খেতে হবে–হ্যারির চেয়েও বেশি।

আন্টি পেটুনিয়া ঘুণাক্ষরেও জানে না হ্যারি ওর বিছানার তলায় কি রাখে না রাখে। এও জানে না হ্যারি ঘাস–পাতা না খেয়ে গরমের ছুটির বাকি কটা দিন শুধু আস্ত কাঁচা গাজর খেয়ে কাটাচ্ছে।

হ্যারি ওর বন্ধু–বান্ধবদের হেডউইগ মারফত ওকে সাহায্য করার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে। হেডউইগ হারমিওনের বাড়ি থেকে ফিরে এল পায়ে একটা চামড়ার ব্যাগ নিয়ে। ওদের বাড়ি থেকে পাঠিয়েছে বিরাট বাক্সভর্তি চিনি বর্জিত খাবার (ওর বাবা-মা ডেন্টিস্ট)। হ্যাগ্রিড পাঠিয়েছে (হোগার্টসের গেম কীপার) বাড়িতে তৈরি রক কেক। (হ্যারি ওগুলো স্পর্শ করেনি কারণ হ্যাগ্রিডের রান্না সম্বন্ধে ওর অভিজ্ঞতা আছে)। মিসেস উইসলি, ওর পারিবারিক প্যাঁচা মারফত পাঠিয়েছেন একগাদা ফুট কেক আর পেস্ট্রি। বেচারা এরল এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছে যথেষ্ট দুর্বল, আসতে ওর পুরো পাঁচদিন লেগেছে। ওর জন্মদিনে চারটে কেক পাঠিয়েছে হারমিওন, রন, হ্যাগ্রিড আর সিরিয়স। এখনো দুটো কেক রয়ে গেছে। পেটুনিয়ার রান্না মুখে ভোলা যায় না। বলতে গেলে কাঁচা গাজর চিবিয়ে খিদে মেটাচ্ছে হ্যারি।

আঙ্কেল ভার্নন একটু করে গ্রেপফুট নিয়ে মুখ বেকিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে খেতে লাগলেন।

–আর নেই কিছু? বিরাট হাই তুলে বললেন। হাই তোলার সঙ্গে সঙ্গে তার বিরাট গোঁফ নাচতে লাগল।

আন্টি পেটুনিয়া আঙ্কেল ভার্ননের দিকে রোষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন–যথেষ্ট দিয়েছি। কথা বলার সময় আড় চোখে হ্যারির দিকে তাকালেন।

দরজার ঘণ্টি বেজে উঠল। ঘণ্টির আওয়াজ শুনে ভার্নন কে এসেছে দেখার জন্য চেয়ার ছেড়ে রান্নাঘরের বাইরে চলে গেলেন। ডাডলি বাবা চলে যেতেই তার প্লেট থেকে বাকি অংশ তুলে নিল।

 হ্যারিও ঘণ্টা শুনেছে। আঙ্কেল ভার্নন চলে গেলে কিচেন থেকে শুনতে পেল কে একজন হাসছে, আর আঙ্কেল ভার্নন প্রশ্নের চাঁচাছোলা জবাব দিচ্ছেন। আন্টি পেটুনিয়া, আঙ্কেল ভার্নন ফিরছে না দেখে যেখানে দরজায় ডোর বেল আছে সেদিকে ছুটলেন। যাওয়ার আগে হাতের টি-পটটা টেবিলে রেখে গেলেন। একটু পর ভার্নন ফিরে এলেন। মুখ তার বিবর্ণ।

ভার্নন ঘেউ ঘেউ করে উঠলেন, হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এখনই বসবার ঘরে যাও। তোমার সাথে কিছু কথা আছে।

হ্যারি ভেবে পায় না, আবার কী অন্যায় করল।

ও আঙ্কলের পিছু পিছু চলল। আঙ্কেল যাবার আগে দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে দিলেন। ভার্নন ফায়ার কাছে দাঁড়িয়ে সোজা হ্যারির দিকে তাকালেন। এমনভাবে তাকালের যেন পুলিশে ওকে গ্রেফতার করতে এসেছে।

হ্যারি, আঙ্কেল ভার্ননের বিরক্তিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল–কী হয়েছে?

তাকাও, এটার দিকে, ভার্নন একটা খাম (পার্টমেন্টে) হ্যারিকে দেখিয়ে বললেন-এই চিঠিটা পোস্টম্যান এইমাত্র দিয়ে গেল।

হ্যারি খামটার দিকে তাকাল। ভাল খাওয়া–দাওয়া না করে শরীর খুব দুর্বল।

কে তোমাকে এই চিঠিটা পাঠিয়েছে জানতে পারি? হ্যারি কোনও জবাব দিলো না।

ভার্নন খামটার মুখ খুলে চিঠিটা বার করে বেশ জোরে জোরে পড়তে লাগলেন

প্রিয় মি. অ্যান্ড মিসেস ডার্সলে,
আমাদের কখনো পরিচয় হয়নি। আমি নিশ্চিত যে, হ্যারির মুখে আমাদের রনের কথা শুনে থাকবেন। আগামী সোমবার থেকে হোগার্ট স্কুলে কিডিচ ওয়ার্ল্ডকাপ শুরু হবে। আমার স্বামী আর্থার ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ে কর্মসূত্রে কয়েকটা প্রাইম টিকিট পেয়েছেন।
আমরা সত্যিই খুব খুশি হব, যদি আপনারা কিডিচ ফাইনাল খেলা দেখবার জন্য হ্যারিকে আমাদের কাছে পাঠান। জীবনে এই ধরনের খেলা দেখার সৌভাগ্য সহজে হয় না। তিরিশ বছর পরে এবার আমাদের দেশে খেলাটি হবে। আমরা আরো আনন্দিত হব, যদি গ্রীষের ছুটির বাকি কটা দিন ওকে আমাদের কাছে থাকার অনুমতি দেন। ছুটি শেষ হলে সে নিরাপদেই এখান থেকে হোগার্টের স্কুলে চলে যাবে। আশা করি আপনি আমাদের অনুরোধটি রাখবেন।
আপনারা হ্যারিকে আমাদের কাছে পাঠাতে রাজি হলে, ওকে বলবেন ও যেন আপনার উত্তরটি যত শিগগির পারে সাধারণ মেইলে পাঠিয়ে দেয়। কারণ মাগল পোস্টম্যানরা আমাদের পাঠানো চিঠিপত্র ঠিকমত বিলি করে না। আশা করছি, আমরা শিগগিরই হ্যারিকে দেখতে পাব। আপনাদের বিশ্বস্ত,
মন্ত্রী উইসলি
বিদ্র: আশাকরি আমরা প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প খামে লাগিয়েছি।

চিঠিটা পড়া হলে আঙ্কেল ভার্নন পকেটে হাত ঢোকালেন। তারপর পকেট থেকে অন্য একটা জিনিস বার করে বিরক্তি মাখা মুখে বললেন, পড়ে দেখ।

হ্যারি মিসেস উইসলির চিঠির এনভেলপে অনেক স্ট্যাম্প দেখতে পেয়ে কোনো মতে হাসি থামালো। ভার্নন বললেন, দেখ, মিসেস উইসলি অযথা একগাদা ডাকটিকেট সেঁটেছেন। আর এই কারণেই পোস্টম্যানের সন্দেহ হয়েছে, তাই সে কল বেল টিপে চিঠিটা দিয়ে গেল।

হ্যারি চিঠিটা হাতে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। উনিও হ্যারির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। দুজনেই চুপচাপ! নীরবতা ভাঙল হ্যারি।

–তো… আমি তাহলে যাব? হ্যারি বলল।

কথাটা শুনে ভার্ননের লালমুখটা আরও লাল হয়ে গেল। বড় বড় গোঁফের আড়ালে নিশ্চয়ই কিছু ফন্দি আঁটছেন। হ্যারি ডার্সলে পরিবার থেকে পালাতে পারলে বাঁচে। স্কুলে যাবার আগে কটা দিন রন, হারমিওন, ফ্রেড, জর্জের সঙ্গে উইসলি পরিবারে থাকতে পারবে এবং এখানকার একঘেঁয়ে জীবনের অবসান।

আক্কেল ভার্নন বললেন-এই মহিলাটি কে?

হ্যারি বলল–আপনি মিসেস উইসলিকে চেনেন, দেখেছেন। আমার বন্ধু রনের মা…… প্রায় ওর মুখে এসে গিয়েছিল হোগার্টস এক্সপ্রেস। আঙ্কেল ভার্নন কথাটা শুনলে আরও চটে যাবেন। ডার্সলে পরিবার হ্যারির স্কুলের নাম শুনলে চটে যায়।

আঙ্কেল ভার্ননের মুখ দেখে হ্যারির মনে হল কোনো একটা কিছু মনে করার চেষ্টা করছেন।

–সেই মোটা মহিলা–যার একগাদা লাল চুলওয়ালা ছেলে–মেয়ে আছে?

কথাটা শুনে হ্যারি ভুরু কোঁচকালো। মোটা কথাটা বলে ভার্নন খুব আনন্দ পান। ডাডলি তার ছেলে… সে কী কম মোটা? দিনের পর দিন লম্বা হওয়ার বদলে প্রস্থে বাড়ছে। ভার্নন আবার কিডিচ খেলার কথাটা বিড় বিড় করে বললেন।

কিডিচ! নাম শুনলেই গা জ্বলে যায়। সেই রাবিশ খেলা? হ্যারিকে দ্বিতীয়বার আক্রমণ করলেন ভার্নন। ও বলল, ওটা একটা খেলা। ম্যাজিক্যাল ঝাড়ু দিয়ে খেলতে হয়।

–ঠিক আছে, ঠিক আছে, আঙ্কেল ভার্নন খুব জোরে বললেন। হ্যারি লক্ষ্য করল আক্কেল যেন একটু ভয় পেয়েছেন। ঝড় প্রসঙ্গ আলাপ বসার ঘরে আনতে চায় না।… ভার্নন চিঠিটা আবার পড়তে লাগলেন–আপনার মতামত স্বাভাবিকভাবে জানাবেন… থুথু ফেলে বললেন, কথাটার অর্থ? স্বাভাবিকভাবে চিঠি পাঠাবার মানেটা কী?

–মানে, যেভাবে আমরা চিঠি পাঠাই… আপনি তো জানেন আউল পোস্টের ব্যাপারটা। জাদুকররা প্যাচাঁদের দিয়ে চিঠি পাঠায়। এটা তাদের স্বাভাবিক প্রথা।

আঙ্কেল ভার্ননের রাগ তখনও কমেনি। রাগে কাঁপতে কাঁপতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। পাড়ার লোকেরা ওদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিনা দেখার জন্য।

–কতদিন তোমাকে সাবধান করে দিয়েছি আমার বাড়িতে বসে তুমি জাদুকর আউল, ঝাড়ু, এইসব কথা বলবে না। অকৃতজ্ঞ ছেলে। আমাদের প্যান্ট পরে তো দাঁড়িয়ে রয়েছে।

হ্যারি কোনও রকম ভ্রুক্ষেপ না করে বলল, সবইতো ডাডলির ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র।

হ্যারির গায়ে বিরাট একটা সুইটশার্ট। (ডাডলির গায়ে হয় না)… সেটা এতবড় যে, দুটো হাতা ওর হাত ছাড়িয়ে গেছে–ঝুলটা হাঁটু পর্যন্ত। হাতা দুটো কম করে পাঁচবার গুটালে কব্জি পর্যন্ত আসে। তেমনি বড় ব্যাগি জীন্স।

আঙ্কেল ভার্নন হ্যারির দিকে বিশ্রিভাবে তাকিয়ে রাগে থর থর করে বললেন আমার সঙ্গে মুখেমুখে তর্ক করবে না।

হ্যারি আজকাল আর আঙ্কেল–আন্টিকে ভয় করে না। সেদিন চলে গেছে। আঙ্কেল–আন্টির বাড়ির শাসন, নিয়ম আর ও মানে না। কিডিচ ওয়ার্লড কাপ দেখতে যাবেই যাবে। কেউ বাধা দিতে পারবে না।

তবু হ্যারি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল, ঠিক আছে… আমি যাব না।… এবার কী যেতে পারি? আমাকে এখন গডফাদার সিরিয়সকে একটা চিঠি লিখতে হবে।

আঙ্কেল ভার্ননকে নরম করা, হম্বিতম্বি বন্ধ করার একটি মাত্র দাওয়াই সিরিয়সের নাম উচ্চারণ করা।–আপনি তো সিরিয়সকে চেনেন।

–তুমি ওকে চিঠি লিখবে? আঙ্কেল ভার্নন আমতা–আমতা করে বললেন। ভয়ে ওর মুখ শুকিয়ে গেছে। চোখ দুটো ভয়ে আরও ঘোট ঘোট হয়ে গেছে।

–হ্যাঁ, লিখতে হবে, হ্যারি সাধারণভাবে বলল–অনেক দিন সিরিয়স আমার কোনও চিঠি না পেয়ে খুব ভাবছেন। জানেন তো না পেলে… অন্যকিছু ভাববে… একটু রগচটা মানুষ। কথাগুলো বলে হ্যারি আঙ্কেল ভার্ননের মুখের দিকে তাকাল। ভাননের সিরিয়সের নাম শুনে মুখের ভাব বদলে গেছে। হ্যারি মনে মনে খুব খুশি হল।

হ্যারিকে যদি যেতে না দেয়, সিরিয়সকে চিঠি দিয়ে কারণটা বাতলে দিতে পারে হ্যারি। তাহলে…? ভার্নন ভেতরে ভেতরে দারুণ ভয় পেয়ে গেলেন।

–বেশ ঠিক আছে। তুমি তাহলে কোন জাহান্নামে যাবে যাও, তুমি লিখে জানিয়ে দাও–তুমি যাবে। উইসলিরা এসে তোমাকে নিয়ে যাবেন, তাই তো?

হ্যারি খুশি মনে ওর ঘরের দিকে চলল… ওর আনন্দে দুহাত পা তুলে ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছে করল… ও শেষমেশ যাচ্ছে উইসলিদের বাড়ি যাবেই… সেখান থেকে কিডিচ ওয়ার্ল্ড কাপ দেখবে। প্রিভেট ড্রাইভ ওর আর ভাল লাগছে না।

ঘরের-বাইরে ডাডলি লুকিয়ে লুকিয়ে ভার্নন আর হ্যারির কথা শুনছিল। ভাবল বাবা ওকে যেতে না দিলে খুব ভাল হবে। কিন্তু ওর সব আশা বরবাদ হয়ে গেল হ্যারির মুখে একগাল হাসি দেখে।

ঘরে ঢুকে প্রথমেই দেখতে পেল হেডউইগকে, ও খাঁচার মধ্যে বসেছিল। বড় বড় হলুদ বর্ণের চোখে দেখছিল হ্যারিকে। যেভাবে ও ঠোঁট দুটো চেপে রেখেছে তাতে মনে হয় ও কোনও একটা ব্যাপারে রেগে গেছে।

–আইচ। হ্যারি বলল।

ছোট একটা পালকের টেনিস বল হ্যারির মাথার এক পাশে পড়ল। হ্যারি মাথাটা ম্যাসাজ করতে করতে দেখতে গেল কে বলটা ছুঁড়েছে। টেনিস বল নয় একটা ছোট প্যাঁচা। এত ছোট যে, হাতের মুঠোতেও ওকে ধরা যায়। ছোট প্যাঁচাটা সারা ঘর চড়কিবাজির মতো ঘুরতে লাগল। হঠাৎ হ্যারির নজরে পড়ল একটা চিঠির ওপর। হ্যারি হাতের লেখা দেখে বুঝতে পারলো রনের কাণ্ড! খামটা মেঝে থেকে তুলে নিয়ে তক্ষুণি পড়তে আরম্ভ করল।

হ্যারি–বাবা টিকিট পেয়ে গেছে প্রথম খেলা আয়ারল্যান্ড ও বুলগেরিয়া, সোমবার রাত্রে। মা মাগলদের চিঠি লিখেছেন তোমার থাকার জন্য। সম্ভবত তারা চিঠিটি পেয়ে থাকবে, আমি জানি না মাগল পোস্টম্যান এখনও তোমাদের ওখানে চিঠিটা দিয়েছে কিনা। ভাবলাম এই চিঠিটা পিগকে দিয়ে পাঠালে ঠিক হবে।
পিগ! মানে ওই ছোট প্যাঁচাটা। ও তখন সিলিং থেকে ঝোলান ল্যাম্পশেডের চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। হ্যারি এর আগে পিগের মত ছোট পেঁচা দেখেনি। মনে হলো তাড়াহুড়োতে রনের লেখা চিঠি ভাল করে পড়েনি তাই আবার পড়ল।
মাগল পছন্দ করুক বা নাই করুক আমরা তোমায় আনতে যাচ্ছি। তুমি কেমন করে ওয়ালৰ্ডকাপ মিস করবে তা হতে পারে না। মা-বাবা বলেন, তোমার আঙ্কেল, আন্টির কাছে অনুমতি নেওয়া ভাল দেখাবে। যদি তারা অনুমতি দেন, তাহলে পিগকে দিয়ে তোমার চিঠি জলদি জলদি পাঠাবে। রোববার পাঁচটার সময় আমরা তোমাকে নিতে আসছি। হারমিওন আজ বিকেলে আসছে। পার্সি কাজ শুরু করেছে দ্য ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিকল কো–অপারেশনে। তুমি এখানে অ্যাব্রোড সম্বন্ধে কিছু বলবে না।
দেখা হবে–রন

নিচে এস! হ্যারি রনের ছোট প্যাঁচাকে বলল। প্যাঁচাটা নেমে এল। ঠিক জায়গায়, ঠিক লোককে চিঠিটা পৌঁছে দিতে পেরে পিগ বেজায় খুশি। এদিকে এস… আমি একটা জবাব দিচ্ছি সেটা নিয়ে যাবে।

প্যাঁচাটা ডানা পৎ পৎ করতে করতে হেডউইগের খাঁচার ওপর বসে পড়ল। হ্যারির মনে হল অজানা লোকের কাছে আসতে ও ভয় পাচ্ছে।

হ্যারি নতুন একটা পার্চমেন্ট পেপার নিয়ে পালকের কলম দিয়ে লিখল

রন,
সব ঠিক আছে। মাগলরা বলেছে, আমি তোমাদের বাড়ি গিয়ে ওয়ার্ল্ডকাপ দেখতে পারি। আগামীকাল পাঁচটার সময় তোমার সঙ্গে দেখা হবে।
হ্যারি

ছোট প্যাঁচাটার পায়ে চিঠিটা হ্যারির বাঁধতে অসুবিধে হলো। বাধবার পর পিগ ফুরুৎ করে উড়ে গেল।

হ্যারি তারপর হেডউইগের দিকে তাকিয়ে বলল–ওহে এই চিঠিটা সিরিয়সকে দিয়ে আসতে পারবে? সিরিয়সকে লেখা চিঠিটা আর একবার পড়ে নিয়ে পাদদেশে লিখল:

আপনি যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, রনের বাড়িতে আমাকে পাবেন, ওখানে ছুটির বাকি কটা দিন থাকব। ওর বাবা কিডিচ খেলা দেখার জন্য টিকিট হাতে পেয়েছেন।

হেডউইগকে ইশারা করে ডাকতেই ও খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল। সিরিয়সের জন্য লেখা চিঠিটা ওর পায়ে বাধতে বাঁধতে হ্যারি বলল–তোমায় বড় বেশি খাটাচ্ছি, তাই না? তুমি যখন ফিরে আসবে তখন আমি রনদের বাড়ি থাকব। হেডউইগ একটা পা হ্যারির হাতে রাখল তারপরই ভোলা জানালা দিয়ে দুম করে আকাশে উড়ে গেল। হ্যারি আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।

ও তারপর বন্ধুদের পাঠানো জন্মদিনের কেক–চকোলেট মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে পরমানন্দে খেতে লাগল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *