• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • Login/Register
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক্স
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

মুড়ো – শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া

লাইব্রেরি » বিবিধ লেখার সংকলন » গল্প » মুড়ো – শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া

আকারে হাত খানেক হবে গজারটা। কিন্তু অসম্ভব শক্তি! দুহাতে সজোরে আঁকড়ে ধরেও রাখতে পারছে না টুকন। পিছল গা বলে মোচড় দিয়ে বেশ জুত পাচ্ছে মাছটা। এঁকেবেঁকে ওটা একটা করে ঠেলা মারে, আর অমনি সড়াৎ করে পড়ে যায় মাটিতে। সঙ্গে সঙ্গে টুকনও প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছটার ওপর। রীতিমতো কুস্তি লড়ে পাকড়াও করে মাছটকে। হাঁপাতে হাঁপাতে সোজা হয়। কয়েক কদম এগোয়, আবার ওটা ছিটকে পড়ে। এভাবে খালের ধার থেকে বেশ খানিকটা দূরে চলে আসে ও। আনন্দ আর উত্তেজনা মিলিয়ে কিছুটা বেখেয়াল হয়ে পড়ে ছেলেটা। মাথায় নেই—মাছ ধরার ছিপ আর খালুই ফেলে এসেছে খালের ধারে। এসব ধার করা জিনিস। কঠিন শর্তে ধার করা হয়েছে। খোয়া গেলে পিঠের চামড়া থাকবে না। মাথায় এখন শুধু একটাই চিন্তা—মাছ নিয়ে কখন বাড়ি ফিরবে।
গজারের সঙ্গে টানা কুস্তি লড়ে হাঁপিয়ে উঠেছে টুকন। সারা গা ধুলোয় মাখামাখি। মজা পেয়ে একদল শিশু জুটেছে পেছনে। গজারটা পড়ে গেলে সরবে জয়ধ্বনি দেয় তারা। জয়ধ্বনি যেন গজারের পক্ষেই। চাপা ঈর্ষার ব্যাপার আছে এতে। ঈর্ষার ভাষাটা যেন এই—এমন তাজা মাছের টুকরো কালেভদ্রেও জোটে না আমাদের পাতে, আর তুই বেটা আস্ত গজার বাগালি! আবার টুকন যখন মাছটা কোনোমতে কবজা করে খাড়া হয়, তখনো বাহবা শোনা যায়। সজোরে হাততালি পড়ে। এ জয়ধ্বনি যেন দুরন্ত কৈশোরের।
বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁঁছাতে ক্লান্ত হয়ে যায় টুকন। মাছের ঘষায় রাজ্যের ধুলো কাদার মতো লেপ্টে আছে গায়ে। আঁশটে গন্ধের সঙ্গে ঘাম মিশে এক বিচ্ছিরি অবস্থা। পা যেন আর চলছে না। তবু রক্ষে যে বাড়ি পৌঁছানো গেছে।
এক চিলতে উঠানে ধপাস করে গজারটা ফেলে টুকন। তিড়িংবিড়িং লাফাতে শুরু করে মাছটা। পানি থেকে তোলা হয়েছে সেই কখন, তবু শক্তি ফুরোয়নি। যেন সে পণ করেছে—হারবে না, মরবে না।
এর মধ্যে বাড়িতে সাড়া পড়ে গেছে। চারদিকে রব উঠেছে—‘মাছ, মাছ! গজার, গজার!’
দেখতে দেখতে গজারটাকে ঘিরে ভিড় জমে যায়। ছানাপোনা থেকে শুরু করে বুড়োধাড়ি—সবাই হাজির। এমনকি মিরধা বাড়ির সবচেয়ে বয়স্ক বাহাত্তুরে বুড়ো মিজু মিরধাও বাদ নেই। বয়সের ভারে কিছুটা কুঁজো তিনি। লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারেন না। ঠুকঠুক করে হাজির তিনি। চশমার পুরু কাচ দিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন তড়পানো মাছটার দিকে।
উঠানের একপাশে একটা বেলগাছ। গাছের এক ডালে বসে আছে একটা কাক। ভর দুপুরের প্রচণ্ড গরমে হাঁ করে হাঁপাচ্ছে। তার লোভাতুর দৃষ্টি গজারের ওপর স্থির। মনে মনে ভাবছে, ‘ইশ্, একখান টুকরা যদি বাগাইতে পারতাম!’
এমন সময় আরেকটি কাক এসে বসে ওই ডালে। ড্যাং ড্যাং করে লাফিয়ে প্রথম কাকটির একদম কাছে চলে আসে। কা-কা করে বলে, ‘দেখছস, কেমুন তাজা মাছ! জিভডায় লালার নহর নামছে রে! এমুন টাটকা মাছ কত্ত দিন ধইরা খাই না!’
জবাবে প্রথম কাক একই রকম কর্কশ স্বরে বলে, ‘এই হগল আমগোর কপালে নাই!’
দ্বিতীয় কাক বলে, ‘জবর একখান বুদ্ধি আইছে মাথায়। বুদ্ধিডা কামে লাগালে একখান টুকরা পাইয়াও যাইতে পারি।’
‘কী বুদ্ধি?’
‘জোরে কওন যাইত না। মানুষের যে বুদ্ধি, কাউয়ার ভাষাও বুইঝা ফালাইতে পারে। মাথা আউগা, কানে কানে কই।’ গজারের টুকরা বাগানোর ফন্দি আঁটতে থাকে কাক দুটো।
উঠানের অপর পাশে লেবুঝাড়। সেখানে ঘাপটি মেরে আছে এক হুলো বিড়াল। লালচে বিড়ালটা বেশ গাট্টাগোট্টা। যেমন চালাক, তেমনি পাকা চোর। বারো বাড়িতে তার অবাধ বিচরণ। বাড়ির মানুষকে ফাঁকি দিয়ে খাবার চুরি করে ভাগে। বকা আর দাবড়ানি খায় অন্য বিড়াল। ধরা যে কখনো পড়েনি, মাশুল যে দেয়নি, তা নয়। একবার এক বাড়ির গিন্নি তার মুখে ভাতের গরম ফেন ছুড়ে মেরেছিল। ওতে একটা কান কুঁকড়ে গেছে। শাস্তিটা অবশ্য শাপেবর হয়েছে। চেহারাটা ভয়ংকর হওয়ায় অন্য হুলো বিড়ালগুলো তার ভয়ে তটস্থ থাকে। তার কাণ্ডকারখানাও ভয়ংকর। হয়তো কোনো বিড়াল একটা ইঁদুর মেরে আড়ালে গিয়ে খেতে বসেছে, সেখানেই আলটপকা গিয়ে হাজির হবে সে। থাবার জোরে কেড়ে নেবে খাবার। এ জন্য অন্য বিড়ালেরা আড়ালে তাকে ‘কাইন্না লালু’ বলে।
গজারের লাফালাফি কাইন্না লালুকেও উতলা করে তোলে। উত্তেজনায় জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটে সে। লেজটা কিলবিল করে সাপের মতো। তার জ্বলজ্বলে চোখ থেকে লালসার তীর গিয়ে বিঁধছে গজারের গায়ে। বিড়বিড় করে সে আওড়ায়, ‘নাহ, এমুন তোফা চিজ হাতছাড়া করন যাইব না। থাবা বসাইতেই অইব।’
‘মিউ!’ কানের কাছে মৃদু মেয়েলি ডাক। লালু পাশ ফিরে দেখে সাদা মেনি বিড়ালটা। হুলোদের সইতে না পারলেও দু-চারটে মেনিকে প্রশ্রয় দেয় লালু। বিশেষ করে, সদ্য যৌবন ফোটা এই ধবলিকে। লালুর মতো সন্ত্রাসীর মন পাওয়ায় দেমাগে মাটিতে পা পড়ে না ধবলির। এ তল্লাটের অন্য মেনিদের সে গোনেই না। তবে লালুর সামনে সে ন্যাকা। মিনমিন করে বলে, ‘ইশ্, কত দিন এমুন জেতা মাছ পেটে পড়ে নাই!’
লালুর গলায় স্বর ফোটে—গ-র্-র্। এ যেন তার বীরত্ব জাহির। ধবলিকে বলে, ‘একটু সবুর কর। একখান টুকরা ঠিকই বাগামু।’
‘এত মানুষের চোখ ফাঁকি দিবা কেমনে?’
হে-হে করে হাসে লালু। মতলবি চালে বলে, ‘বইসা থাক। মওকা দেখবি এমতে এমতেই আইছে। আমরা অইলাম তিরতীয় (তৃতীয়) পক্ষ। আমগোর মওকা হগল সময়ই আছে।’
গজারটাকে ঘিরে গুঞ্জন চলছেই। আধ শুকনো যে খাল থেকে টুকন মাছটা ধরেছে, সেখানে বড়জোর টেংরা বা পুঁটি মেলে। অনেক সময় তো বঁড়শি ফেলে বসে থাকাই সার। আর টুকন কিনা হাত খানেক বড় গজার ধরে এনেছে! এত বড় জ্যান্ত মাছ অনেক দিন এ বাড়িতে আসেনি। বাহবা পেতে পেতে বুক ফুলে যায় ওর।
মাছটা কীভাবে রান্না হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। কেউ চায় শুকনো ভুনা, কারও চাই তেলঝালে ঝোল। কিন্তু মুড়োটা কে খাবে? কে, কে? গুঞ্জন সপ্তমে চড়ার আগেই টুকন বলে ফেলে, ‘মাথাডা দাদাজানে খাক।’
এ দুনিয়ায় মিজু মিরধাই এখন টুকনের প্রকৃত আপনজন। টুকনের বাবা ছিল রাজমিস্ত্রি। বছর চারেক আগে মারা গেছে সে। শহরে কাজ করার সময় নির্মাণাধীন একটা দালান থেকে পড়ে গিয়েছিল। টুকন তখন নয় বছরের শিশু। মা ওকে নিয়ে চলে গেল নানাবাড়ি। গরিব নানা এ বোঝা টানতে পারছিলেন না। মামারাও দূর দূর করছিলেন। এর মধ্যে মা কার সঙ্গে যেন পালাল। টুকন পড়ে গেল বেকায়দায়। কে নেবে ওর বোঝা? এক মামা ওকে ফেলে দিয়ে গেলেন দাদার ঘাড়ে। দাদা ফেলতে পারলেন না। হাজার হলেও নিজের রক্ত। সেই থেকে দাদার জিম্মায় আছে ও।
টুকনের দাদি নেই। বাড়ির একমাত্র দোচালা ঘরে দাদার সঙ্গে থাকে ও। সকালে দাদা-নাতি মিলে গুড় দিয়ে মুড়ি বা চিড়া খায়। বাকি দুই বেলা দুই চাচা রুস্তম ও জালালের ঘর থেকে খাবার আসে। বাড়ির অন্য ছেলেমেয়ে স্কুলে গেলেও টুকনের সে বালাই নেই। থ্রি পর্যন্ত পড়েছে; ব্যস—ওটুকুই। সারা দিন টুকনের কাজ হচ্ছে চাচা-চাচির ফাই-ফরমাশ খাটা আর ফাঁক পেলেই খালের ধারে গিয়ে ছিপ ফেলে বসে থাকা। মাছ ধরায় প্রচণ্ড নেশা ওর। নিজের ছিপ নেই। একেক দিন একেকজনের কাছ থেকে ধার করে। আজ ধার করেছে রুস্তম চাচার ঘর থেকে। ছিপ আর খালুই দেওয়ার সময় চাচি শর্ত দিয়েছেন, কাঁচা আম এনে দিতে হবে। কাঁচা আম জোগাড় করা চাট্টিখানি কথা নয়। গ্রামে এখন আগের মতো বাড়ি বাড়ি আমগাছ নেই। যাদের আছে, তারা কড়-কঞ্জুস। এক কেজি কাঁচা আম বেচলে ৪০-৫০ টাকা। কম নয়। সে ক্ষেত্রে গোপনে পেড়ে আনা বা গাছে ঢিল ছোড়া ছাড়া উপায় নেই। এতে ধরা পড়ে প্যাঁদানি খাওয়ার ঝুঁকিটা খুব বেশি। কিন্তু টুকনের মাছ ধরার নেশার কাছে সে ভয় নস্যি। ঝুঁকি নিয়েছে বলেই তো গজারটা আজ পেয়েছে।
টুকনের প্রস্তাবে চকিতে পেছনের দিনগুলোয় ফিরে যান মিজু মিরধা। আহ্, তারুণ্যের সেই ঝলকানো দিনগুলো ছিল বটে! তখন এই এলাকা পুরোটাই ছিল নিখাদ গ্রাম। এখনকার মতো পৌর শহরের অংশ ছিল না। ছিল না এক কোণে আটকে থেকে গ্রাম ও শহরের জাঁতাকলের পেষণ। আশপাশে পুকুর আর জলাশয়ের অভাব ছিল না। খালটি বারো মাস ছিল জল কলকল। আর সে জলে খলবল করত শোল, বোয়াল, শিঙ, মাগুর ও কই। মাচার ঝিঙে-পটল দিয়ে এসব তাজা মাছের ঝোল—উফ্, তুলনা নেই। আহারে, কোথায় গেল সেই দিন!
এমন তাজা মাছের মুড়ো শেষ কবে খেয়েছেন—মনে পড়ে না মিজু মিরধার। কিন্তু খাওয়াটা কি ঠিক হবে? আজকাল দাঁত পটাপট পড়ে যাচ্ছে তাঁর। শেষটা পড়েছে গত কোরবানির ঈদে, গরুর কচকচে হাড় চিবোতে গিয়ে। এখন আছে মোট ১৩ খান। এর মধ্যে তিনটা একেবারে নড়বড়ে। মুড়ো চিবানোর ধকল সইতে পারবে না একটাও। লোভ সামলে তিনি ঘোষণা করেন, ‘মুড়াডা টুকনই খাক। ওই যহন ধরছে।’
মিজু মিরধার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারে না তাঁর ছেলেরা। রুস্তম শহরে রিকশাভ্যান চালায়। শরীরটা ম্যাজম্যাজ করায় আজ কাজে যায়নি। রান্নাঘরের চালা ঠিক করবে বলে রাজমিস্ত্রির জোগালি জালালও যায়নি কাজে। তাদের মতো গুরুজনকে পাশ কাটিয়ে টুকনের মতো অভাগার পাতে পড়বে মুড়ো! এটা কি মেনে নেওয়ার মতো? মাছ ধরলেই কী, ছেলেটা তো ওদেরই পোষ্যি। খেতে না দিলে পারবে খেতে? বাড়িটা কেবল বাবার বলে, নইলে কবে ওই ছোকরাকে ওরা উড়িয়ে দিত ফুটবলের মতো।
মনে যা-ই থাক, মুখ ফুটে বাবার সামনে কিছু বলতে বাধে দুই ভাইয়ের। বাবা রগচটা। খেপে গেলে মুশকিল। তারা মনে মনে চিবাতে থাকে নাদান টুকনকে। কিন্তু জালালের ফন্দিবাজ বউ আন্নি চুপ থাকতে পারে না। শ্বশুরকে কুপোকাত করতে সে বলে, ‘এইডা কী কন আব্বাজান! পোলাডারে জানে মারতে চান?’
মিজু মিরধা অবাক হয়ে বলেন, ‘ক্যা, ওরে মারতে চামু ক্যা?’
‘গজার মাছ যে ভূতের চেলা, হেইডা জানেন না আপনে? ওই খালে কেউ কুন দিন এমুন গজার পাইছে? ভরদুপুরে পোলাডা আতকা জেতা গজার নিয়া আইল। আমার তো টাসকি লাইগা গেছে! ভুতুইড়া মনে অইতাছে ঘটনাডা। গজারের মুড়া খাইয়া পোলাডা না আবার ভূতের দুশমন অইয়া যায়।’
বড় জা রুস্তমের বউ আঙ্গুরি সায় দেয় এতে, ‘হ, আন্নি ঠিকই কইছে। আমিও হেই কতাই ভাবতাছি।’
মিজু মিরধা দোটানায় পড়ে যান। ভূতের বিষয়টা মানতে পারেন না, আবার উড়িয়েও দিতে পারেন না। শেষে বলেন, ‘তাইলে তুমরাই ঠিক করো, মুড়া কে খাইব।’
আন্নি বলে, ‘আমি কই কী, আপনের ছোড পোলারে দেন। গায়ে-গতরে শক্তসামার আছে তাইনে। ভূতে কিছু করতে পারত না হের।’
আন্নির মুড়ো বাগানোর ফন্দি দেখে ফস করে জ্বলে ওঠে আঙ্গুরি। কৌশলের ধার না ধেরে সরাসরি অধিকার হাঁকায় সে। বলে, ‘অন্য কাউরে মুড়া দিলে তো উচিত মতোন আমার সিরাজ-মিরাজের বাপেরই (রুস্তম) পাওনের কথা। টুকইন্যা যে গজারখান আনছে, ওইডা ধরছে কী দিয়া? ছিপ পাইল কই? খালই দিছে কেডা?’
অমনি ঝাঁ করে টুকনের মনে পড়ে যায়—এই যাহ, ছিপ আর খালুই তো আনা হয়নি। খালের দিকে সবেগে ছুটতে শুরু করে ও। এক দৌড়ে গিয়ে হাজির খালের ধারে। ছিপ আর খালুই উধাও। যেখানে মাছ ধরার জিনিসগুলো ফেলে গিয়েছিল, জায়গাটা ফাঁকা। এখন উপায়? বড় চাচির ভীষণ চেহারা উঁকি দেয় মনে। বাড়ি ফেরার উৎসাহ দমে যায়। রোদতাতানো খালপাড়ে অস্থিরভাবে পায়চারি করতে থাকে ও।
এদিকে অধিকারবলে গজারটা কবজা করে ফেলেছে আঙ্গুরি। ছটফটানি থেমে গেছে গজারের। আঙ্গুরির ধারালো বঁটিতে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ টুকরো হচ্ছে মাছটা। আঙ্গুরির মনজুড়ে প্রশান্তি। আন্নির সঙ্গে হরদম টেক্কাবাজি চলে তার। কূটকৌশলে পাকা আন্নির কাছে বেশির ভাগ সময় হেরে যায় সে। আজ তা উশুল হয়েছে।
মাছ কুটে টুকরাগুলো নিয়ে কলতলায় ধুতে যায় আঙ্গুরি। এমন সময় ডান ধারে ঝুপ করে নেমে আসে একটা কাক। কত্ত বড় সাহস! ড্যাং ড্যাং করে লাফিয়ে মাছের দিকে আসছে হতচ্ছাড়া আপদ। হাত নাচিয়ে খেঁকিয়ে ওঠে আঙ্গুরি, ‘যা ভাগ, মরার কাউয়া। হুস-হুস!’
উড়ে গিয়ে হাত খানেক দূরে বসে কাকটা। তারপর আবার সেই ড্যাং ড্যাং। আবার ‘হুস-হুস’ করে আঙ্গুরি। কাকটাও একই ভঙ্গি করে। পিছোয় আর এগোয়। গলা ফাটিয়ে চেঁচায় আঙ্গুরি, ‘সিরাজ-মিরাজ দৌড়া তো শয়তান কাউয়াডারে।’
পিঠাপিঠি দুই ভাই কুস্তি লড়ায় ব্যস্ত। সিরাজ কষে ধরেছে মিরাজের চুলের মুঠি। মিরাজ সপাটে টানছে বড় ভাইয়ের কান। বাবার পাত থেকে নিয়ে গজারের মগজ কে খাবে—এই নিয়ে বাগিবতণ্ডা, তারপর মল্লযুদ্ধ। মায়ের হাঁকডাক আমল দেয় না ওরা। এদিকে বদমাশ কাকটা বিরক্ত করেই চলেছে আঙ্গুরিকে। শেষে অতিষ্ঠ হয়ে কাকটার দিকে তেড়ে যায় সে। এই সুযোগে দ্বিতীয় কাকটা এসে বসে কলতলায় গামলার পাশে। ‘নিমু যহন, বড়ডাই নেই’—এই বলে ছোঁ মারে গজারের মুড়োয়। কিন্তু উড়তে গিয়ে ওজন ধরে রাখতে পারে না। মুড়োটা ঠোঁট থেকে পড়ে যায় মাটিতে। এই সুযোগের জন্য এতক্ষণ ওঁৎ পেতে ছিল কাইন্না লালু। ঝোড়ো বেগে ছুটে এসে মুড়োটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সে। তারপর চোখের পলকে হাওয়া। ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে, থ বনে যায় আঙ্গুরি। ওপাশে শোনা যায় আন্নির কিটকিট হাসি।
এদিকে টুকন তখনো খালপাড়ে রোদে পুড়ছে, ঘামে ভিজছে। ব্যাকুল হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে ছিপ আর খালুই।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১১, ২০১১

Category: গল্প
Previous Post:বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও আমার কথা: কামরুল হাসান
Next Post:শতবর্ষ স্মরণ : বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতি

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

বিবিধ রচনা

হেলথ

Download PDF


My Account

Facebook

top↑